রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় সয়াবিন তেলের অবৈধ মজুত ও অতিরিক্ত দামে বিক্রির অভিযোগে তিন প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেছে র্যাব।
সোমবার দুপুরে তিন প্রতিষ্ঠানকে ৫০ হাজার করে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
র্যাব-৩ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের যৌথ অভিযানে এ জরিমানা করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠান তিনটা হলো- অদ্বিতি ট্রেডার্স, মেসার্স সিফাত ট্রেডিং ও মেসার্স মিন্টু স্টোর।
র্যাব-৩ এর সহকারী পরিচালক (অপস ও ইন্ট শাখা) বীণা রানী দাস এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ৩০-৪০ টাকা বেশি দামে সয়াবিন তেল বিক্রির অভিযোগ ছিল। এ ছাড়া তারা অতিরিক্ত তেল মজুত রেখে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছিলেন।’
তিনটি দোকান থেকে প্রায় ৭৫ ড্রাম সয়াবিন তেলের মজুত পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
জরিমানার পাশাপাশি মজুত রাখা তেল সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রির নির্দেশ দেয়া হয় দোকানিদের।
র্যাব কর্মকর্তারা জানান, সরকারি নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে কিনা তা মনিটরিং করা হবে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের অফিস প্রধান মো. আব্দুল জব্বার মণ্ডল অভিযান শেষে বলেন, ‘ক্রয়-বিক্রয়ের পাকা রশিদ সংরক্ষণ না করা, পুরানো রেটের তেল মজুত করে নির্ধারিত বাজারমূল্যের চেয়ে অধিক মূল্যে খোলা সয়াবিন বিক্রির অপরাধে ৫০ জরিমানা করা হয়।’
জরিমানার পর প্রতিষ্ঠান তিনটির মালিকেরা জানান, তাদেরও নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ভোজ্যতেল কিনতে হয়েছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা তেল বিক্রির সময়ে তাদের কখনও পাকা রশিদ দেন না বলে অভিযোগ করেন তারা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আবদুল জব্বার মণ্ডল বলেন, ‘পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের রশিদ সরবরাহ করার ব্যাপারটি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তারা যদি রশিদ না পান, সে ক্ষেত্রে ভোক্তা অধিকারের কাছে লিখিত অভিযোগ করলেই আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রস্তুত। কিন্তু তারা আমাদের কাছে কোনো লিখিত অভিযোগ দেননি।’
আরও পড়ুন:ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ এবং পশ্চিমা দেশগুলোর প্রবল নিষেধাজ্ঞার মাঝেও নাটকীয় উত্থান ঘটেছে রুশ মুদ্রা রুবলের। যুদ্ধ শুরু করার আগ মুহূর্তে এই মুদ্রার মান যে অবস্থায় ছিল সোমবার পর্যন্ত তার থেকে ৩০ শতাংশ উন্নীত হয়েছে। দেশটির মূলধন প্রবাহে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপের ফলেই এমনটি হয়েছে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
ব্লুমবার্গের বরাতে সোমবার এক প্রতিবেদনে আল-জাজিরা জানিয়েছে, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রসহ এর মিত্র দেশগুলো একের পর এক নিষেধাজ্ঞা এবং অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞাও কিছু ক্ষেত্রে রাশিয়ার জন্য শাপেবর হয়েছে।
নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে দেশটির আমদানিও কমে যায়, ফলে কমে যায় দেশটির আমদানি ব্যায় এবং বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদাও।
এ ছাড়া রাশিয়ার কাছ থেকে ইউরোপের দেশগুলো যে গ্যাস ও তেল ক্রয় করে তার মূল্য চুক্তি অনুযায়ী আগে ইউরোতেই পরিশোধ করা হতো। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়া ওই দেশগুলোকে রুবলে মূল্য পরিশোধের বাধ্যবাধকতা দেয়। ইউরোকে রুবলে কনভার্ট করে রাশিয়ার জ্বালানি ক্রয় করতে হচ্ছে বলে রুবলের চাহিদাও বেড়েছে। এর ফলে রুবলের দামও বেড়েছে।
জ্বালানি বিক্রি করে এভাবে মাত্র চারটি লেনদেনের পরই ইউরো মুদ্রার বিপরীতে রুবল এক লাফে ১৩ শতাংশ শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এর মধ্যে ৬.২ শতাংশই হয়েছে সোমবার।
