প্রতি বছরের মতো এবারও ঈদে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের ফল ও মিষ্টি পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের গজনবী রোডের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন কেন্দ্র (মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ার-১) এ বাসরত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব-২ গাজী হাফিজুর রহমান লিকু এবং প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব এবিএম সরওয়ার-ই-আলম সরকার এগুলো পৌঁছে দেন।
যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যরা এ সময় প্রতিটি রাষ্ট্রীয় দিবস এবং উৎসব যেমন স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, ঈদ এবং বাংলা নববর্ষে তাদের স্মরণ করায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন। সেই সঙ্গে তার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন।
আরও পড়ুন:সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের মৃত্যুতে বাংলাদেশে এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
শনিবার এই শোক পালন করা হবে বলে শুক্রবার সন্ধ্যায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এক প্রজ্ঞাপনে জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ‘শনিবার বাংলাদেশের সব সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোয় জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।’
প্রেসিডেন্ট শেখ খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের রুহের মাগফিরাত কামনা করে একই দিন বাংলাদেশের সব মসজিদে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
এ ছাড়া তার আত্মার শান্তি কামনায় অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানেও বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট এবং আবুধাবির শাসক শেখ খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ান ৭৩ বছর বয়সে শুক্রবার মারা গেছেন।
দেশটির প্রেসিডেন্টবিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মৃত্যুতে দেশজুড়ে ৪০ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে জাতীয় পতাকা রাখা হবে অর্ধনমিত। মন্ত্রণালয়সহ সব ধরনের অফিস বন্ধ থাকবে তিন দিন।
জায়েদ আল নাহিয়ান সংযুক্ত আরব আমিরাতের দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট। তিনি ২০০৪ সালের ৩ নভেম্বর থেকে প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি আবুধাবির শাসকের দায়িত্ব পালন করছিলেন।
আমিরাতের প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আরও পড়ুন:ডিভাইস-নির্ভর হয়ে ঢাকা শহরে ফ্ল্যাটে বসবাসরত শিশুরা দিনে দিনে ‘ফার্মের মুরগি’ হয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শিশুদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য তাদের মাঠে খেলার সুযোগ করে দিতে মা-বাবা, অভিভাবকের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
প্রতিটি এলাকায় খেলার মাঠ থাকা ‘একান্তভাবে প্রয়োজন’ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যেখানে খালি জায়গা পাওয়া যাচ্ছে, সেখানেই মাঠ করে দেয়া হচ্ছে।
ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বুধবার সকালে ২০১৩ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ক্রীড়া ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ৮৫ সংগঠক ও ক্রীড়াবিদের মাঝে ক্রীড়া পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন সরকারপ্রধান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবচেয়ে দুর্ভাগ্য হলো, ঢাকা শহরে খেলাধুলার জায়গা সবচেয়ে কম। ইতোমধ্যে আমরা কিছুটা উদ্যোগ নিয়েছি, প্রতিটি এলাকায় যেন খেলার মাঠ থাকে। আমাদের শিশুরা এখন তো সবাই ফ্ল্যাটে বাস করে, ফ্ল্যাটে বাস করে করে ফার্মের মুরগির মতো হয়ে যাচ্ছে।
