বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে কিছু চিহ্নিত গণমাধ্যম ও বিদেশি সাহায্যপুষ্ট গবেষণা সংস্থা মনগড়া ও বাস্তবতা বিবর্জিত আষাঢ়ে গল্প পরিবেশন করছে বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বলেছেন, দেশের রাজনীতিতে ‘কৃত্রিম সংকট’ তৈরির পাঁয়তারা চালাচ্ছে তারা।
শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দুরবস্থাকে পুঁজি করে এসব অপতৎপরতা চলছে অভিযোগ করে ক্ষমতাসীন দলের নেতা বলেছেন, বিএনপি ও তাদের দোসররাও দেশে উসকানিমূলক মিথ্যাচার ও গুজব ছড়িয়ে জনগণের মাঝে আতঙ্ক ও ভীতি সঞ্চারের চেষ্টা করছে।
শুক্রবার বিকেলে এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
তিনি বলেন, ‘শ্রীলঙ্কায় চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দুরবস্থায় সৃষ্ট সেখানকার নাজুক পরিস্থিতিকে পুঁজি করে একটি চিহ্নিত মহল বাংলাদেশে উসকানিমূলক মিথ্যাচার ও গুজব ছড়িয়ে জনগণের মাঝে আতঙ্ক-ভীতি সঞ্চারে বিভ্রান্তিকর অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে।
‘বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তি বিএনপি ও তাদের দোসররা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের এক অপরাজনীতির ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।’
দেশের জনগণকে আশ্বস্ত করে তিনি বলেছেন, শেখ হাসিনা নেতৃত্বে থাকলে বাংলাদেশ কখনও পথ হারাবে না। তিনি বলেন, ‘যত দিন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ পরিচালিত হবে তত দিন এদেশের জনগণের জীবন সুরক্ষিত থাকবে। বাংলাদেশ কখনও শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান কিংবা আফগানিস্তান হবে না।’
সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তারেক রহমানের রাজনীতি ছাড়ার মুচলেকা দিয়ে দেশ ছাড়ার বিষয়টিও তুলে ধরেন ওবায়দুল কাদের। বলেন, ‘যারা (বিএনপি) রাজনীতি ছেড়ে দেয়ার মুচলেকা দিয়ে দেশের আদালতে দণ্ডিত হয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে তারাই আজ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তাদের দুর্নীতির কালো টাকা দিয়ে বাংলাদেশ সরকার ও বঙ্গবন্ধু পরিবারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।
‘কেউ যদি দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চায় তাহলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।’
ভুল ট্রেনে উঠে বিএনপি নেতারা দিশেহারা
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নিরপেক্ষ সরকারের দাবি রাজনীতিতে তাদের দ্বিচারিতার সাক্ষ্য দেয় বলেও মনে করেন ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, ‘এক সময় তাদের নেত্রীই বলেছিলেন, শিশু ও পাগল ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নয়। রাজনীতিতে ভুল ট্রেনে ওঠা বিএনপি নেতৃবৃন্দ এখন পরিত্যক্ত প্ল্যাটফর্মের অন্ধকার বগির দিশেহারা যাত্রীর মতো অসংলগ্ন প্রলাপ বকছেন।’
সাংবিধানিক বিধান মতে অগণতান্ত্রিক উপায়ে কারও রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার সুযোগ নেই-এটিও জানিয়ে দেন কাদের। বলেন, ‘গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় একমাত্র নির্বাচনের মধ্য দিয়েই রাষ্ট্রক্ষমতার রদবদল হয়। আর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে।’
