রাজধানীর নিউ মার্কেটে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের সময় ডেলিভারিম্যান নাহিদ মিয়াকে হত্যায় জড়িত সন্দেহে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।
ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে বৃহস্পতিবার দুপুরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তার সবাই ঢাকা কলেজের ছাত্র। তারা হলেন হিসাববিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের আব্দুল কাইয়্যুম, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শেষ বর্ষের পলাশ মিয়া ও মাহমুদ ইরফান, বাংলা বিভাগের ফয়সাল, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রথম বর্ষের মো. জুনায়েদ বুগদাদী।
ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘বিভিন্ন ভিডিও ও সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তাদের শনাক্ত করে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা সংঘর্ষের সময় অস্ত্র হাতে, হেলমেট পরে ফ্রন্টলাইনে ছিলেন। নাহিদকে ঘিরে ধরে হামলায় সরাসরি অংশ নেন এই পাঁচ শিক্ষার্থী, তবে ভাইরাল হওয়া আরেকটি ফুটেজে নিস্তেজ নাহিদকে কোপাতে থাকা ওই ব্যক্তিকে এখনও গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
‘ওই শিক্ষার্থীর নাম ইমন বলে প্রচার করা হলেও তার পরিচয় নিশ্চিত করে জানানো হয়নি। গ্রেপ্তারের পর তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যাবে।’
তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে এই হত্যাকাণ্ডকে পূর্বপরিকল্পিত মনে হয়নি। সংঘর্ষে তাৎক্ষণিক উত্তেজনায় এমনটি ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে গ্রেপ্তারদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে।’
নিউ মার্কেট সংঘর্ষে ঘটে যাওয়া দুটি হত্যা মামলার তদন্ত ডিবি করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি তদন্তের ধারাবাহিকতায় এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পাঁচজনকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি।’
ঘটনার বিবরণে ডিবির এ কর্মকর্তা বলেন, ‘তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ১৮ থেকে ১৯ এপ্রিল নিউ মার্কেট এলাকায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়। এতে নাহিদ ও মোরসালিন নামে দুইজন নিহত হন। নিউ মার্কেটের দুই দোকানকর্মী বাপ্পী ও কাউসারের মধ্যে ঝগড়ার সূত্রপাত ১৮ এপ্রিল বিকেলে। একপর্যায়ে বাপ্পী তার তিন বন্ধু ঢাকা কলেজের তিন শিক্ষার্থীকে ডেকে নিয়ে আসেন।
‘ওই শিক্ষার্থীরা আহত হয়েছেন—এমন গুজব ছড়িয়ে উসকানি দিয়ে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা রাতভর হামলা চালান। পরদিন ১১টার দিকে আবার সংঘর্ষ শুরু হলে দুপুর ১টার দিকে নূরজাহান মার্কেটের সামনে নাহিদ ও চন্দ্রিমা মার্কেটের সামনে মোরসালিন আহত হন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারা মারা যান।’
তিনি আরও বলেন, ‘নাহিদের মাথার বাম পাশে, পিঠে ও পায়ে কাটা জখম ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে থ্যাঁতলানো পাওয়া যায়। মোরসালিনের মাথায় ইট বা ভারী বস্তু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার মাথা থ্যাঁতলানো ছিল। এই দুটি হত্যা মামলা ডিবিতে স্থানান্তরের পরপরই ফুটেজ বিশ্লেষণ ও প্রত্যক্ষ সাক্ষীদের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, হামলার অগ্রভাগে ছাত্ররা হাতে ধারালো অস্ত্র, স্ট্যাম্প, লাঠি নিয়ে অবস্থান নেন। পেছন থেকে ছাত্ররা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করছিলেন।
‘এদিকে নূরজাহান আর হকার্স মার্কেটের কর্মচারী ও হকাররা বিপরীত দিক থেকে ইটপাটকেল মারছিলেন। নিহত নাহিদ সরাসরি সামনে থেকে মারামারিতে অংশ নেন। তার হাতে বড় একটি ছাতা ছিল, যা দিয়ে ইট-পাটকেল ঠেকাচ্ছিলেন তিনি। ছাত্ররা ধাওয়া দিলে পেছন থেকে ব্যবসায়ীরা সরে গেলেও ছাতার কারণে তিনি দেখতে পাননি। ছাত্ররা ঘিরে ধরে তার ওপর হামলা চালালে একপর্যায়ে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।’
হাফিজ আক্তার বলেন, ‘ওই হত্যাযজ্ঞে যারা ধারালো অস্ত্র নিয়ে অংশ নেন, তাদের মধ্যে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যারা অস্ত্র হাতে হেলমেট পরে হামলার ফ্রন্টলাইনে ছিলেন। এখন তাদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হামলায় কার কী অংশগ্রহণ বা কার কী দায়, আমরা দেখব।’
তিনি বলেন, ‘মুরসালিন হত্যার বিষয়ে আমরা এখনও কোনো ফুটেজ বা প্রত্যক্ষ সাক্ষী পাইনি। যেহেতু মামলার তদন্ত চলছে, হয়তো এটি উদঘাটন হতে আরেকটু সময় লাগবে।’
রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকায় ১৯ এপ্রিল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে গুরুতর আহত নাহিদ মিয়া পরে হাসপাতালে মারা যান। এলিফ্যান্ট রোডের একটি কম্পিউটার বিক্রয় প্রতিষ্ঠানের ডেলিভারিম্যান ছিলেন নাহিদ।
সংঘর্ষের ঘটনায় মোরসালিন নামের এক দোকান কর্মচারীরও মৃত্যু হয়।
তাদের রাজনৈতিক পরিচয় কী?
