আসিফ হোসেন ব্যাংকে চাকরি করেন। বিকেলে অফিস শেষে সন্ধ্যায় এসেছেন কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড়ে। গুণগত পণ্যের খোঁজে এক শপিং মল থেকে যাচ্ছেন আরেক শপিং মলে।
সদ্য বিবাহিত আসিফের শপিংয়ে সঙ্গী তার স্ত্রী। আসিফ বললেন, এবারের ঈদটা তার জন্য স্পেশাল। কারণ বিয়ের পর এটাই তার প্রথম ঈদ। তাই কেনাকাটা করতে হচ্ছে যাচাই বাছাই করে। রাত ১২টায় এ প্রতিবেদককে জানান, কেনাকাটা শেষ করতে লাগবে আর ঘণ্টাখানেক।
ঈদের বাকি আর সপ্তাহখানেক। ঈদের কেনাকাটায় ক্রেতা-বিক্রেতার পদচারণায় মার্কেট মুখর হয়ে উঠছে। দাবদাহে পুড়ছে সারা দেশ। দিনে প্রচণ্ড খরতাপে অতিষ্ট জনজীবন। তাই গরম আর ভিড় এড়িয়ে স্বাচ্ছন্দে কেনাকাটার জন্য অনেকে বেছে নিয়েছেন রাতের বেলা।
নানান পোশাকের নিত্যনতুন কালেকশনের পসরা সাজিয়েছে কুমিল্লা নগরীর বিপণিবিতানগুলো। ফুটপাতেও বিকিকিনি চলছে বেশ।
নগরীর চকবাজার থেকে নিজের ও শাশুড়ির জন্য দুটি শাড়ি কিনেছেন কলেজ শিক্ষিক হাসিনা জান্নাত। তিনি বলেন, ‘রোজা রেখে দিনের বেলা কেনাকাটা করা সম্ভব না। রাতের বেলা এক দোকান থেকে আরেক দোকানে ঘুরে কাপড়ের গুণগত মান দেখে কেনা যায়। তাই রাতেই আসা।’
নগরীর রেইসকোর্স ইষ্টার্ণ ইয়াকুব প্লাজার গ্যালারি ২১ এর স্বত্বাধিকারী বাপন জানান, তার দোকানে তরুণীদের সব রকমের পোশাক তুলেছেন। দিনভর বিক্রি হয়। তবে ইফতারের পর থেকে বিকিকিনি অনেক বেড়ে যায়। চার জন বিক্রয়কর্মী নিয়ে বিকিকিনি সামলাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে।
গ্যালারি ২১ এ ভারতীয় থ্রী পিস কিনতে আসা মাহবুবা কামাল রুজি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঈদে নতুন কালেকশনগুলো অনলাইনে দেখে এসেছি। রঙ ও কাজ মিলিয়ে দেখে কিনতে একটু সময় লাগে। তাই ইফতারের পর এসেছি। দিনে রোজা রেখে রোদের মধ্য একটা শপিং মল থেকে আরেকটাতে যেতে অনেক কষ্ট হয়। এছাড়াও যানজটের বাড়তি যন্ত্রণা থাকে।’
নগরীর কান্দিরপাড় সাত্তারখান শপিং কমপ্লেক্সের জুতো দোকানী জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘আর দুই একদিন পরে রাতজুড়েই বিকিকিনি চলবে। এখন দোকান বন্ধ করতে করতে ২টা বেজে যায়।’
ইস্টার্ণ ইয়াকুব প্লাজার দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ‘শপিং মলের ভেতরে যেন ক্রেতারা নিজেদের পছন্দ মতো কেনাকাটা করতে পারেন, সে জন্য সকল রকম ব্যবস্থা করা রয়েছে। সবচেয়ে বেশি গুরত্ব দেয়া হয়েছে নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়টি।’
এদিকে কুমিল্লার মনোহরপুর দর্জি পাড়ায় চলছে কাঁচি দিয়ে কাপড় কাটা, মাপ নেয়ার কাজ। পালা করে কাজ করেন কারিগররা। রাতভর সজাগ থেকে ভোরে ঘুমাতে যান তারা। এ সময় আরেক দল শুরু করেন খদ্দরের অর্ডার করা পোশাকের সেলাইয়ের কাজ।
তানিয়া টেইলার্সের স্বত্বাধিকারী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘গত দুই বছর করোনার কারণে মানুষ তাদের পছন্দের পোশাক কিনতেও পারেনি, বানাতেও পারেনি। এ বছর যেহেতু করোনার সংক্রমণ নেই, তাই তৈরি পোষাকের চাহিদা বেড়েছে।’
কুমিল্লা দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আতিক উল্লাহ খোকন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুরো জেলায় দোকানিরা নির্বিঘ্নে বেচাকেনা করছেন। বিশেষ করে গভীর রাত পর্যন্ত নগরীর শপিং মল ও ফুটপাতে মানুষ কেনাকাটায় ব্যস্ত। আমরা নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে সবকিছু মনিটরিং করছি।’
এদিকে ভোক্তারা যেন কোনও পণ্য কিনে প্রতারিত না হন, সে জন্য নিয়মিত তদারকি অভিযান পরিচালনা করছেন কুমিল্লা ভোক্তা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আসাদুল ইসলাম। নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিভিন্ন অভিযোগে আমরা প্রতিদিনই কোনো না কোনো প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করছি। আমরা ক্রেতার লিখিত ও মৌখিক কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ার অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমাদের নিয়মিত তদারকি চলছে। ঈদ পর্যন্ত বিশেষ তদারকি চলবে।’
