গত দুই বছর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেশি হওয়ায় অধিকাংশ মানুষই ঈদ উদযাপন করেছেন প্রিয়জনের সান্নিধ্য ছাড়া। এ সময় সড়ক, রেল ও নৌপথের মতো আকাশপথেও যাত্রী চাপ ছিল তুলনামূলক কম। তবে করোনা মহামারির ধাক্কা সামলিয়ে ওঠার পর এবার স্রোতের মতো রাজধানী ছাড়ছে মানুষ। পথের ভোগান্তি কমাতে তাই আকাশপথে ভরসা রাখছেন সামর্থ্যবানরা।
এয়ারলাইনসগুলো বলছে, এবার ঈদকে সামনে রেখে আকাশপথে রাজধানী ছাড়ছেন প্রায় ৪০ হাজারের মতো মানুষ। মূলত গত ২৮ এপ্রিল থেকে ১ মে পর্যন্ত এই চারদিনকে ধরা হচ্ছে ঈদ যাত্রা। শুধু এই চারদিনেই আকাশপথে ঢাকা ছাড়ছেন ২৫ থেকে ৩০ হাজার।
এর আগের সপ্তাহেও পরিবার নিয়ে অনেকে ঢাকা ছেড়েছেন বলে জানাচ্ছে এয়ালাইনসগুলো।
এ বছর ঈদ হতে পারে ৩ মে। সরকারি ক্যালেন্ডারে ঈদের ছুটি দেখানো আছে ২, ৩ ও ৪ মে। এ ছুটি শুরুর আগে দুই দিন সাপ্তাহিক বন্ধ। এ কারণে ঈদের ছুটি শুরু হয়েছে ২৯ এপ্রিল।
এ ছাড়া ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের বন্ধ থাকায় সেই ছুটিও এর সঙ্গে যোগ হতে যাচ্ছে। ফলে ঈদের ছুটিতে দূরে কোথাও যেতে চাওয়া লোকজন উপভোগের জন্য ছয়টি দিন পাবেন।
এই ছুটির পরে ৫ মে বৃহস্পতিবার। আর ৬ ও ৭ মে সাপ্তাহিক বন্ধ। কেউ বৃহস্পতিবার ছুটি নিয়ে নিলে আরও তিন দিন অতিরিক্ত ছুটি কাটানোর সুযোগ পাবেন। সে ক্ষেত্রে তিনি ঈদের ছুটি উপভোগ করতে পারবেন নয় দিন।
লম্বা ছুটির কারণে ঈদে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার পাশাপাশি বিনোদন কেন্দ্রগুলোতেও এ বছর বাড়তি চাপ পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এয়ারলাইনসগুলো আগে থেকেই জানিয়ে আসছে, ২৮ এপ্রিল থেকে ১ মের টিকিটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি।
ইউএস বাংলা এয়ারলাইনসের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত ২৮ এপ্রিল থেকে ১ মে পর্যন্ত টিকিটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি ছিল। এ সময়ে আমরা ধারণা করছি তিনটি এয়ারলাইনস (ইউএস বাংলা, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ও নভোএয়ার) মিলিয়ে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার মানুষ ঢাকা ছাড়ছেন।
‘আর সব মিলিয়ে ঈদ করতে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছেন প্রায় ৪০ হাজার মানুষ।’
তিনি বলেন, ‘গত দুই বছরের হিসাব বাদ কোভিড পরিস্থিতির কারণে। কোভিড পূর্ববর্তী ২০১৯ সালের কথা যদি আমরা বলি, সে সময়ে যে যাত্রী ছিল আমার কাছে মনে হয়েছে এ বছর তার চেয়ে যাত্রী কিছুটা কম। অর্থাৎ আমরা প্রতি বছর যে গ্রোথটা দেখি, এটা এ বছর হয়নি।
‘এর কারণ হতে পারে, এ বছর সড়ক ও রেলে প্রচুর মানুষ রাজধানী ছেড়েছেন।’
এসবের পাশাপাশি উড়োজাহাজের জ্বালানি জেট ফুয়েলের দাম গত কয়েক মাসে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ার কারণে আভ্যন্তরীণ গন্তব্যে ভাড়াও বেড়েছে আগের চেয়ে বেশি। এর ফলে আকাশপথের টিকিটের দাম অনেকেরই হাতের নাগালের বাইরে চলে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:রাজধানীতে পৃথক ঘটনায় অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব খুইয়েছেন দুই ব্যক্তি। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে স্টমাক পরিষ্কার করার পর তাদেরকে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
