নিজেদের দেশের বা নিজের কারখানার সমস্যা নিয়ে বিদেশিদের কাছে নালিশ দেয়ার প্রবণতায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ কারও কাছে হাত পেতে নয় বরং আত্মমর্যাদা নিয়ে চলবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নিজেদের সমস্যা নিজেরা সমাধান করতে পারি।’
শ্রমিকনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘বিদেশিদের কাছে গিয়ে কান্নাকাটি না করে আপনাদের যদি সমস্যা থাকে আমার কাছে আসবেন। আমি শুনব। মালিকদের দিয়ে যদি কিছু আদায় করতে হয়, তা আমি আদায় করে দেব। আমি পারব, এ কথা আমি বলতে পারি।’
শ্রমিক কল্যাণে গঠিত শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে অনেক মালিক নিয়মিত অর্থ জমা না দেয়াকেও ‘দুঃখজনক’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।
ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে রোববার সকালে ‘মহান মে দিবস ২০২২’ উদযাপনে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন সরকারপ্রধান। গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যে শ্রমিকদের জন্য এত কাজ করেছি, তারপরেও আমরা দেখি যে আমাদের দেশে কিছু কিছু শ্রমিকনেতা আছেন, তারা কোনো বিদেশি বা সাদা চামড়া দেখলেই তাদের কাছে নালিশ করতে খুব পছন্দ করেন। আমি জানি না এই মানসিক দৈন্যতাটা কেন?
‘এর সঙ্গে কি অন্য কোনো স্বার্থ জড়িত আছে? কোনো দেনাপাওনার ব্যবস্থা আছে? সেটা আমি জানি না।’
নিজেদের সমস্যা নিজেরা সমাধানের সুযোগ আছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে কোনো সমস্যা হলে অন্তত আওয়ামী লীগ সরকার যতক্ষণ ক্ষমতায় আছে, অন্তত আমি যতক্ষণ ক্ষমতায় আছি, এই নিশ্চয়তা দিতে পারি যেকোনো সমস্যা আমরা সমাধান করতে পারি নিজেরা।
‘আর এটা আমি বিশ্বাস করি, আমাদের দেশে মালিক এবং শ্রমিক তারা নিজেরা বসে আলোচনা করে সমস্যাগুলো সমাধান করবেন। আমরা নিজের দেশের বিরুদ্ধে বা নিজের দেশের সম্পর্কে অন্যের কাছে কেন কাঁদতে যাব, বলতে যাব। আমরা তো এটা চাই না।’
বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সমস্ত উন্নয়ন প্রকল্প, যে সমস্ত উন্নয়ন প্রকল্প একসময় সম্পূর্ণ বিদেশি অনুদানে বা বিদেশি সহযোগিতায় নির্ভরশীল ছিল আজকে আমাদের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির ৯০ ভাগ আমরা নিজেদের অর্থায়নে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হচ্ছে পদ্মা সেতু। নিজেদের অর্থায়নে সম্পূর্ণ বাংলাদেশ সরকারের টাকায় এই পদ্মা সেতু আমরা নির্মাণ করেছি।’
কল্যাণ ফাউন্ডেশনে অর্থ জমা না দেয়া দুঃখজনক
শ্রমিকের কল্যাণে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেখানে আমি বলব, মালিকদের যেটা এখানে নির্দিষ্ট রয়েছে যে, একটা পার্সেন্টেজ তারা এখানে জমা দেবেন। এটা অনেকে দেন না, এটা খুব দুঃখজনক।
‘আমি মনে করি এটা যথাযথভাবে দেয়া উচিত। কারণ একজন যখন কেউ বিপদে পড়ে, তার পাশে দাঁড়াতে হবে। যার শ্রমের ফসল ভোগ করবেন, অথচ তার দুর্দিনে পাশে থাকবেন না, এটা হতে পারে না। কাজেই সেই বিষয়টা সবাইকে দেখতে হবে।’
শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো, কর্মপরিবেশ উন্নত ও নিরাপদ করা, শ্রমিক কল্যাণে নানা উদ্যোগসহ সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। খেটে খাওয়া মানুষের জীবনমান উন্নয়নই আওয়ামী লীগের লক্ষ্য বলে জানান তিনি।
উন্নয়নে দরকার মালিক-শ্রমিক সৌহার্দ্য
‘শ্রমিক-মালিক একতা, উন্নয়নের নিশ্চয়তা’ প্রতিপাদ্য নিয়ে এবার পালিত হয়েছে মহান মে দিবস।
এ প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান বলেন, ‘শ্রমিক-মালিক উভয়ই সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলবেন, সেটাই আমি চাই। আপনারা যে প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়েছেন, সেটা আমি মনে করি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই এই প্রতিপাদ্যকে নিয়ে কিন্তু আপনারা এগিয়ে যেতে পারবেন, সেটাই আমি মনে করি। শ্রমিক-মালিক একতা, উন্নয়নের নিশ্চয়তা। কাজেই শ্রমিক-মালিকদের মধ্যে যদি সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক না থাকে তাহলে কখনই উন্নয়ন হয় না।’
সারা বিশ্বের ১০টি গ্রিন কারখানার মধ্যে সাতটি বাংলাদেশের জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশকে উন্নত করতে হলে আমি মনে করি শ্রমিকশ্রেণির অবদানটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’
