সেতুর টোল চেয়ে গাড়ি থামানোয় আদায়কারীদের ওপর ‘হামলা’র বিষয়টি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি না করার পরামর্শ দিয়েছেন পটুয়াখালীর সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী কানিজ সুলতানার ছেলে।
তিনি জানান, সবাইকে নিয়ে ‘বিষয়টা’ ক্লোজ করা হবে।
বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের পায়রা সেতুর (লেবুখালী) টোলপ্লাজায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় টোল আদায়কারী এবং এমপির ছেলে ও তার বন্ধুদের মধ্যে হাতাহাতি ও মারামারিতে অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে তিনজন চিকিৎসা নিয়েছেন হাসপাতালে।
একই দিন রাতে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের আত্মীয় পরিচয়ে বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করার অপরাধে তিন যাত্রীকে জরিমানা করে বরখাস্ত হয়েছেন এক টিটিই। মন্ত্রী অবশ্য সংবাদমাধ্যমের কাছে দাবি করেছেন, ট্রেনের ওই তিন যাত্রীর সঙ্গে তার আত্মীয়তার কোনো সম্পর্ক নেই। তবে নিউজবাংলার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আলোচিত তিন যাত্রীই রেলমন্ত্রীর দূর সম্পর্কের আত্মীয়।
এসব ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ও সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলনের প্রতিনিধিরা। তারা বলছেন, সবখানেই একটা গা জোয়ারি মনোভাব। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা, কোনো জবাবদিহিতা না থাকায় তারা (মন্ত্রী-এমপি ও তাদের স্বজনরা) কোনো আইনের তোয়াক্কা করছেন না।
কী ঘটেছিল টোলপ্লাজায়
পায়রা সেতুর টোলপ্লাজায় দায়িত্বরত ম্যানেজার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি কাজী কানিজ সুলতানা হেলেনকে বহনকারী সংসদ সদস্যের স্টিকারযুক্ত গাড়িটিসহ তাদের বহরে থাকা পাঁচটি গাড়ি এবং অনেকগুলো মোটরসাইকেল বৃহস্পতিবার সকালে আমরা টোল আদায় না করেই ছেড়ে দিই। তারা তখন পটুয়াখালী থেকে বরিশালের দিকে যাচ্ছিলেন। বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে সন্ধ্যায় এমপির বড় ছেলে মাহিন হোসেন তালুকদার জয় নববধূকে নিয়ে বরিশাল থেকে পটুয়াখালীর দিকে ফিরছিলেন। এ সময় পায়রা সেতু হয়ে টোল পরিশোধ না করে যেতে চাইলে তারা বাধার মুখে পড়েন।
‘এ সময় আমার স্টাফরা গাড়ির টোল চাইলে ওই গাড়ির লোকজন বলেন, আমাদের গাড়ির ভাড়া পেছনের গাড়ির লোকজন দেবেন। এ সময় স্টাফরা পেছনের চারটি গাড়িতে ভাড়া চান। তবে কেউই ভাড়া না দেয়ায় কাউন্টারের দিকে তারা ফিরে আসেন। তখন এমপির ছোট ছেলে তাজ হোসেন তালুকদার তার মায়ের বরাত দিয়ে টোল পরিশোধে আপত্তি জানান। একপর্যায়ে প্লাজার লোকজনের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন এমপির ছেলে ও তার বন্ধুরা।
‘এমপির ছেলের বন্ধু আশিকুর রহমান আশিক আচমকা টোলপ্লাজার সুপারভাইজার মো. রাসেলের ওপর হামলা চালিয়ে তাকে জখম করেন। পরে কাউন্টারের ভেতর থেকে অন্য স্টাফরা তাকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে এমপির ছেলে তাজসহ তার বন্ধুরা মিলে তাদেরও মারধর শুরু করেন। এই ফাঁকে টোল না দিয়েই নববধূকে বহনকারী সাদা রঙের কারটি সামনে চলে যায়। পরে টোলপ্লাজার সব স্টাফ একত্রিত হলে এমপির ছেলের বন্ধুদের সঙ্গে তাদের হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনা ঘটে। এ সময় উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হন।’
টোলপ্লাজার ম্যানেজার বলেন, ‘এরপর পটুয়াখালী থেকে একদল লোক এসে আবারও হামলা চালায় আমাদের স্টাফদের ওপর। তখন কাউন্টারের বাইরে পুলিশও দাঁড়ানো ছিল। তবে লোকজন বেশি হওয়ায় পুলিশ প্রথমে কিছু করতে পারেনি। কিছুক্ষণ পর অতিরিক্ত পুলিশ এসে তাদের সরিয়ে দেয় এবং টোল পরিশোধ না করেই পাঁচটি গাড়িসহ অনেকগুলো মোটরসাইকেল সেতু পার হয়ে চলে যায়।