ঈদে নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহমেদ বলেন, ‘মধ্যরাত কেন, দিনরাত সমান তালে নগরীতে টহল দিচ্ছে পুলিশ। রয়েছে সাদা পোশাকের গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা। অন্যান্য থানাগুলোতেও নিরাপত্তার বিষয়টি জোরদার করা আছে।’
এদিকে ঝালকাঠিতেও দিনের চাইতে রাতে মার্কেটে ক্রেতাদের ভিড় দেখা যাচ্ছে বেশি। বিশেষ করে সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত চলছে বেচাকেনা। ক্রেতারা বলছেন, দিনের বেলায় কর্মক্ষেত্রে থাকা, ভ্যাপসা গরম এবং রমজানে ভিড় এড়াতে রাতে কেনাকাটা করতেই স্বাচ্ছন্দ্য তাদের।
বিপণিবিতানগুলোর ভেতরে পোশাকের সমাহার আর বাইরে ঝলমলে রঙিন বাতি; যা নজর কাড়ছে ক্রেতা সাধারণের। নানান পোশাকের নিত্য নতুন কালেকশন নিয়ে পসরা সাজিয়েছে ফ্যাশন হাউজগুলো। ফুটপাতেও বিকিকিনি চলছে বেশ। মঙ্গলবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঝালকাঠির বিভিন্ন এলাকার বিপণিবিতান ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
জামা কিনতে আসা মো. তৌহিদুল বলেন, ‘পরিবার নিয়ে রাতে বের হয়েছি। গত ৪ দিনের খড়তাপে ঘরে থাকাই কষ্টকর। রোজা রেখে দিনে কষ্ট হয়ে যায়।’
আরেক ক্রেতা বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘দিনে এতোটাই গরম থাকে স্ত্রী ও ছোট বাচ্চা নিয়ে বের হওয়া সম্ভব না। তাই পোনাবালিয়া গ্রাম থেকে রাতে কেনাকাটা করতে আসছি।’
পৌর শহরের কাঠপট্টি এলাকা থেকে আসা সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘দিনে গরম বেশি, তাই সবাই এখন রাতে আসে বিপণিবিতানে। তাতে রাতে মার্কেটে যে গ্যাদারিং হয়, এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়েও আমরা চিন্তিত।’
জারা কসমেটিকসের মালিক জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘কসমেটিকস কেনাবেচা এখনো বাড়েনি, সবাই জামা-কাপড় ও জুতা কেনাকাটা শেষ করে কসমেটিকস কিনবে। তার ওপর প্রচণ্ড গরম। গরমে আশানুরূপ বেচাকেনা এখনো শুরু হয়নি।’
সুহা কসমেটিকস এবং লাবনী ষ্টোরের মালিক সিরাজ ও রুবেল জানালেন একই কথা। তাদের আশানুরূপ বেচাকেনা এখনো শুরু হয়নি। তাপদাহ থাকায় কেনাকাটা করতে মানুষ দিনে কম বের হয়, আর রাতে কাষ্টমার থাকে ৪ ঘণ্টা।
পাদুকা দোকানি লিটন বলেন, ‘বৃষ্টি হলে আবহাওয়া ঠান্ডা থাকত। এতে দিনে মানুষ বাড়ত, বেচাকেনাও কিছুটা ভালো হত।’
ঈদ বাজারে জেলার মার্কেটগুলোতে আস্তে আস্তে ভিড় বাড়ছে। বিক্রেতারা কেউ কেউ বলছেন, আশানুরূপ বেচাকেনা হচ্ছে না; আবার কেউ কেউ সাড়া পাচ্ছেন ভালোই।
কুমারপট্টি এলাকার হাজী জয়নাল কমপ্লেক্সের শরীফ বস্ত্র বিতানের প্রোপাইটর মো. শামিম শরীফ বলেন, ‘সাধারণ কাষ্টমারের ক্রয় ক্ষমতার দিক বিবেচনা করে দোকানে মালামাল তুলেছি, ৫০০ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকার মধ্যে ছেলে-মেয়েদের পোশাক তুলেছি। বেচাকেনায় বেশ ভালোই সাড়া পাচ্ছি।’
কুমার পট্টির পোশাকের দোকান ‘রঙ’ এর মালিক মো. রাকিব হোসেন বলেন, ‘গত দুই দিন বিক্রি বেড়েছে। তবে কাষ্টমারদের একটা অংশ অনলাইনে শপিং করছেন। আমাদের দোকানে এসেও অনলাইনের মতো পণ্য চাচ্ছেন।’
কসমেটিকস ব্যাবসায়ীরা জানান, ক্রেতারা আগে পোষাক ও পদুকা কিনবে তারপর কসমেটিকস। তাই পোশাক ও পাদুকার দোকানে কিছুটা ভিড় থাকলেও তাদের দোকানগুলোতে তুলনামূলক বিক্রি কম।
জারা কসমেটিক্স এর মালিক জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘সবাই এখন জামা-কাপড় ও জুতা কিনছে। এগুলো শেষ করে কসমেটিকস কিনবে। আমাদের আশানুরূপ বেচাকেনা এখনো শুরু হয়নি।’