সোমবার বিকেলে রুশ অর্থমন্ত্রী দেশটির মুদ্রার মান এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে জানান। এ ছাড়া দেশটির মূলধন প্রবাহ ও আমদানি ব্যায়ের মধ্যে খুব বেশি বৈসাদৃশ্য না থাকায় অর্থনীতির ওপরও চাপ কম বলে জানান তিনি।
ভারত ও চীনের কাছে জ্বালানি বিক্রি করে বৈদেশিক মুদ্রাও আয় করছে রাশিয়া। দেশটির রপ্তানি আয়ের আয়ের ৪০ শতাংশই আসে তেল ও গ্যাস বিক্রি করে।
অক্সফোর্ড ইকোনমিক্সের তাতিয়ানা অরলোভা বলেন, ‘মূলধন নিয়ন্ত্রণ তুলে নেয়ার পর ডলারের বিপরীতে রুবলকে ৭০ থেকে ৮০ রেঞ্জে ফিরিয়ে দেবে, যা দেশটির অর্থনীতির জন্য আরও আরামদায়ক হবে।’
এ আগে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর নিষেধাজ্ঞার মুখে রুবলের মান দ্রুত পড়ে যেতে শুরু করলে টানা দুই সপ্তাহ মস্কোর শেয়ার বাজার বন্ধ রেখেছিল দেশটি। কিন্তু মার্চ মাসের শেষের দিক থেকে রুবল আবারও ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে।
তাতিয়ানা রোমানোভা বলেন, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার তেল-গ্যাস রপ্তানির পরিমাণ কমেছে এ কথা ঠিক। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে তেল-গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় রাশিয়া তা পুষিয়ে নিচ্ছে।’
এদিকে, ফেব্রুয়ারি মাসের শেষদিকে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার দ্বিগুণ করে। বিদেশি মুদ্রা না কিনে যারা রুবল সঞ্চয় করবেন, তাদের জন্য প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়। আর রুশ কোম্পানিগুলো বিদেশে ব্যবসা করে যে আয় করবে তার ৮০ শতাংশ রুবলে কনভার্ট করে নিতে হবে। এর ফলে রাশিয়ার মুদ্রা রুবলের একটি বড় চাহিদা তৈরি হয়েছে।
সোমবার মধ্যরাতে দেখা গেছে, আমেরিকান এক ডলার সমান ৫৯ রুবল। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, রুশ মুদ্রা যেভাবে শক্তিশালী হচ্ছে তাতে কিছু দিনের মধ্যে এক ডলার সমান ৫০ রুবল হয়ে যাওয়াও অসম্ভব কিছু নয়।
আরও পড়ুন:শুধু যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপের দেশগুলোতে নয়, পাশের দেশ ভারতেও পণ্য রপ্তানিতে চমক দেখিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। প্রতি মাসেই বাড়ছে রপ্তানি। প্রথমবারের মতো দেশটিতে বাংলাদেশের রপ্তানি ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করতে চলেছে।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা ভারতের বাজারে ১৭০ কোটি ৬২ লাখ (১.৭০ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছেন।
এই অঙ্ক গত অর্থবছরের পুরো সময়ের (১২ মাস, ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুন) চেয়েও ৩৩ শতাংশ বেশি। আর একই সময়ের চেয়ে বেশি ৫৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
অর্থবছর শেষ হবে ৩০ জুন। মে মাস চলছে; এই মাসেও ভারতে রপ্তানি বৃদ্ধির আশার কথা শুনিয়েছেন রপ্তানিকারকরা। জুন মাসসহ আগামী দিনগুলোতেও এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত বাড়বে বলে মনে করছেন তারা।
একই কথা শুনিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে এখন চমৎকার বাণিজ্য সম্পর্ক বিরাজ করছে। দুদেশের বাণিজ্য বাড়ছে। এই অর্থবছরেই ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে। এটা হবে একটা মাইলফলক।’
সে হিসাবে বড় ধরনের কোনো অঘটন না ঘটলে অর্থবছর শেষে ভারতের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করবে, এটা নিশ্চিত করে বলা যায়।
মহামারি করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির পালে হাওয়া লেগেছে। জুলাই-এপ্রিল সময়ে সব মিলিয়ে ৪৩ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন (৪ হাজার ৩৩৪ কোটি ৪৩ লাখ) ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৫ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি এবং পুরো বছরের লক্ষ্যমাত্রার প্রায় সমান।