গেন্ডারিয়ার কাঠেরপুল এলাকায় মঙ্গলবার দুপুরের দিকে যাত্রীবাহী বাসে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েন মিজানুর রহমান নামে এক ব্যক্তি। তিনি নওগাঁর পোরশা সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ। অচেতন অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে বিকেল ৩টার দিকে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনার পর স্টমাক ওয়াশ করে মেডিসিন ওয়ার্ডে পাঠানো হয়।
সহকর্মী ইলিয়াস বলেন, ‘মিজানুর রহমান নওগাঁর পোরশা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত। ঢাকায় এসে মোহাম্মদপুর থেকে একটি বাসে করে দরকারি কাজের জন্য বের হন। পরে ওই বাসে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা তাকে সুকৌশলে অজ্ঞান করে তার কাছে থাকা একটি স্মার্টফোন ও একটি ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাই। তাকে নতুন ভবনের মেডিসিন ওয়ার্ডের ৭০১ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি দেয়া হয়েছে। তার গ্রামের বাড়ি নওগাঁর পোরশা উপজেলায়।’
অপর ঘটনায় যাত্রাবাড়ীর সাদ্দাম মার্কেটে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েন এক ব্যবসায়ী। তাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়ার পর স্টমাক ওয়াশ করে ভর্তি করে নেয়া হয়।
সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টায় এ ঘটনা ঘটে। তাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে যাত্রীবাহী বাসের চালক ও কন্ডাক্টর ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করে চলে যান। পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে তার স্ত্রী হালিমা বেগম ঢাকা মেডিকেলে এসে স্বামীকে শনাক্ত করেন।
হালিমা বেগম জানান, তার স্বামীর নাম জাহিদ হোসেন। তিনি গার্মেন্টস এক্সেসরিজের ব্যবসা করেন। আশুলিয়ার বলিভদ্র বাজার এলাকায় তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তিনি সকাল ৯টার দিকে গাজীপুরের শ্রীপুরের বাসা থেকে বের হন।
তিনি বলেন, ‘তিনি আমার থেকে এক লাখ টাকা নিয়ে আসেন। তার কাছে আরও ৩৫ হাজার টাকা ছিল। এই টাকা সাভারের নবীনগরে এক ব্যবসায়ীকে দেয়ার কথা। তিনি সকাল ১১টায় আশুলিয়ার বলিভদ্র বাজার থেকে ঠিকানা পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন নবীনগর যাওয়ার উদ্দেশ্যে। পথে বাসে তিনি প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়েন।
‘আমাদের বাড়ি নীলফামারী জেলায়। বর্তমানে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নতুন নগর এলাকায় বসবাস করি।’
ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ (পরিদর্শক) বাচ্চু মিয়া এসব ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
আরও পড়ুন:বান্দরবানের লামায় আগুন লাগিয়ে ম্রো ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর জুমভূমি দখলের অভিযোগ উঠেছে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এই অভিযোগ করেন পার্বত্য অঞ্চলকেন্দ্রিক একাধিক সংগঠন।
চট্টগ্রামস্থ সচেতন নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক ভুলন ভৌমিক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নে ম্রো ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ৪০০ একরের অধিক জুমভূমি এবং ফলদ বাগান আগুনে জ্বালিয়ে দিয়েছে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ।
