হজে যাওয়ার জন্য আগে নিবন্ধন করা থাকলেও যাদের বয়স ৬৫ পার হয়েছে তারা এ বছর হজে যেতে পারবেন না। এমনটি জানিয়েছেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান।
সোমবার সচিবালয়ে বাংলদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত ইসলামিক অর্থ ব্যবস্থাপনায় নগদের ডিজিটাল লেনদেন নিয়ে এক সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান তিনি।
হজে যেতে যারা আগে নিবন্ধন করেছেন কিন্তু বয়স ৬৫ বছরের বেশি, তারা কী এবার হজে যেতে পারবেন- এ প্রশ্নে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘না, তারা যেতে পারবেন না। ইন্টারন্যাশনালি সারা বিশ্ব একই সিস্টেমে চলছে। ৬৫ বছরের বেশি যাদের বয়স হয়েছে, তারা এবার হজে যেতে পারবেন না। আগে নিবন্ধন করলেও না।’
প্রতি বছর সাধারণত ২০ থেকে ২৫ লাখ মানুষ হজ পালনের অনুমতি পান। কিন্তু করোনা মহামারির মধ্যে সৌদি সরকার এবার বিশ্বের ১০ লাখ মানুষকে হজে যাওয়ার অনুমতি দেবে। ফলে বাংলাদেশ থেকে এ বছর সাড়ে ৫৭ হাজার মানুষ হজে যেতে পারবেন। যদিও বাংলাদেশ থেকে হজে যেতে আড়াই লাখেরও বেশি মানুষ নিবন্ধন ও প্রাক-নিবন্ধন করেছেন।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিগত দুটি বছর পবিত্র হজ পালন করা সম্ভব হয়নি। আল্লাহর অশেষ রহমতে এ বছর আমরা হজ পালন করতে যাচ্ছি। সৌদি আরবের সঙ্গে যে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সেটাও হয়ে যাবে।’
তিনি জানান, অন্যান্য বছর হজের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ৪ থেকে ৬ মাস সময় পাওয়া যায়। এবার সময় মাত্র ৩৪ দিন। ৩৪ দিনের এই কর্মযজ্ঞে আল্লাহ তায়ালা যদি পরিত্রাণ দেয়ার ব্যবস্থা করেন, এ ছাড়া করার কোনো উপায় নেই। আমরা শুক্র ও শনিবারও অফিস খোলা রাখার কাজ শুরু করেছি।
এই সময় তিনি ইসলামিক ব্যাংকের নগদের সম্পৃক্ততা উল্লেখ করে বলেন, ২০১৯ সালের ২৬ মার্চ প্রধানমন্ত্রী নগদের উদ্বোধন করার সময় থেকেই নগদ এই অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সুদবিহীন লেনদেনের সুবিধা দিয়ে আসছে, যা দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য ইসলামিক জীবন বিধান মেনে ডিজিটাল লেনদেন করতে সহায়তা করছে। সুদবিহীন লেনদেন ছাড়াও গ্রাহকরা বিভিন্ন ইসলামিক ইস্যুরেন্সের প্রিমিয়াম প্রদান, বিভিন্ন ইসলামিক প্রতিষ্ঠানে সহজে দান করা, হজ ও ওমরাহ সংক্রান্ত সব পেমেন্টসহ অন্যান্য সুবিধা খুব সহজে উপভোগ করতে পারবেন।
প্রতিমন্ত্রী জানান, নগদ ইসলামিক অ্যাপ থেকে জাকাত ক্যালকুলেটরের মাধ্যমে জাকাতের হিসাব খুব সহজে করা যায়। এতে আরও আছে সম্পূর্ণ কোরআন শোনার ব্যবস্থা, নামাজের সময়সূচি ও বিভিন্ন হাদিস ও দোয়ার সংকলন।
গ্রাহকের লেনদেন থেকে নগদ ইসলামিকের আয়ের একটি অংশ মসজিদ ও মাদ্রাসার উন্নয়নকাজে দান করা হচ্ছে।
নগদ-এর নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আমিনুল হক বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ। তারা ইসলামিক অর্থ ব্যবস্থাপনায় বেশি সম্পৃক্ত। এই সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে ডিজিটাল লেনদেনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে নগদে এখন ইসলামিক অর্থ ব্যবস্থাপনাও যুক্ত হয়েছে। এর মাধ্যমে যে কেউ যেকোনো জায়গা থেকে জাকাত-ফিতরাসহ যেকোনো ধরনের ইসলামিক ব্যাংকিং সুদবিহীন পরিচালনা করতে পারেন। যে কারো অনুকূলে টাকাও পাঠাতে পারবেন।’
