সেতুর টোল চেয়ে গাড়ি থামানোয় আদায়কারীদের ওপর ‘হামলা’র বিষয়টি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি না করার পরামর্শ দিয়েছেন পটুয়াখালীর সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী কানিজ সুলতানার ছেলে।
তিনি জানান, সবাইকে নিয়ে ‘বিষয়টা’ ক্লোজ করা হবে।
বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের পায়রা সেতুর (লেবুখালী) টোলপ্লাজায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় টোল আদায়কারী এবং এমপির ছেলে ও তার বন্ধুদের মধ্যে হাতাহাতি ও মারামারিতে অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে তিনজন চিকিৎসা নিয়েছেন হাসপাতালে।
একই দিন রাতে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের আত্মীয় পরিচয়ে বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করার অপরাধে তিন যাত্রীকে জরিমানা করে বরখাস্ত হয়েছেন এক টিটিই। মন্ত্রী অবশ্য সংবাদমাধ্যমের কাছে দাবি করেছেন, ট্রেনের ওই তিন যাত্রীর সঙ্গে তার আত্মীয়তার কোনো সম্পর্ক নেই। তবে নিউজবাংলার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আলোচিত তিন যাত্রীই রেলমন্ত্রীর দূর সম্পর্কের আত্মীয়।
এসব ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ও সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলনের প্রতিনিধিরা। তারা বলছেন, সবখানেই একটা গা জোয়ারি মনোভাব। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা, কোনো জবাবদিহিতা না থাকায় তারা (মন্ত্রী-এমপি ও তাদের স্বজনরা) কোনো আইনের তোয়াক্কা করছেন না।
কী ঘটেছিল টোলপ্লাজায়
পায়রা সেতুর টোলপ্লাজায় দায়িত্বরত ম্যানেজার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি কাজী কানিজ সুলতানা হেলেনকে বহনকারী সংসদ সদস্যের স্টিকারযুক্ত গাড়িটিসহ তাদের বহরে থাকা পাঁচটি গাড়ি এবং অনেকগুলো মোটরসাইকেল বৃহস্পতিবার সকালে আমরা টোল আদায় না করেই ছেড়ে দিই। তারা তখন পটুয়াখালী থেকে বরিশালের দিকে যাচ্ছিলেন। বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে সন্ধ্যায় এমপির বড় ছেলে মাহিন হোসেন তালুকদার জয় নববধূকে নিয়ে বরিশাল থেকে পটুয়াখালীর দিকে ফিরছিলেন। এ সময় পায়রা সেতু হয়ে টোল পরিশোধ না করে যেতে চাইলে তারা বাধার মুখে পড়েন।
‘এ সময় আমার স্টাফরা গাড়ির টোল চাইলে ওই গাড়ির লোকজন বলেন, আমাদের গাড়ির ভাড়া পেছনের গাড়ির লোকজন দেবেন। এ সময় স্টাফরা পেছনের চারটি গাড়িতে ভাড়া চান। তবে কেউই ভাড়া না দেয়ায় কাউন্টারের দিকে তারা ফিরে আসেন। তখন এমপির ছোট ছেলে তাজ হোসেন তালুকদার তার মায়ের বরাত দিয়ে টোল পরিশোধে আপত্তি জানান। একপর্যায়ে প্লাজার লোকজনের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন এমপির ছেলে ও তার বন্ধুরা।
‘এমপির ছেলের বন্ধু আশিকুর রহমান আশিক আচমকা টোলপ্লাজার সুপারভাইজার মো. রাসেলের ওপর হামলা চালিয়ে তাকে জখম করেন। পরে কাউন্টারের ভেতর থেকে অন্য স্টাফরা তাকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে এমপির ছেলে তাজসহ তার বন্ধুরা মিলে তাদেরও মারধর শুরু করেন। এই ফাঁকে টোল না দিয়েই নববধূকে বহনকারী সাদা রঙের কারটি সামনে চলে যায়। পরে টোলপ্লাজার সব স্টাফ একত্রিত হলে এমপির ছেলের বন্ধুদের সঙ্গে তাদের হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনা ঘটে। এ সময় উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হন।’
টোলপ্লাজার ম্যানেজার বলেন, ‘এরপর পটুয়াখালী থেকে একদল লোক এসে আবারও হামলা চালায় আমাদের স্টাফদের ওপর। তখন কাউন্টারের বাইরে পুলিশও দাঁড়ানো ছিল। তবে লোকজন বেশি হওয়ায় পুলিশ প্রথমে কিছু করতে পারেনি। কিছুক্ষণ পর অতিরিক্ত পুলিশ এসে তাদের সরিয়ে দেয় এবং টোল পরিশোধ না করেই পাঁচটি গাড়িসহ অনেকগুলো মোটরসাইকেল সেতু পার হয়ে চলে যায়।
