নরসিংদীর রায়পুরায় ট্রেনে কাটা পড়ে দুই শিশু নিহত হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী তিতাস এক্সপ্রেস ট্রেনের নিচে সকালে কাটা পড়ে তারা।
নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন নরসিংদী রেল স্টেশনের পুলিশ পরিদর্শক ইমায়েদুল জাহেদি।
নিহতরা হলো, রায়পুরা থানার পলাশতলি ইউনিয়নের শাহাপুর গ্রামের দ্বীন ইসলামের ছেলে জুবায়েদ মিয়া ও আদিয়াবাদ ইউনিয়নের শেরপুর কান্দাপাড়া গ্রামের কাউছার আহমেদের ছেলে সিয়াম আহমেদ আতিকুল।
প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত পুলিশ পরিদর্শক ইমায়েদুল বলেন, সকালে ৭টা দিকে রায়পুরার পলাশতলি ইউনিয়নের শাহাপুর এলাকায় রেল লাইনের ওপর দাঁড়িয়ে ওই দুই শিশু আরেকটি লাইনে দিয়ে যাওয়া চট্টগ্রামগামী মালবাহী একটি ট্রেন দেখছিল। তখন ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী তিতাস এক্সপ্রেস ট্রেন হর্ণ দিলেও তারা খেয়াল করেনি। এ সময় দুজনেই ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে মারা যায়।
সিয়াম মাদ্রাসায় লেখাপড়া করত ও জুবায়েদ চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
তিনি জানান, তারা দুজনই বাড়ি থেকে রেল লাইনে ঘুরতে আসেন। নিহতের মরদেহ উদ্ধারের পর পরিচয় শনাক্ত করা হয়। পরে আইনি প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
নওগাঁয় চলতি মৌসুমে গুটিজাতের আম নামানো শুরু হয়েছে।
এর মধ্য দিয়ে বুধবার জেলায় আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো আম কেনাবেচার ‘উৎসব’।
বাজারে নিরাপদ ও পরিপক্ব আম সরবরাহ নিশ্চিতে আগে থেকেই এই সূচি ঠিক করেছিল জেলা প্রশাসন ও জেলা কৃষি বিভাগ।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সভায় জাতভেদে আম নামানোর সম্ভাব্য তারিখ জানানো হয়। সভায় কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা ছাড়াও আমচাষি, ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। ওই সভায় গুটিজাতের আম নামানোর তারিখ ঠিক করা হয় ২৫ মে।
এ ছাড়া গোপালভোগ ৩০ মে ও ক্ষীরসাপাত বা হিমসাগর ৫ জুন, নাগ ফজলি ৮ জুন, ল্যাংড়া ও হাঁড়িভাঙ্গা ১২ জুন, ফজলি আম ২২ জুন ও আম্রপালি ২৫ জুন থেকে নামানো যাবে। সর্বশেষ ১০ জুলাই থেকে নামানো যাবে আশ্বিনা, বারী-৪ ও গৌরমতি জাতের আম।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ শামছুল ওয়াদুদ বলেন, ‘বাগানমালিক, ব্যবসায়ী, জেলা প্রশাসন সবার সঙ্গে আলোচনা করে আম সংগ্রহের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়। তারিখ অনুযায়ী আম সংগ্রহ করতে জেলাজুড়ে প্রচার চালানো হচ্ছে। পরিপক্ব ও ক্ষতিকারক কেমিক্যালমুক্ত আম খাওয়াতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বুধবার সকাল থেকে চাষিরা গুটি আম নামাতে শুরু করেছেন। এর মধ্য দিয়ে জেলায় আম নামানোর উৎসব শুরু হলো।’
উন্নত জাতের আমগুলো নামানোর জন্য আরও কয়েক দিন অপেক্ষা করলে ভালো হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে নির্ধারিত সময়ের আগে যদি কোনো বাগানের আম পেকে যায়, স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়ে চাষিরা আম পাড়তে পারবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘সারা দেশে নওগাঁর আমের খুব সুনাম রয়েছে। এ জন্য কয়েক বছর থেকে আম পাড়ার তারিখ নির্ধারণ করে দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া