নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত মামলা হয়েছে পাঁচটি। এর মধ্যে কেবল একটিতে আসামিদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, বাকি চারটিতেই আসামিদের সবাই অজ্ঞাতপরিচয়।
একটি মামলায় যে ২৪ আসামির নাম উল্লেখ করেছে নিউ মার্কেট থানা পুলিশ, তাদের সবাই বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী। তবে এই আসামিদের অভিযোগ, রাজনৈতিক হয়রানির উদ্দেশ্যে পুলিশ তাদের নাম এজাহারে দিয়েছে। অবশ্য পুলিশের দাবি, সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতেই আসামি করা হয়েছে সবাইকে।
নিউ মার্কেটের দুটি ফাস্টফুডের দোকানে গত ১৮ এপ্রিল ইফতারের আগে টেবিল পাতা নিয়ে দুই কর্মচারীর বাগবিতণ্ডা হয়। এর জেরে এক কর্মচারীর ডাকে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের তিন কর্মীর নেতৃত্বে কিছু ছাত্র ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তবে তারা মারধরের শিকার হয়ে কলেজে খবর দিলে ছাত্ররা মার্কেটে হামলা চালান।
এ ঘটনার পরে ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয়। প্রায় দুই দিনের সংঘর্ষে প্রাণ হারান দুজন, সাংবাদিকসহ আহত হন অর্ধশতাধিক।
সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের কাজে বাধা দেয়া ও হামলা, ভাঙচুরের অভিযোগে ২৪ জনের নাম উল্লেখ করে গত ২০ এপ্রিল নিউ মার্কেট থানায় একটি মামলা করেন থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইয়ামিন কবীর। ওই মামলায় অজ্ঞাতপরিচয়ে থাকা ঢাকা কলেজের ৬০০ থেকে ৭০০ ছাত্র এবং নিউ মার্কেট এলাকার ২০০ থেকে ৩০০ ব্যবসায়ী ও দোকান কর্মচারীকেও আসামি করা হয়েছে।
এ ছাড়া সংঘর্ষে নিহত নাহিদ মিয়ার চাচা মো. সাঈদ ২০ এপ্রিল অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেছেন। একই দিন বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে অজ্ঞাতনামা ১৫০ থেকে ২০০ জনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করেন নিউ মার্কেট থানার উপপরিদর্শক মেহেদী হাসান।
চতুর্থ মামলাটি হয় ২১ এপ্রিল মধ্যরাতে। নিহত দোকান কর্মচারী মোরসালিনের বড় ভাই নুর মোহাম্মদের করা হত্যা মামলাটিতে অজ্ঞাতপরিচয় ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। সবশেষ মামলাটি করেছেন সংঘর্ষের সময় ক্ষতিগ্রস্ত অ্যাম্বুলেন্স মালিক মো, সুজন। গত ২৩ এপ্রিল তার করা মামলাতেও আসামিদের পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি।
পুলিশের কাজে বাধা দেয়া ও হামলা, ভাঙচুরের অভিযোগে করা মামলায় যে ২৪ আসামির নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তাদের মধ্যে মকবুল হোসেন, আমীর হোসেন, মিজান, হাজি জাহাঙ্গীর হোসেন পাটোয়ারী, টিপু, হাসান জাহাঙ্গীর মিঠু, হারুন হাওলাদার, শাহ আলম শন্টু, শহীদুল ইসলাম শহীদ, জাপানি ফারুক, মিজান ব্যাপারী ও আসিফের নাম এসেছে উসকানিদাতা হিসেবে। আর রহমত, সুমন, জসিম, বিল্লাল, হারুন, তোহা, মনির, বাচ্চু, জুলহাস, মিঠু, মিন্টু ও বাবুল সরাসরি ঘটনায় জড়িত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলার ১ নম্বর আসামি অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেন সরদার নিউ মার্কেট থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি এবং বর্তমান ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। নিউ মার্কেটের ক্যাপিটাল ফাস্টফুড ও ওয়েলকাম ফাস্টফুড নামের দোকান দুটির মালিকও তিনি। এই দুই দোকান কর্মচারীদের বিরোধ থেকেই ঘটনার সূত্রপাত।
ওয়েলকাম নামের দোকানটি সরাসরি পরিচালনা করেন মকবুলের ছোট ভাই রফিক হোসেন সরদার, আর ক্যাপিটাল দোকানটি পরিচালনা করেন মকবুলের চাচাতো ভাই শহিদুল হোসেন সরদার।
বিএনপি নেতা ও ব্যবসায়ী মকবুল হোসেনকে ২২ এপ্রিল সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। তবে এর আগে মকবুল নিউজবাংলার কাছে দাবি করেন, উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ফাঁসাতে এ মামলায় জড়ানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘সিসিটিভি ফুটেজে দোষীদের চেহারা স্পষ্ট থাকার পরও জড়িত ছাত্রদের নাম বাদ দিয়ে শুধু স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ছাত্রলীগ কর্মীদের বাঁচাতে ঘটনাটিকে রাজনৈতিক রূপ দিয়ে বিএনপিকে জড়াচ্ছে প্রশাসন।’
