লঞ্চে ঈদের আগে অগ্রিম টিকিট বিক্রিতে জাতীয় পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক করে লঞ্চমালিকদের নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। গত ২০ এপ্রিল থেকে ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করলেও সে নির্দেশনার কিছুই পালন করছেন না লঞ্চমালিকরা।
সেই সঙ্গে কাউন্টারের টিকিট কালোবাজারিতে বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ তুলেছেন অনেক যাত্রী। তারা বলছেন, কাউন্টারে না মিললেও দালালরা বেশি দামে টিকিট বিক্রির অফার দিচ্ছেন। এ ছাড়া রয়েছে টিকিট বিক্রিতে চরম অব্যবস্থাপনা।
রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে গিয়ে অগ্রিম টিকিট কিনতে আসা যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
আগামী ২৭ এপ্রিল থেকে ৮ মে পর্যন্ত লঞ্চের ঈদের স্পেশাল সার্ভিস চলবে। দেশের ৪১টি নৌ রুটে শতাধিক লঞ্চ ঈদে যাত্রী আনা-নেয়া করবে।
সরেজমিনে সদরঘাট ঘুরে দেখা যায়, অগ্রিম টিকিট বিক্রির প্রথম দিন থেকেই যাত্রীদের খুব একটা চাপ নেই। তবে টিকিট বিক্রিতে অব্যবস্থাপনা ভোগান্তি বাড়াচ্ছে যাত্রীদের। নেই অনলাইনে টিকিট কাটার কোনো ব্যবস্থা।
যাত্রীদের অভিযোগ, তারা যেসব টিকিট কিনতে চান, তার বেশির ভাগই কাউন্টারে নেই বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে কালোবাজারিতে টিকিট পাওয়া যাচ্ছে বেশি দামে।
একাধিক যাত্রী নিউজবাংলাকে জানান, ঈদের আগে সব সময়ই বরিশাল থেকে ঢাকার টিকিট বিক্রি করা হয়। এতে কম টিকিট বিক্রি হয় এবং বাকি টিকিটগুলো মজুত করে রাখা হয়। ঈদের কয়েক দিন আগে এসব টিকিট কালোবাজারিতে বেশি দামে বিক্রি হয়। যাত্রীর চাপ যখনই একটু বেশি থাকে, ঠিক তখনই বরিশাল থেকে টিকিট বিক্রির কথা বলা হয়। অথচ লঞ্চের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছেই এসব টিকিট থাকে। পরে তারা বেশি দামে টিকিট বিক্রি করেন।
যাত্রাবাড়ী থেকে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে টিকিট কাটতে যান আরিয়ান সুমন। অগ্রিম টিকিট কাটতে গিয়ে তিনি চাহিদার টিকিট পাননি। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ঈদের ভিড় এড়াতে টিকিট কাটতে আগেই এসেছি। কিন্তু কোনো লঞ্চেই টিকিট দিচ্ছে না। আবার স্পেশাল সার্ভিসের লঞ্চের টিকিট কবে দেয়া হবে তাও বলছে না।’
মিরপুর থেকে টিকিট কাটতে যাওয়া ওমর ফারুক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি আগেই এসেছি টিকিট কাটতে, কিন্তু এখানে এসে দেখি আরেক বিপদ। কেউ বলছে টিকিট কাটা লাগবে না, যেদিন যাব সে দিনই টিকিট পাব; আবার কেউ বলছে এখান থেকে কাটা যাবে না, বরিশাল থেকে কাটতে হবে। রোজা রেখে লঞ্চ টার্মিনালে আসাটাই বৃথা।’
বাড্ডা থেকে টিকিট কাটতে যান আসনা বেগম। তিনি বলেন, ‘২৮ তারিখের অগ্রিম টিকিট করতে এসেছিলাম। এসে দেখি টিকিট বিক্রি হচ্ছে না। কবে থেকে শুরু হবে তাও কেউ বলছে না। রীতিমতো একটা ভোগান্তিতে পড়েছি।’
অবশ্য বেশ কয়েকজন জানান, তারা টিকিট পেয়েছেন কাউন্টারেই। তাদের কাছে জাতীয় পরিচয়পত্র নেয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পরিচয়পত্রের কোনো কথাই জিজ্ঞেস করেনি লঞ্চের কেউ। সরাসরিই তারা টিকিট পেয়ে গেছেন।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সদরঘাট থেকে পটুয়াখালী চলাচল করা কুয়াকাটা-১ লঞ্চটিতেই ঈদের আগের কয়েক দিনের কোনো টিকিট নেই। এ কোম্পানির আরেকটি লঞ্চ কুয়াকাটা-২ সদরঘাট থেকে বরিশাল পর্যন্ত চলে। কুয়াকাটা-২ লঞ্চের করণিক জানান, ঈদের টিকিট আগেই বিক্রি শুরু করেছেন। ২৮ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত কোনো টিকিট নেই তাদের।
একই অবস্থা অন্য দূরপাল্লার লঞ্চগুলোতেও।
অনেক লঞ্চে বাড়তি ভাড়া নেয়ার অভিযোগ তুলেছেন যাত্রীরা। ঢাকা থেকে বরিশালগামী এমভি সুরভী তিনটি লঞ্চেই সিঙ্গেল কেবিনে ১০০ টাকা ভাড়া বাড়িয়ে দেড় হাজার টাকা নেয়া হচ্ছে। ডাবল কেবিনে ২০০ টাকা বাড়িয়ে ২৬০০ টাকা, ডেকে ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৪০০ টাকা করা হয়েছে। ভিআইপি হাজার টাকা বাড়িয়ে ৮ হাজার টাকা করা হয়েছে।
