ফরিদপুরের সালথায় প্রতিপক্ষের হামলায় একজনের প্রাণহানির পর তুলকালাম ঘটনা ঘটে গেছে।
প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে ব্যাপক হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে সেখানে। পরে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ও গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে যদুনন্দী ইউনিয়নের খারদিয়া গ্রামের ঠাকুরপাড়ায় এ ঘটনার সূত্রপাত।
হামলায় প্রথমে প্রাণ হারান ২৭ বছর বয়সী সিরাজুল ইসলাম। তিনি খারদিয়া ঠাকুরপাড়া এলাকার ইশারত মোল্লার ছেলে।
সোনাপুর বাজারে একটি করাতকলে শ্রমিকের কাজ করতেন সিরাজুল। তিন মাস আগে তিনি বিয়ে করেন।
এ মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর গোটা খারদিয়া এলাকার মিয়াপাড়া, ঠাকুরপাড়া, বড় খারদিয়াসহ বিভিন্ন বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। পরে পুলিশ গিয়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এলাকাবাসী জানান, অধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে যদুনন্দী ইউনিয়নের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ সমর্থক রফিক মোল্লার সঙ্গে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর মিয়ার বিরোধ চলে আসছিল।
গত ১১ নভেম্বর ইউনিয়ন পরিষদে ভোটের আগে সংঘর্ষে নিহত হন মারিচ সিকদার নামে একজন। তিনি রফিক মোল্লার সমর্থক ছিলেন।
রফিক মোল্লা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে প্রতিপক্ষের ওপর চড়াও হন। এতে দুই পক্ষের মধ্যে প্রায়ই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
গত ২১ এপ্রিল এই দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে আহত হন বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য।
সে সময় ইউপি চেয়ারম্যান রফিক ও আওয়ামী লীগ নেতা আলমগীরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের ওপর হামলার আসামি করা হয়।
গত ২৮ এপ্রিল রফিক ও আলমগীরকে আদালত জামিন দেয়ার পর দুই পক্ষের মধ্যে আবার উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
গত বুধবার আলমগীরের সমর্থক লুৎফরকে আটক করে রফিকের সমর্থকরা। পরে তাকে বোয়ালমারী উপজেলার পরমেশর্দী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নানের জিম্মায় দেয়া হয়। বুধবার বিকেলে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
এ ঘটনা শুনে যদুনন্দী ইউপি চেয়ারম্যান ও তার সমর্থকরা ক্ষুব্ধ হন। এই ক্ষোভ থেকে বৃহস্পতিবার সকালে রফিকের সমর্থকরা ঠাকুরপাড়া ও মিয়াপাড়া গ্রামে হামলা চালায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রফিকের সমর্থকরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে এ হামলা চালায়। একটি দল সড়ক দিয়ে এবং অন্য দল মাঠের মধ্য দিয়ে গ্রাম দুটি ঘেরাও করে আলমগীরের সমর্থকদের নির্বিচারে কুপিয়ে জখম করে।
এ সময় সিরাজুল ঘটনাস্থলেই মারা যান। তার বুকে কোপ ছিল। আরও দুজন আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সিরাজ হত্যার বিষয়টি জানাজানি হলে রফিকের সমর্থকরা পিছু হটে। তখন তাদের অন্তত ৩০-৩৫টি বাড়িঘর ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় আলমগীরের সমর্থকরা।
এর আগে আলমগীরের সমর্থকদের বেশ কয়েকটি ঘর ভাঙচুর করা হয়। লুটপাট করা হয় আসবাবপত্র।
হারুন শিকদার, শাহিন শিকদার, আব্দুর রব কাজী, নজরুল কাজী, জুয়েল কাজী, খোকন কাজী, রোকন কাজী, শহিদ খন্দকার, ওয়াহিদ কাজী, বকুল মোল্লা, মিরান মোল্লার বাড়িসহ দুই পক্ষের অর্ধশতাধিক বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়।
এ সময় অন্তত ৩০ জন আহত হন। তাদের মধ্যে ১৭ জনকে ফরিদপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ভর্তি করা হয়। বাকিদের বোয়ালমারী ও পাশের গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেয়া হয়েছে।
ফরিদপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (নগরকান্দা সার্কেল) সুমিনুর রহমান বলেন, ‘পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ও শটগানের গুলি ছুড়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।’
ভাঙচুরের বিষয়ে সুমিনুর রহমান বলেন, ‘সংঘর্ষটি শেষ পর্যন্ত মুখোমুখি না হওয়ায় নিয়ন্ত্রণে আনতে সমস্যা হয়েছিল। কারণ একটি গ্রুপ হঠাৎ এসে অপর গ্রুপের বাড়িঘর ভাঙচুর-লুটপাট শুরু করে। পুলিশ এলেই ভাঙচুরকারীরা পালিয়ে যায়।’
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান বলেন, ‘যদুনন্দীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য দুই পক্ষকে নিয়ে আলোচনা, সমাবেশ ও দেশীয় অস্ত্র জমা নেয়া হয়েছে। তার পরও ওই এলাকাকে শান্ত করা যাচ্ছে না। আসামি গ্রেপ্তারের পর দ্রুত জামিন পেয়ে তারা আবার সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে।’
আরও পড়ুন:ফেনীতে শরীফ উদ্দিন বাবলু নামের এক পুলিশ সদস্যের নামে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেছেন এক তরুণী।
ফেনী মডেল থানায় মঙ্গলবার এ মামলা করা হয়।
অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য শরীফ উদ্দিন বাবলু বর্তমানে খাগড়াছড়ি পুলিশ লাইনসে কনস্টেবল পদে কর্মরত আছেন। তিনি ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার জামতলা এলাকার বাসিন্দা।
মামলার এজহারে বলা হয়েছে, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে পুলিশ সদস্য বাবলু চট্টগ্রামের জোরারগঞ্জ উপজেলার আজমনগর গ্রামের ওই তরুণীকে ফেনীর মহিপাল এলাকায় একটি হোটেলে একাধিকবার ধর্ষণ করেন। সম্প্রতি বিয়ের জন্য চাপ দিলে বাবলু অস্বীকৃতি জানান। এতে মামলা করেন ওই তরুণী।
ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘তরুণীর লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ সদস্য বাবলুর বিরুদ্ধে নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে শিগগিরই আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
দেশে আইনের শাসনে চলা উচিত বলে মনে করেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ‘বীর মুক্তিযুদ্ধা রাখাল চন্দ্র নাহার মৃত্যু যেন কারাগারে না হয়। তার শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। আইনানুযায়ী একজন বীর মুক্তিযুদ্ধা যেকোনো একটি অপরাধ থেকে ক্ষমা পেতে পারেন।
‘নাহা আইনের আধিকার ঠিকঠাক পাননি। ৩০ বছর তার সাজা হয়েছে, তিনি ২৯ বছর জেলে ছিলেন। এ হাসপাতাল থেকে নাহাকে যেন বাড়ি পাঠানো হয়। তার মৃত্যু স্ত্রী-সন্তানদের সামনে হয় এ আশা করছি।’
মঙ্গলবার দুপুরে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বীর মুক্তিযুদ্ধা রাখাল চন্দ্র নাহাকে দেখতে এসে তিনি এসব কথা বলেন।
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বলেন, ‘রাখাল চন্দ্র নাহা একটি ষড়যন্ত্রমূলক খুনের মিথ্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিলেন। যা ১৯৯৯ সালের একটি হত্যা মামলা। ঘটনার দিন নাহা বাড়ি ছিলেন না। অথচ ২০০৩ সালে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।
‘২০০৮ সালে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সিদ্ধান্ত হয়। আমি মহামান্য রাষ্ট্রপতি বরাবর আবেদন করি, তার সাজা মওকুফ করে যাবতজীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। রেয়াতসহ নাহার মুক্তির সুপারিশ করা হয়েছে ২০১৫ সালে। অথচ সে মুক্তি পায়নি। তার প্রতি অন্যায় করা হয়েছে। আমি তার বাড়িতে গিয়েছি। সব জেনে বুঝে বলছি নাহার কোনো অপরাধ নেই। তাকে দ্রুত মুক্তি দিন।’
