দেশের গুরুত্বপূর্ণ দুই নৌপথ পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও শিমুলিয়া-বাংলাবাজারে ফেরিতে গত কয়েক দিন যানবাহনের বেশ চাপ থাকলেও বৃহস্পতিবার ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে।
চারটি ঘাটে সকাল থেকে যানবাহনের তেমন চাপ দেখা যায়নি।
পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া
মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া থেকে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া পর্যন্ত নৌপথে সকালে যানজট ছিল না, তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানবাহনের চাপ কিছুটা বেড়েছে।
বৃহস্পতিবার অফিস শেষে অনেকেই বাড়িতে ফিরবেন। এ কারণে বিকেল থেকে যানজটের আশঙ্কা করছেন অনেকে।
রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটে বুধবার রাত ১২টা থেকে অপচনশীল পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ ছিল। এ কারণে অন্য দিনের মতো যানবাহনের দীর্ঘ সারি ছিল না বৃহস্পতিবার সকালে।
গত কয়েক দিন এ ঘাটে হাজার হাজার যানবাহন ফেরি পারের অপেক্ষায় ছিল। সকালে সাড়ে তিন শর মতো গাড়িকে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। দুই থেকে তিন ঘণ্টার মধ্যেই ফেরিতে উঠতে পেরেছে গাড়ি।
ফেরির অপেক্ষায় থাকা বাসচালক বাদশা রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আজকে ঘাটে বেশি চাপ নেই। তাও ১ ঘণ্টার বেশি বসে আছি। মনে হচ্ছে, আর ১ ঘণ্টার মধ্যে সিরিয়াল পাব।
‘ঢাকামুখী যাত্রী তেমন নেই, তবে আজ বিকেল থেকে ঘরমুখী মানুষের চাপ বাড়বে অনেকটা।’
প্রাইভেটকারের চালক শুভ রহমান বলেন, ‘আমি একজনের গাড়ি চালাই। ঈদের ছুটিতে তারা ঢাকা থেকে খুলনা যাচ্ছে। ভোগান্তি এড়াতে ফাঁকা সময়ে আগেই বাড়িতে যাচ্ছে তারা।’
গোয়ালন্দ পুলিশ কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় ১৮টি ফেরি চলাচল করছে। রাত থেকে অপচনশীল পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ রয়েছে।
এদিকে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে সকালে চাপ কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রী ও ব্যক্তিগত ছোট গাড়ির চাপ কিছুটা বাড়ছে। দীর্ঘ হচ্ছে যানবাহনের সারি।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ নৌপথে ১৯টি ফেরি চলাচল করছে। সকালে চাপ কম ছিল। বর্তমানে পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় ছোট-বড় মিলিয়ে পাঁচ শতাধিক যানবাহন ফেরি পারের অপেক্ষায় রয়েছে।
ফরিদপুরগামী যাত্রী আব্দুল্লাহ বলেন, ‘ফেরি পারের জন্য প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষা করছি, কিন্তু ফেরির দেখা মিলছে না। রোজার মধ্যে গরমে বিরক্ত লাগছে।’
হাসেম আলী নামের আরেক যাত্রী বলেন, ‘গাড়িতে বসে থাকতে কষ্ট হচ্ছে। পুরো রাস্তায় ভোগান্তি হলেও পাটুরিয়ায় একটু বেশি হয়। ঈদের আগে সরকারের কিছু করা দরকার পাটুরিয়ায়।’
বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয়ের সহকারী উপব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মহীউদ্দীন রাসেল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষ ও যানবাহনের চাপ কিছুটা বেড়েছে, তবে এটা কোনো চাপ না, ঘাট স্বাভাবিক বলা চলে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ফেরি সচল থাকলে ঘাটে কোনো ভোগান্তি হবে না। যাত্রী ও যানবাহন চালকদের ফেরির জন্য একটু অপেক্ষা করতে হবে।’
শিমুলিয়া-বাংলাবাজার
মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ফেরি ঘাটে বৃহস্পতিবার ভোরে তিন শর মতো গাড়ি ফেরির অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেলেও সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চিত্র পাল্টে যায়। ৫০ থেকে ৬০টি গাড়ি ছিল পারের অপেক্ষায়। এতে অনেকটাই ফাঁকা হয়ে যায় ঘাট।
