সিলেটের জাফলংয়ে পর্যটকদের কাছ থেকে প্রবেশ ফি আদায়ের আইনি বিধান জারি করা হয়েছে কি না তা জানতে চেয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমেদ। সাময়িকভাবে ফি আদায় বন্ধ রাখার অনুরোধও জানিয়েছেন তিনি।
ইমরান আহমেদ সিলেট-৪ জৈন্তাপুর-গোয়াইনঘাট-কোম্পানীগঞ্জের সংসদ সদস্যও।
সিলেটের জেলা প্রশাসক বরাবরে এক চিঠিতে মঙ্গলবার তিনি এই অনুরোধ জানান।
চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘জেলা পর্যটন উন্নয়ন কমিটি কর্তৃক পর্যটন স্পটসমূহের প্রবেশ ফি নির্ধারণ, আদায় এবং আদায়কৃত অর্থ ব্যবহারসংক্রান্ত কোনো আইনানুগ বিধান জারি হয়েছে কি না তা জানা প্রয়োজন।’
মন্ত্রীর চিঠি পেয়েছেন জানিয়ে জেলা প্রশাসক মঙ্গলবার দুপুরে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওনার একটি চিঠি আমি পেয়েছি। চিঠি পাওয়ার আগেই জাফলং থেকে প্রবেশ ফি আদায় বন্ধের নির্দেশ দিয়েছি। জেলা পর্যটন উন্নয়ন কমিটির পরবর্তী বৈঠক না হওয়া পর্যন্ত ফি আদায় বন্ধ থাকবে।’
পর্যটন উন্নয়ন কমিটির পরবর্তী বৈঠক কবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তারিখ নির্ধারণ হলে আপনাদের জানানো হবে।’
সিলেটের অন্যতম পর্যটন এলাকা গোয়াইনঘাটের জাফলংয়ে সব সময়ই পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে। আগে সেখানে অবাধেই পর্যটকরা প্রবেশ করতেন। গত বছর থেকে ১০ টাকা প্রবেশ ফি চালু করে উপজেলা প্রশাসন।
উন্মুক্ত নদী ও পাহাড় দেখতে টাকা লাগবে কেন- এই প্রশ্ন ফি নির্ধারণের শুরু থেকেই। বিশেষত গত ৫ মে টিকিট কাউন্টারের কর্মীদের হাতে কয়েকজন পর্যটক মারধরের শিকার হওয়ার পর সেই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে। একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে জাফলংয়ে প্রবেশে টিকিট ব্যবস্থা চালুর বৈধতা নিয়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পর্যটন মন্ত্রণালয় নির্ধারিত কার্যপরিধির বাইরে গিয়ে জাফলংয়ে পর্যটক প্রবেশে ফি নির্ধারণ করে জেলা পর্যটন উন্নয়ন কমিটি। মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের বাইরে গিয়ে এভাবে ফি নির্ধারণকে অবৈধ ও এখতিয়ারবহির্ভূত বলেছেন আইন বিশেষজ্ঞরাও।
সিলেট-৪ আসনের সাংসদ এবং প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থানমন্ত্রীর স্বাক্ষর করা চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘গত ৫ এপ্রিল বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র সিলেটের জাফলংয়ে প্রবেশ ফি আদায়কে কেন্দ্র করে স্বেচ্ছাসেবক ও পর্যটকদের মধ্যে এক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে।
‘ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উভয় পক্ষের মধ্যে মারামারির দৃশ্যের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। যা সিলেটের পর্যটন স্পটগুলো সম্পর্কে ভ্রমণপিপাসুদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এর ফলে দেশে ও বিদেশে এলাকার ভাবমূর্তি ভীষণভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে, যা কখনই কাম্য নয়। তাছাড়া জেলা পর্যটন উন্নয়ন কমিটি কর্তৃক পর্যটন স্পটসমূহের প্রবেশ ফি নির্ধারণ, আদায় এবং আদায়কৃত অর্থ ব্যবহারসংক্রান্ত কোনো আইনানুগ বিধান জারি হয়েছে কি না তা জানা প্রয়োজন।’
ডিসিকে দেয়া চিঠিতে মন্ত্রী ইমরান আহমদ আরও বলেন, ‘জেলা পর্যটন উন্নয়ন কমিটি কর্তৃক পর্যটন স্পটসমূহের প্রবেশ ফি নির্ধারণ, আদায় এবং আদায়কৃত অর্থ ব্যবহারসংক্রান্ত নীতিমালা/বিধিবিধান নিম্নস্বাক্ষরকারীকে জরুরি ভিত্তিতে অবহিত করতঃ আমার নির্বাচনি এলাকার পর্যটন স্পটসমূহের (রাতারগুল ব্যতীত) পর্যটক প্রবেশ ফি সাময়িকভাবে বন্ধকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আপনাকে অনুরোধ করছি। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।’