নাহার ছেলে সঞ্জয় চন্দ্র নাহা বলেন, ‘বাবার শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। তিনি কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কারাবন্দি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। ২০২৩ সালের জুন মাসে তিনি মুক্তি পাবেন। তবে সে পর্যন্ত তিনি বাঁচবেন না।
‘শেষ জীবনের কয়েকটা দিন পরিবারের পক্ষ থেকে আমরা তার সেবা করতে চাই। তার মৃত্যুটা যেন আমাদের সামনে হয়, আর কোনো চাওয়া নাই।’
১৯৯৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার দেবিদ্বারের হোসেনপুরে ধীনেশ চন্দ্র দত্তকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। প্রতিবেশী ধীনেশ চন্দ্র দত্তকে হত্যার অভিযোগে রাখাল চন্দ্র নাহা ও তার ভাই নেপাল চন্দ্র নাহার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করে ধীনেশ চন্দ্রের পরিবার।
নেপাল চন্দ্র নাহা পালাতক অবস্থায় মারা যান। রাখাল চন্দ্র নাহার সাজা ২০২৩ সালের জুন মাসে ৩০ বছর পূর্ণ হলে মুক্তি পাবেন।
আরও পড়ুন:শরীয়তপুরের জাজিরায় গরু চোর শনাক্ত করতে এক কবিরাজের কাছ থেকে রুটি-পড়া এনেছিলেন শওকত বেপারী নামে এক ব্যবসায়ী। পরে সেই রুটি খেয়ে ৫৫ বছর বয়সী শওকত নিজেই মারা গেছেন। এ ছাড়া ওই রুটি খেয়ে মান্নান হাওলাদার নামে ৭০ বছরের এক বৃদ্ধও মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
নিহত শওকত জাজিরার নাওডোবা ইউনিয়নের কালু বেপারী কান্দি গ্রামের মৃত ওহাব বেপারীর ছেলে।
মঙ্গলবার সকালে বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। জাজিরা থানার ওসি মিন্টু মণ্ডল নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহতের ভাই লিয়াকত বেপারী জানান, শওকত বেপারী পেশায় গরু ব্যাবসায়ী ছিলেন। গত মঙ্গলবার রাতে তার গোয়ালঘর থেকে গরু চুরি হয়। চুরি যাওয়া গরু উদ্ধারে স্থানীয় আবু বেপারীর পরামর্শে ফরিদপুরের এক কবিরাজের কাছে যান তিনি।
এ সময় ২০ হাজার টাকা চুক্তিতে গরু চোর শনাক্ত করতে শওকতকে রুটি ও আয়না-পড়া দেন সেই কবিরাজ। চোর ধরা না পরলে টাকা ফেরত দেয়ারও নিশ্চয়তা দেন তিনি।
শনিবার বিকেলে রুটি ও আয়না-পড়া নিয়ে বাড়িতে আসেন শওকত। রোববার কবিরাজের আয়নায় চোর দেখা না গেলে সন্দেহভাজনদের রুটি-পড়া খাওয়ানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি। তবে অন্যদের খাওয়ানোর আগে নিজেও সেই রুটি খান শওকত। এতেই ঘটে বিপত্তি! গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এ সময় আরেকটি রুটি খেয়ে মান্নান হওলাদার নামে আরও এক ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে যান। অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকলে দুজনকেই দ্রুত ঢাকা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় স্বজনরা। ঢাকায় নেয়ার পথেই মারা যান শওকত। আর মান্নান হাওলাদার বর্তমানে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
নিহতের ছেলে রাজিব হোসেন বলেন, ‘ওই কবিরাজের নাম ইসরাফিল। তার বাড়ি ফরিদপুর। কয়েকটি রুটি সে পড়ে দিয়েছিল। এর মধ্যে আমার বাবার জন্য একটি রুটি আলাদা করে দিয়েছিল। সেই রুটি খেয়েই আমার বাবার মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে ওই কবিরাজের মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।’
জাজিরা থানার ওসি মিন্টু মণ্ডল জানান, খবরটি জানার পরই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে এখনও লিখিত অভিযোগ দেয়নি কেউ।
ওসি বলেন, ‘ময়নাতদন্ত ছাড়াই নিহত শওকত বেপারীর মরদেহ দাফন করতে চেয়েছিল তার পরিবার। কিন্তু বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় আমরা ময়নাতদন্ত করিয়েছি। প্রতিবেদন হাতে পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ সম্পর্কে জানা যাবে।’
