মধ্য বৈশাখে এসে গ্রীষ্মের ফুল তার রূপ মেলে ধরলেও সূর্যের খরতাপে পুড়ছে মানুষ। বাড়ির বাইরে পা রাখাই যেন দায়।
রমজান মাসে রোজা রেখে কর্মমুখী মানুষ পড়েছেন সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে। আর খেটে খাওয়া মানুষের কথা বলাই বাহুল্য।
দুপুরে মালিবাগ মোড়ে ক্লান্ত দেহে দাঁড়িয়ে ছিলেন রিকশাওয়ালা সালাম মিয়া। ঘামে ভিজে গেছে তার শরীর। শার্টের বোতাম যতটা খোলা যায়, ততটা খুলে শরীরে বাতাস লাগানোর চেষ্টা করছিলেন তিনি।
জীবিকার টানে দিনাজপুর ছেড়ে ঢাকায় আসা সালাম মিয়া বলেন, ‘উপায় তো নাই, রিকশা তো চালাবায় হোবে। না হইলে খাম কী? গরমোতও কষ্ট করছি বাহে।’
বাসে চড়ে মোহাম্মদপুর থেকে রামপুরা এসেছেন অনির্বাণ বিশ্বাস। বাস থেকে যখন নামছিলেন তখন তার পুরো শরীর ঘামে ভেজা। চোখেমুখে রাজ্যের বিরক্তি। মেজাজটাও হয়ে আছে খিটখিটে।
বিরক্ত নিয়ে তিনি বললেন, ‘এক দিকে যানজট, আরেক দিকে গরম। জীবনটা শ্যাষ ভাই।’
গরমে যখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা, তখন কোনো সুখবর নেই আবহাওয়া অধিদপ্তরের কাছে। তারা বলছে, এই অবস্থা চলবে আরও কয়েক দিন।
গ্রীষ্মের এই সময় গরম পড়ায় কোনো অস্বাভাবিকতা দেখছেন না তারা। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, এই সময়ে গরম পড়বে। বৃষ্টি হলে তাপমাত্রাটা কমে আসবে।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটির দেয়া তথ্য অনুযায়ী দেখা যায়, মঙ্গলবার দেশে সবচেয়ে বেশি গরম পড়েছে রাজশাহী, পাবনা (ঈশ্বরদী) ও চুয়াডাঙ্গায়। এই তিন জেলায় তাপমাত্রা ছিল ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
অবশ্য সে তুলনায় স্বস্তিতে ছিলেন সিলেটবাসী। সেখানে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা দিনের সর্বনিম্ন।
রাজধানী ঢাকায় তাপমাত্রার পারদ ছুঁয়েছে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘর। অবশ্য সন্ধ্যা নামার পর তাপমাত্রা কিছুটা কমে এসেছে। দ্য ওয়েদার চ্যানেলে দেখা গেছে, সন্ধ্যা ৭টার পর তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রিতে নেমে এসেছে।
কিন্তু তাতে অবশ্য ইট-কংক্রিটের রাজধানীতে স্বস্তি নামেনি। আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকায় গরম অনুভূত হচ্ছে ৪১ ডিগ্রি সেলিয়াস।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস পর্যালোচনা করে বর্তমানে তাপদাহ যেমন আছে, আরও কয়েক দিন তেমন থাকবে বলেই জানালেন আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘কমপক্ষে আরও তিন দিন এই তাপদাহ থাকবে।’
বৃষ্টির সম্ভাবনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগামী দুই-তিন দিনে বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। আর বৃষ্টি না হলে তাপমাত্রা কমারও সম্ভাবনা নেই।’
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, সিলেট ছাড়া আজ দেশের কোথাও বৃষ্টি হয়নি। ১৮ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে সেখানে। আর তাই সিলেটের আবহাওয়া ছিল সহনশীল।
নেত্রকোণায় কিছু বৃষ্টি হলেও সেটাকে হিসাবে আনেনি আবহাওয়া অধিদপ্তর। দিনের হিসাবে তারা ওই বৃষ্টিপাতকে উল্লেখ করেছে ‘সামান্য’ হিসেবে।
পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কয়েকটি জেলায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়ার সঙ্গে প্রবল বিজলি চমকানোসহ বৃষ্টি কিংবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
তবে দেশের অন্যান্য স্থানে আবহাওয়া শুষ্ক থাকবে বলেই জানাচ্ছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
তাপদাহের সঙ্গে দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদ। ওই সময় আবহাওয়া পরিস্থিতি কেমন থাকবে জানতে চাইলে আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম বলেন, ‘ঈদের সময় বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সারা দেশে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।’