কিন্তু বিএনপি নির্বাচন ও জনগণকে ভয় পায় দাবি করে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘এজন্য তারা যে কৌশলই গ্রহণ করুক না কেন তাদের মূল লক্ষ্য থাকে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করা। অতীত ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, বিএনপি কখনোই গণরায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রতিদিন নির্লজ্জভাবে ক্রমাগত মিথ্যাচার করছেন অভিযোগ করে কাদের বলেন, ‘গণমাধ্যম তাদের দেয়া দূরভিসন্ধিমূলক বক্তব্য-বিবৃতি ও মিথ্যা মন্তব্যের কোনো রকম সত্যতা যাচাই ছাড়াই প্রকাশ করে থাকে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টার সমালোচনাও করেন আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা। বলেন, ‘মির্জা ফখরুল সাহেবদের মতো যারা স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পর কাউকে প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা ও শিশু মুক্তিযোদ্ধা বানাবার অপপ্রয়াস চালায় এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিকারী চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার-আলবদরদের রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মান ও ক্ষমতার আসনে বসায় তাদের মুখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা মানায় না।’
আরও পড়ুন:গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে পুনরায় সভাপতি ও সাধারণ পদে নির্বাচিত হয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও গাজীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন সবুজ।
বৃহস্পতিবার বিকেলে গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষি মন্ত্রী ডা. আব্দুর রাজ্জাক ও সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম নতুন সভাপতি ও সাধারণত সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন।
কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় পুনরায় সভাপতি নির্বাচিত হন গাজীপুর-১ আসনের এমপি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
অন্যদিকে ১০ জন প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন গাজীপুর-৩ আসনের এমপি ইকবাল হোসেন সবুজ।
সকাল ১১টায় ভাওয়াল রাজবাড়ী মাঠে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। সম্মেলনে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের নতুন নেতৃত্বের আহ্বান করেন। এতে নেতাকর্মীদের মধ্যে বহুদিন পর নতুন নেতৃত্ব পাওয়ার আশা জাগে।
কিন্তু বিকেলে কমিটি অপরিবর্তিত থাকলে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশা দেখা দেয়। নতুন কমিটি ঘোষণার পর বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা আনন্দ উল্লাস করলেও তৃণমূলের অনেকেই ক্ষোভ দেখান। অনুষ্ঠান চলাকালীন নেতাকর্মীদের মঞ্চ ত্যাগ করার দৃশ্যও দেখা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাপাসিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘১৯ বছর পর গাজীপুরে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ ছিল। কিন্তু কমিটি ঘোষণার পরপরই নেতাকর্মীদের ভেতরে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। অথচ সম্মেলনের প্রধান অতিথির বক্তব্যেও বলা হয়েছিল, জেলা কমিটিতে নতুনদের স্থান দেয়া হোক। ভেবেছিলাম নিজেদের মনোনীত নেতাই পদপদবীতে আসবে। কিন্তু দিনশেষে ফলাফল শূন্য। উপজেলা নির্বাচনে যারা নৌকার বিরোধিতা করেছে তারাই আবারও নেতৃত্বে এসেছে।’
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে ও এমপি ইকবাল হোসেন সবুজের সঞ্চালনায় সম্মেলনে প্রধান বক্তা ছিলেন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি, আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য মোহাম্মদ সাইদ খোকন, ইকবাল হোসেন অপু এমপি, এমপি সিমিন হোসেন রিমি, এমপি শামসুন নাহার ভূঁইয়া প্রমুখ।
দীর্ঘ ১৯ বছর পর গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো।
আরও পড়ুন:পদ্মা সেতু ঠেকাতে দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামকে জড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের পর দেশে স্বাধীন সাংবাদিকতা থাকে না বলে মনে করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মুহম্মদ ইউনূসকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশ্বে খারাপ ধারণা তৈরি হয় বলেও মনে করেন তিনি।
