পঞ্চগড়ে ভরা মৌসুমে সমতলের ক্ষুদ্র চা চাষিরা সারের সংকটে পড়েছেন। হাটবাজারগুলোতে প্রয়োজনীয় সার পাচ্ছেন না তারা। পটাশ সারের অভাবে সাধারণ কৃষকরাও একই সংকটে পড়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রয়োজনের তুলনায় বরাদ্দ কম পাওয়ার কারণে এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
পঞ্চগড়ে চায়ের মৌসুমে চা চাষিরা বাগানে বিভিন্ন সার দিয়ে থাকেন। পাট, বাদাম, তিল, ভুট্টাসহ নানা অর্থকরী ফসলেও সার দিচ্ছেন সাধারণ চাষিরা।
এ ছাড়া জৈষ্ঠ-আষাঢ় মাস আমন ধান রোপনের সময়। তাই আমন ধানের বীজতলা উৎপাদনের জন্যও সারের প্রয়োজন। প্রয়োজনীয় সারের বরাদ্দ কম থাকার সুযোগ নিচ্ছেন সার ব্যবসায়ীরা। বেশি দামে সার বিক্রি করায় চাষিদের মাঝে হতাশা দেখা দিয়েছে।
চাষিরা বলছে, সঠিক সময়ে সার দিতে না পারলে চায়ের উৎপাদন কমে যাবে।
তেঁতুলিয়া উপজেলার তেলিপাড়া গ্রামের ক্ষুদ্র চা চাষি হাবিবুর রহমান জানান, বাজারের বহু দোকান ঘুরে সার পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে পটাশ সার পাওয়া যাচ্ছে না। এ সময় চা বাগানে সার দিতে না পারলে পাতা হবেনা। এতে চা চাষিরা লোকসানে পড়বে।
এদিকে জেলায় এবার পাটের আবাদ হয়েছে ৮ হাজার ৭৫৫ হেক্টর জমিতে।
বিসিআইসি ও বিএডিসির নির্ধারিত সার ডিলাররা বলছে, পঞ্চগড়ে কৃষি আবাদ বেড়ে গেছে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে চায়ের আবাদ। ফলে সারের চাহিদা বাড়ছে। সেই তুলনায় এই জেলায় সারের বরাদ্দ কম।
তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর এলাকার সার ডিলার রফিকুল ইসলাম জানান, চা বাগান এবং কৃষি আবাদে যে পরিমাণ সারের প্রয়োজন আমরা তা পাচ্ছি না। ফলে কৃষক সার পাচ্ছেন না। এই জেলায় আরও সারের বরাদ্দ প্রয়োজন ।
বাংলাদেশ চা বোর্ড পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, পঞ্চগড় জেলায় নিবন্ধিত ছোট চা বাগান রয়েছে এক হাজার ১৬৮টি। অনিবন্ধিত চা বাগান রয়েছে ৬ হাজার, ৭ হাজার ২৮৩ একর জমিতে এই চায়ের আবাদ করা হয়েছে।
জেলায় শুধুমাত্র চা চাষের জন্য বছরে চার হাজার টন সারের প্রয়োজন রয়েছে। এই চা বাগানের বিপরীতে বিসিআইসি ইউরিয়া তিনশ টন এবং বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশান (বিএডিসি) এবং বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিস করপোরেশন (বিসিআইসি) টিএসপি একশ টন ও ডিএপি দুইশ টন মোট ৬০০ টন সার বরাদ্দ দিয়েছে। তাই চা চাষিরা প্রয়োজনীয় সার পাচ্ছেন না।
বাংলাদেশ চা বোর্ড পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শামীম আল মামুন বলেন, ‘আমাদের গবেষণা মতে এই জেলায় চা চাষের জন্য বছরে চার হাজার টন সারের প্রয়োজন রয়েছে। ক্ষুদ্র চা চাষিরা বেশি সার ব্যবহার করেন। সেই তুলনায় আরও বেশি সারের প্রয়োজন।’
আরও পড়ুন:প্রাকৃতিক কারণে দেশের অন্য জেলার তুলনায় কৃষিনির্ভর মেহেরপুরে লিচু আগেভাগেই পেকে যায়। ফলনও হয় ভালো। একই সঙ্গে দামও ভালো পাওয়ায় প্রতি বছরই ব্যাপকহারে লিচু চাষে ঝুঁকছেন এ জেলার চাষিরা।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন জায়গায় প্রায় প্রতিটি লিচুগাছেই ঝুলতে দেখা গেছে পাকা পাকা লিচু। সেই লিচুগাছ থেকে পেরে বিক্রিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।
