জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে পর্নোগ্রাফি ভিডিও সরবরাহের অভিযোগে ১০ যুবকের নামে মামলা হয়েছে।
পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২ অনুযায়ী সোমবার রাতে তাদের নামে সান্তাহার রেলওয়ে থানায় মামলা হয়।
এর আগে আক্কেলপুর উপজেলার তিলকপুর রেলস্টেশন বাজার থেকে সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তাদের গ্রেপ্তার করে র্যাব।
গ্রেপ্তার ১০ জন হলেন রিবেন দাস, আব্দুল মজিদ, নাজমুল হোসেন, ৪৫ বছর বয়সী মোহসিন আলী ও ৪৬ বছর বয়সী মোহসিন আলী, জাহাঙ্গীর আলম, এখলাছ হোসেন, আব্দুস সালাম, সঞ্জয় বাবু ও উজ্জল হোসেন।
র্যাব-৫-এর জয়পুরহাট ক্যাম্প থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সোমবার রাতে বিষয়টি জানানো হয়।
র্যাবের জয়পুরহাট ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার সহকারী পুলিশ সুপার মাসুদ রানা জানান, পর্নোগ্রাফি ভিডিও সরবরাহের গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তিলকপুর রেলস্টেশন বাজার এলাকায় অভিযান চালায় র্যাব। অভিযানে ১০টি সিপিইউ, ১২টি হার্ডডিস্ক, আটটি মনিটর, ছয়টি মাউস, ১৪টি বিভিন্ন কেব্ল ও আটটি কিবোর্ডসহ ১০ যুবককে আটক করা হয়।
সান্তাহার রেলওয়ে থানায় মামলা দিয়ে তাদের হস্তান্তর করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:ফেনীর পরশুরাম উপজেলায় এক শিশুকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে গৃহশিক্ষককে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
ওই গৃহশিক্ষকের বাড়ি উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নে। শিশুটি স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিনের মতো রোববার সন্ধ্যায় শিশুটির বাড়িতে পড়াতে যান গৃহশিক্ষক আফাজ উদ্দিন। শিশুটিকে পড়ানোর সময় তার মা পাশের ঘরে চলে যান। এ ফাঁকে আফাজ উদ্দিন শিশুটিকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে শিশুটির চিৎকার শুনে মা ঘরে এসে বিষয়টি জানতে পারেন। তখন তিনি প্রতিবেশীদের ডেকে গৃহশিক্ষকের অপকর্মের কথা জানান।
স্থানীয়রা তাৎক্ষণিক জাতীয় জরুরি সেবা নম্বরে (৯৯৯) কল করে বিষয়টি জানান। পরশুরাম থানা পুলিশ ওই বাড়িতে গিয়ে গৃহশিক্ষককে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
রাতেই শিশুটির মা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে পরশুরাম থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় আফাজ উদ্দিনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
সোমবার আদালতে তুললে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
পরশুরাম মডেল থানার ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন, ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফাতেমা তুজ জোহরার আদালতে শিশুটির জবানবন্দি নেয়া হয়। পরে আদালত আফাজ উদ্দিনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।
আরও পড়ুন:নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার সহনীয় রাখতে অসাধু ব্যবসায়ীদের ফৌজদারি আইনের আওতায় শাস্তি চায় কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বালাদেশ-ক্যাব। বেসরকারি এই সংগঠন মনে করে, ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণে ভোক্তা অধিদপ্তর যথেষ্ট নয়; এজন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘ভোক্তা অধিকার বিভাগ’ জরুরি।
সোমবার ‘অতিমুনাফা ও প্রতারণার শিকার ভোক্তারা: আইন মানার তোয়াক্কাই নেই’ শীর্ষক এক অনলাইন সেমিনারে বক্তারা এমন বক্তব্য তুলে ধরেন।