আরও পড়ুন:ঘোষণা ছিল নিজস্ব কার্যালয়ে সম্মেলন করার। কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও পুলিশের বাধায় তা সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যন্ত প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়ে বাগানের ভেতরে লুকিয়ে অতি সংক্ষিপ্ত পরিসরে সম্মেলন করতে হয়েছে রাজাপুর উপেজেলা বিএনপিকে।
ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলায় মঙ্গলবার এ ঘটনা ঘটে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও পুলিশের বাধায় উপজেলা শহরের বাইপাস মোড়ে নিজস্ব কার্যালয় সম্মেলন করতে পারেনি রাজাপুর বিএনপি।
নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা পর উপজেলা শহরের বাইরে উত্তর বাঘড়ি গ্রামে গিয়ে বাগানের ভেতর গোপনে কাউন্সিল সারতে হয়েছে দলটিকে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে সংক্ষিপ্ত পরিসরে সম্মেলন শুরু হয়।
এর আগে দুপুর ৩টার দিকে শহরের বাইপাস মোড়ে উপজেলা বিএনপি কার্যালয়ে সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল।
উপজেলা বিএনপির সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এক পর্যায়ে দুদলের সংঘর্ষে পুলিশসহ অন্তত পাঁচজন আহত হন।
বেলা ২টার দিকে শহরের বাইপাস মোড়ে দুদল মিছিল বের করলে সংঘর্ষ বেধে যায়। বিএনপি নেতাকর্মীরা বাঘড়ি বাজার এলাকায় গেলে সেখানেও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘাত হয়।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শহরের বাইপাস মোড়ে দলীয় কার্যালয়ে সম্মেলনের আয়োজন করে বিএনপি। এর কাছেই বাইপাস সড়কের পাশে উপজেলা আওয়ামী লীগও একই সময়ে সমাবেশ ডাকে। এতে সকাল থেকেই দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়।
বেলা ২টার দিকে সেখানে দুদল মিছিল বের করলে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় লাঠিসোটা ও ইট-পাটকেলের আঘাতে রাজাপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মামুনসহ দুই পক্ষের অন্তত ৫ জন আহত হন।
এক পর্যায়ে পুলিশ বিএনপি কার্যালয়ে সম্মেলন বন্ধ করে দিলে নেতাকর্মীরা বাঘড়ি গ্রামে চলে যান। বাঘড়ি বাজারে গেলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিএনপির সংঘর্ষ বাধে। এক পর্যায়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা গ্রামে বাগানের ভেতর ঢুকে পড়েন। সেখানেই তড়িঘড়ি সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
রাজাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিয়া হায়দার লিটন বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ডেকেছি। বিএনপির সন্ত্রাসীরা আমাদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। পরে পুলিশ এসে ওদেরকে সরিয়ে দিয়েছে।’
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে রাজাপুর থানার ওসি পুলক চন্দ্র জানান, দুই পক্ষকে সরাতে গিয়ে ইটের আঘাতে এস আই মামুন আহত হয়েছেন।
উপজেলা বিএনপি সূত্র জানায়, বাগানের ভেতরে সম্মেলনে ওড়ানো হয়নি পায়রা, উত্তোলন হয়নি জাতীয় পতাকা, এমনকি বাজানো হয়নি জাতীয় ও দলীয় সংগীত। সংক্ষিপ্ত বক্তব্য আর কমিটি ঘোষণা দিয়েই শেষ করতে হয়েছে উপজেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিল অধিবেশন।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন।
মৌখিক ঘোষণায় সম্মেলন উদ্বোধন করেন ঝালকাঠি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ হোসেন। এতে প্রধান বক্তা ছিলেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব শাহাদাত হোসেন।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন রাজাপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক তালুকদার আবুল কালাম আজাদ। সভা পরিচালনা করেন সদস্য সচিব নাসিম উদ্দিন আকন।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ঝালকাঠি শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনিচুর রহমান তাপু, মিজানুর রহমান মুবিন, জাকারিয়া সুমন, আল ইমরান কিরন।