যা বলছেন এমপি ও তার ছেলে
নারী এমপির ছোট ছেলে তাজ হোসেন তালুকদার বলেন, ‘বড় ভাইয়া যখন আম্মুর পরিচয় দিছে (দিয়েছে) তখন ওনারা (টোল আদায়কারীরা) খুব বাজে কথা বলছে। যেগুলো ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। স্বাভাবিক কারণেই পাশের সিটে নববধূ মানে আমার ভাবি বসা থাকায় ভাইয়ার খুব মাইন্ডে বাজছে। যে কারণে ভাইয়া গাড়ি থেকে নেমে তাদের প্রশ্ন করছে যে, তোমরা এ রকম ভাষা ব্যবহার কেন করছ। ব্যস আর কিছু না।
‘ভাইয়া যখন গাড়ি থেকে বের হয়েছে সেটা দেখে আমি আর আমার বন্ধুরা গিয়ে ওদের একই প্রশ্ন করি। তখন ওদের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়েছে। এর মধ্যে ওরা আমার বন্ধু আশিকের ওপর হামলা করে আহত করলে পুলিশ গিয়ে সবাইকে সরিয়ে দেয়।’
এমপিপুত্র তাজ বলেন, ‘আগামীকাল ভাইয়ার বৌভাত অনুষ্ঠান শেষে আমরা সবাই বসে এ বিষয়টা নিয়ে ক্লোজ করতে চাই। এটা নিয়ে আর আপনারা ঘাঁটাঘাঁটি কইরেন না।’
তবে হামলা ও মারামারির পুরো বিষয়টি অস্বীকার করেছেন নারী এমপি কাজী কানিজ সুলতানা হেলেন। তিনি বলেন, ‘আমার গাড়ি ঘটনাস্থলে ১০ মিনিট পরে পৌঁছায়। আমি ঘটনার সময় যেহেতু ছিলাম না, সেহেতু আমার ধারণা টোল পরিশোধের কোনো বিষয় না। আসল ঘটনা হলো যারা টোল আদায় করে তারা সন্ত্রাসীপ্রকৃতির, ডাকাতপ্রকৃতির, তাদের ভাব দেখলেই সেটা বোঝা যায়। তারা আমার নববধূর স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছিল। তার (নববধূর) হাত ক্ষতবিক্ষত হয়েছে।
টোলপ্লাজায় আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে লোক রাখার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এভাবে লোকজন রাখা হয়েছে সেটা ঠিক না। কিছুদিন আগে ওরা ছাত্রলীগের এক নেতাকেও মারধর করেছে। ওদের আমার মনে হয় সরিয়ে দেয়া উচিত, কারণ ওদের ব্যবহার একদমই ভালো না। স্থানীয়রা ওদের ব্যপারে অনেক ক্ষুব্ধ।’
তার ছেলে ও নববধূর ওপর হামলার ঘটনাকে পরিকল্পিত দাবি করে তিনি বলেন, ‘ঘটনার সময় প্রায় দুই থেকে আড়াই মিনিট বিদ্যুৎ ছিল না। ঠিক তখনই ওরা আমার ছেলের বউয়ের স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছিল। তখন আমার ছেলে ও তার বন্ধুরা সেটিকে প্রতিহত করেছে। মূলত ওরা পরিকল্পিতভাবেই এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে। আমার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য। বিষয়টি সবার ভাবা উচিত।’
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে টোলপ্লাজার ম্যানেজার আসাদুজ্জামান বলেন, ‘মাত্র ২০ থেকে ৩০ সেকেন্ডের জন্য বিদ্যুৎবিহীন ছিল এটি সত্যি। তবে ততক্ষণে আমাদের জেনারেটর চালু হয়ে গেছে। ওই সময় সিসিটিভির ভিডিওটা একটু অন্ধকার আসছে। আর যখন নববধূর গাড়িটি টোলপ্লাজা অতিক্রম করে, তখনই দেখতে পারবেন এমপির ছেলেসহ তার বন্ধুরা মিলে আমাদের স্টাফদের কীভাবে মারধর করেছে।
এমপির বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘একজন মাননীয় সংসদ সদস্যের বেলায় এসব ঘটনায় আরও সতর্কভাবে কথা বলা উচিত বলে আমি মনে করি। কারণ বললে অনেক কিছুই বলা যায়, কিন্তু প্রমাণ কী করবেন? যেখানে প্রায় ১৭টি সিসিটিভি ক্যামেরা চলমান। সেখানে এ রকম উল্টাপাল্টা কথা বলে নিজেকে ছোট করার শামিল।
তিনি বলেন, ‘ছেলের জন্য এত বড় বিয়ের আয়োজন করতে পারলেন অথচ টোলপ্লাজার টোল দিতে পারেন না? এই টোল তো কারও পকেটে যাবে না, এটি তো রাষ্ট্রীয় কোষাগারে যাবে।’
