পানিতে ধানে পচন ধরেছে। সেই ধান থেকে বের হচ্ছে পচা গন্ধ। তবু সেই ধান নৌকায় করে কেটে এনেছেন হযরত আলী। হাওরের কাটা ধান জড়ো করে রাখছেন উঁচু জায়গায়। এরই ফাঁকে হযরত আলী আক্ষেপ করে বলেন, ‘ধান সব নিয়া গেছে। এখন সব ছুছা।’
নিজের কেটে আনা ধান দেখিয়ে বলেন, ‘এইগুলা গরুর লাগি কাটিয়া আনছি। এইগুলা না আনলে গরু বাঁচানো যাবে না।’
বুধবার সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার দেখার হাওরে গিয়ে কথা হয় হযরত আলীর সঙ্গে। ঢলে তলিয়ে গিয়েছিল এই হাওর। এখন পানি কিছুটা কমেছে। ভেসে উঠেছে ধান। সেগুলো কাটায় ব্যস্ত কৃষকরা।
দেখার হাওরের অবস্থান সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের পাশেই। বুধবার এই সড়ক দিয়ে যেতে যেতে দেখা যায়, সড়কের দুই পাশে রাখা হয়েছে ধান। সড়কের ওপরই চলছে ধান মাড়াই, বাছাই ও শুকানোর কাজ। কৃষকের পাশাপাশি নারী ও শিশুরাও যুক্ত হয়েছেন এই কর্মযজ্ঞে।
কেবল ঢল নয়, এবার ধানের ক্ষতি করেছে শিলাবৃষ্টি আর ব্লাস্ট রোগও। ফলে ধান তোলায় উদয়াস্ত পরিশ্রম করে গেলেও কাঙ্ক্ষিত ফসল না পাওয়ার আক্ষেপ তাদের কণ্ঠে।
শান্তিগঞ্জের পূর্ব পাগলা এলাকায় ধান ঝাড়ার কাজ করছিলেন সরুফা বেগম। ধান তলিয়ে যাওয়া নিয়ে আফসোস করে তিনি বলেন, ‘ইবারকু বাঁচবার উপায় নাই, মরা ছাড়া উপায় নাই।’
খানিক দূরে কুলো দিয়ে ধান ঝাড় দিচ্ছিলেন দুজন নারী। কাছে গিয়ে ছবি তুলতেই একজন ক্ষেপে গেলেন। ক্ষুব্ধ কণ্ঠেই তিনি বলেন, ‘ছবি তুলিয়া কিতা করতায়, ছবি নেটো ছাড়বায়, এরপরে তোমরারে সরকারেও টেকা দিবো। আমরার কিতা লাভ?’
অভিযোগ করে আরও বলেন, ‘সব ধান নিছেগি, কয়েকবার আইয়া মাইনষে আমরার নাম লেখিয়া নিলা, কিন্তু এখন পর্যন্ত কিচ্ছু পাইছি না। আর ছবি তোলা লাগতো নায়।’
তখনও রাগ কমেনি বছর ত্রিশের ওই নারীর। ক্ষোভে ছবি তোলার সময় নিজের মুখটা ঢেকেই রাখেন তিনি। এমনকি নিজের নামটিও বলতে চান না।
তার পাশে ধান ঝাড় দেয়া আম্বিয়া বেগম বলেন, ‘ধান তিন ভাগের দুই ভাগই চলে গেছে। এক ভাগ হয়তো পাওয়া যাবে।’
গত বুধ ও বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জের ৮টি উপজেলার বিভিন্ন হাওরে ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে আলাপ করে এমন আফসোস আর হতাশার কথাই শোনা যায়। ফসলহানি নিয়ে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ।
হাওরপ্রধান জেলা সুনামগঞ্জ। এই জেলার একমাত্র ফসল বোরো ধান। এই ধানের ওপর নির্ভরশীল এখানকার বেশির ভাগ মানুষের জীবন-জীবিকা। তবে এবার ঢলে হাওরে পানি ঢুকে তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ অঞ্চলের ফসল। ঢলের আগে দীর্ঘ খরায় ব্লাস্ট রোগেও ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া কাশবৈশাখী ঝড় আর শিলাবৃষ্টিতেও ফসলহানি হয়েছে ব্যাপক। যেসব হাওরে ফসলের বেশি ক্ষতি হয়েছে, সেসব এলাকার কৃষকরা এখন চরম দুশ্চিন্তায়।
তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুনামগঞ্জের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানিয়েছেন, ৬ হাজার হেক্টরের মতো ফসলের ক্ষতি হয়েছে। যা মোট ফসলের তুলনায় সামান্যই। হাওরের ৯০ শতাংশ ধান ইতোমধ্যে কেটে ফেলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সুনামগঞ্জ কার্যালয় জানায়, এবার জেলায় ২ লাখ ২২ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ লাখ ৫০ হাজার ২২০ টন।
ধান নাই, ঈদও নাই