এই সময়ে সব দেশেই ভালো রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে, ভারতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে সবচেয়ে বেশি।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সবশেষ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, একক দেশ হিসেবে পাশের দেশ ভারত এখন বাংলাদেশের সপ্তম রপ্তানি বাজারের তালিকায় উঠে এসেছে। অর্থাৎ বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের শীর্ষ ১০ বাজারের একটি এখন ভারত।
অথচ গত অর্থবছরেও বাংলাদেশের শীর্ষ ১০ রপ্তানি বাজারের তালিকায় ভারতের স্থান ছিল না। আগের বছরগুলোতে ভারতের অবস্থান ছিল ১৪-১৫তম স্থানে।
সবার ওপরে বরাবরের মতোই যুক্তরাষ্ট্র অবস্থান করছে। দ্বিতীয় স্থানে জার্মানি। তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ স্থানে যথাক্রমে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, স্পেন ও পোল্যান্ড।
পোল্যান্ড ও ভারতে রপ্তানির অঙ্ক প্রায় সমান। জুলাই-এপ্রিল সময়ে পোল্যান্ডে রপ্তানি হয়েছে ১৭৬ কোটি ৩০ লাখ ডলারের পণ্য; ভারতে হয়েছে ১৭০ কোটি ৬২ লাখ ডলার।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে মাত্র তিনটি অর্থবছরে ভারতে পণ্য রপ্তানি ১ বিলিয়ন (১০০ কোটি) ডলারের বেশি হয়েছে। তাও সেটা গত তিন বছরে। তার আগের বছরগুলোয় ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি ছিল ১ বিলিয়নের নিচে।
তবে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের ছয় মাসেই অর্থাৎ জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে সেই রপ্তানি ১ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে ১০৬ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়। সাত মাসে তা বেড়ে ১২১ কোটি ২৪ লাখ ডলারে দাঁড়ায়। আট মাসে অর্থাৎ জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে তা আরও বেড়ে ১৩৬ কোটি ১০ ডলারে উঠে।
গত ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা ভারতে ১২৮ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেন, যা ছিল এযাবৎকালের সর্বোচ্চ। ২০১৯-২০ অর্থবছরের চেয়ে এ আয় বেশি ছিল প্রায় ১৭ শতাংশ।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে ভারতের বাজারে ১২৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল বাংলাদেশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা কমে ১০৯ কোটি ৬১ লাখ ৬০ হাজার ডলারে নেমে আসে।
গত অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১০৭ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। এ হিসাবেই এই নয় মাসে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়েছে ৫৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
আগামী দিনগুলোতে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি আরও বাড়বে বলে সুখবর দিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী।
সম্প্রতি বাংলাদেশের ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সভাপতির সঙ্গে বৈঠকে দোরাইস্বামী বলেন, ‘গত এক বছরে বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য ৯৪ শতাংশ বেড়েছে। চলতি অর্থবছর শেষে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। আর এর মধ্য দিয়ে দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক নতুন মাত্রা পাবে।’
ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে ভারতে মোট রপ্তানির মধ্যে ৩৩ কোটি ৭৯ লাখ ডলারের ওভেন পোশাক রপ্তানি হয়েছে। নিট পোশাক রপ্তাানি হয়েছে ২৫ কোটি ৩৫ লাখ ডলারের।
অন্যান্য পণ্যের মধ্যে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে ১৬ কোটি ১৮ লাখ ডলারের। ৮ কোটি ২৪ লাখ ডলার এসেছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য থেকে। কটন ও কটন প্রোডাক্টস থেকে এসেছে ৩ কোটি ২০ লাখ ডলার। প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি থেকে এসেছে ১ কোটি ৭৫ লাখ ডলার।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই দশ মাসে বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের মধ্যে ভারত থেকে এসেছে ৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্র সবার শীর্ষে
বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির প্রধান বাজার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। মোট রপ্তানি আয়ের ২০ শতাংশই আসে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির এই দেশটি থেকে। ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে বাজারটিতে ৮৬৪ কোটি ৫৮ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৫২ দশমিক ২১ শতাংশ বেশি।
৬৩২ কোটি ৩৪ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে জার্মানি; রপ্তানি বেড়েছে ২৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ। তৃতীয় যুক্তরাজ্য; রপ্তানির অঙ্ক ৪০৬ কোটি ডলার। ২৬৬ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে চতুর্থ স্পেন। পঞ্চম স্থানে রয়েছে ফ্রান্স, রপ্তানির পরিমাণ ২২২ কোটি ৫৫ লাখ ডলার।
অন্যান্য দেশের মধ্যে ইতালি বাংলাদেশ থেকে জুলাই-এপ্রিল সময়ে ১৩৮কোটি ৫৪ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। কানাডা ১২২ কোটি ৪৮ লাখ ডলার, বেলজিয়াম ৭৫ কোটি ২২ লাখ ডলার, নেদারল্যান্ডস ১৪৫ কোটি ৮৭ লাখ ডলার, জাপান ১১৫ কোটি ৪৮ লাখ ডলার এবং চীন ৫৯ কোটি ৪৯ লাখ ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য বাংলাদেশ থেকে আমদানি করেছে।
এছাড়া জুলাই-এপ্রিল সময়ে অষ্ট্রেলিয়ায় ৭৮ কোটি ৭ লাখ ডলার এবং তুরস্কে ৩৫ কোটি ৭৬ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ।
যুদ্ধের মধ্যেও রাশিয়ায় রপ্তানির ইতিবাচক ধারা অব্যাহত আছে। এই দশ মাসে দেশটিতে ৫৯ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় চলতি অর্থবছরেও রপ্তানি আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধি অর্জন করে চলেছি। পোশাকের অর্ডার বাড়ছে; দামও বেশি পাচ্ছি। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি আমরা।’
তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের কারণে পণ্য সরবরাহ ঠিকমতো না হওয়ায় এবং সব ধরনের জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেছে। মানুষ পোশাক কেনা কমিয়ে দিতে পারে। এ অবস্থায় পাশের দেশ ভারতে রপ্তানি বাড়লে আমাদের জন্য খুবই ভালো হয়।’
‘ভারতে বাংলাদেশে তৈরি পোশাকের কদর বাড়ছে। ভৌগোলিক কারণেই ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ছে। এখন থেকে তা বাড়তেই থাকবে বলে মনে হচ্ছে আমার কাছে। প্রায় দেড় শ কোটি লোকের চাহিদা মেটাতে ভারতকে বাংলাদেশ থেকে পোশাক কিনতেই হবে। ভারতে পোশাক তৈরি করতে যে খরচ হয়, বাংলাদেশ থেকে আমদানি করলে তার থেকে অনেক কম পড়ে। সে কারণে সব হিসাব-নিকাশ করেই তারা এখন বাংলাদেশ থেকে বেশি বেশি পোশাক কিনছে।’
ফারুক বলেন, ‘ভারতের অনেক ব্যবসায়ী এখন বাংলাদেশের কারখানায় পোশাক তৈরি করে তাদের দেশে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করছেন। এতে তাদের একদিকে যেমন লিড টাইম কম লাগছে, অন্যদিকে খরচও কম হচ্ছে।
‘এ ছাড়া গত বছর ভারত সরকারকে বাংলাদেশের রপ্তানি-আমদানি বাণিজ্য দ্রুত ও সহজ করতে আমরা বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে ভারতীয় হাইকমিশনারকে একটি চিঠি লিখেছিলেন। তার ইতিবাচক ফলও পাওয়া যাচ্ছে।’
সব মিলিয়ে ভারতের বিশাল বাজার বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকদের জন্য আগামী দিনে ‘সুদিন’ বয়ে আনবে বলে মনে করছেন ফারুক।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক মঞ্জুর হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভারতে বাংলাদেশের একটি বৃহৎ ও বিকাশমান বাজার রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ সেখান থেকে এখন পর্যন্ত যথেষ্ট পরিমাণে লাভবান হতে পারেনি। বৈশ্বিক বাজার থেকে ভারতের আমদানির মোট মূল্যমান প্রায় ৪৫০ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ১ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি।
‘এখন ভারতে আমাদের রপ্তানি বাড়ছে। সেটা কিন্তু ভারতের দেড়’শ কোটি লোকের বিশাল বাজারের তুলনায় একেবারেই নগণ্য। এখন দুদেশের সরকারের মধ্যে সুন্দর সম্পর্ক বিরাজ করছে, সেটাকে কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যে নতুন মাত্রা যোগ হবে।’