আরও পড়ুন:সাম্প্রতিক অভিযোগটি হলো, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বান্ধাবাড়ি জেবিপি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠটি মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে এক ঠিকাদারের কাছে ভাড়া দিয়ে নানা ধরনের নির্মাণ সামগ্রী রাখা হয়েছে। আর সেই টাকা গ্রহণ করেছেন ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি।
এবার সেই প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সভাপতিকে স্কুলের অর্থ আত্মসাতের আরেকটি মামলায় বুধবার কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গত ২৪ মার্চ ওই স্কুলের ছাত্র অভিভাবক মো. সিরাজুল ইসলাম গোপালগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করেছিলেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, ২০১৯ সালের ১৩ জুন বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদ ও সভাপতি হান্নান মোল্লা ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত ছাড়াই বিদ্যালয়ের জনতা ব্যাংক, কোটালীপাড়া শাখার সঞ্চয়ী হিসাব থেকে চেকের মাধ্যমে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা উত্তোলণ করেন।
অর্থ আত্মসাতের সেই মামলাটিতে জামিনে ছিলেন বান্ধাবাড়ী জেবিপি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ আব্দুর রশিদ ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হান্নান মোল্লা। বুধবার তারা আদালতে হাজিরা দিতে গেলে কোটালীপাড়া আমলি আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অনুশ্রী রায় তাদের জামিন বাতিল করে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এদিকে, ওই স্কুলের মাঠ অবৈধভাবে ভাড়া দেয়ার সত্যতা যাচাই করতে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বুধবার কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদাউস ওয়াহিদ জানান, বিষয়টি তদন্ত করে আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আরও পড়ুন:চলমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যেও বিশ্বকে জলবায়ু সমস্যা থেকে মনোযোগ সরিয়ে নিতে দেয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আর তাই প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী উন্নত দেশগুলোকে এ খাতে অর্থায়ন ও প্রযুক্তি বিনিময়ে তাদের দেয়া প্রতিশ্রুতি আদায়ে সিভিএফকে আরও ভূমিকা রাখতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।
জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে থাকা ৫৫টি দেশের সংগঠন ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম। ২০২০ সালে দ্বিতীয়বারের মতো সংগঠনটির নেতৃত্ব পায় বাংলাদেশ। এবার জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত আফ্রিকার দেশ ঘানার হাতে যাচ্ছে সিভিএফ-এর নেতৃত্ব।
ঢাকায় বুধবার সন্ধ্যায় ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে ঘানার প্রেসিডেন্ট নানা আকুফো-আডোর হাতে দায়িত্ব তুলে দেন সিভিএফ-এর বিদায়ী প্রেসিডেন্ট শেখ হাসিনা।
দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠানে গণভবন প্রান্ত থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সিভিএফ-এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর দেড়শ কোটি মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের জরুরি অবস্থার মুখে পড়েছে। চলমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা সত্ত্বেও, আমরা বিশ্বকে জলবায়ু সংকট থেকে মনোযোগ সরিয়ে দিতে পারি না।
‘প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী উন্নত দেশগুলোকে এ খাতে অর্থায়ন ও প্রযুক্তি বিনিময়ে তাদের দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করতেই হবে। ঘানার নেতৃত্বে, সিভিএফ-এর ট্রেডমার্ক নৈতিক শক্তি এবং যৌক্তিক দাবি উপস্থাপনের মাধ্যমে অমীমাংসিত দাবি আদায়ে তাদের ওপর জোর অব্যাহত রাখতে হবে।’
