তেলের দাম রোজার পর বাড়বে- এমন আভাস পেয়ে বেশিরভাগ ব্যবসায়ী ঈদের আগে থেকেই তেল মজুত করতে শুরু করেন। এতে বাজারে দেখা দেয় তেলের সংকট।
লুকিয়ে রাখা সেসব তেল উদ্ধারে চলতি সপ্তাহে দেশজুড়ে অভিযানে নামে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। বেরিয়ে আসতে থাকে বেশি দামে বিক্রির জন্য তেল লুকিয়ে রাখার প্রমাণ।
নিউজবাংলার জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে জানা গেছে, রাজধানী ছাড়া সারা দেশে গত শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত জব্দ করা হয়েছে অবৈধভাবে মজুত করা ১০ লাখ ৪১ হাজার ৪২২ লিটার ভোজ্যতেল।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পাশাপাশি প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসব অভিযান অংশ নেয়। জব্দ করা এসব তেল ন্যায্য দামে বিক্রি করা হয় সাধারণ মানুষের কাছে।
রাজশাহী
রাজশাহী বিভাগে গত ৫ দিনে সবচেয়ে বেশি ৩ লাখ ৭৫ হাজার ৬২৭ লিটার লুকিয়ে রাখা ভোজ্যতেল জব্দ করা হয়। এর মধ্যে রাজশাহী ও পাবনায় জব্দ হওয়া তেলের পরিমাণ বেশি।
রাজশাহীতে খুঁজে পাওয়া গেছে মোট ১ লাখ ৫৭ হাজার ৩৯ লিটার তেল। অবৈধভাবে মজুতের দায়ে গ্রেপ্তার করা হয় ৭ জনকে। জরিমানা করা হয় ১ লাখ ৯১ হাজার টাকা।
এর মধ্যে পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর বাজারে মঙ্গলবার বিকেলে চারটি গুদাম ও একটি ট্রাক থেকে ৯২ হাজার ৬১৬ লিটার ভোজ্যতেল জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয় পাঁচ জনকে।
পাবনার সদর, ঈশ্বরদী, সুজানগর, বেড়া ও সাঁথিয়ায় ৫ দিনে অভিযান চালিয়ে পাওয়া গেছে ১ লাখ ২৪ হাজার ১৩৭ লিটার তেল।
সিরাজগঞ্জে জব্দ হয়েছে ৪১ হাজার লিটার সয়াবিন তেল। জেলার উল্লাপাড়া, বেলকুচি ও সলঙ্গা থানা এলাকার বাজারগুলোতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এই অভিযান চালিয়ে ৬ ব্যবসায়ীকে সাজা দেয়।
বগুড়ায় অভিযানে পাওয়া গেছে ৪৩ হাজার ৫৯২ লিটার তেল।
এর মধ্যে বুধবার দিনব্যাপী বগুড়া সদর, গাবতলী ও কাহালু উপজেলায় তিনটি অভিযান চলে। এ দিন কাহালুতে সবচেয়ে বেশি ৭ হাজার লিটার, গাবতলীতে ৪ হাজার ৯০০ লিটার ও শহরের নামাজগড় এলাকায় লক্ষ্মী ট্রেডার্স নামে একটি দোকানে ৬৮৪টি বোতলজাত তেল জব্দ করা হয়।
পরদিন বগুড়ার শেরপুরের হাটখোলা রোড এলাকায় আনোয়ার হোসেন নামে এক ব্যবসায়ীর গুদাম থেকে মিলেছে ৩১ হাজার ৮ লিটার সয়াবিন তেল।
নাটোরের বড়াইগ্রাম, সদর উপজেলার নিচাবাজার ও স্টেশন বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৫ হাজার ৩৫৯ লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করা হয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের বটতলা হাট এলাকার মেসার্স কাজল স্টোর নামে একটি দোকানের গুদামে ৪ হাজার ৫০০ লিটার তেল পেয়ে দোকানমালিক আবু বাক্কার আলী কাজলকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
খুলনা বিভাগ
এই বিভাগে রাজশাহীর পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩ লাখ ১৮ হাজার ৪৪৬ লিটার তেল জব্দ করা হয়েছে। জরিমানা করা হয়েছে ৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকা।
এর মধ্যে সব থেকে বেশি তেল পাওয়া গেছে খুলনার বড়বাজারে। বৃহস্পতিবার দুপুরে বাজারের তিনটি প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া যায় ২ লাখ ২২ হাজার ৬২০ লিটার খোলা তেল। এ বাজারে গত মঙ্গলবার আরেকটি গুদাম থেকে ৪০ হাজার লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করা হয়।
এ সপ্তাহে বাগেরহাটে দুটি অভিযানে ৫ হাজার ৪১০ লিটার তেল জব্দ করে ৩ ব্যবসায়ীকে ৯০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে বৃহস্পতিবার এক ব্যবসায়ীর গুদাম থেকে ৪২ হাজার ২৪ লিটার তেল জব্দ করেছে প্রশাসন।
যশোরে মঙ্গল ও বুধবার ৭ হাজার ৪১৮ লিটার তেল মজুদ করার দায়ে দুই ব্যবসায়ীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
এছাড়া গত ১১ মে সাতক্ষীরার পুরাতন সাতক্ষীরা এলাকার সাকার মোড়ের শারমিন ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ও সুলতানপুর বড়বাজারে অভিযান চালিয়ে ৯৭৪ লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করা হয়।
মাগুড়া, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, নড়াইল ও চুয়াডাঙ্গা থেকে অভিযানের তথ্য পাওয়া যায়নি।
রংপুর বিভাগ
গত ৫ দিনে এই বিভাগের বিভিন্ন গুদাম থেকে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৭২০ লিটার তেল জব্দ করা হয়েছে।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মজুদ পাওয়া গেছে ঠাকুরগাঁওয়ে, যার পরিমাণ ৭৯ হাজার ২৫০ লিটার।
রংপুরে ৬৭ হাজার ৩৬২ লিটার ভোজ্যতেল জব্দ করা হয়েছে বলে জানান ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আরিফ মিয়া।
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ বাজারে একটি দোকানে মিলেছে ৭ হাজার লিটার তেল। দিনাজপুরে জব্দ করা তেলের পরিমাণ ৪ হাজার লিটার।
এছাড়া ৫ দিনে গাইবান্ধায় ৭০০ লিটার, পঞ্চগড়ে ৩২০ লিটার সয়াবিন তেল, কুড়িগ্রামে জব্দ করা হয়েছে ৮৮ লিটার তেল।