মেহেরপুর কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ৩৫০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়েছে। এ বছর লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৫০ টন। এর বতর্মান বাজারমূল্য ৩২ থেকে ৩৫ কোটি টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মেহেরপুরে আগে লিচু ওঠা, খেতে মিষ্টি ও তুলনামূলক দাম কম হওয়ায় দেশের বিভিন্ন জেলার লিচু ব্যবসায়ীরা ভিড় করেন এখানকার বাগানগুলোতে।
জেলায় বেশ কয়েকটি জাতের লিচু চাষ হয়ে থাকে। যার মধ্যে মোজাফফর, বোম্বাই ও চায়না থ্রি জাতের লিচুর চাষ বেশি করা হয়।
মেহেরপুরের উৎপাদিত লিচু স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ৭০ ভাগই ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। আগে পাকার কারণে এ জেলার লিচুর চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক।
তাই জ্যৈষ্ঠ মাসের শুরুতেই লিচুগাছ থেকে ভাঙতে, ক্যারেট সাজাতে, বাগান পাহারাসহ বিক্রির জন্য প্রস্তুত করতে ব্যস্ত সময় পার করেন শ্রমিক ও বাগান মালিকরা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের লিচু ব্যবসায়ী করীম উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রায় ৩৫ বছর ধরে মেহেরপুরে লিচু কিনতে আসি। এখানকার লিচু আগেই পাকার কারণে আগে থেকেই বাগান কিনে রাখি। সেই লিচু ভেঙে ঢাকায় বিক্রি করে লাভ ভালোই হয়।’
মেহেরপুর সদর উপজেলার লিচু চাষি শাহজাহান আলী জানান, তার প্রায় ৪০টি লিচুর বাগান আছে। এর মধ্যে কয়েকটি বাগানে শতাধিক গাছ আছে। লিচু ভাঙার সময় প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৩৫ জন করে শ্রমিক লাগে। জনপ্রতি ৫০০ টাকা করে মজুরি দিতে হয় তাদের।
লিচু বাছাই করতে আসা শ্রমিক শামীম বলেন, ‘আমরা পাঁচ বন্ধু লিচু বাছাইয়ের কাজে এসেছি। সকালে আসি বিকেলে বাড়ি যাই। লিচু বাছা তেমন ভারী কাজ না হলেও মজুরি ভালো পাওয়া যায় এ কাজে।’
মেহেরপুর জেলা কৃষি বিভাগের উপপরিচালক সামসুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রাকৃতিক কারণেই এ অঞ্চলের লিচু দেশের অন্য জেলার তুলনায় আগে পাকে। এ বছর জেলায় লিচুর ফলনও ভালো। তাই মৌসুমের শুরুতে সারা দেশে মেহেরপুরের লিচুই বাজারে বেশি পাওয়া যায়।’
আরও পড়ুন:গম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই ভারত থেকে ৫২ হাজার ৫০০ টন গম নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়েছে এমভি স্টার নামে জাহাজ।
চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে শনিবার এসে ভিড়েছে জাহাজটি।
নিউজবাংলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম জেলা খাদ্য এবং চলাচল ও সংরক্ষণ নিয়ন্ত্রক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. আবদুল কাদের।
এর আগে গত ১৪ মে অভ্যন্তরীণ মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে গম রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় ভারত। দেশটির বৈদেশিক বাণিজ্য সংক্রান্ত সংস্থা ডিজিএফটি এ ঘোষণা দেয়।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানানো হয়, এ ঘোষণার আগে লেটার অফ ক্রেডিট (এলওসি) ইস্যু হয়েছে এমন সব রপ্তানি চালান সংশ্লিষ্ট দেশে পাঠানো যাবে। এর বাইরে কোনো দেশের অনুরোধে গম রপ্তানি করা যাবে।
তবে এই নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগের কারণ নেই বলে জানিয়েছে দেশটি।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ভারতের ঢাকা দূতাবাস জানিয়েছে, সম্প্রতি ভারত থেকে গম রপ্তানিতে দেয়া নয়াদিল্লির নিষেধাজ্ঞা প্রতিবেশীদের জন্য নয়।