আম পাকানো, সংরক্ষণ বা বাজারজাতে কেমিক্যালের ব্যবহার ঠেকাতে নজরদারি রয়েছে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ২৯ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। হেক্টরপ্রতি ফলন ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৫০ টন। আশা করা হচ্ছে ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৪৩৫ টন আম উৎপাদন হবে। যার বিক্রয় মূল্য ধরা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৮৪২ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
এর মধ্যে বিদেশে আম রপ্তানির জন্য কয়েকজন আমচাষিকে প্রশিক্ষণ ও নিরাপদ আম প্রস্তুতের পরামর্শ দিয়েছে কৃষি বিভাগ। তাদের বাগান থেকেই আম ইংল্যান্ড, জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স, ডেনমার্ক, দুবাই, কাতার, সুইডেন ও ওমানে রপ্তানি করা হবে।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রার্থীদের ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন যাচাই করে দেখার জন্য আহ্বান জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তাদের রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে আসতে হবে। সেখানেই ইভিএম কাস্টমাইজেশন করে দেখানো হবে।
কুমিল্লা সিটি ভোটের রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহেদুন্নবী চৌধুরী স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তিতে এই কথা জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব এস এম আসাদুজ্জামান।
আগামী ১৫ জুন কুমিল্লায় ভোট পুরোপুরি ইভিএমে নেয়া হবে। এই যন্ত্র ব্যবহারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর আপত্তি না থাকলেও স্বতন্ত্র পরিচয়ে দাঁড়ানো বিএনপি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের দুই নেতা ব্যালটে ভোট নেয়ার দাবি করছেন। তাদের দাবি, ইভিএমে কারচুপি করা যায়।
এই পরিস্থিতিতে জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মেয়র, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর এবং সাধারণ আসনের কাউন্সিলর প্রার্থীদের জন্য ইভিএম কাস্টমাইজেশন কার্যক্রম আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে করা হবে। সেখানে কাস্টমাইজেশন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী অথবা তার মনোনীত কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকতে পারবেন।
যারা এখানে আসতে চান, তাদের ২৬ মে বিকেল ৪টার মধ্যে রিটার্নিং অফিসারের কাছে বা প্রতিনিধির নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর উল্লেখ করে আবেদন করতে হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৬ মের মধ্যে আবেদন না করলে ধরে নেয়া হবে যে ওই প্রার্থী ইভিএম কাস্টমাইজেশন প্রক্রিয়া দেখতে আগ্রহী নন।
২৬ মে নির্বাচনের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময়। প্রতীক বরাদ্দ হবে ২৭ মে।
দুটি পৌরসভাকে একীভূত করে ২০১১ সালে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন গঠন করা হয়। পরের বছর হয় প্রথম নির্বাচন হয়। এরপর ২০১৭ সালে এসে এ সিটিতে বেশ কয়েকটি ইউনিয়নকে অন্তর্ভুক্ত করে আয়তন বাড়ানো হয় প্রায় তিন গুণ। এতে দেখা দেয় সীমানা জটিলতা। বর্তমানে এই সিটিতে ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ড রয়েছে।