‘চট্টগ্রামস্থ সচেতন নাগরিক সমাজ’, ‘হিল কালচারাল ফোরাম’ ও ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবার’- এই তিন সংগঠন মিলে ১৪ মে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতা পেয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ভুলন ভৌমিক বলেন, ‘পাহাড় পুড়িয়ে দেয়ায় ম্রো ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ৩৯টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে লাংকম পাড়ার ১২ পরিবারের ৭০ জন, জয়চন্দ্র পাড়ার ১৬ পরিবারের ৮৭ জন এবং রেঙয়েংপাড়ার ১১ পরিবারের ৬৮ জন রয়েছে৷ তারা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে এসব পাহাড়ে ভোগদখলীয় জমিতে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছে।’
তিনি বলেন, ‘১৯৯৩-৯৪ সালে লামার সরই ইউনিয়নের ডলুছড়ি ও সরই মৌজায় মোট ৬৪ জনকে ২৫ একর করে মোট এক হাজার ৬০০ একর জায়গা রাবার চাষের জন্য ৪০ বছরের জন্য ইজারা দেয় জেলা প্রশাসন। এ সময় ইজারাদারদের ২৮টি শর্ত দেয়া হয়েছিল। এর মধ্যে অন্যতম শর্ত হচ্ছে, ইজারা চুক্তির ১০ বছরের মধ্যে বাবার বাগান সৃজন না করলে ইজারা বাতিল হয়ে যাবে।
‘কিন্তু ২৯ বছর পর এসে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ম্রো ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ৪০০ একর জুমভূমি ও ফলদ বাগান দখলের চেষ্টা করছে, যা আইনবহির্ভূত ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন।’
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘আগুনে লক্ষাধিক ফলদ ও বনজ চারা, ৭ একর ধানি জমি ও প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো বাঁশ বাগান পুড়ে গেছে। অথচ এসবই ওই এলাকার মানুষের জীবিকার মাধ্যম।
‘গত ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে ১৭০ থেকে ২০০ জন রোহিঙ্গা শ্রমিক দিয়ে ৪০০ একর বনের গাছপালা কেটে পরিষ্কার করা হয়। এ সময় অবৈধভাবে বন কাটায় বাধা দিতে চাইলে কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গা শ্রমিকদের দিয়ে ভয় দেখায়। গাছ-গাছালি কাটার পর ২৬ এপ্রিল জুমে আগুন দেয় তারা। এতে ৩৯টি পরিবার চরম খাদ্য সংকটে পড়ে।’
রাবার কোম্পানির লোকজনের ভয়ে তিন পাড়ার মোট ৩৫ জন শিক্ষার্থী স্কুলে যেতে পারছে না বলেও অভিযোগ করেন ভুলন ভৌমিক।
সংবাদ সম্মেলনে সরকারের কাছে ৭টি দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো- ম্রো ও ত্রিপুরাদের জুম চাষের ৪০০ একর ভূমি অবিলম্বে ফিরিয়ে দিতে হবে। আগুনে ক্ষতিগ্ৰস্ত ফলদ ও বনজ বাগান, ধানের খেত এবং শ্মশানভূমির ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দ্রুত প্রত্যাহার করতে হবে।
এ ছাড়া ভূমি দখলদারদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করতে বিভিন্ন ফলদ গাছের চারা বিতরণসহ প্রয়োজনীয় কৃষি সহযোগিতা দিতে হবে, আতঙ্কিত পাড়াবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং ম্রো ও ত্রিপুরা শিক্ষার্থীদের নিরাপদে স্কুলে যাওয়া নিশ্চিত করতে হবে।
লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের প্রকল্প পরিচালক কামাল উদ্দিন এ বিষয়ে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওই এলাকাটি ১৯৯৩ থেকে ৯৫ সালের মধ্যে জেলা প্রশাসন থেকে আমরা কয়েকজন মিলে ইজারা নিয়েছিলাম। পরে কাজের সুবিধার্থে সবাই মিলে একটি কোম্পানি করেছি। আমরা লিজ নেয়ার পর ওই পাহাড়ে রাবার বাগানও করেছিলাম। তবে ২০১৬ সালে সেই বাগান কারা যেন পুড়িয়ে দেয়।
‘এরপর আশপাশ ও বিভিন্ন জায়গা থেকে ওরা এসে সেখানে ঘর করে। আমরাও বাধা দেইনি। ভেবেছিলাম আমাদেরও শ্রমিক দরকার, তাদের হয়তো কাজে লাগানো যাবে। কিন্তু পরে দেখি তারা ওটা নিজেদের বলে দাবি করছে। ওরা যেসব অভিযোগ করছে সেসব মিথ্যা। তাদের ভয় দেখানো বা রোহিঙ্গা দিয়ে কাজ করানো, শিশুদের স্কুলে যেতে না দেয়া সব মিথ্যা। স্কুল তো তাদের পাড়াতেই, আমরা কেন স্কুলে যেতে দেব না?