পটুয়াখালী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘পায়রা সেতু এলাকা দুমকী থানার আওতায়। তাই বিষয়টা দুমকীর পুলিশ দেখবে। আমরা খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে চলে আসি।’
দুমকী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুস সালাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঘটনার পর সেখান থেকে দুই ব্যক্তিকে এনে পুলিশ হেফাজতে রেখে পরদিন দুপুরে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তার পরও পুরো বিষয়টি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি।’
এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সবখানেই একটা গা জোয়ারি মনোভাব দেখছি। শক্তিমান-ক্ষমতাবানদের জন্যই সবকিছু।
‘মন্ত্রী-এমপির আত্মীয়রা অনৈতিক-বেআইনি সুবিধা পেতে পেতে এমন অবস্থা হয়েছে যে এখন বিনা টিকিটে ট্রেনে চড়া, টোল না দিয়েই সেতু পার হওয়াকে তারা তাদের অধিকার মনে করেন। কেউ এতে বাধা দিলেই তার ওপর খড়গহস্ত হন। এমনকি রাষ্ট্রযন্ত্রকে তারা তাদের এই অপকর্মে ব্যবহার করছেন।’
সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন সিলেটের সমন্বয়ক আব্দুল করিম কিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা, কোনো জবাবদিহিতা না থাকায় তারা আর কোনো আইনের তোয়াক্কা করছেন না।
তিনি বলেন, ‘ক্ষমতাসীনরা বেআইনি কাজ আগেও করছেন। কিন্তু ধরা পড়ে গেলে তারা তা লুকানোর চেষ্টা করতেন না। লজ্জিত হতেন। কিন্তু এখন আমরা কী দেখছি, টিকিট ছাড়া মন্ত্রীর এক আত্মীয়কে ধরার কারণে রেলের এক কর্মকর্তাকেই শাস্তি দেয়া হয়েছে। দেশের আইনকানুনকে এভাবে প্রকাশ্যে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর ঘটনা এ দেশে খুব কমই ঘটেছে।’
আরও পড়ুন:নড়াইল পৌরসভার মেয়র আঞ্জুমান আরার করা চাঁদাবাজির মামলায় পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে উচ্ছ্বাস আলম ও ফাইনুল ইসলাম শাওন নামে ছাত্রলীগের দুজন সাবেক নেতাকে।
নড়াইলের পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সিলেট থেকে বুধবার দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম।’
স্থানীয়রা জানান, নড়াইল পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি উচ্ছ্বাস আলম। তার বাড়ি নড়াইল পৌর শহরের ভওয়াখালী গ্রামে। আরেক নেতা ফাইনুল ইসলাম শাওনের বাড়িও একই এলাকায়। তারা বর্তমানে ছাত্রলীগের কোনো কমিটিতে আছেন কি না, তা জানা যায়নি।
একটি চাঁদাবাজির মামলার আসামি হিসেবে তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। মামলাটির বাদী নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও পৌর মেয়র আঞ্জুমান আরা।
মামলাসূত্রে জানা গেছে, নড়াইল শহরের পুরাতন বাস টার্মিনালে পৌরসভার অস্থায়ী কার্যালয়। সেখানে গত ২৬ এপ্রিল হাট-বাজার, টার্মিনাল ইজারা বিষয়ে সভা চলছিল। বেলা দেড়টার দিকে সেখানে উপস্থিত হন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নিলয় রায় বাঁধনসহ ৮-১০ জন। তারা মেয়রের কার্যালয়ে ঢুকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন।
একপর্যায়ে তারা ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির পাশাপাশি মেয়রকে হত্যার হুমকি দেন।
চাঁদা দাবির এ ঘটনায় মামলার পাশাপাশি পৌর পরিষদ জরুরি সভা করে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানায়।
পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তার করছে না বলে অভিযোগ তুলে পৌর পরিষদের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেয়া হয়। আসামি গ্রেপ্তারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা হয়।
