রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের আত্মীয় পরিচয়ে বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করার অপরাধে ৩ যাত্রীকে জরিমানা করেছিলেন ট্রাভেলিং টিকিট এক্সামিনার (টিটিই)। বৃহস্পতিবার রাতের এ ঘটনার পর ওই টিটিই-কে বরখাস্ত করা হয়েছে। সাময়িক বরখাস্ত আদেশে তার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ আনা হয়েছে বলে রেল সূত্রে জানা গেছে।
পশ্চিমাঞ্চলীয় বিভাগীয় রেল দপ্তর জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে ঈশ্বরদী থেকে আন্তঃনগর সুন্দরবন এক্সপ্রেসের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কেবিনে ওঠেন তিন যাত্রী। চেকিং-এর সময় কর্তব্যরত টিটিই শফিকুল ইসলাম তাদের টিকিট দেখতে চাইলে টিকিট নেই জানিয়ে তারা নিজেদের রেলমন্ত্রীর আত্মীয় বলে পরিচয় দেন।
এ অবস্থায় বিষয়টি পাকশী বিভাগীয় রেলের সহকারী বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (এসিও) মো. নুরুল আলমের সঙ্গে কথা বলে রেলমন্ত্রীর আত্মীয়দের সর্বনিম্ন ভাড়া দিয়ে টিকিট কাটার পরামর্শ দেন টিটিই। তিনি ওই তিন যাত্রীকে এসি টিকিটের পরিবর্তে মোট ১ হাজার ৫০ টাকা নিয়ে জরিমানাসহ সুলভ শ্রেণির নন এসি কোচে সাধারণ আসনের টিকিট করে দেন। এ সময় ট্রেনে কর্তব্যরত অ্যাটেনডেন্টসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রেল কর্মকর্তা জানান, ওই তিন যাত্রী তাৎক্ষণিকভাবে লিখিত কোনও অভিযোগ না দিলেও তারা ঢাকায় পৌঁছে রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে টিটিই শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অসদাচরণের মিথ্যা অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগ পেয়ে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিন সংশ্লিষ্ট টিটিইকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দেন। এ নিয়ে রেল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।
বরখাস্ত আদেশের বিষয়টি ঈশ্বরদীর টিটিই হেডকোয়ার্টারের ভারপ্রাপ্ত সিনিয়র টিটিই মো. বরকতুল্লাহ আলামিন ফোনে শুক্রবার শফিকুল ইসলামকে জানান। সে সময় তিনি সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে ডিউটিতে ছিলেন।
পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ পাইনি। তবে সুন্দরবন ট্রেনে বিনা টিকিটে ভ্রমণকারী তিন যাত্রীর সঙ্গে কর্তব্যরত টিটিই অসদাচরণ করেছেন বলে তারা রেলওয়ের মহাপরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ফোনে অভিযোগ দেন। বিষয়টি আমাকেও অবহিত করা হলে অভিযোগের ভিত্তিতে টিটিই শফিকুল ইসলামকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্তের আদেশ শুক্রবার থেকে কার্যকর হয়েছে।’
কোনো তদন্ত ছাড়াই একতরফাভাবে কেন বরখাস্তের আদেশ দেয়া হলো- এ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
আরও পড়ুন:ঠাকুরগাঁও শহরের আশ্রমপাড়ার একটি নির্মাণাধীন ভবন থেকে ২৭টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ।
মঙ্গরবার বিকেল ৩টার দিকে সেগুলো উদ্ধার করা হয় বলে ঘটনাস্থল থেকে জানান জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন।
তিনি নিউজবাংলাকে জানান, ভবনের নির্মাণকাজের সময় শ্রমিকরা মাটি খুঁড়লে অস্ত্র দেখতে পান। তারাই পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ গিয়ে ২৭টি আগ্নেয়াস্ত্র পায়। আরও অস্ত্র আছে কি না তা বের করতে পুলিশ কাজ করছে।
এসপি বলেন, ‘ভবনের মালিককে খবর দেয়া হয়েছে। তিনি পঞ্চগড়ে থাকায় আসতে দেরি হচ্ছে। আমরা তার জন্য অপেক্ষা করছি।