মামলার এজাহারে আসামিদের রাজনৈতিক পরিচয় উল্লেখ না থাকলেও মকবুল দাবি করেন ২৪ জনই নিউ মার্কেট এলাকায় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
তিনি জানান, দুই নম্বর আসামি আমীর হোসেন আলমগীর নিউ মার্কেট থানা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক, মিজান ওই থানা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক, আনোয়ার হোসেন টিপু ছাত্রদলের সাবেক নেতা, জাহাঙ্গীর হোসেন পাটোয়ারী নিউ মার্কেট বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য, হারুন হাওলাদার নিউ মার্কেট থানা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, হাসান জাহাঙ্গীর মিঠু সাবেক সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও ছাত্রদল নেতা, শন্টু ওরফে নান্টু সাবেক সহসভাপতি।
এ ছাড়া শহীদুল হক শহীদ ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি ও নিউ মার্কেট থানা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি, জাপানি ফারুক সাবেক প্রচার সম্পাদক, মিজান ব্যাপারী যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সাবেক সদস্যসচিব এবং নিউ মার্কেট ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক, রহমত ১৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক, সুমন ১৮ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির সদস্য, জসিম থানা কমিটির সাবেক সদস্য।
মকবুল হোসেনের তথ্য অনুযায়ী, বিল্লাল ১৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক, হারুন ১৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের নেতা, তোহা নিউ মার্কেট থানা শ্রমিক দলের আহ্বায়ক, মনির স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি, বাচ্চু ও জুলহাস ১৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য এবং মিঠু, মিন্টু ও বাবুল ওয়ার্ড যুবদলের নেতা।
মকবুল হোসেন দাবি করেন, মামলার আসামিদের মধ্যে টিপু দীর্ঘদিন ধরে লন্ডনে আছেন। এ ছাড়া আসামিদের মধ্যে একজন ওমরাহ পালন করতে সৌদি আরব গিয়েছেন।
মামলার অন্য আসামিদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাঁচজন ছাড়া বাকি সবার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
মামলায় নিউ মার্কেট বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন পাটোয়ারীকে সংঘর্ষের উসকানিদাতা হিসেবে উল্লেখ করেছে পুলিশ।
নিউ মার্কেট কাঁচাবাজারকেন্দ্রিক এই বিএনপি নেতার নিউ মার্কেটে বরাদ্দ পাওয়া একটি দোকান আছে, যেটি তিনি ভাড়া দিয়েছেন। জাহাঙ্গীরের বাসা ধানমন্ডির রায়ের বাজার এলাকায়।
বিএনপির এই নেতার দাবি, যে রাতে নিউ মার্কেটের দুই ফাস্টফুডের দোকানে ঝামেলা তৈরি হয়, সেদিন তিনি নিজের বাসায় ছিলেন না, আগের দিন থেকেই কামরাঙ্গীর চরে বোনের বাসায় অবস্থান করছিলেন। আর ১৯ এপ্রিল তিনি ব্যক্তিগত কাজে গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরে চলে যান।
জাহাঙ্গীরের দাবি, টেলিভিশন, ফেসবুকের মাধ্যমে তিনি সংঘর্ষের খবর জানতে পারেন। ঘটনা সূত্রপাতের আগের দিন বোনের বাসায় অবস্থানের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন মামলার জন্য বিএনপির কেউই নিজ বাসায় থাকতে পারেন না।’
মামলায় তার বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন জাহাঙ্গীর।
মামলার আরেক আসামি মহানগর বিএনপির সাবেক সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও ছাত্রদল নেতা হাসান জাহাঙ্গীর মিঠুও দাবি করছেন, তিনি ঘটনার সূত্রপাতের সময় বাসায় ছিলেন না।
মোবাইল ফোনে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, 'আমি ঘটনার সময় ঢাকাতেই ছিলাম না। আমার বাসা ধানমন্ডির জিগাতলায়। ওই দিন সন্ধ্যায় আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গিয়েছিলাম, সেখানে সেহরি খেয়েছি। এর পরদিন বিকেলে ঢাকায় ফিরছিলাম, কিন্তু মামলা হওয়ার পর কুমিল্লায় চলে এসেছি।‘
মামলার অন্য আসামিদের অবস্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মামলার পর তারা সবাই ফোন নম্বর পরিবর্তন করেছেন।’
এই মামলার আরেক আসামি মো. আনোয়ার হোসেন টিপুর সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা গেছে। টিপু ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদ্য সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রদল নেতা। উসকানিদাতা হিসেবে তার নাম এসেছে এজাহারে।
হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিও কলে যুক্ত হলে দেখা যায়, টিপুর অবস্থান লন্ডনে। মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেখতেই তো পারছেন, আমি এখন লন্ডনে। আমি ২০১৫ সালের ১ মার্চ থেকে লন্ডনে আছি। আমার বিরুদ্ধে ১৩ মামলা চলমান, মামলা থেকে বাঁচতে বিদেশ পাড়ি জমিয়েছি।
‘মামলার কারণে আমার দেশে ফেরার সুযোগ নেই। না বুঝেই পুলিশ এ মামলায় আমার নাম যুক্ত করেছে। এখন বুঝতে পারছে কাঁচা কাজ করে ফেলেছে।‘
লন্ডন থেকেও তো উসকানি দেয়া সম্ভব, এমন মন্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি কীভাবে উসকানি দিয়েছি সেটা তারা প্রমাণ করুক।’
সংঘর্ষে সরাসরি যুক্ত হিসেবে মামলায় হারুন নামে বিএনপির এক নেতার নাম রয়েছে। মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি দাবি করেন, ‘তিনি মামলার আসামি নন, অন্য কোনো হারুনের কথা বলা হয়েছে।’
রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চাইলে তিনি নিজেকে ব্যবসায়ী দাবি করে ফোন কেটে দেন, পরে আর ফোন ধরেননি।
রহমত নামের একজনকে সেদিনের ঘটনায় সরাসরি যুক্ত থাকার কথা অভিযোগে উল্লেখ করেছে পুলিশ। তার পুরো নাম রহমত উল্লাহ। তিনি নিউ মার্কেট থানা বিএনপির সাবেক প্রচার সম্পাদক।
রহমত নিউজবাংলার কাছে দাবি করেন, ব্যাবসায়িক কারণে তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে দীর্ঘদিন জড়িত। তবে মিটিং মিছিলে অংশ নেয়া ছাড়া অন্য কোনো রাজনৈতিক তৎপরতায় কখনও অংশ নেননি। তার বিরুদ্ধে এর আগে কোনো মামলা বা জিডিও হয়নি।
রহমত বলেন, ‘নিউ সুপার মার্কেটে একটি দোকান ভাড়া নিয়ে আমি কাপড়ের ব্যবসা করছি। গণ্ডগোল শুরুর পরপরই দোকান বন্ধ করে পল্টনের বাসায় চলে যাই। পরদিন মার্কেট বন্ধ থাকায় আমি আর বাসা থেকে বের হইনি।’
তিনি অভিযোগ করেন, মামলার অন্যতম আসামি ও নিউ মার্কেট থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাজি জাহাঙ্গীর হোসেন পাটোয়ারীর অনুসারী হওয়ায় তাকেও মামলায় জড়ানো হয়েছে।
মামলার বাকি সব আসামির মোবাইল ফোন নম্বর বন্ধ থাকায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি নিউজবাংলা।
মামলায় আসামি হিসেবে শুধু বিএনপি নেতা-কর্মীদের নাম উল্লেখের কারণ জানতে চাইলে পুলিশের নিউ মার্কেট জোনের সহকারী কমিশনার শরীফ মোহাম্মদ ফারুকুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখানে তো কারও রাজনৈতিক পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি। এত বড় সংঘর্ষের পর গোয়েন্দারা প্রাথমিক তদন্ত করে উসকানিদাতা ও সরাসরি সম্পৃক্তদের নাম পেয়েছেন। সেই তালিকা ধরেই মামলা হয়েছে।
‘এখন আমরা বিশদ তদন্ত করে দেখব। যারা নিরপরাধ তাদের নাম পরে বাদ যাবে, আর জড়িতদের শাস্তি হবে।’
ঘটনার শুরুতে সিসিটিভি ফুটেজে ছাত্রদের অনেককেই চিহ্নিত করা গেলেও তাদের নাম কেন মামলায় নেই, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত ছিলাম। আর ঘটনার ছায়া তদন্ত করে গোয়েন্দারা রিপোর্ট দিয়েছেন। সেখানে আাসামিদের যার যার নাম এসেছে আমরা মামলায় শুধু তাদের নামই দিয়েছি। মামলায় ছাত্রদের অজ্ঞাতপরিচয় বলা হয়েছে, তাই জড়িত ছাত্রদেরও ছাড় দেয়া হবে না।’
মাঠপর্যায়ের প্রাথমিক তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা শুধু ঘটনাটি কীভাবে শুরু হলো তা তদন্ত করেছি। টানা সংঘর্ষ চলার কারণে প্রথমেই ঘটনা সম্পর্কে আমরা কোনো স্পষ্ট ধারণা পাচ্ছিলাম না। তাই শুরুতেই দুই দোকানের যারা ঝামেলা পাকিয়েছে, তাদের শনাক্ত করতে চাচ্ছিলাম।‘
মকবুল হোসেনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দুই দোকানের মালিক হওয়ায় এবং কর্মচারীদের বিরোধ মীমাংসা না করে ঘটনাকে বড় হতে দেয়ার দায় তিনি কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। তবে সেখানে আমরা পলিটিক্যাল কোনো ইস্যু বা ইন্ধন পাইনি, তাই মকবুলের রাজনৈতিক পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি।’
নিউ মার্কেটে বাইরে পুলিশ ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষকে আলাদা ঘটনা বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত করেছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। একটি সংস্থার এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঘটনার শুরুর দিকে অনেক তথ্য বিশ্লেষণ করে আমরা এই ২৪ আসামির সংশ্লিষ্টতা পেয়েছি। নিউ মার্কেটের দুই দোকানের কর্মচারীরা নিজেদের বিবাদে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের ডেকে আনে। তবে ছাত্ররাই উল্টো মার খান। এর জেরে উত্তেজনা আরও ছড়িয়ে যায়।’
এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা আদালতে সব তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরব। আসামিরা যদি পারেন, সেখানে নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করবেন।’
আরও পড়ুন:প্রচ্ছায়া লিমিটেডের আট পরিচালকের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
দেশ ত্যাগে যাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে তারা হচ্ছেন: প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক বুশরা সিদ্দিক, শেহতাজ মুন্নাসী খান, শহিদ উদ্দিন খান, শাহিন সিদ্দিক, শফিক আহমেদ শফিক, পারিজা পাইনাজ খান, নওরিন তাসমিয়া সিদ্দিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারজানা আনজুম।
দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এই আদেশ দেন।
আবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা ও তাঁর ছোট বোনের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকী ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের নামে প্রায় ৫৯ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ সংক্রান্ত অভিযোগ অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সাত সদস্য বিশিষ্ট অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে।
প্রচ্ছায়া লিমিটেড নামীয় প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারহোল্ডারগণ যাতে সপরিবারে গোপনে দেশ ত্যাগ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি দেশত্যাগ করে বিদেশে পালিয়ে গেলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডপত্র প্রাপ্তিতে ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। তাছাড়া সার্বিক অনুসন্ধানকাজে বিঘ্ন সৃষ্টিসহ সমূহ ক্ষতির কারণ রয়েছে। এজন্য অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ যাত্রা রোধে আদালতের আদেশ দেয়া একান্ত প্রয়োজন। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়, খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সালাউদ্দিন, তার ভাই শেখ সোহেল ও শেখ জালাল উদ্দিন রুবেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিন দুদকের পক্ষে সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, বিগত সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অকল্পনীয় অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট এই ব্যক্তিরা তাদের নামে অবৈধভাবে অর্জিত সম্পত্তি হস্তান্তর করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন মর্মে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়।
তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে তদন্ত কার্যক্রম দীর্ঘায়িত বা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অভিযোগটি সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া একান্ত প্রয়োজন।
শুনানি শেষে আদালত তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন।
সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নামে রাজধানীর উত্তরায় থাকা একটি ফ্ল্যাট ও মোট ১৮ কাঠার তিনটি প্লট জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব দুদকের আবেদন মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন।
দুদকের আবেদন সূত্রে জানা যায়, হারুনের নামে থাকা পৃথক তিনটি প্লট রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত। এছাড়াও জব্দের আদেশ দেয়া ১৫৭০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটটিও উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত।
এদিন হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আবেদন করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন।
আবেদনে বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে শত শত কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে।
অনুসন্ধান চলাকালে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, তিনি এসব সম্পদ বিক্রয় বা হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন। এজন্য সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আদেশ দেয়া প্রয়োজন।
এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি হারুন অর রশিদের ১০০ বিঘা জমি, পাঁচটি ভবন ও দুটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে তার নামে বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি হিসাবে থাকা ১ কোটি ২৬ লাখ ৯০ হাজার ৪৬৮ টাকা অবরুদ্ধের আদেশ দেয়া হয়।
পাশাপাশি এদিনই তার ভাই এবিএম শাহরিয়ারের ৩০ বিঘা জমি জব্দ, ১১টি ব্যাংক হিসাব এবং তিনটি কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দেন ঢাকার আদালত।
রাজধানীর বনানীতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যা মামলার এজহারনামীয় আরও দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ বুধবার তাদের গাইবান্ধা ও চট্টগ্রাম থেকে পৃথক অভিযানে গ্রেপ্তার করে র্যাব ও পুলিশ।
এর মধ্যে এজাহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মো. মেহেরাজ ইসলামকে (২০) গাইবান্ধা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১৩ এবং ৩ নম্বর আসামি মাহাথির হাসানকে (২০) চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানা পুলিশ।
বিকেলে র্যাব সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মেহরাজ ইসলামকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। এছাড়া বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাসেল সারওয়ার মাহাথির হাসানের গ্রেপ্তারের বিষয়িটি দৈনিক বাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
র্যাব-১৩ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) বিপ্লব কুমার গোস্বামী জানান, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে জনা যায়, পাভেজ হত্যা মামলার এজহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মেহেরাজ ইসলাম গাইবান্ধায় অবস্থান করছে। পরে গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে গাইবান্ধা সদরের ভবানীপুর গ্রামে অভিযান চলানো হয়। অভিযানে এরশাদ হোসেন নামে এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে মেহরাজ ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে বনানী থানার ওসি মো. রাসেল সারওয়ার দৈনিক বাংলাকে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে পারভেজ হত্যা মামলার ৩ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি মাহাথির হাসানের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পরে গতকাল সকালে চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানায় আনা হয়েছে।
এর আগে গত রোববার রাতে পারভেজ হত্যা মামলায় তিন আসামিকে রাজধানীর মহাখালী ও আশপাশের এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা হলেন- আল কামাল শেখ ওরফে কামাল (১৯), আলভী হোসেন জুনায়েদ (১৯) এবং আল আমিন সানি (১৯)। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া গত সোমবার রাতে কুমিল্লার তিতাস উপজেলার মনাইরকান্দি গ্রাম থেকে হৃদয় মিয়াজি (২৩) নামে মামলার এজহারনামীয় আরেক আসামিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব ১ ও র্যাব-১১ ব্যাটালিয়নের যৌথ দল। পরে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তাকে বনানী থানায় হস্তান্তর করা হয়। সব মিলিয়ে পারভেজ হত্যা মামলায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকেল প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে একটি দোকানে ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রী সিঙ্গারা খাচ্ছিলেন। একই সময় পারভেজ তার বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার সময় হাসছিলেন। ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রীর অভিযোগ পারভেজ তাদের দেখে হাসছিলেন। তাদের মধ্যে একজন প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী পিয়াসের বান্ধবী। পরে বান্ধবীরা মুঠোফোনে খবর দিলে পিয়াস ও তার দুই বন্ধু মেহরাজ ও মাহথির এসে পারভেজের সঙ্গে তর্ক-বিতর্কে জড়ান। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।