অবশ্য বাড়তি ভাড়া নেয়ার বিষয়টি নিয়ে লঞ্চটির মালিক, স্টাফ বা কোনো কর্মকর্তাই মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ঢাকা-বরিশাল-কীর্তনখোলাগামী পারাবত-১২ লঞ্চের ভাড়া অবশ্য আগেরটাই নেয়া হচ্ছে। লঞ্চটির পরিচালক শাহিন হোসেন বলেন, ‘আমাদের টিকিটের মূল্যবৃদ্ধির কোনো নির্দেশনা এখনও দেয়া হয়নি। তাই আমরা নির্ধারিত ভাড়াই নিচ্ছি, পূর্বের ভাড়া বহাল রেখেছি।’
সুরভী-৭ লঞ্চের টিকিট বিক্রেতা মাইদুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা টিকিট বিক্রি করছি। ভাড়া বেশি নেয়া হচ্ছে না। আমাদের যে ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে তাই নিচ্ছি। ঈদে স্পেশাল সার্ভিসের টিকিট বিক্রির বিষয়ে আমাদের জানানো হলে আমরা টিকিট বিক্রি করব।’
নির্দেশনা থাকলেও এনআইডির প্রসঙ্গই আসছে না টিকিট ক্রেতা-বিক্রেতা কিংবা লঞ্চ কর্তৃপক্ষের। নিউজবাংলার প্রতিবেদকের সামনেই বেশ কয়েকজনকে এনআইডি ছাড়া টিকিট কাটতে দেখা গেছে।
সুন্দরবন-১২ লঞ্চে শনিবার রাতের টিকিট করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিপা রানী সাহা। নিউজবাংলাকে বলেন, ‘লঞ্চে কেবিন পেলে এনআইডির প্রয়োজন হয়। ডেক বা সোফায় গেলে লাগে না।’
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সদরঘাটের নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক শেখ মো. সেলিম রেজা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নিয়মিত শিডিউলের লঞ্চগুলো অগ্রিম টিকিট বিক্রি করছে। যাত্রীর চাহিদার ওপর নির্ভর করে তারা স্পেশাল সার্ভিস দেবে। সেগুলোর টিকিট তো আর এখন হবে না। যাত্রীর চাপ যখন হবে, তখন তারা স্পেশালের চিন্তা করবে। আর স্পেশাল লঞ্চ যখন আসবে তখন ওই লঞ্চের কেবিনগুলো তারা সেল করবে। নিয়মিত চলাচল করা লঞ্চে সবাই অগ্রিম টিকিট দিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘ঈদে যাত্রী চাহিদার ওপর নির্ভর করে লঞ্চ অবশ্যই বাড়বে। স্পেশাল সার্ভিস থাকবে, একটা লঞ্চ হয়তো দুইটা সার্ভিস দিবে। আমাদের কর্তৃপক্ষ থেকে এভাবে নির্দেশনা দেয়া আছে। এবার আশা করা যাচ্ছে, যাত্রী চাহিদার ওপর নির্ভর করে ১৭০টি পর্যন্ত লঞ্চ চলাচল করবে।’
টিকিট কালোবাজারির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘টিকিট কালোবাজারি হলে প্রশাসন ব্যবস্থা নিবে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এনআইডি প্রদর্শন নিয়ে জানতে চাইলে নিউজবাংলাকে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘টিকিট বিক্রির সময় যাতে এনআইডি নম্বর নিশ্চিত করা হয়, তা নিয়েও মালিকদের সঙ্গে কথা বলা হবে।’
বাংলাদেশ নৌ পুলিশের সদরঘাট নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাইয়ুম আলী সরদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সার্বিক পরিস্থিতি ভালো। ঈদ উপলক্ষে আমাদের অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে। পুলিশ সুপার নৌ পুলিশ, ঢাকা অঞ্চল কর্তৃক নিরাপত্তা পরিকল্পনা অনুযায়ী পুলিশ ফোর্স মোতায়েন থাকবে। কন্ট্রোল রুম থাকবে। কয়েকটি ধাপে নৌ পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে।’
আরও পড়ুন:দীর্ঘ ৩৬ বছর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন, হল ও হোস্টেল সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনকে ঘিরে বুধবার সকাল থেকেই চবিতে ঈদের উৎসব বিরাজমান। শিক্ষার্থীরা দলে দলে শাটলে ও বাসে এসে সবুজের রাজ্য খ্যাত চবি ক্যাম্পাসে নামছেন। সকাল নয়টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে এখনো চলমান রয়েছে। ভোট প্রদানের পর শিক্ষার্থীরা স্মার্টফোন হাতে ছবি, ভিডিও নিয়ে উল্লাসে মেতে ওঠেছেন। তবে এসব আনন্দের অংশ হতে পারেনি ২৪২ জন ভোটার।
দীর্ঘ ৩৬ বছর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন এবং হল ও হোস্টেল সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনের কারণে বুধবার সকাল থেকেই চবি ক্যাম্পাসে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে। শাটল ট্রেন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে দলে দলে শিক্ষার্থীরা ছুটে আসেন সবুজে ঘেরা ক্যাম্পাসে।