বিআইডব্লিউটিসির শিমুলিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. ফয়সাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘৯টি ফেরি চলাচল করছে। সকাল থেকে শতাধিক মোটরসাইকেলসহ চার শতাধিক যানবাহন পার হয়েছে।
‘আজ অফিসের শেষ দিন। বিকেল থেকে যাত্রীদের চাপ বাড়তে পারে।’
বিআইডব্লিউটিসির বাংলাবাজার ফেরি ঘাটের ম্যানেজার সালাউদ্দিন মিয়া জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ঘরমুখো যাত্রীদের ভিড় ছিল। দুপুরের পর থেকে চাপ কিছুটা কমেছে।
আরও পড়ুন:কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে মেয়র পদে ৬ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।
কাগজপত্রে অসংগতি থাকায় ৯ জন সাধারণ কাউন্সিলর ও একজন সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীর মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
কুমিল্লা শিল্পকলা একাডেমিতে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে বৃহস্পতিবার বিকেলে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহেদুন্নবী এ ঘোষণা দেন।
মেয়র পদে মনোনয়নপত্রে বৈধতা পেয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত, স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু (বিএনপি), মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন কায়সার (বিএনপি), কামরুল আহসান বাবুল ও মাসুদ পারভেজ খান ইমরান এবং ইসলামী আন্দোলনের রাশেদুল ইসলাম।
নির্বাচন কমিশন থেকে জানা যায়, ১৭ মে মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিনে ১৬৪ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন। এর মধ্যে ৬ মেয়র প্রার্থী, ১২০ সাধারণ কাউন্সিলর এবং ৩৮ সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী।
মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করা প্রার্থীরা হলেন ২ নম্বর ওয়ার্ডের বিল্লাল হোসেন, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কবির আহমেদ, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মো. এরশাদ হোসেন, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের আবুল কালাম আজাদ, ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের সৈয়দ রুমন আহমেদ, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের জুয়েল, ২১ নম্বর ওয়ার্ডের মো. মিন্টু, জামাল হোসেন কাজল ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের আবুল কালাম আজাদ।
সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ফারজানা আক্তারের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহেদুন্নবী জানান, মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করা প্রার্থীরা ২০ থেকে ২২ মের মধ্যে আপিল করতে পারবেন।
আরও পড়ুন:কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে মাদ্রাসাছাত্রকে বলাৎকারের মামলায় শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
দৌলতপুর উপজেলার দাঁড়েরপাড়া কওমী এতিমখানা ও মাদ্রাসা থেকে বৃহস্পতিবার সকালে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
দৌলতপুর থানার ওসি জাবীদ হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আসামির নাম রবিউল ইসলাম। তার বাড়ি রাজশাহী জেলায়। তিনি ওই মাদ্রাসার আবাসিক শিক্ষক।
ওসি জাবীদ হাসান বলেন, ‘বুধবার মধ্যরাতে মাদ্রাসাটির চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রের বাবা বলাৎকারের মামলা করেন। এরপর বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে মাদ্রাসা থেকে শিক্ষক রবিউলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে দৌলতপুর আমলী আদালতে পাঠানো হয়েছে।’
