করোনাভাইরাস মহামারি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসায় দুই বছর পর প্রাণভরে ঈদ উদযাপন করেছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। বিধিনিষেধ না থাকায় নির্বিঘ্নে চলাচল করছেন সাধারণ মানুষ। এতে অনেক সময় ঘটছে দুর্ঘটনা।
ঈদের পর দিন বুধবার দেশের ৮ জেলায় ১৯ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে।
নিহতের এসব খবর জানিয়েছেন নিউজবাংলার প্রতিনিধিরা।
রংপুর
রংপুরের পাগলাপীর এলাকায় মাহিন্দ্রাকে (থ্রি হুইলার) মাইক্রোবাসের ধাক্কায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। নিহতের মধ্যে দুই নারী রয়েছেন।
দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত পাঁচজন। বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
আহতদের রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রংপুর সদর কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফিরোজ আলী বলেন, ‘রংপুর থেকে মাইক্রোবাস তারাগঞ্জের দিকে যাচ্ছিল। অপরদিক থেকে যাত্রীবাহী মাহিন্দ্রা আসছিল। মহাসড়কের শলেয়াশা বাজার এলাকায় ইউটার্ন নেয়ার সময় এ দুর্ঘটনা হয়। এতে পাঁচজন মারা যান।’
কুষ্টিয়া
কুষ্টিয়ার খোকসায় সিএনজিচালিত অটোরিকশায় পিকআপ ভ্যানের ধাক্কায় দুই ভাই নিহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় অটোরিকশার আরও দুই নারী যাত্রী আহত হয়েছেন।
কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী সড়কের পাইকপাড়ায় বুধবার বেলা পৌনে ২টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
খোকসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আশিকুর রহমান প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানান, ঈদ উপলক্ষে ওই দুই ভাই অটোরিকশায় করে মামাবাড়ি কুমারখালী যাচ্ছিলেন। বেলা পৌনে ২টার দিকে পাইকপাড়ায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা মালবাহী একটি পিকআপ অটোরিকশায় সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে ফিরোজ ও সামিরুল সড়কের ওপর ছিটকে পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। আহত অন্যদের খোকসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
ওসি বলেন, ‘মরদেহ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পিকআপটি জব্দ করা হয়েছে।’
চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে একটি বাস উল্টে দুই তরুণ নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত পাঁচজন।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বড় কমলদহ এলাকায় বুধবার সকাল ১০টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
চট্টগ্রামের কুমিরা হাইওয়ে পুলিশের সহকারী পরিদর্শক (এএসআই) মোহাম্মদ জাকির হোসেন প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানান, স্বাধীন বাংলা নামের একটি বাস চট্টগ্রাম থেকে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে যাচ্ছিল। সড়ক ফাঁকা থাকার কারণে বেপরোয়া গতির বাসটি মিরসরাইয়ের বড় কমলদহ এলাকায় পৌঁছালে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়।
স্থানীয়রা কয়েকজনকে উদ্ধার করে সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক ওই দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় পাঁচজনের বেশি আহত হয়েছেন। তাদের একজনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিরা সীতাকুণ্ড স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
কক্সবাজার
ঈদের ছুটিতে কক্সবাজার ঘুরতে যাওয়ার পথে চকরিয়ায় বাস উল্টে এক নারী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ১০ যাত্রী।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া কলেজের সামনে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাশের খাদে উল্টে যায়।
চিরিঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে বলেন, ‘ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা শ্যামলী পরিবহনের বাসটি কক্সবাজার যাচ্ছিল। পথে চকরিয়া কলেজের সামনের সড়কের বাঁক ঘুরতেই বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে পাশের খাদে পড়ে যায়। এ সময় ঘটনাস্থলেই শারমিন নিহত হন। গুরুতর আহত ১০ যাত্রীকে উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।’
ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহের ত্রিশালে চলন্ত বাসের জানালা দিয়ে ছিটকে রাস্তায় পড়ে তানিম নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বুধবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার নুরুর দোকান এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন নিহতের পরিবারের বরাত দিয়ে বলেন, ‘ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা তানজিম পরিবহন নামের একটি বাস ময়মনসিংহের দিকে আসছিল। বেলা ১১টার দিকে বাসটি উপজেলার নুরুর দোকান এলাকায় আসামাত্রই চাকা ফেটে বিকট শব্দ হয়। এতে বাসের জানালা দিয়ে শিশু তানিম ছিটকে সড়কে পড়লে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়।’
পঞ্চগড়
ঈদের ছুটিতে বাইরে করে ঘুরতে গিয়ে লাশ হলো তিন কিশোর, যারা সম্পর্কে কাজিন।
হেলমেট ছাড়া এই বাইকে তিন কিশোর চড়ার পর বেপরোয়া গতিতে চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটায়। বিপরীত দিক থেকে আসা মোটরসাইকেলের সঙ্গে সংঘর্ষে তাদের মোটরসাইকেলটি সড়কের পাশে গাছে ধাক্কা খায়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় সবাই।
পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ মিয়া জানান, তিন বন্ধু মহারাজার দিঘীতে বেড়াতে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়। মডেলহাট বাজার থেকে মজারাজা দিঘীতে যাওয়ার সময় বিপরীত দিক থেকে আসা মোটরসাইকেলের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়।
এতে তারা পাশে গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে সড়কে ছিটকে পড়ে৷ পরে স্থানীয়রা তাদের দ্রুত উদ্ধার করে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
যশোর
মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিদ্যুতের খুটির সঙ্গে ধাক্কা লেগে দুই বন্ধু নিহত হয়েছেন।
যশোরের চৌগাছার ইলিশমারী ও ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার মদদুইনপুর এলাতার মাঝামাঝি জায়গায় বুধবার বিকেল ৬টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত তরুণরা হলেন শাহিনুর রহমান ও সাগর হোসেন। তাদের বয়স যথাক্রমে ২২ ও ১৮ বছর।
স্থানীয়রা জানান, তারা অতিরিক্ত গতিতে মোটরসাইকেল চালাচ্ছিল। কারও মাথায় হেলমেট ছিল না।
উপজেলার নারায়নপুর ইউপি চেয়ারম্যান শাহিনুর রহমান বলেন, ‘শাহিনুর ও সাগর চৌগাছা-বিদ্যাধরপুর সড়ক ধরে মোটরসাইকেলে হাজরাখানা গ্রাম থেকে মহেশপুরের বিদ্যাধরপুরের দিকে যাচ্ছিলেন। পথে চৌগাছার ইলিশমারী ঈদগাহপাড়া ও মহেশপুরের মদনপুর মোড়ে বৈদ্যুতিক খুটিতে ধাক্কা দিলে হতাহতের এ ঘটনা ঘটে।’
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে চিকিৎসক উত্তম কুমার বলেন, ‘হাসপাতালে আনার আগেই তাদের মৃত্যু হয়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তাদের মৃত্যু হয়েছে।’
চৌগাছা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম সবুজ বলেন, ‘মরদেহ দুটি উদ্ধার করে সুরাহতল প্রতিবেদন করা করেছে। পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।’
মাদারীপুর
ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার মোল্লাকান্দি এলাকায় বাসের চাপায় একটি বিদ্যুৎচালিত ভ্যানের চালকসহ ৩ জন নিহত হয়েছেন। এ সময় ঢাকাগামী যাত্রীবাহী ‘আমানত শাহ’ বাস খাদে পড়ে আহত হন আরও অন্তত ৬ জন।
বুধবার রাত ৮টার দিকে দুর্ঘটনাটি ঘটে বলে নিশ্চিত করেছেন রাজৈর থানার ওসি আলগমীর হোসেন।
নিহতরা হলেন, রাজৈর উপজেলার নড়ারকান্দি গ্রামের ৩৫ বছরের আমির শেখ, দুর্গাবর্দি গ্রামের ২৩ বছরের শান্ত তপাদার ও আমগ্রাম ইউনিয়নের তেলিকান্দি গ্রামের ভ্যানচালক ৪০ বছর বয়সী নূরনবী।
