রাজধানীর ফুলবাড়িয়া সিটি প্লাজায় যাওয়ার পথে ভিক্টর পরিবহনের একটি বাসে ওঠে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েন এক ব্যবসায়ী। বাসে কে বা কারা সুকৌশলে তাকে চেতনানাশক কিছু খাইয়ে দেয়। গাড়িতে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে রামপুরায় তাকে নামিয়ে দেয়া হয়।
মো. ফারুক হোসেন নামের ব্যবসায়ীকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তার স্টোমাক ওয়াশ করেন। এর পর তাকে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয়।
রোববার রাতে এ দুর্ঘটনা ঘটে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় ভাগিনা এনামুল ইসলাম শুভ এবং পথচারী ইঞ্জিনিয়ার সাইমুর রহমান অভি তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন।
ফারুক হোসেনের ভাগিনা এনামুল ইসলাম বলেন, ‘আমার মামা নরসিংদী রায়পুরা বাজারে ব্যাংকক বাজার নামের একটি জুতার দোকানের মালিক।
মামা সন্ধ্যা ৭টার দিকে এক পকেটে আড়াই লাখ টাকা, অন্য পকেটে আনুমানিক ৩০ হাজার টাকা নিয়ে ঢাকার ফুলবাড়িয়া সিটি প্লাজায় নিজের দোকানের জন্য জুতা কিনতে আসেন। বাসে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েন। পরে রাস্তার পাশে অচেতন অবস্থায় পড়েছিল। এ সময় একজন পথচারী (ইঞ্জিনিয়ার) মামার পকেটে থাকা নোটবুক থেকে আমার মোবাইলে ফোন দেন। আমি ও ওই ইঞ্জিনিয়ারসহ মামাকে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে আসি।’
তিনি বলেন, ‘আমার মামা রায়পুরা বাজার এলাকায় একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। শুধু এই টাকা নয়, অনেক সময় ৫-৬ লাখ টাকা নিয়ে সে ঢাকায় এসে জুতা কেনেন। দুর্ভাগ্যের বিষয় আজ কিভাবে (প্রতারকচক্র) অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে মামার সর্বস্ব লুট হয়ে গেল। মামার পকেটে থাকা আনুমানিক পৌনে তিন লাখ টাকা এবং একটি দামি মোবাইল ফোন নিয়ে যায় প্রতারকচক্র।’
তিনি আরও বলেন, আমাদের বাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুর থানা বাজার এলাকায়।
ঢামেক পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ (পরিদর্শক) মোহাম্মদ বাচ্চু মিয়া বলেন ‘পুলিশ এবং র্যাবের অভিযানে গত ১০ দিনে অন্ততপক্ষে ৪০ জন অজ্ঞান পার্টির সদস্য গ্রেপ্তার হলেও এখনও তাদের কার্যক্রম চালু আছে।
রোববার রাতে গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া থেকে অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের খপ্পরে পড়ে অচেতন অবস্থায় একজন ব্যবসায়ীকে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে আসার পর ভর্তি রাখা হয় বলে বিষয়টি শাহবাগ থানাকে জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন:রাজধানীতে পৃথক ঘটনায় অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব খুইয়েছেন দুই ব্যক্তি। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে স্টমাক পরিষ্কার করার পর তাদেরকে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
গেন্ডারিয়ার কাঠেরপুল এলাকায় মঙ্গলবার দুপুরের দিকে যাত্রীবাহী বাসে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েন মিজানুর রহমান নামে এক ব্যক্তি। তিনি নওগাঁর পোরশা সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ। অচেতন অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে বিকেল ৩টার দিকে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনার পর স্টমাক ওয়াশ করে মেডিসিন ওয়ার্ডে পাঠানো হয়।
সহকর্মী ইলিয়াস বলেন, ‘মিজানুর রহমান নওগাঁর পোরশা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত। ঢাকায় এসে মোহাম্মদপুর থেকে একটি বাসে করে দরকারি কাজের জন্য বের হন। পরে ওই বাসে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা তাকে সুকৌশলে অজ্ঞান করে তার কাছে থাকা একটি স্মার্টফোন ও একটি ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাই। তাকে নতুন ভবনের মেডিসিন ওয়ার্ডের ৭০১ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি দেয়া হয়েছে। তার গ্রামের বাড়ি নওগাঁর পোরশা উপজেলায়।’
অপর ঘটনায় যাত্রাবাড়ীর সাদ্দাম মার্কেটে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েন এক ব্যবসায়ী। তাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়ার পর স্টমাক ওয়াশ করে ভর্তি করে নেয়া হয়।
সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টায় এ ঘটনা ঘটে। তাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে যাত্রীবাহী বাসের চালক ও কন্ডাক্টর ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করে চলে যান। পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে তার স্ত্রী হালিমা বেগম ঢাকা মেডিকেলে এসে স্বামীকে শনাক্ত করেন।
হালিমা বেগম জানান, তার স্বামীর নাম জাহিদ হোসেন। তিনি গার্মেন্টস এক্সেসরিজের ব্যবসা করেন। আশুলিয়ার বলিভদ্র বাজার এলাকায় তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তিনি সকাল ৯টার দিকে গাজীপুরের শ্রীপুরের বাসা থেকে বের হন।
তিনি বলেন, ‘তিনি আমার থেকে এক লাখ টাকা নিয়ে আসেন। তার কাছে আরও ৩৫ হাজার টাকা ছিল। এই টাকা সাভারের নবীনগরে এক ব্যবসায়ীকে দেয়ার কথা। তিনি সকাল ১১টায় আশুলিয়ার বলিভদ্র বাজার থেকে ঠিকানা পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন নবীনগর যাওয়ার উদ্দেশ্যে। পথে বাসে তিনি প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়েন।
‘আমাদের বাড়ি নীলফামারী জেলায়। বর্তমানে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নতুন নগর এলাকায় বসবাস করি।’
ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ (পরিদর্শক) বাচ্চু মিয়া এসব ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
আরও পড়ুন:রাজধানীর বাড্ডার আফতাব নগর এলাকার একটি পুকুরে গোসল করতে নেমে পানিতে ডুবে স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুর একটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
ওই শিক্ষার্থীর নাম মিলাদুন নবী মাহিম। তার বয়স ১৭ বছর।
ওই স্কুলছাত্রের গ্রামের বাড়ি রংপুর সদরে। বর্তমানে রামপুরা কুঞ্জবন এলাকার একটি বাসার পঞ্চম তলা ভবনে থাকত।
অচেতন অবস্থায় মাহিমকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে চিকিৎসক সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের বাবা মোহাম্মদ ইসা বলেন, ‘আমার ছেলে রামপুরা বনশ্রী এলাকার ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণিতে পড়াশোনা করত। আজ দুপুরের দিকে বন্ধুদের সঙ্গে বাড্ডা আফতাব নগর চায়না প্রজেক্ট এলাকার একটি পুকুরে গোসল করতে নামে। পরে পানিতে ডুবে যায়।
অনেক খোঁজাখুঁজির পর ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল বিকেলের দিকে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে একটি স্থানীয় হাসপাতালে, পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত বলে জানান।’
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানায় জানানো হয়েছে।’
আরও পড়ুন:সাংবাদিক ও বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএইচআরএফ) সদস্য কামরুন্নাহার শোভা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে করা মিথ্যে মামলা ও হয়রানির প্রতিবাদে এবং সব মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন করা হয়েছে।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সামনে মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন করে বিএইচআরএফ।
মানববন্ধনে সংগঠনটির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে অংশ নেয় নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরামের সদস্যসহ অন্যান্য সাংবাদিকরা।
মানববন্ধনে বক্তারা মিথ্যে মামলায় সাংবাদিক পরিবারকে হয়রানি ও একজন অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ শিক্ষককে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত, হ্যান্ডকাফ পরানো ও গালাগালি করায় কাশিমপুর থানার ওসি মাহবুবে খোদা, ওসি তদন্ত মিজান, এসআই তানভীরসহ সেই ভূমিদস্যু অপরাধীচক্রের বিচার দাবি করেন। এ ছাড়া ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সাংবাদিক পরিবারের বিরুদ্ধে করা মিথ্যে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান তারা।
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে কামরুন্নাহার শোভা বলেন, ‘একজন এসপির আমল থেকে গাজীপুরে ২০১৮ সাল থেকে আমাদের নামে গরু চুরি, মুরগি চুরি, চাঁদাবাজি, লুটপাট, ছিনতাইয়ের মামলা দেয়া হচ্ছে একই ধরনের কথা লিখে। এই নিয়ে একই স্ক্রিপ্টে তিনটি মামলা হলো।
‘এই অপরাধী চক্র কীভাবে পুলিশের সহায়তা নিয়ে মিথ্যা মামলা দেয়। পুলিশ বলে উপরমহলের চাপ, বিচারপতি, জেলা জজের কথা। তারা কারা? এতে কি সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় না?
