রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট ভূ-রাজনৈতিক যে চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে সেটি বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার সম্পর্ককে আরও কাছে থেকে কাজ করার সুযোগ তৈরি করেছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জাং কুন।
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বৃহস্পতিবার ‘বাংলাদেশ-কোরিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর’ শীর্ষক এক সেমিনারে এমন মন্তব্য করেন রাষ্ট্রদূত।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বর্তমানে বিশ্ব একটি ভূ-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। আর এ চ্যালেঞ্জ শুধু আঞ্চলিক দিক থেকেই নয়, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কেও প্রভাব সৃষ্টি করছে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার সম্পর্কে চ্যালেঞ্জের চেয়ে আরও কাছে থেকে কাজ করার সুযোগ তৈরি হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় বাধা সৃষ্টি হয়েছে। এ চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে আমাদের একে অপরের সহযোগিতা করতে হবে।’
‘বাংলাদেশ-কোরিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানের যৌথ আয়োজন করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ঢাকাস্থ দক্ষিণ কোরিয়ার দূতাবাস এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইস্ট এশিয়া অ্যান্ড স্টাডি সেন্টার।
ঢাকা ও সিউলের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়ে রাষ্ট্রদূত লি বলেন, ‘দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত ও বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পার করছে। এ সময়ে দুই দেশের সম্পর্কে অনেক সফলতা এসেছে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পে কোরিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এ যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৭৯ সালে। বাংলাদেশে দক্ষিণ কোরিয়ার বিনিয়োগের ৮০ শতাংশ এ খাতে।’
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘দক্ষিণ কোরিয়ার বিনিয়োগে বাংলাদেশে চার লাখের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে দুই দেশের সম্পর্কের ভবিষ্যত উজ্জ্বল।’
সেমিনারে বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে একটি প্লাস্টিক কারখানায় কাজ করার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মো. কাওছার নামের এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।
বুধবার দুপুর ১টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
অচেতন অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসার পর চিকিৎসক বিকেল তিনটার দিকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের সহকর্মী নাসিরউদ্দিন নাসির বলেন, ‘কামরাঙ্গীরচর আফতাব নগর এলাকায় একটি প্লাস্টিক কারখানায় কাজ করার সময় কাওছার মেশিনের কাছে গেলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যালে নিলে চিকিৎসক মৃত বলে জানান।’
তিনি জানান, নিহতের বাড়ি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া থানার আমড়াগাছিয়া পাড়ার আব্দুল মালেকের ছেলে। বর্তমানে তিনি কামরাঙ্গীরচরে থাকতেন।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানায় জানানো হয়েছে।’
আরও পড়ুন:ব্যক্তির শরীরে প্রাণঘাতি থ্যালাসেমিয়া আছে কিনা তা শনাক্ত করে জাতীয় পরিচয়পত্রে উল্লেখ করতে অপশন চেয়ে সরকারকে আইনি নোটিশ দেয়া হয়েছে।
বুধবার সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ড. ইউনুছ আলী এ নোটিশ পাঠান।
মন্ত্রিপরিষদের সচিব, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি), স্বাস্থ্য সচিব, আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ও বাংলাদেশ ডেন্টাল কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বরাবর নোটিশটি পাঠানো হয়।