এই প্রশ্নে হাফিজ আক্তার বলেন, ‘আমরা তাদের জিজ্ঞাসা করেছি। তারা বলে তাদের কমিটিই নাই। দেখলাম এখানে অনেক সংখ্যক ছাত্ররা জড়িয়ে গেছে ঘটনার সঙ্গে। সুতরাং এখন ঢালাওভাবে একটা পার্টির কথা বলা যাবে না।’
হেলমেট বাহিনীর ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘বারবারই বলা হচ্ছে হেলমেট বাহিনী, হেলমেট বাহিনী। আমি তাদের হেলমেটের বিষয়টা জিজ্ঞাসা করেছি। হেলমেটের বিষয়টা হচ্ছে এমন যে ঢাকা কলেজের অনেক ছাত্রই মোটরসাইকেল ব্যবহার করে। তারা ওই মোটরসাইকেলের হেলমেট ব্যবহার করে ফ্রন্ট লাইনে যাচ্ছিল নিজেদের সেভ করার জন্য।’
তিনি জানান, কলেজের ভেতরে নির্মাণকাজ চলছে। সেখান থেকেই তারা ইটের টুকরার জোগান পায়।
নাহিদ হত্যার বিষয়ে কী জানতে পেরেছিল নিউজবাংলা
নাহিদকে হেলমেটধারী তরুণেরা আঘাত করছেন, এমন ছবি ছড়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এই যুবক কারা, সে বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম।
নিউজবাংলার অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, নাহিদকে সরাসরি ছোরা দিয়ে আঘাত করা কালো হেলমেট ও ধূসর টি-শার্ট পরা তরুণের নাম ইমন বাসার। এ ছাড়া আরও কয়েকজন হামলায় অংশ নেন।
ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মঙ্গলবার সংঘর্ষের সময় ব্যবসায়ীদের পক্ষে অংশ নেন নাহিদ।
এর আগে নিউজবাংলার অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে সংঘর্ষের একপর্যায়ে বিপরীত দিকে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের পক্ষে থাকা একদল হেলমেটধারী তরুণ নাহিদকে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত করেন।
ঢাকা কলেজের ফটকের বিপরীত পাশের নূরজাহান মার্কেটের সামনে আহত হন নাহিদ। এরপর তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। সেদিন রাত সোয়া ৯টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন: নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীদের পক্ষে সংঘর্ষে জড়ান নাহিদ
পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনে নাহিদের মাথায় চারটি আঘাতের চিহ্নের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া দেহের বিভিন্ন অংশে জখমের উল্লেখ রয়েছে প্রতিবেদনে।
নাহিদের পরিবার নিউ মার্কেট থানায় হত্যা মামলা করার পর এর তদন্ত শুরু করে ডিবির রমনা বিভাগ।
নাহিদ হত্যায় জড়িতদের পরিচয় শনাক্তে টানা অনুসন্ধান চালিয়েছে নিউজবাংলা। এতে নিশ্চিত হওয়া গেছে, সেদিন ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের একাধিক গ্রুপ মাঠে নেমেছিল। তাদের অনেকের কাছেই ছিল ধারালো দেশীয় অস্ত্র, লাঠি ও রড। পরিচয় আড়াল করতে অধিকাংশের মাথায় ছিল হেলমেট।
সংঘর্ষের সময়ের বিভিন্ন আলোকচিত্র ও ভিডিও পর্যালোচনা এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণের ভিত্তিতে নিউজবাংলা নিশ্চিত হয়েছে, নাহিদ হত্যায় ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ কয়েকটি গ্রুপের একাধিক কর্মী জড়িত।
এর মধ্যে একটি গ্রুপের অনুসারী বাংলা বিভাগের ছাত্র ইমন ছোরা দিয়ে নাহিদ মিয়াকে একাধিক আঘাত করেন। ইমনের মাথায় ছিল কালো হেলমেট, পরনে ছিল ধূসর টি-শার্ট।
তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন, ইমন ছোরা দিয়ে আঘাত করলেও নাহিদকে প্রথম মারধর শুরু করেন কাইয়্যুম ও সুজন ইসলাম নামে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের দুই কর্মী।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ১৯ এপ্রিল, মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ১টার দিকে ব্যবসায়ীরা ঢাকা কলেজের ছাত্রদের ধাওয়া দেন। ব্যবসায়ীদের পক্ষে সামনে থেকে অবস্থান নেয়া নাহিদও সামনের দিকে এগিয়ে যান।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, এরপর ছাত্ররা পাল্টা ধাওয়া দিলে পিছিয়ে আসার সময় নূরজাহান মার্কেটের গেটের সামনে পা পিছলে পড়ে যান নাহিদ। তখনই ছাত্রদের মাঝে কয়েকজন ছুটে এসে হাতের রড, লাঠি, ইট দিয়ে নাহিদকে বেধড়ক আঘাত করতে শুরু করেন।