সকাল ৯টা থেকে শুরু হওয়া ভোটগ্রহণ দুপুর পর্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে চলতে থাকে। ভোট প্রদান শেষে শিক্ষার্থীরা স্মার্টফোনে ছবি ও ভিডিও ধারণ করে আনন্দ-উচ্ছ্বাস ভাগাভাগি করেন।
তবে এই আনন্দের অংশ হতে পারেননি ২৪২ জন শিক্ষার্থী, যারা বৈধ ছাত্র হয়েও ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
চাকসু নির্বাচনে এবার ২৭ হাজার ৫০০ ভোটারের মধ্যে ২৪২ জন ভোটার রয়েছে পিএইচডি ও এমফিল গবেষক শিক্ষার্থী। যারা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ায় নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গেও তারা যুক্ত আছেন। এতে নৈতিকতার দিক থেকে ভোট প্রদান করতে পারবেন না তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান, “চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ২৭ হাজার ৫০০ ভোটারের মধ্যে ২৪২ জন পিএইচডি ও এমফিল পর্যায়ের শিক্ষার্থী। নিয়ম অনুযায়ী তারাও এবার ভোটার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। ফলে এসব শিক্ষকদেরও ভোটার হিসেবে ধরা হয়েছে, যেহেতু তারা এখনো শিক্ষার্থী হিসেবে নিবন্ধিত।
তবে আমি নিজেও নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত রয়েছি। ভোটকেন্দ্রের বাইরে নিরাপত্তা, হোস্টেল, হল ও প্রবেশপথসহ বিভিন্ন পয়েন্টে শিক্ষকরা দায়িত্ব পালন করছেন। তাই আমি মনে করি, ভোটার তালিকায় নাম থাকলেও আমাদের ভোট প্রদান করা নৈতিক হবে না। এ কারণেই সংশ্লিষ্ট সবাই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে আমি বিশ্বাস করি।”
২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়ার দাবিতে দেশের বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনে পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে রাজধানীর প্রেস ক্লাব এলাকায়। পুলিশের বাধার মুখে সেখান থেকে সরে তারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়েছেন।
রোববার (১২ অক্টোবর) দুপুরে সেখানে সরে গিয়ে ওই স্থান থেকেই তারা লাগাতার কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী বলেন, জনদুর্ভোগ এড়াতে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমাদের লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি এখন থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চলবে। প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত আমরা এখান থেকেই কর্মসূচি চালিয়ে যাব।
তিনি আরও বলেন, আমাদের শীর্ষ নেতারা এরইমধ্যে শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়েছেন। যারা এখনো প্রেস ক্লাবে আছেন, তাদের অনুরোধ করছি মিছিলসহ শহীদ মিনারে চলে আসতে। আমরা এখান থেকেই আমাদের আন্দোলন পরিচালনা করব এবং বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে লাগাতার আন্দোলনকে সাজাবো ইনশাআল্লাহ।
অধ্যক্ষ আজিজী বলেন, আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি—যতক্ষণ পর্যন্ত জাতীয়করণের প্রজ্ঞাপন জারি না হবে, আমরা শহীদ মিনার ছাড়ব না, ঢাকার রাজপথও ছাড়ব না। আলোচনার মাধ্যমে, সহযোগিতার মাধ্যমে প্রজ্ঞাপন নিয়েই বিজয়ী বেশে আমরা শ্রেণিকক্ষে ফিরব।
অন্যদিকে প্রেস ক্লাব এলাকা থেকে শিক্ষক নেতাদের সরাতে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এতে শিক্ষকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। অনেকেই আবার প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টাও করেন। তবে এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোন সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়নি।
ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিনের সাথে বৈঠক করেন। ছবি: ফেসবুক
বাংলাদেশে আগামী বছর একটি অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য যুক্তরাজ্যের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক।