মামলার বরাতে ওসি জানান, রবিউল ছেলেটিকে কয়েকবার বলাৎকার করেছেন। সবশেষ গত ৯ এপ্রিল এ ঘটনা ঘটে।। এরপর ছেলেটি ভয়ে মাদ্রাসায় যেতে চাইতো না। গত বুধবার সে বলাৎকারের কথা বাবাকে জানায়। এরপরই মামলা করেন তার বাবা।
আরও পড়ুন:‘আমার বাজানটা আমার লগে ক্ষেতও গেছিল, বৃষ্টি আইয়া আমার ধান-বাদাম সব নিছে, এখন আমার জানের টুকরাটারে নিসে গি আল্লায়, আমি এখন বাঁচতাম কিলা।’
১২ বছরের মেয়ে রিপা বেগমকে বজ্রপাতে হারিয়ে বিলাপ করছেন বাবা ফজর রহমান। একই অবস্থা অন্য দুই পরিবারেও।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বাদাঘাট ইউনিয়নের সুন্দরপুর পাহাড়ি গ্রামে বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বজ্রপাতে একসঙ্গে তিন শিশুর মৃত্যু হয়।
হঠাৎ আসা ঝড় থেকে রক্ষা পেতে শিশুরা কুঁড়েঘরে আশ্রয় নিয়েছিল, রেহাই মেলেনি। এ সময় আহত হন আরও আটজন। গোটা এলাকা শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে।
সুন্দরপুর পাহাড়ি গ্রামের বাসিন্দা মল্লিক চান বলেন, ‘এ এলাকার মানুষ বাদাম চাষের সঙ্গে ধানও রোপণ করেন। ছেলেমেয়েরা এই উঠানেই খেলাধুলা করত, এখন চারদিকে কান্নার আওয়াজ।
‘আমরা এই শোক কাটিয়ে উঠতে পারব কি না জানি না, তবে এটাই বলতে পারব পেটের দায়ে বেরিয়ে বজ্রপাতে সন্তানদের হারিয়েছেন তাদের বাবা-মা।’
আরেক প্রতিবেশী সত্তার মিয়া বলেন, ‘যখন বৃষ্টি আসে ছেলেমেয়েরা দৌড় দিয়া কুঁড়েঘরও আশ্রয় নিসিল। বজ্রপাতটা ওই জায়গাই হয়। তারারে যখন তুলার লাগি গেছি, গিয়া দেখি তিনটা বাচ্চা পড়িয়া রইছে। এইসব দেখিয়া কিতা কইতাম, আল্লাহ তারারে এই কষ্ট সহ্য করার তৌফিক দিতা।’
তিন শিশুর দাফনের জন্য ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ৫ হাজার টাকা করে দিয়েছেন বাদাঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘খবর পাওয়ামাত্র ছুটে এসেছি। এ এলাকার মাটি বাদাম চাষের জন্য খুব ভালো। শিশুরাও বাবা-মাকে কৃষিকাজে সহযোগিতা করে আসছিল। সকালে বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তিন শিশু মারা যায়।’
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রায়হান কবির নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন শিশুর পরিবারকে সহযোগিতা করা হবে। প্রশাসন এই পরিবাগুলোর পাশে রয়েছে।’
আরও পড়ুন:জামালপুরের ইসলামপুরে যমুনা নদীর বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের বাঁধের ৩০ মিটার অংশ ধসে গেছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে বসতভিটাসহ নানা স্থাপনা।
কুলকান্দি হার্ড পয়েন্ট এলাকায় বুধবার বিকেলে এ ধস দেখা দেয়।
নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু সাঈদ।
তিনি জানান, ‘বাঁধ ধস রোধে জিও ব্যাগ ড্যাম্পিং করা হচ্ছে। আমরা এই জায়গাটি পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তীতে আরও জিও ব্যাগ ড্যাম্পিং করার ব্যবস্থা করব।’
স্থানীয় বাসিন্দা লাবিব আক্তার বলেন, ‘যমুনা নদীর বাম তীর প্রকল্পে বাঁধ নির্মাণের পর আমরা একটু ভালোভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখছিলাম। কিন্তু এই বাঁধ ধসের কারণে এই স্বপ্ন বারবার ভেঙে যাচ্ছে। আমরা চাই এই ধস রোধে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিক।’
আরেক বাসিন্দা আহসান আলী মণ্ডল বলেন, ‘আমার এই জীবনে ৮ বার নদীভাঙনের শিকার হয়েছি। এখন এই বাঁধ ধস হলে মরণ ছাড়া উপায় নাই।’
আরেক বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বুধবার বিকেল থেকে ধস দেখা দেয়। আমরা আতঙ্কে আছি। এই ধস দ্রুত না থামলে তাদের বাড়িঘর সব বিলীন হয়ে যাবে।’