দুদিন পরই মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। এবার ঈদ হচ্ছে বৈশাখ মাসে। বৈশাখ এমনিতেই হাওরবাসীর জন্য উৎসবের মাস। এ মাসে একমাত্র ফসল ঘরে ওঠে। তাই হাওরের ঘরে ঘরে থাকে আনন্দ। এবার বৈশাখ মাসেই ঈদ এসেছে। ফলে এবার হাওরে দ্বিগুণ আনন্দ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এবার উল্টো চিত্র। উৎসবের মাসেই হাওর এলাকা এবার বিষাদময়।
শান্তিগঞ্জের গাইল্লার হাওরপাড়ের কৃষক হেলাল আহমদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার ধান এখনও পানির নিচে রয়ে গেছে। ধান না পেলে কীভাবে ঈদ করব।’
আক্ষেপ করে বলেন, ‘ঈদে নতুন কাপড়ের জন্য বাচ্চারা কাঁদে। কিন্তু এইগুলা এড়িয়ে যাই। কিন্তু মনরে সান্ত্বনা দিতে পারি না।’
বিশ্বম্ভরপুর এলাকার কৃষক হারুন আহমদ বলেন, ‘ধান নিছে গি পানিয়ে, এখন ঈদ কিতার। জান বাঁচানিই দায়, ঈদ করতাম কিলা।’
বাড়ির শিশুরা নতুন কাপড়ের জন্য অপেক্ষায় আছে জানিয়ে এই এলাকার কৃষক সমসুল হক বলেন, ‘ধান নিছে পানিয়ে, ঈদ করমু কিলা? হুরুতা (ছেলে) আশা করে বসে আছে ধান উঠলে ঈদের কাপড় হবে, কিন্তু এবার তো ধানই নাই।’
এবার ‘ঈদ নাই’ উল্লেখ করে উজান তাহিরপুরের কৃষানি খোদেজা বেগম বলেন, ‘ধান নিছে গি, ইবার ঈদ নাই। কাপড় কিনা তো দূরে থাক, ঈদের দিন বাচ্চাদের বালা কুনতা (ভালো কিছু) খাওয়াইতে পারমু কি না এই চিন্তায় আছি।’
তাহিরপুরের উজ্জ্বলপুরের কৃষক মোছলেম উদ্দিন জানান, ঢলে ধান তলিয়ে যাওয়ার পর ঝড়ে তাদের ঘরও ভেঙে গেছে। ফলে খাওয়া ও থাকা নিয়েই দুশ্চিন্তায় তিনি।
নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভাত খাইতে পররাম না, ঈদ করতাম কিলা।’
এই গ্রামের আরেক তরুণ মো পাবেল বলেন, ‘ট্যাকা-পয়সা নাই। তাই ইবার ঈদে কাপড় কিনতে পারতাম নায়।’
জমেনি ঈদের কেনাকাটাও
তাহিরপুর বাজারের পোশাকের দোকান তাম্বির স্টোর। গিয়ে দেখা যায়, পুরো ফাঁকা দোকান, নেই কোনো ক্রেতা। দোকানে ক্রেতার অপেক্ষায় অলস বসে আছেন ব্যবসায়ী লুৎফুর রহমান। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই ব্যবসা একেবারেই মন্দা। কোনো ক্রেতা নেই। ঈদের আমেজ তো নেই-ই, এমনকি স্বাভাবিক সময়ের চাইতেও মন্দা ব্যবসা। সারা দিনেও ২/৩ জন ক্রেতা আসে না।’
কেবল তাহিরপুরের এই দোকান নয়, পুরো হাওর এলাকার বাজারগুলো ঘুরেই দেখা গেছে এমন চিত্র। হাওরের ফসলহানির প্রভাব পড়েছে ঈদের বাজারেও। এবার জমেনি ঈদের কেনাকাটা। ফলে ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার কারেন্টের বাজারের সাগর কালেকশন নামক ফ্যাশন হাউসের স্বত্বাধিকারী মোজাম্মেল হোসেন সাগর বলেন, ‘ঈদের মৌসুমেও ব্যবসা একেবারে মন্দা। ঈদের জন্য কিছু বাড়তি বিনিয়োগ করেছিলাম। পুরোটাই ধরা খেতে হলো।’
একই উপজেলার নতুন পাড়ার সোনিয়া গার্মেন্টসের ব্যবসায়ী আজাদ আহমদ বলেন, ‘মানুষ এখন ধান কাটা নিয়ে ব্যস্ত। কেনাকাটা করার মতো সময় নেই। তবু ধান ভালো হলে কিছু ব্যবসা হতো। কিন্তু ধান না হওয়ায় ব্যবসা একেবারেই জমেনি।’
দিরাই উপজেলার ধল বাজারে সড়কের পাশে বৃহস্পতিবার কাপড় নিয়ে বসেছিলেন ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী আজিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘বাজারে তো মানুষজনই নাই। ব্যবসা কই থেকে হবে। সব মানুষ হাওরে ব্যস্ত এখন।’
তবে ভিন্ন তথ্য জানিয়েছেন দিরাইয়ের সেন মার্কেটের সাথি ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী আব্দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘প্রথম দিকে মন্দা থাকলেও শেষ দিকে এসে ব্যবসা মুটোমুটি জমেছে। ক্রেতারা আসেন।’
‘এইটা লেখো ভাই, বাঁধটা যেন আরেকটু মজবুত হয়’
হাওরে ফসলহানির জন্য বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম ও গাফিলতিকেই দায়ী করেছেন তারা। একই সঙ্গে আগামীতে সঠিকভাবে বাঁধ নির্মাণের দাবি তাদের।