‘এখন তো মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, আইপ্যাড এগুলো ব্যবহার করে সারাক্ষণ ওর মধ্যে পড়ে থাকা, এটা আসলে মানসিকভাবে, শারীরিকভাবে সুস্থতার লক্ষণ নয়। সে জন্যই বাবা-মা, যারা গার্ডিয়ান, অভিভাবক, তাদের আমি অনুরোধ করব কিছু সময়ের জন্য হলেও ছেলেমেয়েরা যাতে হাত-পা ছোঁড়ে খেলতে পারে, সেটা আপনাদের উদ্যোগ নেয়া উচিত।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রত্যেক এলাকায় খেলার মাঠ থাকা একান্তভাবে প্রয়োজন। ইতোমধ্যে আমরা কিছু উদ্যোগ নিয়েছে, যেখানে খালি জায়গা পাচ্ছি, খেলার মাঠ করে দিচ্ছি।’
প্রতিটি উপজেলায় খেলার মাঠ
দেশের প্রতিটি উপজেলায় ছোটো পরিসরে খেলার মাঠ নির্মাণে সরকারের নেয়া উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু নির্মাণকাজে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে বলে সতর্ক করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘সারা দেশে প্রতিটি উপজেলায় খেলার মাঠ, সেই খেলার মাঠগুলো খুব বড় স্টেডিয়াম না, ছোটো করে, মিনি স্টেডিয়াম আমি নাম দিয়েছি। কাজেই সেটার নির্মাণকাজ চলছে। এটা সময় নিচ্ছে। আমি মনে করি, এটা আরও দ্রুত শেষ করা দরকার। এ পর্যন্ত ১৮৬টি উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণকাজ শুরু করা হয়েছে।’
আরও ১৭১টি উপজেলায় শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘তবে আমি মনে করি, এ ব্যাপারে যথেষ্ট সময় নেয়া হচ্ছে, যাতে আর সময় নেয়া না হয়, সেটা দেখতে হবে।’
প্রতি জেলায় জেলায় স্টেডিয়ামগুলোকে শুধু ক্রিকেটের জন্য নির্দিষ্ট না করে, সব খেলার জন্য উন্মুক্ত করে দিতে মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘এই স্টেডিয়ামগুলো সব খেলার জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে। ক্রিকেটের জন্য পিচ তৈরি থাকবে, সেটা সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে।
‘স্টেডিয়ামগুলো যদি উন্মুক্ত করে দেয়া হয়, শুধু ক্রিকেট নয় সব ধরনের খেলাধুলা, স্পোর্টস সেখানে চলবে, নইলে ওটা পড়ে থাকে, নইলে অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়। সেটা যাতে না হয় সে ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে খেলাধুলার দিকে আমাদের ছেলেমেয়েরা আরও বেশি আগ্রহী হবে।’
খেলাধুলাকে এক ধরনের শরীরচর্চা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এতে শারীরিক, মানসিকভাবেও আমাদের ছেলেমেয়েরা যথেষ্ট উন্নত হবে।’
মাঠে নামতে হবে জয়ের মানসিকতা নিয়ে
প্রতিটি খেলায় জয়ের মানসিকতা নিয়ে ও আত্মবিশ্বাসী হয়ে মাঠে নামতে খেলোয়াড়দের প্রতি পরামর্শ রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, ক্রীড়াঙ্গনে আমাদের প্রতিটি খেলোয়াড়, সংগঠক, যারা আনুষঙ্গিক থাকেন, প্রত্যেকেই যদি মনে মনে সব সময় এই চিন্তাটা করেন যে আমরা যুদ্ধে বিজয়ী জাতি। বিজয়ী জাতি হিসেবে আমরা কখনো পরাজিত হব না, পরাজয় মেনে নেব না।
‘আমাদের জয়ী হতেই হবে। এই আত্মবিশ্বাসটা নিয়ে যদি মাঠে থাকা যায় যেকোনো খেলায়, যেকোনো ইসে আমরা জয়ী হতে পারি। কাজেই আমাদের মাঝে সেই আত্মবিশ্বাসটা সব সময় থাকতে হবে। সেটাই আমার আহ্বান।’
২০০৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ক্রীড়া ক্ষেত্রে সরকারের নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগ ও ক্রীড়াবিদদের সাফল্যের কথা উঠে আসে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে।
ক্রীড়া খাতে দেশের নারীরাও পিছিয়ে নেই বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের স্পোর্টস মিনিস্টারকে বলতে পারি, ফুটবল-ক্রিকেট সব ক্ষেত্রে নারীরা, কিন্তু অনেক পারদর্শিতা দেখাচ্ছে। তাদের একটু বেশি করে সুযোগ দিতে হবে এবং আরো উৎসাহিত করতে হবে।’
বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের জন্য আলাদা মাঠ
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের যারা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন, তাদের প্রশিক্ষণের জন্য সংসদ ভবনের পাশে যে মাঠ, সেটা আমরা নির্মাণের জন্য কাজ শুরু করেছি। বিশেষ চাহিদাসম্পন্নরা সেখানে খেলাধুলা করবে। সেখানে তাদের জন্য একটা অ্যাকাডেমি আমরা তৈরি করে দিচ্ছি।’