দুই থেকে তিন মিনিটের মধ্যে নাহিদ নিস্তেজ হয়ে যান। তাকে পিটিয়ে ফিরে যাওয়ার সময় ছোরা হাতে কালো হেলমেট পরা একজন নাহিদকে কোপাতে থাকেন। পরে হলুদ হেলমেট ও লাল রঙের গেঞ্জি পরা আরেক ছাত্র এসে ওই তরুণকে চড় মেরে ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে দেন।
নিউজবাংলার অনুসন্ধান ও গোয়েন্দা তথ্য বলছে, সোমবার রাতভর পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর মঙ্গলবার সকালে নাশকতার প্রস্তুতি নিয়ে রাস্তায় নামে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের একাধিক গ্রুপ। নেতাদের নির্দেশে কর্মীরা নিজেদের সঙ্গে রেখেছিলেন বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র, রড ও লাঠি। একই সঙ্গে ঢাকা কলেজের বিপরীত দিকের নিউওয়ে পেট্রল পাম্প ও নিজেদের মোটরসাইকেল থেকে পেট্রল সংগ্রহ করেন ছাত্রলীগ কর্মীরা। তা দিয়ে পেট্রলবোমা বানিয়ে বিভিন্ন মার্কেট ও ব্যবসায়ীদের লক্ষ্য করে ছোড়া হয়। এই গ্রুপগুলোর সঙ্গে সাধারণ ছাত্ররাও যোগ দেন সংঘর্ষে।
ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের বর্তমানে কোনো কমিটি না থাকায় সেখানে ছাত্রলীগ কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত।
গোয়েন্দা সূত্র নিউজবাংলাকে জানায়, সেদিন ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের চার নেতার অনুসারীদের গ্রুপগুলো মাঠে সহিংসতা করে। এর মধ্যে তিনটি গ্রুপ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছে নিউজবাংলা। ছাত্রলীগ নেতা সামাদ আজাদ জুলফিকার, জসিমউদ্দীন ও ফিরোজ হোসেন রাব্বীর অনুসারীদের নিয়ে চলছে এই তিনটি গ্রুপ।
নাহিদের ওপর হামলায় চারটি গ্রুপের অনেকেই অংশ নেন। তাদের মধ্যে ইমন দীর্ঘদিন ধরে জুলফিকারের অনুসারী।
ঢাকা কলেজের একাধিক ছাত্র ইমনের বিষয়ে নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন, তবে নিরাপত্তাজনিত কারণে তাদের নাম প্রকাশ করছে না নিউজবাংলা।
এক ছাত্র নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঘটনার দিন ইমন তার বাম হাতের ওপরের অংশে ও পায়ে ইটের আঘাত পান। এ কারণে বিভিন্ন ছবি ও ভিডিওতে তার বাম হাতে কাপড় বেঁধে রাখতে দেখা যায়। ইমনকে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতেও দেখা গেছে।’
নিউজবাংলার হাতে আসা ইমনের ছবির সঙ্গেও নাহিদকে অস্ত্রের আঘাত করা তরুণের চেহারার মিল পাওয়া গেছে। মামলা হওয়ার পর থেকে ইমনকে ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসে দেখা যায়নি।
নাহিদকে প্রথম মারধর শুরু করার সময়ের দুজনকেও শনাক্ত করা গেছে। তারা হলেন কাইয়্যুম ও সুজন ইসলাম।
একাধিক ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, নীল রঙের মাঝে সাদা চেকের টি-শার্ট পরে সংঘর্ষে অংশ নেন কাইয়্যুম। তিনি নাহিদকে রড দিয়ে আঘাত করেন। মাথায় হেলমেট না থাকায় কাইয়্যুমকে সহজেই শনাক্ত করা গেছে।
আর হলুদ হেলমেট ও লাল গেঞ্জি পরা সুজন ইসলাম নাহিদকে ইটের আঘাত ও লাথি মেরে আহত করেন। পরে ইমন নাহিদকে কোপানো শুরু করলে এই সুজনই তাকে চড় মেরে সরিয়ে দেন। সুজন ইমনের সিনিয়র হওয়ায় চড় মেরে শাসন করতে পেরেছিলেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা কলেজের কয়েক ছাত্র।
সুজন ঢাকা কলেজের ২০১৩ -২০১৪ সেশনের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা। তার বাড়ি গোপালগঞ্জে।
