শ্রীলঙ্কাকে ২০ কোটি টাকার জরুরি ওষুধ সহায়তা দিয়েছে বাংলাদেশ।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বুধবার এই জরুরি ওষুধ হস্তান্তর করা হয় ঢাকায় নিযুক্ত শ্রীলঙ্কার হাইকমিশনার প্রফেসর সুদর্শন সেনেভিরাত্নের কাছে।
সহায়তা হিসেবে বাংলাদেশ সরকার ১০ কোটি টাকার এবং বাংলাদেশ ওষুধ উৎপাদক সমিতি দিয়েছে ১০ কোটি টাকার ওষুধ।
শ্রীলঙ্কাকে জরুরি ওষুধ উপহার হস্তান্তর অনুষ্ঠানের আয়োজন করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. জাহিদ মালেক।
এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের (সচিব-পূর্ব) মাশফি বিনতে শামস, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা।
অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নির্দেশনায় জরুরি এই সহায়তা দেয়া হলো। আরও সহায়তা দেয়া হবে। শ্রীলঙ্কা চাহিদা দেয়ার পর সেই চাহিদামতো সাহায্য দেয়া হবে।’
ঢাকায় শ্রীলঙ্কার হাইকমিশনার সুদর্শন সেনেভিরাত্নে বলেন, ‘৩০ বছরের গৃহযুদ্ধ, বিধ্বংসী সুনামি ও চলমান মহামারিতে শ্রীলঙ্কা আজ দুর্বল হয়ে পড়েছে। এখন একটা কঠিন সময় পার করছি আমরা।
‘আমাদের নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা জরুরি ওষুধের সংকটের মধ্যে আছে। তাদের জন্য এই ওষুধ খুব কাজে লাগবে।’
আরও পড়ুন:দেশে হাজারো নারী নিরাপদ মাতৃত্বের সুবিধা থেকে বঞ্চিত। অশিক্ষা, প্রশিক্ষণহীন ধাত্রী ও প্রলম্বিত চিকিৎসাহীনতার কারণে সন্তান প্রসবের সময় ফিস্টুলা রোগ বাড়ছে। নারীরা এই রোগ চেপে যাওয়ার কারণে চিকিৎসার বাইরে থেকে যাচ্ছে বড় একটি অংশ। ফলে তারা বিষণ্নতা, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, দারিদ্র্য প্রভৃতি সমস্যায় পড়ছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হলে সার্জারি ছাড়াই ওষুধ দিয়ে এই রোগের চিকিৎসা সম্ভব। প্রসব ব্যথা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে রোগীকে হাসপাতালে নিতে হবে। এই রোগ নিয়ে এখনই সচেতন হতে হবে। রোগ হলে তা প্রকাশ করতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, বাংলাদেশে আনুমানিক ১ লাখ ২০ হাজার নারী প্রসবজনিত ফিস্টুলায় ভুগছেন। প্রতি এক হাজার বিবাহিত নারীর মধ্যে ১ দশমিক ৬৯ জন প্রসবজনিত ফিস্টুলায় আক্রান্ত। সারা বিশ্বে প্রতিদিন প্রায় ৮০০ নারী অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় অথবা সন্তান প্রসবের সময় মারা যান। শুধু বাংলাদেশে এ রকম মাতৃমৃত্যু হয় প্রতিদিন গড়ে ১৫টি। আর যারা মারা যাচ্ছেন, তাদের মধ্যে অন্তত ২০ জন বা এরও বেশি মারাত্মক জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
আজ ২৩ মে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক প্রসবজনিত ফিস্টুলা নির্মূল দিবস। ২০০৩ সালে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিকভাবে এই দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। তবে নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে ১০ বছর পর ২০১৩ সালে প্রথমবারের মতো দিবসটি পালিত হয়।
ইউএনএফপিএর কর্মসূচি ‘ক্যাম্পেইন টু এন্ড ফিস্টুলা’র আওতায় বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে দিবসটি পালিত হচ্ছে। ফিস্টুলা চিকিৎসার পাশাপাশি প্রসবজনিত এই জটিলতা নির্মূলে ডাক্তার, নার্স ও দক্ষ ধাত্রী প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সচেতনতামূলক কর্মসূচিও বাস্তবায়িত হচ্ছে।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গাইনি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নুসরাত আফরিন নীলা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অদক্ষ ধাত্রীর মাধ্যমে বাড়িতে জোর করে বা বাধাগ্রস্ত সন্তান প্রসবের কারণেই নারীকে ফিস্টুলার মতো জটিল স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগতে হয়। ফিস্টুলা আক্রান্ত নারীর অনবরত প্রস্রাব-পায়খানা ঝরতে থাকে। এ কারণে যোনিপথে চুলকানি হয়, ক্ষত তৈরি হয়। নারীর জন্য দুর্বিষহ জীবন শুরু হয়।’