অনুষ্ঠানে শরিয়া সুপারভাইজরি কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এইচ এম শহিদুল ইসলাম বারাকাতী বলেন, ‘ঘরে বসে জাকাত ফিতরার টাকা এখন সহজেই নগদ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পৌঁছে দেয়া সম্ভব হচ্ছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নগদ। নগদের ইসলামী অ্যাপস এই কাজটি করছে। তিনি জানান, নগদে হারাম কিছু নেই। আছে হালাল ব্যবস্থা।’
বিএসআরএম সভাপতি তপন বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সম্পাদক মাসুদুল হক। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম প্রশিক্ষণ অ্যাকাডেমির পরিচালক মো. আনিসুজ্জামান সিকদার।
আরও পড়ুন:আসিরি ম্যাগপাই নামের একটি দোয়েলের প্রজাতি বিলুপ্তির পথে। এটি সৌদি আরবের দক্ষিণ-পশ্চিম পাহাড়ে থাকে। এই প্রজাতি করভিডে পরিবারের সদস্য।
তায়েফ বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা কমিটির সদস্য মোহাম্মদ শোব্রাক বলেছেন, ‘এর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাচ্ছে। কেউ যদি এটিকে সংরক্ষণ পদক্ষেপ না নেয় তাহলে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।’
শোব্রাক আফ্রিকা ও ইউরেশিয়ায় পরিযায়ী পাখির সংরক্ষণ সম্পর্কিত সমঝোতা স্মারক বিষয়ক কমিটির সদস্য।
বিলুপ্তপ্রায় দোয়েলটির বৈজ্ঞানিক নাম পিকা এ্যসিরেনসিস। ২০০৩ সালে প্রকাশিত পাখিদের জিনের উপর একটি গবেষণার মাধ্যমে এটিকে আলাদা প্রজাতি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। গবেষণায় বলা হয়, ম্যাগপাই অন্যান্য পাখির প্রজাতি থেকে আলাদা এবং বিশ্বের কোথাও এটিকে পাওয়া যাবে না।
শোব্রাক বলেছেন, ‘স্যাটেলাইটের মাধ্যমে চিহ্নিত করা পাখিটি উঁচু অঞ্চলে বাস করে। এটি অন্য পাখিদের মত শীতকালে জায়গা বদলায় না।’
ন্যাশনাল সেন্টার ফর ওয়াইল্ডলাইফের সাথে সৌদি আরামকোর স্পনসর করা এটিই সর্বশেষ গবেষণা। এর বসবাসের জন্য পরিবেশের ৮০ শতাংশই অনুপযুক্ত হয়ে গেছে এবং ২০ শতাংশ বাকি রয়েছে।
দোয়েলটির সংখ্যা এভাবে কমে যাওয়াই এটিকে বিশ্বের বিরল পাখিদের কাতারে ফেলেছে।
শোব্রাক বলেন, ‘সংখ্যা কমে যাওয়ার বিভিন্ন কারণ, যেমন- শহরের অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পাখির বাসস্থানের ওপর এর প্রভাব, গাছের মৃত্যু। এসবই এই পাখির বেঁচে থাকার ওপর প্রভাব ফেলে।’
শোব্রাক আরও বলেন, ‘অন্য সব পাখির মতোই আসিরি ম্যাগপাইয়ের প্রজনন এবং পুষ্টি গ্রহণ করে বেঁচে থাকার জন্য উপযোগী পরিবেশের প্রয়োজন। পাখিটিকে বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচাতে হবে।’
তিনি জানান, এটি একমাত্র সৌদি পাখি; যা পৃথিবীর আর কোথাও পাওয়া যায় না।’
সংযুক্ত আরব আমিরাতের নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন দেশটির দীর্ঘ দিনের শাসক শেখ মোহামেদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান। তিনি আরব বিশ্বে শক্তিশালী শাসক এবং 'এমবিজেড' নামে সমধিক পরিচিত।
দেশটির প্রেসিডেন্ট এবং আবুধাবির শাসক শেখ খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের মৃত্যুর পরের দিন শনিবারই মোহামেদ বিন আল জায়েদকে এই দায়িত্ব দেয়া হলো।
দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদসংস্থা ডাব্লিউএএম-এর বরাতে আলজাজিরার খবরে বলা হয়, শেখ মোহম্মদকে ফেডারেল সুপ্রিম কাউন্সিল থেকে নির্বাচিত করা হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শেখ মোহম্মদ এতোদিন পর্দার আড়ালেই ছিলেন। তার স্বাস্থ্যের ভঙ্গুর অবস্থার জন্য তাকে পাশ কাটিয়ে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন তার সৎ ভাই সদ্য প্রয়াত খালিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ান।