মানববন্ধনে বিএইচআরএফের সভাপতি রাশেদ রাব্বি বলেন, ‘আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম একজন সাংবাদিক যখন তার অফিসে কর্মরত, তখন ঢাকা শহরের বাইরে, একটি জেলার থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা হলো। তিনি মুরগি, গরু, টিন চুরির মামলায় আসামি হলেন।
শুধু মামলা দেয়া হলো তাই নয়, তার পরিবারের সদস্যদের হেনস্থা করা হলো। ৮০ বছর বয়সী একজন প্রবীণ শিক্ষককে গ্রেপ্তার করে নাজেহাল করা হলো।
‘আমরা সাংবাদিকরা দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সুখ-দুঃখ তুলে ধরি। কিন্তু আমরা যখন জটিলতায় পড়ি, নির্যাতেনের শিকার হই, আমাদের কথা বলার কেউ থাকে না।’
রাশেদ রাব্বি বলেন, ‘যে খামার থেকে মুরগি চুরির কথা বলা হয়েছে, সেখানে কোনো খামার নেই, যেসব বর্ণনা দেয়া হয়েছে তার কিছুই নেই। তাহলে একজন ওসি কীভাবে সাংবাদিক পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিলেন? আমি ওই ওসি ও তার সহকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে রাশেদ রাব্বি বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ওই থানায় কী হয়েছে এবং এই মামলায় কারা সংশ্লিষ্ট আছেন তা একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি করে তদন্ত করা হোক। একজন সিনিয়র সাংবাদিকের পরিবারকে দিনের পর দিন নির্যাতন করা হচ্ছে, তার বিচার আপনার কাছে চাচ্ছি।
‘এই সিনিয়র সাংবাদিক ও তার পরিবারকে যেন আর কোনো হয়রানির শিকার হতে না হয় সে দাবি আপনার কাছে জানাচ্ছি। অন্যথায় প্রয়োজনে এর সুরাহার জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করব।’
নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরামের সহ-সভাপতি খালেদ সাইফুল্লাহ বলেন, ‘পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী ওসি নিজেই স্বীকার করেছেন মামলার এজাহারে সব সত্যি কথা লেখা হয় না, তার এ কথা থেকে বোঝা যাচ্ছে মামলাটি মিথ্যা এবং এ ধরনের মিথ্যা মামলা আগেও হয়েছে।
‘দীর্ঘদিন থেকে কামরুন্নাহার শোভা আপার পরিবারকে হয়রানি করা হচ্ছে। সাংবাদিক সমাজের পক্ষ থেকে অতিদ্রুত এসব মিথ্যা মামলার প্রত্যাহার চায় ও হয়রানি বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।’
মানবন্ধনে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস মোবারক বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন আদালতে এখন ৪০ লাখ মামলা ঝুলে আছে। এ ধরনের মিথ্যে মামলার কারণে মামলার জট বাড়ছে। সরকারের প্রতি অনুরোধ এ ধরনের মিথ্যে মামলার সংখ্যা আর বাড়াবেন না।’
নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘মিথ্যে কারণে সাংবাদিক পরিবারের বিরুদ্ধে এ হয়রানি অমানবিক। সাংবাদিক পরিবারের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও হয়রানি বন্ধের জন্য সরকারের প্রতি আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।’
আরও পড়ুন:দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় জামিন বাতিল হওয়ায় আবারও কারাগারে যেতে হয়েছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে।
মঙ্গলবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এর বিচারক আল আসাদ মো. আসিফুজ্জামান এ আদেশ দেন।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের ওই মামলায় সম্রাটের জামিন বাতিল করে তাকে আত্মসমর্পণ করতে আদেশ দিয়েছিল আদালত। সে অনুযায়ী মঙ্গলবার আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন তিনি। শুনানিতে সম্রাটের আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরে তার জামিন চান।