যা বলছেন এমপি ও তার ছেলে
নারী এমপির ছোট ছেলে তাজ হোসেন তালুকদার বলেন, ‘বড় ভাইয়া যখন আম্মুর পরিচয় দিছে (দিয়েছে) তখন ওনারা (টোল আদায়কারীরা) খুব বাজে কথা বলছে। যেগুলো ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। স্বাভাবিক কারণেই পাশের সিটে নববধূ মানে আমার ভাবি বসা থাকায় ভাইয়ার খুব মাইন্ডে বাজছে। যে কারণে ভাইয়া গাড়ি থেকে নেমে তাদের প্রশ্ন করছে যে, তোমরা এ রকম ভাষা ব্যবহার কেন করছ। ব্যস আর কিছু না।
‘ভাইয়া যখন গাড়ি থেকে বের হয়েছে সেটা দেখে আমি আর আমার বন্ধুরা গিয়ে ওদের একই প্রশ্ন করি। তখন ওদের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়েছে। এর মধ্যে ওরা আমার বন্ধু আশিকের ওপর হামলা করে আহত করলে পুলিশ গিয়ে সবাইকে সরিয়ে দেয়।’
এমপিপুত্র তাজ বলেন, ‘আগামীকাল ভাইয়ার বৌভাত অনুষ্ঠান শেষে আমরা সবাই বসে এ বিষয়টা নিয়ে ক্লোজ করতে চাই। এটা নিয়ে আর আপনারা ঘাঁটাঘাঁটি কইরেন না।’
তবে হামলা ও মারামারির পুরো বিষয়টি অস্বীকার করেছেন নারী এমপি কাজী কানিজ সুলতানা হেলেন। তিনি বলেন, ‘আমার গাড়ি ঘটনাস্থলে ১০ মিনিট পরে পৌঁছায়। আমি ঘটনার সময় যেহেতু ছিলাম না, সেহেতু আমার ধারণা টোল পরিশোধের কোনো বিষয় না। আসল ঘটনা হলো যারা টোল আদায় করে তারা সন্ত্রাসীপ্রকৃতির, ডাকাতপ্রকৃতির, তাদের ভাব দেখলেই সেটা বোঝা যায়। তারা আমার নববধূর স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছিল। তার (নববধূর) হাত ক্ষতবিক্ষত হয়েছে।
টোলপ্লাজায় আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে লোক রাখার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এভাবে লোকজন রাখা হয়েছে সেটা ঠিক না। কিছুদিন আগে ওরা ছাত্রলীগের এক নেতাকেও মারধর করেছে। ওদের আমার মনে হয় সরিয়ে দেয়া উচিত, কারণ ওদের ব্যবহার একদমই ভালো না। স্থানীয়রা ওদের ব্যপারে অনেক ক্ষুব্ধ।’
তার ছেলে ও নববধূর ওপর হামলার ঘটনাকে পরিকল্পিত দাবি করে তিনি বলেন, ‘ঘটনার সময় প্রায় দুই থেকে আড়াই মিনিট বিদ্যুৎ ছিল না। ঠিক তখনই ওরা আমার ছেলের বউয়ের স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছিল। তখন আমার ছেলে ও তার বন্ধুরা সেটিকে প্রতিহত করেছে। মূলত ওরা পরিকল্পিতভাবেই এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে। আমার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য। বিষয়টি সবার ভাবা উচিত।’
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে টোলপ্লাজার ম্যানেজার আসাদুজ্জামান বলেন, ‘মাত্র ২০ থেকে ৩০ সেকেন্ডের জন্য বিদ্যুৎবিহীন ছিল এটি সত্যি। তবে ততক্ষণে আমাদের জেনারেটর চালু হয়ে গেছে। ওই সময় সিসিটিভির ভিডিওটা একটু অন্ধকার আসছে। আর যখন নববধূর গাড়িটি টোলপ্লাজা অতিক্রম করে, তখনই দেখতে পারবেন এমপির ছেলেসহ তার বন্ধুরা মিলে আমাদের স্টাফদের কীভাবে মারধর করেছে।
এমপির বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘একজন মাননীয় সংসদ সদস্যের বেলায় এসব ঘটনায় আরও সতর্কভাবে কথা বলা উচিত বলে আমি মনে করি। কারণ বললে অনেক কিছুই বলা যায়, কিন্তু প্রমাণ কী করবেন? যেখানে প্রায় ১৭টি সিসিটিভি ক্যামেরা চলমান। সেখানে এ রকম উল্টাপাল্টা কথা বলে নিজেকে ছোট করার শামিল।
তিনি বলেন, ‘ছেলের জন্য এত বড় বিয়ের আয়োজন করতে পারলেন অথচ টোলপ্লাজার টোল দিতে পারেন না? এই টোল তো কারও পকেটে যাবে না, এটি তো রাষ্ট্রীয় কোষাগারে যাবে।’
পটুয়াখালী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘পায়রা সেতু এলাকা দুমকী থানার আওতায়। তাই বিষয়টা দুমকীর পুলিশ দেখবে। আমরা খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে চলে আসি।’