তিনি জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হলে ফিস্টুলা চিকিৎসার মাধ্যমে পুরোপুরি ভালো হয়ে যায়। এমনকি সার্জারি করাও প্রয়োজন হয় না। বাংলাদেশে অনেক বেসরকারি সংস্থা এই রোগে বিনা মূল্যে সার্জারি করিয়ে থাকেন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজসহ দেশের ১০টি হাসপাতালে এই রোগের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
প্রসবজনিত ফিস্টুলা মৃত সন্তান প্রসবে দায়ী
বাধাগ্রস্ত প্রসববেদনার ক্ষেত্রে সঠিক সময়ে জরুরি ও উন্নত চিকিৎসা না পেলে প্রসবকালীন বাধা থেকে নারীর জননাঙ্গের টিস্যুগুলোতে রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যায়। ফলে টিস্যুগুলো মারা যায় এবং একটি ছিদ্র তৈরি হয়। এমন অবস্থায় অধিকাংশ নারী মৃত সন্তান প্রসব করেন। এখনও যেসব নারী এ জটিলতায় আক্রান্ত হচ্ছেন, তারা সাধারণত দরিদ্র এবং চিকিৎসাসেবার আওতার বাইরে।
সন্তান প্রসবের সময় তাদের পাশে দক্ষ সেবাদানকারী ব্যক্তিরা থাকেন না। দেশে ৬০ শতাংশেরও বেশি প্রসব বাড়িতে হয়ে থাকে। নারীদের অবস্টেট্রিক ফিস্টুলা হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ বাল্যবিয়ে। অল্প বয়সে যেসব মেয়ের বিয়ে হয় এবং তারা গর্ভধারণ করে, তাদের শরীর সন্তান প্রসবের মতো চাপ সামলানোর উপযোগী থাকে না। ফলে ফিস্টুলার মতো অবর্ণনীয় যন্ত্রণার শিকার হয় তারা।
ফিস্টুলা দূর করতে করণীয়
প্রসবকালে সব নারীর পাশে দক্ষ সেবাদানকারীর উপস্থিতি নিশ্চিত করা এবং প্রসবজনিত জটিলতায় জরুরি সেবা দেওয়ার মাধ্যমে ফিস্টুলাকে প্রায় নির্মূল করা যেতে পারে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে দ্রুতগামী পরিবহনব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে অস্ত্রোপচারের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও কর্মীদের উপস্থিতি জরুরি। বাল্যবিয়ের অবসান ঘটিয়ে এবং মেয়েদের প্রথম গর্ভধারণের সময়টা পিছিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে ফিস্টুলার হার কমানো সম্ভব।
আরও পড়ুন:ভবিষ্যৎ মহামারি মোকাবিলায় ‘মহামারি চুক্তি’তে পৌঁছার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
৭৫তম বিশ্ব স্বাস্থ্য অ্যাসেম্বলির উচ্চ পর্যায়ের অধিবেশনে সম্প্রচারিত এক ভিডিও বিবৃতিতে শেখ হাসিনা এই আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘ভবিষ্যৎ মহামারি মোকাবিলার লক্ষ্যে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায়সঙ্গত সাড়া প্রদানের জন্য আমাদের অবশ্যই মহামারি চুক্তিতে পৌঁছতে কাজ করতে হবে।’
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় রোববার শুরু হওয়া এই অ্যাসেম্বলি ২৮ মে পর্যন্ত চলবে। কোভিড-১৯ মহামারি শুরুর পর এটিই প্রথম ইন-পারসন স্বাস্থ্য বিষয়ক সমাবেশ। খবর বাসসের।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘লাখ লাখ মানুষকে টিকাদানের প্রচেষ্টার বাইরে রেখে তারা টেকসইভাবে পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা নিশ্চিত করতে পারেনি।
‘বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে ভ্যাকসিন উৎপাদন বাড়াতে প্রযুক্তি এবং কারিগরি জ্ঞান শেয়ার করা দরকার।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারি এখনও সারা বিশ্বে জীবন ও জীবিকার ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে।