স্থানীয়দের বরাতে ওসি জানান, রাত ৮টার দিকে ঢাকাগামী যাত্রীবাহী আমান শাহ বাসের সঙ্গে ভ্যানটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই ভ্যানচালক নূরনবী মারা যান। আর ভ্যানের যাত্রীদের মধ্যে শান্ত তপাদার ও আমির শেখকে রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পর মারা যান।
এ সময় যাত্রীবাহী বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে গেলে ওই বাসেরও ৬ যাত্রী আহত হন। তাদেরকেও হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
ওসি আরও জানান, দুর্ঘটনার পর বিক্ষুদ্ধরা বাসের গ্লাস ভাঙচুর করেছে।
আরও পড়ুন:মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে পদ্মা নদীতে বুধবার রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সময় দুটি ড্রেজার জব্দ করেছে নৌ-পুলিশ।
মাওয়া নৌ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের খবর পেয়ে উপজেলার মেদিনীমণ্ডল ইউনিয়নের যশিলদিয়ায় বুধবার রাত দেড়টার দিকে পদ্মা নদীতে অভিযান চালানো হয়। ওই সময় নিয়ম অমান্য করে বালু উত্তোলন করায় ওই দুটি ড্রেজার জব্দ করা হয়।
তিনি আরও জানান, ড্রেজার জব্দ করার সময় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। জব্দকৃত ড্রেজার দুটির বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মেহেরপুরের গাংনীতে সেচ পাম্পের সুইচ দিতে গিয়ে বিদুৎস্পৃষ্ট হয়ে আবদুল হান্নান (৭৫) নামের কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।
উপজেলার বামন্দী ইউনিয়নের দেবীপুর দক্ষিণপাড়ায় বৃহস্পতিবার সকাল নয়টার দিকে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে।
প্রাণ হারানো আবদুল হান্নান দেবীপুর দক্ষিণপাড়ার খোদা বক্সের ছেলে।
এসব তথ্য নিশ্চিত করে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য হিরোক আহমেদ বলেন, ‘আজ সকালে আবদুল হান্নান নিজ গ্রামের মাঠে অবস্থিত সেচ পাম্পের সুইচ দিতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টের শিকার হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন। পরে স্থানীয়রা মরদেহটি ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে নিজ বাড়ি দেবীপুরে নিয়ে আসে।’
বামন্দী পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) শরীফুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘বিদুৎস্পৃষ্টে মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে এসে প্রাথমিক তদন্ত শেষ করেছি। বতর্মানে মরদেহটি পরিবারের কাছে রয়েছে।’
নাটোরের বড়াইগ্রামে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে এক ভ্যানচালক নিহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার আগ্রান ঈদগাহ মাঠ এলাকায় বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের এই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ওই ভ্যানের এক যাত্রী।
নিহত মোজাহার আলী একই উপজেলার পারকোল গ্রামের মৃত শাহাদত আলীর ছেলে।
বনপাড়া হাইওয়ে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আলীমুল ইসলাম জানান, মহাসড়ক পার হওয়ার সময় দ্রুতগতির একটি ট্রাক ভ্যানটিকে চাপা দিয়ে চলে যায়। এতে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই ভ্যানচালক মোজাহার মারা যান। সেই সাথে ভানযাত্রী মিজান শেখ আহত হন।
তিনি বলেন, পরে স্থানীয়রা আহত মিজানকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
তীব্র তাপপ্রবাহে পানির জন্য হাহাকার সৃষ্টি হয়েছে বরেন্দ্র অঞ্চল রাজশাহীতে। পানির অভাবে ব্লাস্টসহ বিভিন্ন রোগ বালাইয়ের শিকার হচ্ছে বোরো ধান। ধানের পাশাপাশি ক্ষতির মুখে পড়েছে অন্যান্য ফসলও। পানির সংকট হওয়ায় আমের মুকুল ঝরে যাচ্ছে।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার ধান চাষি আজমত উল্লাহ জানান, পানির অভাবে ধানের জমি ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। ধানে পোকাড় আক্রমণ হচ্ছে। ধানের থোড়া আসায় পানির দরকার হলেও পানি পাওয়া যাচ্ছে না। কয়েকদিন বরেন্দ্রের গভীর নলকূপে সেচের জন্য ঘুরছেন। তবে সিরিয়াল পাচ্ছেন না।
