পানিতে ধানে পচন ধরেছে। সেই ধান থেকে বের হচ্ছে পচা গন্ধ। তবু সেই ধান নৌকায় করে কেটে এনেছেন হযরত আলী। হাওরের কাটা ধান জড়ো করে রাখছেন উঁচু জায়গায়। এরই ফাঁকে হযরত আলী আক্ষেপ করে বলেন, ‘ধান সব নিয়া গেছে। এখন সব ছুছা।’
নিজের কেটে আনা ধান দেখিয়ে বলেন, ‘এইগুলা গরুর লাগি কাটিয়া আনছি। এইগুলা না আনলে গরু বাঁচানো যাবে না।’
বুধবার সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার দেখার হাওরে গিয়ে কথা হয় হযরত আলীর সঙ্গে। ঢলে তলিয়ে গিয়েছিল এই হাওর। এখন পানি কিছুটা কমেছে। ভেসে উঠেছে ধান। সেগুলো কাটায় ব্যস্ত কৃষকরা।
দেখার হাওরের অবস্থান সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের পাশেই। বুধবার এই সড়ক দিয়ে যেতে যেতে দেখা যায়, সড়কের দুই পাশে রাখা হয়েছে ধান। সড়কের ওপরই চলছে ধান মাড়াই, বাছাই ও শুকানোর কাজ। কৃষকের পাশাপাশি নারী ও শিশুরাও যুক্ত হয়েছেন এই কর্মযজ্ঞে।
কেবল ঢল নয়, এবার ধানের ক্ষতি করেছে শিলাবৃষ্টি আর ব্লাস্ট রোগও। ফলে ধান তোলায় উদয়াস্ত পরিশ্রম করে গেলেও কাঙ্ক্ষিত ফসল না পাওয়ার আক্ষেপ তাদের কণ্ঠে।
শান্তিগঞ্জের পূর্ব পাগলা এলাকায় ধান ঝাড়ার কাজ করছিলেন সরুফা বেগম। ধান তলিয়ে যাওয়া নিয়ে আফসোস করে তিনি বলেন, ‘ইবারকু বাঁচবার উপায় নাই, মরা ছাড়া উপায় নাই।’
খানিক দূরে কুলো দিয়ে ধান ঝাড় দিচ্ছিলেন দুজন নারী। কাছে গিয়ে ছবি তুলতেই একজন ক্ষেপে গেলেন। ক্ষুব্ধ কণ্ঠেই তিনি বলেন, ‘ছবি তুলিয়া কিতা করতায়, ছবি নেটো ছাড়বায়, এরপরে তোমরারে সরকারেও টেকা দিবো। আমরার কিতা লাভ?’
অভিযোগ করে আরও বলেন, ‘সব ধান নিছেগি, কয়েকবার আইয়া মাইনষে আমরার নাম লেখিয়া নিলা, কিন্তু এখন পর্যন্ত কিচ্ছু পাইছি না। আর ছবি তোলা লাগতো নায়।’
তখনও রাগ কমেনি বছর ত্রিশের ওই নারীর। ক্ষোভে ছবি তোলার সময় নিজের মুখটা ঢেকেই রাখেন তিনি। এমনকি নিজের নামটিও বলতে চান না।
তার পাশে ধান ঝাড় দেয়া আম্বিয়া বেগম বলেন, ‘ধান তিন ভাগের দুই ভাগই চলে গেছে। এক ভাগ হয়তো পাওয়া যাবে।’
গত বুধ ও বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জের ৮টি উপজেলার বিভিন্ন হাওরে ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে আলাপ করে এমন আফসোস আর হতাশার কথাই শোনা যায়। ফসলহানি নিয়ে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ।
হাওরপ্রধান জেলা সুনামগঞ্জ। এই জেলার একমাত্র ফসল বোরো ধান। এই ধানের ওপর নির্ভরশীল এখানকার বেশির ভাগ মানুষের জীবন-জীবিকা। তবে এবার ঢলে হাওরে পানি ঢুকে তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ অঞ্চলের ফসল। ঢলের আগে দীর্ঘ খরায় ব্লাস্ট রোগেও ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া কাশবৈশাখী ঝড় আর শিলাবৃষ্টিতেও ফসলহানি হয়েছে ব্যাপক। যেসব হাওরে ফসলের বেশি ক্ষতি হয়েছে, সেসব এলাকার কৃষকরা এখন চরম দুশ্চিন্তায়।
তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুনামগঞ্জের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানিয়েছেন, ৬ হাজার হেক্টরের মতো ফসলের ক্ষতি হয়েছে। যা মোট ফসলের তুলনায় সামান্যই। হাওরের ৯০ শতাংশ ধান ইতোমধ্যে কেটে ফেলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সুনামগঞ্জ কার্যালয় জানায়, এবার জেলায় ২ লাখ ২২ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ লাখ ৫০ হাজার ২২০ টন।
ধান নাই, ঈদও নাই
দুদিন পরই মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। এবার ঈদ হচ্ছে বৈশাখ মাসে। বৈশাখ এমনিতেই হাওরবাসীর জন্য উৎসবের মাস। এ মাসে একমাত্র ফসল ঘরে ওঠে। তাই হাওরের ঘরে ঘরে থাকে আনন্দ। এবার বৈশাখ মাসেই ঈদ এসেছে। ফলে এবার হাওরে দ্বিগুণ আনন্দ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এবার উল্টো চিত্র। উৎসবের মাসেই হাওর এলাকা এবার বিষাদময়।
শান্তিগঞ্জের গাইল্লার হাওরপাড়ের কৃষক হেলাল আহমদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার ধান এখনও পানির নিচে রয়ে গেছে। ধান না পেলে কীভাবে ঈদ করব।’