‘ঘটনাটি অনেকেই তদন্ত করেছেন। এসিল্যাড রিপোর্ট দিয়েছেন, সব আমাদের পক্ষে। আমাদের ধারণা, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন বন্ধ করতে কোনো মহল তাদের দিয়ে এসব করাচ্ছে।’
আরও পড়ুন:ফেনীতে শরীফ উদ্দিন বাবলু নামের এক পুলিশ সদস্যের নামে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেছেন এক তরুণী।
ফেনী মডেল থানায় মঙ্গলবার এ মামলা করা হয়।
অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য শরীফ উদ্দিন বাবলু বর্তমানে খাগড়াছড়ি পুলিশ লাইনসে কনস্টেবল পদে কর্মরত আছেন। তিনি ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার জামতলা এলাকার বাসিন্দা।
মামলার এজহারে বলা হয়েছে, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে পুলিশ সদস্য বাবলু চট্টগ্রামের জোরারগঞ্জ উপজেলার আজমনগর গ্রামের ওই তরুণীকে ফেনীর মহিপাল এলাকায় একটি হোটেলে একাধিকবার ধর্ষণ করেন। সম্প্রতি বিয়ের জন্য চাপ দিলে বাবলু অস্বীকৃতি জানান। এতে মামলা করেন ওই তরুণী।
ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘তরুণীর লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ সদস্য বাবলুর বিরুদ্ধে নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে শিগগিরই আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) বাতিল ও পুলিশ কর্মকর্তাদের বদলির প্রস্তাব করেছেন মেয়র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার।
নিজ বাসভবনে মঙ্গলবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে কায়সার এ আবেদন জানান।
নির্বাচন সংক্রান্তে সাত দফা প্রস্তাব কমিশনারের কাছে জমা দিয়েছেন বলে জানান এই মেয়র প্রার্থী।
লিখিত প্রস্তাব পাবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহেদুন্নাবী চৌধুরী।
সংবাদ সম্মেলনে কায়সার বলেন, ‘আমি মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে একজন প্রার্থী। নির্বাচনকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
‘নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে আমি নির্বাচনে অংশগ্রহণের নিমিত্তে কাজ করে যাচ্ছি। নির্বাচনের মাঠে পদচারণা করে আমি সমাজের বিশিষ্ট নাগরিক, বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা, পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে নিম্নলিখিত পদক্ষেপসমূহ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক বিবেচনা ও কার্যকর করার পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য পেশ করছি।’
প্রস্তাবগুলো হলো
১. ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন এবং ইউপি ও পৌর নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ ছিল না। দিনের ভোট রাতে, কেন্দ্রদখল ও ভোটারশূন্য কেন্দ্র ছিল। যা ফলাফলগুলো বিশ্লেষণ করলেও বুঝা যায়।
জনগণের মধ্যে এখনও সেই ভয়, আতঙ্ক ও সন্দেহ বিরাজ করছে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েনের মাধ্যমে কিছু মোটরসাইকেল আটক ছাড়া অন্য কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। এজন্য নির্বাচন কমিশনকে ভোটারদের ভয় ও শঙ্কামুক্ত পরিবেশে ভোটারদের এ বিষয়ে আশ্বস্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
২. ইভিএমে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে থাকা রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের আপত্তি রয়েছে। সাধারণ ভোটাররাও এ বিষয়ে আপত্তি তোলার পাশাপাশি ভোটের ফলাফল পাল্টিয়ে দেয়া হবে বলে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছে।
নির্বাচন কমিশন আমাদের প্রার্থীদের নিয়ে এ বিষয়ে কোনো আলোচনা, ব্রিফিং কিংবা বিস্তারিত কিছুই তুলে ধরেনি। তাই আমরাও এ বিষয়ে কিছু জানি না। যেহেতু বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ, তাই কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত বাতিল করে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে স্বচ্ছ ব্যালট বক্সে ভোট নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