এসব বিষয়ে জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু সাঈদ জানান, ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে অতিবৃষ্টির কারণে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া এই জায়গায় নদীর গতি-প্রকৃতি পরিবর্তন হয়েছে। নতুন একটি চ্যানেল হয়েছে। তাই এখানে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের ফুটানি বাজার থেকে ইসলামপুরের কুলকান্দি পর্যন্ত ৮ দশমিক ১ কিলোমিটার এলাকায় নদীতীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ শেষ হয় ২০১৭ সালে।
সিলেটে ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে বোরো ধান। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আউশ ধান চাষে মনোযোগী হয়ে ছিলেন সিলেটের গোয়াইনঘাটের পূর্ব জাফলং এলাকার কৃষক নিজাম উদ্দিন।
দুই একর জমিতে আউশের বীজ রোপন করেছিলেন। বীজ থেকে চারাও গজিয়ে ছিল। কিছুদিনের মধ্যে এই চারা রোপনের পরিকল্পনা করছিলেন নিজাম। কিন্তু সেই পরিকল্পনায় গুড়েবালি। বন্যায় তলিয়ে গেছে নিজামের বীজতলা।
নিজাম উদ্দিন আক্ষেপ করে বলেন, ‘৪ দিন ধরে বীজতলা পানিতে ডুবে আছে। সব চারা পচে যাবে। গত মাসে বন্যায় বোরো ধান গেছে। এবার আউশও চলে গেলে আমাদের বছর চলবে কী করে? খাবো কী?
কেবল নিজাম উদ্দিন নন, এই আক্ষেপ এখন সিলেটের বেশিরভাগ কৃষকের। গত মার্চ-এপ্রিলের অসময়ের বন্যায় সিলেটের সুনামগঞ্জে বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এবারের বন্যায় বোরোর পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে আউশও।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের হিসেবে, চলমান বন্যায় বুধবার পর্যন্ত আউশ ধানের বীজতলা এক হাজার ৩০১ হেক্টর, বোরো ধান এক হাজার ৭০৪ হেক্টর এবং গ্রীষ্মকালীন সবজি এক হাজার ৪ হেক্টর পানিতে তলিয়ে গেছে।
এদিকে সিলেটে বৃহস্পতিবারও অব্যাহত রয়েছে পানি বৃদ্ধি। ফলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হচ্ছে। অব্যাহত রয়েছে বৃষ্টিও। জেলা প্রশাসনের হিসেবেই, সিলেটে ১০ লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় আছেন। তবে বেসরকারি হিসেবে এ সংখ্যা ১৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের সহকারী প্রকৌশলী নিলয় পাশা জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে পাওয়া হিসেবে, সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৭৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ পর্যন্ত সিলেট জেলায় সুরমা-কুশিয়ারা নদীর ৩৪ বাঁধ ভেঙ্গে পানি ঢুকেছে বিভিন্ন এলাকায়।
বন্যায় সিলেট সদর, দক্ষিণ সুরমা, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার পর এবার বিয়ানীবাজার এবং গোলাপগঞ্জ উপজেলারও বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
পানি উঠেছে কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট উপজেলা কমপ্লেক্সে। এসব উপজেলার অনেক বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রেও পানি উঠে গেছে। এতে আশ্রিতরা পড়েছেন বিপাকে।
সিলেট জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, জেলার বিভিন্ন উপজেলার ৫৫টি ইউনিয়ন সম্পূর্ণভাবে এবং ১৫টি ইউনিয়ন আংশিকভাবে প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানিতে সিলেট সদর ও জৈন্তাপুর উপজেলায় নৌকাডুবিতে ৩ জন মারা গেছেন। গোলাপগঞ্জে পাহাড় ধসে একজন মারা গেছেন।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মজিবর রহমান বলেন, ‘জেলায় ২৭৪টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বর্তমানে ৭৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৬৪৭৫ জন আশ্রয় নিয়েছেন। গবাদিপশুর জন্য ২২০টি আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বন্যার্তদের মধ্যে এরই মধ্যে ৫ লাখ ৩৪ হাজার টাকা, ১৪৯ টন চাল, ১৭৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। আশয়কেন্দ্রে স্বাস্থ্যসেবা ও বিশুদ্ধ পানি দেয়া হচ্ছে। ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে আরও ২৫ লাখ টাকা, ২০০ টন চাল ও ৪০০০ প্যাকেট শুকনো খাবার পাওয়া গেছে।’