নোটিশে এই রোগের ভয়াবহতা থেকে মানুষকে রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।
এ জন্য প্রত্যেক নাগরিকের জাতীয় পরিচয়পত্রে থ্যালাসেমিয়া রোগ আছে কি না মেডিক্যাল রিপোর্ট অনুযায়ী অপশন যুক্ত করার দাবি করা হয়।
নোটিশে বলা হয়, একজন থ্যালাসেমিয়া বাহক যদি আরেকজন থ্যালাসেমিয়া বাহককে বিয়ে করেন, তাহলে তাদের সন্তানের থ্যালাসেমিয়া রোগী হওয়ার ঝুঁকি বেশি। তবে একজন সুস্থ মানুষ আরেকজন থ্যালাসেমিয়া বাহককে বিয়ে করতে পারবে, কারণ তাদের সন্তান থ্যালাসেমিয়া রোগী হওয়ার আশঙ্কা ততটা থাকে না।
এ কারণে জাতীয় পরিচয়পত্রে থ্যালাসেমিয়া রোগ আছে কিনা এ ধরনের অপশন যুক্ত থাকলে তা দেখে সহজেই দুইজন থ্যালাসেমিয়া বাহতের বিয়ে থেকে ঠেকানো সম্ভব।
এ জন্যে বিয়ের আগেই বর এবং কনের রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে প্রত্যেককে জানতে হবে তারা থ্যালাসেমিয়া বাহক কিনা। দুজন থ্যালাসেমিয়া বাহকের মধ্যে বিয়ে বন্ধ করা গেলেই থ্যালাসেমিয়া রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
নোটিশ পাওয়ার পর এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথাও জানিয়েছেন নোটিশকারী আইনজীবী ইউনুছ আলী।
আরও পড়ুন:লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নের শালমাড়া এলাকার মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে সতি নদী। গ্রামবাসীর পারাপারের জন্য নদীতে সেতু থাকলেও তা ভেঙে গেছে আগেই। সেই থেকে শুরু দুর্ভোগের।
বুক সমান পানির মধ্যদিয়ে হেঁটে পার হতে হয় গ্রামবাসীকে। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় এগিয়ে এসেছেন এক শিক্ষক। ড্রাম ও বাঁশ দিয়ে ৫০ ফুট দৈর্ঘের সাঁকো তৈরি করে গ্রামবাসীর দুঃখ লাঘব করেছেন তিনি।
ওই শিক্ষকের নাম ইব্রাহীম আলী। তিনি শালমাড়া ঘোনাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
সাঁকো তৈরির নেপথ্যে
শিক্ষক ইব্রাহীম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নদীতে ব্রিজ ছিল, কিন্তু ভেঙে যায় নিম্নমানের কাজের কারণে। তখন থেকে শুরু হয় সাধারণ মানুষের ভোগান্তি। পরবর্তীতে চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ব্রিজটি সম্পর্কে জানালেও কোনো কাজ হয়নি। ভাঙার পর থেকে মানুষের খুবই অসুবিধার সৃষ্টি হয়।
‘আমার বাড়ি নদীর পশ্চিম এলাকায় আর স্কুল নদীর পূর্বে। প্রতিদিন বহু মানুষ ও স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা ভয়ে যাতায়াত করে। ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুল যাওয়ার জন্য আলাদা পোশাক সঙ্গে নিতে হয়। স্কুলে গিয়ে তারা পোশাক পরিবর্তন করে ক্লাস করে। আমি নিজেও লুঙ্গি ব্যাগে করে নিয়ে যাই। এগুলো আমার খুব খারাপ লাগে। তাই মনে মনে চিন্তা করলাম ড্রাম ও বাঁশ দিয়ে একটি সাঁকো নির্মাণ করলে মানুষের যাতায়াত করা একটু সহজ হবে।’
ইব্রাহীম আলী বলেন, ‘সেই চিন্তা থেকে ২০টি ড্রাম ও প্রায় ১০০ বাঁশ দিয়ে পানির ওপর ভাসমান ৫০ ফিট সাঁকো তৈরি করি। এতে দুই গ্রামের প্রায় ১৫ থেকে ১৬ হাজার মানুষ সহজেই যাতায়াত করতে পারবে।’
কী বলছেন গ্রামবাসী
নওদাবাস দাখিল মাদ্রাসার সুপার রুহুল আমিন বলেন, ‘শালমারা ঘাটে একটি ব্রিজ ছিল, সেটি হঠাৎ ভেঙে যায়। ভাঙার পর থেকে মানুষের খুবই অসুবিধা হয়। এখন সাঁকো দেয়ায় আমরা সুন্দরভাবে চলাচল করতে পারব।’
কৃষক আব্দুর রশিদ বলেন, ‘প্রতিদিন নদী দিয়ে অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রীসহ বহু মানুষ যাতায়াত করি। এত দুর্ভোগের পরেও কেউ দেখতে আসেনি। এক বুক পানি পার হয়ে চলাচল করছি। এই রোড দিয়েই হাট-বাজারসহ কালীগঞ্জ, রংপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াত করতে হয় আমাদের। স্যার ড্রামের ওপর ভাসমান ব্রিজ তৈরি করায় অনেক ভালো হয়েছে।’