দুমকী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুস সালাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঘটনার পর সেখান থেকে দুই ব্যক্তিকে এনে পুলিশ হেফাজতে রেখে পরদিন দুপুরে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তার পরও পুরো বিষয়টি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি।’
এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সবখানেই একটা গা জোয়ারি মনোভাব দেখছি। শক্তিমান-ক্ষমতাবানদের জন্যই সবকিছু।
‘মন্ত্রী-এমপির আত্মীয়রা অনৈতিক-বেআইনি সুবিধা পেতে পেতে এমন অবস্থা হয়েছে যে এখন বিনা টিকিটে ট্রেনে চড়া, টোল না দিয়েই সেতু পার হওয়াকে তারা তাদের অধিকার মনে করেন। কেউ এতে বাধা দিলেই তার ওপর খড়গহস্ত হন। এমনকি রাষ্ট্রযন্ত্রকে তারা তাদের এই অপকর্মে ব্যবহার করছেন।’
সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন সিলেটের সমন্বয়ক আব্দুল করিম কিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা, কোনো জবাবদিহিতা না থাকায় তারা আর কোনো আইনের তোয়াক্কা করছেন না।
তিনি বলেন, ‘ক্ষমতাসীনরা বেআইনি কাজ আগেও করছেন। কিন্তু ধরা পড়ে গেলে তারা তা লুকানোর চেষ্টা করতেন না। লজ্জিত হতেন। কিন্তু এখন আমরা কী দেখছি, টিকিট ছাড়া মন্ত্রীর এক আত্মীয়কে ধরার কারণে রেলের এক কর্মকর্তাকেই শাস্তি দেয়া হয়েছে। দেশের আইনকানুনকে এভাবে প্রকাশ্যে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর ঘটনা এ দেশে খুব কমই ঘটেছে।’
আরও পড়ুন:ফেনীতে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। এর সঙ্গে দেখা দিয়েছে নতুন এক আতঙ্ক। বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেতে মানুষের বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছিল নানা প্রজাতির সাপ। এখন ঘরে ফিরলেও সাপ আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে। এরই মধ্যে পরশুরামে বিষধর সাপের কামড়ে রোকেয়া আক্তার রিনা (৫০) নামে এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকাল ৫টার দিকে ফেনীর পরশুরামের পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত রিনা পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম শহীদের স্ত্রী। তার এক ছেলে দুই মেয়ে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বন্যার পানি শুকিয়ে গেলে রান্না করার জন্য রান্নাঘরে গেলে সেখানে একটি অজ্ঞাত বিষধর সাপ রিনাকে কামড় দেয়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এরপর ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের স্বামী শফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে রিনা রান্না ঘরে যায়। এ সময় রান্নাঘরের একটি গর্ত থেকে বিষধর একটি সাপ বের হয়ে তার পায়ে কামড় দেয়। তার চিৎকার শুনে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্স নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার কোনো চিকিৎসা না হওয়ায় ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার রেদোয়ান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, হাসপাতালে আনার আগেই ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছিল।
টানা ৩ দিনের বৃষ্টিতে বেনাপোল বন্দর এলাকায় জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বন্দর অভ্যন্তরের অনেক স্থানে হাটু পানি জমায় মারাত্বক ভাবে ব্যহত হচ্ছে পণ্য খালাস প্রক্রিয়া। যানবাহন ও নিরাপত্তাকর্মীদের চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ায় বন্দরের ৯.১২.১৫.১৬ ও ১৮ নম্বর সেড থেকে লোড আনলোড বন্ধ হয়ে আছে।
ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই বন্দরে হাটু পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে থাকে। কয়েক বছর ধরে এ দূর্ভোগ হলেও নজর নাই বন্দর কর্তৃপক্ষের। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, রেলকর্তৃপক্ষ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় পানি নিষ্কাসনে বাধা গ্রুস্থ্য হচ্ছে।