শুনানিতে আইনজীবী সমাজী বলেন, ‘এর আগে ১১ মে আদালত থেকে তিনটি শর্তে সম্রাট জামিন পেয়েছিলেন। তা হলো- দেশত্যাগ করতে পারবেন না, পাসপোর্ট জমা দেবেন, চিকিৎসার বিবরণ ও চিকিৎসা সনদ জমা দেবেন।’
সম্রাটের আইনজীবী বলেন, ‘তিনি (সম্রাট) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের সিসিইউ থেকে উচ্চ আদালতের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা জানিয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। তিনি মুক্ত বাতাসে মুক্ত বিহঙ্গের মতো ছিলেন না। তার চিকিৎসায় ৬ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়। তিনি ওখানকার চিকিৎসকদের মুচলেকা দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এখানে এসেছেন।
‘চিকিৎসকরা তাকে বলেছেন যে শরীরের এ অবস্থায় তার ছোটাছুটি করা উচিত নয়। জীবনের ঝুঁকি বাড়বে। তার জন্য চিকিৎসকরা দায়ী থাকবেন না। মুচলেকা নিয়ে তাকে রিলিজ দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশে এমন ঘটনা এই প্রথম। দুদক এই জামিনের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিভিশন করে। হাইকোর্ট তার জামিন বাতিল করলে আমরা আপিল বিভাগে চেম্বার জজের কাছে যাই। ৩০ মে আপিল বিভাগের ফুল বেঞ্চে তা শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
‘আমরা যেন প্রেজুডিস না হই আবার উচ্চ আদালতের আদেশেরও যেন বরখেলাপ না হয়- এ রকম একটি আদেশ এই বিচারিক আদালত থেকে চাই।’
এই বক্তব্যের বিরোধিতা করে দুদকের পক্ষে মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, দীর্ঘমেয়াদি বক্তব্য শুনলাম। আমরা জামিন আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে গেলে হাইকোর্ট বলেন যে রং কনসেপশন অফ ল’। নিম্ন আদালতে যে মেডিক্যাল রিপোর্ট দাখিল করা হয়েছিল তা ফ্রেশ নয়, অনেক আগের।’
দুদক আইনজীবীর বক্তব্যের বিরোধিতা করে সমাজী বলেন, ‘জাজমেন্টের বাইরে কোনো কিছু বলা সমীচীন নয়।’
এই পর্যায়ে কাজল হাইকোর্টের আদেশ পড়ে শোনান। তিনি বলেন, ‘জামিনের বিষয়টি আপিল বিভাগে পেন্ডিং। সুতরাং এ মুহূর্তে জামিন নিয়ে কোনো কথা বলা যাবে না। জামিনের বিষয়ে আপিল বিভাগের ফুল বেঞ্চ সিদ্ধান্ত দেবে, এই আদালত নয়।’
এ সময় বিচারক আল আসাদ মো. আসিফুজ্জামান রাষ্ট্রপক্ষের (দুদক) কাছে জানতে চান- তাহলে বর্তমানে আসামির স্ট্যাটাস কি? উত্তরে কাজল বলেন, ‘এখানে আমাদের আর কিছু করার নেই। আসামি জেলহাজতে যাবে।’
এ সময় সমাজী বলেন, ‘তাহলে যে হাসপাতাল থেকে সম্রাট আদালতে এসেছেন সেখানে ডাইরেকশন দেয়া হোক।’
এই পর্যায়ে ১৫ মিনিট পর আদেশ দেয়া হবে জানিয়ে আদালত মুলতবি করেন বিচারক।
১৫ মিনিট পর বিচারক খাস কামরা থেকে এজলাসে আসন নিয়ে হাজতি পরোয়ানামূলে সম্রাটকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বিচারক আদেশে বলেন, মামলার ওপর উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ নেই। এ মামলায় পরবর্তী তারিখ ৯ জুন জামিন ও অন্যান্য শুনানি হবে।
একই আদালত এর আগে ১১ মে তিন শর্তে সম্রাটের জামিন মঞ্জুর করে। ১৬ মে দুদক সম্রাটের জামিন বাতিলের আবেদন করে উচ্চ আদালতে। ১৮ মে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ তার জামিন বাতিল করে। একইসঙ্গে তাকে সাত দিনের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি বিচারককেও সতর্ক করে হাইকোর্ট।