এই চালান আসায় দেশের অস্থির গমের বাজারে কিছুটা স্বস্তি নেমেছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবদুল কাদের বলেন, ‘সোমবার থেকে লাইটারেজ জাহাজের মাধ্যমে এসব গম পতেঙ্গায় সাইলো জেটিতে খালাস করা শুরু হবে। ইতোমধ্যে গমের মান যাচাইসহ নমুনা সংগ্রহের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এরপর এসব গম দেশের বিভিন্ন সরকারি খাদ্য গুদামে পাঠিয়ে দেয়া হবে।
‘এই মাসে গম নিয়ে আরও দুটো জাহাজ আসার কথা রয়েছে। এর আগে গত ১৬ মে একই পরিমাণ গম নিয়ে আরেকটি জাহাজ আসে চট্টগ্রাম বন্দরে।’
সরকারি ব্যবস্থাপনায় গম আসায় বাজারে এর দাম কমেছে। গত সপ্তাহে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে মণপ্রতি গম বিক্রি হয়েছিল ১ হাজার ৫৫০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায়। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪০০ টাকায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানি ও সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে গমের বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে।
চট্টগ্রামের অন্যতম ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী বলেন, ‘সরকারিভাবে আমদানি করা গমভর্তি জাহাজ আসার খবরে বাজারে কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে। পাশাপাশি সরকারের উচিত আমাদের মতো যেসব প্রতিষ্ঠান ভারত থেকে গম আনার বিষয়ে চুক্তি করেছে তা দেশে আনার জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানো। তাহলেই গমের বাজার স্থিতিশীল থাকবে।’
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে গত ১ জুলাই থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত মোট ৫৫ লাখ ৪৬ হাজার টন গম দেশে এসেছে।
আরও পড়ুন:কয়েক দিনের বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে নেত্রকোণার কলমাকান্দা উপজেলার নিম্নাঞ্চলের বিস্তীর্ণ বোরো ফসল প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে বহু পুকুরের মাছ। দেখা দিয়েছে ধান কাটার শ্রমিকের সংকট।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ, মৎস্য কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পাউবোর বেলা ৩টার প্রতিবেদনে দেখা গেছে, কলমাকান্দা পয়েন্টে উব্দাখালি নদীর পানি বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। স্থানীয় কৃষকরা জানান, বৃদ্ধি পাওয়া পানি নদী ও খাল-বিল দিয়ে দ্রুতগতিতে ঢুকছে ফসলি হাওরগুলোতে। রোববার বিকেল নাগাদ উপজেলার মেদির বিল, সোনাডুবি, মহিষাসুরা, চানপুর, খাসপাড়া ও নাগডড়া হাওরের বিস্তীর্ণ জমি নিমজ্জিত হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ জানান, ‘আমাদের হিসাবে এ পর্যন্ত ৫০০ একর বোরো জমি নিমজ্জিত হয়েছে। তবে এসব জমির ৭০ থেকে ৮০ ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে।’
তবে কৃষকরা দাবি করেছেন, নিমজ্জিত হওয়া জমির পরিমাণ আরও অনেক বেশি। তা ছাড়া কিছু কিছু এলাকার ৫০ ভাগ ধান এখনও কাটা হয়নি।
কৃষিবিদ ফারুক আহমেদ বলেন, ‘পানি ও বৃষ্টির কারণে কোনো কোনো কৃষকের ধানের রং নষ্ট হয়ে গেছে। এটির দাম কম পাওয়ার কারণ হতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ধান কাটা-মাড়াইয়ের জন্য উপজেলায় পর্যাপ্ত কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন রয়েছে। তবে পানি বৃদ্ধি ও রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় কিছু কিছু এলাকায় মেশিনগুলো আনা-নেয়া করা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে ধানকাটা কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে।’