ওয়েবিনারে ক্যাবের নেতারা বলেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার সহনীয় রাখতে উচ্চ পর্যায়ে টাস্কফোর্স গঠন করা হলেও বেপরোয়া কিছু ব্যবসায়ীর কারণে সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। চাল-ডাল থেকে শুরু করে ভোগপণ্যের বাজারে কিছু ব্যবসায়ী নিম্ন মানের পণ্য বাড়তি দামে বিক্রি করছেন। তাদের অপতৎপরতা বন্ধ করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় এসব ব্যবসায়ীকে ঠেকাতে কেবল জরিমানা নয়, আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।’
ওয়েবিনারটি পরিচালনা করেন ক্যাবের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মিজানুর রহমান রাজু। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন।
মূল প্রবন্ধে নাজের হোসাইন বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতা ঠেকাতে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও সিটি করপোরেশনের বাজারে অভিযান পরিচালনা করছে। অপরাধের জন্য সতর্ক করার পাশাপাশি জরিমানাও আদায় করা হচ্ছে। তারপরও অপতৎপরতা বন্ধ হচ্ছে না।’
সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কার্যক্রমের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘অসাধু ব্যবসায়ীদের ভিত এতটাই শক্তিশালী যে সরকারি প্রশাসন যন্ত্র মনে হয় তাদের কাছে অসহায়। এরা টাকার জোরে সরকারি আমলা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও বিভিন্ন মিডিয়াকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেন।’
ব্যবসায় অসাধু প্রক্রিয়ায় কোটিপতির সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আগে একই কায়দায় গুঁড়োদুধে ময়দা মিশ্রিত করার হোতাসহ চিনি, সয়াবিন, চাল কেলেঙ্কারির হোতাদের কোনো শাস্তি হয়নি। তারা বরাবরই পর্দার আড়ালে থেকে রেহাই পেয়ে যায়।’
‘ব্যবসায় এমন প্রতারণা ফৌজদারি অপরাধও বটে। তবে আইন দিয়ে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সব সময় সম্ভব না-ও হতে পারে। এজন্য প্রয়োজন অতিমুনাফালোভী, প্রতারক, মজুতকারী ও অসাধু ব্যবসায়ীদের সামাজিকভাবে বয়কট করা। তাহলে ব্যবসা-বাণিজ্যে জবাবদিহিতা ও সুশাসন নিশ্চিত হতে পারে।’
ক্যাবের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এম সামসুল আলম বলেন, ‘ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ছাড়া আর কোথাও ভোক্তাদের যাওয়ার জায়গা নেই। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের জন্য কেবল ভোক্তা অধিদপ্তরই যথেষ্ট নয়, বিভাগ চাই।
‘দেশে এমন কোনো খাত নেই যেখানে অসাধু ব্যবসায়ীরা মাথাচাড়া দেয়নি। আমরা ভোক্তারা অনেকটা বন্দি হয়ে গেছি। এই বন্দিদশা থেকে মুক্তি দিতে দেশের আইন, সরকারি প্রতিষ্ঠান কেউ-ই সফল নয়।’
‘দেশে অসাধু ব্যবসায়ীর সংখ্যা কম। কিন্তু সৎ ব্যবসায়ীরা এই অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে নির্বিঘ্নে ব্যবসা করতে পারছেন না। তারা অসাধু ব্যবসায়ীদের দ্বারা নির্যাতিত, নিপীড়িত হচ্ছেন।’
ভোক্তাদের প্রতি অনুরোধ রেখে তিনি বলেন, ‘আপনারা জেলায় জেলায় অন্তত একটা করে ঘটনা চিহ্নিত করুন। যাতে এসব ঘটনাকে ভোক্তা অধিকার সুরক্ষা আইনের আওতায় ফৌজদারি আইনে মামলা করা যায়। ভোক্তা অধিদপ্তরের হয়তো এখনও মামলা করার অধিকার নেই। তবে আইন করা হচ্ছে। ক্যাক একমাত্র সংগঠন, যাকে মামলা করার অধিকার দেয়া হয়েছে। ভোক্তা স্বার্থবিরোধী এসব ঘটনায় আমরা প্রয়োজনে প্রমাণসহ আদালতে যাব।
আরও পড়ুন:দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের সাবেক ইউএনও এবং তার বাবাকে হত্যাচেষ্টা মামলার দুই তদন্তকারী কর্মকর্তাকে আদালতে হাজির হয়ে সাক্ষ্য দিতে সমন জারি করেছে আদালত।