তবে এসব শেড ও ওপেন ইয়ার্ড অধিকাংশই দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে তৈরী হয়নি। বন্দর সড়কের উচ্চতার চেয়ে পণ্যগারগুলো নিচু হওয়ায় একটু বৃষ্টিপাত বেশি হলে পানি নিষ্কাষনের অভাবে পণ্যগার ও ইয়াডে জলবদ্ধতা তৈরী হয়। এতে পানিতে ভিজে যেমন পণ্যের গুনগত মান নষ্ট হয় তেমনি চলাচলের বিঘ্ন ঘটছে। তবে আজ সকাল থেকে সেচ যন্ত্র চালিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বেনাপোল বন্দর পরিচালক শামিম হোসেন জানান, বন্দরের জলবদ্ধতা প্রতি বছরে তৈরী হয়। বিশেষ করে রেল বিভাগ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় সমস্যার সন্মুখিন হতে হচ্ছে। বন্দরের পানি নিষ্কাসন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়েছে। তবে দ্রুত এ অবস্থা কাটিয়ে তুলতে পাশ্ববর্তী হাওড়ের সাথে বন্দরের ড্রেন তৈরীর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রেরক: রাশেদুর রহমান রাশু, বেনাপোল যশোর ।
কক্সবাজারের চকরিয়ায় গত রোববার (৬ জুলাই) মালুমঘাট বাজার থেকে পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে এক যুবক পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়া সে যুবক সাজ্জাদ হোসেন (২০) কে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ কলাতলীর একটি আবাসিক হোটেল থেকে আটক করে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দিবাগত রাত তিনটায় কক্সবাজারের একটি আবাসিক হোটেল (ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্ট) অভিযান পরিচালনা করে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ। রাত প্রায় তিনটায় নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ওই হোটেলের একটি কক্ষ থেকে তাকে আটক করা হয়।
চকরিয়া থানা পুলিশের বিশেষ নজরদারি ও কক্সবাজারের গোয়েন্দা পুলিশের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে আসামি সাজ্জাদ হোসেন কে আটক করতে সক্ষম হয় কক্সবাজার ডিবি পুলিশ।
এবিষয়ে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, পলাতক আসামি সাজ্জাদ কে কক্সবাজার ডিবি পুলিশ আটক করেছে। প্রাথমিকভাবে সদর মডেল থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর চকরিয়া থানায় নিয়ে আসা হবে। তার বিরুদ্ধে একটি পুলিশ এসল্ট মামলা করা হয়েছে।
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে করতোয়া নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে যৌথবাহিনীর অভিযানে একজনকে দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাত ৯টার দিকে শালডাঙ্গা ইউনিয়নের ধুলাঝাড়ি বাজারের করতোয়া নদীসংলগ্ন এলাকায় অভিযানটি চালানো হয়।
দেবীগঞ্জ সেনা ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার মেজর জুবায়ের হোসেন সিয়ামের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ও দেবীগঞ্জ থানা পুলিশের সমন্বয়ে এ অভিযান পরিচালিত হয়।
অভিযানে বালু উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত দুইটি ট্রাক্টরসহ চালক রাজু ইসলাম ও শান্ত আহমেদকে আটক করা হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসান ঘটনাস্থলে এসে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।