বিশরপাশা গ্রামের কৃষক তপন সাহা বলেন, ‘আমার দুই একর ধানক্ষেত পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। শ্রমিকের অভাবে কাটতে পারছি না। যেটুকু কেটেছি তা-ও শুকাতে পারছি না রোদের অভাবে।’
এই কৃষক আরও বলেন, ‘একসঙ্গে বিপুল পরিমাণ জমি নিমজ্জিত হওয়ায় শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে।’
অনেক এলাকায় কৃষক ও শ্রমিকদের পাশাপাশি শিশু-কিশোরদেরও ধান কাটতে দেখা গেছে।
আবুল কালাম নামে আরেক কৃষক বলেন, ‘অনেক কষ্টে ৫৬ শতক জমির ধান কেটে বাড়িতে এনেছি। বৃষ্টির কারণে ধান শুকাতে না পারায় কিছু ধানে চারা গজিয়ে গেছে।’
অনেকের হাওরে থাকা ধানের খড়ের পুঞ্জিও তলিয়ে গেছে, যা গবাদিপশুর খাদ্য সংকটের কারণ হবে, জানিয়েছেন কৃষকরা।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে ৮টি ইউনিয়নের ১৬৫টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এতে প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
আরও পড়ুন:বাজারে ‘প্রিমিয়াম টি’ নামে চা পাওয়া যায়। ক্যানসার প্রতিরোধক, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, ওজন হ্রাস, হার্ট ভালো রাখে, হজমশক্তি বাড়ায়, মানসিক চাপ কমায়— এমন নানা উপকারিতা তুলে ধরে বিক্রি হয় এই চা। ফলে ভোক্তাদের কাছে এই চায়ের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে।
কী কারণে প্রিমিয়াম টি বলা হচ্ছে, এর বৈশিষ্ট্য কী— এসব জানতে নিউজবাংলা কথা বলেছে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে।
শ্রীমঙ্গলের একজন খুচরা চা বিক্রেতা রাজু ঘোষ বলেন, ‘প্রিমিয়াম টি ভালো চা পাতা, তবে এটা আলাদা কোনো জাত নয়। সাধারণত চায়ের ভালো যে জাত রয়েছে, যেমন বিটি-২, কর্ণফুলী, কোদালি এগুলার মিশ্রণে যে চা বিক্রি করা হচ্ছে তাই প্রিমিয়াম টি নামে পরিচিত। এই চায়ের প্রতি মানুষের আগ্রহ আছে অনেক। বিশেষ করে বিত্তবানদের কাছে এই চায়ের কদর বেশি।
‘কোনো একটি চায়ের স্বাদ ভালো, কোনোটিতে রং ও কোনোটির গন্ধ ভালো। এই তিনটি চা পাতা যখন একসঙ্গে মিক্স করবেন, তখন গ্রাহক স্বাদ, গন্ধ ও রং সবই পাচ্ছেন। এটিকে প্রিমিয়াম বলে বিক্রি করা হয়।’
পদ্মা টি সাপ্লাইয়ের পরিচালক মেঘনাদ হাজরা বলেন, ‘প্রিমিয়ামটি আলাদা কোনো জাত নয়। তবে ভালো পাতাকে প্রিমিয়াম টি বলা হয়। চা গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা চায়ের গাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের উন্নত গাছ তৈরি করেন, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বিটি-২। এই চায়ের গন্ধ ও স্বাদ দুটোই ভালো।
‘সাধারণত এটিকেও প্রিমিয়াম টি বলা হয়। সেই সঙ্গে ভালো যেকোনো চা পাতাকে প্রিমিয়াম টি বলা হয়। বিটি-২ আড়াই পাতা (দুটি পাতা, একটি কুড়ি) থেকেই হয়। তবে এতে শুধু ব্ল্যাক টি না, গ্রিন টি বা ওয়াইট টিকেও প্রিমিয়াম বলা হয় যদি কোয়ালিটি ভালো হয়।’
মেঘনাদ হাজরা আরও বলেন, ‘আমি পাইকারি এবং খুচরা বিক্রি করি। এই চাপাতাগুলো যেহেতু কম উৎপন্ন হয়, তাই দাম ধরেও নির্দিষ্ট কোনো হিসাব থাকে না। দেখা গেল পাতা আছে এক লাখ কেজি, কিন্তু নিলামে ক্রেতা কম, ফলে স্বাভাবিকভাবে দাম কমবে আবার চাহিদা বেশি থাকলে বাড়বে।