বুধবার ফসলহানি নিয়ে আলাপ করছিলেন দেখার হাওরের কৃষক আব্দুল মুহিদ। আলাপের শেষে তিনি বলেন, ‘অটাতা লেখিও ভাই, বানটা আরেকটু মজবুত অইতো’ (এইটা লেখো ভাই, বাঁধটা যেন আরেকটু মজবুত হয়)।
তাহিরপুরের শনির হাওরের কৃষক সৌরভ দাশ বলেন, ‘ঢল আর শিলাবৃষ্টিতে হাওরে ধানের ক্ষতি হয়েছে। যে জমিতে ২০ মণ ধান পাওয়ার কথা, সেখানে এখন ৫ মণের মতো পাব।’
কৃষক আব্দুল আলি বলেন, ‘ঢল আর শিলাবৃষ্টিতে ৭৫ ভাগ ধানই চলে গেছে। দুর্বল বাঁধের কারণে হাওরে পানি ঢুকে পড়ে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামসুদ্দোহা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এবার দুই একটি বাঁধ ছাড়া কোনো বাঁধই ভাঙেনি। তবে অনেক বাঁধ উপচে হাওরে পানি প্রবেশ করেছে। এর সঙ্গে বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম বা গাফিলতির কোনো সম্পর্ক নেই।’
আরও পড়ুন:আগামী জুনের মধ্যে ১০ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ সম্পন্ন করবে সরকার। সে জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রুমানা আলী।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজে শুক্রবার সকাল পৌনে ১১টার দিকে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে এ কথা জানান তিনি।
প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলী বলেন, শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কেউ যেন প্রতারিত না হয় কিংবা কেউ যেন প্রতারণা না করতে পারে সে জন্য সরকার সব ব্যবস্থা নেবে। আগামী জুনের মধ্যেই ১০ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ সম্পন্ন করা হবে।
তিনি বলেন, ‘আমি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ কেন্দ্রে পরিদর্শন করেছি। সেখানে খুব ভালোভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে, তবে এ বছর নিয়োগ পরীক্ষায় প্রার্থীর সংখ্যা কিছুটা কম।’
এ সময় প্রতিমন্ত্রী কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের তৃতীয় ও শেষ ধাপের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় আজ। ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোতে শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে বেলা ১১টা পর্যন্ত চলে লিখিত পরীক্ষা।
এ ধাপে কুমিল্লা জেলায় ৩২ হাজার ১৯৯ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে নারী ১৪ হাজার ৭৬৭ জন এবং পুরুষ ১৭ হাজার ৪৩২ জন।
আরও পড়ুন:কুমিল্লার বরুড়ায় ভাইকে হত্যার দায়ে ছোট ভাই, বোন ও ভগ্নিপতিসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
উপজেলার শালুকিয়া গ্রাম থেকে বৃহস্পতিবার তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে বুধবার সকালে নিজ বসতঘর থেকে শরিফ হোসেন (৩৫) নামে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তার তিনজন হলেন শরিফের ছোট ভাই আরিফ হোসেন, বড় বোন খুকি আক্তার ও ভগ্নিপতি নাছির উদ্দিন।
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান এসব তথ্য নিশ্চিত করে জানান, মরদেহ উদ্ধারের পর বুধবার নিহত শরীফের মা বরুড়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