আরও পড়ুন:মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলায় ৭ (সাত) বছরের একটি শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে সৈয়দ সরাফত আলী নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
পিবিআইয়ের পরিদর্শক রিপন চন্দ্র গোপের নেতৃত্বে একটি অভিযানিক দল বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
৬০ বছর বয়সী সৈয়দ সরাফত আলী রাজনগর থানার করিমপুর চা বাগান এলাকার বাসিন্দা।
পিবিআই জানায়, শিশুটিকে বাঁশের বাঁশি বানিয়ে দেয়ার লোভ দেখিয়ে গত ১৪ এপ্রিল বেলা পৌনে দুইটার দিকে সৈয়দ সরাফত আলী তার বাড়ির পাশের বাঁশ ঝাড়ের নিচে নিয়ে যান। সেখানে তাকে মাটিতে ফেলে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি হলে তিনি আত্নগোপন করেন।
অসুস্থ অবস্থায় শিশুটিকে গত প্রথমে রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ভর্তি করে চিকিৎসা করানো হয়।
এ বিষয়ে শিশুটির বাবা বাদী হয়ে রাজনগর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।
পিবিআই মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক বলেন, ‘শিশু ধর্ষণের ঘটনায় অপরাধীর পার পাওয়ার সুযোগ নেই। আইনের আওতায় এনে তাদের বিচার করা হবে। মামলার খুঁটিনাটি বিষয় বিবেচনায় রেখে নিখুঁত তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে।’
আরও পড়ুন:মৌলভীবাজারে বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা নাশকতা মামলায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান ও জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এমএ মুহিতসহ ১৪ নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে তা নামঞ্জুর করে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
উচ্চ আদালতের মঞ্জুরকৃত জামিন শেষ হওয়ায় তারা আদালতে হাজির হন।
মৌলভীবাজার মডেল থানায় ২০২৩ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে করা দুটি রাজনৈতিক মামলার ১৪ জন আসামি হাজির হলে আদালত তাদের সবার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করে।
মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন- জেলা বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক মুহিতুর রহমান হেলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলে সাবেক সভাপতি ও পৌর কাউন্সিলর স্বাগত কিশোর দাস চৌধুরী, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আহমেদ আহাদ, যুবদলের এমএ নিশাদ, যুবদলের সিরাজুল ইসলাম পিরুন, স্বেচ্ছাসেবক দলের নুরুল ইসলাম, যুবদলের ওয়াহিদুর রহমান জুনেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের আব্দুল হান্নান, স্বেচ্ছাসেবক দলের রোহেল আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের মামুনুর রশিদ ও যুবদলের জাহেদ আহমেদ।
মৌলভীবাজার জেলা আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. ইউনুছ মিয়া জানান, ২০২৩ সালে নাশকতার অভিযোগে করা মামলায় মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন আসামিরা। আদালত শুনানি শেষে আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমের শুরু থেকেই উচ্চ তাপমাত্রায় আলোচনায় রয়েছে চুয়াডাঙ্গা জেলা। মৃদু, মাঝারি, তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপমাত্রা দেখছে জেলাবাসী। মাঝে তাপমাত্রা সামান্য কমলেও ফের অতি তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে দেশের পশ্চিমের এই জেলা।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানায়, বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তার মানে জেলায় আবারও অতি তীব্র তাপপ্রবাহের কবলে পড়েছে এই জেলা।
আগের দিন বুধবারও এখানে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। ওইদিন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তার আগের দিন তাপমাত্রা নেমেছিল ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। সেই তীব্র তাপপ্রবাহ বৃহস্পতিবার এসে অতি তীব্র তাপপ্রবাহে রূপ নিয়েছে।