এই বিভাগে লালমনিরহাটে এখনও কোনো অভিযান হয়নি।
ঢাকা বিভাগ
রাজধানী ছাড়া এই বিভাগের ৭ জেলায় গত শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৫৫ হাজার ২১২ লিটার ভোজ্যতেল জব্দ করা হয়েছে। সেগুলো পরে ন্যায্যমূলে সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করা হয়।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অবৈধ মজুদ পাওয়া যায় গাজীপুরে। এই জেলায় মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার মিলিয়ে ২৫ হাজার ৩১৬ লিটার তেল জব্দ করে বিক্রি করা হয়। শরীয়তপুরে পাওয়া যায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ৭০০ লিটার। মানিকগঞ্জে উদ্ধার হয়েছে ১১ হাজার লিটার।
নারায়ণগঞ্জে ১ হাজার ২৬০ লিটার, নরসিংদীতে ১ হাজার ২৪ লিটার, ফরিদপুরে ৭১২ লিটার এবং কিশোরগঞ্জে ২০০ লিটার উদ্ধার করা হয়।
অন্য ৬ জেলায় এ পাঁচদিনে তেলের কোনো অবৈধ মজুত পাওয়া যায়নি।
চট্টগ্রাম বিভাগ
শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৫ দিনে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানে ৫১ হাজার ৯৯৭ লিটার তেল উদ্ধারের পর ৮ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৩ হাজার ২২৫ লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করা হয়েছে চট্টগ্রামে।
জেলার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্ল্যাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাজারে তেল সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে আমরা নিয়মিত তদারকিমূলক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি৷ ভোক্তাদের অধিকার রক্ষায় অবৈধ মজুতদারদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান।’
কুমিল্লায় ১৭ হাজার ৩৬৪ লিটার তেলের অবৈধ মজুত পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন জেলার ভোক্তা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আছাদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘গত রোববার ২ হাজার ৫০০ লিটার, সোমবার ১ হাজার লিটার, বুধবার ৫ হাজার ৫০০ লিটার এবং বৃহস্পতিবার ৮ হাজার ৩৬৪ লিটার তেল জব্দ করে বিক্রি করা হয়।’
এছাড়া লক্ষ্মীপুরে ৬ হাজার লিটার, খাগড়াছড়িতে ৩ হাজার ৭০০ লিটার, ফেনীতে ৯২৮ লিটার, কক্সবাজারে ২৪০ লিটার, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩৪০ লিটার এবং নোয়াখালীতে ২০০ লিটার তেল জব্দ করা হয়েছে।
ময়মনসিংহ বিভাগ
এই বিভাগের ৪ জেলায় এ কয় দিনে জব্দ করা হয় ৩০ হাজার ৬২ লিটার তেল।
এর মধ্যে বৃহস্পতিবার ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারবাড়ী বাজারে ২০ হাজার লিটার তেল পেয়ে মেসার্স সেলিম ওয়েল মিলকে ১০ হাজার টাকা ও আঠারবাড়ী ওয়েল মিলকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ময়মনসিংহের সহকারী পরিচালক নিশাত মেহের এসব তথ্য জানিয়েছেন।
বুধবার দুপুরে নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ উপজলায় সদরের কাচারি রোডের মেসার্স মঙ্গল দত্ত ও পারুল ভান্ডার নামের দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের গুদাম থেকে ৭৩২ লিটার বোতলজাত তেল জব্দ করে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
একইদিন বিকেলে কলমাকান্দা উপজেলার ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম মোস্তফার গুদাম থেকে ৩ হাজার ৭০০ লিটার তেল জব্দ করা হয়।
শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে বিক্রি না করে লুকিয়ে রাখা ৫ হাজার লিটার তেল জব্দ করা হয়। জেলার গাজীর খামার বাজারে সাথী স্টোর নামে একটি খুচরা বিক্রেতার দুইটি গুদাম ও বাসায় পাওয়া যায় আরও ৫ হাজার লিটার তেল।
জামালপুরের দুইটি দোকান থেকে বৃহস্পতিবার দুপুরে জব্দ করা হয় ৪ হাজার ৩৩০ লিটার সয়াবিন তেল।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর জামালপুরের সহকারী পরিচলাক আরিফুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই দোকানগুলোতে তেল বিক্রি না করে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছিল।’
বরিশাল বিভাগ
এই বিভাগে শনিবার থেকে এখন পর্যন্ত বিক্রি না করে লুকিয়ে রাখা ২৭ হাজার ৬৫৯ লিটার ভোজ্যতেল উদ্ধার করে জনসাধারণের মধ্যে বিক্রি করা হয়েছে।
এ বিভাগে জেলার সংখ্যা ছয়টি, এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি তেল উদ্ধার হয়েছে ঝালকাঠিতে। বরিশাল, বরগুনাত ও পিরোজপুরেও কিছু তেল পাওয়া গেছে। পটুয়াখালী ও ভোলায় কোনো লুকানো তেল পাওয়া যায়নি এ গত ৫ দিনে।
ঝালকাঠির তামাকপট্টি এলাকায় সোমবার মনোজ স্টোরে অভিযান চালিয়ে ৭০০ লিটার সয়াবিন তেল উদ্ধার করা হয়। দোকান মালিককে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় এবং উদ্ধার করা তেল আগের দামে বিক্রি করা হয়।
মঙ্গলবারের অভিযানে অবৈধভাবে তেল মজুদ করার দায়ে ব্যবসায়ী গৌতম হালদারকে ৩০ হাজার টাকা ও বিমল রায় স্টোরকে ২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। গৌতমের গুদাম থেকে ১৩ হাজার ৭৪৬ লিটার তেল উদ্ধার করা হয়।
ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর বরিশাল জেলার সহকারী পরিচালক শাহ সোয়েব জানান, বৃহস্পতিবার রহমতপুর বাজারে ৬১৫ লিটার, বাটাজোর বাজারে ১ হাজার ২৩০ লিটার খোলা তেল উদ্ধার করা হয়। জনপ্রিয় স্টোর থেকে উদ্ধার করা হয় ২৬৪ লিটার মোড়ক জাত সয়াবিন তেল।
বুধবার হাটখোলা এলাকায় একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তিন ড্রাম তেল পাওয়া যায়। আগের দিন বিভিন্ন এলাকায় উদ্ধার হয় ৭০০ লিটার।
বরগুনা জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক বিপুল বিশ্বাস জানান, পাথরঘাটা বাজারে শাহিন স্টোরে বিক্রি না করে ৩ হাজার লিটার তেল লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। এগুলো আগের দামে সাত দিনের মধ্যে বিক্রি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এসব ঘটনায় দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে মোট ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার শ্রীরামকাঠী বাজারের কয়েকটি দোকানের গুদামে বৃহস্পতিবার অভিযান চালিয়ে ১০ হাজার ৪০৪ লিটার সয়াবিন ও পাম তেল জব্দ করা হয়েছে। সহকারী কমিশনার (এসিল্যান্ড) আল-মামুন নিউজবাংলাকে জানান, এর মধ্যে ৭ হাজার ৫৪৮ লিটার সয়াবিন তেল ও ২ হাজার ৮৫৬ লিটার ছিল পাম তেল।
সিলেট
গত বুধবার থেকে ২ দিনে বিভাগের ৪ জেলা থেকে ২৩ হাজার ৬৯৯ লিটার তেল জব্দ করা হয়েছে। এসব তেল নতুন করে দাম বাড়ানোর আগের দামে বিক্রির পাশাপাশি মজুদকারীদের জরিমানা করা হয়।
সিলেট নগরের কালিঘাটে মাহের ব্রাদার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানের গুদাম থেকে মঙ্গলবার ৫ হাজার লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করা হয়। পরদিন কাজীটুলা এলাকায় কামাল ব্রাদার্স নামে প্রতিষ্ঠানের মালিক কামাল আহমেদের বাসা থেকে জব্দ করা হয় ৪ হাজার ৬৯৯ লিটার তেল। তাকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার চিনাকান্দি বাজারে অভিযান চালিয়ে ১ হাজার লিটার, দোয়ারাবাজার উপজেলায় ৬ প্রতিষ্ঠান থেকে ৮ হাজার লিটার তেল জব্দ করা হয়েছে।
মৌলভীবাজারের প্রায় ৪ হাজার লিটার তেল জব্দ করা হয়েছে দুদিনে। এর মধ্যে বড়লেখায় মেসার্স সামছু অ্যান্ড ব্রাদার্সের গুদামে থেকে ৩ হাজার ৫০০ লিটার তেল পাওয়া গেছে।
হবিগঞ্জে গত শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত জেলা সদর, নবীগঞ্জ ও শায়েন্তাগঞ্জে তিনটি অভিযান চালানো হয়। এ সময় ৫০০ লিটার তেল জব্দ করা হয়। জরিমানা করা হয় ৮ জন ব্যবসায়ীকে।
আরও পড়ুন:গাইবান্ধায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও মোবাইল ব্যবহারের মাধ্যমে জালিয়াতির অভিযোগে আটক পরীক্ষার্থীসহ ৩৭ জনের নামে মামলা করা হয়েছে।
র্যাব-১৩ রংপুর বিভাগের অধিনায়ক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে, শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে জেলার বিভিন্ন কেন্দ্র ও স্থান থেকে তাদের আটক করে র্যাব-১৩ গাইবান্ধা ক্যাম্পের সদস্যরা। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে ৩২ জন এই নিয়োগ পরীক্ষার পরীক্ষার্থী এবং পাঁচজন বহিরাগত।
গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) দেওয়ান মওদুদ আহমেদ মোবাইল ফোনে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রথম ধাপের গাইবান্ধার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও নকলমুক্ত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সহায়তা নেয়া হয়েছে। তারা বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে পরীক্ষায় ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও মোবাইল ব্যবহার করে অসদুপায়ে পরীক্ষা দেয়ার সময় ৩৭ জনকে আটক করে এবং কেন্দ্র থেকেই একই অভিযোগে ৩৬ জনকে বহিষ্কার করা হয়।’
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১৩ রংপুর বিভাগের অধিনায়ক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব জানতে পারে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করে পরীক্ষা দিচ্ছে কিছু পরীক্ষার্থী। পরে অভিযান চালিয়ে গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন কেন্দ্রে থেকে ৩২ জন পরীক্ষার্থী ও এই চক্রের হোতা মারুফ, মুন্না, সোহেল, নজরুল ও সোহাগসহ মোট ৩৭ জনকে আটক করা হয়। পরে তাদের কাছ থেকে ২২টি মাস্টার কার্ড, ১৯টি ব্লুটুথ ডিভাইস, ১৬টি মোবাইল, স্ট্যাম্প ও ব্যাংক চেক উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরও জানান, আটককৃত পরীক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় ইলেকট্রনিক ডিভাইস এবং মোবাইলের মাধ্যমে সুকৌশলে পরীক্ষা দিয়ে আসছিল। চক্রের এই পাঁচ সদস্য বিভিন্ন পরীক্ষার্থীকে ১৪ থেকে ১৮ লাখ টাকায় চাকরি দেয়ার শর্তে অংশগ্রহণ করায়। এর মধ্যে এই চক্রের সোহেল নামে এক সদস্য ডিভাইস সংগ্রহ ও বিতরণ করেন, নজরুল পরীক্ষার্থী সংগ্রহ করতেন এবং মারুফ ও মুন্না বাহির থেকে প্রশ্নপত্র সমাধান করে পরীক্ষার্থীদের কাছে সরবরাহ করেন।