জাফলংয়ে প্রবেশ ফি আদায় ‘অবৈধ’
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ২০২১ সালের ৮ নভেম্বর একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। ওই প্রজ্ঞাপনে দেশের জেলাভিত্তিক পর্যটন উন্নয়ন কমিটি পুনর্গঠন করা হয়। এর ভিত্তিতেই ২০২০ সালের ৩ নভেম্বর সিলেট জেলা পর্যটন উন্নয়ন কমিটির এক সভায় জাফলংয়ে ১০ টাকা প্রবেশ ফি নির্ধারণের সিদ্ধান্ত হয়।
তবে পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ওই প্রজ্ঞাপনে পর্যটন উন্নয়ন কমিটির জন্য ১৩টি কার্যপরিধি নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এই কার্যপরিধির কোথাও প্রবেশ ফি আদায়ের কথা উল্লেখ নেই।
তৎকালীন জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলামের সভাপতিত্বে জেলা পর্যটন উন্নয়ন কমিটির সেই সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ‘প্রবেশ ফি হিসেবে আদায় করা অর্থ থেকে প্রয়োজনীয় জনবলের বেতন ও আনুষঙ্গিক খরচ বহন করা হবে। পাশাপাশি সঞ্চিত অর্থ দিয়ে পরবর্তী সময়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।’
সেই টাকা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পর্যটনসংশ্লিষ্ট তহবিল গঠনের জন্য একটি ব্যাংক হিসাব খোলার কথাও বলা হয় ওই সভায়।
গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে এই প্রবেশ ফি আদায় চালু হয়।
কর্মপরিধিতে যা ছিল
পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ওই প্রজ্ঞাপন ঘেঁটে দেখা গেছে, পর্যটন উন্নয়ন কমিটির নির্ধারিত কাজের মধ্যে রয়েছে- জেলার পর্যটন আকর্ষণ চিহ্নিতকরণ, উন্নয়ন ও সংরক্ষণ; পর্যটন আকর্ষণীয় স্থানের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ব্যবস্থা গ্রহণ; পর্যটন আকর্ষণীয় স্থানে পর্যটকদের যাতায়াত ও অবস্থানের স্বাচ্ছন্দ্য বিধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ; বিদেশি পর্যটকদের জন্য বিশেষ এলাকা নির্ধারণের প্রয়োজন ও অবকাশ থাকলে সেরূপ এলাকা নির্ধারণের জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব প্রেরণ; বিদেশি পর্যটকদের বাংলাদেশ ভ্রমণ ও অবস্থানকে নিরাপদ এবং আরামদায়ক করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে পর্যটন স্থানগুলোর উন্নয়নের জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ পেশ এবং জেলার পর্যটন উন্নয়নে পরিকল্পনা প্রণয়ন।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা আছে, পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ; বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড কর্তৃক গঠিত স্বেচ্ছাসেবকদের কাজের সমন্বয়; উপজেলার পর্যটন উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা তদারকি; বিশ্ব পর্যটন দিবস পালনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ; পর্যটন উন্নয়ন ও প্রচারসংক্রান্ত বিষয়ে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কার্যক্রম পরিচালনা ও পর্যটন উন্নয়ন সংক্রান্ত বিষয়ে সরকারের অন্যান্য নির্দেশনা বাস্তবায়নে ব্যবস্থা গ্রহণ।
বিশিষ্টজনরা যা বলছেন
সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম শাহীন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রজ্ঞাপনের কার্যপরিধিতে না থাকা সত্ত্বেও পর্যটন উন্নয়ন কমিটির এভাবে ফি আদায় সম্পূর্ণ অবৈধ ও এখতিয়ারবহির্ভূত। তারা এটা করতে পারে না। মন্ত্রণালয় নির্ধারিত কর্মপরিধির মধ্যেই তাদের থাকতে হবে।’
জাফলংয়ে পর্যটকদের মারধরের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ঈদের আগে বলা হলো পর্যটকদের বরণে প্রস্তুত সিলেট। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। কিন্তু আমরা কী দেখলাম?