শুক্রবার ঠাকুরগাঁওয়ে একটি আয়োজনে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন ফখরুল।
গত বুধবার পদ্মা সেতু নিয়ে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী ড. ইউনূস, মাহফুজ আনাম ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার তীব্র সমালোচনা করেন। বলেছেন, যারা পদ্মা সেতুর বিরোধিতা করেছেন, তাদের সেতুতে নিয়ে গিয়ে টুস করে ফেলে দেয়া উচিত।
পরদিন ফখরুল এই ঘটনা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি অভিযোগ করেন, তাদের নেত্রীকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এই ধরনের বক্তব্যকে অনাকাঙ্ক্ষিত উল্লেখ করে তিনি সরকারপ্রধানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারিও দেন।
এর পরদিনও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে কথা বলেন ফখরুল। বলেন, ‘যখন একজন সম্পাদকের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী বিষোদ্গার করেন, তখন স্বাধীন সাংবাদিকতা থাকে না। তিনি যখন একজন বিশ্ববরেণ্য অর্থনীতিবিদকে কটূক্তি করেন, তখন সেটা বাংলাদেশ সরকার সম্পর্কে একটা খারাপ ধারণা সৃষ্টি করে।
‘এমনকি যে অর্থনীতিবিদেরা মেগা প্রজেক্ট নিয়ে বিভিন্ন কথা বলেছেন, বর্তমানে অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে যে অশনিসংকেতের কথা বলেছেন, তাদেরও তিনি গালি দিতে ছাড়েননি।’
ফখরুল বলেন, ‘একজন রাষ্ট্রের চিফ এক্সিকিউটিভ যে যেভাবেই আসুক, উনি যখন বলেন যে বিরোধীদলীয় নেত্রীকে পদ্মা সেতুতে নিয়ে টুস করে ফেলে দাও, এটা অমিনাস একটা ভয়ংকর কথা। আমরা গতকাল এ বিষয়ে নিন্দা করেছি। আজও করছি।
‘আমরা বারবার অনুরোধ করছি। দেশের যে পরিবেশ খারাপের দিকে যাচ্ছে, এটা আরও খারাপ না করে এখানে কমপক্ষে একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করুন এবং পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে নির্বাচনের একটা পরিবেশ তৈরি করুন। এ ছাড়া বাংলাদেশের যে রাজনৈতিক সংকট, সে সংকট থেকে উত্তরণের কোনো পথ থাকবে না।’
প্রধানমন্ত্রী যা বলেছিলেন
বুধবার রাজধানীতে আওয়ামী লীগের দলীয় এক আলোচনায় শেখ হাসিনা জানান, পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে বিশ্বব্যাংক যেন সরে যায়, সে জন্য ড. ইউনূস, ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক নানা সক্রিয় চেষ্টা চালিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু বানাচ্ছে, এই সেতু ভেঙে পড়ে যাবে- এই ধরনের বক্তব্য রাখায় খালেদা জিয়ার প্রতিও ক্ষোভ জানান শেখ হাসিনা।
নানা বক্তব্য উল্লেখ করে তিনি পদ্মা সেতুবিরোধীদের সেতুতে নিয়ে চোবানোর কথা বলেন।
খালেদা জিয়ার উক্তি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বলেছে, স্প্যানগুলো যে বসাচ্ছে, সেটা ছিল তার কাছে জোড়াতালি দেয়া। পদ্মা সেতু বানাচ্ছে, তাতে চড়া যাবে না, চড়লে সেটা ভেঙে যাবে। তার সঙ্গে তার কিছু দোসররা। তাদের কী করা উচিত? পদ্মা সেতুতে নিয়ে গিয়ে ওখান থেকে পদ্মা নদীতে টুস করে ফেলে দেয়া উচিত।’
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধের মিশনে মাহফুজ আনামও: প্রধানমন্ত্রী
ড. ইউনূসের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যিনি (ড. ইউনূস) এমডি পদের জন্য পদ্মা সেতুর মতো টাকা বন্ধ করেছেন, তাকেও আবার পদ্মা নদীতে নিয়ে দুটি চুবনি দিয়ে উঠিয়ে নেয়া উচিত, মরে যাতে না যায়। পদ্মা নদীতে দুটি চুবনি দিয়ে সেতুতে উঠিয়া নেয়া উচিত। তাহলে যদি এদের শিক্ষা হয়।’