আদালতের রায়ে রাজু ইসলামকে বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনের ধারা লঙ্ঘন করায় দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়, অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন বিচারক। তবে রাজু ইসলাম অর্থদণ্ডের অর্থ পরিশোধ করায় ট্রাক্টর দুটি ছেড়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় প্রশাসন জানায়, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন রোধে যৌথবাহিনীর অভিযান চলমান থাকবে।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় মাত্র এক মাসের ব্যবধানে একই ক্লিনিকে সিজারিয়ান ডেলিভারির সময় দুই প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ সোমবার (৭ জুলাই) রাতে মুন্নি খাতুন (২৫) নামে এক অন্তঃসত্ত্বা নারী সিজারিয়ান অপারেশনের সময় মারা যান। এর আগে ৮ জুন ওই ক্লিনিকেই আখি খাতুন (২২) নামের আরেক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। পরপর এমন দু’টি মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ক্লিনিক মালিকের ছেলে মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি হওয়ায় প্রভাব খাটিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেস্টা করছে বলে জানাগেছে।
সোমবার রাতে মুন্নির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ক্লিনিক মালিক আবুল হোসেনের ব্রাকপাড়া এলাকার বাড়িতে হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ। পরে তারা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
নিহত মুন্নি খাতুন উপজেলার তারাগুনিয়া ব্রাকপাড়া এলাকার মঞ্জু হোসেনের মেয়ে। আর নিহত আখি খাতুন পূর্ব কবিরাজপাড়া গ্রামের ইমনের স্ত্রী।
মুন্নির পরিবারের সদস্যরা জানান, গর্ভাবস্থায় জটিলতা দেখা দিলে সোমবার তাকে উপজেলার বিভিন্ন ক্লিনিকে নেওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা ঝুঁকির কথা বলে কুষ্টিয়া বা রাজশাহীতে রেফার করার পরামর্শ দেন। সন্ধ্যায় তাকে তারাগুনিয়া থানার মোড় বাজারের আবুল হোসেনের মালিকানাধীন তারাগুনিয়া ক্লিনিক নামের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নেওয়া হলে কর্তৃপক্ষ সিজারিয়ানে সম্মত হয়। কিন্তু রাত ৯টার দিকে অপারেশনের সময়ই মুন্নির মৃত্যু হয়।
এ বিষয়ে তারাগুনিয়া ক্লিনিকের মালিক আবুল হোসেন বলেন, “রোগী কীভাবে মারা গেছে সেটা ডাক্তাররাই ভালো বলতে পারবেন। আমি নিজে অপারেশনে ছিলাম না, তাই কিছু জানি না। টাকা দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।”
অপারেশনকারী চিকিৎসক ডা. সফর আলী বলেন, “রোগীকে ওটিতে আনার আগে অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক ওষুধ প্রয়োগ করেন। আমরা ওটিতে ঢুকেই দেখি রোগী স্ট্রোক করেছে। এরপর দ্রুত নবজাতকের প্রাণ রক্ষায় সিজারিয়ান সম্পন্ন করি।”
এ বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌহিদুল হাসান তুহিন বলেন, “একই প্রতিষ্ঠানে পরপর দুই প্রসূতির মৃত্যু অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছি। আজই ক্লিনিকটি পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা বলেন, “গতকাল রাতে তারাগুনিয়া এলাকার একটি ক্লিনিকে প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় ক্লিনিক এলাকায় উত্তেজনা ও হট্টগোলের আশঙ্কায় আমি তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ পাঠাই। পরে জানতে পারি, নিহত নারীর এলাকা থেকে কিছু লোকজন ক্লিনিক মালিকের বাড়িতে হামলা চালায়। আমরা দ্রুত সেখানে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। শুনেছি দুই পক্ষ নিজেদের মধ্যে বিষয়টি সমাধান করে নিয়েছে।”
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল হাই সিদ্দিকী বলেন, এক মাসের মধ্যে দুইজন রোগীর মৃত্যু অত্যান্ত দুঃখজনক। ঘটনায় কর্তৃপক্ষকে বলবো তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।
একই ক্লিনিকে এক মাসের ব্যবধানে দুই প্রসূতির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এলাকায় চরম ক্ষোভ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ ঘটনায় স্থানীয়রা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে দ্রুত তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি'র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ভোলা-২ (বোরহানউদ্দিন-দৌলতখানের) সাবেক সংসদ সদস্য মো: হাফিজ ইব্রাহিমের নামে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে সেলিম নামে এক ব্যক্তির দেওয়া অভিযোগটি মিথ্যা, বানোয়াট ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করা হয়েছে।