দিনাজপুর আদালত পুলিশ পরিদর্শক মনিরুজ্জামান নিউজবাংলাকে সোমবার বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম (আমলি আদালত-৭) আদালতের বিচারক আগামী ৩০ মে এই মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তাকে আদালতে হাজির হয়ে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য সমন জারি করেছেন। একই দিনে এই মামলার অভিযোগপত্র দেয়া কর্মকর্তাকেও আদালতে হাজির হয়ে সাক্ষ্য দিতে বলা হয়েছে। এই দুজনের সাক্ষ্য শেষ হলে এই মামলার যুক্তিতর্ক শুরু হবে।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, এই মামলার ৬১ জন সাক্ষীর মধ্যে ৫৮ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। এখন মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা ঘোড়াঘাট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মমিনুল ইসলাম, অভিযোগপত্র জমা দেয়া তদন্তকারী কর্মকর্তা তৎকালীন ডিবি পুলিশ পরিদর্শক জাফর ইমামের সাক্ষ্য গ্রহণ হলেই মামলার সাক্ষ্যপর্ব শেষ হবে। পরে রায়ের তারিখ ঠিক করবেন বিচারক।
২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর রাতে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহেদা খানম ও তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখের ওপর হামলা হয়। সরকারি বাসভবনে ঢুকে তাদের হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে পালিয়ে যায় উপজেলা পরিষদের তখনকার মালি রবিউল ইসলাম।
এ ঘটনায় ওয়াহেদা খানমের ভাই পুলিশ পরিদর্শক ফরিদ উদ্দীন শেখ বাদী হয়ে পরের দিন ঘোড়াঘাট থানায় মামলা করেন। পরে ওই মামলাটি ডিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়। এই মামলায় মালি রবিউল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। মামলার একমাত্র আসামি রবিউল কারাগারে আছেন।
হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে ভারতে গ্রেপ্তার প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারকে ফিরিয়ে আনতে দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশ যোগাযোগ রাখছে। ইন্টারপোলের শাখা হিসেবে পরিচিত পুলিশ সদর দপ্তরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশ সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাহিনীর প্রধান ড. বেনজীর আহমেদ।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আল মানার হাসপাতালে সোমবার বিকেলে এ তথ্য জানান পুলিশপ্রধান।
এর আগে আল মানার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পুলিশ কনস্টেবল মো. জনি খানের চিকিৎসার খোঁজ নেন তিনি।
পি কে হালদারকে দেশে ফেরানোর বিষয়ে পুলিশ কোনো উদ্যোগ নিয়েছে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে আইজিপি বলেন, ‘মূলত এটি তার (পি কে হালদার) বিরুদ্ধে দুদকের মামলা। আমরা দুদককে সহযোগিতা করছি। ইতোমধ্যে এনসিবির মাধ্যমে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। তিনি দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এনসিবির মাধ্যমে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করেছিলাম। এখন ভারতের এনসিবির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি আমরা।’
গত ১৪ মে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে।
কনস্টেবল জনির চিকিৎসার খোঁজ নেয়া শেষে আইজিপি বলেন, ‘পুলিশ দেশ ও জনগণকে নিরাপদ রাখতে সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করে। দায়িত্ব পালনকালে সতর্কতা অবলম্বন করা সত্ত্বেও অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে যায়। প্রতি বছর দায়িত্ব পালনকালে এ ধরনের দুর্ঘটনায় আমরা অনেক সহকর্মীকে হারাই।’
জনি খানের কবজি বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর প্রায় ৯ ঘণ্টা অপারেশন করে চিকিৎসকরা তা সফলভাবে প্রতিস্থাপন করতে সক্ষম হন। তিনি এ ধরনের জটিল অপারেশন পরিচালনাকারী চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারী, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