আমিরাতের সাত শাসক এলাকার শেখদের একটি সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। শেখ খলিফা শুক্রবার ৭৩ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পরের দিনেই তারা এমন সিদ্ধান্ত নেয়।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর তার ওপর ‘আস্থা ও বিশ্বাস’ রাখায় কাউন্সিলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন মোহামেদ বিন জায়েদ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখদের ভোটাভুটির মাধ্যমেই মোহম্মদ বিন জায়েদকে নির্বাচিত করা হয়েছে। যারা ভোট দিয়েছেন তাদের মধ্যে দুবাইয়ের শাসকও ছিলেন।
ভোটের পর দুবাইয়ের শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম টুইটারে লেখেন, ‘আমরা তাকে অভিনন্দন জানাই। আমরা তার প্রতি আনুগত্যেরও অঙ্গীকার করছি এবং আমাদের জনগণ তার প্রতি আনুগত্যের অঙ্গীকার করেছে।’
‘ঈশ্বরের কৃপায়, তার নেতৃত্বে পুরো দেশকে গৌরব ও সম্মানের পথে নিয়ে যাবেন তিনি।’
শুক্রবার দেশটির রাজধানী আবুধাবির আল বাতিন কবরস্থানে প্রেসিডেন্ট খলিফা আল নাহিয়ানকে দাফন করা হয়।
আবুধাবির শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান আবুধাবির মসজিদে প্রথম জানাজায় অংশ নেন। এ সময় প্রয়াত প্রেসিডেন্টের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন।
এ ছাড়া মাগরিবের নামাজের পর দেশজুড়ে মসজিদে মসজিদে প্রেসিডেন্টের জন্য দোয়া করা হয়।
শেখ খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের মৃত্যুতে দেশজুড়ে ৪০ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করে আরব আমিরাত। একই সঙ্গে জাতীয় পতাকা রাখা হবে অর্ধনমিত। মন্ত্রণালয়সহ সব ধরনের অফিস বন্ধ থাকবে তিন দিন।
১৯৪৮ সালের ৭ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জায়েদ আল নাহিয়ান। তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট। ২০০৪ সালের ৩ নভেম্বর থেকে প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি আবুধাবির শাসকের দায়িত্ব পালন করছিলেন।
আরও পড়ুন:আল জাজিরার সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহ ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত হওয়ার একদিন পর ফিলিস্তিনের রামাল্লায় রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানো হয় তাকে।
অধিকৃত পশ্চিম তীরের শহরে বৃহস্পতিবার দুপুরে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) প্রেসিডেন্ট ভবনে আয়োজনে অংশ নেন কয়েক হাজার ফিলিস্তিনি।
জেনিন শহরে বুধবার ভোরে সামরিক অভিযান কভার করার সময় ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত হন শিরিন।
ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস শিরিনকে সম্মান জানানোর পর, ভবন প্রাঙ্গনে ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যরা তাকে শ্রদ্ধা জানান।
এ সময় সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন মাহমুদ আব্বাস। তিনি বলেন, ‘এই মৃত্যুর জন্য ইসরায়েল দায়ী। ঘটনা তদন্তে ইসরায়েলের সঙ্গে যৌথ তদন্তের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করছি। আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) যাব।’
শিরিনের হত্যাকাণ্ড ফিলিস্তিন ও আরব বিশ্বে শোকের ছায়া ফেলেছে।
৫১ বছরের শিরিন আল জাজিরা আরবি টেলিভিশনের একজন সিনিয়র সংবাদদাতা ছিলেন। চ্যানেলটি চালু হওয়ার এক বছর পর ১৯৯৭ সালে সেখানে যোগ দেন তিনি।
ফিলিস্তিনের অনেকেই শিরিনকে ২০০০ সালে শুরু হওয়া দ্বিতীয় ইন্তিফাদা বা বিদ্রোহের সময় পশ্চিম তীরের প্রধান শহরগুলোতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বড় বড় হামলাগুলো কভার করার জন্য মনে রাখবে।
সাংবাদিকতার ছাত্র আজহার খালাফ বলেন, ‘তার শাহাদাতের খবরটি প্রত্যেক ফিলিস্তিনির মুখে চড় মারার মতো ছিল।’