অন্যদিকে মেয়র আঞ্জুমান আরাকে দুর্নীতিগ্রস্ত দাবি করে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল বের করেন স্থানীয় ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগের একাংশ। তারা মেয়রের অপসারণ দাবি করেন।
উত্তপ্ত এ রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে পুলিশ বুধবার রাতে সিলেট থেকে দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে।
পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় বলেন, ‘পৌর মেয়রের করা চাঁদাবাজির মামলায় এজাহারনামীয় দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।’
নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শওকত কবীর জানান, আসামিরা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা। তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, হুমকিসহ বিভিন্ন অভিযোগ আছে।
আরও পড়ুন:কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ছয়জন নির্বাচন করছেন। তাদের মধ্যে সাবেক বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কু হলফনামায় উল্লেখ করেছেন তার নগদ টাকা রয়েছে কোটি টাকার বেশি।
আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত জানিয়েছেন, তার নগদ টাকা নেই।
কী আছে সাক্কুর হলফনামায়
তার শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি। নিজের ও স্ত্রীর মিলে দুটি গাড়ি রয়েছে। তার পেশা ঠিকাদারি।
তবে মেয়র থাকাকালীন তিনি ঠিকাদারি কাজ করেননি। নগদ টাকা আছে ১ কোটি ৩৭ লাখ ৫৯ হাজার ৮৯২ টাকা। ব্যাংকে আছে ২ লক্ষ ৯৪ হাজার টাকা। স্বর্ণ আছে নিজের ১০ তোলা, স্ত্রীর ১০ তোলা। দুদক ও আয়কর বিভাগের দুই মামলা বিচারাধীন।
কী আছে রিফাতের হলফনামায়
তার শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ। তার দুটি গাড়ি রয়েছে। পেশা ঠিকাদারি। নগদ টাকা নেই। ব্যাংকে আছে ৬১ লাখ ২ হাজার ৪৯৫ টাকা। পোস্টাল সেভিংসে আছে ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৪৫৪ টাকা।
স্বর্ণ নিজের ২০ ভরি, স্ত্রীর রয়েছে ৩০ ভরি। কোনো মামলা চলমান নেই।
আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী মাসুদ পারভেজ খান ইমরান উল্লেখ করেন, তার শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএসএস। নিজের ও স্ত্রীর মোট দুটি গাড়ি রয়েছে। তার পেশা ঠিকাদারি।
নগদ টাকা আছে ২ লাখ ৪২ হাজার ৭৪২ টাকা। ব্যাংকে আছে ৩ লাখ ১৭ হাজার ২৮৮ টাকা। স্বর্ণ নিজের ২৫ তোলা, স্ত্রীর রয়েছে ৫০ তোলা। তার নামে ফৌজদারি দুটি মামলা বিচারাধীন।
স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা কায়সার উল্লেখ করেন, তার শিক্ষাগত যোগ্যতা বিকম। তার গাড়ি নেই। পেশা ব্যবসা। নগদ টাকা আছে ৩৮ লাখ ৭২ হাজার ৯৩৫ টাকা। ব্যাংকে আছে ৩ লাখ ২ হাজার ৪৯৭ টাকা। স্বর্ণ নিজের ২০ তোলা, স্ত্রীর আছে ২০ ভরি। তার আটটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান বাবুল উল্লেখ করেন, তার শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি। তার গাড়ি নেই। পেশা ব্যবসা। নগদ টাকা আছে ৩ লাখ ২০ হাজার, পাশে লেখা ব্যবসার পুঁজি। ব্যাংকে আছে ৫ হাজার টাকা। স্বর্ণ বিয়ের উপহার ৩০ ভরি। তার দুটি মামলা বিচারাধীন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী রাশেদুল ইসলাম উল্লেখ করেন, তার শিক্ষাগত যোগ্যতা কামিল। যা এমএ সমমান। গাড়ি নেই। পেশায় কলেজশিক্ষক।
তার নগদ টাকা আছে ৫০ হাজার। ব্যাংকে আছে ২ লাখ ৪২৮ টাকা। স্ত্রীর স্বর্ণ আছে দুই ভরি। তার নামে মামলা নেই।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহার শেষ তারিখ ২৬ মে। ২৭ মে প্রতীক বরাদ্দ। ১৫ জুন নির্বাচন হবে।
সিলেট নগরীর চালিবন্দর এলাকার কুন্তি দাসের ঘর চার দিন ধরে পানিতে তলিয়ে আছে। ঘরে-বাইরে চারদিক থইথই পানিতে। তবু খাওয়ার জন্য নেই এক ফোঁটাও। নেই বিদ্যুৎও।