পদ্মা সেতু থেকে বিশ্বব্যাংকের সরে যাওয়ার পেছনে ড. ইউনূস ছাড়াও ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের ভূমিকা ছিল বলেও অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘পদ্মা সেতুর অর্থ বন্ধ করাল ড. ইউনূস। কেন? গ্রামীণ ব্যাংকের একটা এমডির পদে তাকে থাকতে হবে। তাকে আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম, গ্রামীণ ব্যাংকের উপদেষ্টা হতে, ইমেরিটাস উপদেষ্টা হিসেবে থাকার জন্য, আরও উচ্চ মানের। কিন্তু সেখানে সে থাকবে না। তার এমডিই থাকতে হবে। কিন্তু তার বয়সে কুলায় না।
‘কিন্তু প্রতিহিংসা নেয় ড. ইউনূস এবং যেটা আমরা শুনেছি মাহফুজ আনাম। তারা আমেরিকায় চলে যায়, স্টেট ডিপার্টমেন্টে যায়। হিলারির কাছে ইমেইল পাঠায়। বিশ্বব্যাংকের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মিস্টার জোয়েলিক তার শেষ কর্মদিবসে কোনো বোর্ডসভায় না, পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়।’
পর দিন মাহফুজ আনাম তার পত্রিকা দ্য ডেইলি স্টারে এক ব্যাখ্যায় বলেন, ‘আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই যে, আমি এ ধরনের উদ্দেশ্য নিয়ে কখনও যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাইনি, মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যাইনি, কখনও হিলারি ক্লিনটনকে কোনো ই-মেইল পাঠাইনি, ওয়াশিংটনে বা বিশ্বের অন্য কোনো জায়গায় বা শহরে পদ্মা সেতুর অর্থায়নের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত কোনো বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কোনো ধরনের বৈঠক বা যোগাযোগ করিনি।
‘বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই, আমার বিষয়ে করা মন্তব্য তথ্যভিত্তিক নয়।’
‘কাদেরের বক্তব্যে গুরুত্ব দিই না’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যকে খুব বেশি গুরুত্ব দেন না বলেও জানান মির্জা ফখরুল। বলেন, ‘তার (কাদের) কথা আমরা বেশি গুরুত্ব দিই না। কারণ কোনো সিদ্ধান্ত তিনি করেন না। সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা।’
বিএনপি একটি ‘পচনশীল দল’– ওবায়দুল কাদেরের এমন মন্তব্যের বিষয়ে ফখরুল বলেন, ‘একুশ বছর ক্ষমতার বাইরে ছিল আওয়ামী লীগ। সুতরাং ক্ষমতার বাইরে থাকলে পচনশীল হয় না। আমরা উচ্চগামী, ঊর্ধ্বগামী দল। আমরা যে ঊর্ধ্বগামী দল সেটা প্রমাণ করার জন্য একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন দরকার। আর কিচ্ছু দরকার নেই আমাদের।’
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের অর্থ খালেদার মৃত্যু কামনা নয়: কাদের
বিএনপি নির্বাচন ঠেকাতে পারবে না বলে ওবায়দুল কাদেরের মন্তব্যের জবাব জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, ‘দেখা যাক। এমন যদি তারা করে তখন দেখা যাবে কে ঠেকাতে পারে আর কে পারে না।’
আরও পড়ুন:নির্বাচনে অংশ নেয়া ছাড়া বিএনপির সামনে আর কোনো পথ খোলা নেই বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক।
শুক্রবার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতির সামনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে এক সমাবেশে অংশ নিয়ে তিনি এমন মন্তব্য করেন। সমাবেশের আয়োজন করে মহিলা আওয়ামী লীগ।
নির্বাচন ছাড়া বিএনপির সব পথ বন্ধ উল্লেখ করে নানক বলেন, ‘গত রমজান থেকেই বিএনপির প্রার্থীরা তাদের এলাকায় নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা আসলে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। এ ছাড়া তাদের কোনো পথ খোলা নেই। এখন হয়তো পানি ঘোলা করার চেষ্টা করছেন।’
আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘বিএনপি অহেতুক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। বিএনপির কর্মকাণ্ড মানুষ ভুলে নাই। তাদের নেতা নাই। নেতৃত্বশূন্য দল বিএনপি। তাই এখন পানি ঘোলা করে দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করছে। কোনো লাভ হবে না, বিএনপিকে নির্বাচনে আসতে হবে।’
মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিয়া খাতুনের সভাপতিত্বে সমাবেশের সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম। এ সময় আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকিসহ মহিলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোকে শিগগিরই সংলাপে আহ্বান জানানো হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।
শুক্রবার সকালে সাভার উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে ঢাকা জেলার সিনিয়র নির্বাচন অফিসের আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এ সময় সিইসি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আমরা কাজ করে যাচ্ছি। অনেকগুলো কাজ আমাদের করতে হবে। আজকে ভোটার তালিকা প্রণয়নের উদ্বোধন করা হয়েছে। আমরা সংলাপ করেছি। আলোচনা করে আমরা কমিশনাররা পরে সিদ্ধান্ত নেব। তারা বিভিন্ন জায়গায় আছেন। আমরা পরে সিদ্ধান্ত নেব কীভাবে আমরা রাজনৈতিক দলগুলোকে আহ্বান করব। তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করব।
‘আমরা অচিরেই বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে সংলাপে বা আলোচনায় বসার আহ্বান করব। তবে কবে তা ঠিক করে বলতে পারছি না। হয়তো দুই-এক মাসের মধ্যে এটা হতে পারে,’ যোগ করেন তিনি।
নির্বাচন কমিশনের সচিব হুমায়ন কবীর খোন্দকারের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যান, মেয়র ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার।
আরও পড়ুন:
পদ্মা সেতুতে নিয়ে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে টুস করে ফেলে দেয়ার যে কথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন সেটার অর্থ খালেদার মৃত্যু কামনা নয় বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
খালেদা জিয়ার মৃত্যু কামনা করলে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে ঘরে রেখে প্রধানমন্ত্রী উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতেন না বলেও মন্তব্য করেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা।
তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যকে ‘হত্যার হুমকি’ উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার নেয়া যে কথা বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তা ‘দুরভিসন্ধিমূলক, বিভ্রান্তিকর ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ আখ্যা দিয়ে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন কাদের।
প্রধানমন্ত্রীর কথা ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে বিএনপি দেশে বিভ্রান্তি তৈরির অপচেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
মির্জা ফখরুলের বক্তব্যের পরদিন শুক্রবার গণমাধ্যমে দেয়া এক বিবৃতিতে এভাবেই নিজের প্রতিক্রিয়া জানান আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এই নেতা।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধের মিশনে মাহফুজ আনামও: প্রধানমন্ত্রী
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ভালো করেই জানা উচিত যে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা যদি খালেদা জিয়ার মৃত্যুই কামনা করতেন তাহলে উচ্চ আদালতে একাধিকবার জামিন বাতিল হওয়ার পরেও দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে ঘরে রেখে উন্নত ও আধুনিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করতেন না, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে মেডিকেল বোর্ড গঠন করার সুযোগ দিতেন না।’
তিনি বলেন, ‘মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ শিষ্টাচারের কথা বলছেন। আমি তাকে বলতে চাই, বঙ্গবন্ধুকন্যাকে হত্যার উদ্দেশ্যে একুশে আগস্টের নারকীয় গ্রেনেড হামলাসহ অসংখ্যবার হত্যাচেষ্টার সময় কোথায় ছিল আপনাদের তথাকথিত শিষ্টাচার?’