র্যাব-১৩ রংপুর বিভাগের অধিনায়ক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পরীক্ষার্থীরা জালিয়াতি চক্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করেছে। উক্ত ঘটনার সঙ্গে জড়িত জালিয়াতি চক্রের অন্যান্য সদস্যদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে। পাশাপাশি আটককৃতদের নামে মামলা করে গাইবান্ধা সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।’
গাইবান্ধার সাত উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই সহকারী শিক্ষক পদে প্রায় ৭০০টি শূন্য পদের বিপরীতে চাকরিপ্রার্থী ৩০ হাজার ৮৮ জন। এরমধ্যে উপস্থিত ২২ হাজার ৮১৩ জন পরিক্ষার্থী জেলার সদর, পলাশবাড়ি ও ফুলছড়িসহ তিন উপজেলার ৪৭টি কেন্দ্রে সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত এক ঘণ্টা লিখিত (এমসিকিউ) প্রথম ধাপের পরীক্ষায় অংশ নেয়।
আরও পড়ুন:বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার যশোরের যুবদল নেতাকে হাসপাতালে চিকিৎসার সময় ডান্ডাবেড়ি পরানোর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা রিটের শুনানি শেষে আদেশের জন্য সোমবার দিন ঠিক করে দিয়েছে হাইকোর্ট।
বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার এ দিন ঠিক করে দেয়।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
যুবদল নেতা আমিনুর রহমান মধুকে চিকিৎসার সময়ও ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে রাখার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে তার স্ত্রী হাইকোর্টে এ রিট করেন।
গত ২৯ নভেম্বর যুবদল নেতাকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার ঘটনায় প্রকাশিত সংবাদের বিষয়টি আদালতের নজরে আনা হয়। ওই দিন বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী। তিনি আদালতের কাছে স্বতঃপ্রণোদিত আদেশ প্রার্থনা করেন।
তখন হাইকোর্ট বলেছিলেন, ‘জঙ্গি সম্পৃক্ততাসহ হেইনাস ক্রাইমের (জঘন্য অপরাধের) ক্ষেত্রে সাধারণত অপরাধীকে ডান্ডাবেড়ি পরানো হয়। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের একাধিক সিদ্ধান্তও রয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে ডান্ডাবেড়ি পরানো যাবে, সে বিষয়ে গাইডলাইন আছে।’
তখন আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে আদেশ দেবেন না বলে রিট করার পরামর্শ দেন। তার পরিপ্রেক্ষিতেই মধুর স্ত্রী রিট করেন।
প্রেক্ষাপট
গত ২ নভেম্বর যশোর সদর উপজেলার দেয়াড়া ইউনিয়নের আমদাবাদ গ্রাম থেকে পুলিশ মধুকে আটক করে। এরপর ১২ নভেম্বর যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা অবস্থায় আমিনুর রহমান মধু হৃদরোগে আক্রান্ত হন। কারাগার থেকে তার দুই পায়ে ডান্ডাবেড়ি ও হাতকড়া লাগিয়ে প্রথমে যশোরের ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখানে অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ওই রাতেই তাকে কেরানীগঞ্জ কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। পরের দিন কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তাকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়।
দুই পায়ে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে ও ডান হাতে হাতকড়া লাগানো অবস্থায় হাসপাতালের মেঝেতে রেখে মধুকে চিকিৎসা দেয়ার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন:পিতা-পুত্রকে ডিবি পরিচয়ে ‘অপহরণ করে’ চাঁদা দাবি এবং পরে তা না পেয়ে ছেলেকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেয়ার ঘটনায় অবশেষে শাস্তি পেলেন বরিশালের কাউনিয়া থানার এসআই রেদোয়ান হোসেন রিয়াদ। আর এ ঘটনায় জামিনে মুক্তি মিলেছে নগরীর আলেকান্দা সরকারি কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র আব্দুল্লাহ বিন লাদেন।
নিজ থানা এলাকার বাইরে গিয়ে অভিযান পরিচালনা করায় বৃহস্পতিবার এসআই রিয়াদকে ক্লোজ করে বরিশাল পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে। আর এদনি বিকেলে আদালতে জামিন আবেদনের মাধ্যমে কারাগার থেকে মুক্তি মিলেছে আব্দুল্লাহ বিন লাদেনের।
এসআই রিয়াদকে ক্লোজ করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলাম। অন্যদিকে লাদেনের জামিনের বিষয়টি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিউজবাংলকে নিশ্চিত করেন তার বাবা মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের চরফেনুয়া এলাকার বাসিন্দা কৃষক মোসলেম জমাদ্দার।
শুধু ক্লোজ করাই নয়, তাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া অপরাধে সুষ্ঠু বিচার ও এসআই রিয়াদ ও তার সঙ্গে থাকা ব্যক্তির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দবি জানিয়েছেন মোসলেম জমাদ্দার। পাশাপাশি তিনি পুরো ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করে মিথ্যে অভিযোগের মামলা থেকে নিরপরাধ ছেলের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন।