‘প্রকাশ্যে পর্যটকদের পেটাচ্ছে প্রশাসনের কর্মীরা। অথচ পুলিশ তাদের নিবৃত্ত করতে এগিয়ে আসছে না। ঘটনার সময় পুলিশের কোনো সদস্যকে দেখা যায়নি। এটা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ইউএনওসহ সংশ্লিষ্ট সবার ব্যর্থতা। এ জন্য তাদের জবাবদিহি করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘দেশের অন্যতম প্রধান ও সিলেটের প্রধান পর্যটন কেন্দ্র জাফলং। সেখানেই যদি নিরাপত্তার এই অবস্থা হয় তাহলে অন্যগুলোর অবস্থা সহজেই অনুমেয়।’
প্রশাসন যা বলছে
এদিকে পর্যটকদের কাছ থেকে প্রবেশ ফি আদায় অবৈধ নয় বলে বৃহস্পতিবার নিউজবাংলাকে বলেছিলেন সিলেটের জেলা প্রশাসক ও জেলা পর্যটন উন্নয়ন কমিটির সভাপতি মজিবর রহমান।
মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের বিষয়টি উল্লেখ করে শুক্রবার তাকে একই প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এটা আমি আসার আগেই চালু করা হয়েছে। আমি এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।
‘আমি সাত দিনের জন্য ফি বন্ধ রেখেছি। পরবর্তীতে কমিটির সভা ডেকে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করব।’
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তাহমিলুর রহমান বলেন, ‘পর্যটকদের সেবার মান বাড়াতেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ১০ টাকার বিনিময়ে আমরা কয়েকটি সেবা দিই। পর্যটন এলাকায় চেঞ্জ রুম ও টয়লেট করা হয়েছে। পর্যটকরা এগুলো বিনা মূল্যে ব্যবহার করতে পারেন। রয়েছে ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবস্থা। পর্যটন এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখার কাজও করা হয় এই টাকায়।’
‘টিকিট দেখালে সহজে ও নির্ধারিত মূল্যে ফটোগ্রাফার, ট্যুর গাইড ও নৌকার মাঝি পাওয়া যায়’- যোগ করেন ইউএনও।
প্রবেশ ফির পরিমাণ সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘একেক দিন একেক পরিমাণ টাকা আদায় হয়। ভরা মৌসুমে আমি দিনে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা আদায় হতে দেখেছি।’
খরচের খাত হিসেবে তিনি জানান, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ পর্যটকদের সেবা দেয়ার জন্য কিছু অস্থায়ী কর্মী রাখা হয়েছে। তাদেরকে ঘণ্টাপ্রতি ৫০ টাকা হিসেবে বেতন দেয়া হয়। কর্মীর সংখ্যা নির্দিষ্ট নয়। সর্বনিম্ন পাঁচ-ছয়জন থেকে সর্বোচ্চ ৩০ জন কাজ করেন।
ইউএনও জানান, উপজেলা পর্যটন কমিটি নামে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে। এই অ্যাকাউন্টে প্রবেশ ফি জমা হয়। ইউএনও ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করেন। এখন পর্যন্ত ৪০ লাখ টাকা জমা হয়েছে।
স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ প্রসঙ্গে তাহমিলুর রহমান বলেন, ‘স্বেচ্ছাসেবক বলা হলেও আসলে তারা স্বেচ্ছাসেবক নন। ঘণ্টা-চুক্তিতে তারা কাজ করেন। তাদের কাউকে নিয়োগও দেয়া হয়নি।’
আরও পড়ুন:সেন্টমার্টিনে যেকোনো প্রকার পর্যটক যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
দেশের একমাত্র প্রবালসমৃদ্ধ দ্বীপটিতে শনিবার থেকে ৯ মাস কোনো পর্যটক যেতে পারবেন না।
দ্বীপে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলও বন্ধ থাকবে।
সরকারি বিধিনিষেধের অংশ হিসেবে এসব সিদ্ধান্ত কার্যকর করছে স্থানীয় প্রশাসন।
এর আগে গত বছরের ডিসেম্বর থেকে সেন্টমার্টিনে পর্যটক যাতায়াতে নিবন্ধনের নিয়ম চালু করে পর্যটক যাতায়াত সীমিত করা হয়।
ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটির (ইয়েস) চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মুজিবুল হকের নেতৃত্বে সম্প্রতি পরিবেশবাদীদের ১০ সদস্যের একটি দল সেন্টমার্টিন দ্বীপ ঘুরে এসেছেন। তারা জানান, পর্যটক সীমিত করায় দ্বীপে ওয়ান টাইম প্লাস্টিকের ব্যবহার, নানাভাবে পরিবেশ দূষণ এবং নির্বিচারে প্রবাল, কোরাল,পাথর উত্তোলন কমে এসেছে।
অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক বাসসকে বলেন, ‘সেন্টমার্টিনে যে অবৈধ হোটেল-রিসোর্ট নির্মিত হয়েছে বা হচ্ছে, তা প্রশাসনের কারও অজানা নয়।
‘তারপরও আশার বাণী হচ্ছে গত ডিসেম্বর থেকে পর্যটক সীমিতকরণের পর সেন্টমার্টিন দ্বীপে একদিকে যেমন ওয়ান টাইম প্লাস্টিকের ব্যবহার কমে গেছে, দ্বীপের সার্বিক পরিবেশ-প্রতিবেশ অনেকটা দূষণমুক্ত হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা একটা পরিচ্ছন্ন দ্বীপ পাচ্ছেন, যা সরকারের পাশাপাশি পরিবেশবাদীদের একটা বড় সাফল্য।’
ফেব্রুয়ারি মাস থেকে সেন্টমার্টিনে পর্যটক যাতায়াত বন্ধের পর দ্বীপ সম্পর্কে কী পরিকল্পনা করা হচ্ছে তা নিয়ে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়।