জেলা জুড়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহে জনজীবনে অস্বস্তি আরও বেড়েছে। স্বস্তি মিলছে না কোথাও। তীব্র গরমে একটু স্বস্তি পেতে দিনের অধিকাংশ সময় মানুষ গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিচ্ছে।
গরমের প্রভাবে বাড়ছে রোগবালাই। গরমজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে হাসপাতালে। তীব্র তাপদাহে ব্যাহত হচ্ছে কৃষিকাজ। শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষ কাজে যেতে পারছে না। নষ্ট হচ্ছে ধান, কলা, আম, লিচুসহ মৌসুমী ফসল।
গোপালপুর গ্রামের কৃষক হান্নান আলী বলেন, ‘এই তাপে মাটে উঠতি ফসল নষ্ট হয়ি যাচ্চি। আর রোদির তাতে মাটে দাঁড়ানু যাচ্চি না। ধানের ক্ষেতে বেশি সেচ লাগচি। তাও আবার দিনের বেলায় পাম্পে পানি উটচি না। রাতি দিতি হচ্চি।’
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, ‘আজ (বৃহস্পতিবার) তাপমাত্রা কয়েক ডিগ্রি বেড়েছে। জেলায় তীব্র তাপপ্রবাহ রূপ নিয়েছে অতি তীব্র তাপপ্রবাহে। সহসা বৃষ্টি হওয়ার কোনো পূর্বাভাস নেই। চলতি এপ্রিল মাসের শেষ দিন পর্যন্ত আবহাওয়ার এমন পরিস্থিতি থাকতে পারে।
আরও পড়ুন:কক্সবাজারের টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপে ঘরে ঢুকে এক নারী ও তার মেয়েকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
গত সোমবারের ঘটনায় বৃহস্পতিবার টেকনাফ মডেল থানায় অভিযোগটি করেন ছেনুয়ারা বেগম নামের নারী।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, গত সোমবার রাত দুইটার দিকে শাহপরীর দ্বীপের পূর্ব উত্তরপাড়া এলাকার নুর মোহাম্মদের স্ত্রী ছেনুয়ারা বেগমের ঘরের দরজা ভেঙে আয়ুব খানের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন প্রবেশ করেন। তারা ছেনুয়ারা ও তার মেয়ের হাত-পা বেঁধে মুখে কাপড় ঢুকিয়ে এলোপাতাড়ি লাথি ও ঘুষি মারেন। একপর্যায়ে মা ও মেয়ে উভয়কে বিবস্ত্র করেন আইয়ুব ও তার লোকজন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, হামলাকারীরা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে স্বর্ণ ও টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যান। যাওয়ার সময় তাদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের বিষয়ে কাউকে জানানো হলে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে চলে যান৷
এ বিষয়ে ছেনুয়ারা বেগম বলেন, ‘সন্ত্রাসী আয়ুব খানের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন যুবক আমার বাড়িতে ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রবেশ করে। পরে বাড়ি থেকে আমাকে জোরপূর্বক কয়েকজন লোক বের করে রশি দিয়ে বেঁধে রাখে এবং আমার মেয়েকে নির্যাতন করে স্বর্ণ ও টাকা নিয়ে যায়। তাদের বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া বিষয়ে কাউকে বললে মেরে ফেলা হবে বলে চলে যায়।’
থানায় অভিযোগের পর আয়ুব হুমকি দিয়েছে জানিয়ে ছেনুয়ারা বলেন, ‘সেই আয়ুব খান মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বলে, মামলা হলে কী হবে? জামিন নিয়ে বাহির হয়ে আমাকে আর আমার মেয়েকে মেরে ফেলা হবে বলে প্রাণনাশের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। এ বিষয়ে আমি টেকনাফ মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি।’
এ বিষয়ে সাবরাং ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রেজাউল করিম রেজু বলেন, ‘আমি বিষয়টি শুনেছি এবং সঠিক তদন্ত করে পুলিশকে সহযোগিতা করব।’
অভিযোগ তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ সোহেল বলেন, ‘আমি ঘটনার সত্যতা পেয়েছি এবং আমি মামলা করার জন্য ওসি বরাবর সুপারিশ করেছি।’
টেকনাফ মডেল থানার ওসি ওসমান গণি বলেন, ‘আরও গভীরভাবে তদন্ত করে দোষীদের গ্রেপ্তার করা হবে।’