নিউজবাংলাকে কৃষক মোসলেম জমাদ্দার জানান, বৃহষ্পতিবার দুপুরে তিনি তার ভাতিজাকে সঙ্গে নিয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে দেখা করেন। এসময় তিনি ২১ নভেম্বর ঘুটে যাওয়া পুরো ঘটনা কমিশনারকে খুলে বলেন এবং ন্যায়বিচার দাবি করেন। পরে তিনি এসআই রিয়াদ ও তার সঙ্গে থাকা ব্যক্তির বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ পুলিশ কমিশনারের হাতে তুলে দেন।
তিনি বলেন, ‘পুলিশ কমিশনার স্যারের কথায় আমি আশ্বস্ত। তিনি কথা দিয়েছেন- আমার ও আমার ছেলের সঙ্গে ঘটা অন্যায়ের ন্যায়বিচার পাব। আর ছেলে নিরাপরাধ, সেটারও প্রমাণ হবে।’
এ বিষয়ে পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘পুরো ঘটনাটি এরমধ্যেই উপ-পুলিশ কমিশনার কে (উত্তর) খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। তিনি বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন।
‘প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের ওই উপ-পরিদর্শক (এসআই) যে নিজ থানা এলাকার বাহিরে গিয়েছিলেন, সে বিষয়টি উঠে এসেছে। তাই তাকে ক্লোজ করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
উল্লেখ্য, জমিজমা নিয়ে প্রতিপক্ষের সঙ্গে চলা মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে গত ২১ নভেম্বর সকাল উপবন নামক লঞ্চযোগে শ্রীপুর থেকে বরিশালের লঞ্চঘাটে আসেন মোসলেম ও তার ছেলে আব্দুল্লাহ ওরফে লাদেন। কোতোয়ালি মডেল থানাধীন লঞ্চঘাটের গেট থেকে বের হওয়ার সময় ডিবি পরিচয় দিয়ে এসআই রেদওয়ান হোসেন রিয়াদ ও তার সঙ্গে থাকা অপর এক লোক বাবা-ছেলেকে তল্লাশি করে। কথিত মাদক উদ্ধারের নামে তাদের সঙ্গে নিয়ে দিনভর নগরের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ১ লাখ টাকা দাবি করেন এসআই রিয়াদ। টাকা আদায়ে প্রথমে বিকাশ নম্বর ও পরে বাবাকে ছেড়ে দিয়ে ছেলেকে কাউনিয়া থানায় আটকে রাখেন তিনি। পরে স্বজনদের মাধ্যমে ঘটনাটি গণমাধ্যমকর্মী ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানতে পারেন।
নিজের ঝুঁকির কথা বুঝতে পেরে কথিত তিন পিস ইয়াবা উদ্ধারের রহস্যময় কাহিনী জুড়ে দিয়ে কাউনিয়া থানায় আটক থাকা আব্দুল্লাহকে কোতোয়ালি থানায় হস্তান্তর করেন এসআই রিয়াদ। পরে নিজে বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে একটি মামলাও ঠুকে দেন তিনি। এ ঘটনায় প্রমাণ মেলে, কাউনিয়া থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও এসআই রিয়াদ কোতোয়ালি থানার সহযোগিতা ছাড়াই লাদেনকে আটক করেন।
পরে এসআই রিয়াদকে বাঁচাতে নানাভাবে নিজের বিবৃতি পরিবর্তন করেন কাউনিয়া থানার ওসি মো. আসাদুজ্জামান। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে যৌক্তিক কোনো প্রশ্নেরই সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
আরও পড়ুন:পিতা-পুত্রকে ডিবি পরিচয়ে ‘অপহরণ করে’ চাঁদা দাবি এবং পরে তা না পেয়ে ছেলেকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেয়ার ঘটনায় ফুঁসছে বরিশালবাসী। এ ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) রেদোয়ান হোসেন রিয়াদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে বরিশাল মেট্রোপলিটন এলাকার কাউনিয়া থানার ওসি মো. আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে। একেক সময় তার একেক রকম বিবৃতিতে বিভ্রান্ত সংবাদকর্মীরাও।
মঙ্গলবার সকালে জমিজমা-সংক্রান্ত একটি মামলায় হাজিরা দিতে মেহেন্দিগঞ্জের শ্রীপুর থেকে লঞ্চযোগে বরিশাল নদী বন্দরে আসেন মোসলেম জোমাদ্দার ও তার কলেজ পড়ুয়া ছেলে আব্দুল্লাহ বিন লাদেন। উপবন নামের একটি লঞ্চ থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গেই দুইজন ব্যক্তি নিজেদের ডিবি পরিচয় দিয়ে লাদেন ও তার বাবা মোসলেমকে তল্লাশি শুরু করেন। একপর্যায়ে নিচে পড়ে থাকা একটি নীল রঙের কাগজ দেখিয়ে তারা বলেন- ‘এই তো পেয়েছি’। তারা ঠিক কী পেয়েছেন, তা তারাই জানতেন। এরপর নদীবন্দর থেকে লাদেনকে মোটরসাইকেলে করে আর মোসলেমকে রিকশায় করে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে নিয়ে যাওয়া হয়। একপর্যায়ে লাদেনকে মারধর শুরু করেন ডিবি পরিচয় দেয়া ওই দুইজন। এক লাখ টাকা না দিলে তাদের ছাড়া হবে না বলে জানান তারা। সবশেষ ৪০ হাজার টাকায় সমঝোতা করতে রাজি হন তারা।
পরে বাবা মোসলেমকে ছেড়ে দিয়ে ছেলেকে আটকে রাখা হয় এবং জানা যায় ডিবি পরিচয় দেয়া ওই দুই ব্যক্তির একজন কাউনিয়া থানার এসআই রেদোয়ান হোসেন রিয়াদ। তিনি প্রথমে তিন পিস ইয়াবা পাওয়ার দাবি করে লাদেনকে কাউনিয়া থানায় আটকে রাখেন। তবে তাকে ধরে আনা হয় কোতোয়ালী থানা এলাকা থেকে।
এ বিষয়ে শুরুতে কাউনিয়া থানার ওসি মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘রিয়াদ (এসআই) মাদক বিরোধী অভিযান চালিয়ে ৩ পিস ইয়াবাসহ ওই যুবককে আটক করেছেন- এমন খবর আমার কাছে রয়েছে। তার কাছে নাকি আরও ইয়াবা পাওয়ার কথা ছিল। অভিযান শেষ করে বিকেলে তাকে (লাদেন) থানায় রেখে যান তিনি।’ এমনকি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