একই এলাকার সাংবাদিক আব্দুল আলিম বলেন, ‘মৃতপ্রায় সতি নদী বর্ষকাল এলে প্লাবিত হয়, আবার খরার সময়ও পানি থাকে। এখানে একটি ব্রিজ ছিল সেটি ভেঙে যায়। চন্দ্রপুর ইউনিয়নের মাঝখান দিয়ে এই নদীতে বয়ে গেছে। এই নদীর ওপর দিয়ে প্রতিদিন হাজারও মানুষের চলাচল।
‘এই এলাকার প্রধান শিক্ষক ইব্রাহীম চমৎকার উদ্যোগ নিয়েছে মানুষের যাতায়াতের জন্য। এখানে ২০টি ড্রামের ওপর বাঁশ দিয়ে ব্রিজটি করেছে। যেটি ভাসমান অবস্থায় থাকবে। যখন পানি বাড়বে তখন ভাসবে, আর যখন পানি কমবে তখন নিচে নামবে। এটি ভালো উদ্যোগ।’
ভিক্ষুক মজিবর বলেন, ‘আমার খুব দুঃখ। চোখে দেখতে পারি না। একটা ব্রিজ দিছে তাও ভাঙি গেইছে বন্যায়। এখন আপনাদের কাছে আমার একটা আবেদন একটা বড় ব্রিজ করি দেন। আমাদের গরিব, দুঃখির খুব কষ্ট হইছে।’
কলেজশিক্ষার্থী সজল বলে, ‘সাইকেল ঘাড়ে করে এক বুক পানি পাড় হয়ে আসলাম। ব্রিজটি ভাঙার পর দুর্দশায় ভুগছি। এখানে দেখার কেউ নেই। চেয়ারম্যান মেম্বার কেউ দেখেও না। আমরা খুব কষ্ট করে নদী পার হয়ে যাতায়াত করছি স্কুল-কলেজে।’
কবে পুনর্নির্মাণ হবে সেতু
কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ফেরদৌস আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সতি নদীর ওপর আগে একটি ব্রিজ ছিল, সেটি ভেঙে যায়। এতে এলাকার মানুষের একটু অসুবিধা হলেও বৃষ্টির কারণে নদীতে পানি বেশি হওয়ার কাজ শুরু করেতে পারিনি। ব্রিজের টেন্ডার হয়েছে। পানি কমলে কাজ শুরু হবে।’
আরও পড়ুন:কুমিল্লায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে দোকান থেকে সোনা লুটের অভিযোগে দুইজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয়েছে ৮৮ ভরি ৫ আনা সোনা।
কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) এম তানভীর আহমেদ বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছে।
আটক ব্যক্তিরা হলেন কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার সাহাপাড়া এলাকার রাজিব কর্মকার মিঠু ও নোয়াখালী জেলার উত্তর হাজিপুর গ্রামের তপু কর্মকার।
পুলিশ কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ জানান, নোয়াখালী থেকে গলিত সোনা নিয়ে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে ঢাকার দিকে রওনা দেন নোয়াখালীর নরোত্তম পুর গ্রামের অভিজিৎ কুড়ি নামে এক ব্যক্তি। পথে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে অভিজিৎ কুড়িকে তুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। সোনা ছিনিয়ে নিয়ে তাকে হাত-পা বেঁধে দাউদকান্দির পুটিয়া এলাকায় ফেলে রেখে যায়। পুলিশ সেখান থেকে অভিজিৎকে উদ্ধার করে।
অভিজিতের দেয়া তথ্য অনুযায়ী মঙ্গলবারই অভিযান চালিয়ে দাউদকান্দির সাহাপাড়া থেকে রাজিব কর্মকার ও চাঁদপুরের উত্তর মতলবের বাগান বাড়ি থেকে তপু কর্মকারকে আটক করা হয়। তপুর কাছে পাওয়া যায় লুট করা সোনা।
ওই সোনা সত্য নারায়ণ জুয়েলার্সের মালিক দেব রাজের বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা তানভীর।
দেব রাজ জানান, আটক রাজিব কর্মকার ও তিনি সম্পর্কে মামাতো-ফুফাতো ভাই। তার দোকানে বসতেন রাজিব। তবে অপরাধমূলক নানা কাজ করায় তাকে বের করে দেয়া হয়। এ কারণে ক্ষোভে তার সোনা লুট করেন বলে ধারণা দেবের।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দাউদাকান্দি সার্কেল) ফয়েজ ইকবাল জানান, লুটের ঘটনায় আটক ব্যক্তিদের নামে মামলা দেয়া হবে।
আরও পড়ুন:সাম্প্রতিক অভিযোগটি হলো, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বান্ধাবাড়ি জেবিপি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠটি মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে এক ঠিকাদারের কাছে ভাড়া দিয়ে নানা ধরনের নির্মাণসামগ্রী রাখা হয়েছে। আর সেই টাকা গ্রহণ করেছেন ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি।