‘বাংলাদেশে সরকার স্বাস্থ্যসেবা, আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার সমন্বয়ের মাধ্যমে মহামারির হুমকি মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ২৩ বিলিয়ন ডলার ব্যয়সাপেক্ষ ২৮টি উদ্দীপনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি, যা আমাদের জিডিপির প্রায় ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। আমরা প্রায় ৪০ মিলিয়ন ঝুঁকিপূর্ণ মানুষকে নগদ ও অন্যান্য সহায়তা দিয়েছি। আমাদের জনগণকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন সরবরাহ করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী পুনর্ব্যক্ত করেন যে, বাংলাদেশ মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ আশ্রয় শিবিরে মহামারি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমার সরকার আমাদের জাতীয় বাজেট থেকে ভ্যাকসিন সংগ্রহের জন্য ১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছে।’
কোভ্যাক্সের মাধ্যমে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন দেয়ায় বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগীদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য অনুযায়ী জনসংখ্যার শতভাগেরও বেশি লোককে ইতোমধ্যে টিকা দেয়া হয়েছে।
‘আমরা আমাদের ফ্রন্টলাইন পরিষেবা প্রদানকারীদের কাছে নিবেদিত কাজের জন্য কৃতজ্ঞ।’
বাংলাদেশ ওষুধ, পিপিই ও স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের পাঠিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি যে ভ্যাকসিনকে বিশ্বব্যাপী গণসামগ্রী হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। বিশ্ব সম্প্রদায়কে অবশ্যই ব্যাধির চাপের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের বিষয়ে বাড়তি মনোযোগ দিতে হবে।’
অবহেলিত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগসহ চিকিৎসা গবেষণায় সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ প্রস্তুত রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সকে সমন্বিতভাবে মোকাবিলা করতে হবে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অসংক্রামক রোগের বিস্তারের বিষয়ে আমাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ক্যান্সার ও ডায়াবেটিস রোগের বিষয়ে গবেষণা ও চিকিৎসালাভের সুবিধার জন্য সবাইকে আরও বিনিয়োগ করতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাকে আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় জরুরি সাড়া প্রদানের অংশ হিসেবে সমাধান করা উচিত।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সড়ক দুর্ঘটনা, পানিতে ডুবে মারা যাওয়া এবং অন্যান্য জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক সহায়তা চাই।’
প্রথাগত ওষুধের গবেষণা ও মান বজায় রাখার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী ভারত সরকার এবং ডব্লিউএইচও-কে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সব বয়সের মানুষের জন্য সুস্থ জীবনযাপনের লক্ষ্যে এসডিজি-৩ অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৮ হাজারের বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে আমাদের জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছি।’
সরকারপ্রধান বলেন, তার সরকার সক্রিয়ভাবে শিশু পুষ্টি নিয়ে কাজ করছে এবং ২০০৭ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে স্টান্টিং এবং অপচয় উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। আমাদের লক্ষ্য ২০২২ সালের শেষ নাগাদ দক্ষ ধাত্রীদের মাধ্যমে ৬৫ শতাংশ প্রসব এবং ২০২২ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ প্রসব-পূর্ব সেবা নিশ্চিত করা।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য শাসনের ক্ষেত্রে ডব্লিউএইচও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই ডব্লিওএইচওকে টেকসই অর্থায়ন করতে হবে এবং বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় সহায়তা দিতে একে সক্ষম করতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে।