১৫ মিনিট হেঁটে গিয়ে একটি কারখানা থেকে প্রতিদিন খাওয়ার পানি নিয়ে আসেন তিনি।
কুন্তি বলেন, ‘পানির কারণে না হয় বিছানার ওপরে উঠে বসে থাকা যায়। কষ্ট করে রান্নাবান্নাও করা যায়। কিন্তু পানি ছাড়া তো থাকা যায় না। চার দিন ধরে পানি পাচ্ছি না। টয়লেটও পানিতে তলিয়ে গেছে। সেটিও ব্যবহার করা যাচ্ছে না।’
তিনি জানান, যে কারখানা থেকে পানি আনা হয়, সেখানে গিয়ে টয়লেট ব্যবহার করতে হচ্ছে ঘরের সবাইকে।
সিলেটের বন্যাকবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট ও স্যানিটেশন সমস্যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিদ্যুৎহীনতা। সব মিলিয়ে বন্যাকবলিতদের দুর্ভোগ এখন চরমে। জেলার অর্ধেক এলাকাই এখন বিদ্যুৎহীন।
কুন্তির প্রতিবেশী দীপক রবি দাস বলেন, ‘আমাদের এলাকায় সিটি করপোরেশন থেকে পানি সরবরাহ করা হয়। কিন্তু বন্যায় সিটি করপোরেশনের পানির লাইন তলিয়ে গেছে। এখন পাইপ দিয়ে ময়লা পানি আসে। আর তাতে খুব দুর্গন্ধ। খাওয়া তো দূরের কথা, হাতেই নেয়া যায় না।’
চালিবন্দরের পাশের উপশহরেও মিটার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় চার দিন ধরে বন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ।
উপশহরের বি-ব্লকের নাজাত আহমদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পাঁচ দিন ধরে ঘরে পানি। ঘর থেকে বের হওয়ারও উপায় নেই। চার দিন ধরে বিদ্যুৎ নেই। খাওয়ার পানি নেই। টয়লেটের ব্যবস্থাও নেই। সব মিলিয়ে দুর্বিষহ দিন কাটছে আমাদের।’
এসব সমস্যার কথা জানিয়ে সি-ব্লকের আব্দুল আহাদ বলেন, ‘লজ্জায় আশ্রয়কেন্দ্রেও যেতে পারছি না। বাচ্চারা সেখানে থাকতেও পারবে না। আবার ঘরেও থাকতে পারছি না। বন্যায় আমাদের সংকট বলে বোঝানো যাবে না।’
কোমর পানি নগরীর তালতলা এলাকাতেও। সেখানে বাড়ি বেসরকারি চাকরিজীবী মিলন তালুকদারের।
তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের পানি বন্ধ। ফিল্টারে করে পানি বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানগুলোও এদিকে আসছে না বন্যার কারণে। তাই বোতলজাত পানি কিনে পান করতে হচ্ছে। আমরা সামান্য আয়ের মানুষ। এভাবে কতদিন চলতে পারব। চাকরির কারণে গ্রামের বাড়িও যেতে পারছি না।’
নগরের ঝালোপাড়া এলাকায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিলেট সিটি করপোরেশনের সরবরাহ করা পানি সংগ্রহ করতে আসেন শাহেদ আহমদ।
তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের গাড়ি দিনে একবার আসে। এই পানিতে এলাকার অর্ধেক মানুষের এক বেলার চাহিদাও মেটে না।
‘আগে পাশের সুরমা নদীতে আমরা গোসল করতে পারতাম। কিন্তু এখন নদীর পানি এত ময়লা হয়েছে যে তাতে গোসল করারও উপায় নেই।’
নগরীর সোবহানীঘাট এলাকার উত্তরা সেন পম্পা বলেন, ‘নোংরা পানিতে পায়ে ঘা হয়ে গেছে। আজ বাধ্য হয়ে বাচ্চাকে নিয়ে আরেকটি পরিবারের ঘরে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছি। কিন্তু এখানেও খাওয়ার পানি নেই।’
ঘর ছেড়ে পরিবার নিয়ে নগরের একটি হোটেলে গিয়ে উঠেছেন শেখঘাট এলাকার কামরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘পানির সঙ্গে ড্রেনের ময়লা-আবর্জনাও ঘরে ঢুকছে। এর মধ্যে থাকতে থাকতে আমার পরিবারের সবাই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া বাসায় খাওয়ার পানি ও স্যানিটেশনের সমস্যা। তাই একটি হোটেলে উঠেছি।’
সিলেট সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আব্দুল আলিম শাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে প্লাবিত এলাকায় বুধবার থেকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। কারণ সরবরাহের পাইপে কোনো ছিদ্র থাকলে তাতে বন্যার পানি মিশে রোগবালাই দেখা দিতে পারে।’