বিরজাইট বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র শিরিনকে ‘মিডিয়া আইকন’ এবং ‘মডেল’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
‘তিনি প্রতিটি বাড়িতে ছিলেন, প্রতিটা ফিলিস্তিনিদের ব্যথা অনুভব করেছিলেন। তিনি ছিলেন সত্য ও ন্যায়ের কণ্ঠস্বর।’
শিরিনের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপর রামাল্লা শহরের কেন্দ্র আল-মানারা স্কোয়ারে তার একটি বিশাল ছবি টাঙানো হয়।
৩৭ বছরের রাজনৈতিক ও সামাজিককর্মী হাজেম আবু হেলাল বলেন, ‘শিরিন জনগণের কাছাকাছি ছিলেন।
‘সবাই তাকে শুধু তার কাজের জন্যই নয়, সমাজে তার সম্পৃক্ততার জন্যও জানত। তিনি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশপাশি বিভিন্ন সংগঠনের অনেক উদ্যোগের অংশ ছিলেন।’
সাংবাদিক, সহকর্মী এবং বন্ধুরা বৃহস্পতিবার সকালে ইস্তিশারি হাসপাতালে শিরিনকে দেখতে ভিড় করেন। তবে কেবল ঘনিষ্ঠদের হাসপাতালের মর্গে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছিল। তাদের কান্নায় তখন ভারী হয়ে উঠে আশপাশ।
এরপর তার মরদেহ সেখান থেকে পিএ ন্যাশনাল গার্ডের গাড়িতে নেয়া হয় প্রেসিডেন্ট কম্পাউন্ডে। সেখানে আয়োজন শেষ করে শিরিনের মরদেহ একটি অ্যাম্বুলেন্স এবং পরে একটি কাফেলায় করে রামাল্লা এবং জেরুজালেমের মাঝে অবস্থিত কালান্দিয়া চেকপয়েন্টে নেয়া হয়।
সেখান থেকে অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমের শেখ জারাহর সেন্ট লুইস ফ্রেঞ্চ হাসপাতালে তার পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। শুক্রবার ওল্ড সিটিতে শিরিনের দাফন হবে।
আরও পড়ুন:আল জাজিরার সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহের হত্যার ঘটনায় পশ্চিমা মিডিয়ার কড়া সমালোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ব্যবহারকারীরা বলছে, মিডিয়া আউটলেটগুলো শিরিন হত্যায় ইসরায়েলের ভূমিকা উপেক্ষা করেছে।
৫১ বছরের শিরিন ফিলিস্তিনি-আমেরিকান সাংবাদিক, কাজ করতেন আল জাজিরার আরবি টেলিভিশনের হয়ে। বুধবার সকালে ইসরায়েলি সেনার গুলিতে নিহত হন তিনি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিনে একটি ইসরায়েলি সামরিক অভিযান কভার করার সময় গুলিবিদ্ধ হন শিরিন।
দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে নিয়মিত তাকে দেখা যেত আল জাজিরা টেলিভিশনের পর্দায়। শিরিনের এই অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুতে শোকে কাতর ফিলিস্তিনবাসী। শিরিনের কর্মজীবনের প্রতি সম্মান জানানোর পাশাপাশি ফিলিস্তিনিদের অভিযোগ, অনেক মিডিয়া এই হত্যাকাণ্ডে ইসরায়েলকে না জড়ানোর বিষয়ে সতর্ক ছিল।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা এই বিষয়ে চটেছেন পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলোর ওপর। টুইটে একজন লেখেন, “ওদের গল্প ‘অবিশ্বাস্য”।
ইহুদি ভয়েস ফর পিস-এর রাজনৈতিক পরিচালক বেথ মিলার এ ঘটনায় নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি শিরোনামের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। নিউ ইয়র্ক টাইমসের শিরোনাম ছিল, ‘৫১ বছর বয়সে মারা গেছেন’। সেখানে মৃত্যুর কারণ তারা উল্লেখ করেনি।
টুইটে মিলার লেখেন, ‘শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের রিপোর্ট করার সময় একজন ইসরায়েলি স্নাইপার শিরিন আবু আকলেহকে গুলি করে হত্যা করেছিল।
‘৫১ বছর বয়সে মারা যায়’। অবিশ্বাস্য, এনওয়াইটি।’
Shireen Abu Akleh was shot and killed by an Israeli sniper while reporting on an Israeli military raid of a refugee camp.