পুলিশ কর্মকর্তা নাজমুল বলেন, ‘শরীফ মাদকাসক্ত ছিল। কিছুদিন আগে শরীফ মাদকের টাকা যোগাড়ের জন্য ভাই আরিফের অটোরিকশা বিক্রি করে দেয়। মাদকের টাকার জন্য মাকেও মারধর করত সে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এমন পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে শরিফের ছোট ভাই আরিফ ও তার বোন খুকি মিলে পরিকল্পনা করে শরীফকে পঙ্গু করে ঘরে রেখে দেবে। বাকি জীবন তাকে ঘরে বসিয়ে খাওয়াবে। পরিকল্পনা মোতাবেক ২৬ মার্চ রাত ১ টার দিকে পুকুরপাড়ে শরীফকে হাত পা বেঁধে পেটানো হয়। বাড়িতে এনে আরেক দফা পেটানো শেষে হাত পা বেঁধে ঘরের ভেতর ফেলে রাখা হয়। এ অবস্থায় শরীফ মারা যায়।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল জানান, তথ্য প্রযুক্তিসহ নিজস্ব গোয়েন্দা ব্যবহার করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাদের আদালতে প্রেরণ করলে সেখানে তারা ১৬৪ ধারায় খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়।
আরও পড়ুন:মৌলভীবাজার শহরে বুধবার ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ভেতরে গ্রাহককে অজ্ঞান করে ৮১ হাজার টাকা লুটের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তানভীর হাবিব চৌধুরী রুমেল নামের ওই গ্রাহক মৌলভীবাজার মডেল থানায় অভিযোগটি করেন।
ব্যাংকের ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, বুধবার বেলা ১১টা সাত মিনিটে ঘটনাটি ঘটে।
অভিযোগের বিষয়ে মৌলভীবাজার মডেল থানার ওসি কে এম নজরুল বলেন, ‘মৌলভীবাজারের শহরের সেন্ট্রাল রোডে অবস্থিত ডাচ-বাংলা ব্যাংক পিএলসিতে বুধবার সকালে ১১টার দিকে প্রবাস থেকে আসা টাকা তুলতে যান ব্যবসায়ী তানভীর। দুই লাখ টাকা তুলে তানভীর এক হাজার টাকার নোট দেয়ার জন্য ব্যাংক কর্মকর্তাকে বলেন। এ সময় ব্যাংক কর্মকর্তা এক হাজার টাকার বান্ডিল দিতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে তাকে ৫০০ টাকা নোটের বান্ডেল প্রদান করেন।
‘তখন কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একজন রুমেলকে বলেন, তিনি এক হাজার টাকার বান্ডেল এক্সচেঞ্জ করবেন। তখন রুমেলের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তিনি গুনতে থাকেন। টাকা হাতে নেয়ার পর রুমেল কিছু সময়ের জন্য অজ্ঞান অনুভব করেন। তখন ওই চক্র ৮১ হাজার টাকা নিয়ে চলে যায়।’
অভিযোগকারী রুমেল বলেন, ‘ওই ব্যক্তির হাতে থাকা টাকার বান্ডেল আমাকে গুনতে দিয়ে আমাকে একটি চেয়ারে নিয়ে বসান। আমি টাকা হাতে নেয়ার পর নিস্তেজ অনুভব করি। সবকিছু আমার কাছে কিছু সময়ের মধ্যে এলোমেলো মনে হয়। প্রায় পাঁচ মিনিট পরে একটু স্বাভাবিক হলে গুনে দেখি, তারা আমার কাছ থেকে ৮১ হাজার টাকা নিয়ে চলে যায়।
‘পরবর্তী সময়ে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, তারা ১১টা সাত মিনিটে আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে যায়। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে ওই চক্রের ছবি শনাক্ত করা হয়।’
ডাচ-বাংলা ব্যাংক পিএলসির মৌলভীবাজার শাখা ব্যবস্থাপক আবদুল কাদের বলেন, ‘সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখলাম, ব্যাংকের একজন গ্ৰাহকের সঙ্গে কয়েকজন লোক গল্পগুজব করে উনার সঙ্গে বিদায় নিয়ে চলে গেছে। এরপর তিনি বুঝতে পারেন, উনার টাকা নিয়ে চলে গেছে। তিনি পুলিশে অভিযোগ করেন।’
মৌলভীবাজার মডেল থানার ওসি কে এম নজরুল বলেন, ‘একজন ব্যাংক গ্ৰাহক অভিযোগ করেন। বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি।’
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় নদীতে গোসল করতে নেমে বজ্রপাতে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে।
উপজেলার চর বাউশিয়া বড়কান্দি গ্রাম সংলগ্ন গোমতী নদীতে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। প্রাণ হারানো শাহেদ (১৪) ওই গ্রামের মোশারফ মিয়ার ছেলে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহতের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিকেলে গোমতী নদীতে বন্ধুদের সঙ্গে গোসল করতে যায় শাহেদ। ওই সময় হঠাৎ করে বজ্রসহ বৃষ্টি শুরু হলে বজ্রপাতে মারা যায় সে। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠালে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে জানান।
গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানা যায়, বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে তাদের হাসপাতালে শাহেদকে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ শেষে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে গজারিয়া থানার ইন্সপেক্টর (অপারেশন) আজাদ রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমরা অবগত রয়েছি, নিহতের লাশ গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছে।’
নিহতের পরিবারের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিনা ময়নাতদন্তে মরদেহ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন:নোয়াখালীতে মোটরসাইকেলে পিকআপ ভ্যানের ধাক্কায় এক প্রবাসী যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
জেলা শহর মাইজদীর টোকিও ফুডসের সামনে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রাণ হারানো আনোয়ার হোসেন অনিক (২২) কবিরহাট উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণ জগদানন্দ গ্রামের মাজারুল হক মন্টু মিয়ার ছেলে।
সুধারাম থানার ওসি মীর জাহেদুল হক রনি বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
স্থানীয়দের বরাতে তিনি বলেন, আবুধাবি প্রবাসী অনিক দুই মাস আগে দেশে এসে বিয়ে করেন। সন্ধ্যায় বন্ধুদের ইফতার পার্টিতে যোগ দিতে মোটরসাইকেলে গ্রামের বাড়ি থেকে জেলা শহর মাইজদীতে আসেন তিনি। ওই সময় মাইজদীর টোকিও ফুডসের সামনে রাস্তার উল্টোপথে যাওয়ার সময় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি পিকআপের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
লিখিত অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন:কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর নামে পাবনায় ভুয়া জন্মসনদ তৈরির ঘটনায় জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি।
স্থানীয় সরকার বিভাগ পাবনার উপপরিচালক সাইফুর রহমান বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে তদন্ত প্রতিবেদনটি জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কাছে জমা দেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জালিয়াতির মাধ্যমে ট্রুডোর নামে ভুয়া জন্মসনদ তৈরি করা হয়। এতে বহিরাগত কম্পিউটার অপারেটর নিলয় পারভেজ ইমন জড়িত।
প্রতিবেদনে জেলার সুজানগরের আহম্মদপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এ ঘটনায় ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবদুর রউফ মোল্লা ও সচিব আওলাদ হাসানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছিল, যার জবাব দিয়েছেন তারা।
পাবনার জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর নামে ভুয়া জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরির ঘটনায় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের নির্দেশে ঘটনা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
‘পাবনার স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক সাইফুর রহমানকে তদন্ত করতে নির্দেশ দেয়া হয়। তদন্ত প্রতিবেদন বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে তিনি জমা দেন। আমি প্রতিবেদনটি এখনও দেখিনি। দেখার পর বিস্তারিত জানাতে পারব।’