তাদের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতেও নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘কারণ তারাই সব থেকে বেশি সম্মান আমাদের জন্য নিয়ে এসেছে। তারা তাদের যথেষ্ট পারদর্শিতা দেখাতে সক্ষম হয়েছে।’
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ২১৬টি স্বর্ণ, ১০৯টি রৌপ্য ও ৮৪টি ব্রোঞ্জ পদক দেশের জন্য জিতেছেন বলে জানান বঙ্গবন্ধুকন্যা।
প্রধানমন্ত্রীর মতে, ‘তারা কিন্তু তাদের পারদর্শিতা আরও বেশি দেখাচ্ছে। আমাদের যারা সুস্থ, তারা যা পারছেন না, এরা কিন্তু আরও বেশি পারে। এটাই আমার ধারণা, আমি দেখতে পাচ্ছি।’
রক্ষা করতে হবে গ্রামীণ খেলা
দেশীয় ও গ্রামীণ জনপদের খেলাগুলোকে সংরক্ষণে পদক্ষেপ নিতেও তাগিদ দিয়েছেন সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘আমাদের গ্রামে অনেক খেলা আছে। গ্রামীণ খেলাগুলো কিছুটা চালু করা হয়েছে। সেগুলো সচল করতে হবে। যেগুলো খুব বেশি খরচ লাগে না, তারা নিজেরা খেলবে।
‘স্কুল প্রতিযোগিতা, আন্তঃকলেজ প্রতিযোগিতা, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতা- এই প্রতিযোগিতাগুলো যাতে ব্যাপকভাবে চলে সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা এ ব্যাপারে যথেষ্ট সহযোগিতা করে যাচ্ছি। যা যা প্রয়োজন সব করে দিচ্ছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দেশীয় খেলাগুলো ডাংগুলি থেকে শুরু করে সাত ছাড়া থেকে শুরু করে হাডুডু- সব খেলাই তো আমাদের দেশে ছিল। স্কুলে স্কুলে খেলা হতো। সেই খেলাগুলো এবং আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতা এগুলো করতে হবে।’
আহত ও অসচ্ছ্বল ক্রীড়াবিদের পাশে সরকার
বঙ্গবন্ধু ক্রীড়াসেবী আইন ২০১৫ প্রণয়নের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ক্রীড়াসেবী কল্যাণ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমাদের যারা অসচ্ছল বা কেউ খেলতে গিয়ে আহত হন বা অসুস্থ হন তাদের যেভাবেই হোক আমরা সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি এবং যতক্ষণ আমি আছি সেটা দিয়ে যাব। কিন্তু একটা প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতার ব্যবস্থায় ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে আমরা করতে চাই।’
আরও পড়ুন:ছোট্ট একটি শব্দ মা, অথচ কী বিশাল তার দায়িত্ব। মমতা, আশ্রয়, নিরাপত্তা, নিশ্চয়তা ও নির্ভরতা সবই রয়েছে এই একটি শব্দের মাঝে। এই মা-ই কঠোর পরিশ্রম এবং নিজের স্বপ্নের মাঝেই সুশিক্ষা দিয়ে সন্তানকে গড়ে তোলেন। এতে সন্তানরা দেশে-বিদেশে হয় আলোকিত। আন্তর্জাতিক মা দিবস উপলক্ষে এ বছর এমন ৩৮ সফল মাকে ‘রত্নগর্ভা মা’ অ্যাওয়ার্ড দেয়া হয়েছে।
রোববার রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে রত্নগর্ভা মা-২০২১-এর পুরস্কার তুলে দেন অতিথিরা। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আজাদ প্রোডাক্টস প্রাইভেট লিমিটেড এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, ‘এই দিনে সব মায়ের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। মায়ের কথা মনে করলেই চোখে পানি চলে আসে, কেন আসে আমি তা জানি না। এখানে আপনাদের মা আছে, আমার মা নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘নারীদের অগ্রযাত্রায় কাজ করে যাচ্ছেন আরেক মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগে স্কুল-কলেজে ছেলেরা প্রথম হতো, এখন মেয়েরা হচ্ছে। মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, নারীদের অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।’
৩৮ জনের মধ্যে ১৩ জনকে বিশেষ ও ২৫ জনকে সাধারণ ক্যাটাগরিতে অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।
বিশেষ ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পাওয়া রত্নগর্ভা ১৩ মা হলেন হামিদা বেগম, মাহমুদা বেগম, জাহানারা বেগম, সফুরা খাতুন, মাহমুদা খাতুন, মাইমুনা আক্তার খাতুন, মাজেদা বেগম, আশা বড়ুয়া, খালেদা খানম, মাফিয়া বেগম, জাহানারা হোসেন, নাজিমা বেগম ও জান্নাতুল ফেরদৌসী।