২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মতো সিভিএফ-এর দায়িত্ব গ্রহণ করে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বস্তির কথা হলো, এই সমেয় আমাদের বেশিরভাগ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনে আমরা সফল হয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ আনন্দের সঙ্গে ঘানার হাতে সিভিএফ প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব অর্পণ করছে। এ আয়োজনে উপস্থিত থাকায় আমি দেশটির প্রেসিডেন্ট নানা আকুফো-আডোকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
জলবায়ুসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আলোচনায় সিভিএফ এখন গুরুত্বপূর্ণ ফোরাম হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলির জন্য সম্মিলিত কণ্ঠস্বর হিসেবে গড়ে উঠেছে প্রতিষ্ঠানটি। সিভিএফ সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি তার প্রমাণ।
‘শুরু থেকে কপ২৬-এর সিদ্ধান্তের প্রতি আমাদের মনোযোগ ছিল। মহামারির মধ্যেও আমরা জলবায়ু সংকটের দিকে বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।’
তিনি বলেন, ‘২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা তাদের এনডিসি (কার্বন নিঃসরণ বিষয়ক জাতীয় নির্ধারিত অবদান) জমা দেয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। প্রায় ৭০টি দেশ আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়েছে।’
সিভিএফ-এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে জলবায়ু সংক্রান্ত পদক্ষেপে সহায়তা দিতে সিভিএফ-ভি২০ জয়েন্ট মাল্টি-ডোনার তহবিলও তৈরি করা হয়েছে বলে জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এবং মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ এতে প্রাথমিক বরাদ্দ দিয়েছে। ২০২১ সালে আমরা ক্লাইমেট ভালনারেবলস ফাইন্যান্স সামিট করেছি। এটি পরবর্তী পাঁচ বছরে শত বিলিয়ন ডলার জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিপূরণ পেতে সহায়তা করবে। গ্লাসগোতে তা আমরা উপলব্ধি করেছি।’
ঢাকা-গ্লাসগো ঘোষণাকে সিভিএফ-এর মূল দাবি এবং প্রতিশ্রুতির সারসংক্ষেপ বলেও উল্লেখ করেন ফোরামের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট।
তিনি বলেন, ‘আমরা (কার্বন) উচ্চ-নিঃসরণকারী দেশগুলোর তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি বজায় রাখা এবং প্রতি বছর জলবায়ু খাতে উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাড়াতে আমাদের দাবির কথা পুনর্ব্যক্ত করেছি। আমরা জলবায়ুর ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে অভিযোজন খাতে অর্থায়ন বাড়ানো এবং আন্তর্জাতিক সংলাপের জন্য প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন এবং মানবাধিকার ইস্যুতে যারা উচ্চকিত, তাদের কাছে আমাদের উচ্চাশা রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুচ্যুতি এবং অভিবাসন ইস্যুতে আমাদের পারস্পরিক সমর্থন অক্ষুণ্ণ থাকবে। জলবায়ু ইস্যুতে জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে সিভিএফ-ভি২০ সংসদীয় গ্রুপ।’
সিভিএফ-এর পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জলবায়ু চ্যালেঞ্জকে স্থিতিস্থাপকতা এবং সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়াটা হবে আমাদের প্রেসিডেন্সির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক, এটা আমি বিশ্বাস করি। বাংলাদেশে আমরা মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা তৈরি করছি। আমরা বিশ্বাস করি, জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জের মুখে থাকা অন্য দেশগুলোও এটি থেকে তাদের নিজস্ব প্রেক্ষাপটে পরিকল্পনা গ্রহণের একটা ভিত্তি পাবে।’
তিনি বলেন, ‘ট্রোইকার সদস্য হিসেবে ঘানাকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা দেবে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের সাবেক ও প্রয়াত মহাসচিব কফি আনানের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত যোগাযোগের কথা আমি স্মরণ করছি। আমি নিশ্চিত যে, সিভিএফ-এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ঘানার এই সম্পর্ক দেখে তিনি খুশি হতেন।’