মালিকের পুঁজি এবং শ্রমিকের শ্রমে কারখানা চালু থাকে এবং উৎপাদন বাড়ে, দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধশালী হয় বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘সে ক্ষেত্রে আমি বলব যে, কোনো একটি প্রতিষ্ঠান চালাতে গেলে সবার একটা দায়িত্ব থাকে। মালিকের যেমন দায়িত্ব থাকবে শ্রমিকের ওপর, শ্রমিকের দায়িত্ব থাকবে মালিকের ওপর।
‘যে কারখানা তাদের রুটি-রুজির ব্যবস্থা করে, খাদ্যের ব্যবস্থা করে, জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে, সেগুলো যেন ভালোভাবে সচল থাকে সেটা যেমন শ্রমিকের দেখার দায়িত্ব, আবার মালিকদেরও এটা দেখার দায়িত্ব, শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য মজুরি পাচ্ছেন কি না, তাদের জীবনমান উন্নত হচ্ছে কি না বা তারা ভালোভাবে কাজ করতে পারছেন কি না বা কাজের পরিবেশটা তারা পাচ্ছে কি না, সেটাও কিন্তু দেখতে হবে। তাহলে উৎপাদন বাড়বে, মালিক লাভবান হবেন, দেশও লাভবান হবে, শ্রমিকরাও লাভবান হবেন। এটা সব সময় সবার মনে রাখা উচিত বলে আমি মনে করি।’
পরিবেশ সুরক্ষিত রেখে দেশে শিল্পায়ন করা হচ্ছে বলে জানান সরকারপ্রধান। বলেন, ‘ভৌগোলিক সীমারেখায় বাংলাদেশটা ছোট। কিন্তু জনসংখ্যার দিক থেকে বড়। কাজেই সবার জন্য অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষাসহ সব ব্যবস্থাই আমাদের করতে হবে। সেটা আমরা করে যাচ্ছি।’
তিন বছরে দূর করা হবে শিশুশ্রম
২০২৫ সালের মধ্যে দেশে কোনো শিশুশ্রম থাকবে না বলে অঙ্গীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘এখানে একটু ব্যতিক্রম আছে। সেটা হচ্ছে, কিছু কিছু ট্র্যাডিশনাল কাজ থাকে সেগুলো যদি ছোটবেলা থেকে রপ্ত না করে, তাহলে তাদের পৈতৃক যে কাজগুলো, ব্যবসাগুলো সেগুলো চালু থাকবে না।’
তবে সেগুলো কোনো ঝুঁকিপূর্ণ কাজ নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে হাতে-কলমে কিছু শিক্ষা, কিন্তু সেটা কোনো ঝুঁকিপূর্ণ না। ঝুঁকিপূর্ণ কোনো কাজে কোনো শিশুকে ব্যবহার করা যাবে না। সেটা আমরা বন্ধ করেছি। কিন্তু তাদের ট্র্যাডিশনাল ট্রেনিং যেগুলো, সেগুলো তাদের বাবা-মার সঙ্গে বসে বসে তারা করতে পারে।’
উদাহরণ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী সামনে আনেন তাঁতে শাড়ি বোনার কথা। তিনি বলেন, ‘এই শাড়ি বুনন যদি ছোটবেলা থেকে না শেখে, বড় হলে কিন্তু পারবে না। কারণ, এসব সুতা কিন্তু একটা একটা করে গোনা যায় না। তারা কিন্তু আঙুলের অনুভূতি দিয়ে এই হিসাবটা নেয়। এ রকম ট্র্যাডিশনাল কাজগুলো তারা শিখুক, কিন্তু সেগুলো ঝুঁকিপূর্ণ না।’
নির্বিঘ্ন ঈদযাত্রায় সন্তুষ্টি
ঈদে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের বাড়িমুখো হওয়ার প্রসঙ্গটিও উঠে আসে সরকারপ্রধানের বক্তব্যে।
তিনি বলেন, ‘এবার নিরবচ্ছিন্নভাবে সবাই যার যার বাড়ি যেতে পেরেছেন এবং ফিরে আসতে পেরেছেন। আমরা যোগাযোগব্যবস্থায় সে রকমই উন্নতি করে দিয়েছি।
‘প্রত্যেকটা শ্রমিক মজুরিটা ঠিকমতো পেয়েছেন। যারা হয়তো দিতে পারেননি, কিছু দিয়েছেন, আগামীতে দেবেন।’
পোশাক খাতে নারী শ্রমিকের সংখ্যা বেশি হওয়ায় চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জে শ্রমজীবী নারী হোস্টেল নির্মাণ করা হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
বলেন, ‘আমরা আরেকটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমাদের উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত যত হাসপাতাল আছে, সেখানে যারা আমাদের ডাক্তাররা যোগ দেন, তাদের জন্য কিন্তু ডরমেটরি নির্মাণ করা হচ্ছে বা তাদের ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হচ্ছে। সেখানে যাতে ভালোভাবে থাকতে পারেন, সে ব্যবস্থাটাও আমরা নিচ্ছি।’
আর্থিক সহায়তা
মে দিবসের আয়োজনে ১০ শ্রমিক ও তাদের পরিবারকে দেয়া হয় আর্থিক সহায়তা। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সবার হাতে চেক তুলে দেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান।
জটিল কিডনি রোগের চিকিৎসায় শ্রমিক রমিজ উদ্দিন আহমেদকে দেয়া হয় ১ লাখ টাকার আর্থিক সহযোগিতা। দুই মৃত শ্রমিকের পরিবারকে দেয়া হয় দুই লাখ টাকা করে। দুই শ্রমিকের মেধাবী সন্তানদের শিক্ষাসহায়তা হিসেবে দেয়া হয় ৫০ হাজার টাকা করে। রপ্তানিমুখী শিল্পের মৃত ৫ শ্রমিকের পরিবারকে দেয়া হয় ২ লাখ টাকা করে।