কিন্তু ওই রাতেই বদলে যায় ওসি আসাদুজ্জামানের সুর। এসআই রিয়াদের পক্ষে সাফাই গেয়ে তখন তার দাবি ছিল, এক হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধারে অভিযান চালিয়েছিলেন এসআই রিয়াদ। অভিযানে লাদেনকে তিন পিস ইয়াবাসহ আটক করা হয়েছে।
সে সময় এক থানা পুলিশ অন্য থানা এলাকায় অভিযান চালাতে পারে কি না- এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে ব্যর্থ হন ওসি।
পরে বুধবার দুপুরে ওসি আসাদুজ্জামান জানান, ধাওয়া দিয়ে ধরতে গিয়ে ঘটনাস্থল কোতোয়ালি মডেল থানার মধ্যে গিয়ে পড়ে। তাই নিয়মানুযায়ী ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মামলাটি কোতোয়ালি মডেল থানায় করা হয়েছে এবং মামলার আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কাউনিয়া থানা থেকে অল্প সময়ের মধ্যেই কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এখানে নিয়মের কোন ব্যত্যয় ঘটেনি। পাশাপাশি লাদেনের বিরুদ্ধে কাউনিয়া থানার এসআই রেদওয়ান হোসেন রিয়াদও কোতোয়ালি মডেল থানায় মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা করেছেন।
ঘটনার সত্যতা অনুসন্ধানে মঙ্গলবার রাতেই সরেজমিনে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউনিয়া থানায় হাজির হয় নিউজবাংলা। এ সময় দেখা যায়, থানা গারদে আটকে রাখা হয়েছে কলেজ ছাত্র আব্দুল্লাহ বিন লাদেনকে। গারদ থেকেই লাদেনের সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার।
সে সময় লাদেন বলে, ‘আদালতে হাজিরা দিতে যাওয়ার পথে লঞ্চঘাট থেকে আমাদের ডিবি বলে তুলে নেন এসআই রিয়াদ স্যার ও আরেকজন। পরে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরিয়ে বিকেলে টাকা দাবি করে আব্বাকে ছেড়ে দেন তারা। কিন্তু আমাকে ইয়াবার মামলা দিয়ে থানায় নিয়ে আসেন। আমি বিড়ি-সিগারেটও খাই না। তাহলে আমার নামে এ মিথ্যা মামলা কেন?’
লাদেনের বাবা মোসলেম জোমাদ্দার জানান, টাকা না দিতে পারলে পরে তাকে চরকাউয়া খেয়াঘাট এলাকায় নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়, কিন্তু তার ছেলের কোনো হদিস ছিল না। পরে ৯৯৯-এ ফোন করা হলে সেখান থেকে কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশকে দায়িত্ব দেয়া হয়। এক পর্যায়ে তিনি জানতে পারেন, কাউনিয়া থানার এসআই রিয়াদ এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন।
এ বিষয়ে মোসলেমের দাবি, তাদেরকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হচ্ছে। বলেন, ‘ঘুরে বেড়ানোর মধ্যেই পুলিশের কর্মকর্তা এসআই রিয়াদ ১ লাখ টাকা দাবি করেন, আর সেই টাকা চেয়ে বাড়িতে স্বজনদের কাছে ফোন দিতে বাধ্য করেন। একটি বিকাশ নম্বরও দেন তিনি। পরে ৪০ হাজার টাকা ম্যানেজ করে দেয়ার শর্তে আমার ছেলেকে কাউনিয়া থানায় আটকে রেখে ছেড়ে দেন।
‘টাকা ম্যানেজ করতে না পেরে রাতে থানায় গিয়ে পুলিশের কর্মকর্তাদের কাছে বিষয়টি খুলে বলি, কিন্তু তারা তাতে কোন ভ্রুক্ষেপ করেননি। পরে টাকা দেয়ার জন্য এসআই রিয়াদের দেয়া বিকাশ নম্বরে যোগাযোগ করে জানতে পারি সেটি বরিশালের আমতলার মোড় এলাকায় অবস্থিত। এ ধরনের প্রমাণ থাকার পরও পুলিশ লাদেনকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়েছে।’
জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের যোগসাজশেই এসআই রিয়াদ এমন করে থাকতে পারেন বলে দাবি করেন মোসলেম।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি সূত্র নিউজবাংলাকে জানিয়েছে, এসআই রিয়াদ চাকরির মাত্র কয়েক বছরে মেট্রোপলিটনের বেশ কয়েকটি থানা ও ডিবিতে দায়িত্ব পালন করেন। তবে অজানা কারণে কোনো জায়গাতেই দীর্ঘদিন থাকা হয়নি তার। তার বিরুদ্ধে এর আগে রোগীর দালালদের ধরে কৌশলে টাকা আদায়সহ কয়েকটি অভিযোগও রয়েছে, যদিও সেগুলো পরবর্তীতে আলোর মুখ দেখেনি। এছাড়া মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাসোয়ারা নেয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
সূত্র আরও জানায়, ওসি আসাদুজ্জামানের সঙ্গে এসআই রিয়াদের পূর্ব পরিচিতি আছে। কারণ ওসি আসাদুজ্জামান যখন বন্দর থানায় কর্মরত, তখন রিয়াদও ওই থানায় ছিলেন।
এদিকে লাদেনকে ফাঁসানোর বিষয়টি পরিষ্কার হতে তার স্বজনরা সিসি ক্যামেরা পর্যালোচনা করার দাবি তোলেন।
এ বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মো. ফজলুল করিম বলেন, ‘ঘটনাস্থল কোতোয়ালি থানা এলাকায় হওয়ায় মামলাটি এখানে নিয়মতান্ত্রিকভাবেই হয়েছে। তদন্তও সঠিকভাবে করা হবে।’
না জানিয়ে অন্য থানা এলাকায় অভিযান চালানো, তুলে নেয়া ব্যক্তিদের নিয়ে সারা দিন বিভিন্ন স্থানে ঘোরা, রাতে দীর্ঘ সময় এক থানায় আটকে রেখে পরে অন্য থানায় হস্তান্তর এবং দাবিকৃত টাকা না দেয়ায় ফাঁসিয়ে দেয়াসহ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিষয়গুলো তদন্ত করে দেখবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। সেখানে অভিযোগ প্রমাণিত হলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাছাড়া কোনো পুলিশ সদস্য বা অন্য কারও ইন্ধনে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য এমনটা করছে কি না, সে বিষয়টিও গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে।’