‘অস্ত্রগুলো পরিত্যক্ত। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের সময় সেগুলো ব্যবহার করা হয়েছিল।’
শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বহু বছর পুরোনো ভবন ভেঙে সেখানে নতুন ভবনের নির্মাণ করা হচ্ছে। নাজির হাওলাদার নামে এক বীর মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি ছিল সেটি। তার উত্তরসূরিরাই পুরোনো ভবনটি ভেঙে নতুন করে বাড়ি বানাচ্ছে।
আরও পড়ুন:সিলেট সদরে ঝড়ের কবলে পড়ে বিলে ডু্বে যাওয়া নৌকার আরেক আরোহীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
জালালাবাদ থানার লালপুর গ্রামের লোকজন মঙ্গলবার বিকাল ৩টার দিকে মরদেহ দেখে জানালে পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করে।
মৃত ব্যক্তির নাম রেজাখ আলী, তার বাড়ি সিলেট সদর উপজেলার রায়েরগাঁও গ্রামে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা খান।
এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় নৌকা ডুবে নিখোঁজ আছকন্দর আলীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আছকন্দরের বাড়ি একই উপজেলার পুটামারা গ্রামে।
জালালাবাদ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ওবায়দুল্লাহ ইসহাকের বরাত দিয়ে ওসি জানান, বন্যায় সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় রোববার রাতে নৌকায় করে খারইল বিলের ওপর দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন আছকন্দর, রেজাখসহ কয়েকজন। ঝড়ের কবলে পড়ে বিলের মাঝামাঝি জায়গায় নৌকাটি ডুবে যায়। অন্যরা সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও নিখোঁজ হন ওই দুজন।
আরও পড়ুন:মানিকগঞ্জের ঘিওরে প্রাইভেটকার চালক জাহাঙ্গীর আলম হত্যা মামলায় দুইজনের মৃত্যুদণ্ড এবং চারজনের যাবজ্জীবন দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে প্রত্যেক আসামিকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।
মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক উৎপল ভট্টাচার্য্য এ রায় ঘোষণা করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত আইনজীবী রঞ্জন বসাক নিউজবাংলাকে রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহত জাহাঙ্গীর আলম ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার ঘোষেবের এলাকার মুকলেসুর রহমানের ছেলে।
মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামিরা হলেন, ওমর হোসেন সাইফুল, আরিফুজ্জামান সজীব; যাবজ্জীবন পেয়েছেন আব্দুল্লাহ আল মামুন, ফরহাদ হোসেন, মোহাম্মদ আলী সীমান্ত ও আজিম খান। এর মধ্যে সাইফুল, সজীব, সীমান্ত পলাতক। আসামিদের সবার বাড়ি টাঙ্গাইলের নাগরপুরে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০১১ সালের ২৮ জানুয়ারি মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার কুসন্ডা এলাকায় চালক জাহাঙ্গীর আলমকে শ্বাসরোধে হত্যা করে প্রাইভেটকার নিয়ে পালিয়ে যান আসামিরা। পরে মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এদিন রাতেই ঘিওর থানার এসআই লুৎফর রহমান অজ্ঞাত পরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেন। গ্রেপ্তার করা হয় ছয় আসামিকে। ২০১২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি আসামিদের অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযগপত্র দেয়া হয়।
১৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক এ রায় দেন।
রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত আইনজীবী রঞ্জন বসাক রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেও আসামি পক্ষের আইনজীবী বুলবুল আহমেদ গোলাপ ও আহসান হাবীব উচ্চ আদালতে আপিলের কথা জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন:নাটোরের লালপুরে চালককে শ্বাসরোধে হত্যার পর ইজিবাইক ছিনতাইয়ের ঘটনায় করা মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তারা হলেন, লালপুরের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের সজিব হোসেন, রবিউল ইসলাম, সদর উপজেলার কাফুরিয়া এলাকার মেহেদী হাসান ও দস্তানাবাদ গ্রামের সাগর আলী।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে শহরের বড় হরিশপুর এলাকার পুলিশ লাইনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানানো হয়।
পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা জানান, শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে বড়াইগ্রামের মহিষভাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা খোরশেদ আলম মিলন ইজিবাইক নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। সেদিন রাতে মিলন বাড়ি না ফেরায় ও তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ থাকায় স্বজনরা তাকে অনেক খোঁজাখুঁজি করে।
পরে মিলনের পরিবার বিষয়টি বড়াইগ্রাম থানার পুলিশকে অবহিত করে। পর দিন সন্ধ্যায় পাশের লালপুর উপজেলার ঘাটচিলান এলাকায় সড়কের পাশে আখের ক্ষেত থেকে মিলনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশ সুপার আরও জানান, এ ঘটনায় পরদিন নিহতের বাবা ফখরুল ইসলাম লালপুর থানায় হত্যা মামলা করেন। এরপর ঘটনার অনুসন্ধানে নামে জেলা পুলিশের ৬টি টিম।
পরে পুলিশ তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় সোমবার রাতভর অভিযান চালিয়ে সজিব, মেহেদী, রবিউল ও সাগরকে গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা মিলনকে হত্যার কথা স্বীকার করে। তারা জানান, ১৪ মে শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে বনপাড়া বাজার থেকে লালপুরের ঘাটচিলানে যাওয়ার কথা বলে তারা মিলনের নতুন ইজিবাইকটি ২৫০ টাকায় ভাড়া করে।
ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে কৌশলে ইজিবাইকটি ভাড়া করেন সজিব, মেহেদী, রবিউল ও আরেকজন। ঘাটচিলান এলাকায় পৌঁছালে তারা চালক মিলনকে শ্বাসরোধে হত্যার পর মরদেহ আখক্ষেতে ফেলে চলে যায়। পরে ইজিবাইকটি মেহেদীর বাড়িতে রেখে আসে।
এসপি লিটন কুমার সাহা বলেন, ‘ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপর আসামিকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। বিকেলে আসামিদের আদালতে তোলা হবে।’
আরও পড়ুন:সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কের জেরে স্বামীকে হত্যায় এক নারী ও তার সঙ্গীর মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত।
রায়ে শাস্তি পাওয়া দুজনকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে।
জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক ফজলে খোদা নাজির মঙ্গলবার দুপুরে এ রায় দেন।
জেলা ও দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুর রহমান রানা বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
মৃত্যুদণ্ড পাওয়ারা হলেন উপজেলার শক্তিপুর গ্রামের মুক্তি খাতুন ও বাড়াবিল গ্রামের সাইদুল ইসলাম।
এজাহারে বলা হয়, উপজেলার শক্তিপুর গ্রামের মুক্তি খাতুনের সঙ্গে একই উপজেলার বাড়াবিল উত্তরপাড়া গ্রামের মনিরুল হকের বিয়ে হয় ২০১৯ সালে। এই বিয়ের আগে মুক্তির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল সাইদুলের। মুক্তি বিয়ের পরও তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখে।