দেশীয় অস্ত্র হাতে সেদিন সংঘর্ষে অংশ নেয়া ছাত্রলীগের চারটি গ্রুপের আরও কয়েকজনকে শনাক্ত করেছেন গোয়েন্দারা। একটি গ্রুপের প্রধান নেতাকে হেফাজতে নিয়ে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে বলে দাবি করেছেন তাদের অনুসারীরা। তবে এ বিষয়ে গোয়েন্দা পুলিশের আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পায়নি নিউজবাংলা।
আরও পড়ুন:কক্সবাজারের টেকনাফে রোহিঙ্গাবাহী নৌকাডুবির পর উদ্ধারে গিয়ে নিখোঁজ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সিপাহী মো. বিল্লাল হাসানের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাড়ায় বঙ্গোপসাগর থেকে রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
বিল্লাল শাহপরীর দ্বীপ বিজিবি সীমান্ত চৌকির অধীনে সিপাহী ছিলেন। তিনি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কাজিরতলা গ্রামের বজলুর রহমানের ছেলে।
এর আগে গত শুক্রবার গভীর রাতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় কক্সবাজারের টেকনাফে সমুদ্রে রোহিঙ্গাদের বহনকারী নৌকাডুবির ঘটনায় নারী-শিশুসহ ২৫ জন রোহিঙ্গাকে জীবত উদ্ধার করে। সে সময় বিজিবির সদস্যের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা নিখোঁজ হন।
ঘটনার পরের দিন শনিবার পর্যন্ত পাঁচজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আশিকুর রহমান বলেন, ‘নিখোঁজ থাকার দুই দিন পর সাগর থেকে বিজিবি সদস্যের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। এর আগে সমুদ্রে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টাকালে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিম পাড়ায় বহনকারী নৌকায় উদ্ধার অভিযানে যায় বিজিবি সদস্য। ওই সময় নৌকাডুবির ঘটনায় সমুদ্রে নিখোঁজ হন তিনি। অবশেষে তার মৃতদেহ পাওয়া গেছে।’
তিনি বলেন, ‘এ ছাড়া ঘটনার দিন খবর পেয়ে বিজিবি সদস্যরা স্থানীয় জেলেদের সহায়তায় উদ্ধার অভিযানে যান এবং শিশুসহ ২৫ জনকে উদ্ধার করতে সক্ষম হন। আমাদের উদ্ধার অভিযান চলছে।’
এদিকে নিহত বিজিবি সদস্যের ভাই আবু বকর বলেন, ‘ভাইকে খোঁজার জন্য টেকনাফের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলাম। এর মধ্য খবর আসে সাগরে চরের মধ্য ভাইয়ের মৃতদেহ পাওয়া গেছে।
‘গত শুক্রবার সাগরে রোহিঙ্গা বহনকারী নৌকা উদ্ধার অভিযানে গেলে নৌকাডুবির ঘটনায় নিখোঁজ ছিল ভাই। ওই সময় আমাদের জানানো হয়েছিল তিনিসহ ৩৩ জন নিখোঁজ ছিল। এ নিয়ে আমাদের ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল।’
নিখোঁজ বিজিবি সদস্যের মরদেহ উদ্ধারের কথা জানিয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘এর আগে রোহিঙ্গা বহনকারী নৌকাডুবির ঘটনায় শিশুসহ চার রোহিঙ্গার মৃতদেহ ভাসমান পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় আরও বেশ কিছু রোহিঙ্গা নিখোঁজ রয়েছে। তাদের বিষয়ে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।’
স্থানীয়রা জানান, গত ২২ মার্চ রাতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাবাহী একটি নৌকা টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাড়া এলাকায় সাগরে ভাসতে দেখেন বিজিবির সদস্যরা। তারা স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ আমিনের মালিকাধীন মাছ ধরার নৌকায় শাকের মাঝির নেতৃত্বে রোহিঙ্গা বহনকারী নৌকাটি থামানোর সংকেত দেন সমুদ্রে। পরে ওই নৌকাতে ওঠেন বিজিবি সদস্য।
ওই সময় উত্তাল সাগরের ঢেউয়ে নৌকাটি ডুবে যায়। সেখানে চিৎকারে নারী-শিশুসহ ২৫ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে স্থানীয় জেলে ও বিজিবি। পরে নিখোঁজ বিজিবি সদস্যসহ রোহিঙ্গাদের সন্ধানে সাগরে তল্লাশি চালানো হয়।
ডুবে যাওয়া নৌকায় অর্ধশতাধিক লোকজন ছিল বলে জানিয়েছেন উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গারা।
মানব পাচারকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য ঈমান হোসাইন ও আবুল মনছুর মিলে মিয়ানমারের থেকে রোহিঙ্গা পারাপার করছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