তবে এসব এলাকায় ভ্রাম্যমাণ গাড়ির মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে জানিয়ে আলিম বলেন, ‘যেসব এলাকা প্লাবিত হয়নি, সেসব এলাকায় পানি সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে।’
নগরের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে দুর্ভোগ আরও বেশি।
জেলা প্রশাসনের হিসাবে ১০৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫৫টি সম্পূর্ণ ও ১৫টি ইউনিয়ন আংশিকভাবে প্লাবিত হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি আছে ১৫ লাখ মানুষ।
জকিগঞ্জ উপজেলার বীরশ্রী ইউনিয়নের সুপ্রাকান্দি গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বন্যায় এলাকার বেশির ভাগ টিউবওয়েল ডুবে গেছে। খাওয়ার পানি পাওয়া যাচ্ছে না। দূর-দূরান্ত থেকে পানি নিয়ে আসতে হচ্ছে। ঘরে পানি উঠে যাওয়ায় রান্নাবান্নাও করা যাচ্ছে না।’
‘ঘরে অনেকগুলো গরু আছে। নিজেরা তবু কোনো রকমে খেতে পারছি। কিন্তু মাঠ তলিয়ে যাওয়ায় গোখাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।’
নগরের দক্ষিণ সুরমার গোটাটিকর এলাকা প্লাবিত না হলেও বরইকান্দি এলাকায় বিদ্যুতের সাবস্টেশন তলিয়ে যাওয়ায় তিন দিন ধরে বিদ্যুৎ নেই কোথাও।
গোটাটিকর এলাকার সিরাজ উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের এলাকায় বন্যা আসেনি এখনও। তবে আমরাও দুর্ভোগ থেকে রেহাই পাচ্ছি না। তিন দিন ধরে বিদ্যুৎ নেই। এতে পানির সংকটও দেখা দিয়েছে।’
তবে বিশুদ্ধ পানির সংকটের তথ্য নেই জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলামের কাছে।
তিনি বলেন, ‘বিশুদ্ধ পানি সংকটের তেমন কোনো তথ্য আমরা পাইনি। পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
তিনি অবশ্য বলেছেন, সিলেট জেলায় ১৩ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী আবদুল কাদির জানিয়েছেন, দুটি উপকেন্দ্রে বন্যার পানি ঢুকেছে। সেখানে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে একটি উপকেন্দ্র সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা হয়েছে। আর শাহজালাল উপশহর এলাকায় জলাবদ্ধতা বেশি থাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
সিলেটের সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান জানিয়েছেন, আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় যারা অবস্থান করছেন, তাদের খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সিটি মেয়র জানিয়েছেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা ও বন্যার্তদের সেবায় করপোরেশনের সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
১৩ দিনের ব্যক্তিগত সফর শেষে বৃহস্পতিবার সিলেটে ফিরে নগরের একাধিক প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন শেষে মেয়র বলেন, ‘সিলেট মহানগরের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। নগরের নিম্নাঞ্চলের পানিবন্দি মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। খাওয়ার পানির সংকট, স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে।
‘দ্রুত সময়ের মধ্যে প্লাবিত এলাকার পানিবন্দি মানুষের দোরগোড়ায় জরুরি স্বাস্থ্যসেবা পাঠানো হয়েছে। খাওয়ার পানির সংকট নিরসনে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। আরও আশ্রয়কেন্দ্র বাড়ানো হবে।’
আরও পড়ুন:কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে মেয়র পদে ৬ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।