তারা জানান, পর্যটক যাতায়াত বন্ধ থাকার সময়ে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ সুরক্ষায় মাসব্যাপী কর্মসূচি পালন করবে পরিবেশ অধিদপ্তর। এ কর্মসূচিতে দ্বীপটিকে কয়েক ভাগে বিভক্ত করে প্লাস্টিক বোতলসহ ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারে অভিযান চালানো হবে। এর বাইরে পর্যটক নিষেধাজ্ঞার সময়ে বিশেষ প্রকল্পের মাধ্যমে বিশুদ্ধ খাবার পানি উৎপাদন ও সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আরও জানান, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং একই সময়ে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় স্থানীয় লোকজনকে সচেতন করার পরিকল্পনাও রয়েছে প্রশাসনের।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. জমির উদ্দিন বলেন, ‘পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে সেন্টমার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। এরপর কেউ সেন্টমার্টিন যাচ্ছেন কি না, তা নজরদারিতে রাখা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপের বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে ২ ফেব্রুয়ারি অনলাইনে মিটিং ডাকা হয়েছে। সেখানেই সেন্টমার্টিনের বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করা হবে।’
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপ সুরক্ষায় যে কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে, তা ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে। পর্যটক যাতায়াত বন্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় বাসিন্দাদের বিকল্প জীবিকার বিষয়টিও ভেবে দেখা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত গত দুই মাসে ১ লাখ ২০ হাজার পর্যটক সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করেছেন। এ সময় ভ্রমণের আগে অনলাইনে নিবন্ধন সম্পন্ন করে ট্রাভেল পাস নিয়ে সেন্ট মার্টিন যেতে হয়েছে পর্যটকদের।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ছিল, নভেম্বর মাসে পর্যটকরা দ্বীপটিতে দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসবেন। তবে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে দৈনিক দুই হাজার পর্যটকের জন্য সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ ও সেখানে রাত যাপনের সুযোগ রাখা হয়।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, ‘সেন্ট মার্টিনের সুরক্ষার বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার আগে দ্বীপের বাসিন্দা, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, পরিবেশকর্মীসহ অংশীজনদের নিয়ে বৈঠক করতে হবে। সেন্ট মার্টিনে অবৈধভাবে ২৩০টি হোটেল- রিসোর্ট-কটেজ রেস্তোরাঁ তৈরি হয়েছে।
‘দ্বীপবাসীর কল্যাণে তাদের অবদান কতটুকু তা খতিয়ে দেখতে হবে। পর্যটন বন্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দ্বীপের মানুষের বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।’
আরও পড়ুন:সেন্টমার্টিন থেকে ফেরার পথে কক্সবাজারে টেকনাফের বাহারছড়া উপকূলবর্তী সাগরে পর্যটকবাহী জাহাজ ‘ইঞ্জিন বিকল’ হয়ে আটকা পড়েছে।
খবর পেয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশ, নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডসহ স্থানীয় জেলেদের সহায়তায় আটকা পড়া পর্যটকদের উদ্ধারে তৎপরতা চালানো হয়।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের কচ্ছপিয়া উপকূলবর্তী সাগরে জাহাজটি আটকা পড়ে বলে জানান ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ মো. আবুল কালাম।
আটকাপড়া জাহাজটিতে অন্তত ৭১ জন পর্যটক ছিলেন বলে জানান তিনি।
জাহাজটির সংশ্লিষ্টদের বরাতে আবুল কালাম বলেন, সকালে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়াস্থ বিআইডব্লিউটিএ জেটি ঘাট থেকে এমভি গ্রীন লাইন নামের পর্যটকবাহী জাহাজ সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে রওনা হয়। দুপুরের আগে জাহাজটি সেখানে পৌঁছায়। পরে বিকেল ৪টার দিকে সেন্টমার্টিন দ্বীপের জেটি ঘাট থেকে জাহাজটি ৭১ জন যাত্রী নিয়ে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা করে।
ফেরার পথে সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের কচ্ছপিয়া উপকূলবর্তী সাগরে পৌঁছলে আকস্মিক ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। এতে জাহাজটি সেখানে আটকা পড়ে।
ট্যুরিস্ট পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, এসময় জাহাজটির ক্রুসহ সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি স্থানীয় কোস্টগার্ড স্টেশনকে অবহিত করে। প্রায় এক ঘণ্টা পর রাত সোয়া ৮টার দিকে ট্যুরিস্ট পুলিশসহ নৌবাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড ও স্থানীয়দের সহায়তায় পর্যটকদের উদ্ধারে তৎপরতা শুরু হয়।
টেকনাফের ইউএনও শেখ এহেসান উদ্দিন বলেন, ‘ঘটনাস্থলে পুলিশ, নৌবাহিনী, বিজিবি ও কোস্টগার্ড সদস্যরা উপস্থিত আছেন। জাহাজটি যেহেতু একেবারে উপকূলে ভিড়েছে জোয়ারের পানি কমে গেলে তাদের উদ্ধার করা হবে।’
আটকা পড়া পর্যটকদের নিরাপত্তার কোনো ধরনের ঝুঁকি নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পর্যটকরা নিরাপদে আছেন। যে কোনো ধরনের ঝুঁকি এড়াতে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। উদ্ধারের পর তাদের কক্সবাজার শহরে পৌঁছাতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুটি বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন:পার্বত্য শান্তি চুক্তির অনুষ্ঠানে আসা না আসা নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক দুটি দলের মধ্যে কয়েক দিন ধরে দফায় দফায় বন্দুকযুদ্ধ চলছে। উদ্ভূত পরিস্থিতির জেরে সাজেকে পাঁচ শতাধিক পর্যটক আটকা পড়েছেন।