কাউন্সিলে তালুকদার আবুল কালাম আজাদকে সভাপতি ও নাসিম উদ্দিন আকনকে সাধারণ সম্পাদক করে উপজেলা বিএনপির আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
ঝালকাঠি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ হোসেন বলেন, ‘দফায় দফায় হামলা করে ওরা (আওয়ামী লীগ) প্রমাণ করেছে দেশে গণতন্ত্র নেই। আগামীতে পাল্টা হামলা করা হবে, আর সহ্য করা হবে না।’
রাজাপুর থানার ওসি বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়া হয়েছে। দুপক্ষকে সড়ক থেকে সরাতে দিতে গিয়ে ইটের আঘাতে এসআই মামুন মাথায় চোট পেয়েছেন। বিএনপি বিকেলে কোথায় প্রোগ্রাম করেছে তা আমার জানা নেই।’
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) বাতিল ও পুলিশ কর্মকর্তাদের বদলির প্রস্তাব করেছেন মেয়র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার।
নিজ বাসভবনে মঙ্গলবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে কায়সার এ আবেদন জানান।
নির্বাচন সংক্রান্তে সাত দফা প্রস্তাব কমিশনারের কাছে জমা দিয়েছেন বলে জানান এই মেয়র প্রার্থী।
লিখিত প্রস্তাব পাবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহেদুন্নাবী চৌধুরী।
সংবাদ সম্মেলনে কায়সার বলেন, ‘আমি মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে একজন প্রার্থী। নির্বাচনকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
‘নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে আমি নির্বাচনে অংশগ্রহণের নিমিত্তে কাজ করে যাচ্ছি। নির্বাচনের মাঠে পদচারণা করে আমি সমাজের বিশিষ্ট নাগরিক, বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা, পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে নিম্নলিখিত পদক্ষেপসমূহ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক বিবেচনা ও কার্যকর করার পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য পেশ করছি।’
প্রস্তাবগুলো হলো
১. ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন এবং ইউপি ও পৌর নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ ছিল না। দিনের ভোট রাতে, কেন্দ্রদখল ও ভোটারশূন্য কেন্দ্র ছিল। যা ফলাফলগুলো বিশ্লেষণ করলেও বুঝা যায়।
জনগণের মধ্যে এখনও সেই ভয়, আতঙ্ক ও সন্দেহ বিরাজ করছে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েনের মাধ্যমে কিছু মোটরসাইকেল আটক ছাড়া অন্য কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। এজন্য নির্বাচন কমিশনকে ভোটারদের ভয় ও শঙ্কামুক্ত পরিবেশে ভোটারদের এ বিষয়ে আশ্বস্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
২. ইভিএমে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে থাকা রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের আপত্তি রয়েছে। সাধারণ ভোটাররাও এ বিষয়ে আপত্তি তোলার পাশাপাশি ভোটের ফলাফল পাল্টিয়ে দেয়া হবে বলে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছে।
নির্বাচন কমিশন আমাদের প্রার্থীদের নিয়ে এ বিষয়ে কোনো আলোচনা, ব্রিফিং কিংবা বিস্তারিত কিছুই তুলে ধরেনি। তাই আমরাও এ বিষয়ে কিছু জানি না। যেহেতু বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ, তাই কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত বাতিল করে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে স্বচ্ছ ব্যালট বক্সে ভোট নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