২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর দুই কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার ৮৭ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সম্রাটের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম।
আরও পড়ুন:রাজধানীর বনশ্রী এলাকায় তেলের লরি বিকল হয়ে পড়লে তা সারানোর কাজ করছিলেন মোহাম্মদ হৃদয় নামের ১৮ বছরের এক তরুণ। তিনি লরির নিচে, চাকার পাশে কাজ করার সময় হঠাৎই লরি গড়িয়ে তাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
সোমবার রাত ৯টার দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
রামপুরা থানার পুলিশের উপপরিদর্শক(এসআই) ফারুক হোসেন জানান, তারা খবর পেয়ে বনশ্রী এলাকা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে যান। পরে আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ মর্গে পাঠানো হয়।
নিহতের দাদা মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘হৃদয় মোটর মেকানিকের কাজ করত, রাতে রামপুরা বনশ্রী এলাকায় একটি তেলের লরির নিচে কাজ করার সময় ওই তেলের লরিতে চাপা পড়ে। ওইখানেই ও মারা গেছে বলে আমরা জানতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, নিহতের গ্রামের বাড়ি ভোলার তজুমুদ্দিন থানার গোশকপুর গ্রামে। তার বাবার নাম নীরব।
হৃদয় নারায়ণগঞ্জে ফতুল্লা থানার পাগলা ট্রাকস্ট্যান্ডে থাকতেন। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় হৃদয়।
আরও পড়ুন:জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে সংবাদ সম্মেলন করতে আসা সংগঠনটির নেতাকর্মীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন।
মঙ্গলবার দুপুরে ছাত্র ফেডারেশনের দপ্তর সম্পাদক অনুপম রায় রূপক স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই নিন্দা-প্রতিবাদ জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে তারা হামলার প্রতিবাদ ও গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠায় ছাত্র সমাজের বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানায়।
ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মশিউর রহমান খান রিচার্ড ও সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, ‘স্বৈরাচার সরকারকে টিকিয়ে রাখতে ক্যাম্পাসগুলোকে সন্ত্রাসের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছে ছাত্রলীগ। ক্যাম্পাসে ন্যূনতম গণতান্ত্রিক চর্চার পথ রুদ্ধ করেছে তারা। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল ও আজ ছাত্রদলের ওপর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করেছে ছাত্রলীগ।’
ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসকে সন্ত্রাসের যে অভয়ারণ্যে পরিণত করেছে তার বিপরীতে গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠায় ছাত্রসমাজের বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার বিকল্প নেই। আমরা ছাত্র সমাজের সেই বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব।’
দেশের অন্যতম ৬০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন পদে জনবল নিয়োগ করছে। তাদেরকে এক ছাদের নিচে নিয়ে এসেছে সেনাবাহিনী। চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো সেনা পরিবারের তরুণদের প্রাধান্য দিলেও অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্যদেরও যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
ঢাকা সেনানিবাসের সেনা মালঞ্চে দুই দিনব্যাপী এই চাকরি মেলার আয়োজন করেছে সেনাবাহিনীর এজি শাখার কল্যাণ ও পুনর্বাসন পরিদপ্তর। মেলা চলবে বুধবার পর্যন্ত।
অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্যদের জন্য প্রথমবারের মতো এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী।
মঙ্গলবার দুপুরে মেলায় বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখা গেছে চাকরিপ্রার্থীর ভিড়। আগতরা স্টলগুলো ঘুরে পছন্দের চাকরি খুঁজছেন। অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্যদের পাশাপাশি তাদের পরিবারের সদস্যরাও এসেছেন।
সেনা মালঞ্চে দ্বিতীয় তলায় ইনসেপটা ফার্মাসিটিক্যালসের স্টলে দেখা গেল কয়েকজন চাকরির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলছেন। তাদের একজন রেহানুল আবরারের বাবা বর্তমানে সেনাবাহিনীতে কর্মরত। দেশের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০২১ সালে লেখাপড়া শেষ করে চাকরির জন্য চেষ্টা করছেন।
আবরার বলেন, ‘আজকে এখানে এসে বেশকিছু সেক্টরে খোঁজ নিতে পারছি। পছন্দমতো বিষয়ে কাজ করার জন্য আবেদন করছি। এটা দারুণ সুযোগ।’
ইনসেপটার মানবসম্পদ বিভাগের নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহিদ হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অ্যাডমিন, ফার্মাসিসহ বেশকিছু সেক্টরে আমরা জনবল নিচ্ছি। ফ্রেসারদের প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। রিটায়ার্ড পার্সনদের জন্যও চাকরির সুযোগ রয়েছে।’
এসিআই লিমিটেড ৯টি সেক্টরে জনবল নিয়োগ দেবে। সেগুলো হলো- অ্যাডমিন, এইচআর, এক্সিকিউটিভ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, এক্সিকিউটিভ মার্কেট রিসার্চ, সিকিউরিটি, মার্কেটিং অফিসার, সেলস্ এক্সিকিউটিভ, এক্সিকিউটিভ কমার্শিয়াল ও প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট এক্সিকিউটিভ।
প্রতিষ্ঠানটির মানবসম্পদ বিভাগের নির্বাহী সাইফুল ইসলাম সিজার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের এখানে অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ও সেনা পরিবারের সন্তানরা আবেদন করার সুযোগ পাচ্ছেন। তাদের আবেদনগুলো সরাসরি এবং ই-মেইলের মাধ্যমে গ্রহণ করছি। আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই করে প্রতিষ্ঠানের নিয়ম অনুযায়ী নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।’
জেমকন গ্রুপের সহকারী ম্যানেজার সাবরিনা আক্তার বলেন, ‘আমরা বেশ কয়েকটি পদে জনবল নিচ্ছি। আগ্রহীরা আবেদন করছেন। তাদের আবেদনগুলো জমা নিচ্ছি। সেগুলো যাচাই-বাছাই করে নিয়োগ দেয়া হবে।’
মঙ্গলবার দুপুরে মেলায় অংশ নেয়া বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।
পরিদর্শন শেষে সেনাপ্রধান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা প্রথমবারের মতো এই জব ফেয়ার করছি। আমাদের উদ্দেশ্য হলো ওয়েলফেয়ারের দৃষ্টিতে এটি দেখা। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা যখন অবসরে চলে যান তখন তাদের বয়স কিন্তু চাকরি করার মতো থাকে। এটা শুধু অফিসার নয়, সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
‘সেনা সদস্যরা অবসরের পর নিজস্ব স্কিল ও মেধা দিয়ে দেশের অনেক ক্ষেত্রে অবদান রাখতে সক্ষম। আমরা এই সুযোগটা দিচ্ছি যাতে তারা সহজে তাদের ক্ষেত্রগুলো খুঁজে নিতে পারেন। চাকরিদাতারাও তাদের কাজের জন্য এক জায়গায় অনেককে পেয়ে যান। আমি বলব, এটা দুই পক্ষের জন্যই উইন উইন সিচুয়েশন।’
ভবিষ্যতেও এ ধরনের মেলা আয়োজনের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন সেনাবাহিনী প্রধান।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য