মঙ্গলবার রাতে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জোবায়দা আক্তার এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে বুধবার একদিনের জন্য সাজেক ভ্রমণে নিরুসাহিত করেছে জেলা প্রশাসন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এলাকা নিয়ন্ত্রণে বিগত কয়েকদিন ধরে সাজেক ও মাচালং এলাকায় সন্তু লারমা জেএসএস ও প্রসীত দলের ইপিডিএফ দফায় দফায় গোলাগুলিতে জড়িয়েছে। তবে আঞ্চলিক এই দু’দলের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় একজনের প্রাণহাণির খবর পাওয়া গেলেও দুর্গম এলাকা হওয়ায় প্রশাসনের কেউ তা নিশ্চিত করতে পারেনি।
সাজেকে আটকা পড়া গাড়িচালকরা বলেন, সকালে খাগড়াছড়ি থেকে ২৭টি গাড়ি সাজেকে গেছে। এই গাড়িগুলোতে করে আসা চার শতাধিক পর্যটক সাজেকে অবস্থান করছেন।
দুই আঞ্চলিক দলের মধ্যে গত কয়েকদিন ধরে গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে। তবে মঙ্গলবার সকাল থেকে এই গোলাগুলির ঘটনা বেড়ে যায়। তাই পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে বিকেলে পর্যটকবাহী কোনো গাড়ি সাজেক থেকে খাগড়াছড়িতে আসেনি।
সাজেক রিসোর্ট মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিজয় ত্রিপুরা জানান, সাজেক ও মাচালং সড়কের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের শীপপাড়া নামক এলাকায় এই গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। জায়গাটি পর্যটন কেন্দ্র থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে। এই গোলাগুলির ঘটনার কারণে কোনো গাড়ি ছেড়ে যায়নি। রাতে পাঁচ শতাধিক পর্যটক সাজেকে অবস্থান করছেন।
রাঙ্গামটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান জানান, দুই আঞ্চলিক দলের গোলাগুলির ঘটনায় পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে বুধবার একদিন সাজেকে পর্যটক ভ্রমণকে নিরুসাহিত করা হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। যারা আছেন তাদেরকে নিরাপদে আজ ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন:কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন নৌরুটে আজ বৃহস্পতিবার থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের কথা থাকলেও যাত্রী সংকটের কারণে কক্সবাজার থেকে কোনো জাহাজ ছাড়েনি।
চলতি মৌসুমে প্রশাসনের অনুমতি পাওয়া জাহাজ কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে সেন্টমার্টিনগামী পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করবে।
চলাচলের অনুমতি পাওয়া জাহাজ কেয়ারি সিন্দাবাদের ব্যবস্থাপক নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘আজ বৃহস্পতিবার থেকে কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর নুনিয়ারছড়ায় বিআইডব্লিউটিএ জেটি ঘাট দিয়ে জাহাজ ছাড়ার অনুমতি ছিল। কিন্তু যাত্রী সংকটের কারণে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে জাহাজ ছাড়া সম্ভব হয়নি।
কেয়ারি সিন্দাবাদ জাহাজে যাত্রী ধারণ ক্ষমতা ৩৫০ জন। কিন্তু বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সেন্টমার্টিন যেতে ইচ্ছুক যাত্রীর টিকিট বুকিং শতজনেও গড়ায়নি। এতে যাত্রী সংকটের কারণে আজ বৃহস্পতিবার জাহাজটি না ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
মূলত নভেম্বর মাসে সেন্টমার্টিনে রাতযাপনে নিষেধাজ্ঞার কারণে প্রবাল দ্বীপটি ভ্রমণে পর্যটকদের মধ্যে এক ধরনের অনীহা কাজ করছে বলে মনে করেন নুর মোহাম্মদ।
তিনি বলেন, ‘ডিসেম্বর মাসে সেন্টমার্টিনে রাতযাপনে নিষেধাজ্ঞা নেই। তাই তখন দ্বীপে পর্যটকের সংকট থাকবে না। এ কারণে ডিসেম্বরের প্রথম দিন থেকেই সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে জাহাজ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুন:কক্সবাজার শহরে এসে সড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দারা। দেশের সর্বদক্ষিণে একমাত্র প্রবাল দ্বীপটিতে পর্যটক সীমিতকরণ ও রাতযাপন নিষিদ্ধসহ সব বিধি-নিষেধ প্রত্যাহারের দাবিতে তারা কাফনের কাপড় পরে সড়কে শুয়ে পড়েন।
মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে কক্সবাজার শহরের প্রবেশমুখ কলাতলীর ডলফিন মোড়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দাদের উদ্যোগে এ কর্মসূচি শুরু হয়। দুপুর ১২টার দিকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনার জন্য ঘটনাস্থলে আসেন কক্সবাজার সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নীলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী, কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জসীম উদ্দিন চৌধুরীসহ প্রশাসনের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা।
টানা আলোচনার পর দাবি পূরণে প্রশাসনের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে ৫ ঘণ্টা পর বিকেল ৪টার দিকে অবরোধ প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা।
কলাতলী মোড় কক্সবাজার শহরের অত্যন্ত ব্যস্ততম এলাকা এবং প্রবেশমুখ। এই পয়েন্টে অবস্থান কর্মসূচির কারণে চারদিকে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দেখা দেয় তীব্র যানজট। শত শত যানবাহন আটকা পড়ায় পর্যটক ও স্থানীয়রা দুর্ভোগে পড়েন।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দা আব্দুল মালেকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন সেন্টমার্টিনের বাসিন্দা ও পর্যটন ব্যবসায়ী মাওলানা আব্দুর রহমান খান, মোহাম্মদ আলম, সরওয়ার কামাল, ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অফ কক্সবাজার (টুয়াক) একাংশের সভাপতি রেজাউল করিমসহ অনেকে।