দুটি নির্বাচনেই কিছু কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছে। দুটি ভোটেই জয় পেয়েছেন বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কু। তার দল এবার ভোট বর্জন করায় গত দুবারের মেয়র এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের প্রচারে নেমেছেন।
আওয়ামী লীগ এখানে পরপর তিনটি নির্বাচনে নতুন মুখ দিয়ে জয়ের চেষ্টায় আছে। প্রথম নির্বাচনে কুমিল্লা আওয়ামী লীগের ডাকসাইটে নেতা আফজল খানকে দিয়ে ব্যর্থ হওয়ার পরের বার তার মেয়ে আঞ্জুম সুলতানা সীমাও পেরে ওঠেননি।
এবার নৌকা প্রতীক দেয়া হয়েছে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাতকে।
দুই দলেই আছে কোন্দল। সাক্কুর বিরোধিতা করে মাঠে আছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন কায়সার। অন্যদিকে প্রয়াত আফজল খানের ছেলে মাসুদ পারভেজ খান ইমরান নৌকা না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।
আরও পড়ুন:নাটোরের বড়াইগ্রামে বাস ও ট্রাকের সংঘর্ষে এক চালক নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন।
উপজেলার বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের নুরে আলম ফিলিং স্টেশনের কাছে বুধবার বেলা ১১টার দিকে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।
বনপাড়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহত ৬০ বছর বয়সী বারিক সরদারের বাড়ি পাবনার বাহিরচর গ্রামে। তাৎক্ষণিক আহতদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
স্থানীয়দের বরাতে ওসি জানান, হানিফ এন্টারপ্রাইজের একটি বাস রাজশাহী থেকে ঢাকা যাচ্ছিল। নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের নুরে আলম ফিলিং স্টেশনের কাছে এলে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সঙ্গে বাসটির সংঘর্ষ হয়।
এতে ট্রাকের চালক বারিকসহ অন্তত ১১ জন আহত হন। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আহতদের উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে বারিকের মৃত্যু হয়।
দুর্ঘটনার পর মহাসড়কের ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ঘণ্টাব্যাপী যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি দুটি সরিয়ে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে জানিয়ে ওসি বলেন, ‘এ ঘটনায় এখনও কেউ অভিযোগ করেনি।’
আরও পড়ুন:গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাসের দাবিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক আটকে অবরোধ করেছেন। পুলিশ গিয়ে লাঠিচার্জ করে তাদের সরিয়ে দিয়েছে।
কোনাবাড়ীর এনটিকেসি নামে ওই কারখানার শ্রমিকরা বুধবার সকালে কারখানার সামনের মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।
আন্দোলনকারী শ্রমিক শেফালি বেগম বলেন, ‘এপ্রিল মাসের বেতন ও ঈদ বোনাস না দিয়ে কর্তৃপক্ষ ঈদের আগে কারখানা বন্ধ করে পালিয়ে যায়। এর পর থেকে কারখানায় আর উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হয়নি।
‘প্রতিদিনই আমরা কারখানার ফটকে এসে ফিরে যাই। তাই আজকে সকালে আমরা বিক্ষোভ করি।’
বিক্ষোভরত আরেক শ্রমিক মো. মামুন জানান, তারা ন্যায্য দাবিতে বিক্ষোভ করছিলেন। পুলিশ তাদের ওপর হামলা করেছে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ ও শিল্প পুলিশের পরিদর্শক এনামুল হক জানান, পুলিশ গিয়ে প্রথমে শ্রমিকদের অবরোধ তুলে নিতে বলে। তাতে তারা রাজি না হয়ে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। একপর্যায়ে পুলিশ লাঠিচার্জ করে তাদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে।