কাগজপত্রে অসংগতি থাকায় ৯ জন সাধারণ কাউন্সিলর ও একজন সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীর মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
কুমিল্লা শিল্পকলা একাডেমিতে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে বৃহস্পতিবার বিকেলে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহেদুন্নবী এ ঘোষণা দেন।
মেয়র পদে মনোনয়নপত্রে বৈধতা পেয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত, স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু (বিএনপি), মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন কায়সার (বিএনপি), কামরুল আহসান বাবুল ও মাসুদ পারভেজ খান ইমরান এবং ইসলামী আন্দোলনের রাশেদুল ইসলাম।
নির্বাচন কমিশন থেকে জানা যায়, ১৭ মে মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিনে ১৬৪ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন। এর মধ্যে ৬ মেয়র প্রার্থী, ১২০ সাধারণ কাউন্সিলর এবং ৩৮ সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী।
মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করা প্রার্থীরা হলেন ২ নম্বর ওয়ার্ডের বিল্লাল হোসেন, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কবির আহমেদ, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মো. এরশাদ হোসেন, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের আবুল কালাম আজাদ, ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের সৈয়দ রুমন আহমেদ, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের জুয়েল, ২১ নম্বর ওয়ার্ডের মো. মিন্টু, জামাল হোসেন কাজল ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের আবুল কালাম আজাদ।
সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ফারজানা আক্তারের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহেদুন্নবী জানান, মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করা প্রার্থীরা ২০ থেকে ২২ মের মধ্যে আপিল করতে পারবেন।
আরও পড়ুন:কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে মাদ্রাসাছাত্রকে বলাৎকারের মামলায় শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
দৌলতপুর উপজেলার দাঁড়েরপাড়া কওমী এতিমখানা ও মাদ্রাসা থেকে বৃহস্পতিবার সকালে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
দৌলতপুর থানার ওসি জাবীদ হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আসামির নাম রবিউল ইসলাম। তার বাড়ি রাজশাহী জেলায়। তিনি ওই মাদ্রাসার আবাসিক শিক্ষক।
ওসি জাবীদ হাসান বলেন, ‘বুধবার মধ্যরাতে মাদ্রাসাটির চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রের বাবা বলাৎকারের মামলা করেন। এরপর বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে মাদ্রাসা থেকে শিক্ষক রবিউলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে দৌলতপুর আমলী আদালতে পাঠানো হয়েছে।’
মামলার বরাতে ওসি জানান, রবিউল ছেলেটিকে কয়েকবার বলাৎকার করেছেন। সবশেষ গত ৯ এপ্রিল এ ঘটনা ঘটে।। এরপর ছেলেটি ভয়ে মাদ্রাসায় যেতে চাইতো না। গত বুধবার সে বলাৎকারের কথা বাবাকে জানায়। এরপরই মামলা করেন তার বাবা।
আরও পড়ুন:‘আমার বাজানটা আমার লগে ক্ষেতও গেছিল, বৃষ্টি আইয়া আমার ধান-বাদাম সব নিছে, এখন আমার জানের টুকরাটারে নিসে গি আল্লায়, আমি এখন বাঁচতাম কিলা।’
১২ বছরের মেয়ে রিপা বেগমকে বজ্রপাতে হারিয়ে বিলাপ করছেন বাবা ফজর রহমান। একই অবস্থা অন্য দুই পরিবারেও।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বাদাঘাট ইউনিয়নের সুন্দরপুর পাহাড়ি গ্রামে বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বজ্রপাতে একসঙ্গে তিন শিশুর মৃত্যু হয়।