কর্মসূচিতে দ্বীপবাসীর পাশাপাশি হোটেল-মোটেল, রেঁস্তোরা ও ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশনসহ পর্যটন-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সহস্রাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী ও কর্মী অংশগ্রহণ করেন।
টুয়াক একাংশের সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপের পরিবেশ-প্রতিবেশ সম্পর্কে তারা সম্যক অবগত। পরিবেশ রক্ষা করতে দ্বীপবাসীকে সঙ্গে নিয়েই পদক্ষেপ নিতে হবে। কিন্তু সরকার পরিবেশ রক্ষার দোহাই দিয়ে পর্যটক গমনাগমনে বিধি-নিষেধ আরোপ করে পর্যটন শিল্প ধ্বংসের পাঁয়তারা করছে। এতে দ্বীপবাসীর জীবন-জীবিকাসহ পর্যটনের সঙ্গে জড়িত হাজার হাজার কর্মীর কর্মসংস্থান হুমকির মুখে পড়েছে। ইতোমধ্যে দ্বীপের মানুষের মাঝে অভাব-অনটনের পাশাপাশি অনেকে অনাহারে-অর্ধাহারে দিনযাপন করছেন।
পর্যটন-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলেন, নভেম্বর মাসে পর্যটন মৌসুম শুরু হয়েছে। সরকারি বিধি-নিষেধের কারণে প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের জটিলতায় এখনও সেন্টমার্টিনগামী পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হয়নি। এতে চলতি মৌসুমে দ্বীপটিতে পর্যটক যাতায়াত নিয়ে অনিশ্চিয়তা কাটেনি। সরকারি সিদ্ধান্তের কারণে জীবন-জীবিকা নিয়ে চরম হুমকির মুখে দ্বীপবাসীসহ পর্যটন-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত সাড়ে তিন লক্ষাধিক মানুষ।
পরিবেশ রক্ষা করেই পর্যটন শিল্পকে বাঁচাতে সংশ্লিষ্ট সব মহলের সমন্বয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তাদের।
পর্যটন ব্যবসায়ী মাওলানা আব্দুর রহমান খান জানান, প্রশাসনের পক্ষে দ্বীপ নিয়ে গৃহীত সিদ্ধান্ত ও বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের জন্য ঊর্ধ্বতন মহলের সঙ্গে আলোচনার কথা বলা হয়েছে। বুধবারের মধ্যে সিদ্ধান্ত না জানালে আবারও আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। ৪টার পর আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।
কক্সবাজার সদরের ইউএনও নীলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী জানান, দ্বীপের বিষয় নিয়ে ঢাকায় বৈঠক চলছে। আন্দোলনের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মহলকে অবহিত করা হয়েছে। দ্রুত দ্বীপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে জানানোর পর আন্দোলনকারীরা অবরোধ প্রত্যাহার করেছেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জসীম উদ্দিন চৌধুরী জানান, বিকেল ৪টার পর সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।
আরও পড়ুন:দেশের অন্যতম পর্যটক আকর্ষণীয় এলাকা সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমিখ্যাত জাফলংয়ে সারাবছরই থাকে পর্যটকের ভিড়। তবে নির্বিচারে পাথর উত্তোলনের ফলে দিন দিন সৌন্দর্য হারিয়ে মলিন হয়ে পড়ে জাফলং।
কেবল জাফলং নয়, পাথর কোয়ারি হিসেবে পরিচিত সিলেটের পর্যটন আকষর্ণীয় আরও পাঁচটি এলাকারও একই অবস্থা।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে এসব এলাকায় চলছে নির্বিচারে পাথর লুট। কেবল জাফলং আর সাদাপাথর থেকেই লুট হয়েছে দুশ’ কোটি টাকার পাথর। প্রশাসনের নিয়মিত অভিযান সত্ত্বেও পাথর লুট থামানো যাচ্ছে না।
পরিবেশের সুরক্ষা এবং পর্যটকদের আকর্ষণ ধরে রাখতে ২০১৬ সালে পাথর উত্তোলন বন্ধের নির্দেশনা জারি করে খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। তারও আগে ২০১২ সালে জাফলংয়ের পিয়াইন নদীসহ ১৫ কিলোমিটার পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
এ-সংক্রান্ত গেজেটে বলা হয়, ‘অপরিকল্পিতভাবে যেখানে সেখানে পাথর উত্তোলন ও নানাবিধ কার্যকলাপের ফলে সিলেটের জাফলং-ডাউকি নদীর প্রতিবেশ ব্যবস্থা সংকটাপন্ন। ভবিষ্যতে এই সংকট আরও ঘণীভূত হবে বলে প্রতীয়মান হয়েছে। ইসিএভুক্ত এলাকায় যান্ত্রিক বা ম্যানুয়াল কিংবা অন্য কোনো পদ্ধতিতে পাথরসহ অন্য যেকোনো খনিজ সম্পদ উত্তোলন নিষিদ্ধ।’
জানা যায়, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রথম কিছুদিন প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে কেবল গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং ও সাদাপাথর পর্যটন এলাকা থেকেই প্রায় দুশ’ কোটি টাকার পাথর নিয়ে গেছে লুটপাটকারীরা। এই লুটপাটে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে লুটপাটের এই মচ্ছবের পরও থেমে না থেকে জাফলং-সাদাপাথরসহ সব কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে আন্দোলনে নেমেছেন ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা। এ জন্য নতুন সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে চলেছেন তারা।
অপরদিকে, পরিবেশকর্মীদের পক্ষ থেকে পাথর লুটপাট বন্ধ ও লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে পরিবেশ ও পর্যটন সুরক্ষার দাবি উঠেছে। ফলে সরকার পরিবর্তনের পর আবারও প্রশ্ন উঠেছে- পাথর উত্তোলন নাকি পরিবেশ ও পর্যটনের সুরক্ষার পথে হাঁটবে সরকার!
মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞার কারণে গত কয়েক বছর বন্ধ ছিলো পাথর উত্তোলন। ফলে জাফলংয়ের পিয়াইন ও কোম্পানীগঞ্জের ধলাই নদীর উৎসমুখে (সাদাপাথর) বিপুল পরিমাণ পাথর মজুদ হয়েছে। স্রোতের তোড়ে উজান থেকে আসা পাথর স্তরে স্তরে মজুদ হয় দুই নদীর উৎসমুখে। এসব পাথরের কারণেই সাম্প্রতিক সময়ে জাফলং ও সাদাপাথরে পর্যটক সমাগম বাড়ছিলো।
তবে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়ার সময়টাকে মোক্ষম সুযোগ হিসেবে নিয়ে এই দুই জায়গা থেকে নির্বিচারে পাথর লুটপাট চালানো হয়। ৫ আগস্ট-পরবর্তী তিন দিনে দুই কোয়ারি থেকে প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের ছত্রছায়ায় লুট হয়েছে প্রায় ২শ’ কোটি টাকার পাথর।
এই সময়টাতেহাজার হাজার শ্রমিক লাগিয়ে প্রভাবশালীরা রাত-দিন পাথর উত্তোলন করেন। লুটের কারণে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে পড়েছে এই দুই পর্যটন কেন্দ্র। পাথর লুটের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পদ হারিয়েছেন জেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ এক নেতা। এছাড়া বিএনপির দুই নেতাসহ ১৪৪ জনের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর দুটি মামলা করেছে।
এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, সরকার পতনের পর প্রথম তিনদিন পুলিশসহ অনান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অনেকটা নিষ্ক্রিয় ছিলো। এই সুযোগে জাফলং থেকে প্রায় ১২০ কোটি টাকার পাথর লুট হয়েছে।
আর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবিদা সুলতানার ভাষ্যমতে, সাদাপাথর থেকে লুট হয়েছে ২০ কোটি টাকার পাথর। যদিও স্থানীয়দের দাবি, দুই কোয়ারি থেকে ১৪০ কোটি নয়, দু’শ কোটি টাকার উপরে পাথর লুট হয়েছে। কোয়ারি থেকে পাথর ও বালু লুটের ঘটনায় গোয়াইনঘাট থানায় তিনটি ও কোম্পানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা হলেও হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, দুই কোয়ারিতে বালু ও পাথর লুটের সঙ্গে জড়িত প্রভাবশালীদের বেশিরভাগ বিএনপির রাজনীতি-সংশ্লিষ্ট। জাফলংয়ের পিয়াইন নদী থেকে অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলনের প্রমাণ পেয়ে দলীয় পদ হারান জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য রফিকুল ইসলাম শাহপরাণ।
এছাড়া পাথর লুটের সঙ্গে গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের সদ্য অপসারিত চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সাবেক কোষাধ্যক্ষ শাহ আলম স্বপন, পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আমজাদ বক্সের নাম জড়িয়েছে।
জাফলংয়ে পাথর লুটের ঘটনায় বিএনপির এই তিন নেতাসহ ১১৪ জনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। এর মধ্যে গোয়াইনঘাট থানায় একটি ও পরিবেশ আদালতে অপর মামলা হয়েছে। এছাড়াও জাফলং, সাদাপাথর, লোভছড়া, ভোলাগঞ্জ ও শাহ আরেফিন টিলায় প্রায় প্রতিদিনই অভিযান চালিয়ে পাথর জব্দ করছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান, মামলা আর অভিযুক্ত বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ- কোনো কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না পাথর লুট।
সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে গত ৬ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনেও এমন অভিযোগ করা হয়। মো. ইসমাইল হোসেন নামে জাফলংয়ের এক ব্যক্তি ওই সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের মদদে চলছে পাথর লুট।
এদিকে নিষেধাজ্ঞা জারির পর থেকেই পাথর উত্তোলন চালুর দাবিতে আন্দোলনে নামেন ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা। তবে তৎকালীন সরকার এমন দাবি আমলে নেয়ৱনি। নতুন সরকার আসার পর আবার একই দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন পাথর ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা। এই দাবিতে গত ২৩ অক্টোবর জাফলংয়ে বিশাল মানববন্ধন করা হয়। এতে বিভিন্ন পাথর ব্যবসায়ী ও শ্রমিক সমিতি অংশ নেয়।