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উত্তর জোনের উপ-কমিশনার বিএম আশরাফ উল্যাহ তাহের বলেন, ‘এসআই রিয়াদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তাতে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। যে অপরাধ করবে সেটার দায় ব্যক্তিরই নিতে হবে। রিয়াদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে।’
এ বিষয়ে জানতে পেরে ইতোমধ্যে উত্তর জোনের উপ-পুলিশ কমিশনারকে পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার সাইফুল ইসলাম। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কোনো ধরনের ব্যত্যয় ঘটলে সেই অনুযায়ী অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এক্ষেত্রে পুলিশের প্রশাসনিক ব্যবস্থা আশা করে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাবেক নেত্রী ডা. মনীষা চক্রবর্তী বলেন, ‘নিঃসন্দেহে এ ধরনের প্রাকটিস কাম্য নয়। ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে ওই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। আর ক্ষমতার জবাবদিহিতা থাকাও দরকার। পুলিশের ক্ষমতার জবাবদিহিতা না থাকলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে।’
গবেষক আনিসুর রহমান খান স্বপন এ বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, ‘যে পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে এত অভিযোগ, তাকে কেন থানাতে রাখা হয়। তার বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগগুলো ভালোভাবে তদন্ত করা হয়নি অথবা আইনের কোনো ফাঁক-ফোকর দিয়ে বের হয়ে ওই পুলিশ সদস্য আবারও অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এখানে সিস্টেমে সমস্যা রয়েছে। এইসব পুলিশ সদস্য পুলিশের ভাবমূর্তি যেভাবে নষ্ট করছে সেইভাবে সমাজেরও ক্ষতি করছে। চাকরির সামান্য কয়েক বছরের মধ্যে কয়েকটি অপকর্ম ঘটানো এই পুলিশ সদস্যকে স্থায়ী ভাবে বহিষ্কার করে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ। এ ছাড়া এসব পুলিশ সদস্যকে যারা প্রশ্রয় দিয়ে পুষে রেখেছেন, তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা উচিৎ।’
বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ডাকা ৪৮ ঘণ্টার হরতালের দ্বিতীয় দিনে রাজধানীর মিরপুরে ভরদুপুরে বিআরটিসির একটি দোতলা বাসে আগুন দেয়ার ঘটনায় স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতাকে ঘটনাস্থলের পাশ থেকে আটক করেছে পুলিশ।
আটক সাজেদুল আলম টুটুল রূপনগর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক।
সোমবার দুপুর ২টা ৩৫ মিনিটে মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বরের পাশে রাস্তার ওপর বিআরটিসির দোতলা বাসে আগুনের ঘটনায় গাড়ির উপরের বেশিরভাগ অংশ পুড়ে যায়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার মো. জসীম উদ্দীন মোল্লা বলেন, ‘রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বরের পাশে রাস্তার ওপর বিআরটিসির একটি দোতলা বাসে যাত্রীবেশে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এই ঘটনায় ঘটনাস্থলের পাশ থেকে রূপনগর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাজেদুল আলম টুটুলকে আটক করা হয়েছে।’
তিনি জানান, পুড়ে যাওয়া বিআরটিসি পরিবহনের গাড়ির চালক সাজেদুল আলম টুটুলককে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করেন।
আটকের এই ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন:ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কনটেইনার ট্রেনের বগি লাইনচ্যুতির ঘটনায় ১৪ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর ঢাকার সঙ্গে আপলাইনে চট্টগ্রাম, সিলেট ও নোয়াখালীর রেল যোগাযোগ পুনরায় চালু হয়েছে।
রোববার রাত সাড়ে ১০টায় দুর্ঘটনাকবলিত কনটেইনার ট্রেনটি ঢাকা অভিমুখে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছেড়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। তবে কনটেইনার ট্রেনটিকে ২০ কিলোমিটার গতিতে ঢাকায় যাওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এর আগে সকাল সাড়ে ৮টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনের আউটারে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী একটি কনটেইনার ট্রেনের একটি বগির চারটি চাকা লাইনচ্যুত হয়। এ ঘটনায় আপলাইনে ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম, সিলেট ও নোয়াখালীর ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
দুর্ঘটনায় অন্তত ৩০০ মিটার রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি শতাধিক স্লিপার ভেঙে যায়। পরে ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইন মেরামত এবং স্লিপার পরিবর্তন শেষে দুর্ঘটনাকবলিত কনটেইনার ট্রেনের বগিটি উদ্ধারে কাজ শুরু করে উদ্ধারকারী ট্রেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার মো. জসিম উদ্দিন জানান, দুর্ঘটনাকবলিত কনটেইনার ট্রেনের বগিটি উদ্ধার কাজ প্রায় ১১ ঘণ্টা পর রাত ৭টা ৫ মিনিটে সম্পন্ন হয়। তবে আপলাইনে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয় রাত সাড়ে ১০টায়।