‘কিছু বাগান আছে, যারা আবহাওয়া এবং সময়ের ওপর নির্ভর করে চা গাছে আলাদা চর্চা করে, ফলে তার চা পাতা স্বাদে ও গন্ধে ভালো হয়।’
পাথখোলা চা বাগানের ব্যবস্থাপক সামশুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘প্রিমিয়াম টি বলতে কোনো জাত নেই। যেকোনো ভালো জিনিসকেই আমরা প্রিমিয়াম টি বলি।’
সম্প্রতি মিডিয়ায় কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে জানিয়ে আরেক চা বাগানের ব্যবস্থাপক বলেন, ‘প্রিমিয়াম টি বলতে কিছু নেই। বাজারে যা প্রিমিয়াম বলা হচ্ছে, তা ব্যবসায়ীরা নিজেদের প্রয়োজনে এবং স্বার্থে প্রিমিয়াম টি বলছে। চায়ের অনেক জাত রয়েছে, এখানে কোনটিকে প্রিমিয়াম বলা যাবে, কোনটিকে বলা যাবে না তার মানদণ্ড নেই।
‘যে যার সুবিধামতো প্রিমিয়াম টি নাম দিয়ে যাচ্ছে। যদি কোনো ভোক্তা প্রিমিয়াম টি কে আলাদা টি মনে করে কেনেন, তবে তিনি প্রতারিত হচ্ছেন।’
বাংলাদেশ চা সংসদ সিলেট ভ্যালির চেয়ারম্যান জি এম শিবলিও একই তথ্য দেন। তিনি জানান, প্রিমিয়াম টি নামে আলাদা কোনো জাত নেই। যারা বাজারে বিক্রি করে তারা নিজেরা ব্র্যান্ডিং করছে এই নামে। বিটি-২, বিটি-৩ বা বিটি-১ এ রকম চায়ের অনেক জাত রয়েছে। তার মধ্যে একেকজনের কাছে একেকটা ভালো লাগে।’
চা বিজ্ঞানী ডা. মাঈনউদ্দিন জানান, ‘কিছু ভালো চা পাতাকে প্রিমিয়াম কোয়ালিটির চা পাতা বলা হয়। এর আলাদা কোনো জাত নেই। আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত ২১টি চা গাছের ভ্যারাইটি বের করা হয়েছে, যেগুলো বিটি-১ (বাংলাদেশ টি), বিটি-২ এমন বিভিন্ন নামে আছে।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমের খ্যাতি আছে সারা দেশে। নানা জাতের মিষ্টি আমের বিশাল বিশাল বাগান রয়েছে এই জেলায়। এখানে সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয় ফজলি আম।
গত বছর অক্টোবরে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তর রাজশাহীর ফজলি আমকে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) সনদ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে।
নির্দিষ্ট কোনো ভৌগোলিক এলাকার বিশেষ গুণসম্পন্ন পণ্য, ফসল বা পশুসম্পদকে জিআই সনদ দেয়া হয়।
রাজশাহীর ফজলি আমকে জিআই সনদ দেয়ার বিষয়টি জানতে পেরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে শুরু হয় প্রতিবাদ। এই অঞ্চলের মানুষের দাবি, ফজলির উৎপত্তি এই অঞ্চলে। তাই রাজশাহীর ফজলির সনদ বাতিলের দাবি জানান তারা।
এ বিষয়ে ২৪ মে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তরে একটি শুনানি হবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ ম্যাংগো ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব আহসান হাবিব নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রাজশাহীর ফজলি আমের জিআই সনদ পাওয়ার ঘোষণা আসার পর থেকেই আমরা আন্দোলন শুরু করেছিলাম। চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে আমের উৎপাদন হয়, রাজশাহীতে হয় ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে।
‘চাঁপাইয়ে আমের যে বাগান আছে তার অন্তত ৩০ থেকে ৪০ ভাগই ফজলি। সনদ দেয়ার আগে একটু খোঁজখবর নিলেই সংশ্লিষ্ট বিভাগ এই জটিলতা এড়াতে পারত।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলির জন্য জিআই সনদের দাবি আদায়ে আন্দোলনকারীদের অন্যতম লেখক জাহাঙ্গীর সেলিম।