আরও পড়ুন:বিদ্যুৎ ও জ্বালানির টেকসই অবকাঠামো বিনির্মাণে দরকার সমন্বিত মহাপরিকল্পনা। জ্বালানির একাধিক বিকল্প উৎস থাকা দরকার। ফুয়েল মিক্সে প্রচলিত জ্বালানির সঙ্গে আগামীর সম্ভাব্য জ্বালানির প্রতিফলন থাকাও বাঞ্ছনীয়।
বুধবার জাইকার স্টাডি টিমের সঙ্গে আলোচনাকালে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু এসব কথা বলেন। সমন্বিত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মহাপরিকল্পনার সার্বিক অগ্রগতি নিয়ে মন্ত্রণালয়ে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মহাপরিকল্পনায় দক্ষ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জ্বালানিসম্পদের চাহিদা ও সরবরাহের সর্বোত্তম সমন্বয় থাকতে হবে। একই সঙ্গে আগামীর সম্ভাব্য সমস্যা এবং তার সমাধান থাকা জরুরি।
‘ফুয়েল মিক্সে প্রচলিত জ্বালানির সঙ্গে আগামীর সম্ভাব্য জ্বালানির প্রতিফলন থাকা বাঞ্ছনীয়। বিদ্যুৎ বা গ্যাস ব্যবহারের অপরচুনিটি কস্ট এবং কৃষি বা শিল্পে ব্যবহারের প্যাটার্নও এখানে থাকতে পারে।’
দ্য ইনস্টিটিউট অফ এনার্জি ইকনোমিকস, জাপান (আইইইজে) প্রণীতব্য মহাপরিকল্পনার স্টাডি টিমের প্রধান ইচিরো কুতানি সার্বিক অগ্রগতি বিষয়ে আলোকপাত করেন।
তিনি বলেন, ‘চলতি বছরের অক্টোবর নাগাদ মহাপরিকল্পনার খসড়া হবে। নভেম্বর নাগাদ অংশীজনদের সঙ্গে সভা করে তা চূড়ান্ত করা হবে।’
চাহিদার পূর্বাভাস, চাহিদা ও সরবরাহের সমন্বয়, রেফারেন্স দৃশ্যকল্প, নেট-শূন্য দৃশ্যকল্প, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি দৃশ্যকল্প, জ্বালানি সংরক্ষণ, সাশ্রয়ী নবায়ণযোগ্য জ্বালনি, জ্বালানির বৈচিত্র্যকরণ, কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের অবকাঠামো নির্মাণ ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা হয়।
প্রতিমন্ত্রী এ সময় বলেন, ‘যানবাহন বা ট্রেন বিদ্যুতে চলাচল এবং গ্রিন হাইড্রোজেন নিয়েও মহাপরিকল্পনায় সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা থাকতে হবে। ইন্ডাকশন কুকার বা সোলার সেচপাম্প নিয়েও কাজ করা যেতে পারে। ক্লিন এনার্জি পোর্টফোলিও উত্তরোত্তর বাড়ানোর প্রতিকল্প যেন থাকে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।’
নসরুল হামিদ বলেন, ‘সাশ্রয়ী মূল্যে আমরা গ্রাহকদের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ করতে চাই। জ্বালানির একাধিক বিকল্প উৎস থাকা বাঞ্ছনীয়। বৈচিত্র্যময় জ্বালানি ব্যবস্থাপনার সঙ্গে বিদ্যুৎ-জ্বালানির সাশ্রয়ী ব্যবহার নিয়েও আমরা কাজ করছি।
‘বাংলাদেশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিল এবং টেকসই নবায়নযোগ্য জ্বালানি কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন গবেষণা ও বিদ্যুৎসাশ্রয়ী কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। প্রতিষ্ঠান দুটি জাইকার সঙ্গে কাজ করলে আরও বাস্তবসম্মত ফল পাওয়া যাবে।’
আলোচনায় অন্যান্যের মধ্যে জাইকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা তোশিয়ুকি কোবাইয়াশ ও জাইকা বাংলাদেশের প্রতিনিধি তারো কাৎসোরাই উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে পৌর কাউন্সিলর মাজেদুর রহমানের বিরুদ্ধে খেলার মাঠ দখলের অভিযোগ উঠেছে। এ মাঠটিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী চড়ক মেলারও আয়োজন করা হতো। মাঠটি দখলমুক্ত করতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
বুধবার দুপুরে মাঠ দখলের প্রতিবাদ জানিয়ে ফুলবাড়ী পৌর এলাকার চাঁদপাড়া গ্রাম থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে শতাধিক শিশু-কিশোরসহ স্থানীয় অনেক নারী-পুরুষ।
মিছিলটি শহর প্রদক্ষিণ করে উপজেলা পরিষদ চত্বরে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে মানববন্ধন করেন প্রতিবাদকারীরা। মানববন্ধন শেষে খেলার মাঠ রক্ষার দাবি জানিয়ে ইউএনও এর কাছে গণস্বাক্ষর করা একটি লিখিত অভিযোগ দেন তারা।