শ্রমিকরা তখন ফের ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। তখন তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে কারখানা প্রাঙ্গণে গিয়ে অবস্থান নেন।
এনামুল আরও জানান, দুপুরে পুলিশ কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে বকেয়া মেটানোর বিষয়টি জানায়। তারা দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা দুপুরে বাড়ি ফিরে যান।
কারখানার জিএম বুলবুল আহমেদ জানান, মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। আগামী জুন মাসের ৫ তারিখে বকেয়া বেতন ও বোনাস দেয়া হবে।
আরও পড়ুন:উজানের ঢলের পানির প্রভাব পড়েছে ফরিদপুরের নিম্নাঞ্চলেও। ঢলে বেড়েছে পদ্মা নদীর পানি। ফলে চরাঞ্চলের বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া ভাঙন দেখা দিয়েছে বিভিন্ন স্থানে।
কয়েকদিনের হঠাৎ পানি বৃদ্ধিতে কৃষকের বিভিন্ন ফসল ডুবে গিয়েছে। অন্য বছর সাধারণত নদীতে এই সময় স্বাভাবিক পানি থাকে। তাই কৃষকরা চরাঞ্চলে করেছিলেন বিভিন্ন ফসলের চাষ।
আকস্মিক পানি বৃদ্ধিতে চরাঞ্চলের বাদাম, তিল ও ধান ক্ষেত ডুবিয়ে দিয়েছে। বাধ্য হয়ে কৃষকেরা অপরিপক্ব অনেক ফসল ঘরে তুলছেন।
পদ্মার পানি বৃদ্ধির ফলে ইতোমধ্যেই তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চলের শতাধিক একর বিভিন্ন জমির ফসল। এর মধ্যে বেশিরভাগই বাদাম ও তিল। তবে কয়েকদিনের মধ্যে যে ধান কেটে তোলার কথা ছিল কৃষকের, সেগুলোও ডুবেছে উজানের ঢলের পানিতে।
বুধবার গোয়ালন্দ পয়েন্টে পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ লিডার সালমা খাতুন জানান, গোয়ালন্দ পয়েন্টে পদ্মার পানি বুধবার ৩ সেন্টিমিটার কমে ৬ দশমিক ৮২ সেন্টিমিটার সীমায় প্রবাহিত হচ্ছে। যা মঙ্গলবার ছিল ৬ দশমিক ৮৫ সেন্টিমিটার।
গত ১৯ মে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে নদীতে পানি বৃদ্ধি পায় ৮০ সেন্টিমিটার, ২০ মে বৃদ্ধি পায় ৪৬ সেন্টিমিটার, ২১ মে ২৪ সেন্টিমিটার, ২২ মে ১১ সেন্টিমিটার, ২৩ মে ৮ সেন্টিমিটার ও ২৪ মে ৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পায়।
সরেজমিনে মঙ্গলবার দুপুরে ফরিদপুর সদর উপজেলার পদ্মার নিম্নাঞ্চল ডিক্রিরচর ইউনিয়নের পালডাঙ্গি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বাদাম ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। কৃষক অপরিপক্ক বাদাম তুলছেন।
এ ছাড়া ধান ও তিলও তুলতে দেখা যায়। নদীর অন্য প্রান্তেও তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ ফসলের ক্ষেত।
পালডাঙ্গি এলাকার কৃষক রমজান আলী ভূঁইয়া বলেন, ‘আমি আট বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেছিলাম। ৪-৫ দিন পদ্মার পানি বৃদ্ধির ফলে সব জমির বাদাম তলিয়ে গেছে। আর মাত্র ১৫ দিন থাকলে বাদাম পরিপক্ব হয়ে যেতো। কিন্তু এখন বাদাম তুলে ফেলতে হচ্ছে। এই বাদাম এখনও পরিপক্ব হয়নি। তুলে নিয়ে গরু, ছাগলকে খাওয়াব। অনেক ক্ষতি হয়ে গেল।’
সুফিয়া বেগম নামের একজন বলেন, ‘এক একর জমিতে বাদাম চাষ করেছিলাম। আবাদ করতে খরচ হয়েছিল ৩০ হাজার টাকা। এই বাদাম বিক্রি করেই আমাদের সারা বছরের সংসার খরচ চলে, কিন্তু এ বছর সব শেষ হয়ে গেল। গত কয়েকদিন পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অপরিপক্ক বাদাম তুলে ফেলতে হচ্ছে। এই বাদাম গরুকে খাওয়ানো ছাড়া আর কিছুই করা যাবে না।’