৩. নির্বাচন কমিশন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকার কোনো কর্মকর্তাকে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ জন্য আমি অভিনন্দন জানাই। সেই একই কারণে সিটি করপোরেশন এলাকায় কর্মরত পুলিশের উপপরিদর্শক, পরিদর্শক, সহকারী পুলিশ সুপার ও মাঠ প্রশাসনের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনারের (ভূমি) নির্বাচনকালীন (প্রতীক বরাদ্দের পূর্বেই) বদলির দাবি জানাচ্ছি।
৪. নির্বাচন কমিশন প্রতিটি কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের উদ্যোগকেও আমি স্বাগত জানাই। সিসি ক্যামেরার সুবিধা যাতে আগ্রহী প্রার্থীরা পায়, অর্থ্যাৎ প্রার্থীরা তাদের স্বঅবস্থানে থেকে সিসি ক্যামেরা মনিটরিং করতে পারে সে বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।
৫. নির্বাচনের সময় পর্যন্ত আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়া কোনো নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার না করার নির্দেশনা প্রদানের দাবি জানাচ্ছি।
৬. প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে নির্বাচন কমিশনের দুজন সদস্যের নেতৃত্বে কয়েকটি দল কুমিল্লায় অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।
৭. প্রার্থীদের অভিযোগ হোয়াটস আ্যাপ, টেলিগ্রাম, ম্যাসেঞ্জারসহ অন্যান্য অনলাইন যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।
নির্বাচনের আগেই ইভিএমের কথা উল্লেখ করেছে নির্বাচন কমিশন, তাহলে মনোনয়ন পত্র জমা দেয়ার পর বাতিল কেন চাচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে কায়সার বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে আমার মনে সন্দেহ রয়েছে। ইনপুট যা দেন আউটপুট সঠিক নাও আসতে পারে। এ ছাড়া ভোটার ও সুশীল সমাজ ইভিএমের ওপর এখনো আস্থা আনতে পারেনি। আমিও না। তাই ইভিএম বাতিল চেয়েছি।’
আরও পড়ুন:ছাত্রলীগের হামলায় নেতাকর্মী জখমের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।
বিএনপির অঙ্গ সংগঠন ছাত্রদল ২৬ মে সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়) বিক্ষোভ সমাবেশ করবে। পরদিন সংগঠনটি একই কর্মসূচি পালন করবে জেলা ও মহানগরে।
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মঙ্গলবার রাতে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবন।
সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল অভিযোগ করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সশস্ত্র হামলায় ছাত্রদলের নারী নেত্রীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ৮০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অনেকের শারীরিক অবস্থা সঙ্কটাপন্ন। ক্যাম্পাসে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি পালনের সময় হকিস্টিক, রড, রামদা, চাপাতি ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এই হামলা চালায়।
তিনি বলেন, ‘হামলায় ছাত্রদলের নেত্রী মানসুরা আলম, রেহেনা আক্তার শিরীন, শানজিদা ইয়াসমিন তুলি, সৈয়দা সুমাইয়া পারভীন, তন্বী মল্লিক রেহাই পাননি। তাদেরকে সড়কে ফেলে পেটানো হয়েছে। দুজন ছাত্রদল নেতাকে তুলে নিয়ে শহীদুল্লাহ হলের ড্রেনে ফেলে নির্যাতন করা হয়েছে। বিভিন্ন হাসপাতালে আহত নেতাকর্মী ও চিকিৎসকদের হয়রানি করছে ছাত্রলীগের কর্মীরা।’
সংবাদ সম্মেলনে আহত নেতাকর্মীদের তালিকা তুলে ধরেন ছাত্রদলের নেতারা। এ তালিকায় কেন্দ্রীয় সংসদের সিনিয়র সহ সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আফসার মোহাম্মদ ইয়াহইয়া, সাবেক সহ সাধারণ সম্পাদক আকতারুজ্জামান আক্তার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহবায়ক আকতার হোসেন, যুগ্ম আহবায়ক খোরশেদ আলম সোহেলসহ বিভিন্ন স্তরের নেতারা রয়েছেন।
আরও পড়ুন:কান চলচ্চিত্র উৎসবে ১৯ মে উদ্বোধন করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বায়োপিক ‘মুজিব: দ্য মেকিং অফ আ নেশন’-এর ট্রেইলার। এটি উদ্বোধন করতে ওই উৎসবে গিয়েছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