এবার সেই প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সভাপতিকে স্কুলের অর্থ আত্মসাতের আরেকটি মামলায় বুধবার কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গত ২৪ মার্চ ওই স্কুলের ছাত্র অভিভাবক মো. সিরাজুল ইসলাম গোপালগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করেছিলেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, ২০১৯ সালের ১৩ জুন বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদ ও সভাপতি হান্নান মোল্লা ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত ছাড়াই বিদ্যালয়ের জনতা ব্যাংক, কোটালীপাড়া শাখার সঞ্চয়ী হিসাব থেকে চেকের মাধ্যমে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করেন।
অর্থ আত্মসাতের সেই মামলাটিতে জামিনে ছিলেন বান্ধাবাড়ী জেবিপি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ আব্দুর রশিদ ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হান্নান মোল্লা। বুধবার তারা আদালতে হাজিরা দিতে গেলে কোটালীপাড়া আমলি আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অনুশ্রী রায় তাদের জামিন বাতিল করে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এদিকে ওই স্কুলের মাঠ অবৈধভাবে ভাড়া দেয়ার সত্যতা যাচাই করতে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বুধবার কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদাউস ওয়াহিদ জানান, বিষয়টি তদন্ত করে আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আরও পড়ুন:চলমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যেও বিশ্বকে জলবায়ু সমস্যা থেকে মনোযোগ সরিয়ে নিতে দেয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আর তাই প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী উন্নত দেশগুলোকে এ খাতে অর্থায়ন ও প্রযুক্তি বিনিময়ে তাদের দেয়া প্রতিশ্রুতি আদায়ে সিভিএফকে আরও ভূমিকা রাখতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।
জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে থাকা ৫৫টি দেশের সংগঠন ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম। ২০২০ সালে দ্বিতীয়বারের মতো সংগঠনটির নেতৃত্ব পায় বাংলাদেশ। এবার জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত আফ্রিকার দেশ ঘানার হাতে যাচ্ছে সিভিএফ-এর নেতৃত্ব।
ঢাকায় বুধবার সন্ধ্যায় ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে ঘানার প্রেসিডেন্ট নানা আকুফো-আডোর হাতে দায়িত্ব তুলে দেন সিভিএফ-এর বিদায়ী প্রেসিডেন্ট শেখ হাসিনা।
দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠানে গণভবন প্রান্ত থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সিভিএফ-এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর দেড়শ কোটি মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের জরুরি অবস্থার মুখে পড়েছে। চলমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা সত্ত্বেও, আমরা বিশ্বকে জলবায়ু সংকট থেকে মনোযোগ সরিয়ে দিতে পারি না।
‘প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী উন্নত দেশগুলোকে এ খাতে অর্থায়ন ও প্রযুক্তি বিনিময়ে তাদের দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করতেই হবে। ঘানার নেতৃত্বে, সিভিএফ-এর ট্রেডমার্ক নৈতিক শক্তি এবং যৌক্তিক দাবি উপস্থাপনের মাধ্যমে অমীমাংসিত দাবি আদায়ে তাদের ওপর জোর অব্যাহত রাখতে হবে।’
২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মতো সিভিএফ-এর দায়িত্ব গ্রহণ করে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বস্তির কথা হলো, এই সমেয় আমাদের বেশিরভাগ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনে আমরা সফল হয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ আনন্দের সঙ্গে ঘানার হাতে সিভিএফ প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব অর্পণ করছে। এ আয়োজনে উপস্থিত থাকায় আমি দেশটির প্রেসিডেন্ট নানা আকুফো-আডোকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