আরও পড়ুন:৫৫তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বুধবার সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি সকাল ৬টা ১১ মিনিটে স্মৃতিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
ওই সময় তিনি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কয়েক মিনিট নীরবতা পালন করেন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর একটি চৌকস দল তাকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। ওই সময়ে বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়।
শ্রদ্ধা নিবেদনকালে প্রধান বিচারপতি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টারা, তিন বাহিনীর প্রধান, বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিদেশি কূটনীতিক এবং উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রধান উপদেষ্টা স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন।
পরে সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য জাতীয় স্মৃতিসৌধ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন:চলতি বছরের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে একটি স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন যমুনায় এ ডাকটিকিট অবমুক্ত করা হয়।
এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব ড. মুশফিকুর রহমান ও ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এসএম শাহাবুদ্দিন।
প্রধান উপদেষ্টার গণমাধ্যম শাখা থেকে এমন তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতীয় পর্যায়ে নিজ নিজ ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সাত বিশিষ্ট ব্যক্তির হাতে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৫’ তুলে দিয়েছেন।
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মঙ্গলবার সকালে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দেশের সর্বোচ্চ জাতীয় বেসামরিক এ পুরস্কার প্রদান করেন তিনি।
এবার স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম (মরণোত্তর), সাহিত্যে মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ (মরণোত্তর), সংস্কৃতিতে নভেরা আহমেদ (মরণোত্তর), সমাজসেবায় স্যার ফজলে হাসান আবেদ (মরণোত্তর), মুক্তিযুদ্ধ ও সংস্কৃতিতে মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান ওরফে আজম খান (মরণোত্তর), শিক্ষা ও গবেষণায় বদরুদ্দীন মোহাম্মদ উমর এবং প্রতিবাদী তারুণ্যে আবরার ফাহাদ (মরণোত্তর)।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আবদুর রশীদ পুরস্কার বিতরণ পর্বটি সঞ্চালনা করেন। তিনি পুরস্কার বিজয়ীদের সাইটেশন পাঠ করেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস মঙ্গলবার স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৫ তুলে দেবেন।
ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এ পুরস্কার দেওয়া হবে।
তথ্য অধিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে সাতজন বিশিষ্ট ব্যক্তি ২০২৫ সালের স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন।
গত ১১ মার্চ রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের তালিকার প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
যেসব ব্যক্তি এবার স্বাধীনতা পুরুস্কার পাচ্ছেন তারা হলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম (মরণোত্তর), সাহিত্যে মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ (মরণোত্তর), সংস্কৃতিতে নভেরা আহমেদ (মরণোত্তর), সমাজসেবায় স্যার ফজলে হাসান আবেদ (মরণোত্তর), মুক্তিযুদ্ধ ও সংস্কৃতিতে মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান ওরফে আজম খান (মরণোত্তর), শিক্ষা ও গবেষণায় বদরুদ্দীন মোহাম্মদ উমর এবং প্রতিবাদী তারুণ্যে আবরার ফাহাদ (মরণোত্তর)।
আরও পড়ুন:ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ৩ এপ্রিল নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. কামরুজ্জামান রবিবার যে প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেন, তাতে বলা হয়, ‘সরকার আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে ৩ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি ঘোষণা করল। ছুটিকালীন সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে।