‘একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, পাশের দেশ হওয়ায় ভারতে খুবই কম খরচে আমরা পণ্য রপ্তানি করতে পারি। এতে রপ্তানিকারকরা বেশি লাভবান হয়। তাই ভারতে রপ্তানি বাড়াতে সরকারের কুটনৈতিক তৎপরতা আরও বাড়ানো উচিৎ বলে আমি মনে করি।’
আরও পড়ুন:নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার সহনীয় রাখতে অসাধু ব্যবসায়ীদের ফৌজদারি আইনের আওতায় শাস্তি চায় কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বালাদেশ-ক্যাব। বেসরকারি এই সংগঠন মনে করে, ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণে ভোক্তা অধিদপ্তর যথেষ্ট নয়; এজন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘ভোক্তা অধিকার বিভাগ’ জরুরি।
সোমবার ‘অতিমুনাফা ও প্রতারণার শিকার ভোক্তারা: আইন মানার তোয়াক্কাই নেই’ শীর্ষক এক অনলাইন সেমিনারে বক্তারা এমন বক্তব্য তুলে ধরেন।
ওয়েবিনারে ক্যাবের নেতারা বলেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার সহনীয় রাখতে উচ্চ পর্যায়ে টাস্কফোর্স গঠন করা হলেও বেপরোয়া কিছু ব্যবসায়ীর কারণে সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। চাল-ডাল থেকে শুরু করে ভোগপণ্যের বাজারে কিছু ব্যবসায়ী নিম্ন মানের পণ্য বাড়তি দামে বিক্রি করছেন। তাদের অপতৎপরতা বন্ধ করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় এসব ব্যবসায়ীকে ঠেকাতে কেবল জরিমানা নয়, আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।’
ওয়েবিনারটি পরিচালনা করেন ক্যাবের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মিজানুর রহমান রাজু। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন।
মূল প্রবন্ধে নাজের হোসাইন বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতা ঠেকাতে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও সিটি করপোরেশনের বাজারে অভিযান পরিচালনা করছে। অপরাধের জন্য সতর্ক করার পাশাপাশি জরিমানাও আদায় করা হচ্ছে। তারপরও অপতৎপরতা বন্ধ হচ্ছে না।’
সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কার্যক্রমের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘অসাধু ব্যবসায়ীদের ভিত এতটাই শক্তিশালী যে সরকারি প্রশাসন যন্ত্র মনে হয় তাদের কাছে অসহায়। এরা টাকার জোরে সরকারি আমলা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও বিভিন্ন মিডিয়াকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেন।’
ব্যবসায় অসাধু প্রক্রিয়ায় কোটিপতির সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আগে একই কায়দায় গুঁড়োদুধে ময়দা মিশ্রিত করার হোতাসহ চিনি, সয়াবিন, চাল কেলেঙ্কারির হোতাদের কোনো শাস্তি হয়নি। তারা বরাবরই পর্দার আড়ালে থেকে রেহাই পেয়ে যায়।’
‘ব্যবসায় এমন প্রতারণা ফৌজদারি অপরাধও বটে। তবে আইন দিয়ে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সব সময় সম্ভব না-ও হতে পারে। এজন্য প্রয়োজন অতিমুনাফালোভী, প্রতারক, মজুতকারী ও অসাধু ব্যবসায়ীদের সামাজিকভাবে বয়কট করা। তাহলে ব্যবসা-বাণিজ্যে জবাবদিহিতা ও সুশাসন নিশ্চিত হতে পারে।’
ক্যাবের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এম সামসুল আলম বলেন, ‘ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ছাড়া আর কোথাও ভোক্তাদের যাওয়ার জায়গা নেই। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের জন্য কেবল ভোক্তা অধিদপ্তরই যথেষ্ট নয়, বিভাগ চাই।
‘দেশে এমন কোনো খাত নেই যেখানে অসাধু ব্যবসায়ীরা মাথাচাড়া দেয়নি। আমরা ভোক্তারা অনেকটা বন্দি হয়ে গেছি। এই বন্দিদশা থেকে মুক্তি দিতে দেশের আইন, সরকারি প্রতিষ্ঠান কেউ-ই সফল নয়।’
‘দেশে অসাধু ব্যবসায়ীর সংখ্যা কম। কিন্তু সৎ ব্যবসায়ীরা এই অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে নির্বিঘ্নে ব্যবসা করতে পারছেন না। তারা অসাধু ব্যবসায়ীদের দ্বারা নির্যাতিত, নিপীড়িত হচ্ছেন।’