বিয়ের দুই মাস পর মনিরুলকে নিয়ে মুক্তি শক্তিপুর গ্রামে দাদা হোসেন আলীর বাড়িতে বেড়াতে আসেন। ঘুমানোর আগে তিনি তার স্বামীকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ান। পরে মুক্তি ও তার সঙ্গী মিলে মনিরুলকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন।
এ ঘটনার পরদিন ৪ জুন নিহতের বাবা জেলহক প্রামানিক শাহজাদপুর থানায় মামলা করেন।
আরও পড়ুন:সকালের রোদ দেখে রাস্তার ধারে ধান ও খড় শুকানোর কাজ করছিলেন বগুড়ার শাজাহানপুরের বয়রাদীঘি এলাকার শামিম আহমেদ। বৃষ্টির পানিতে ডুবে যাওয়া ধান কাটার পর সপ্তাহখানেক ধরে এভাবেই চলছে তার।
কাজের ফাঁকে জানালেন, আবাদের দুই বিঘা জমির ধান বৃষ্টি আর ঝড়ো বাতাসে হেলে পড়েছিল। এতে তিন ভাগ ধানের এক ভাগ মাঠেই ফেলে আসতে হয়েছে তাকে।
শামিমের মতো এমন দশা বগুড়ার কয়েকটি উপজেলার অনেক কৃষকের। কালবৈশাখী ঝড়ে হেলে পড়া বোরো ধান পানিতে ভিজে নষ্ট হচ্ছে। সময়মতো চাহিদা অনুযায়ী ধান কাটার শ্রমিক না পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক।
কৃষকরা জানান, বৃষ্টিতে জমিতে প্রতি বিঘায় অন্তত ৮ মণ ধান নষ্ট হয়েছে। শঙ্কা, এবার বোরো ধানে তাদের লোকসান হতে পারে। খরচের টাকা তুলতে পারবেন কি না, সেই চিন্তার ভাঁজ তাদের কপালে।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরও উৎপাদনের ঘাটতির কথা বলছে। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এখনও মাঠে বোরো ধান রয়েছে। সব ধান কাটা শেষ হলে সঠিক ক্ষতির হিসাব বের করা যাবে।
শাজাহানপুরের কৃষক শামিম আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঈদের আগে ঝড়ে জমির ধান মাটিতে পড়ে গিয়েছিল। সে সময় শ্রমিক পাওয়া যায়নি। পরে প্রতি বিঘায় ৬ হাজার টাকা খরচ করে ধান কাটি।’
আরেক কৃষক শামিম বলেন, ‘ধান ঘরে তোলার আগেই বিঘাপ্রতি ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। যে ধান পেয়েছি, তা বেচলেও খরচ উঠবে না। আবার পানিতে ভেজা এই ধান ঘরেও রাখা যাবে না। এখন রোদ পেলে শুকিয়ে বিক্রি করা যাবে।’
বোরো চাষের এ খরচ নিয়ে বেশ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ বছর বিঘাপ্রতি জমিতে বোরো ধানে খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খরচ ধান কাটার মজুরিতে। প্রতি বিঘায় শ্রমিকেরা নিচ্ছেন ৬ হাজার টাকা করে। তবে যে জমিতে পানি জমেনি সেখানে মজুরি কম। এর পরের খরচ সার ও কীটনাশকে, অন্তত ৫ হাজার টাকা ব্যয় করতে হয়। এ ছাড়া জমি হাল দেয়া, নিড়ানি, ধান মাড়াই ও পরিবহনে আরও ৪ হাজার টাকা খরচ কৃষকের।
ধান চাষে ব্যয়ের হিসাব দেয়া একজন কৃষক কাহালু উপজেলার এরুল গ্রামের মোহাম্মদ ইনছান। তিনি ৩০ বিঘা জমি পত্তন কৃষিকাজ করেন। মূলত তার আবাদকৃত জমি থেকে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ধানের বীজ সরবরাহ করা হয়।
ইনছান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পানিতে জমে থাকা ধান কাটার সময় বিঘায় প্রায় ৪ মণ ধান নষ্ট হয়। আবার পানিতে পচে বিঘায় আরও ৪ থেকে ৫ মণ নষ্ট। এদিকে পানিতে ডুবে থাকায় এসব ধানের গাছ গজিয়ে গেছে। এতে খুব একটা সমস্যা হবে না। তবে কড়া রোদ না পেলে ধানের মান ভালো থাকবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘বোরো আবাদে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে শ্রমিক সংকট। কারণ এত আগে আমাদের বগুড়ায় ধান কাটার শ্রমিকরা আসেন না। এ ছাড়া হাওর অঞ্চলে ধান কাটার কারণে বেশির ভাগ শ্রমিক সেখানে গিয়েছিল। হারভেস্টার মেশিনও ওই এলাকার দিকে ছিল। ফলে আমরা চাইলেও ধান কাটতে পারিনি।’