তিনি বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আমের চারা নিয়েই রাজশাহীতে আমের চাষ শুরু হয়। তাহলে রাজশাহীকে কোন যুক্তিতে জিআই সনদ দেয়া হবে? ফজলি আমের নামকরণের ইতিহাসের সঙ্গেও চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাম জড়িয়ে আছে।’
সেলিম জানান, প্রাচীন বাংলার রাজধানী গৌড়ে ফজলি আমের উৎপত্তি। জনশ্রুতি আছে, গৌড়ের একটি ভগ্ন প্রাসাদে ফজলি বিবি নামের এক বৃদ্ধা থাকতেন। ১৮ শ শতকের প্রথম দিকে মালদার এক কালেক্টর মিস্টার র্যাভেন গৌড়ে আসেন।
ফজলি বিবি তাকে আম খাওয়ান। আমের স্বাদে মুগ্ধ হয়ে র্যাভেন এর নাম জানতে চান। তবে ফজলি বিবি বলেন তার নাম। এরপর র্যাভেন সাহেব এই আমকে ফজলি আম হিসেবে প্রচলিত করেন। এখনও মানুষ ফজলি নামেই এই আম চেনে।
রাজশাহীর ফজলি আমের জিআই সনদ বাতিলের দাবিতে অধিদপ্তরে আবেদন করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশন।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম মালিক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিভিন্ন দালিলিক প্রমাণসহ আমরা আবেদন জমা দিয়েছিলাম। ২৪ তারিখ শুনানিতেও সেসব বিষয় তুলে ধরব। আশা করি, সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে ফজলি আমের সনদের বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত আসবে।’
এর আগে ২০১৭ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের খিরসাপাত আম জিআই সনদ পায়।
আরও পড়ুন:ধানের জন্য দেশের শস্যভান্ডার হিসেবে খ্যাতি আছে উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা নওগাঁর। বর্তমানে আমের রাজধানী হিসেবেও পরিচিতি পাচ্ছে এই জেলাটি। আম চাষ লাভজনক হওয়ায় জেলায় প্রতি বছরই সুস্বাদু এই ফলটির চাষাবাদ বাড়ছে।
চলতি মৌসুমে নওগাঁ জেলায় ২৯ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৫০ টন। এই হিসাবে এবার জেলার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৪৩৫ টন আম।
প্রতি কেজি আমের গড় মূল্য ৫০ টাকা নির্ধারণ করে চলতি মৌসুমে ১ হাজার ৮৪২ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার আম বাণিজ্যের আশা করছে জেলার কৃষি বিভাগ।
এদিকে নওগাঁর আম পাড়ার সময়সীমাও নির্ধারণ করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। সে অনুযায়ী, আগামী ২৫ মে থেকে গুটি জাতের আম পাড়ার মধ্য দিয়ে এ জেলার আম পাড়া শুরু হবে। এ ছাড়া গোপালভোগ ৩০ মে, ক্ষীরসাপাত বা হিমসাগর ৫ জুন, নাগ ফজলি ৮ জুন, ল্যাংড়া ও হাঁড়িভাঙ্গা ১২ জুন, ফজলি ২২ জুন ও আম্রপালি আম ২৫ জুন থেকে পাড়া শুরু হবে। সর্বশেষ ১০ জুলাই থেকে পাড়া যাবে আশ্বিনা, বারী-৪ ও গৌরমতী জাতের আম।
জেলার বিভিন্ন আম বাগান ঘুরেও বিপুল আমের সমাহার দেখা গেছে। সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে, দোল খাচ্ছে বিভিন্ন জাতের আম। বাগানে বাগানে চলছে শেষ সময়ের পরিচর্চা। কেউ ভিটামিন স্প্রে করছেন, কেউ পোকা দমনে কীটনাশক স্প্রে করছেন। মহামারি কেটে যাওয়ায় এবার ভালো বিক্রির আশায় বিভোর নওগাঁর আম চাষিরা।
জেলার পোরশা উপজেলার আম বাগান মালিক আব্দুল কুদ্দুস জানান, বিগত কয়েক বছরের চেয়ে এবার আম গাছগুলোতে বেশি মুকুল এসেছে। কিন্তু গাছে গুঁটি আসার সময় ও গুটি আসার পর তীব্র দাবদাহে পানিশূন্যতায় ব্যাপক হারে মুকুল ঝড়ে গেছে। এতে ফলন কিছু কম হবে। তবে বাজারে আমের ভালো দাম থাকলে তারা এবার লাভের আশাই করছেন।