ভোক্তাদের প্রতি অনুরোধ রেখে তিনি বলেন, ‘আপনারা জেলায় জেলায় অন্তত একটা করে ঘটনা চিহ্নিত করুন। যাতে এসব ঘটনাকে ভোক্তা অধিকার সুরক্ষা আইনের আওতায় ফৌজদারি আইনে মামলা করা যায়। ভোক্তা অধিদপ্তরের হয়তো এখনও মামলা করার অধিকার নেই। তবে আইন করা হচ্ছে। ক্যাক একমাত্র সংগঠন, যাকে মামলা করার অধিকার দেয়া হয়েছে। ভোক্তা স্বার্থবিরোধী এসব ঘটনায় আমরা প্রয়োজনে প্রমাণসহ আদালতে যাব।
আরও পড়ুন:‘তামাক ব্যবহারে শুধু স্বাস্থ্যগত ও অর্থনৈতিক ক্ষতি নয়, অনেক ধরনের সামাজিক সম্ভাবনারও ক্ষতি হচ্ছে। ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত দেশ গঠনের লক্ষ্য অর্জন করতে হলে তামাকের সহজলভ্যতা কমাতে হবে। এজন্য কার্যকর করারোপের বিকল্প নেই। তাহলে তামাক পণ্যের দাম বাড়বে, সহজলভ্যতা কমবে, ব্যবহারও কমবে।’
সোমবার বেসরকারি গবেষণা সংস্থা উন্নয়ন সমুন্নয়ের আয়োজনে ‘তামাক পণ্যে কার্যকর করারোপ বিষয়ক প্রাক-বাজেট আলোচনায়’ বক্তারা এমন অভিমত ব্যক্ত করেন।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে এই অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, মো. মনোয়ার হোসেন চৌধুরী, বদরুদ্দোজা মো. ফরহাদ হোসেন, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম, শামীমা আক্তার খানম ও হাবিবা রহমান খান বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক ছিলেন বারডেমের দন্ত্য চিকিৎসা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. অরূপ রতন চৌধুরী ও সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
আলোচনা অনুষ্ঠানে স্তর ভেদে ১০ শলাকার এক প্যাকেট সিগারেটের সর্বনিম্ন দাম ৩৯ থেকে বাড়িয়ে ৫০ টাকা, ৬৩ থেকে বাড়িয়ে ৭৫ টাকা, ১০২ থেকে বাড়িয়ে ১২০ টাকা এবং সর্বোচ্চ স্তরে ১৩৫ থেকে বাড়িয়ে ১৫০ টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়। একইসঙ্গে এই মূল্যের ওপর যথাক্রমে ৩২.৫০ টাকা, ৪৮.৭৫ টাকা, ৭৮ টাকা এবং ৯৭.৫০ টাকা শুল্ক নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়। বিড়ি ও ধোঁয়াবিহীন তামাক পণ্যের দামও বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয়।
আলোচনায় বক্তারা বলেন, তামাক পণ্যের দাম বাড়লে বর্তমানে তামাক ব্যবহারকারীদের মধ্যে ১৩ লাখ এই পণ্য ব্যবহারে নিরুৎসাহিত হবে। পাশাপাশি ৯ লাখ তরুণকে তামাক ব্যবহার থেকে বিরত রাখা যাবে। প্রায় সাড়ে ৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক ও সাড়ে ৪ লাখ তরুণের অকাল মৃত্যু রোধ করা যাবে। উপরন্তু বছরে সরকার ৯ হাজার ২০০ কোটি টাকা রাজস্ব পাবে।
আয়োজক সংস্থা উন্নয়ন সমুন্নয়ের সভাপতি ড. আতিউর রহমান ভিডিও বক্তব্যে বলেন, ‘তামাক পণ্য ব্যবহারে স্বাস্থ্য নষ্ট হচ্ছে। অর্থের অপচয় হচ্ছে। এজন্য তামাক পণ্যে আরো বেশি কর আরোপ করতে হবে। তাহলে একদিকে রাজস্ব বাড়বে, অন্যদিকে স্বাস্থ্যের ক্ষতি এড়ানো যাবে।’
র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেন, ‘কর হার বাড়ায় সিগারেটের ব্যবহার আগের চেয়ে কমেছে। কর আরও বাড়ানোর মাধ্যমে ব্যবহার আরও কমিয়ে আনা যাবে। সরকারের আয়ও বাড়বে।’
অরূপ রতন চৌধুরী বলেন, ‘মাদকাসক্তদের ৯৮ শতাংশের নেশার জগতে প্রবেশ ঘটে তামাক দিয়ে। তবে আমরা সিগারেটের দিকে যেভাবে নজর দিচ্ছি সেভাবে জর্দা, খৈনি ও গুলের দিকে নজর দেয়া হচ্ছে না।
‘গবেষণায় দেখা গেছে, পরোক্ষ ধূমপানের কারণে মহিলাদের ব্রেস্ট ক্যান্সার হচ্ছে। তাই পরিবারের সদস্যদের তামাকের আসক্তি কমাতে ভূমিকা রাখতে হবে। ইদানীং ই-সিগারেট ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটিও সমান ক্ষতিকর। এটিকে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সব মিলিয়ে কর বৃদ্ধিই তামাক নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার।’
বদরুদ্দোজা মো. ফরহাদ হোসেন বলেন, তামাক কোম্পানি থেকে যে কর পাওয়া যায় তার চেয়ে বেশি স্বাস্থ্য খাতে সরকারের ক্ষতি হয়। তাই তামাককে আরও করের আওতায় আনতে হবে। লাভ বেশি হওয়ায় চাষীরা তামাকের দিকে ঝুঁকছে। তাদের বিকল্প লাভজনক ফসল দিতে হবে।’
শামীমা আক্তার খানম বলেন, ‘গুলশান ও ধানমণ্ডির প্রতিটি রেস্টুরেন্টে স্মোকিং জোন করায় তা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এসব জোনে প্রবেশ করলে কোনো মানুষ দেখা যায় না। শুধু ধোঁয়া আর ধোঁয়া। এতে তরুণ-যুবকরা তামাকে আসক্ত হচ্ছে।’
মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘তামাকের কর বৃদ্ধির পাশাপাশি এর উৎপাদন বন্ধের দিকেও নজর দিতে হবে। এই খাতে নতুন বিনিয়োগের পথও বন্ধ করতে হবে। কারণ অনেক কোম্পানিই এ খাতে বিনিয়োগের সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছে।’
আলোচক অধ্যাপক ড. তৈয়বুর রহমান বলেন, ‘তামাক ব্যবহারে শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম রয়েছে। ১৫ শতাংশের বেশি মানুষ তামাক পণ্য ব্যবহার করছে।’
আরও পড়ুন:চাকরিচ্যূত ১৭৬ কর্মীকে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা পরিশোধের পর শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ও গ্রামীণ ব্যাংকের উদ্যোক্তা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মালিকানাধীন গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে।
আদালতের বাইরে বসেই দুই পক্ষ একটি সমঝোতায় পৌঁছায়। এরপর তারা আদালতে বিষয়টি জানালে আদালত মামলাটি প্রত্যাহার ঘোষণা করে।
সোমবার বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক কোম্পানি বেঞ্চ মামলা প্রত্যাহারের আদেশ দেয়।
আদেশে আদালত বলে, ‘বাস্তবতার প্রেক্ষিতে দেখা যায়, উভয়পক্ষ বন্ধুত্বপূর্ণভাবে আদালতের বাইরে সমস্যাটি সমাধান করে ফেলেছে। এ অবস্থায় এটি মামলা হিসেবে ধরে রাখার কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। সুতরাং মামলাটি ডিসমিস করা হলো।’
আদালতের প্রত্যাহারের আবেদন করেন ১৭৬ জনের পক্ষে আইনজীবী ইউসুফ আলী। আর গ্রামীণ টেলিকমের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মুস্তাফিজুর রহমান।
আদেশের পরে গ্রামীণ টেলিকমের পক্ষের আইনজীবী মুস্তাফিজুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গ্রামীণ টেলিকমের কর্মকর্তা-কর্মচারী তাদের সঙ্গে গ্রামীণ টেলিকমের দীর্ঘমেয়াদি একটা বিরোধ ছিল। এই বিরোধের প্রেক্ষিতে গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম মামলা করেন তারা। সবশেষ তারা গ্রামীণ টেলিকম অবসায়ন চেয়ে কোম্পানি কোর্টে একটা মামলা করে।
‘পরে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তাদের মধ্যে কোর্টের বাইরে একটা সেটেলমন্টে হয়েছে। ফলে তাদের দাবি করা টাকার একটা অংশ তাদের দেয়া হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে আজকে তারা সব মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।’
টাকার পরিমাণ কত জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রায় ৪০০ কোটি টাকা।’
গ্রামীণ টেলিকমে শ্রমিক ছাঁটাইকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরেই শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ চলে আসছিল।
একপর্যায়ে শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন (বি-২১৯৪) সিবিএর সঙ্গে আলোচনা না করেই এক নোটিশে প্রতিষ্ঠানটির ৯৯ কর্মীকে ছাঁটাই করে গ্রামীণ টেলিকম। বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে তারা হাইকোর্টে আবেদন করেন। এ ছাড়া কোম্পানি আইনে একাধিক মামলা করে।
এ ছাঁটাইয়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেন ২৮ কর্মী। পরে আরও অনেকেই যুক্ত হন সেখানে। ছাঁটাইকে কেন্দ্র করে ড. ইউনূসকে তলবও করেছিল হাইকোর্ট। শেষপর্যন্ত গ্রামীণ টেলিকমের অবসায়ন চেয়ে ১৭৬ কর্মকর্তা-কর্মচারী কোম্পানি কোর্টে আবেদনও করেন।
সব শেষ দুইপক্ষই কোর্টের বাইরে সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হয়। আর প্রতিষ্ঠানটি ৪০০ কোটি টাকা দিতে রাজি হওয়ায় মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়।
বকেয়া পাওনা পরিশোধ না করায় ২০১৬ সালে প্রথম মামলা করেন গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক ১৪ কর্মী। পরে বকেয়া পাওনা চেয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ৯৩টি মামলা করেন তার প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি গ্রামীণ টেলিকমের কর্মীরা।