আক্ষেপ করে বলেন, ‘ঈদে নতুন কাপড়ের জন্য বাচ্চারা কাঁদে। কিন্তু এইগুলা এড়িয়ে যাই। কিন্তু মনরে সান্ত্বনা দিতে পারি না।’
বিশ্বম্ভরপুর এলাকার কৃষক হারুন আহমদ বলেন, ‘ধান নিছে গি পানিয়ে, এখন ঈদ কিতার। জান বাঁচানিই দায়, ঈদ করতাম কিলা।’
বাড়ির শিশুরা নতুন কাপড়ের জন্য অপেক্ষায় আছে জানিয়ে এই এলাকার কৃষক সমসুল হক বলেন, ‘ধান নিছে পানিয়ে, ঈদ করমু কিলা? হুরুতা (ছেলে) আশা করে বসে আছে ধান উঠলে ঈদের কাপড় হবে, কিন্তু এবার তো ধানই নাই।’
এবার ‘ঈদ নাই’ উল্লেখ করে উজান তাহিরপুরের কৃষানি খোদেজা বেগম বলেন, ‘ধান নিছে গি, ইবার ঈদ নাই। কাপড় কিনা তো দূরে থাক, ঈদের দিন বাচ্চাদের বালা কুনতা (ভালো কিছু) খাওয়াইতে পারমু কি না এই চিন্তায় আছি।’
তাহিরপুরের উজ্জ্বলপুরের কৃষক মোছলেম উদ্দিন জানান, ঢলে ধান তলিয়ে যাওয়ার পর ঝড়ে তাদের ঘরও ভেঙে গেছে। ফলে খাওয়া ও থাকা নিয়েই দুশ্চিন্তায় তিনি।
নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভাত খাইতে পররাম না, ঈদ করতাম কিলা।’
এই গ্রামের আরেক তরুণ মো পাবেল বলেন, ‘ট্যাকা-পয়সা নাই। তাই ইবার ঈদে কাপড় কিনতে পারতাম নায়।’
জমেনি ঈদের কেনাকাটাও
তাহিরপুর বাজারের পোশাকের দোকান তাম্বির স্টোর। গিয়ে দেখা যায়, পুরো ফাঁকা দোকান, নেই কোনো ক্রেতা। দোকানে ক্রেতার অপেক্ষায় অলস বসে আছেন ব্যবসায়ী লুৎফুর রহমান। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই ব্যবসা একেবারেই মন্দা। কোনো ক্রেতা নেই। ঈদের আমেজ তো নেই-ই, এমনকি স্বাভাবিক সময়ের চাইতেও মন্দা ব্যবসা। সারা দিনেও ২/৩ জন ক্রেতা আসে না।’
কেবল তাহিরপুরের এই দোকান নয়, পুরো হাওর এলাকার বাজারগুলো ঘুরেই দেখা গেছে এমন চিত্র। হাওরের ফসলহানির প্রভাব পড়েছে ঈদের বাজারেও। এবার জমেনি ঈদের কেনাকাটা। ফলে ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার কারেন্টের বাজারের সাগর কালেকশন নামক ফ্যাশন হাউসের স্বত্বাধিকারী মোজাম্মেল হোসেন সাগর বলেন, ‘ঈদের মৌসুমেও ব্যবসা একেবারে মন্দা। ঈদের জন্য কিছু বাড়তি বিনিয়োগ করেছিলাম। পুরোটাই ধরা খেতে হলো।’
একই উপজেলার নতুন পাড়ার সোনিয়া গার্মেন্টসের ব্যবসায়ী আজাদ আহমদ বলেন, ‘মানুষ এখন ধান কাটা নিয়ে ব্যস্ত। কেনাকাটা করার মতো সময় নেই। তবু ধান ভালো হলে কিছু ব্যবসা হতো। কিন্তু ধান না হওয়ায় ব্যবসা একেবারেই জমেনি।’
দিরাই উপজেলার ধল বাজারে সড়কের পাশে বৃহস্পতিবার কাপড় নিয়ে বসেছিলেন ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী আজিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘বাজারে তো মানুষজনই নাই। ব্যবসা কই থেকে হবে। সব মানুষ হাওরে ব্যস্ত এখন।’
তবে ভিন্ন তথ্য জানিয়েছেন দিরাইয়ের সেন মার্কেটের সাথি ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী আব্দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘প্রথম দিকে মন্দা থাকলেও শেষ দিকে এসে ব্যবসা মুটোমুটি জমেছে। ক্রেতারা আসেন।’
‘এইটা লেখো ভাই, বাঁধটা যেন আরেকটু মজবুত হয়’
হাওরে ফসলহানির জন্য বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম ও গাফিলতিকেই দায়ী করেছেন তারা। একই সঙ্গে আগামীতে সঠিকভাবে বাঁধ নির্মাণের দাবি তাদের।
বুধবার ফসলহানি নিয়ে আলাপ করছিলেন দেখার হাওরের কৃষক আব্দুল মুহিদ। আলাপের শেষে তিনি বলেন, ‘অটাতা লেখিও ভাই, বানটা আরেকটু মজবুত অইতো’ (এইটা লেখো ভাই, বাঁধটা যেন আরেকটু মজবুত হয়)।
তাহিরপুরের শনির হাওরের কৃষক সৌরভ দাশ বলেন, ‘ঢল আর শিলাবৃষ্টিতে হাওরে ধানের ক্ষতি হয়েছে। যে জমিতে ২০ মণ ধান পাওয়ার কথা, সেখানে এখন ৫ মণের মতো পাব।’
কৃষক আব্দুল আলি বলেন, ‘ঢল আর শিলাবৃষ্টিতে ৭৫ ভাগ ধানই চলে গেছে। দুর্বল বাঁধের কারণে হাওরে পানি ঢুকে পড়ে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামসুদ্দোহা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এবার দুই একটি বাঁধ ছাড়া কোনো বাঁধই ভাঙেনি। তবে অনেক বাঁধ উপচে হাওরে পানি প্রবেশ করেছে। এর সঙ্গে বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম বা গাফিলতির কোনো সম্পর্ক নেই।’