— beth miller (@bethavemiller) May 11, 2022
"Dies at 51". Unbelievable, NYT. pic.twitter.com/H8kxCqFubi
একই শিরোনাম উল্লেখ করে নিউ ইয়র্ক টাইমসের আইনি মানবাধিকার ও বেসরকারীকরণ প্রকল্পের সহপরিচালক বাসাম খাজা টুইটে লেখেন, ‘৫১ বছর বয়সে মৃত্যু’ বলা সত্যিই অদ্ভুত। যেখানে একজন সাংবাদিককে মাথায় গুলি করা হয়েছিল।
Hey @NYTimes, "Dies at 51" is a really strange way to say a journalist was shot in the head. pic.twitter.com/YoqzHRoDsS
— Bassam Khawaja (@Bassam_Khawaja) May 11, 2022
শিরিন হত্যার খবরে ভুল তথ্য দেয়ার বিষয়টি নিউ ইয়র্ক টাইমসকে জানিয়েছিল আল জাজিরা। পরে এনওয়াইটি সংশোধন করে খবরটি। আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছিল, শিরিন ‘সংঘর্ষে’ নিহত হয়েছেন।
Shireen Abu Akleh, a Palestinian American journalist for Al Jazeera, was shot and killed in the West Bank early Wednesday, the Palestinian Health Ministry said. The circumstances surrounding the shooting were not immediately clear. https://t.co/k45YD1MJRe
— The New York Times (@nytimes) May 11, 2022
ইসরায়েলি ‘আখ্যান’
সমালোচিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসও (এপি)। এপির শিরোনাম ছিল, “আইকনিক ফিলিস্তিনি সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহ ‘বন্দুকের গুলিতে নিহত হয়েছেন’। টুইটে এক ব্যবহারকারী লেখেন, এপির এ ধরনের আচরণ ‘অনৈতিক সাংবাদিকতা’।
“তিনি এলিয়েনদের (ভিনগ্রহের প্রাণী) হাতে খুন হননি। ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে খুন হয়েছেন। মৌলিক সত্য নিয়ে ‘বিকল্প তথ্য' প্রচারের জন্য প্রতিক্রিয়া জানানো উচিত।”
ফাতিমা সাইদ নামে এক ব্যবহারকারী অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) শব্দ চয়নের নিন্দা করেছেন। বলেছেন, এক বছর আগে গাজায় তাদের কার্যালয় বোমা মেরে উড়িয়ে দিয়েছিল ইসরায়েলি বাহিনী।
টুইটে তিনি লেখেন, “মৃত্যুতেও ফিলিস্তিনিদের জন্য কোনো মর্যাদা বা ন্যায়বিচার নেই। ইসরায়েলের হাতে একজন প্রবীণ সাংবাদিকের হত্যাকাণ্ডকে এলোমেলো ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বলে বর্ণনা করেছে একটি মূলধারার সংবাদ আউটলেট।
“এটি সেই একই এপি যার অফিসগুলো গত বছর ইসরায়েলি বোমায় চ্যাপ্টা হয়েছিল।”
গাজা উপত্যকায় গত বছরের মে মাসে ইসরায়েলি বিমান হামলায় একটি টাওয়ার ধ্বংস হয়। এই টাওয়ারে আল জাজিরা এবং দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের ব্যুরোসহ অনেক আবাসিক অ্যাপার্টমেন্ট এবং অফিস ছিল।
ইউক্রেন এবং ফিলিস্তিনের সংঘাতে দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্যের কারণে পশ্চিমা মিডিয়া আউটলেটগুলোর সমালোচনা করেছেন আমেরিকান সাংবাদিক কেভিন গোসজটোলা। তিনি বলেছেন, শিরিনের মৃত্যুর খবরটি আরও ভালো কভারেজের দাবি রাখত।
টুইটে তিনি লেখেন, ‘ইউক্রেনে যদি একজন সাংবাদিককে রাশিয়ান সামরিক বাহিনী লক্ষ্যবস্তু করে হত্যা করে, তবে যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়া এটিকে একটি হত্যাকাণ্ড হিসেবে প্রতিবেদন করবে এবং ক্ষোভের সৃষ্টি করবে।