আরও পড়ুন:সিলেটের কানাইঘাট সীমান্তের ওপারে ভারতীয় খাসিয়াদের গুলিতে নিহত শাহেদ আহমদের মরদেহ ফেরত দিয়েছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ।
পতাকা বৈঠকের পর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের কাছে শনিবার রাত সাড়ে সাতটার দিকে মরদেহ হস্তান্তর করে তারা।
পুলিশ জানায়, বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্তবর্তী বড়ছড়া এলাকায় বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের পর ভারতের মেঘালয় রাজ্য পুলিশের হেফাজতে থাকা গুলিবিদ্ধ শাহেদ আহমদের মরদেহ বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে বিএসএফ।
পতাকা বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন জকিগঞ্জ বিজিবি ১৯ ব্যাটালিয়নের কোম্পানি কমান্ডার গোলাম কবির, কানাইঘাট থানার ওসি (তদন্ত) মো. আবু সায়েম এবং ভারতের পক্ষে বিএসএফ ও সেখানকার পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা।
কানাইঘাট থানার ওসি (তদন্ত) মো. আবু সায়েম জানান, পতাকা বৈঠক শেষে শাহেদ আহমদের মরদেহ বিজিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়। মরদেহ থানায় নিয়ে আসার পর আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে ভারতীয় খাসিয়ার গুলিতে নিহত হন শাহেদ আহমদ। তিনি লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী মঙ্গলপুর আলুবাড়ি গ্রামের মশাহিদ আলীর পুত্র।
তার মরদেহ উদ্ধার করে সেখানকার পুলিশ ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে। খবর পেয়ে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও থানা পুলিশকে অবহিত করে পরিবার। পরে বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগ করে মরদেহ আনার উদ্যোগ নেয় বিজিবি।
আরও পড়ুন:টানা তিন দিন ধরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পানির সংকটে ছিল কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল। তবে সোমবার রাতে নতুন মোটর লাগানোর পর পানির সংকট কেটেছে।
গত তিন দিন পানি না থাকায় ভোগান্তিতে ছিলেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন গড়ে ৩০০ থেকে ৩৫০ জন রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে ভর্তি থাকেন হাসপাতালে। ২৫০ শয্যার এ হাসপাতালে রোগী ও স্বজনসহ সহস্রাধিক মানুষ অবস্থান করেন।
প্রতিদিন এখানে ২০ হাজার লিটার পানি প্রয়োজন। হাসপাতালে পানির সংকটের কারণে অন্তত ৩০ জন রোগী অন্যত্র চলে গেছে বলেও খবর পাওয়া যায়।
পানির মোটর বিকল হয়ে যাওয়ায় হাসপাতালটিতে শনিবার বেলা ১১টা থেকে শৌচাগারসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। পানি সংকটে শৌচাগার থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে হাসপাতালে।
টানা দুই দিন বিকল হয়ে যাওয়া মোটরটি সচল করার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয় কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে ফায়ার সার্ভিস ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের মাধ্যমে পানি সরবরাহের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাতে প্রয়োজন মেটেনি।
কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের (ভারপ্রাপ্ত) তত্ত্বাবধায়ক ডা. নূর মোহাম্মদ শামসুল আলম বলেন, ‘বিগত তিন দিনে রোগীদের অনেক ভোগান্তি হয়েছে, এটা সত্য। তবে আমরা আমাদের অবস্থান থেকে সমস্যা সমাধানে সর্বোচ্চ চেষ্টাটুকু করেছি।
‘গতকাল রাতে একটি নতুন মোটর লাগানোর পর পানি সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে।’
আরও পড়ুন:মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলাধীন মেঘনা নদীতে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারের সঙ্গে স্পিডবোটের সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে ছয়জনকে।