মামুন সরকার নামে শাজাহানপুরের আরেক কৃষক জানান, বাজারে ধান প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ৯৫০ থেকে ১ হাজার টাকায়। কিন্তু ভেজা ধান নিতে চাচ্ছে না কেউ। এ জন্য ধান শুকানোর ব্যবস্থা করছেন তিনি।
শাজাহানপুর উপজেলার জোড়া এলাকার এক জমিতে গিয়ে কথা হয় শ্রমিক শহিদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি নাটোরের জামতলী গ্রাম থেকে বগুড়া এসেছেন ধান কাটতে।
তিনি জানান, চৈত্র-বৈশাখ মাস পর্যন্ত নিজের জেলায় ধান কাটার কাজ করেন। এরপর বগুড়ায় আসেন। এবার নাটোরেই প্রতি বিঘায় ৭ থেকে শুরু করে সাড়ে ৫ হাজার টাকা মজুরি নিয়েছেন তারা। পানি জমে থাকার ওপর এই টাকার হিসাব হয়। বগুড়ার শাজাহানপুরে এক বিঘা ধান কাটায় চুক্তি করেছেন সাড়ে ৫ হাজার টাকা।
আরেক মাঠে গিয়ে কথা বললে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার জাহাঙ্গীর আলম জানান, প্রতি বছর বগুড়ায় আসা হয় তার। এবার ঈদের জন্য একটু দেরি হয়েছে।
জেলা কৃষি দপ্তর জানায়, বগুড়ায় এবার ১ লাখ ৮৭ হাজার ৭৫৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৮ লাখ ৭ হাজার ৬২৩ মেট্রিক টন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এর আগে ২৯ এপ্রিল রাতে কালবৈশাখী ঝড়ে বগুড়ায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ওই সময় জেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছিল, কালবৈশাখীতে বগুড়ায় ১৪ হাজার ৮৩৫ হেক্টর জমির বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরে গত ১৩ মে জেলায় আরেকটি ঝড়ে বোরো ধানে আরও ক্ষয়ক্ষতি হয়।
জেলার বোরো ধানের মোট ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বগুড়ার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মো. এনামুল হক। তিনি জানান, মাঠের ৬০ ভাগ বোরো ধান কাটা হয়েছে। যে ধান পরে চাষ করা হয়েছিল, সেগুলোই শুধু জমিতে আছে। মাঠপর্যায়ে জরিপের কাজ চলছে। এতে আরও কয়েক দিন সময় লাগতে পারে।
এনামুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঝড়-বৃষ্টিতে ক্ষয়ক্ষতি হিসাবের পাশাপাশি কৃষকের তালিকা করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ বেশি হলে কৃষককে সহযোগিতা করার প্রস্তাব পাঠানো হবে মন্ত্রণালয়ে।’
আরও পড়ুন:সিলেটে জামায়াত-শিবিরের মিছিল থেকে পুলিশের ওপর হামলা হয়েছে। এতে কোতোয়ালী থানার ওসিসহ দুইজন আহত হয়েছেন। পুলিশ আটক করেছে দুজনকে।
মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে নগরীর জেলরোড পয়েন্টে এ ঘটনা ঘটে।
নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সিলেট মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ। তিনি জানান, মিছিল থেকে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর হামলা চালায়।
তিনি আরও জানান, ধর্মব্যবসায়ী হিসেবে ১১৬ জনের নামের তালিকা প্রকাশ করেছে গণকমিশন। প্রতিবাদে দুপুরে নগরে মিছিল বের করে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা। মিছিলটি জেলরোডে এলে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে।
এ সময় জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালান। হামলায় কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী মাহমুদসহ দুজন আহত হন। পরে পুলিশ ধাওয়া করে জামায়াত-শিবিরের দুই নেতাকর্মীকে আটক করে।
পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান সিলেট মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ।
মন্তব্য