একপর্যায়ে দুই পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টি মীমাংসার করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার পর পারভেজকে একদল যুবক ছুরিকাঘাত করে। তার বুকে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় পরদিন রোববার তার ভাই হুমায়ুন কবির প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বহিরাগতসহ আট জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত পরিচয় ২৫-৩০ জনের বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা করেন।
রাজধানীসহ সারাদেশে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ৬১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ৯০৬ জন আসামি এবং অন্যান্য ঘটনায় ৭০৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) ইনামুল হক সাগর এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, এসব অভিযানে বিভিন্ন ধরণের অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে- ১টি দেশীয় পাইপগান, ১টি একনালা বন্দুক, ১ রাউন্ড কার্তুজের খোসা ও ২ রাউন্ড অকেজো কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।
এর আগে গত সোমবার ২৪ ঘন্টায় সারাদেশে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ১ হাজার ৬৩১ জনকে। তার মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ১ হাজার ১৩ জন আসামি এবং অন্যান্য ঘটনায় ৬১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার আগে গত রোববার ২৪ ঘণ্টায় বিশেষ অভিযানে ১ হাজার ৫৩৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এ ধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি আগামীকাল।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দেখা যায় মামলাটি বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চে বিষয়টি আগামীকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে মূলতবি/নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে প্রধান বিচারপতি আলোচিত এই মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য এই হাইকোর্ট বেঞ্চে পাঠান।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এই ঘটনায় করা মামলার বিচার শেষে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত দুজনকে মৃত্যুদণ্ড, ছয়জনকে যাবজ্জীবন ও সাতজনকে খালাস দিয়ে রায় দিয়েছিলেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক বরখাস্ত লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত, সাগর দেব, রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানায় পুলিশের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
বিচারিক আদালতের রায়ের পরে নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের দণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। অন্যদিকে, দণ্ডিত আসামিরা আপিল ও জেল আপিল করেন।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলায় পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিবিতে থাকা নথি আগুনে পড়ে গেছে বলে দাবি করা হয়েছে, সঠিক নয়।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগে নতুন উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এমন তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচারিত সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথিপত্র ডিবি হেফাজতে পুড়ে যাবার তথ্যটি সঠিক নয়।’
‘সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তের সময় আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে কেউ কেউ ডিবির নথি পুড়ে যাওয়ার নিউজ করছেন, যা সঠিক না,’ যোগ করেন তিনি।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আদালতে আগুনে এসব নথি পুড়ে যাওয়ার কথা বলা হয়নি। এডিশনাল অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদ রউফ বলেছেন, ডিবির অধিকাংশ অফিসার বদলি হওয়ায় পুরনো নথি খুঁজে পাওয়া সময়সাপেক্ষ।’
‘এ জন্য রাষ্ট্রপক্ষ নয় মাস সময় চাইলে বাদীপক্ষ তিন মাস সময়ের কথা বলেন। পরবর্তীতে আদালত ছয়মাস সময় দেন,’ যোগ করেন তিনি।
এরআগে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ করা হয়েছে, সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার ডিবিতে থাকা নথি আগুনে পুড়ে গেছে বলে হাইকোর্টকে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আরসাদুর রউফ বলেন, ‘আমি এমন কোনো কথা কখনোই বলিনি। সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথি পোড়েনি। আমি বলেছি, এটা পুরনো মামলা।’
মন্তব্য