যা বলেছিলেন ফখরুল
বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু নিয়ে বলতে গিয়ে অভিযোগ করেন গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মুহম্মদ ইউনূস এই সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন ঠেকানোর চেষ্টা করেন।
ড. ইউনূস ছাড়াও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা এবং সেতুর বিরোধিতাকারীদেরকে চুবনি দেয়ার কথা বলেন।
পরদিন ঠাকুরগাঁওয়ে এক মতবিনিময়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তিনি মনে করেন সরকারপ্রধানের এই বক্তব্য প্রচ্ছন্নভাবে খালেদা জিয়া ও ড. ইউনূসকে হত্যার হুমকি।
তিনি বলেন, ‘দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে তিনি রয়েছেন, যেভাবেই আসুন না কেন। তিনি এই ধরনের উক্তি করতে পারেন না।
‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী, তাকে সরাসরি হত্যার হুমকির শামিল। সেতু থেকে ফেলে দেয়া- এটা কখনই স্বাভাবিক ঘটনা হতে পারে না। আমরা বিস্মিত হয়েছি এবং ক্ষুব্ধ হয়েছি এবং প্রচণ্ডভাবে নিন্দা জানাই তার এই উক্তিকে।’
ড. ইউনূস সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন, সেটি নিয়ে ফখরুল বলেন, ‘এটাও পুরোপুরিভাবে আমি মনে করি যে সমস্ত রকম রাজনৈতিক শিষ্টাচার, শালীনতা, ভদ্রতা, সবকিছুর বাইরে। এই কথাটা বলার অর্থই হচ্ছে প্রচ্ছন্ন হুমকি বলা যায়। জীবনের প্রতি হুমকিই বলা যায়।’
প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার হুঁশিয়ার দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং এই ধরনের বক্তব্য থেকে বিরত থাকার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যথায় এই ধরনের উক্তি করলে তার যে আইনগত বিষয় থাকে, সেটা আমরা নেব।’
প্রধানমন্ত্রী যা বলেছিলেন
বুধবার রাজধানীতে আওয়ামী লীগের দলীয় এক আলোচনায় শেখ হাসিনা জানান, পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে বিশ্বব্যাংক যেন সরে যায়, সে জন্য ড. ইউনূস, ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক নানা সক্রিয় চেষ্টা চালিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু বানাচ্ছে, এই সেতু ভেঙে পড়ে যাবে- এই ধরনের বক্তব্য রাখায় খালেদা জিয়ার প্রতিও ক্ষোভ জানান শেখ হাসিনা।
নানা বক্তব্য উল্লেখ করে তিনি পদ্মা সেতুবিরোধীদের সেতুতে নিয়ে চোবানোর কথা বলেন।
খালেদা জিয়ার উক্তি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বলেছে, স্প্যানগুলো যে বসাচ্ছে, সেটা ছিল তার কাছে জোড়াতালি দেয়া। পদ্মা সেতু বানাচ্ছে, তাতে চড়া যাবে না, চড়লে সেটা ভেঙে যাবে। তার সঙ্গে তার কিছু দোসররা। তাদের কী করা উচিত? পদ্মা সেতুতে নিয়ে গিয়ে ওখান থেকে পদ্মা নদীতে টুস করে ফেলে দেয়া উচিত।’
ড. ইউনূসের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যিনি (ড. ইউনূস) এমডি পদের জন্য পদ্মা সেতুর মতো টাকা বন্ধ করেছেন, তাকেও আবার পদ্মা নদীতে নিয়ে দুটি চুবনি দিয়ে উঠিয়ে নেয়া উচিত, মরে যাতে না যায়। পদ্মা নদীতে দুটি চুবনি দিয়ে সেতুতে উঠিয়ে নেয়া উচিত। তাহলে যদি এদের শিক্ষা হয়।’
বদলে যাওয়া বাংলাদেশের মাইলফলক পদ্মা সেতু
এই মন্তব্য করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘‘আজকে যারা রাজনৈতিক স্বার্থে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতাকে অস্বীকার করার অপচেষ্টা চালান এবং বাংলাদেশে শ্রীলঙ্কার পরিণতি দেখতে সুপ্ত বাসনা লালন ও ষড়যন্ত্র করেন, তাদের বলতে চাই, পদ্মা সেতু শুধু একটি সেতু না; এটি জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অর্জিত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতার স্মারক।’
পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধে বিএনপিকেও দায়ী করেন কাদের। বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার পদ্মা সেতু নির্মাণের কার্যক্রম শুরু করার পর থেকেই বিএনপি ও তার দোসররা এর বিরুদ্ধে ক্রমাগত ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় এবং তারা চক্রান্ত করে বিদেশি অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়।
‘এরপরও দেশরত্ন শেখ হাসিনা দেশি অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তখন বেগম খালেদা জিয়াসহ একটি চিহ্নিত মহলের মন্তব্যগুলো ছিল কাণ্ডজ্ঞানবিবর্জিত ও দুরভিসন্ধিমূলক। এসব ষড়যন্ত্র ও রাজনৈতিক প্রোপাগাণ্ডা শুধু সরকার বিরোধিতাই ছিল না বরং দেশদ্রোহিতার শামিল।’
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তথাকথিত ‘হত্যার হুমকি’র বয়ান তৈরি করছে বলেও মন্তব্য করেন কাদের। বলেন, বিরোধী পক্ষকে দমন ও পীড়নের রাজনীতি আওয়ামী লীগ কোনোদিন করেনি।
আরও পড়ুন: আমার বিষয়ে করা মন্তব্য তথ্যভিত্তিক নয়: মাহফুজ আনাম
কাদের বলেন, ‘বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা স্বৈরাচার জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে ১৫ আগস্ট স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে বিএনপির হাত ধরেই হত্যা-ক্যু-ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষকে নির্মূল করার অপরাজনীতি শুরু হয়।
‘আর তারই ধারাবাহিকতায় জননেত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ বারবার আক্রমণের শিকার হয়েছে। এখনও চিহ্নিত এই মহলটি ক্রমাগতভাবে দেশের স্বার্থ ও জনকল্যাণবিরোধী বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘বেগম জিয়াসহ বিএনপি নেতারা বিভিন্ন সময়ে গণতন্ত্রের পীঠস্থান জাতীয় সংসদসসহ প্রকাশ্য জনসভায় যে ভাষায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মনগড়া মিথ্যাচার ও অশালীন বক্তব্য প্রদান করেছেন তার নজির পৃথিবীর কোনো সভ্য সমাজে নাই।’
বিএনপির শিষ্টাচারের ভাষা তো ‘গ্রেনেড, গুলি আর ষড়যন্ত্র’ বলেও উল্লেখ করেন কাদের। তিনি বলেন, ‘সুতরাং বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে শিষ্টাচার শিখাতে আসবেন না। এ দেশের রাজনীতিতে শিষ্টাচার ও উদারতা যদি কেউ দেখিয়ে থাকেন তিনি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। দেশবাসী ভালোভাবেই জানে, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা প্রতিহিংসার রাজনীতি করেন না।’
আরও পড়ুন:কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ছয়জন নির্বাচন করছেন। তাদের মধ্যে সাবেক বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কু হলফনামায় উল্লেখ করেছেন তার নগদ টাকা রয়েছে কোটি টাকার বেশি।
আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত জানিয়েছেন, তার নগদ টাকা নেই।
কী আছে সাক্কুর হলফনামায়
তার শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি। নিজের ও স্ত্রীর মিলে দুটি গাড়ি রয়েছে। তার পেশা ঠিকাদারি।
তবে মেয়র থাকাকালীন তিনি ঠিকাদারি কাজ করেননি। নগদ টাকা আছে ১ কোটি ৩৭ লাখ ৫৯ হাজার ৮৯২ টাকা। ব্যাংকে আছে ২ লক্ষ ৯৪ হাজার টাকা। স্বর্ণ আছে নিজের ১০ তোলা, স্ত্রীর ১০ তোলা। দুদক ও আয়কর বিভাগের দুই মামলা বিচারাধীন।
কী আছে রিফাতের হলফনামায়
তার শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ। তার দুটি গাড়ি রয়েছে। পেশা ঠিকাদারি। নগদ টাকা নেই। ব্যাংকে আছে ৬১ লাখ ২ হাজার ৪৯৫ টাকা। পোস্টাল সেভিংসে আছে ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৪৫৪ টাকা।
স্বর্ণ নিজের ২০ ভরি, স্ত্রীর রয়েছে ৩০ ভরি। কোনো মামলা চলমান নেই।
আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী মাসুদ পারভেজ খান ইমরান উল্লেখ করেন, তার শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএসএস। নিজের ও স্ত্রীর মোট দুটি গাড়ি রয়েছে। তার পেশা ঠিকাদারি।
নগদ টাকা আছে ২ লাখ ৪২ হাজার ৭৪২ টাকা। ব্যাংকে আছে ৩ লাখ ১৭ হাজার ২৮৮ টাকা। স্বর্ণ নিজের ২৫ তোলা, স্ত্রীর রয়েছে ৫০ তোলা। তার নামে ফৌজদারি দুটি মামলা বিচারাধীন।
স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা কায়সার উল্লেখ করেন, তার শিক্ষাগত যোগ্যতা বিকম। তার গাড়ি নেই। পেশা ব্যবসা। নগদ টাকা আছে ৩৮ লাখ ৭২ হাজার ৯৩৫ টাকা। ব্যাংকে আছে ৩ লাখ ২ হাজার ৪৯৭ টাকা। স্বর্ণ নিজের ২০ তোলা, স্ত্রীর আছে ২০ ভরি। তার আটটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান বাবুল উল্লেখ করেন, তার শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি। তার গাড়ি নেই। পেশা ব্যবসা। নগদ টাকা আছে ৩ লাখ ২০ হাজার, পাশে লেখা ব্যবসার পুঁজি। ব্যাংকে আছে ৫ হাজার টাকা। স্বর্ণ বিয়ের উপহার ৩০ ভরি। তার দুটি মামলা বিচারাধীন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী রাশেদুল ইসলাম উল্লেখ করেন, তার শিক্ষাগত যোগ্যতা কামিল। যা এমএ সমমান। গাড়ি নেই। পেশায় কলেজশিক্ষক।
তার নগদ টাকা আছে ৫০ হাজার। ব্যাংকে আছে ২ লাখ ৪২৮ টাকা। স্ত্রীর স্বর্ণ আছে দুই ভরি। তার নামে মামলা নেই।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহার শেষ তারিখ ২৬ মে। ২৭ মে প্রতীক বরাদ্দ। ১৫ জুন নির্বাচন হবে।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে মেয়র পদে ৬ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।
কাগজপত্রে অসংগতি থাকায় ৯ জন সাধারণ কাউন্সিলর ও একজন সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীর মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
কুমিল্লা শিল্পকলা একাডেমিতে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে বৃহস্পতিবার বিকেলে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহেদুন্নবী এ ঘোষণা দেন।
মেয়র পদে মনোনয়নপত্রে বৈধতা পেয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত, স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু (বিএনপি), মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন কায়সার (বিএনপি), কামরুল আহসান বাবুল ও মাসুদ পারভেজ খান ইমরান এবং ইসলামী আন্দোলনের রাশেদুল ইসলাম।
নির্বাচন কমিশন থেকে জানা যায়, ১৭ মে মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিনে ১৬৪ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন। এর মধ্যে ৬ মেয়র প্রার্থী, ১২০ সাধারণ কাউন্সিলর এবং ৩৮ সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী।
মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করা প্রার্থীরা হলেন ২ নম্বর ওয়ার্ডের বিল্লাল হোসেন, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কবির আহমেদ, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মো. এরশাদ হোসেন, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের আবুল কালাম আজাদ, ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের সৈয়দ রুমন আহমেদ, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের জুয়েল, ২১ নম্বর ওয়ার্ডের মো. মিন্টু, জামাল হোসেন কাজল ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের আবুল কালাম আজাদ।
সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ফারজানা আক্তারের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহেদুন্নবী জানান, মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করা প্রার্থীরা ২০ থেকে ২২ মের মধ্যে আপিল করতে পারবেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য