‘বাংলাদেশ জনস্বাস্থ্য এবং কূটনীতির জন্য অগ্রাধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিজ ভূমিকা পালনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
ফ্রান্স, কেনিয়া, বতসোয়ানা ও ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট, ইকুয়েডরের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং জাতিসংঘ মহাসচিব এই আয়োজনে বক্তব্য দেন।
আরও পড়ুন:বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশে বছরে ১০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ (৭ লাখ) মৃত্যুই অসংক্রামক রোগে ঘটে থাকে। সে হিসাবে দেশে দিনে গড়ে এক হাজার ৯০০ মানুষ অসংক্রামক রোগে মারা যায়।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বৃহস্পতিবার রাজধানীর বনানীতে হোটেল শেরাটন আয়োজিত এক সায়েন্টিফিক সেমিনারে এ কথা বলেন।
জাহিদ মালেক বলেন, ‘দেশে অসংক্রামক রোগে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি হারে বাড়ছে। আগে এই রোগের প্রবণতা বয়স্ক মানুষের মধ্যে দেখা যেত। এখন তরুণরাও আক্রান্ত হচ্ছে। মানুষের জীবনাচার পরিবর্তন এর অন্যতম কারণ।
‘দেশে প্রতিবছর ১০ লাখ মানুষ স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করে। এর মধ্যে ৭ লাখই মারা যায় অসংক্রামক রোগে। সে হিসাবে প্রতিদিন মারা যায় ১৯০০ মানুষ।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অসংক্রামক রোগ একবার দেখা দিলে আজীবন চিকিৎসা নিতে হয়। কিন্তু এটা ব্যয়বহুল। এই রোগে আক্রান্তের হার বৃদ্ধিতে সামগ্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর চাপ তৈরি হচ্ছে। নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে হাসপাতালের সামগ্রিক চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায়ও।
‘আমরা ভালো ও উন্নত চিকিৎসা দিতে গেলে গবেষণা দরকার। গবেষণা থাকলে সঠিক দিকনির্দেশনা আসে। তাতে করে নীতি ও পরিকল্পনা গ্রহণ সহজ হয়।
‘আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় সংক্রামক রোগব্যাধি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এরই মাঝে অসংক্রামক রোগ বেড়ে গেছে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে মানসিক সমস্যা বেড়েছে। এর প্রভাবে আত্মহত্যা বাড়ছে।
এমন বাস্তবতায় আজ (বৃহস্পতিবার) মানসিক স্বাস্থ্য পলিসি কেবিনেট নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।’
সেমিনারে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়ন-অগ্রগতি নিয়েও কথা বলেন মন্ত্রী। বলেন, ‘দেশে ৩৮টি মেডিক্যাল কলেজ ও পাঁচটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ এগিয়ে গেছে। একইসঙ্গে সমস্যাও বেড়েছে। ভালো স্বাস্থ্য সেবার জন্য প্রয়োজন অবকাঠামো, ওষুধ ও স্বাস্থ্যকর্মী। স্বাস্থ্য খাত সংক্রামক রোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত ছিল। আমারা টিবি, কলেরা, ডায়রিয়া নিয়ে কাজ করেছে। এসব এখন নিয়ন্ত্রণে।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক রোবেদ আমিন। বক্তব্য দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডা. মো. শরফুদ্দিন আহমেদ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আহমেদুল কবীরসহ অন্যরা।
আরও পড়ুন:দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে কর্মরত নার্সদের বদলি-বাণিজ্যে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ তদন্তে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। একইসঙ্গে এই বদলি বাণিজ্যের হোতা হিসেবে অভিযুক্ত মো. জামাল উদ্দিন ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এ সংক্রান্ত রিটের শুনানি নিয়ে বুধবার বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী হুমায়ুন কবির পল্লব। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