গত ১৫ মে সকালে চট্টগ্রাম জেলার লোহাগড়া থানার পদুয়া লালারখিল গ্রামে এজাহারভুক্ত আসামি গ্রেপ্তার করতে গেলে আসামির দায়ের কোপে কনস্টেবল জনির হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
আরও পড়ুন:চাকরিচ্যূত ১৭৬ কর্মীকে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা পরিশোধের পর শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ও গ্রামীণ ব্যাংকের উদ্যোক্তা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মালিকানাধীন গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে।
আদালতের বাইরে বসেই দুই পক্ষ একটি সমঝোতায় পৌঁছায়। এরপর তারা আদালতে বিষয়টি জানালে আদালত মামলাটি প্রত্যাহার ঘোষণা করে।
সোমবার বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক কোম্পানি বেঞ্চ মামলা প্রত্যাহারের আদেশ দেয়।
আদেশে আদালত বলে, ‘বাস্তবতার প্রেক্ষিতে দেখা যায়, উভয়পক্ষ বন্ধুত্বপূর্ণভাবে আদালতের বাইরে সমস্যাটি সমাধান করে ফেলেছে। এ অবস্থায় এটি মামলা হিসেবে ধরে রাখার কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। সুতরাং মামলাটি ডিসমিস করা হলো।’
আদালতের প্রত্যাহারের আবেদন করেন ১৭৬ জনের পক্ষে আইনজীবী ইউসুফ আলী। আর গ্রামীণ টেলিকমের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মুস্তাফিজুর রহমান।
আদেশের পরে গ্রামীণ টেলিকমের পক্ষের আইনজীবী মুস্তাফিজুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গ্রামীণ টেলিকমের কর্মকর্তা-কর্মচারী তাদের সঙ্গে গ্রামীণ টেলিকমের দীর্ঘমেয়াদি একটা বিরোধ ছিল। এই বিরোধের প্রেক্ষিতে গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম মামলা করেন তারা। সবশেষ তারা গ্রামীণ টেলিকম অবসায়ন চেয়ে কোম্পানি কোর্টে একটা মামলা করে।
‘পরে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তাদের মধ্যে কোর্টের বাইরে একটা সেটেলমন্টে হয়েছে। ফলে তাদের দাবি করা টাকার একটা অংশ তাদের দেয়া হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে আজকে তারা সব মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।’
টাকার পরিমাণ কত জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রায় ৪০০ কোটি টাকা।’
গ্রামীণ টেলিকমে শ্রমিক ছাঁটাইকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরেই শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ চলে আসছিল।
একপর্যায়ে শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন (বি-২১৯৪) সিবিএর সঙ্গে আলোচনা না করেই এক নোটিশে প্রতিষ্ঠানটির ৯৯ কর্মীকে ছাঁটাই করে গ্রামীণ টেলিকম। বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে তারা হাইকোর্টে আবেদন করেন। এ ছাড়া কোম্পানি আইনে একাধিক মামলা করে।
এ ছাঁটাইয়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেন ২৮ কর্মী। পরে আরও অনেকেই যুক্ত হন সেখানে। ছাঁটাইকে কেন্দ্র করে ড. ইউনূসকে তলবও করেছিল হাইকোর্ট। শেষপর্যন্ত গ্রামীণ টেলিকমের অবসায়ন চেয়ে ১৭৬ কর্মকর্তা-কর্মচারী কোম্পানি কোর্টে আবেদনও করেন।
সব শেষ দুইপক্ষই কোর্টের বাইরে সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হয়। আর প্রতিষ্ঠানটি ৪০০ কোটি টাকা দিতে রাজি হওয়ায় মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়।
বকেয়া পাওনা পরিশোধ না করায় ২০১৬ সালে প্রথম মামলা করেন গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক ১৪ কর্মী। পরে বকেয়া পাওনা চেয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ৯৩টি মামলা করেন তার প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি গ্রামীণ টেলিকমের কর্মীরা।