সাপাহার উপজেলার রসুলপুর গ্রামের আম চাষি বাবুল হোসেন বলেন, ‘আমি তিন বিঘা জমিতে আম চাষ করেছি। গত বছর ফলন ভালো হলেও করোনা ও রোজার কারণে আমের দাম পাইনি। তবে এবার ফলন কম হলেও আমের ভালো দাম পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।’
একই উপজেলার মাহফুজুর রহমান ৩৫ বিঘা জমি বিভিন্ন মেয়াদে লিজ নিয়ে আম বাগান গড়ে তুলেছেন। তার বাগানে আম্রপালি, বারি-৪, গৌড়মতী ও আশ্বিনা জাতের সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি আমগাছ রয়েছে। এবার প্রতিটি গাছে যথেষ্ট পরিমাণ আমের মুকুল এসেছিল। কিন্তু তীব্র দাবদাহে গাছ থেকে ঝড়ে গেছে অসংখ্য মুকুল। এ ছাড়া কয়েক দফা ঝড়েও তার বাগানে আমের ক্ষতি হয়েছে। তারপরও গাছে যে পরিমাণ আম আছে, বাজারদর ভালো থাকলে লাভবান হওয়ারই আশা করছেন মাহফুজ।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় জেলায় এবার আমের উৎপাদন বেড়েছে। গত মৌসুমে জেলায় আম উৎপাদন হয়েছিল ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৯৭৫ টন। গড়ে ৪৫ টাকা কেজি দরে আম কেনাবেচা নির্ধারণ করেছিল কৃষি অধিদপ্তর। সেই হিসাবে গত মৌসুমে ১ হাজার ৫৭০ কোটি ৩৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকার আমের ব্যবসা হয়েছে।
চলতি মৌসুমে তুলনামূলকভাবে বেশি জমিতে আমের চাষ হয়েছে এবং আমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৪৩৫ মেট্রিকটন। আর প্রতি কেজি আমের গড় মূল্য এবার ৫০ টাকা নির্ধারণ করায় ১ হাজার ৮৪২ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার আম বাণিজ্যের আশা কৃষি বিভাগের।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আরও জানায়, নওগাঁ জেলার ১১টি উপজেলায় কমবেশি আমের চাষ হয়। তবে সবচেয়ে বেশি আম উৎপাদন হয় সাপাহার ও পোরশা উপজেলায়। চলতি মৌসুমে সাপাহারে ১০ হাজার হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ধরা হয়েছে ১২.৬৫ মেট্রিক টন। পোরশা উপজেলায় ১০ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে এবং এখানে হেক্টরপ্রতি ফলন ধরা হয়েছে ১২.৫০ মেট্রিক টন।
এ ছাড়া সদর উপজেলায় ৪৪৫ হেক্টর, রানীনগরে ১১০ হেক্টর, আত্রাইয়ে ১২০ হেক্টর, বদলগাছীতে ৫২৫ হেক্টর ও পত্নীতলায় ৪ হাজার ৮৬৫ হেক্টর, মহাদেবপুরে ৬৮০ হেক্টর, ধামইরহাটে ৬৭৫ হেক্টর, নিয়ামতপুরে ১ হাজার ১৩৫ হেক্টর এবং মান্দা উপজেলায় ৪০০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে।
জেলার সবচেয়ে বড় আমের আড়ত সাপাহার বাজারের আম ব্যবসায়ী কার্তিক দাস বলেন, ‘গত বছর করোনার কারণে ব্যবসায় খুব বেশি লাভ পাইনি। এবার হয়তো আমের ব্যবসায় গত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারব।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. শামছুল ওয়াদুদ বলেন, ‘ইতোমধ্যে আম সংরক্ষণের সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। আগামী ২৫ মে থেকে গুটি জাতের আম পাড়ার মধ্য দিয়ে শুরু হবে আম পাড়া। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন জাতের আম পাড়া হবে। বেঁধে দেয়া তারিখের আগে কোনো চাষি আম নামালে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এ ছাড়া ফরমালিনমুক্ত আম নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ টিম সব সময় মনিটর করবে বলেও জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এই উপপরিচালক।
আরও পড়ুন:সিলেটে ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে বোরো ধান। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আউশ ধান চাষে মনোযোগী হয়ে ছিলেন সিলেটের গোয়াইনঘাটের পূর্ব জাফলং এলাকার কৃষক নিজাম উদ্দিন।