জেলার কয়েকটি আম বাগান ঘুরে দেখা যায়, প্রচুর পরিমাণ আম ঝড়ে পড়ছে। গাছের নিচে ঝড়া আম স্তুপ হয়ে আছে।
চারঘাট উপজেলার আমচাষী জব্বর আলী বলেন, পানির অভাবে আম ঝড়ে যাচ্ছে। প্রতিদিনই আম ঝড়ে যাচ্ছে। পানি দিয়েও আম ঝড়া ঠেকানো যাচ্ছে না। পানিও ঠিক মত উঠছে না। এবার আমের ফলন ঠিক মত হবে না।
অন্যান্য চাষীরাও বলছেন একই কথা। পানি না থাকায় বালায় নাশক স্প্রেও দেয়া যাচ্ছে না। ফলে পোকামাকড় আক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বরেন্দ্রের অপরিকল্পিত সেচ প্রকল্পের কারণে এই অঞ্চলে পানির স্তর ক্রমেই নিচে নামছে। ফলে পানির সংকট সৃষ্টি হয়ে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। পানির অভাবে বোরো ধানের উৎপাদন প্রায় ৩০ শতাংশ কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোনমি অ্যান্ড এগ্রিকালচার এক্সটেনশন বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহমুদুল হাসান বলেন, বোরো ধানের জমিতে কম পক্ষে ৩ সেন্টিমিটার পানি থাকা প্রয়োজন। তা না হলে ধানের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়। ধানের থোড়া তে প্রচুর পরিমাণ চিটা দেখা দেয়। আর পানির অভাবে বোরো ধানে ব্লাস্ট রোগ হয়ে ধান গাছ হলুদ হয়ে যায়। যেভাবেই হোক বোরো ধানের জমিতে সব সময় পানির ধরে রাখতে হবে। এবার যেভাবে তাপ প্রবাহ ও পানির সংকট তৈরি হয়েছে এটা আরো কিছুদিন অব্যাহত থাকলে বোরোর উতপাদন ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যাবে।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, তাপ প্রবাহের ফলে আমের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। পানির সংকট তৈরি হওয়ায় আম ঝড়ে পড়ছে। আমের ঝড়ে পড়া রোধে আম গাছের গোড়াতে সপ্তাহে অন্তত একদিন পানি দিতে হবে হবে। কৃষকদের আমরা গাছের গোড়াতে পানি দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। এ বছর রাজশাহী জেলায় ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে আম চাষ হচ্ছে। উৎপাদন লক্ষমাত্রা ২ লাখ ৬০ হাজার ১৬৪ মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হলেও তা অর্জন করা সম্ভব হবে না।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. শীতাংশু কুমার পাল বলেন, রাজশাহী অঞ্চলে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। ফলে প্রতি বছর পানির তীব্র সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অপরিকল্পিত গভীর নলকূপের মাধ্যমে সেচ প্রকল্পের কারণে পানির স্তর আরো বেশি দ্রুত নিচে নেমেছে। গভীর নলকূপেও এখন ঠিম মত অয়ানি উঠছে না। এই অবস্থা থেকে উত্তরণ পেতে হবে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন কমিয়ে নদী থেকে জমিতে সেচ দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি বৃষ্টির পানি জমানোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
তবে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুর রশিদের দাবি, সমালোচকরা পানি সংকটের বিষয়ে বরেন্দ্রের ঘাড়ে এককভাবে দোষ চাপাচ্ছে। পানির সংকট মোকাবিলায় নতুন নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে কৃষি জমিতে সেচ দেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পদ্মা নদী থেকে আশেপাশের অঞ্চলে সেচের পানি সরবারাহ করতে ইতিমধ্যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি নষ্ট হয়ে যাওয়া গভীর নলকূপ গুলোও মেরামত করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, তীব্র তাপ প্রবাহের ফলে কিছুটা পানি সংকট তৈরি হলেও তা দ্রুত সমাধান করতে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কাজ করে যাচ্ছে। বোরো ধানের জমিতে পানি পানি সরবারাহের বিষয়ে বরেন্দ্র অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক সাবিনা বেগম জানান, বোরো ধানের জমিতে পানি সরবাহর নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সব দপ্তর একযোগে কাজ করার ব্যাপারে সমন্বয় করা হচ্ছে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ বিভাগের সাথে কথা বলা হচ্ছে যেন সেচের জন্য নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবারাহ নিশ্চিত করা যায়।
গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে সম্পত্তির লোভে মারধর করে আপন ভাতিজিকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের কুমুদপুর গ্রামে বুধবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নারীসহ তিনজনকে আট করেছে পলাশবাড়ী থানা পুলিশ।
প্রাণ হারানো তরুণীর নাম শারমিন আক্তার (২২), যিনি প্রয়াত শুক্কুর উদ্দিনের মেয়ে। বিয়ে বিচ্ছেদের পর শারমিন বাবার বাড়িতেই থাকতেন।
শারমিনের অভিযুক্ত চাচার নাম আবদুল খালেক।
তরুণীর পরিবার, স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ জানায়, প্রায় এক বছর আগে পিতৃহারা শারমিনকে কৌশলে বিয়ে দেন তার চাচারা। বিয়ের পর তালাক হলে সমঝোতায় দেনমোহরের টাকা শারমিনকে না দিয়ে আত্মসাৎ করেন তার বড় চাচা আবদুল খালেক। সেই টাকা ও শারমিনের নামে থাকা জমি নিয়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য চলছিল।
তারা আরও জানান, সম্পত্তি নিয়ে বুধবার বেলা ১১টার দিকে শারমিনের সঙ্গে তার চাচাদের বিরোধ বাধে। ওই সময় অভিযুক্তদের মারধরে গুরুতর আহত হন শারমিন। পরে আহত শারমিনকে অভিযুক্তরাই উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য গাইবান্ধার জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে জানান।
শারমিনের দুলাভাই রুহুল আমিন বলেন, ‘শারমিন ও শাম্মী আপন দুই বোন। আমার শ্বশুর (শারমিনের বাবা) মারা গেছেন। বাবা মারা যাওয়ার পর শারমিন আমার বাড়িতেই থাকত। পরে শারমিনের বাবলু নামের এক ফুফা ও তার জ্যাঠারা মিলে কৌশলে শারমিনকে আমার বাড়ি থেকে নিয়ে এসে বিয়ে দেন।
‘বিয়ের তিন-চার মাস পরই তালাক হয় শারমিনের। তখন থেকেই শারমিন আমার শাশুড়ির সাথে তার বাবার বাড়িতেই থাকত।’
শারমিনের মা এবং এ তরুণীর দুলাভাই রুহুল আমিনের অভিযোগ, শাম্মী ও শারমিনের নামে ৩২ শতাংশ জমি আছে। সেই জমি নেয়ার লোভে ক্ষিপ্ত হয়ে বিভিন্ন সময়ে ঝগড়া-বিবাদ, গালিগালাজসহ শারমিনকে মারধর করতেন তার চাচা আবদুল খালেক। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার শারমিনের কাছে জমি চেয়ে মারধর শুরু করেন তিনি। পরে আবদুল খালেকের ভাই আবদুল বারী, ভাতিজা রহমান ও ছকু নামের একজন মারধর করতে থাকেন। ওই সময় তাদের মারধরে শারমিন ঘটনাস্থলেই মারা যান।
মোবাইল ফোনে নিউজবাংলাকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে পলাশবাড়ী থানার ওসি কেএম আজমিরুজ্জামান বলেন, ‘মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় নারীসহ তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।
‘নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। মামলা হলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ওই সময় এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ‘প্রাথমিক সুরতহালে নিহতের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া গলাতে কোনো দাগ চোখে পড়েনি, তবে শ্বাসরোধের বিষয়টি ক্লিনিক্যালি পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না।’
আরও পড়ুন:সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধের মধ্যে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ২৮৮ জন সদস্যকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছড়া বিআইডব্লিটিএ জেটি ঘাট থেকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাদের টাগবোটে তুলে দেয়া হয়।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন জানান, গভীর সাগরে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে অপেক্ষায় থাকা মিয়ানমার নৌবাহিনীর জাহাজ চিন ডুইনে তাদের তুলে দেয়া হবে।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া সেনা ও সীমান্তরক্ষীদের ফেরত নিতে মিয়ানমারের ওই জাহাজ বুধবারই বাংলাদেশের জলসীমায় পৌঁছায়। ওই জাহাজে করেই ১৭৩ জন বাংলাদেশি ফিরে এসেছেন। যারা বিভিন্নভাবে মিয়ানমারে আটকা পড়েছিলেন বা সাজা পেয়ে জেলখানায় ছিলেন।