ঢাকার শ্রম আদালতে সব মিলে ১০৭টি মামলা করা হয় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ১৪ কর্মী আরও ১৪টি মামলা করেন পাওনা টাকার জন্য।
২০২০ সালে কোনো ধরনের পূর্ব নোটিশ না দিয়ে গ্রামীণ টেলিকম ৯৯ জনকে চাকরিচ্যুতি করে। এটি নিয়েও পরে আদালত পর্যন্ত গড়ান চাকরিচূত কর্মীরা।
আরও পড়ুন:ডেল্টা লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে মাস্ক কেনা সংক্রান্ত জালিয়াতির মামলায় প্রশাসক সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লাকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
সোমবার আসামির করা জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু বকর সিদ্দিক।
মামলার অন্য আসামি ডেলটা লাইফের ডিএমডি ও সিওও মনজুরে মাওলা, ইভিপি কামরুল হক, ইভিপি এম হাফিজুর রহমান খানের বিরুদ্ধে জারি হয়েছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। সমন জারি হলেও তারা আদালতে হাজির হননি।
মাস্ক কেনায় দুর্নীতি অভিযোগ এনে মহানগর মুখ্য হাকিমের আদালতে ডেল্টা লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালক এবং অডিট কমিটির সদস্য জেয়াদ রহমান মামলাটি করেন। শুনানি শেষে আদালত তা তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে পাঠায়।
বাদীপক্ষের আইনজীবী রমজান আলী সরদার বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ডিএমডি ও সিওও মনজুরে মাওলা, ইভিপি কামারুল হকের অনুমোদনে ২ লাখ ১৫ হাজার পিস মাস্ক ১ কোটি ৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকায় কেনার অনুমোদন দেয়া হয়। প্রতিটির মূল্য ধরা হয় ৫০ টাকা। যা ওই সময়ের বাজারমূল্য অপেক্ষা অনেক বেশি।
ফেসবুকভিত্তিক প্রতিষ্ঠান লাজিম মিডিয়াকে কার্যাদেশ দিয়ে ৫০ লাখ টাকা অগ্রিম পরিশোধ করা হয়। ক্রয় আদেশের ২ লাখ ১৫ হাজার পিস মাস্কের মধ্যে বিভিন্ন জোনাল অফিসে ১৯ হাজার মাস্ক বিতরণ করা হয়। বাকি ১ লাখ ৯৬ হাজার মাস্কের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।
ডেলটা লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির নিউ পারচেজ অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট অ্যান্ড গেমেন্ট-এর বিধি অনুযায়ী ৮ লাখ টাকার ওপরে কোনো কিছু কিনতে হলে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। জাতীয় পত্রিকায় দরপত্র বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করতে হয়।
কিন্তু সাবেক প্রশাসক সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লা এর কোনোটিই না করে নিকটাত্মীয়কে কাজটা পাইয়ে দেন। এতে কোম্পানির পলিসিহোল্ডার ও শেয়ারহোল্ডারদের ক্ষতি হলেও তারা নিজেরা লাভবান হন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
পিবিআইয়ের তদন্তেও ঘটনার সত্যতা উঠে আসে। আদালত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে সমন জারি করে।
আরও পড়ুন:দেশের সাধারণ মানুষ ওয়াকিটকি বহনকারী ব্যক্তিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য হিসেবেই বিবেচনা করে থাকে। আর এই জনমানসিকতাকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাচ্ছে অপরাধীরা। তারা ওয়াকিটকি সেট ব্যবহার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়সহ নানা অপরাধ করে বেড়াচ্ছে।
দেশে একটি চক্র অবৈধভাবে ওয়াকিটকি সেট মজুত ও বিক্রি করে আসছে। তাদের ক্রেতা মূলত অপরাধ জগতের সদস্যরা। অবৈধ কারবারিরা এভাবে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। আবার এসব ওয়াকিটকি ব্যবহার করে একের পর এক অপরাধ সংঘটনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