আরও পড়ুন:কুমিল্লা নাঙ্গলকোটে ইউপি সদস্য আলাউদ্দিনকে বাড়ির সামনে থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামিকে ঢাকার হাতিরঝিল রেল মগবাজার রেলগেট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। শুক্রবার দিনগত রাতে অভিযানটি শেষ করে র্যাব।
গ্রেফতারকৃত আসামী শেখ ফরিদ (৪৫) নাঙ্গলকোট উপজেলার বক্সগঞ্জ আলীয়ারা গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে।
শনিবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে কুমিল্লা অশোকতলা এলাকায় র্যাব অফিসে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন
র্যাব ১১ এর কুমিল্লার কোম্পানি কমান্ডার মেজর সাদমান ইবনে আলম।
মেজর সাদমান জানান, নাঙ্গলকোটের আলিয়ারা গ্রামে দুই পরিবারের মধ্যে বংশপরম্পরায় একটি বিরোধ চলে আসছিল। গেল গেল ২৫ জুলাই গরুর ঘাস খাওয়া কে কেন্দ্র করে দুই পরিবারের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
সেদিন দফায় দফায় সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১৫ জন গুলিবিদ্ধসহ ২৫ জন আহত হয়।
এ ঘটনার রেশ ধরে গেলো ৩ আগস্ট দুপুরে আলিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন তার চাচাতো ভাইয়ের জানাজার নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা তাকে একটি সিএনজিতে তুলে নিয়ে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে।
পরে এ ঘটনায় ৫ আগস্ট নিহতের ছেলে বাদী হয়ে নাঙ্গলকোট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বিপদসীমা অতিক্রম করায় নির্ধারিত সময়ের আগেই খোলা হয়েছে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সব জলকপাট। সোমবার (৫ আগস্ট) রাত ১২টা ২ মিনিটে হঠাৎ পানি বাড়তে থাকায় জরুরি ভিত্তিতে কেন্দ্রের ১৬টি জলকপাট ৬ ইঞ্চি করে খুলে দেওয়া হয়।
কর্ণফুলি পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান জানান, রাতে লেকের পানির উচ্চতা ১০৮.০৫ ফুট ছুঁয়ে গেলে বিপদসীমা অতিক্রম করে। এতে প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলি নদীতে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, “প্রথমে সোমবার (৪ আগস্ট) বিকেল ৩টায় পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা পরের দিন মঙ্গলবার সকাল ৯টায় জলকপাট খোলার ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ অতিরিক্ত পানি প্রবাহের কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই সোমবার রাতেই জলকপাট খুলে দিতে হয়। তবে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
তিনি আরও জানান, কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিট বর্তমানে সচল রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে আরও ৩২ হাজার কিউসেক পানি লেক থেকে কর্ণফুলিতে গিয়ে পড়ছে। সবমিলিয়ে পানি নিঃসরণের হার এখন প্রতি সেকেন্ডে ৪১ হাজার কিউসেক।
ভাটি এলাকার জনসাধারণের উদ্দেশে তিনি বলেন, “পানি প্রবাহ বাড়লেও আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে, এবং প্রয়োজনে আমরা আগেভাগেই ব্যবস্থা নেব।”
স্থানীয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও এ বিষয়ে আগেই অবহিত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন কর্তৃপক্ষ।
গাজীপুরের কালীগঞ্জে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ’ অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে শপথ গ্রহণ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশব্যাপী আয়োজিত ‘লাখো কণ্ঠে শপথ পাঠ’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
শনিবার (২৬ জুলাই) সকালে উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে এক ভাবগম্ভীর পরিবেশে এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই মাসে নিহত শহীদদের স্মরণে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। মোনাজাতে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং দেশের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করা হয়।
উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই শপথ পাঠ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তনিমা আফ্রাদ। তিনি উপস্থিত সকলকে শপথ বাক্য পাঠ করান। দেশের সংবিধান ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখা, দুর্নীতি ও সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করার অঙ্গীকার করেন অংশগ্রহণকারীরা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইউএনও তনিমা আফ্রাদ বলেন, "জুলাই পুনর্জাগরণ কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি আমাদের চেতনার বাতিঘর। সেই শহীদদের আত্মত্যাগ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। আজকের এই সম্মিলিত শপথ হোক দেশ ও মানুষের কল্যাণে নিজেদের উৎসর্গ করার একটি নতুন অঙ্গীকার। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক পর্যন্ত সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে পারে।"
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসনিম উর্মি, কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলাউদ্দিন, উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা নেতৃবৃন্দ সহ উপজেলায় কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীবৃন্দ।
বক্তারা জুলাইয়ের শহীদদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে বলেন, তাদের দেখানো পথ অনুসরণ করে দেশের উন্নয়নে একযোগে কাজ করতে হবে। উপজেলা প্রশাসনের এই সফল আয়োজনে সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিকে এক নতুন মাত্রা দেয়। এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটি কালীগঞ্জের মানুষের মধ্যে দেশ ও সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ এবং নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করবে বলে আশা প্রকাশ করেন আয়োজকরা।
ফেনীতে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। এর সঙ্গে দেখা দিয়েছে নতুন এক আতঙ্ক। বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেতে মানুষের বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছিল নানা প্রজাতির সাপ। এখন ঘরে ফিরলেও সাপ আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে। এরই মধ্যে পরশুরামে বিষধর সাপের কামড়ে রোকেয়া আক্তার রিনা (৫০) নামে এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকাল ৫টার দিকে ফেনীর পরশুরামের পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত রিনা পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম শহীদের স্ত্রী। তার এক ছেলে দুই মেয়ে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বন্যার পানি শুকিয়ে গেলে রান্না করার জন্য রান্নাঘরে গেলে সেখানে একটি অজ্ঞাত বিষধর সাপ রিনাকে কামড় দেয়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এরপর ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের স্বামী শফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে রিনা রান্না ঘরে যায়। এ সময় রান্নাঘরের একটি গর্ত থেকে বিষধর একটি সাপ বের হয়ে তার পায়ে কামড় দেয়। তার চিৎকার শুনে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্স নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার কোনো চিকিৎসা না হওয়ায় ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার রেদোয়ান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, হাসপাতালে আনার আগেই ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছিল।
টানা ৩ দিনের বৃষ্টিতে বেনাপোল বন্দর এলাকায় জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বন্দর অভ্যন্তরের অনেক স্থানে হাটু পানি জমায় মারাত্বক ভাবে ব্যহত হচ্ছে পণ্য খালাস প্রক্রিয়া। যানবাহন ও নিরাপত্তাকর্মীদের চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ায় বন্দরের ৯.১২.১৫.১৬ ও ১৮ নম্বর সেড থেকে লোড আনলোড বন্ধ হয়ে আছে।
ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই বন্দরে হাটু পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে থাকে। কয়েক বছর ধরে এ দূর্ভোগ হলেও নজর নাই বন্দর কর্তৃপক্ষের। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, রেলকর্তৃপক্ষ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় পানি নিষ্কাসনে বাধা গ্রুস্থ্য হচ্ছে।
তবে এসব শেড ও ওপেন ইয়ার্ড অধিকাংশই দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে তৈরী হয়নি। বন্দর সড়কের উচ্চতার চেয়ে পণ্যগারগুলো নিচু হওয়ায় একটু বৃষ্টিপাত বেশি হলে পানি নিষ্কাষনের অভাবে পণ্যগার ও ইয়াডে জলবদ্ধতা তৈরী হয়। এতে পানিতে ভিজে যেমন পণ্যের গুনগত মান নষ্ট হয় তেমনি চলাচলের বিঘ্ন ঘটছে। তবে আজ সকাল থেকে সেচ যন্ত্র চালিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বেনাপোল বন্দর পরিচালক শামিম হোসেন জানান, বন্দরের জলবদ্ধতা প্রতি বছরে তৈরী হয়। বিশেষ করে রেল বিভাগ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় সমস্যার সন্মুখিন হতে হচ্ছে। বন্দরের পানি নিষ্কাসন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়েছে। তবে দ্রুত এ অবস্থা কাটিয়ে তুলতে পাশ্ববর্তী হাওড়ের সাথে বন্দরের ড্রেন তৈরীর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রেরক: রাশেদুর রহমান রাশু, বেনাপোল যশোর ।
কক্সবাজারের চকরিয়ায় গত রোববার (৬ জুলাই) মালুমঘাট বাজার থেকে পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে এক যুবক পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়া সে যুবক সাজ্জাদ হোসেন (২০) কে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ কলাতলীর একটি আবাসিক হোটেল থেকে আটক করে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দিবাগত রাত তিনটায় কক্সবাজারের একটি আবাসিক হোটেল (ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্ট) অভিযান পরিচালনা করে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ। রাত প্রায় তিনটায় নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ওই হোটেলের একটি কক্ষ থেকে তাকে আটক করা হয়।
চকরিয়া থানা পুলিশের বিশেষ নজরদারি ও কক্সবাজারের গোয়েন্দা পুলিশের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে আসামি সাজ্জাদ হোসেন কে আটক করতে সক্ষম হয় কক্সবাজার ডিবি পুলিশ।
এবিষয়ে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, পলাতক আসামি সাজ্জাদ কে কক্সবাজার ডিবি পুলিশ আটক করেছে। প্রাথমিকভাবে সদর মডেল থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর চকরিয়া থানায় নিয়ে আসা হবে। তার বিরুদ্ধে একটি পুলিশ এসল্ট মামলা করা হয়েছে।
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে করতোয়া নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে যৌথবাহিনীর অভিযানে একজনকে দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাত ৯টার দিকে শালডাঙ্গা ইউনিয়নের ধুলাঝাড়ি বাজারের করতোয়া নদীসংলগ্ন এলাকায় অভিযানটি চালানো হয়।
দেবীগঞ্জ সেনা ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার মেজর জুবায়ের হোসেন সিয়ামের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ও দেবীগঞ্জ থানা পুলিশের সমন্বয়ে এ অভিযান পরিচালিত হয়।
অভিযানে বালু উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত দুইটি ট্রাক্টরসহ চালক রাজু ইসলাম ও শান্ত আহমেদকে আটক করা হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসান ঘটনাস্থলে এসে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।
আদালতের রায়ে রাজু ইসলামকে বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনের ধারা লঙ্ঘন করায় দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়, অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন বিচারক। তবে রাজু ইসলাম অর্থদণ্ডের অর্থ পরিশোধ করায় ট্রাক্টর দুটি ছেড়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় প্রশাসন জানায়, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন রোধে যৌথবাহিনীর অভিযান চলমান থাকবে।
মন্তব্য