মঙ্গলবার দেশে ফিরে বিকেলে রাজধানীর মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘সেখানে বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক মুজিব: দ্য মেকিং অফ আ নেশন-এর ট্রেইলার উদ্বোধন হয়েছে এবং এটি উৎসবে মানুষের মধ্যে ব্যাপক উদ্দীপনা ছড়িয়েছে। চলচ্চিত্র উৎসবের নগরী কানের প্রধান প্রবেশদ্বারে বঙ্গবন্ধুর বায়োপিকের পোস্টার শোভা পাচ্ছে। এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর জীবন, কর্ম, আত্মত্যাগ এবং একটি জাতির রূপকার হিসেবে তার যে ত্যাগ, সংগ্রাম, অর্জন- সেগুলো তুলে আনা হয়েছে।’
বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক নিয়ে নানা আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু এবং আরও বিশ্বনেতাদের জীবন ও কর্মকে আড়াই-তিন ঘণ্টায় তুলে আনা কঠিন। তবু এই চলচ্চিত্রে সেটি তুলে আনার চেষ্টা করা হয়েছে। আর পরিচালক শ্যাম বেনেগাল ঠিকই বলেছেন, দেড় মিনিটের ট্রেইলার দেখে একটা চলচ্চিত্রের ওপর মন্তব্য করা যায় না। সেজন্য পুরো সিনেমাটা দেখতে হবে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এই চলচ্চিত্র একটি ডকুমেন্টারি হিসেবেও কাজ করবে।
‘বঙ্গবন্ধুর সংগ্রাম, আত্মত্যাগ এবং ফাঁসির মুখোমুখি দাঁড়িয়েও তিনি যে জাতির প্রশ্নে, বাঙালির প্রশ্নে অবিচল ছিলেন সেই বিষয়গুলো নতুন প্রজন্ম জানতে পারবে। আমিও অধীর আগ্রহে চলচ্চিত্রটি দেখার অপেক্ষা করছি।’
আগামী বছর থেকে কান চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশের একটি স্টল দেয়ার পরিকল্পনা আছে বলেও জানান তথ্যমন্ত্রী।
আরও পড়ুন:দেশে আইনের শাসনে চলা উচিত বলে মনে করেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ‘বীর মুক্তিযুদ্ধা রাখাল চন্দ্র নাহার মৃত্যু যেন কারাগারে না হয়। তার শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। আইনানুযায়ী একজন বীর মুক্তিযুদ্ধা যেকোনো একটি অপরাধ থেকে ক্ষমা পেতে পারেন।
‘নাহা আইনের আধিকার ঠিকঠাক পাননি। ৩০ বছর তার সাজা হয়েছে, তিনি ২৯ বছর জেলে ছিলেন। এ হাসপাতাল থেকে নাহাকে যেন বাড়ি পাঠানো হয়। তার মৃত্যু স্ত্রী-সন্তানদের সামনে হয় এ আশা করছি।’
মঙ্গলবার দুপুরে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বীর মুক্তিযুদ্ধা রাখাল চন্দ্র নাহাকে দেখতে এসে তিনি এসব কথা বলেন।
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বলেন, ‘রাখাল চন্দ্র নাহা একটি ষড়যন্ত্রমূলক খুনের মিথ্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিলেন। যা ১৯৯৯ সালের একটি হত্যা মামলা। ঘটনার দিন নাহা বাড়ি ছিলেন না। অথচ ২০০৩ সালে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।
‘২০০৮ সালে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সিদ্ধান্ত হয়। আমি মহামান্য রাষ্ট্রপতি বরাবর আবেদন করি, তার সাজা মওকুফ করে যাবতজীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। রেয়াতসহ নাহার মুক্তির সুপারিশ করা হয়েছে ২০১৫ সালে। অথচ সে মুক্তি পায়নি। তার প্রতি অন্যায় করা হয়েছে। আমি তার বাড়িতে গিয়েছি। সব জেনে বুঝে বলছি নাহার কোনো অপরাধ নেই। তাকে দ্রুত মুক্তি দিন।’
নাহার ছেলে সঞ্জয় চন্দ্র নাহা বলেন, ‘বাবার শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। তিনি কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কারাবন্দি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। ২০২৩ সালের জুন মাসে তিনি মুক্তি পাবেন। তবে সে পর্যন্ত তিনি বাঁচবেন না।
‘শেষ জীবনের কয়েকটা দিন পরিবারের পক্ষ থেকে আমরা তার সেবা করতে চাই। তার মৃত্যুটা যেন আমাদের সামনে হয়, আর কোনো চাওয়া নাই।’
১৯৯৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার দেবিদ্বারের হোসেনপুরে ধীনেশ চন্দ্র দত্তকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। প্রতিবেশী ধীনেশ চন্দ্র দত্তকে হত্যার অভিযোগে রাখাল চন্দ্র নাহা ও তার ভাই নেপাল চন্দ্র নাহার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করে ধীনেশ চন্দ্রের পরিবার।
নেপাল চন্দ্র নাহা পালাতক অবস্থায় মারা যান। রাখাল চন্দ্র নাহার সাজা ২০২৩ সালের জুন মাসে ৩০ বছর পূর্ণ হলে মুক্তি পাবেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য