সাধারণ ক্যাটাগরিতে এবার পুরস্কার পেয়েছেন ২৫ মা। তারা হলেন আমেনা বেগম, লতিফা খানম, পুনুয়ারা বেগম, মর্জিনা সাখাওয়াত, সামসুন নাহার, আয়েশা খাতুন, রোকশানা আহম্মেদ, নাফিসা বেগম, ফারমিদা সাত্তার, সেলিমা খাতুন, রেহানা শফিক, অ্যাডভোকেট হাজেরা পারভীন, সুরাইয়া খানম, মাফিয়া আখতার, খোশনূর, পারুল বেগম, নাজমা আনিস, ফরিদা ইয়াসমিন, রওশনয়ারা বেগম, ওয়াজিফা খাতুন, সিদ্দিকা বেগম, শাতিল আবেদা, ফয়জুন্নেছা বেগম, মমতাজ খানম ও মমতাজ বেগম। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী মুস্তফা মনোয়ারকে মাই ড্যাড ওয়ান্ডারফুল সম্মাননা প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে অনুভূতি ব্যক্ত করেন রত্নগর্ভা মা সামসুন নাহারের মেয়ে নাঈনা তাবাসসুম, সফুরা খাতুনের মেয়ে উম্মে মুসলিমা, মাইমুনা আক্তার খাতুনের ছেলে ইঞ্জিনিয়ার মো. এনায়েতুর রহমান, রওশন আরা বেগমের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান, ২০১৮ সালে রত্নগর্ভা পুরস্কারপ্রাপ্ত ড. পারভীন হাকিম আনোয়ারসহ অনেকে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশেষ অতিথি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খান, চিত্রশিল্পী মুস্তফা মনোয়ার, ঢাকা ক্লাবের সভাপতি খন্দকার মশিউজ্জামান ও আজাদ প্রোডাক্টস প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ।
আরও পড়ুন:নিজেদের দেশের বা নিজের কারখানার সমস্যা নিয়ে বিদেশিদের কাছে নালিশ দেয়ার প্রবণতায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ কারও কাছে হাত পেতে নয় বরং আত্মমর্যাদা নিয়ে চলবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নিজেদের সমস্যা নিজেরা সমাধান করতে পারি।’
শ্রমিকনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘বিদেশিদের কাছে গিয়ে কান্নাকাটি না করে আপনাদের যদি সমস্যা থাকে আমার কাছে আসবেন। আমি শুনব। মালিকদের দিয়ে যদি কিছু আদায় করতে হয়, তা আমি আদায় করে দেব। আমি পারব, এ কথা আমি বলতে পারি।’
শ্রমিক কল্যাণে গঠিত শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে অনেক মালিক নিয়মিত অর্থ জমা না দেয়াকেও ‘দুঃখজনক’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।
ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে রোববার সকালে ‘মহান মে দিবস ২০২২’ উদযাপনে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন সরকারপ্রধান। গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যে শ্রমিকদের জন্য এত কাজ করেছি, তারপরেও আমরা দেখি যে আমাদের দেশে কিছু কিছু শ্রমিকনেতা আছেন, তারা কোনো বিদেশি বা সাদা চামড়া দেখলেই তাদের কাছে নালিশ করতে খুব পছন্দ করেন। আমি জানি না এই মানসিক দৈন্যতাটা কেন?
‘এর সঙ্গে কি অন্য কোনো স্বার্থ জড়িত আছে? কোনো দেনাপাওনার ব্যবস্থা আছে? সেটা আমি জানি না।’
নিজেদের সমস্যা নিজেরা সমাধানের সুযোগ আছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে কোনো সমস্যা হলে অন্তত আওয়ামী লীগ সরকার যতক্ষণ ক্ষমতায় আছে, অন্তত আমি যতক্ষণ ক্ষমতায় আছি, এই নিশ্চয়তা দিতে পারি যেকোনো সমস্যা আমরা সমাধান করতে পারি নিজেরা।
‘আর এটা আমি বিশ্বাস করি, আমাদের দেশে মালিক এবং শ্রমিক তারা নিজেরা বসে আলোচনা করে সমস্যাগুলো সমাধান করবেন। আমরা নিজের দেশের বিরুদ্ধে বা নিজের দেশের সম্পর্কে অন্যের কাছে কেন কাঁদতে যাব, বলতে যাব। আমরা তো এটা চাই না।’
বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সমস্ত উন্নয়ন প্রকল্প, যে সমস্ত উন্নয়ন প্রকল্প একসময় সম্পূর্ণ বিদেশি অনুদানে বা বিদেশি সহযোগিতায় নির্ভরশীল ছিল আজকে আমাদের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির ৯০ ভাগ আমরা নিজেদের অর্থায়নে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হচ্ছে পদ্মা সেতু। নিজেদের অর্থায়নে সম্পূর্ণ বাংলাদেশ সরকারের টাকায় এই পদ্মা সেতু আমরা নির্মাণ করেছি।’
কল্যাণ ফাউন্ডেশনে অর্থ জমা না দেয়া দুঃখজনক