দুই একর জমিতে আউশের বীজ রোপন করেছিলেন। বীজ থেকে চারাও গজিয়ে ছিল। কিছুদিনের মধ্যে এই চারা রোপনের পরিকল্পনা করছিলেন নিজাম। কিন্তু সেই পরিকল্পনায় গুড়েবালি। বন্যায় তলিয়ে গেছে নিজামের বীজতলা।
নিজাম উদ্দিন আক্ষেপ করে বলেন, ‘৪ দিন ধরে বীজতলা পানিতে ডুবে আছে। সব চারা পচে যাবে। গত মাসে বন্যায় বোরো ধান গেছে। এবার আউশও চলে গেলে আমাদের বছর চলবে কী করে? খাবো কী?
কেবল নিজাম উদ্দিন নন, এই আক্ষেপ এখন সিলেটের বেশিরভাগ কৃষকের। গত মার্চ-এপ্রিলের অসময়ের বন্যায় সিলেটের সুনামগঞ্জে বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এবারের বন্যায় বোরোর পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে আউশও।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের হিসেবে, চলমান বন্যায় বুধবার পর্যন্ত আউশ ধানের বীজতলা এক হাজার ৩০১ হেক্টর, বোরো ধান এক হাজার ৭০৪ হেক্টর এবং গ্রীষ্মকালীন সবজি এক হাজার ৪ হেক্টর পানিতে তলিয়ে গেছে।
এদিকে সিলেটে বৃহস্পতিবারও অব্যাহত রয়েছে পানি বৃদ্ধি। ফলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হচ্ছে। অব্যাহত রয়েছে বৃষ্টিও। জেলা প্রশাসনের হিসেবেই, সিলেটে ১০ লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় আছেন। তবে বেসরকারি হিসেবে এ সংখ্যা ১৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের সহকারী প্রকৌশলী নিলয় পাশা জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে পাওয়া হিসেবে, সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৭৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ পর্যন্ত সিলেট জেলায় সুরমা-কুশিয়ারা নদীর ৩৪ বাঁধ ভেঙ্গে পানি ঢুকেছে বিভিন্ন এলাকায়।
বন্যায় সিলেট সদর, দক্ষিণ সুরমা, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার পর এবার বিয়ানীবাজার এবং গোলাপগঞ্জ উপজেলারও বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
পানি উঠেছে কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট উপজেলা কমপ্লেক্সে। এসব উপজেলার অনেক বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রেও পানি উঠে গেছে। এতে আশ্রিতরা পড়েছেন বিপাকে।
সিলেট জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, জেলার বিভিন্ন উপজেলার ৫৫টি ইউনিয়ন সম্পূর্ণভাবে এবং ১৫টি ইউনিয়ন আংশিকভাবে প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানিতে সিলেট সদর ও জৈন্তাপুর উপজেলায় নৌকাডুবিতে ৩ জন মারা গেছেন। গোলাপগঞ্জে পাহাড় ধসে একজন মারা গেছেন।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মজিবর রহমান বলেন, ‘জেলায় ২৭৪টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বর্তমানে ৭৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৬৪৭৫ জন আশ্রয় নিয়েছেন। গবাদিপশুর জন্য ২২০টি আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বন্যার্তদের মধ্যে এরই মধ্যে ৫ লাখ ৩৪ হাজার টাকা, ১৪৯ টন চাল, ১৭৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। আশয়কেন্দ্রে স্বাস্থ্যসেবা ও বিশুদ্ধ পানি দেয়া হচ্ছে। ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে আরও ২৫ লাখ টাকা, ২০০ টন চাল ও ৪০০০ প্যাকেট শুকনো খাবার পাওয়া গেছে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য