ময়মনসিংহে আবদুর রাজ্জাক রাকিব নামের যুবক হত্যার ঘটনায় মহানগর যুবলীগের বহিষ্কৃত সদস্য ইয়াছিন আরাফাত শাওনসহ আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
বিভাগীয় কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে রোববার দুপুরে স্মারকলিপি দেয়া হয়। এতে নেতৃত্ব দেন মহানগর আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ও নিহত যুবকের চাচা আবু বক্কর সিদ্দিক সাগর।
ওই সময় উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এবিএম আবু বক্কর সিদ্দিক, ৩১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জামাল উদ্দিন, ৩২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এমদাদুল হক মন্ডল, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ফারজানা ববি কাকলি, মহানগর আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ফজলুল হকসহ অনেকে।
এর আগে নগরের চায়না মোড় থেকে আওয়ামী লীগ নেতাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার কয়েক হাজার নারী-পুরুষ মিছিল নিয়ে ‘রাকিব হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার চাই, ফাঁসি চাই’ স্লোগানে স্লোগানে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে এসে মিছিলটি শেষ করেন।
স্মারকলিপি দেয়া শেষে নেতারা সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, রাকিব হত্যার ঘটনায় এরই মধ্যে ৯ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হত্যায় জড়িত অন্যরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। নয়তো তারা আবারও অন্য কাউকে হত্যা করে অন্য কোনো মায়ের বুক খালি করবে। এতে সন্তান হবে বাবাহারা; স্ত্রী হবে স্বামী ছাড়া।
তারা পলাতক আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা না হলে লাগাতার আন্দোলন চলবে বলে হুঁশিয়ারি দেন।
প্রেক্ষাপট
গত ১১ নভেম্বর সন্ধ্যায় যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইয়াছিন আরাফাত শাওন ও তার কর্মীরা তিনটি হাই-এইস গাড়ি নিয়ে ময়মনসিংহ শহরে ফিরছিলেন। পথে নগরের চায়না মোড়ের টুলবক্স এলাকা পর্যন্ত আসতেই একটি ট্রাকের পেছনে আটকা পড়ে হাই-এইস। ওই ট্রাকটি সাইড না দেয়ায় ওভারটেকের সময় হাই-এইস গাড়িতে ঘষা লাগে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গাড়িতে থাকা ট্রাকচালকের সঙ্গে তর্কে জড়ান শাওন ও তার কর্মীরা। একপর্যায়ে ট্রাকচালককে মারধর শুরু করেন।
ওই সময় স্থানীয় বাসচালকসহ অন্যরা তাদের থামাতে গেলে ক্ষিপ্ত হয়ে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যান শাওন ও তার সঙ্গে থাকা লোকজন। এতে আবদুর রাজ্জাক রাকিব, সাদেক আলী, শহিদ মিয়া নামে তিনজন জখম হন। এ অবস্থায় আশপাশের লোকজন তাদের ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক আবদুর রাজ্জাক রাকিবকে মৃত বলে জানান।
রাকিব হত্যার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে রাতেই স্থানীয়রা চায়না মোড়ে সড়ক অবরোধ করে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন। পরে রাত ১১টার দিকে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং একজনকে আটক করে পরের দিন মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়।
ছুরিকাঘাতে রাকিব নিহত হওয়ার পরের দিন তার মা হাসি বেগম শাওনসহ ১৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে মামলা করেন।
গত বৃহস্পতিবার সাভারের আমিনবাজার থেকে মামলার প্রধান আসামি শাওন, তার ভাই মাসুদ পারভেজ, আনিছুর রহমান ফারুক, মো. মানিক, মো. মবিন ও মো. শান্তকে গ্রেপ্তার করে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। পরের দিন শুক্রবার ভোরে ত্রিশালের উজানভাটিপাড়া এলাকা থেকে ইয়াছিন আরাফাত শাওনের ছোট ভাই মো. প্রান্ত ও মো. রাহাত নামের আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা ডিবির ওসি ফারুক হোসেন বলেন, ‘গ্রেপ্তার হওয়া ইয়াছিন আরাফাত শাওনের বিরুদ্ধে ১৪টি মামলা, মাসুদ পারভেজের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা, আনিছুর রহমান ফারুকের বিরুদ্ধে দুটি মামলা, মানিক মিয়ার বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা, মো. মমিন ও মো. শান্তর বিরুদ্ধে তিনটি করে মামলা রয়েছে। শুক্রবার বিকেলে ময়মনসিংহ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১ নম্বর আমলি আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে তাদের সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হলে চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।
‘অন্য দুই আসামিরও সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। রিমান্ডে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। পলাতক অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য