৩. নির্বাচন কমিশন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকার কোনো কর্মকর্তাকে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ জন্য আমি অভিনন্দন জানাই। সেই একই কারণে সিটি করপোরেশন এলাকায় কর্মরত পুলিশের উপপরিদর্শক, পরিদর্শক, সহকারী পুলিশ সুপার ও মাঠ প্রশাসনের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনারের (ভূমি) নির্বাচনকালীন (প্রতীক বরাদ্দের পূর্বেই) বদলির দাবি জানাচ্ছি।
৪. নির্বাচন কমিশন প্রতিটি কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের উদ্যোগকেও আমি স্বাগত জানাই। সিসি ক্যামেরার সুবিধা যাতে আগ্রহী প্রার্থীরা পায়, অর্থ্যাৎ প্রার্থীরা তাদের স্বঅবস্থানে থেকে সিসি ক্যামেরা মনিটরিং করতে পারে সে বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।
৫. নির্বাচনের সময় পর্যন্ত আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়া কোনো নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার না করার নির্দেশনা প্রদানের দাবি জানাচ্ছি।
৬. প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে নির্বাচন কমিশনের দুজন সদস্যের নেতৃত্বে কয়েকটি দল কুমিল্লায় অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।
৭. প্রার্থীদের অভিযোগ হোয়াটস আ্যাপ, টেলিগ্রাম, ম্যাসেঞ্জারসহ অন্যান্য অনলাইন যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।
নির্বাচনের আগেই ইভিএমের কথা উল্লেখ করেছে নির্বাচন কমিশন, তাহলে মনোনয়ন পত্র জমা দেয়ার পর বাতিল কেন চাচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে কায়সার বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে আমার মনে সন্দেহ রয়েছে। ইনপুট যা দেন আউটপুট সঠিক নাও আসতে পারে। এ ছাড়া ভোটার ও সুশীল সমাজ ইভিএমের ওপর এখনো আস্থা আনতে পারেনি। আমিও না। তাই ইভিএম বাতিল চেয়েছি।’
আরও পড়ুন:চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে পাগলা নদীতে গোসলে নেমে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
কানসাট ইউনিয়নের কাঠগড় এলাকায় মঙ্গলবার বিকেলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
মৃত শিশুরা হলো মো. মোমিন ও আবু তাহের। তাদের বয়স ১২, বাড়ি কাঠগড়েই।
শিবগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ জাকির এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, গ্রামের চার শিশু মিলে বিকেলে নদীতে গোসল করতে নামে। সে সময় মোমিন ও তাহের কোনো কারণে ডুবে যায়। অন্য দুই শিশুর চিৎকারে স্থানীয়রা গিয়ে নদী থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে।
সিরাজগঞ্জের সলঙ্গায় বাঁশবাগান থেকে এক স্কুলছাত্রের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
সলঙ্গার ইসলা দিঘর গ্রামের একটি বাঁশ বাগান থেকে মঙ্গলবার বিকেলে মরদেহটি উদ্ধার করে রায়গঞ্জ থানায় হস্তান্তর করেছে সলঙ্গা থানা পুলিশ।
রায়গঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নিহত ১২ বছরের রাশিদুল ইসলাম রায়গঞ্জ থানার ধামাইনগর গ্রামের মোবারক হোসেনের ছেলে। স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্র ছিল সে।
নিহতের বড় ভাই তারিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে রাশিদুল ভাত খেয়ে বড় ভাইয়ের অটোভ্যান নিয়ে বের হয়। রাতে বাড়িতে না ফিরলে পরিবারের লোকজন বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করে তাকে না পেয়ে শুক্রবার রায়গঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করি।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান রহমান বলেন, ‘মরদেহটি উদ্ধার করে হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় রায়গঞ্জ থানায় হত্যা মামলার প্রস্তুতি চলছে। ঘটনা খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য