‘আল জাজিরার সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহকে ইসরায়েলি সেনারা হত্যা করেছে। এ খবরটি আরও ভালো কভারেজের দাবি রাখে।’
আল জাজিরাকে হামাদ বিন খলিফা ইউনিভার্সিটির মিডল ইস্ট স্টাডিজের সহকারী অধ্যাপক মার্ক ওয়েন জোনস বলেন, “ইসরায়েলের সোশ্যাল মিডিয়ায় মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দেয়ার ট্র্যাক রেকর্ড রয়েছে। শিরিনের মৃত্যুকে ঘিরে তারা ‘জল ঘোলা’ করার চেষ্টা করছে।”
জোনস বলেন, ‘ইসরায়েল এ ধরনের সংকট মোকাবিলায় দারুণ অভ্যস্ত। তারা ফিলিস্তিনি নাগরিক বা সাংবাদিকদের হত্যা করে। সুতরাং তারা যা করেছে তার একটি বর্ণনা ইতোমধ্যেই রয়েছে। আর সেই বর্ণনাটি হলো শিরিনের হত্যার বিষয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে।
‘আমরা জানি এটি অকল্পনীয়। তবে এই বর্ণনাটি খুব তাড়াতাড়ি প্রকাশ করা হয়েছিল। যদি তারা শিরিনের মৃত্যুর চারপাশে জল ঘোলা করতে পারে, তাহলে সম্ভবত তারা এটাও প্রচার করতে পারে যে ফিলিস্তিনিরাই শিরিনকে হত্যা করেছে এবং এতে তারা সফলও হয়েছে৷
‘বাস্তবে এটিই ঘটেছে। যুক্তরাজ্যের দৈনিক গার্ডিয়ান এবং বিবিসি ইতোমধ্যেই তাদের প্রতিবেদনে ইসরায়েলি সংস্করণের ঘটনাগুলোকে গুরুত্বসহকারে প্রচার করে।’
আরও পড়ুন:ইসরায়েলের দখলকৃত পশ্চিম তীরে দেশটির বাহিনীর গুলিতে শিরিন আবু আকলেহ নামের আল জাজিরার এক সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ওই মন্ত্রণালয় ও আল জাজিরার সাংবাদিকরা জানান, বুধবার পশ্চিম তীরের জেনিন শহরের কাছে ইসরায়েলি বাহিনীর তল্লাশির খবর সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন শিরিন। ওই সময় গুলিবিদ্ধ হন তিনি। পরে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে নেয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
আল জাজিরার সাংবাদিক নিদা ইব্রাহিম জানান, শিরিনের মৃত্যুর সময়কার পরিস্থিতি এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি, তবে ঘটনার ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, তিনি মাথায় গুলিবিদ্ধ হন।
ফিলিস্তিনের রামাল্লা শহর থেকে নিদা বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা জানতে পেরেছি, ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাকে মৃত ঘোষণা করেছে। জেনিনের ঘটনাগুলো বিশেষত দখলকৃত পশ্চিম তীরের উত্তরাঞ্চলে জেনিনে ইসরায়েলি বাহিনীর তল্লাশির খবর সংগ্রহ করছিলেন শিরিন আবু আকলেহ। ওই সময় গুলি এসে তার মাথায় লাগে।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিদা আরও বলেন, খুবই প্রশংসিত একজন সাংবাদিক ছিলেন শিরিন। ২০০০ সালে ফিলিস্তিনে দ্বিতীয় ইন্তিফাদা শুরুর সময় থেকে তিনি আল জাজিরার সঙ্গে যুক্ত।
আরও পড়ুন:সৌদি আরবের বাদশাহ ফয়সাল বিশেষায়িত হাসপাতালে কোলনোস্কপি হয়েছে সালমান বিন আবদুলাজিজ আল সৌদের।
স্থানীয় সময় রোববার জেদ্দার হাসপাতালটিতে সৌদি বাদশাহর এ পরীক্ষা করা হয় বলে জানিয়েছে সৌদি প্রেস এজেন্সি (এসপিএ)।
আরব নিউজের প্রতিবেদনে জানানো হয়, কোলনোস্কপির ফল ভালো এসেছে। বাদশাহকে হাসপাতালে কিছু সময় থেকে বিশ্রাম নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