শ্রমিকের কল্যাণে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেখানে আমি বলব, মালিকদের যেটা এখানে নির্দিষ্ট রয়েছে যে, একটা পার্সেন্টেজ তারা এখানে জমা দেবেন। এটা অনেকে দেন না, এটা খুব দুঃখজনক।
‘আমি মনে করি এটা যথাযথভাবে দেয়া উচিত। কারণ একজন যখন কেউ বিপদে পড়ে, তার পাশে দাঁড়াতে হবে। যার শ্রমের ফসল ভোগ করবেন, অথচ তার দুর্দিনে পাশে থাকবেন না, এটা হতে পারে না। কাজেই সেই বিষয়টা সবাইকে দেখতে হবে।’
শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো, কর্মপরিবেশ উন্নত ও নিরাপদ করা, শ্রমিক কল্যাণে নানা উদ্যোগসহ সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। খেটে খাওয়া মানুষের জীবনমান উন্নয়নই আওয়ামী লীগের লক্ষ্য বলে জানান তিনি।
উন্নয়নে দরকার মালিক-শ্রমিক সৌহার্দ্য
‘শ্রমিক-মালিক একতা, উন্নয়নের নিশ্চয়তা’ প্রতিপাদ্য নিয়ে এবার পালিত হয়েছে মহান মে দিবস।
এ প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান বলেন, ‘শ্রমিক-মালিক উভয়ই সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলবেন, সেটাই আমি চাই। আপনারা যে প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়েছেন, সেটা আমি মনে করি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই এই প্রতিপাদ্যকে নিয়ে কিন্তু আপনারা এগিয়ে যেতে পারবেন, সেটাই আমি মনে করি। শ্রমিক-মালিক একতা, উন্নয়নের নিশ্চয়তা। কাজেই শ্রমিক-মালিকদের মধ্যে যদি সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক না থাকে তাহলে কখনই উন্নয়ন হয় না।’
সারা বিশ্বের ১০টি গ্রিন কারখানার মধ্যে সাতটি বাংলাদেশের জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশকে উন্নত করতে হলে আমি মনে করি শ্রমিকশ্রেণির অবদানটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’
মালিকের পুঁজি এবং শ্রমিকের শ্রমে কারখানা চালু থাকে এবং উৎপাদন বাড়ে, দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধশালী হয় বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘সে ক্ষেত্রে আমি বলব যে, কোনো একটি প্রতিষ্ঠান চালাতে গেলে সবার একটা দায়িত্ব থাকে। মালিকের যেমন দায়িত্ব থাকবে শ্রমিকের ওপর, শ্রমিকের দায়িত্ব থাকবে মালিকের ওপর।
‘যে কারখানা তাদের রুটি-রুজির ব্যবস্থা করে, খাদ্যের ব্যবস্থা করে, জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে, সেগুলো যেন ভালোভাবে সচল থাকে সেটা যেমন শ্রমিকের দেখার দায়িত্ব, আবার মালিকদেরও এটা দেখার দায়িত্ব, শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য মজুরি পাচ্ছেন কি না, তাদের জীবনমান উন্নত হচ্ছে কি না বা তারা ভালোভাবে কাজ করতে পারছেন কি না বা কাজের পরিবেশটা তারা পাচ্ছে কি না, সেটাও কিন্তু দেখতে হবে। তাহলে উৎপাদন বাড়বে, মালিক লাভবান হবেন, দেশও লাভবান হবে, শ্রমিকরাও লাভবান হবেন। এটা সব সময় সবার মনে রাখা উচিত বলে আমি মনে করি।’
পরিবেশ সুরক্ষিত রেখে দেশে শিল্পায়ন করা হচ্ছে বলে জানান সরকারপ্রধান। বলেন, ‘ভৌগোলিক সীমারেখায় বাংলাদেশটা ছোট। কিন্তু জনসংখ্যার দিক থেকে বড়। কাজেই সবার জন্য অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষাসহ সব ব্যবস্থাই আমাদের করতে হবে। সেটা আমরা করে যাচ্ছি।’
তিন বছরে দূর করা হবে শিশুশ্রম
২০২৫ সালের মধ্যে দেশে কোনো শিশুশ্রম থাকবে না বলে অঙ্গীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘এখানে একটু ব্যতিক্রম আছে। সেটা হচ্ছে, কিছু কিছু ট্র্যাডিশনাল কাজ থাকে সেগুলো যদি ছোটবেলা থেকে রপ্ত না করে, তাহলে তাদের পৈতৃক যে কাজগুলো, ব্যবসাগুলো সেগুলো চালু থাকবে না।’
তবে সেগুলো কোনো ঝুঁকিপূর্ণ কাজ নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে হাতে-কলমে কিছু শিক্ষা, কিন্তু সেটা কোনো ঝুঁকিপূর্ণ না। ঝুঁকিপূর্ণ কোনো কাজে কোনো শিশুকে ব্যবহার করা যাবে না। সেটা আমরা বন্ধ করেছি। কিন্তু তাদের ট্র্যাডিশনাল ট্রেনিং যেগুলো, সেগুলো তাদের বাবা-মার সঙ্গে বসে বসে তারা করতে পারে।’