হঠাৎ আসা ঝড় থেকে রক্ষা পেতে শিশুরা কুঁড়েঘরে আশ্রয় নিয়েছিল, রেহাই মেলেনি। এ সময় আহত হন আরও আটজন। গোটা এলাকা শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে।
সুন্দরপুর পাহাড়ি গ্রামের বাসিন্দা মল্লিক চান বলেন, ‘এ এলাকার মানুষ বাদাম চাষের সঙ্গে ধানও রোপণ করেন। ছেলেমেয়েরা এই উঠানেই খেলাধুলা করত, এখন চারদিকে কান্নার আওয়াজ।
‘আমরা এই শোক কাটিয়ে উঠতে পারব কি না জানি না, তবে এটাই বলতে পারব পেটের দায়ে বেরিয়ে বজ্রপাতে সন্তানদের হারিয়েছেন তাদের বাবা-মা।’
আরেক প্রতিবেশী সত্তার মিয়া বলেন, ‘যখন বৃষ্টি আসে ছেলেমেয়েরা দৌড় দিয়া কুঁড়েঘরও আশ্রয় নিসিল। বজ্রপাতটা ওই জায়গাই হয়। তারারে যখন তুলার লাগি গেছি, গিয়া দেখি তিনটা বাচ্চা পড়িয়া রইছে। এইসব দেখিয়া কিতা কইতাম, আল্লাহ তারারে এই কষ্ট সহ্য করার তৌফিক দিতা।’
তিন শিশুর দাফনের জন্য ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ৫ হাজার টাকা করে দিয়েছেন বাদাঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘খবর পাওয়ামাত্র ছুটে এসেছি। এ এলাকার মাটি বাদাম চাষের জন্য খুব ভালো। শিশুরাও বাবা-মাকে কৃষিকাজে সহযোগিতা করে আসছিল। সকালে বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তিন শিশু মারা যায়।’
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রায়হান কবির নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন শিশুর পরিবারকে সহযোগিতা করা হবে। প্রশাসন এই পরিবাগুলোর পাশে রয়েছে।’
আরও পড়ুন:গোপালগঞ্জ ও মুকসুদপুর পৌরসভায় এক মেয়র প্রার্থীসহ ছয়জন কাউন্সিলর প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফায়জুল মোল্যা বৃহস্পতিবার বিকেলে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জেলা নির্বাচন অফিস জানিয়েছে, মুকসুদপুর পৌরসভা নির্বাচনে এক মেয়র প্রার্থীসহ পাঁচ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। এ ছাড়া অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় গোপালগঞ্জ সদর পৌরসভায় এক কাউন্সিলর প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফায়জুল মোল্যা বলেন, ‘মুকসুদপুর পৌরসভায় মেয়র পদে ৬, কাউন্সিলর পদে ৩৪ ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১০ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন।
‘মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী আসাদুল ইসলাম, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থী তহমিনা বেগম, কাউন্সিলর পদে ২ নম্বর ওয়ার্ডে শরিফুল ইসলাম, ৩ নম্বর ওয়ার্ডে ভল্লব কুণ্ডু ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডে মিজান মোল্লার মনোনয়ন বাতিল হয়। ফলে মুকসুদপুর পৌরসভায় মেয়র পদে পাঁচজন, কাউন্সিলর পদে ৩১ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৯ জন প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ বলে ঘোষণা দেয়া হয়।‘
ফায়জুল মোল্যা আরও বলেন, ‘গোপালগঞ্জ সদর পৌরসভা নির্বাচনে অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী সবুজ খানের মনোনয়ন বাতিল হয়। ফলে এ পৌরসভায় মেয়র পদে ১১, কাউন্সিলর পদে ৬৭ ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ২১ জন প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ বলে ঘোষণা করা হয়।’
আগামী ১৫ জুন গোপালগঞ্জ সদর ও মুকসুদপুর পৌরসভার নির্বাচন হবে।
মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ২৬ মে এবং প্রতীক বরাদ্দ ২৭ মে। আর ভোটগ্রহণ হবে ১৫ জুন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য