এদিকে কোলনোস্কপির ফল ভালো আসায় সালমানকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বাহরাইনের বাদশাহ হামাদ বিন ইসা আল খলিফা এবং যুবরাজ সালমান বিন হামাদ আল খলিফা।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) প্রেসিডেন্ট খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ান, ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম, আবুধাবির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান তাদের বার্তায় সৌদি বাদশাহকে অভিনন্দন জানান।
এর বাইরে কাতারের আমির তামিম বিন হামাদ আল থানি, ডেপুটি আমির আবদুল্লাহ বিন হামাদ আল থানি, প্রধানমন্ত্রী খালিদ বিন খলিফা বিন আবদুলাজিজ আল থানি একই ধরনের বার্তা পাঠিয়েছেন।
আরব দেশগুলোর নেতারা বাদশাহ সালমানের সুস্বাস্থ্যের পাশাপাশি সৌদি আরব ও দেশটির জনগণের অগ্রগতি, সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তা কামনা করেন।
শারীরিক বিভিন্ন জটিলতা নিয়ে শনিবার সন্ধ্যায় জেদ্দার হাসপাতালটিতে ভর্তি হয়েছিলেন সালমান। সেখানে প্রাথমিক পর্যবেক্ষণের পর তার কোলনোস্কপি করার সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা।
আরও পড়ুন:গৃহযুদ্ধের কারণে কঠিন পরিণতির দিকে এগোচ্ছে সিরীয় শিশুরা। জাতিসংঘ বলছে, সিরিয়া এবং সেখান থেকে পালিয়ে অন্য দেশে আশ্রয় নেয়া অন্তত ১ কোটি ২৩ লাখ শিশুর জরুরি সহায়তা প্রয়োজন।
২০১১ সালে সিরিয়ায় শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের ঐতিহাসিক দেশটি। সিরিয়া গৃহযুদ্ধে এ পর্যন্ত পাঁচ লাখ মানুষ নিহত হয়েছে, গৃহহীন কয়েক লাখ নাগরিক।
শুরুতে দেশটির বেসামরিক নাগরিক ও শিশুদের জন্য বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা সহায়তা পাঠালেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা কমে আসছে।
এই অবস্থায় রোববার এ তথ্য জানায় জাতিসংঘ। সংস্থাটির শিশুবিষয়ক এজেন্সি ইউনিসেফ এক বিবৃতিতে জানান, সিরিয়ার শিশুরা অনেক দিন ধরেই ভুগছে। তাদের আর কষ্ট দেয়া উচিত নয়।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সিরিয়ার ভেতর কমপক্ষে ৬৫ লাখ শিশুর সহায়তার প্রয়োজন, যা ১১ বছরেরও বেশি সময় আগে সংকট শুরু হওয়ার পর থেকে সর্বোচ্চ।
ইউনিসেফের মধ্যপ্রাচ্যপ্রধান অ্যাডেল খোদর বলেন, ‘সিরিয়ার অভ্যন্তরে এবং প্রতিবেশী দেশে শিশুদের চাহিদা বাড়ছে।
‘অনেক পরিবারের অবস্থা খুবই খারাপ। এ ছাড়া ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে আংশিকভাবে খাদ্যসহ মৌলিক সরবরাহের দাম আকাশচুম্বী হচ্ছে।’
খোদর আরও বলেন, ‘শিশুরা যুদ্ধের ধাক্কা বহন করছে। সিরিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোয় রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে প্রায় ৫৮ লাখ শিশু সহায়তার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।’
ইউনিসেফ বলছে, এসব সহায়তার জন্য গুরুতর নগদ ঘাটতির সম্মুখীন হয়েছে তারা। মানবিক কার্যক্রমের জন্য তহবিল দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। চলতি বছরে প্রয়োজনের অর্ধেকেরও কম তহবিল পেয়েছে ইউনিসেফ।
সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে প্রধান ছিটমহলে ১০ লাখ শিশু অবস্থান করছে। এ জন্য ২০ মিলিয়ন ডলার অর্থায়নের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের এই সহযোগী সংস্থাটি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য