উদাহরণ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী সামনে আনেন তাঁতে শাড়ি বোনার কথা। তিনি বলেন, ‘এই শাড়ি বুনন যদি ছোটবেলা থেকে না শেখে, বড় হলে কিন্তু পারবে না। কারণ, এসব সুতা কিন্তু একটা একটা করে গোনা যায় না। তারা কিন্তু আঙুলের অনুভূতি দিয়ে এই হিসাবটা নেয়। এ রকম ট্র্যাডিশনাল কাজগুলো তারা শিখুক, কিন্তু সেগুলো ঝুঁকিপূর্ণ না।’
নির্বিঘ্ন ঈদযাত্রায় সন্তুষ্টি
ঈদে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের বাড়িমুখো হওয়ার প্রসঙ্গটিও উঠে আসে সরকারপ্রধানের বক্তব্যে।
তিনি বলেন, ‘এবার নিরবচ্ছিন্নভাবে সবাই যার যার বাড়ি যেতে পেরেছেন এবং ফিরে আসতে পেরেছেন। আমরা যোগাযোগব্যবস্থায় সে রকমই উন্নতি করে দিয়েছি।
‘প্রত্যেকটা শ্রমিক মজুরিটা ঠিকমতো পেয়েছেন। যারা হয়তো দিতে পারেননি, কিছু দিয়েছেন, আগামীতে দেবেন।’
পোশাক খাতে নারী শ্রমিকের সংখ্যা বেশি হওয়ায় চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জে শ্রমজীবী নারী হোস্টেল নির্মাণ করা হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
বলেন, ‘আমরা আরেকটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমাদের উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত যত হাসপাতাল আছে, সেখানে যারা আমাদের ডাক্তাররা যোগ দেন, তাদের জন্য কিন্তু ডরমেটরি নির্মাণ করা হচ্ছে বা তাদের ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হচ্ছে। সেখানে যাতে ভালোভাবে থাকতে পারেন, সে ব্যবস্থাটাও আমরা নিচ্ছি।’
আর্থিক সহায়তা
মে দিবসের আয়োজনে ১০ শ্রমিক ও তাদের পরিবারকে দেয়া হয় আর্থিক সহায়তা। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সবার হাতে চেক তুলে দেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান।
জটিল কিডনি রোগের চিকিৎসায় শ্রমিক রমিজ উদ্দিন আহমেদকে দেয়া হয় ১ লাখ টাকার আর্থিক সহযোগিতা। দুই মৃত শ্রমিকের পরিবারকে দেয়া হয় দুই লাখ টাকা করে। দুই শ্রমিকের মেধাবী সন্তানদের শিক্ষাসহায়তা হিসেবে দেয়া হয় ৫০ হাজার টাকা করে। রপ্তানিমুখী শিল্পের মৃত ৫ শ্রমিকের পরিবারকে দেয়া হয় ২ লাখ টাকা করে।
আরও পড়ুন:২৫শে বৈশাখ মানেই গ্রীষ্মের উত্তপ্ত দিনে নানা আয়োজনে কবিগুরুকে স্মরণ। এবারে দেশের নানা জায়গায় বৃষ্টির কারণে খরতাপ নেই। তবে বৃষ্টি বন্ধ করতে পারেনি কোনো আয়োজন।
নওগাঁর আত্রাই উপজেলার মনিয়ারী ইউনিয়নের পতিসরে এবং সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দুই কাচারিবাড়িতে উদযাপিত হচ্ছে তার ১৬১তম জন্মবার্ষিকী।
নওগাঁয় কাচারিবাড়ি প্রাঙ্গণে রোববার সকাল ১০টার দিকে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং ফেস্টুন ও কবুতর উড়িয়ে জন্মোৎসব উদ্বোধন করেন।
কয়েকটি পর্বে সাজানো হয়েছে পুরো দিনের আয়োজনকে। এর মধ্যে আছে চিত্র প্রদর্শনী, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
প্রথম পর্বে ‘রং-তুলিতে রবীন্দ্রনাথ’ শীর্ষক চিত্র প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন মন্ত্রী। এই প্রদর্শনীতে অংশ নেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী ও নওগাঁ শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা।
এরপর দেবেন্দ্র মঞ্চে ‘মানবতার সংকট ও রবীন্দ্রনাথ’ প্রতিপাদ্য নিয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান।
এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন নওগাঁ ৩ আসনের সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দিন তরফদার, ৬ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন হেলাল ও জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান মিয়া।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যের একজন দিকপাল। বাঙালির জীবনে নানা অনুষঙ্গে রবীন্দ্রনাথ এখনও প্রাসঙ্গিক। বাঙালি জীবনের যত বৈচিত্র্য আছে তার পুরোটাই উঠে এসেছে কবিগুরুর কবিতা, গান, গল্প, প্রবন্ধ ও উপন্যাসে।
‘কবিগুরু তার লেখনীতে মানবতার সংকট থেকে উত্তরণের নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। রবীন্দ্র সাহিত্য চর্চা করলে মানবজীবনের নানা সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব।’