হুমায়ুন কবির পল্লব নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নার্স বদলি-বাণিজ্যের মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া প্রায় শত কোটি টাকা ফেরত চেয়ে আমরা রিট দায়ের করেছিলাম। আদালত ওই রিটের শুনানি নিয়ে বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি এ ঘটনার হোতা জামাল উদ্দিনসহ তার পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ২৬ জুলাই দুদককে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছে আদালত।’
সরকারি হাসপাতালে নার্সদের বদলি বাণিজ্যের নামে শত কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে এবং টাকা ফেরত চেয়ে গত ১০ এপ্রিল রিট দায়ের করেন ‘ল অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশনের’ পক্ষে সুপ্রিমকোর্টের তিন আইনজীবী।
রিটে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান, স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, সংশ্লিষ্ট সিন্ডিকেটের অভিযুক্ত মো. জামাল উদ্দিনকে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে বিবাদী করা হয়।
রিট আবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোতে হাজার হাজার নার্স কর্মরত আছেন। এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে পেশাগতভাবে বদলি চাকরির একটি স্বাভাবিক নিয়ম। কিন্তু সেই পেশাগত বদলি হয়ে উঠেছে নার্স পেশার একটি আতঙ্কের নাম। প্রত্যেক নার্সকে প্রতিবার বদলির জন্য গুনতে হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। আর এই বদলি বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে একটি বিশাল সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও তাদের আত্মীয়-স্বজন।
গত বছরের সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর- এই তিন মাসে প্রায় চার হাজার নার্সকে বদলি করা হয়েছে। সেই বদলির মাধ্যমে সিন্ডিকেট প্রায় একশ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে রিটটি দায়ের করা হয়।
দেশে ৬৭ শতাংশের বেশি ওষুধ বিক্রয় কেন্দ্রের (ফার্মেসি) বিক্রেতারা অ্যান্টিবায়োটিকের সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা রাখেন না। এমনকি তারা অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ চিনতেও পারেন না।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।
এমন বাস্তবতায় ওষুধ চিহ্নিতকরণ সহজ করতে অ্যান্টিবায়োটিকের মোড়ক (প্যাকেট) বদলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
রাজধানীর এক হোটেলে বুধবার এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের (ডিজিডিএ) সহকারী পরিচালক এসএম সাবরিনা ইয়াছমিন এসব কথা বলেন।
‘বাংলাদেশে চলমান অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল রেসিস্ট্যান্স (এএমআর) পরিস্থিতি ও এএমইউ ট্রেন্ডস’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা (সিডিসি)।
সাবরিনা ইয়াছমিন বলেন, ‘বাংলাদেশে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে সেবনের প্রবণতা একটি বড় সমস্যা। সাধারণ মানুষ অসুস্থ হলেই ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে সেবন করেন। দেশের আটটি বিভাগের ৪২৭টি ফার্মেসিতে জরিপ চালিয়ে আমরা দেখেছি, ৬৭ দশমিক ৩ শতাংশ ফার্মেসি কর্মী অ্যান্টিবায়োটিক সম্পর্কে ভালোভাবে জানেন না। তারা সহজে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ চিনতেও পারেন না।’