মিয়ানমার নৌবাহিনীর ওই জাহাজে করে দেশটির ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলও বুধবার দুপুরে কক্সবাজার পৌঁছায়। পরে তারা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ ব্যাটালিয়নে বিজিবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যান। সেখানে পৌঁছানোর পর তারা মিয়ানমারের বিজিপি ও সেনা সদস্যদের যাচাই-বাছাইসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়।
বিজিবি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ১১টি বাসে করে মিয়ানমারের বিজিপি ও সেনা সদস্যদের কক্সবাজার শহরের বিআইডব্লিউটিএ জেটি ঘাটে নিয়ে আসা হয়।
সেখানে আনার পর ইমিগ্রেশন ও ডকুমেন্টেশনের আনুষ্ঠানিকতা সেরে শুরু হয় হস্তান্তর প্রক্রিয়া। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিজিবি, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও কোস্ট গার্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাংলাদেশশে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতসহ দেশটির প্রতিনিধি দলের কাছে তাদের হস্তান্তর করেন।
এরপর সকাল ৭টার দিকে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের কর্ণফুলি টাগবোটে তুলে দেয়া হয়। কোস্ট গার্ডের একটি ট্রলার টাগবোটটিকে পাহারা দিয়ে গভীর সাগরে নিয়ে যায়।
দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে, যার আঁচ লেগেছে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকাতেও। সীমান্তের ওপারের মর্টার শেল ও গুলি এসে এপারে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে।
ওই সংঘাতের মধ্যে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যসহ ৩৩০ জনকে প্রথম দফায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ফেরত পাঠিয়েছিল সরকার।
তাদের মধ্যে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ-বিজিপি ৩০২ জন, তাদের পরিবারের চার সদস্য, দুজন সেনা সদস্য, ১৮ জন ইমিগ্রেশন সদস্য এবং চারজন বেসামরিক নাগরিক ছিলেন।
এরপর বান্দরবান ও কক্সবাজার সীমান্ত নিয়ে কয়েক দফায় আরো ২৮৮ জন সীমান্তরক্ষী ও সেনা সদস্য এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। এবার তাদের ফেরত পাঠানো হলো।
রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি থানাধীন সাজেকে শ্রমিকবাহী ডাম্প ট্রাক খাদে পড়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯ জনে দাঁড়িয়েছে।
বাঘাইছড়ি থানার সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল আওয়াল বুধবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তিনজনকে মৃত বলে জানান।
এর আগে বিকেলে সাজেকের উদয়পুর সীমান্ত সড়কের ৯০ ডিগ্রি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পুলিশের ভাষ্য, খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকের উদয়পুর সীমান্তবর্তী সড়ক নির্মাণের জন্য ডাম্প ট্রাকে ১৪ জন শ্রমিক জামান ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির সেতুর কাজে যাচ্ছিলেন। পথে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাহাড়ের ঢালে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে ছয়জনের মৃত্যু হয়।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিরিন আক্তার সাংবাদিকদের জানান, যেখানে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি খুবই দুর্গম এলাকা। আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ ও সেনাবাহিনী, তবে তাৎক্ষণিকভাবে কারও নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য