আরও পড়ুন:বানের পানির তোড়ে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারের দোয়ালিয়ায় একটি সেতু ভেঙে গেছে। পানির স্রোতে তছনছ হয়ে গেছে সেতুর পিলার ও সংযোগ সড়ক। এতে জেলা সদরের সঙ্গে ছাতক উপজেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে সুনামগঞ্জে বন্যার অবনতি হয়েছে। জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে বানের স্রোতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দোয়ারাবাজার ও ছাতক।
স্থানীয়রা জানান, আট বছর আগে সুনামগঞ্জ সদর ও ছাতক উপজেলার মধ্যে যোগাযোগের জন্য এই সেতুটি নির্মাণ করা হয়। এবারের ঢলের পানিতে এটি পুরোপুরি ভেঙে গেছে। সদরের সঙ্গে ছাতকের যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
দোয়ালিয়া এলাকার আনিক রায় বলেন, দুই দিনের টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে আসা ঢলের পানিতে কালভার্টটি ভেঙে গেছে। দোয়ারাবাজারবাসী বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।
দোয়ারাবাজার উপজেলা চেয়ারম্যান দেওয়ান আল তানভীর আশরাফী চৌধুরী বলেন, ‘এবারের বন্যায় আমার উপজেলায় অনেক ক্ষতি হয়েছে। সীমান্তবর্তী হওয়ায় ঢলের পানির স্রোত ভয়ংকর রূপ নিয়েছে। দোয়ালিয়া ইউনিয়ন এলাকার সেতুটি ভেঙে গেছে।
প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ কালভার্টটি দিয়ে চলাচল করতেন। এখন আমাদের একমাত্র বাহন নৌকা। বন্যার পানি কমলে পরে দেখব, এখানে কেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’
সুনামগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুব আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বন্যায় পানির স্রোতে কালভার্টটি ভেঙে গেছে। তবে এখনই বলতে পারব না, এটা মেরামত করা হবে নাকি নতুন করে তৈরি করতে হবে। পানি কমার পর যা ব্যবস্থা নেয়া লাগে সেটিই করব।’
আরও পড়ুন:ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় নিষিদ্ধ পিরানহা মাছ বিক্রি দায়ে দুইজনকে জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
পৌর শহরের বড় বাজারে বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
উপজেলার সহকারী কমিশনার-ভূমি (এসিল্যান্ড) ও নিবার্হী ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম ওই বাজারে অভিযানে যান।
তিনি বলেন, ‘বাজার তদারকি করতে গিয়ে পিরানহা মাছ বিক্রি করতে দেখা যায়। তাৎক্ষণিক ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ২ বিক্রেতাকে ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।’
তিনি জানান, দুই বিক্রেতার কাছ থেকে মোট ১২ কেজি পিরানহা মাছ জব্দ করা হয়। সেগুলো মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়।
অভিযানে ছিলেন আখাউড়া উপজেলা মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রওনক জাহান ও পুলিশ সদস্যরা।
রওনক নিউজবাংলাকে জানান, রাক্ষুসে স্বভাবের কারণে পিরানহা জলজ প্রাণী খেয়ে ফেলে। জলাশয়ের দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষায় মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রজ্ঞাপন জারি করে পিরানহা মাছ চাষ, উৎপাদন, পোনা উৎপাদন, বংশবৃদ্ধি ও বেচা-কেনা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য