নিজের কষ্টের কথা বলছিলেন আরেক কৃষক শেখ জুলমত হোসেন। তিনি বলেন, ‘১০ বিঘা জমিতে বাদাম ও তিল আবাদ করেছিলাম। আর দশটা দিন থাকলে ভালোভাবে ফসল ঘরে উঠাতে পারতাম। পানি বৃদ্ধির ফলে এখনই তুলে ফেলতে হচ্ছে। শুধু আমাদের এলাকা নয়, চরাঞ্চলে যারা আবাদ করেছিল সবারই একই অস্থা হয়েছে।
মুরাদ হোসেন নামের এক কৃষক বলেন, ‘চরাঞ্চলের মানুষের জীবিকা নির্বাহের অন্যতম মাধ্যম বাদাম চাষ। আর এই বাদাম চাষ করেই যা রোজগার হয় তা দিয়েই সারা বছরের সংসার চলে। কিন্তু হঠাৎ করে পদ্মার পানি বেড়ে যাওয়ায় ফসল নষ্ট হয়ে গেলো। অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা পেলে এই কৃষকেরা বেঁচে থাকতে পারবে।’
ফরিদপুর সদর উপজেলার ডিক্রিরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেদি হাসান মিন্টু বলেন, ‘হঠাৎ করেই উজান থেকে নেমে আসা পানিতে তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চল। আমার ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকাই চরাঞ্চলবেষ্টিত। এখানে বসবাসরত বেশিরভাগ বাসিন্দারাই বাদাম চাষ করে। পানি বৃদ্ধির ফলে নিম্নাঞ্চলের অধিকাংশ বাদাম ক্ষেত তলিয়ে গেছে। বাদাম অপরিপক্ব অবস্থায় তুলে ফেলতে হচ্ছে। কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ওদের অন্যতম আয়ের উৎস এই বাদাম।’
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এ বছর পাঁচ হাজার ২৮৫ হেক্টর জমিতে বাদাম আবাদ হয়েছে। এ ছাড়া পাঁচ হাজার ৩৭৪ হেক্টর জমিতে তিল ও ২২ হাজার ৯৮৫ হেক্টর জমিতে ধান আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে চরাঞ্চলে বাদাম ও তিল আবাদ হয়েছে বেশি।
মঙ্গলবার পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে ১০৯ হেক্টর জমি সম্পূর্ণভাবে এবং ১৯৪ হেক্টর জমির ফসল আংশিকভাবে পানিতে ডুবে গেছে।
অধিদপ্তর জানায়, পানি বাড়ায় সবচেয়ে বেশি ফসলি জমি ডুবেছে চরভদ্রাসন উপজেলায়। এই উপজেলার চার ইউনিয়নে ৫১ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে ১৭ হেক্টর জমির চীনা বাদাম, ৭ হেক্টর বোরো ধান ও ১১ হেক্টর বোনা আউশ, ৮ হেক্টর ভুট্টা এবং ৮ হেক্টর জমির তিল ডুবে গেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ ড. মো. হযরত আলী বলেন, ‘হঠাৎ করে পদ্মায় পানি বৃদ্ধির ফলে নিম্নাঞ্চলের বেশ কিছু এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে। এতে বাদাম, তিল ও ধানের কিছু ক্ষেত তলিয়ে গেছে। বাদাম পরিপক্ব না হলেও খেতে পানি ঢোকার কারণে তুলে ফেলতে হচ্ছে; এতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে সরকারিভাবে সহযোগিতা করার চেষ্টা করার আশ্বাস দেন তিনি।
ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা বলেন, ‘পদ্মার পানি আজ থেকে কমতে শুরু করেছে। এর আগে ১০ দিনে দুই মিটারের বেশি পানি বেড়েছে।’
আরও পড়ুন:দিনাজপুর কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপমহাপরিদর্শক মো. মোস্তাফিজুর রহমানকে ঘুষের ৮০ হাজার টাকাসহ আটক করা হয়েছে।