হতাহত সবাই নৌ ডাকাত নয়ন বাহিনীর সক্রিয় সদস্য বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
প্রাণ হারানো চারজন হলেন গজারিয়া উপজেলার গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলী বেপারীর ছেলে ওদুদ বেপারী (৩৬), মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা চরঝাপ্টা রমজানবেগ গ্রামের বাচ্চু সরকারের ছেলে বাবুল সরকার (৪৮), চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার সাকিব (২৬) ও একই এলাকার নয়াকান্দি বড়ইচর গ্রামের মোহন ভান্ডারের ছেলে নাঈম (২৫)।
মেঘনা নদীর কালীপুরা ঘাট সংলগ্ন এলাকায় শুক্রবার রাত ১০টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, হতাহত সবাই নৌ ডাকাত নয়ন বাহিনীর সক্রিয় সদস্য। তারা সবাই অবৈধ বালুমহাল পরিচালনার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। নিহত ওদুদ বেপারি নৌ ডাকাত নয়ন বাহিনীর সেকেন্ড ইন কামান্ড পিয়াসের বড় ভাই।
স্থানীয় ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গজারিয়া উপজেলার গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামসংলগ্ন মেঘনা নদীতে অবৈধ একটি বালুমহাল পরিচালনা করতেন নৌ ডাকাত নয়ন বাহিনীর লোকজন। দিনের আলোতে নদীর ওই অংশে বালুমহালের অস্তিত্ব না থাকলেও সন্ধ্যা হলেই সেখানে চালু করা হতো বালুমহাল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অসংখ্যবার অভিযান চালিয়েও অবৈধ বালুমহালটি বন্ধ করতে পারেনি।
সন্ধ্যায় অবৈধ বালুমহাল চালুর পর আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তিন থেকে চারটি স্পিডবোট ও ট্রলার নিয়ে নদীতে মহড়া দেয় নয়ন বাহিনীর লোকজন। এ বাহিনীর সাথে বিগত কয়েক মাসে কয়েকবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রতিপক্ষের গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়দের দাবি, শুক্রবার রাতে অবৈধ বালুমহালের জন্য বাল্কহেড আটক করতে একটি স্পিডবোট ও ইঞ্জিনচালিত একটি ট্রলার নিয়ে যাচ্ছিল নয়ন বাহিনীর লোকজন। ওই সময় নৌযান দুটিতে ১০ থেকে ১১ জন আরোহী ছিল। রাতে ঘন কুয়াশার কারণে দ্রুতগতির স্পিডবোটটি দিক ভুলে ট্রলারে ধাক্কা দিলে ট্রলারটি তলিয়ে যায় এবং স্পিডবোটটি দুমড়েমুচড়ে যায়।
এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে তিনজনের লাশ উদ্ধার হলেও নাঈম (২৫) নামে একজন নিখোঁজ হন।
তার সন্ধানে উদ্ধার অভিযান শুরু করে ফায়ার সার্ভিস, কোস্ট গার্ড ও বিআইডব্লিউটিএ। পরবর্তী সময়ে শনিবার দুপুর দুইটার দিকে নাঈমের লাশ উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধার ইউনিট প্রত্যয় নারায়ণগঞ্জের কমান্ডার ও বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক ওবায়দুল করিম খান বলেন, ‘শুক্রবার রাতে আমরা শুনেছিলাম বাল্কহেডের সাথে স্পিডবোটের সংঘর্ষ হয়েছে। তবে ঘটনাস্থলে আসার পরে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, স্পিডবোটের সাথে একটি ইঞ্জিনচালিত ট্রলারের সংঘর্ষ হয়েছে। দুর্ঘটনায় ট্রলারটি তলিয়ে যায় এবং স্পিডবোটটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমার ধারণা, যারা মারা গেছে, তারা সবাই ট্রলারের যাত্রী ছিল।
‘এ ঘটনায় একজন নিখোঁজ ছিল। উদ্ধার অভিযানের একপর্যায়ে শনিবার দুপুর দুইটার দিকে দুর্ঘটনাস্থলের অদূরে ঝোঁপ থেকে নিখোঁজ নাঈমের লাশ উদ্ধার করি আমরা।’
নিহত ওদুদ বেপারীর স্ত্রী ফেরদৌসীর দাবি, অবৈধ বালুমহাল পরিচালনা নয়, পার্শ্ববর্তী মতলব উত্তর উপজেলার একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ শেষে ফেরার পথে দুর্ঘটনার শিকার হন তারা। এ ঘটনায় চারজন নিহত হন। আহত হন পাঁচ থেকে ছয়জন।
গজারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার আলম আজাদ বলেন, ‘ঘন কুয়াশার কারণে নদীতে একটি ট্রলারের সঙ্গে দ্রুতগতির স্পিডবোটের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছে। বিস্তারিত পরে বলতে পারব।’
আরও পড়ুন:ঝালকাঠি সদর উপজেলার রামপুর জোড়াপোল এলাকায় ৬ জানুয়ারি সুদেব হালদার (২৮) নামের ব্যবসায়ীকে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় জড়িতরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্বজন ও স্থানীয়রা।
সুদের হত্যার দিনই ঝালকাঠি সদর থানায় একটি মামলা করেন তার বাবা সুব্রত হালদার। কিন্তু ঘটনার তৃতীয় দিনেও হত্যায় জড়িত কাউকেই গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
এমন বাস্তবতায় ক্ষোভ জানিয়েছে নিহতের পরিবার, স্বজন ও এলকাবাসী। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা প্রতিবাদ করতে বৃহস্পতিবার দোকান বন্ধ রেখে রাস্তায় নামেন।
সকালে ঝালকাঠির বাউকাঠি বাজারের সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এক ঘণ্টার জন্য বন্ধ করে প্রতিবাদ জানান ব্যবসায়ীরা।
সকাল ১০টার দিকে সুদেব হালদারের বাউকাঠি বাজারের মোবাইল ফোনের দোকানের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন ব্যবসায়ীরা।
মানববন্ধন চলাকালে বক্তৃতা করেন নবগ্রাম ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও ব্যবসায়ী সরদার মো. শহিদুল্লাহ, বাউকাঠি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. রুহুল আমিন ফকির, সাধারণ সম্পাদক মো. সিরাজুল ইসলাম, ব্যবসায়ী রাহুল রাড়ী, রফিকুল ইসলাম, আলতাফ হোসেন মোল্লা, আলী হায়দার রাড়ী, মো. আবু বক্কর, সৈয়দ রুহুল আমিন, মো. বেল্লাল খান, মো. আনিস সিকদার এবং নিহতের সহোদর সাগর হালদার সুকেশসহ অনেকে।
বক্তাদের একজন বলেন, ‘দ্রুত সময়ের মধ্যে সুদেব হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় লাগাতার কর্মসূচি দেওয়া হবে।’
ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচিতে শতাধিক ব্যবসায়ী অংশ নেন।
গত ৬ জানুয়ারি রাতে সুদেব হালদার দোকান বন্ধ করে বাড়ির পথে রওনা হলে দুর্বৃত্তরা তার গলা কেটে হত্যা করে পালিয়ে যায়। সকালে স্থানীয়রা মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়।
আরও পড়ুন:বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে সচিবালয়ে আগুন ধরেছিল বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গণি।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে মঙ্গলবার প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন হস্তান্তর শেষে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
নাসিমুল গণি বলেন, ‘আমাদের প্রাথমিক তদন্তে যেটা উঠে এসেছে, এটা বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণেই আগুন লেগেছে। প্রাথমিক তদন্তে কোনো ধরনের নাশকতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।’
গত ২৬ ডিসেম্বর সচিবালয়ের একটি ভবনের চারটি ফ্লোর পুড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। ৭ নম্বর ভবনের এসব ফ্লোরে পাঁচটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আংশিক কার্যালয় এবং একটি বিভাগের পুরো কার্যালয়ের অবকাঠামোর সঙ্গে সব নথিপত্রও পুড়ে যায়।
তদন্ত কমিটির অন্যতম সদস্য বুয়েটের অধ্যাপক ড. মাকসুদ হেলালী জানান, প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে দাখিল করা হয়েছে। তার সঙ্গে প্রাথমিক তদন্ত কমিটির রিপোর্ট নিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা বিস্তারিত আলোচনা হয়। প্রধান উপদেষ্টা বিশেষজ্ঞ দলের কাছে বিভিন্ন বিষয়ে খুঁটিনাটি জেনে নিয়ে ভবিষ্যতে করণীয় সম্পর্কে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ বলেন, কোনো বিস্ফোরক ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের দেয়া নমুনাতেও কোনো বিস্ফোরক ব্যবহারের আলামত পাওয়া যায়নি। ডগ স্কোয়াডের সার্চেও মেলেনি বিস্ফোরকের আলামত।