শাহজাদপুরে কাচারিবাড়ি মিলনায়তনে আয়োজন করা হয়েছে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শুধু একজন কবি নন, তিনি একজন মহাপুরুষ। আমার মতো মানুষের কবিকে নিয়ে বক্তব্য দেয়া দুঃসাধ্য ব্যাপার। রবীন্দ্রনাথ একজন জমিদার বংশের লোক হয়ে সাধারণ মানুষের জন্য ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ।
‘আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্বকবিকে বুকে ধারণ করেছিলেন বলেই তিনি সাধারণ মানুষকে ভালোবাসতেন, গান ভালোবাসতেন, কবিতাকে ভালোবাসতেন। আমরা যদি রবীন্দ্রনাথকে মনেপ্রাণে ধারণ করতে পারতাম তাহলে আমাদের অবস্থান আরও উন্নত শিখরে থাকত।’
আমাদেরও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনকে অনুসরণ করে জীবন গড়ে তোলা উচিত বলে মন্তব্য করেন প্রতিমন্ত্রী।
এই আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক ফারুক আহাম্মদ এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন সিরাজগঞ্জ ৬ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক মেরিনা জাহান কবিতা।
আরও পড়ুন:‘ওগো মা তুমি শুধু মা/পৃথিবীতে নেই তুলনা।’
দ্বৈত কণ্ঠে গাওয়া গানের উল্লিখিত দুটি লাইনে মায়ের অতুলনীয় অবস্থান তুলে ধরেছিলেন জনপ্রিয় শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন ও খালিদ হাসান মিলু।
যুগে যুগে তাদের মতো অনেক শিল্পী গেয়েছেন মায়ের স্তুতি। সাহিত্যিক, দার্শনিকের লেখনী, বাণীতে উঠে এসেছে মায়ের অবস্থান। সে পরম্পরা রয়েছে; থাকবে চিরকাল।
এ কারণে মায়েদের প্রতি আবেগ, ভালোবাসা প্রকাশের জন্য দিনক্ষণ দরকার হয় না। মানুষ তবুও আনুষ্ঠানিকতা ভালোবাসে। যেকোনো বিষয় উদযাপনকে স্থায়ী করতে বেছে নেয় বিশেষ কোনো দিন।
সে জায়গা থেকে মায়ের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের জন্য বিশ্বজুড়ে উদযাপন করা হয় ‘মা দিবস’। বিশেষ এ দিনে মা ও মাতৃস্থানীয়দের প্রতি আবেগের বহিঃপ্রকাশ দেখা যায় দেশে দেশে। যদিও সেটি একই সময়ে হয় না।
সময় ও দিবসকেন্দ্রিক ওয়েবসাইট টাইম অ্যান্ড ডেট ডটকমের প্রতিবেদনে জানানো হয়, এ বছর মের দ্বিতীয় রোববার (৮ মে) মা দিবস উদযাপন করছে ৪৬টি দেশ। এর আগে মাসের প্রথম রোববার (পয়লা মে) মা দিবস উদযাপন করে চার দেশ।
চলতি বছরের ৮ মার্চ দিবসটি উদযাপন হয় তিনটি দেশে। অন্যদিকে ১০ মে দুটি এবং ২৯ মে ছয়টি দেশ উদযাপন করবে মা দিবস।
কীভাবে হয় উদযাপন
দেশ ও সংস্কৃতিভেদে মা দিবস উদযাপনে ভিন্নতা দেখা যায়। দিনটিতে নানা বয়সী মানুষ মা ও মাতৃস্থানীয়দের স্মরণ করেন। মাতৃস্থানীয় বলতে বোঝায় সৎমা, শাশুড়ি কিংবা মাতৃতুল্য কোনো অভিভাবক।
তাদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশে পশ্চিমা দেশগুলোতে কার্ড, ফুল বা কেক উপহারের প্রচলন আছে। বাংলাদেশেও এর চল আছে।
পারিবারিক জমায়েত বা মায়েদের দেখতে যাওয়ার বিষয়টিও বিভিন্ন দেশে বা সংস্কৃতিতে রয়েছে। এর বাইরে দিবসে মাকে সঙ্গে নিয়ে ঘরে কিংবা বাইরে নাস্তা, দুপুর বা রাতের খাবার খেয়ে থাকেন অনেকে। যেসব সন্তান দূরে থাকেন, তারা মা বা মাতৃতুল্যদের ফোন কল করে থাকেন।
মা দিবসকে কেন্দ্র করে কবিতা ও খুদেবার্তার প্রচলনও দীর্ঘদিনের। এর বাইরে চকলেট, স্বর্ণালংকার, দরকারি সামগ্রী, জামা-কাপড়, শখের জিনিস, হাতে তৈরি সামগ্রী উপহার দেয়ার বিষয়টিও নতুন নয়।
কোন দেশে কখন মা দিবস
অস্ট্রেলিয়া, কানাডা কিংবা যুক্তরাষ্ট্রে মের দ্বিতীয় রোববার মা দিবস উদযাপন হয়। যুক্তরাজ্যে দিবসটি উদযাপন হয় ইস্টার সানডের ঠিক তিন সপ্তাহ আগে। এসব দেশে রোববার সাধারণত স্কুল কিংবা কর্মস্থল খোলা থাকে না।
কিছু কিছু দেশে মা দিবসে ছুটি থাকে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কোস্টারিকায় ১৫ আগস্ট মা দিবস উদযাপন করা হয়। ওই দিন রাষ্ট্রীয় ছুটি থাকে।
জর্জিয়ায় ৩ মার্চ, সামোয়ায় মের দ্বিতীয় সপ্তাহ এবং থাইল্যান্ডে ১২ আগস্ট মা দিবসের ছুটি থাকে। দিনগুলোতে এসব দেশের রেস্তোরাঁয় ভিড় লেগে থাকে।
দিবসের শুরু যখন
কিছু সূত্রের বরাত দিয়ে টাইম অ্যান্ড ডেট ডটকম জানায়, প্রাচীন গ্রিক সভ্যতায় স্রষ্টাদের জননী রিয়ার স্মরণে উদযাপন হওয়া বসন্ত উৎসব থেকে মা দিবসের সূচনা। পরবর্তী সময়ে যুক্তরাজ্যে ‘মাদারিং সানডে’ নামের একটি দিবস উদযাপন হয়।