জলবায়ুসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আলোচনায় সিভিএফ এখন গুরুত্বপূর্ণ ফোরাম হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলির জন্য সম্মিলিত কণ্ঠস্বর হিসেবে গড়ে উঠেছে প্রতিষ্ঠানটি। সিভিএফ সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি তার প্রমাণ।
‘শুরু থেকে কপ২৬-এর সিদ্ধান্তের প্রতি আমাদের মনোযোগ ছিল। মহামারির মধ্যেও আমরা জলবায়ু সংকটের দিকে বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।’
তিনি বলেন, ‘২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা তাদের এনডিসি (কার্বন নিঃসরণ বিষয়ক জাতীয় নির্ধারিত অবদান) জমা দেয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। প্রায় ৭০টি দেশ আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়েছে।’
সিভিএফ-এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে জলবায়ু সংক্রান্ত পদক্ষেপে সহায়তা দিতে সিভিএফ-ভি২০ জয়েন্ট মাল্টি-ডোনার তহবিলও তৈরি করা হয়েছে বলে জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এবং মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ এতে প্রাথমিক বরাদ্দ দিয়েছে। ২০২১ সালে আমরা ক্লাইমেট ভালনারেবলস ফাইন্যান্স সামিট করেছি। এটি পরবর্তী পাঁচ বছরে শত বিলিয়ন ডলার জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিপূরণ পেতে সহায়তা করবে। গ্লাসগোতে তা আমরা উপলব্ধি করেছি।’
ঢাকা-গ্লাসগো ঘোষণাকে সিভিএফ-এর মূল দাবি এবং প্রতিশ্রুতির সারসংক্ষেপ বলেও উল্লেখ করেন ফোরামের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট।
তিনি বলেন, ‘আমরা (কার্বন) উচ্চ-নিঃসরণকারী দেশগুলোর তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি বজায় রাখা এবং প্রতি বছর জলবায়ু খাতে উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাড়াতে আমাদের দাবির কথা পুনর্ব্যক্ত করেছি। আমরা জলবায়ুর ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে অভিযোজন খাতে অর্থায়ন বাড়ানো এবং আন্তর্জাতিক সংলাপের জন্য প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন এবং মানবাধিকার ইস্যুতে যারা উচ্চকিত, তাদের কাছে আমাদের উচ্চাশা রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুচ্যুতি এবং অভিবাসন ইস্যুতে আমাদের পারস্পরিক সমর্থন অক্ষুণ্ণ থাকবে। জলবায়ু ইস্যুতে জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে সিভিএফ-ভি২০ সংসদীয় গ্রুপ।’
সিভিএফ-এর পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জলবায়ু চ্যালেঞ্জকে স্থিতিস্থাপকতা এবং সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়াটা হবে আমাদের প্রেসিডেন্সির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক, এটা আমি বিশ্বাস করি। বাংলাদেশে আমরা মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা তৈরি করছি। আমরা বিশ্বাস করি, জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জের মুখে থাকা অন্য দেশগুলোও এটি থেকে তাদের নিজস্ব প্রেক্ষাপটে পরিকল্পনা গ্রহণের একটা ভিত্তি পাবে।’
তিনি বলেন, ‘ট্রোইকার সদস্য হিসেবে ঘানাকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা দেবে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের সাবেক ও প্রয়াত মহাসচিব কফি আনানের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত যোগাযোগের কথা আমি স্মরণ করছি। আমি নিশ্চিত যে, সিভিএফ-এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ঘানার এই সম্পর্ক দেখে তিনি খুশি হতেন।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য