আরও পড়ুন:পরিবহন শ্রমিকদের ডাকা কর্মবিরতির কারণে সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।
সড়ক দুর্ঘটনায় এক কিশোরের মৃত্যুর জেরে একাধিক বাস ভাঙচুরের প্রতিবাদে সোমবার থেকে বাস চলাচল বন্ধ রাখেন শ্রমিকরা। মঙ্গলবারও ওই সড়কটিতে বাস চলাচল করেনি।
বাস বন্ধের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন জকিগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারগামী যাত্রীরা।
জকিগঞ্জের কামালগঞ্জ এলাকায় বাসের ধাক্কায় এক স্কুলছাত্রের নিহতের ঘটনার জেরে বাস ভাঙচুরের ঘটনায় সিলেট জেলা বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়ন অনির্দিষ্টকালের এ কর্মবিরতির ডাক দেয়। এর আগে সোমবার বিকেলে মঙ্গলবার থেকে সিলেটজুড়ে কর্মবিরতির ডাক দিলে রাতে ওই অবস্থান থেকে সরে আসেন শ্রমিকরা। কেবল সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে কর্মবিরতি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন তারা।
কদমতলী বাস টার্মিনালে মঙ্গলবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, টার্মিনাল থেকে কোনো বাস জকিগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে যায়নি। একইভাবে জকিগঞ্জ থেকেও সিলেটের উদ্দেশে কোনো বাস ছেড়ে আসেনি। বাস চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রীরা পড়েন মারাত্মক দুর্ভোগে।
টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, অনেক যাত্রী সেখানে বসে আছেন বাসের অপেক্ষায়। বাস ছেড়ে যাবে না জানার পরও তারা অপেক্ষা করছেন ধর্মঘট প্রত্যাহারের।
জকিগঞ্জ যাওয়ার জন্য টার্মিনালে অপেক্ষা করছিলেন কালিগঞ্জের যাত্রী বদরুল ইসলাম। তিনি জানান, পরিবার নিয়ে তিনি সকালে কদমতলী টার্মিনালে এসেছেন, কিন্তু কোনো বাস ছেড়ে যাচ্ছে না। তাই মারাত্মক বিপাকে পড়েছেন।
তিনি আরও জানান, বিকেল নাগাদ ধর্মঘট প্রত্যাহার না হলে মাইক্রোবাস রিজার্ভ করে তাকে বাড়ি ফিরতে হবে।
গত রোববার সকালে জকিগঞ্জের কামালগঞ্জ আব্দুল মতিন কমিউনিটি সেন্টারের নিকটে সড়কের পাশে শিশু-কিশোররা ফুটবল খেলছিল। হঠাৎ বল সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে চলে গেলে সেটি আনতে আবির আহমদ (১৪) নামের এক কিশোর দৌড় দেয়। সে সময় দ্রুতগামী একটি গেটলক বাসের ধাক্কায় সে গুরুতর আহত হয়।
পরে তাকে হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পর স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা বাসটি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন।
পরিবহন শ্রমিকদের অভিযোগ, অন্তত তিনটি বাস ভাঙচুর করা হয় ওই সময়। এর প্রতিবাদে সোমবার পরিবহন শ্রমিকরা সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন। মঙ্গলবারও এ সড়কে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন তারা।
জেলা বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মুহিত বলেন, ‘আমাদের বাসের চালক অন্যায় করলে আইন অনুযায়ী তার শাস্তি হবে, কিন্তু আইন হাতে তুলে নিয়ে বাস ভাঙচুর করা ও পোড়ানো সন্ত্রাসী কাজ।
‘আমরা এর বিচার চাই। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত বাসের চালক বাদী হয়ে জকিগঞ্জ থানায় মামলা দায়েরের আবেদন করেছেন।’
জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহিরুল ইসলাম মুন্না বলেন, ‘বাস ভাঙচুরের দাবি করে রোববার রাতে হেলাল মিয়া নামের একজন লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। সেটি আমরা তদন্ত করে দেখছি। সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে এখন বাস, মিনিবাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য