স্থানীয় সরকার বিভাগ পাবনার উপপরিচালক সাইফুর রহমান বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের নির্দেশে আমি সুজানগরের সেই আহম্মদপুর ইউনিয়নে গিয়ে সব বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছি। তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছি। সেখানে বেশ কিছু অসঙ্গতি ও অনিয়ম পেয়েছি। দোষীদের চিহ্নিত করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সুজানগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুখময় সরকার বলেন, ‘সুজানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ইউনিয়নটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবদুর রউফ মোল্লা ও সচিব আওলাদ হাসানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। তারা সেটির জবাব দেন।
‘এটা (তদন্ত প্রতিবেদন) আমরা জেলা প্রশাসকের নিকট জমা দিই। জেলা প্রশাসক দেখার পরে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিব কারণ দর্শানোর নোটিশের যে জবাব দিয়েছেন, তা সন্তোষজনক কি না, সে বিষয়ে ইউএনও বলেন, ‘সব বিষয় ডিসি স্যার বলতে পারবেন।’
পাবনার সুজানগর উপজেলার আহমেদপুর ইউনিয়নে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর নামে ভুয়া জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরি করা হয়। বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে আসার পর সারা দেশে আলোচনার সৃষ্টি হয়। পরে জন্মনিবন্ধনের সার্ভার থেকে ভুয়া সনদটি সরানো হয়।
এ ঘটনায় নিলয় পারভেজসহ কয়েকজনকে আসামি করে আমিনপুর থানায় মামলা করা হয়।
গাজীপুরের কাপাসিয়ায় সংঘবদ্ধ পিটুনিতে দুজন নিহত হয়েছেন।
উপজেলার সিংহশ্রী ইউনিয়নে বৃহস্পতিবার রাত দুইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
পিটুনির শিকার দুজনের মধ্যে একজন নিহত হন সিংহশ্রী ইউনিয়নের নামিলা গ্রামের চান মিয়ার বাড়িতে। অন্যজন একই ইউনিয়নের বড়িবাড়ি গ্রামের ধানক্ষেতে প্রাণ হারান।
তাৎক্ষণিকভাবে নিহত দুজনের নাম ও পরিচয় জানা যায়নি।
স্থানীয়দের ভাষ্য, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে নামিলা গ্রামে চান মিয়ার বাড়িতে অজ্ঞাত পরিচয়ের কিছু ব্যক্তি গরু চুরির উদ্দেশ্যে ঢোকেন। বিষয়টি টের পেয়ে চান মিয়া ডাকাডাকি করলে স্থানীয়রা জড়ো হন। ওই সময় একজনকে ধরে সংঘবদ্ধ পিটুনি দিলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
স্থানীয়রা আরও জানান, স্থানীয়দের ধাওয়া খাওয়া অপরজন পার্শ্ববর্তী বড়িবাড়ি গ্রামে ধানক্ষেতের আড়ালে লুকিয়ে পড়েন। ওই সময় উত্তেজিত লোকজন ক্ষেতের আড়াল থেকে খুঁজে বের করে পিটুনি দিলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
সিংহশ্রী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার পারভেজ জানান, গরু চুরি রোধে এলাকায় গ্রামবাসী পাহারা বসিয়েছিল। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে গাড়িতে করে এক কৃষকের গরু চুরি করতে যান কয়েকজন। বিষয়টি টের পেয়ে একজোট হয়ে দুজনকে পিটুনি দেয় গ্রামবাসী। এতে নামিলা গ্রামে একজন ও বড়িবাড়ি গ্রামের ধানক্ষেতে আরেকজন নিহত হন।
চেয়ারম্যান আরও জানান, গ্রামে গরু চুরি করতে আসা আরও চার থেকে পাঁচজন আছেন, যাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।
এ বিষয়ে কাপাসিয়া থানার ওসি আবু বকর মিয়ার সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
কাপাসিয়া থানার ডিউটি অফিসার এসআই আরিফ হোসেন জানান, গরু চোর সন্দেহে গ্রামবাসীর সংঘবদ্ধ পিটুনিতে দুজন নিহত হন, যাদের মরদেহ গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য