‘তবে জরুরি পরিষেবা, যেমন: বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও অন্যান্য জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরসমূহের কার্যক্রম, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, ডাক সেবা এবং এ সংশ্লিষ্ট সেবা কাজে নিয়োজিত যানবাহন ও কর্মীগণ এই ছুটির আওতা বহির্ভূত থাকবে।’
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, ‘হাসপাতাল ও জরুরি সেবা এবং এ সেবার সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মীরা এই ছুটির আওতা-বহির্ভূত থাকবে। চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও কর্মীরা এবং ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জামাদি বহনকারী যানবাহন ও কর্মীগণ এই ছুটির আওতা বহির্ভূত থাকবে।
‘জরুরি কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত অফিসসমূহ এই ছুটির আওতা বহির্ভূত থাকবে। ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু রাখার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে। আদালতের কার্যক্রমের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবেন।’
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, নারীর ক্ষমতায়নে সবার আগে পরিবার থেকে নারীকে সাহস দিতে হবে। যেকোনো সংকটে নারীর পাশে ঢাল হয়ে থাকতে হবে।
তিনি বলেন, পরিবার পাশে না থাকলে রাষ্ট্রের পক্ষে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। পরিবার নারীকে সাহস দিলে রাষ্ট্রও নারীর পাশে থেকে সাহস জোগাতে পারে।
উপদেষ্টা বলেন, ‘নারীর প্রতিবন্ধকতা কখনও শেষ হয় না। সমাজে একটা গোষ্ঠী আছে, যারা নারীকে ক্ষমতায়িত করতে চায় না। দুর্বল নারীকে যত পছন্দ করে, সবলচিত্তের নারীকে তারা পছন্দ করে না। এটাই বাস্তবতা।’
আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে (৮ মার্চ) সামনে রেখে জাতীয় বার্তা সংস্থা বাসসকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাতকারে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এসব কথা বলেন।
এবারের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য ‘অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন: নারী ও কন্যার উন্নয়ন’।
উপদেষ্টা বলেন, ‘একজন নারীকে দক্ষ ও যোগ্য করে গড়ে তোলা হলে সে দেশের কাজে ভূমিকা রাখতে পারে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও পরিবারের পাশাপাশি সমাজেরও দায় রয়েছে। নারীর চলার পথ পুরুষের পাশাপাশি নির্বিঘ্ন ও নির্ভরতার হতে হবে।’
তিনি বলেন, “নারী এখন যে অবস্থানে রয়েছে, সে অবস্থানে থেকে নারী বলে বিতর্কিত নয়, কাজে সে বিতর্কিত হোক, অদক্ষ বলে বিতর্কিত হোক, শুধু নারী বলেই ভূল, নারী বলেই অদক্ষ, এ কথাটা বলা যাবে না। আমি বলব ‘স্কাই ইজ দ্য লিমিট।
“তাই তার চিন্তার গন্ডিটাকে তার পারিপার্শ্বিকতার নেতিবাচক মনোভাবে আটকে না রেখে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে তাদের পাশে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। অভিভাবককে বুঝতে হবে, ছেলে ও মেয়ে দুজনই পরিবারের সম্পদ। পরিবারের উচিত নারীকে ক্ষমতায়িত করা।”
আরও পড়ুন:চলতি বছর ব্যতিক্রমী কিছু মানুষ ও প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
এ বছর কারা ও কতজন এ পুরস্কার পাচ্ছেন, তা জানাননি উপদেষ্টা।
সচিবালয়ে রবিবার স্বাধীনতা পুরস্কার সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক শেষে তিনি উল্লিখিত বক্তব্য দেন।
উপদেষ্টা বলেন, কমিটি কিছু নাম সুপারিশ করেছে। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য নামের তালিকা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পাঠানো হবে।
দেশের জন্য অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ বছর ব্যতিক্রমী কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
ওই সময়ে উপস্থিত আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, এর আগে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়ার ক্ষেত্রে দলগত ও গোষ্ঠীগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো। র্যাবের মতো বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানকেও দেশের সর্বোচ্চ এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল।
এ বছর ১০ জনের কম ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য