শহরের বালুয়াডাঙ্গার অফিসে বুধবার বিকেল ৪টার পর অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে জেলা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া সমন্বিত জেলা দুদকের উপপরিচালক আহসানুল কবির পলাশ নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘চিরিরবন্দর উপজেলার আমবাড়ীতে অবস্থিত ইশান এগ্রো অ্যান্ড ফুডের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ মো. রাশেদুজ্জামান রাসেল গত ২৫ এপ্রিল দিনাজপুর কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরে লাইসেন্স নবায়ন করতে যান। তখন উপমহাপরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান লাইসেন্স নবায়নের জন্য তার কাছে ৮০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। রাসেলকে ২৭ এপ্রিল টাকা ও কাগজপত্র নিয়ে আসতে বলেন তিনি।
‘এ সময়ের মধ্যে টাকা না দেয়ায় রাসেলকে ফোন করে উপমহাপরিদর্শক জানান, কারখানার কর্মকর্তা ইশতিয়াক আহমেদ ও ম্যানেজার আশরাফুলের নামে মামলা প্রক্রিয়াধীন। মামলা থেকে রেহাই পেতে হলে ২৩ মে টাকাসহ অফিসে আসতে হবে। এদিন সকালে কাগজপত্র নিয়ে গেলে রাসেলের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে ফিরিয়ে দেন মোস্তাফিজুর।’
দুদক কর্মকর্তা বলেন, ‘এ ঘটনায় এদিন রাসেল দিনাজপুর সমন্বিত জেলা দুদক কার্যালয়ে অভিযোগ করেন। বুধবার তিনি ৮০ হাজার ঘুষের টাকাসহ কাগজপত্র মোস্তাফিজুরকে দেন। দুপুরে অভিযান চালিয়ে টাকাসহ আমরা তাকে আটক করি। তার বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন।’
আরও পড়ুন:অভিযোগ ছিল, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বান্ধাবাড়ি জেবিপি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠটি মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে এক ঠিকাদারের কাছে ভাড়া দিয়ে নানা ধরনের নির্মাণসামগ্রী রাখা হয়েছে। এতে ওই স্কুলসহ সংলগ্ন বান্ধাবাড়ি হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা বন্ধ হয়ে যায়। আর ইট ভাঙার বিরামহীন শব্দে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের মনোযোগেও বিঘ্ন ঘটতে থাকে।
বিষয়টি নিয়ে নিউজবাংলাসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বুধবার কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদাউস ওয়াহিদ জানান, বিষয়টি তদন্ত করে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি আরও জানান, কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে আহ্বায়ক এবং উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে সদস্য করে তিন সদস্যের ওই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে নিউজবাংলার আগের প্রতিবেদনে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য কামাল হোসেন অভিযোগ করেছিলেন, নির্মাণসামগ্রী রাখতে ওই মাঠটি ৭ লাখ টাকায় ঠিকাদার মো. জসিমের কাছে ভাড়া দিয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
স্কুলের এক ছাত্র-অভিভাবক দাবি করেন, ঠিকাদারের কাছ থেকে জেবিপি উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি হান্নান মোল্লা ও প্রধান শিক্ষক শেখ আব্দুর রশিদ ৭ লাখ টাকা নিয়েছেন।
তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকসহ ঠিকাদার জসিমও। তারা দাবি করেছেন, ৫০ হাজার টাকা এবং একটি সিসি ক্যামেরা বিদ্যালয়ে দেয়া হবে এই শর্তে মাত্র তিন মাসের জন্য নির্মাণসামগ্রীগুলো রাখা হয়েছে।
বর্তমানে বিদ্যালয়টির মাঠজুড়ে ইট, খোয়াসহ নির্মাণ সামগ্রী দেখা গেছে। প্রতিদিনই বিকট শব্দ করে মেশিন দিয়ে ভাঙা হচ্ছে ইট। এতে পড়াশোনা ও খেলাধুলা দুদিকেই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য