মানববন্ধনে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, উপজেলার চাঁদপাড়া এলাকায় ছোট যমুনা নদীর তীরসংলগ্ন সুজাপুর মৌজার ১৮১৫ দাগের সম্পত্তিটি সরকারি এবং এসএ খতিয়ানে তা জনসাধারণের স্বার্থে ব্যবহারের জন্য উম্মুক্ত থাকার কথা বলা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় জায়গাটিকে বছরের পর বছর ধরে খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার করছে স্থানীয়রা। এ ছাড়া হিন্দু সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী চড়ক পূজা ও মেলাও অনুষ্ঠিত হয় এই মাঠে। কিন্তু ওই এলাকার পৌর কাউন্সিলর মাজেদুর প্রভাব খাটিয়ে নিজের সম্পত্তি দাবি করে মাঠটি দখল করে নিয়েছেন।
এর আগে মাঠটি উদ্ধারে চাঁদপাড়া এলাকাবাসী পৌর মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি। তাই বাধ্য হয়ে মাঠ উদ্ধারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভে নেমেছেন তারা।
মানববন্ধনে অংশ নেয়া স্থানীয় সুমন, লুৎফর, মৃদুলসহ এলাকাবাসী জানান, তারা অনেক বছর ধরে ওই মাঠটিতে খেলাধুলা করে আসছেন। এ ছাড়া তাদের আর কোনো মাঠ নেই। ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাজেদুর হঠাৎ করেই মাঠটি দখলে নিয়ে খেলার পরিবেশ নষ্ট করেছেন। তাই খেলার মাঠটি উদ্ধারে তারা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চান।
এদিকে পৌর কাউন্সিলর মাজেদুর রহমান বলেন, ‘দখল নেয়া জায়গাটি আমার বাপ-দাদার পৈতৃক সম্পত্তি; যার দাগ নম্বর ১৮১৬। আমি কারও জায়গা দখল করিনি। এলাকাবাসীর দাবি করা জমিটি ১৮১৫ দাগের। সেই অনুযায়ী তাদের জমি আলাদা।’
এ বিষয়ে পৌর মেয়র আলহাজ মাহমুদ আলম লিটন বলেন, ‘এলাকাবাসীর একটি অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে উভয় পক্ষকে নিয়ে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
অভিযোগ পেয়েছেন উল্লেখ করে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও।
আরও পড়ুন:ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দায়িত্ব নিয়েছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন। তিনি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইনের স্থলাভিষিক্ত হলেন।
বুধবার বিকেলে আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন মহাপরিচালককে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসাইন। মহাপরিচালক হিসেবে নির্ধারিত সময়কাল দায়িত্ব পালন শেষে তিনি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স থেকে সেনাবাহিনীতে প্রত্যাবর্তন করলেন।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরে এ উপলক্ষ্যে ‘বিদায় সংবর্ধনা ও বরণ অনুষ্ঠান’-এর আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে বিদায়ী ও নবনিযুক্ত মহাপরিচালকরাসহ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সবস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
বিদায়ী মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসাইন তার গত ৩ বছরের বেশি সময়ের কর্মজীবনের স্মৃতিচারণা করেন। তিনি বলেন, উন্নয়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া। তিনি তার সাধ্যমতো ফায়ার সার্ভিসকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছেন। নবনিযুক্ত মহাপরিচালক সেই ধারা অব্যাহত রেখে উন্নয়ন প্রক্রিয়া আরও বেগবান করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সাজ্জাদ হোসাইন দায়িত্ব পালনের সময় তাকে সহযোগিতা করায় সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সরকারের কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
নবনিযুক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইন উদ্দিন তার বক্তব্যে বিদায়ী মহাপরিচালকের কাজের প্রশংসা করেন এবং তার দেখানো পথ ধরে ফায়ার সার্ভিসকে আরও এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করবেন বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