পাথর উত্তোলনের সপক্ষে যুক্তি দিয়ে জাফলং ব্যবসায়ী, শ্রমিক ও সামাজিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন খান আনু বলেন, ‘জাফলংসহ সব পাথর কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন, সংগ্রহ ও সরবরাহ করে দেশের কয়েক লক্ষাধিক মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। এই পাথর কোয়ারি বন্ধ থাকায় শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়েছেন। বেকার হয়ে পড়েছেন পাথর-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিবছরই ঢলের সঙ্গে প্রচুর পাথর ভারত থেকে এই এলাকায় এসে জমা হয়। এসব পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় নদীর উৎসমুখ বন্ধ হয়ে সাম্প্রতিক সময়ে সিলেটে ঘন ঘন বন্যা দেখা দিচ্ছে। তাই পরিবেশের স্বার্থেই পাথর উত্তোলন করা প্রয়োজন।’
জাফলং স্টোন ক্রাশার মিল মালিক সমিতির সভাপতি বাবলু বখত বলেন, ‘পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় প্রতিবছরই ভারত থেকে প্রচুর পরিমাণ পাথর আমদানি করতে হচ্ছে। এতে দেশে ডলার সংকট আরও বাড়ছে।’
তবে ব্যবসায়ীদের এসব দাবির সঙ্গে ভিন্নমত জানিয়ে সিলেটের কোয়ারিগুলো থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ, জাফলংয়ে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার (ইসিএ) নির্দেশনা বাস্তবায়ন ও পাথর ভাঙার মেশিন নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সিলেটের পরিবেশ কর্মীরা।
২৩ অক্টোবর এসব দাবিতে সিলেটের জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি দেয় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)।
এ প্রসঙ্গে বেলা’র সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক শাহ সাহেদা আখতার বলেন, ‘৫ আগস্টের পর থেকে লুটপাট করে জাফলং ও সাদপাথরকে পাথরশূন্য করে ফেলা হয়েছে। এখন আবার পাথর উত্তোলনের দাবিতে মাঠে নেমেছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের এই দাবি মানা হলে এসব পর্যটন এলাকা আবার ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে।’
পরিবেশবাদী সংগঠন ভূমিসন্তান বাংলাদেশের সমন্বয়ক আশারুল কবির বলেন, ‘দেশে চাহিদার খুব স্বল্পসংখ্যক পাথর সিলেটের কোয়ারিগুলোতে পাওয়া যায়। ফলে বড় অংশই ভারত থেকে আমদানি করতে হয়। তাই পাথর কোয়ারি খুলে দিলে আমদানি বন্ধ হয়ে যাবে এমন দাবি সত্য নয়। কোয়ারি সচল হলে কিছু মানুষ আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারেন। কিন্তু দেশের পরিবেশ-প্রতিবেশের বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে।’
এ ব্যাপারে সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহমুদ মুরাদ জানিয়েছেন, পাথর কোয়ারি সচল করা হবে কী না এটি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের বিষয়। তবে এখন পর্যন্ত সরকার থেকে এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। ফলে যারা অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করবেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি বলেন, অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধে এখন নিয়মিতই অভিযান চালানো হচ্ছে।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘জাফলং দেশের প্রধান পর্যটন কেন্দ্রগুলোর একটি। এখানে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বালু-পাথর উত্তোলনের ফলে পর্যটনকেন্দ্রটির সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশও হুমকির মুখে। ইসিএ ঘোষিত জাফলং থেকে সব ধরনের বালু ও পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ। তবে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও একটি গোষ্ঠী বালু-পাথর উত্তোলনের মাধ্যমে জাফলংয়ে পরিবেশ বিধ্বংসী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি।’
আরও পড়ুন:ঢাকায় জাপান ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারের (ভ্যাক) কার্যক্রম শুরু হয়েছে। রোববার এই কার্যক্রম চালু হয়েছে বলে জানিয়েছে ভিএফএস গ্লোবাল।
আবেদনকারীদের ‘কার্যকর ও সুবিন্যস্ত’ আবেদন জমা দেয়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে এই কেন্দ্র।
ভিএফএস গ্লোবাল এক বিবৃতিতে জানায়, ‘আমরা আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা করছি যে আমাদের জাপান ভিসা সেবা এখন বাংলাদেশেও পাওয়া যাবে। আবেদনকারীরা ঢাকায় অবস্থিত আমাদের অত্যাধুনিক ভিসা আবেদন কেন্দ্রে গিয়ে তাদের যাত্রা নির্বিঘ্নে শুরু করতে পারবেন।’
মন্তব্য