অবশেষে ওয়াকিটকি সেট অবৈধভাবে বিক্রি চক্রের হোতাসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
রোববার রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও গুলিস্তান স্টেডিয়াম মার্কেট এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন অলেফিল ট্রেড করপোরেশনের মালিক ও চক্রের হোতা আব্দুল্লাহ আল সাব্বির এবং তার সহযোগী আল-মামুন। এ সময় ১৬৮টি ওয়াকিটকি সেট, ওয়াকিটকি সেটের ৩৫টি ব্যাটারি, ৩২টি চার্জার, ৬৩টি এন্টেনা, ৬টি মাউথ স্পিকার ও ছয়টি ব্যাক ক্লিপ জব্দ করা হয়।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সোমবার সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-৩-এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, র্যাব-৩ ও বিটিআরসির যৌথ অভিযানে অবৈধ ওয়াকিটকি সেট বিক্রি চক্রের হোতাসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায়, একটি চক্র অধিক মুনাফার আশায় দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে অপরাধীদের কাছে কালো রঙের ওয়াকিটকি সেট বিক্রি করে আসছে। অথচ বিটিআরসির নির্দেশনা অনুযায়ী সরকারি প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি কালো রঙের ওয়াকিটকি সেট ব্যবহার করা দণ্ডনীয় অপরাধ।
গ্রেপ্তার দুজন অলেফিল ট্রেড করপোরেশন নামক প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজের মাধ্যমে অবৈধভাবে বেতারযন্ত্র ওয়াকিটকি সেট মজুত করে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে আসছিল। তারা উদ্ধারকৃত ওয়াকিটকি সেটগুলোর ব্যবহারসংক্রান্ত লাইসেন্স ও কোনো ধরনের বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। এসব ওয়াকিটকি সেটের ফ্রিকোয়েন্সি ২৪৫-২৪৬ মেগাহার্টজ। এসব ওয়াকিটকি ব্যবহার করে রিপিটার ছাড়া আধ কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত যোগাযোগ করা সম্ভব।
এ ছাড়া বহুতল ভবনের মধ্যে উপরতলা থেকে নিচতলায় যোগাযোগ করা সম্ভব। এসব ওয়াকিটকির মূল্য পাঁচ হাজার থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা পর্যন্ত।
র্যাব-৩-এর অধিনায়ক বলেন, ‘আসামি আল সাব্বির ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক। তিনি পাঁচ বছর ধরে অবৈধভাবে ওয়াকিটকি সামগ্রী মজুত রেখে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে আসছিলেন। গ্রেপ্তার অপরজন আল মামুন দুই বছর ধরে সাব্বিরের সহযোগী হিসেবে কাজ করে আসছিলেন। এ পর্যন্ত তারা দুই হাজার ওয়াকিটকি সেট বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে অবৈধভাবে বিক্রি করেছেন।
দেশের নিরাপত্তা হুমকির উল্লেখ করে লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ বলেন, ‘সাধারণ মানুষ ওয়াকিটকি বহনকারী কাউকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য হিসেবেই গণ্য করে। এটাকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়ে ওয়াকিটকি সেট ব্যবহার করে অপরাধীরা ভুয়া ডিবি, র্যাব, ডিজিএফআই ও এনএসআই সদস্য এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়সহ বিভিন্ন অপরাধ করে আসছে।
‘এতে করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। অন্যদিকে প্রকৃত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করতে গেলে জনসাধারণ তাদের ভুয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ভেবে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়া ওয়াকিটকির মাধ্যমে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করে অপরাধ সংগঠন করলে পরবর্তীতে অপরাধী শনাক্তকরণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হবে, যা সার্বিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য