ঢাকার শ্রম আদালতে সব মিলে ১০৭টি মামলা করা হয় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ১৪ কর্মী আরও ১৪টি মামলা করেন পাওনা টাকার জন্য।
২০২০ সালে কোনো ধরনের পূর্ব নোটিশ না দিয়ে গ্রামীণ টেলিকম ৯৯ জনকে চাকরিচ্যুতি করে। এটি নিয়েও পরে আদালত পর্যন্ত গড়ান চাকরিচূত কর্মীরা।
আরও পড়ুন:ইসলামী ব্যাংক হজ ক্যাম্পে হজযাত্রীদের ব্যবহারের জন্য উপহারসামগ্রী প্রদান করেছে।
ব্যাংকের অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ওমর ফারুক খান সোমবার আশকোনাস্থ হজ অফিসে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব সাইফুল ইসলামের কাছে এসব সামগ্রী হস্তান্তর করেন বলে ব্যাংকটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
ব্যাংকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মাকসুদুর রহমান, এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মিজানুর রহমান ভুঁইয়া, ভাইস প্রেসিডেন্ট নজরুল ইসলাম এবং হাজি ক্যাম্প শাখার প্রধান সাইফুল ইসলামসহ অন্য কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অর্থনৈতিক অবরোধের মুখে পড়েছে রাশিয়া। এমন অবস্থায় বাংলাদেশের কাছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল বিক্রি করতে চায় দেশটি। তবে রাশিয়া থেকে তেল কেনা হবে কি না সে বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার।
ঢাকার বিদ্যুৎ ভবনে সোমবার একটি কর্মশালার উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘রাশিয়ার কাছ থেকে তেল বিক্রির প্রস্তাব এসেছে। বিশেষ করে ক্রুড অয়েলের কথা বলছে তারা। আমরা সেই প্রস্তাব বিবেচনা করে দেখছি।’
যুদ্ধ শুরুর আগে প্রতিদিন প্রায় ৫ মিলিয়ন ব্যারেল অপরিশোধিত তেল রপ্তানি করত রাশিয়া। এর অর্ধেকের বেশি যেত ইউরোপে। কিন্তু যুদ্ধ শুরু হলে অবরোধ আরোপের কারণে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করে ইউরোপ। রাশিয়ার জ্বালানি আমদানি বন্ধের কথা জানায় যুক্তরাষ্ট্রও।
অবশ্য সংকটকালে রাশিয়ার তেল কিনতে এগিয়ে আসে মিত্র দেশ ভারত। মূল্য ছাড়ের সুযোগে বাড়তি তেল কেনা শুরু করে দেশটি। এ তালিকায় আছে চীনের নামও। কিন্তু পণ্য কেনার পর দাম পরিশোধ নিয়েও আছে জটিলতা। সুইফটে নিষেধাজ্ঞার কারণে ডলারে দাম পরিশোধ সম্ভব না রাশিয়াকে। তাই রুবলে লেনদেনে আগ্রহী রাশিয়া।
তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দেশটি কী প্রস্তাব দিয়েছে, দাম কেমন হবে, মূল্য পরিশোধের ব্যবস্থাপনা কী হবে, তা নিয়ে অবশ্য বিস্তারিত কিছু জানাননি জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী।
জ্বালানির দাম নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে নসরুল হামিদ বলেন, ‘আমরা জ্বালানির দামটা স্থিতিশীল রাখতে চাই। বাড়াতেও চাই না, কমাতেও চাই না। দাম যতটুকু কমেছে, তাতে করে এখনই সমন্বয় করার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি।’
জ্বালানি খরচ কমাতে বিদ্যুৎচালিত গণপরিবহন চালু করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘এখন বৈদ্যুতিক থ্রি হুইলারগুলো চলছে। এগুলো জনগণকে খরচের ব্যাপারে স্বস্তি দিচ্ছে। ভবিষ্যতে বৈদ্যুতিক বাসসহ অন্যান্য গণপরিবহন চালানোর উদ্যোগ নিতে হবে।’
রেল মন্ত্রণালয় চাইলে বৈদ্যুতিক ট্রেনও চালু করতে পারে বলে জানান নসরুল হামিদ।
বিদ্যুৎকেন্দ্রেও তেলনির্ভরতা কমানোর কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আগামী বছর আমাদের বেশ কয়েকটি গ্যাসভিত্তিক ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হতে যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে আমরা বেশ কয়েকটি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখতে পারব। এতে খরচ সাশ্রয় হবে।’
জ্বালানি আমদানির সমস্যা কেটে গেছে বলেও জানান নসরুল হামিদ। তিনি বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী যেকোনো রাষ্ট্রীয় কেনাকাটায় বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার ছাড় দিতে বাধ্য। আমরা যে ব্যাংক থেকেই এলসি খুলতে চাই, বাংলাদেশ ব্যাংক সেই ব্যাংকের ডলারের জোগান দিতে বাধ্য। বিষয়টি নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য