ওই দিবসে দীক্ষা নেয়া গির্জায় যেত খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীরা। বর্তমান সময়ে দিনটিতে মাতৃত্বও উদযাপন করা হয়।
আধুনিককালে মা দিবস উদযাপনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে দুই নারীর নাম। তারা হলেন জুলিয়া ওয়ার্ড হোয়ে ও অ্যানা জারভিস। যুক্তরাষ্ট্রে দিবসটির সূচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তাদের।
১৮৭০ সালের দিকে জুলিয়া ওয়ার্ড প্রতি বছর মা দিবস উদযাপনের ডাক দেন। তার নেতৃত্বে প্রায় ১০ বছর বোস্টনে দিবসটি উদযাপন হয়। এর পর আর সেটি চালু থাকেনি।
অন্য কিছু সূত্র জানিয়েছে, অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম দশকে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানের আলবিয়নে মা দিবসের প্রচলন করেন জুলিয়েট ক্যালহুন ব্লেকলি। ছেলেরা প্রতি বছর তাকে সম্মান জানাতেন এবং অন্যদেরও মায়েদের প্রতি সম্মান জানাতে বলতেন।
১৯০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার গ্র্যাফটনে মা অ্যান জারভিসের স্মরণে ব্যক্তিগত পরিসরে মা দিবস উদযাপন করেন অ্যানা জারভিস। ১৯০৮ সালে চার্চে একটি আয়োজনে বড় ভূমিকা রাখেন তিনি। সে আয়োজনে যুক্ত হয় ৪০৭ শিশু ও তাদের মায়েরা।
১৯১২ সালে প্রতিষ্ঠা হয় মাদার’স ডে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন। এ সংস্থার লক্ষ্য ছিল যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে অন্য দেশে উদযাপন ছড়িয়ে দেয়া। সে বছর থেকে বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয়তা পেতে থাকে মা দিবস।
আরও পড়ুন:কুষ্টিয়ায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শুরু হচ্ছে তিন দিনের জাতীয় অনুষ্ঠান। থাকছে গ্রামীণ মেলারও আয়োজন।
কবির স্মৃতিবিজড়িত শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে রোববার দুপুর আড়াইটা থেকে শুরু হচ্ছে এ আয়োজন।
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে তিন দিনের এ বর্ণিল অনুষ্ঠানমালা চলবে।
প্রতিদিন আলোচনা ছাড়াও থাকছে রবীন্দ্রনাথের কবিতা আবৃত্তি, গান ও নাটক প্রদর্শন। অনুষ্ঠানের জন্য কুঠিবাড়ির মূল চত্বরের ভেতর বিশাল মঞ্চ প্রস্তুত করা হয়েছে।
এ অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করবেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। আর কুঠিবাড়ির বাইরে বিশাল মাঠে বসেছে গ্রামীণ মেলা। এটিও চলবে তিন দিন।
আয়োজন নিয়ে তরুণ রবীন্দ্র গবেষক রেফুল করিম বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৯১ সালে প্রথম কুষ্টিয়ার শিলাইদহে ছায়াশীতল নিরিবিলি এ কুঠিবাড়িতে আসেন। জমিদারি পরিচালনার উদ্দেশ্যে আসলেও রবীন্দ্রনাথ পুরোটা সময় মগ্ন ছিলেন সাহিত্য রচনায়। তিনি গীতাঞ্জলির অধিকাংশ কাব্য এখানে বসে রচনা করেছেন।
‘আর বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতও রচনা করেন এ কুঠিবাড়িতেই। পদ্মাপারের এই শিলাইদহ গ্রামের চিত্র ধরেই তিনি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের পট এঁকেছিলেন।’
রেফুল আরও বলেন, ‘এই এলাকার প্রজারা রবীন্দ্রনাথকে খুব ভালোবাসতেন। এই কুঠিবাড়িকে তারা ঠাকুরবাড়ি হিসেবে শ্রদ্ধা করতেন। কুঠিবাড়িতে তিনি হিন্দু-মুসলিম সবাইকে এক কাতারে বসিয়েছেন। কৃষকদের জন্য ক্ষুদ্রঋণের ব্যবস্থা চালু করেছিলেন।
‘তাই রবীন্দ্রনাথের জন্মদিনে প্রতি বছর শিলাইদহে মানুষের ঢল নামে। প্রাণের মানুষ, মনের মানুষ রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন স্মৃতিচিহ্ন যা আছে, কুঠিবাড়ির ভেতর ঘুরে ঘুরে দেখেন দর্শনার্থীরা। এত বছর পরও সাহিত্য ও দর্শনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সমান প্রাসঙ্গিক।’
করোনায় গত দুই বছর কোনো অনুষ্ঠান না হওয়ায় এবার রবীন্দ্রপ্রেমীদের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যেতে পারে কুঠিবাড়িতে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য