তিনি তার সময়ে মন্ত্রণালয়সহ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সবস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহযোগিতা চান।
মিডিয়া সেলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপসহকারী পরিচালক মো. শাহজাহান শিকদারের সঞ্চালনায় বিদায় ও বরণ অনুষ্ঠানটি পরিচালক (প্রশিক্ষণ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেজাউল করিমের ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মাধ্যমে শেষ হয়।
এরপর বিদায়ী মহাপরিচালক নবনিযুক্ত মহাপরিচালককে তার অফিস কক্ষে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে মহাপরিচালকের অফিসিয়াল চেয়ারে বসিয়ে দেন।
দায়িত্ব গ্রহণ ও হস্তান্তরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বিদায়ী মহাপরিচালক সবার সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎ করেন। এরপর তাকে বহনকারী সুসজ্জিত গাড়িটিতে বাঁধা রশি ধরে কর্মকর্তা-কর্মচারী তাকে অধিদপ্তরের সদর দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দেন।
আরও পড়ুন:করোনাভাইরাসের ভুয়া রিপোর্ট দেয়ার মামলায় জেকেজি হেলথকেয়ারের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা চৌধুরী ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আরিফুল হক চৌধুরীসহ আটজনের বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য আগামী ৮ জুন দিন ঠিক করেছে আদালত।
বুধবার ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিবুল হক এই দিন ধার্য করেন।
মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য বুধবার দিন ঠিক ছিল। কিন্তু বিচারক ছুটিতে থাকায় ভারপ্রাপ্ত বিচারক যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য ৮ জুন নতুন দিন ঠিক করেন।
গত ১১ মে ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনে তারা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার চান। এরপর আদালত রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপনের জন্য ২৫ মে দিন ঠিক করেন।
যুক্তি উপস্থাপন শেষে মামলাটির রায় ঘোষণার জন্য দিন ঠিক করা হবে।
২০ এপ্রিল ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালতে সাক্ষ্য দেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোর্শেদ আল মামুন ভুইয়া। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষ্যগ্রহণ সমাপ্ত ঘোষণা করে। আদালত আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য ১১ মে দিন ঠিক করে। মামলাটিতে ৪০ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৬ জন বিভিন্ন সময় সাক্ষ্য দেন।
মামলাসূত্রে জানা যায়, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় করোনা শনাক্তের জন্য নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা না করেই জেকেজি হেলথকেয়ার ২৭ হাজার মানুষকে রিপোর্ট দেয়। এর বেশির ভাগই ভুয়া বলে ধরা পড়ে। এ অভিযোগে ২০২০ সালের ২৩ জুন অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করে দেয়া হয়। পরে তাদের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় মামলা করা হয় এবং দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
২০২০ সালের ৫ আগস্ট ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে সাবরিনা ও আরিফসহ আটজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেন ডিবি পুলিশের পরিদর্শক লিয়াকত আলী।
চার্জশিটভুক্ত অন্য আসামিরা হলেন আবু সাঈদ চৌধুরী, হুমায়ূন কবির হিমু, তানজিলা পাটোয়ারী, বিপ্লব দাস, শফিকুল ইসলাম রোমিও ও জেবুন্নেসা।
চার্জশিটে সাবরিনা ও আরিফকে প্রতারণার মূলহোতা হিসেবে দেখানো হয়। বাকিরা প্রতারণা ও জালিয়াতিতে তাদের সাহায্য করেছে।
একই বছরের ২০ আগস্ট ঢাকা মহানগর হাকিম সরাফুজ্জামান আনছারী আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এ সময় তারা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার চান।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য