ঔষধ প্রশাসনের এই সহকারী পরিচালক বলেন, ‘বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ (বিএপিআই) ও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর জানুয়ারিতে এক সভায় অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের লেভেলে লাল চিহ্ন ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়। পরবর্তীতে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এটি অনুমোদনও দেয়া হয়।’
‘মানুষ এবং পশু দুই ক্ষেত্রেই অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের মোড়কে এই চিহ্ন ব্যবহার করা হবে। ইতোমধ্যে অনেক কোম্পানি তাদের ওষুধের মোড়কে এই চিহ্ন ব্যবহার করছে।’
অনুষ্ঠানে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার নিয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর (ডিজিডিএ) এবং সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানসহ (আইইডিসিআর) কয়েকটি সংস্থা বিভিন্ন গবেষণা তথ্য তুলে ধরে।
ডিজিডিএ মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক আহমেদুল কবির, রোগ নিয়ন্ত্রণ (সংক্রামক) শাখার পরিচালক অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:করোনা মহামারির তৃতীয় বছরে লকডাউনের পথে হাঁটল উত্তর কোরিয়া। দেশটিতে কোভিড শনাক্তের পর বিধিনিষেধ কঠোর করার পদক্ষেপ নিয়েছে পিয়ংইয়ং। তবে ঠিক কতজন কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন, সে হিসাব মেলেনি।
উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম কেসিএনএর বরাতে এ খবর ছেপেছে বিবিসি।
করোনায় প্রথম দিকে সংক্রমণের কারণে বিশ্ব যখন হিমশিম খাচ্ছিল, উত্তর কোরিয়া তখন ছিল নিশ্চুপ। করোনার কোনো তথ্য তা সরবরাহ করেনি বিশ্বকে। এমনকি করোনার টিকা নেয়ার ক্ষেত্রেও তারা ছিল উদাসীন। বিভিন্ন দেশ টিকা সরবরাহের প্রস্তাব দিলেও নাকচ করে দেয় পিয়ংইয়ং।
এসবের বদলে সীমান্ত সিলগালা করে ভাইরাসটির নিয়ন্ত্রণে মনোযোগী ছিলেন উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশটিতে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি দীর্ঘদিনের।
অনেক বিশ্লেষক বলছেন, দেশটির আড়াই কোটি মানুষ করোনার টিকা কর্মসূচির অভাবে ঝুঁকিতে আছেন। গত বছর কয়েক মিলিয়ন অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং চীনের তৈরি সিনোভ্যাক টিকা সরবরাহের আন্তর্জাতিক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে দেন কিম জং উন।
নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত উত্তর কোরিয়ায় স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়েও উদ্বেগ আছে।
কেসিএনএ বলছে, কিম জং উন প্রাদুর্ভাব নির্মূলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তিনি করোনা সংক্রমণের বিষয়টিকে ‘গুরুতর জাতীয় জরুরি অবস্থা’ বলে অভিহিত করেছেন।
নতুন কোভিড নিয়মের রূপরেখার বৈঠকে দেশটির শাসক কিমকে প্রথমবারের মতো মাস্ক পরা অবস্থায় দেখা গেছে। অবশ্য কিছুক্ষণ পরই তিনি মাস্ক খুলে ফেলেন।
করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর সময়ে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছিলেন কিম উন। এতে দেশটিতে খাদ্যের মতো অতি প্রয়োজনীয় প্যণের সংকট দেখা দেয়; আরও দুর্বল হয়ে পড়ে দেশটির অর্থনীতি।
কেসিএনএ বলছে, ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে ‘সর্বোচ্চ জরুরি অবস্থা জারি করেছেন কিম জং উন। ধারণা করা হচ্ছে, এই আদেশের আওতায় স্থানীয় পর্যায়ে লকডাউন এবং কর্মক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আসতে পারে।
উত্তর কোরিয়ার নিউজ আউটলেট আরও বলছে, ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের প্রথম কেস চার দিন আগে রাজধানীতে শনাক্ত করা হয়েছিল বলে জানা গেছে।
সিউলভিত্তিক মনিটরিং সাইট এনকে নিউজ বলছে, সর্বশেষ ঘোষণার আগে পিয়ংইয়ংয়ের কিছু এলাকার বাসিন্দারা কমপক্ষে দুই দিন লকডাউনে ছিল।
দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার বলেছে, প্রাদুর্ভাবের খবরের প্রতিক্রিয়া হিসেবে উত্তরকে মানবিক সহায়তার প্রস্তাবটি পুনর্বিবেচনা করেছে। পিয়ংইয়ংয়ের পক্ষ থেকে এখনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো হ্যাপলো ট্রান্সপ্লান্ট পদ্ধতিতে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত দুই বছর বয়সী রোগীর বোন ম্যারো প্রতিস্থাপন হয়েছে। রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ৫ মে হ্যাপলো ট্রান্সপ্লান্ট সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়। শিশুটি বর্তমানে সুস্থ রয়েছে।
বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে হাসপাতালটির পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
এভারকেয়ার হাসপাতালের হেমাটোলজি ও স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্ট বিভাগের কো-অর্ডিনেটর ও সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ বলেন, ‘থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রোগ। জিনগত কারণে থ্যালাসেমিয়া হয়ে থাকে। বর্তমানে এই রোগের একমাত্র নিরাময়যোগ্য চিকিৎসা বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট। এ ক্ষেত্রে বড় বাধা ছিল রক্তের গ্রুপ না মেলা। তবে হ্যাপলো ট্রান্সপ্লান্ট পদ্ধতিতে রক্তের গ্রুপ অর্ধেকটা মিললেও বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট সম্ভব।’
থ্যালাসেমিয়া চিকিৎসার প্রতিবন্ধকতার উল্লেখ করে এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, ‘এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় ডোনার না পাওয়া। কারণ থ্যালাসেমিয়া রোগীর পরিবার ছোট আকারের হওয়ায় ডোনার পাওয়ার সম্ভাবনা ১০ শতাংশের নিচে। তাই এর বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে হ্যাপলো ট্রান্সপ্লান্ট পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ এই পদ্ধতিতে অর্ধেকটা ম্যাচ করা ডোনার দ্বারা ট্রান্সপ্লান্ট করা হয়।
‘এই পদ্ধতির চিকিৎসায় পরিবারের যে কেউ ডোনার হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীর ডোনার নিয়ে আর ভোগান্তি পোহাতে হয় না। আর দেশে হ্যাপলো ট্রান্সপ্লান্ট চিকিৎসা ৮ থেকে ১০ লাখ টাকার মধ্যেই দেয়া সম্ভব।’
আমাদের দেশে প্রায় ৮০ লাখ মানুষ থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত, যাদের অধিকাংশই এ সম্পর্কে অবগত নয় বলে জানান ডা. আবু জাফর। তিনি বলেন, বেশিরভাগই বাহক বা ক্যারিয়ার যা সহজে ধরা পড়ে না। ফলে একে সাইলেন্ট কিলারও বলা হয়ে থাকে। এর মধ্যে ৫০ থেকে ৭০ হাজার থ্যালাসেমিয়া রোগী আছেন যাদের চিকিৎসা প্রয়োজন।
‘বাংলাদেশে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তদের জন্য এটি একটি বড় সুখবর এবং এর মাধ্যমে এভারকেয়ার হসপিটালের হাত ধরে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় একটি যুগান্তকারী অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে।’
এভারকেয়ারের মেডিক্যাল সার্ভিসেসের ডেপুটি ডিরেক্টর ডা. আরিফ মাহমুদ বলেন, ‘ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে সব ধরনের চিকিৎসা এই হাসপাতালে রয়েছে। তাই চিকিৎসার জন্য আর বিদেশে যেতে হবে না। এখানে আমরা আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি। হ্যাপলো ট্রান্সপ্লান্ট বা হাফ ম্যাচ ট্রান্সপ্লান্ট বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবা খাতে একটি মাইলফলক।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে এভারকেয়ার হাসপাতাল, বাংলাদেশের এমডি ও সিইও ডা. রত্নদীপ চাসকার, চিকিৎসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও রোগীর স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য