আরও পড়ুন:চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে সোনামসজিদ স্থলবন্দরে দায়িত্ব পালনকালে রুহুল আমিন নামে এক ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের মৃত্যু হয়েছে। তার বাড়ি যশোরের বেনাপোলে। বাবার নাম কোরবান আলী।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের অধীন সোনামসজিদ স্থলবন্দরে ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।
শিবগঞ্জ থানার ওসি সাজ্জাদ হোসেন জানান, সোনামসজিদ স্থলবন্দরের পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের মধ্যে ট্রাক পরিদর্শন শেষে দুপুর পৌনে ১টার অফিস কক্ষে ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়েন রুহুল আমিন। সহকর্মীরা তাকে দ্রুত শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন এসএম মাহমুদুর রশিদ জানান, ট্রাফিক ইন্সপেক্টর রুহুল আমিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার আগেই মারা যান। হাসপাতালে যারা নিয়ে এসেছিলেন তারা বলেছেন যে তিনি তৃষ্ণার্ত ছিলেন, পানি খেতে চেয়েছিলেন।
তবে তার মৃত্যু যে হিট স্ট্রোকে হয়েছে এটা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাবে না। অন্য কোনো রোগেও তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। তবে এখন যেহেতু প্রচণ্ড গরম চলছে তাই এটার প্রভাব থাকতে পারে।
রাজশাহীর বাগমারায় ভাড়া বাসায় আটকে রেখে এক মাস ধরে এক তরুণীকে ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।
বুধবার রাতে উপজেলার তাহেরপুর পৌর এলাকার হরিফলার মোড়ের একটি বাসা থেকে ওই তরুণীকে উদ্ধার ও এ ঘটনায় অভিযুক্ত একজনকে আটক করেছে পুলিশ।
আটক রাজু হোসেন (২৫) পেশায় চা দোকানি। তিনি তাহেরপুর পৌরসভার হরিফলা মহল্লার আবদুর রাজ্জাক শাহের ছেলে।
পুলিশ জানায়, অসুস্থ অবস্থায় তরুণীকে বাগমারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়ার পর রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) স্থানান্তর করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ওই তরুণীর বাড়ি ফরিদপুর জেলায়। ফোনে রাজুর সঙ্গে তার পরিচয় ও প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত ২৪ মার্চ বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফোনে ভুক্তভোগী তরুণীকে তাহেরপুরে নিয়ে আসেন রাজু। পরে তাকে নিয়ে ভাড়া বাসায় ওঠেন রাজু। সেখানে আটকে রেখে এক মাস ধরে রাজু ওই তরুণীকে ভয় দেখিয়ে ও মারধর করে ধর্ষণ করেন।
এক পর্যায়ে নির্যাতনের শিকার তরুণী অসুস্থ হয়ে পড়লে পাশের বাড়ির লোকজন টের পেয়ে স্থানীয় কাউন্সিলরকে জানান। তিনি থানায় খবর দিলে বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ ওই বাসা থেকে তরুণীকে উদ্ধার করে। পরে ওই এলাকা থেকে রাজুকে আটক করে পুলিশ। রাতেই তরুণী বাদী হয়ে অপহরণ, ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা করেন।
রাজশাহী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও মুখপাত্র রফিকুল আলম জানান, মেয়েটার ওপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। আটক তরুণের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ তদন্ত করছে। তদন্ত শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে পদ্মা নদীতে বুধবার রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সময় দুটি ড্রেজার জব্দ করেছে নৌ-পুলিশ।
মাওয়া নৌ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের খবর পেয়ে উপজেলার মেদিনীমণ্ডল ইউনিয়নের যশিলদিয়ায় বুধবার রাত দেড়টার দিকে পদ্মা নদীতে অভিযান চালানো হয়। ওই সময় নিয়ম অমান্য করে বালু উত্তোলন করায় ওই দুটি ড্রেজার জব্দ করা হয়।
তিনি আরও জানান, ড্রেজার জব্দ করার সময় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। জব্দকৃত ড্রেজার দুটির বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মন্তব্য