রোববার বিকেলে বোরহানউদ্দিন উপজেলার বড়মানিকায় শহীদ জিয়া স্মৃতি সংসদের আয়োজনে বৃক্ষরোপন কর্মসূচিতে গণমাধ্যমকর্মীদের দেয়া স্বাক্ষাতকারে এ দাবি করেন হাফিজ ইব্রাহিম।
এর আগে দৈনিক ইত্তেফাক, সমকাল, যায়যায়দিন সহ বেশ কয়েকটি পত্রিকার ডিজিটাল প্লাট ফরমে একটি সংবাদে দেখা যায়, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে হাফিজ ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক জমি দখলের অভিযোগ তুলে সেলিম নামে এক ব্যক্তি অভিযোগ করছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গণমাধ্যমকর্মীদের হাফিজ ইব্রাহিম বলেন, সংবাদটি ডিজিটাল প্লাট ফরমে প্রকাশ হওয়ার পর আমার নজরে আসে। আমি মনোযোগ দিয়ে তার অভিযোগ শুনি। যে ব্যক্তি আমার নামে জমি দখলের অভিযোগ তুলেছেন। তিনি আমার নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দা না। আমি খবর নিয়ে জেনেছি, তিনি ভোলা-১ সদর আসনের বাসিন্দা ভোলা সদর আসনের সাবেক এমপি ও মন্ত্রী মরহুম মোশারেফ হোসেন শাহজাহানের বাড়ির পাশে তার বাড়ি। আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারি সেলিম নামে ওই ব্যক্তির সাথে তার আপন ভাতিজি জামাইয়ের দীর্ঘদিন ধরে জমি-জমা নিয়ে বিরোধ রয়েছে তার ভাতিজি জামাই তাকে হুমকি ধামকি দিয়ে থাকতে পারে এ বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই। এমনকি ওই বিষয়ে ভোলা সদর থানায় মামলা রয়েছে।
হাফিজ ইব্রাহিম আরও বলেন, আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি মহল আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। পতিত সরকারের পলাতক একটি কুচক্রী মহল বিএনপির নামে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে ও দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন আপনারা এই ঘটনার পেছনে যে আসল সত্য রয়েছে তা উদঘাটন করুন।
জুলাই-আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজশাহী মহানগরীর একটি থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র, ম্যাগাজিন ও গুলি উদ্ধার করেছে র্যাব-৫।
রোববার রাত সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর টিকাপাড়া এলাকার একটি বালুর স্তূপের আনুমানিক ২ ফুট গভীর থেকে এগুলো উদ্ধার করা হয়।
সোমবার সকালে র্যাব-৫ এর মিডিয়া সেল থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
অভিযানে একটি ৭.৬২ মি.মি. বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন এবং এক রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাব জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৫; সিপিএসসি’র একটি আভিযানিক দল জানতে পারে, ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন লুট হওয়া অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, ম্যাগাজিন ও গুলি দুষ্কৃতকারীরা বোয়ালিয়া থানাধীন টিকাপাড়া এলাকায় লুকিয়ে রেখেছে। পরে নিরপেক্ষ সাক্ষীদের উপস্থিতিতে অভিযান চালিয়ে বালুর স্তূপের ভেতর থেকে বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন ও গুলি উদ্ধার করে র্যাবের গোয়েন্দা দল।
এ বিষয়ে বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাসস’কে জানান, এটি পুলিশের ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র। তবে কোন থানার অস্ত্র সেটি নিশ্চিত করা যায়নি। কারণ পিস্তলের গায়ে বাট নম্বর ঘষা-মাজার চিহ্ন স্পষ্ট। উদ্ধারকৃত বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন ও গুলি বোয়ালিয়া থানায় জিডির পর হস্তান্তর করা হয়েছে।
মন্তব্য