আজ সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সাথে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
সারাহ কুক বলেন, ‘যুক্তরাজ্য কয়েক মাস আগে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণাকে স্বাগত জানায়। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সাথে বৈঠকে খুব ভালো আলোচনা হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে আগামী বছর বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য যুক্তরাজ্যের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছি।'
তিনি বলেন, 'নির্বাচন কমিশন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং আমাদের আন্তর্জাতিক অংশীদারদের প্রচেষ্টার প্রশংসা করি। যুক্তরাজ্য বিশেষ করে জাতীয় নাগরিক শিক্ষা কর্মসূচির মাধ্যমে, বিশেষ করে দেশের দুর্বল গোষ্ঠীগুলির জন্য এবং ভোটগ্রহণ কর্মীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করছে। তাই আমাদের এজেন্ডা ছিল নির্বাচন কমিশনের সাথে যুক্তরাজ্যের সমর্থন নিয়ে আলোচনা করা। যেমনটি আমি বলেছি, জাতীয় নাগরিক শিক্ষা এবং ভোটগ্রহণ কর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্যও আমরা কাজ করছি। এই বিষয়গুলো নিয়ে আজ নির্বাচন কমিশনের সাথে আলোচনা করেছি।'
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি বলেছি যে যুক্তরাজ্য আগামী বছর বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে সমর্থন করছে।’
রাজধানীর উত্তরার কবি জসীমউদ্দীন রোডে যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় এক মোটরবাইক চালক নিহত হয়েছেন। মোহাম্মদ আরমান মির্জা (২১) নামের ওই তরুণ কলেজ শিক্ষার্থী ছিলেন।
সোমবার ভোররাত ৪টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। পথচারীরা আহত আরমানকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোর সাড়ে ৬ টার দিকে মারা যান।
নিহতের খালা নাজনীন আক্তার জানান, ‘খবর পেয়ে ঢাকা মেডিকেল জরুরি বিভাগে এসে আমার ভাগিনা আরমানের মরদেহ দেখতে পাই। সে আব্দুল্লাহপুরের নবাব হাবিবুল্লাহ কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছে। গভীর রাতে আরমান মোটরবাইক চালিয়ে যাওয়ার সময় জসিম উদ্দিন রোডে বেপরোয়া গতির একটি বাসের ধাক্কায় গুরুতর আহত হয়।
তিনি আরও জানান, আরমানের বাড়ি চাঁদপুর জেলার হাজিগঞ্জ থানার পূর্ব হাতিআলা গ্রামে।
ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মোহাম্মদ ফারুক বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ঢাকা মেডিকেল মর্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানাকে জানানো হয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সৃষ্টিতব্য লঘূচাপের প্রভাবে রাজধানী ঢাকায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি এবং ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে, রাত হতে রাজধানীতে বজ্রসহ মুষলধারে বৃষ্টির ফলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বেশ কিছু এলাকায় অস্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতাভুক্ত এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রতিটি ওয়ার্ডে ডিএসসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মীরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া, ওয়ার্ডভিত্তিক ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম (Emergency Response Team) কাজ করে চলেছে। গ্রীন রোড, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, শান্তিনগর, বেইলি রোড, কাকরাইল, পল্টন, সাত মসজিদ রোড, ধানমণ্ডি এলাকার জলাবদ্ধতা ইতোমধ্যে সমাধান হয়েছে। তবে, পানি নির্গমনের আউটলেট অংশ এবং খাল-নদীর অংশের পানির লেভেল প্রায় একই হওয়ার ফলে পানি নিষ্কাশনের ধীরগতি বিদ্যমান থাকায় কিছু এলাকার পানি নামতে আরও কয়েক ঘণ্টা সময় লাগতে পারে। এ সব এলাকা থেকে অস্থায়ী পোর্টেবল পাম্পের মাধ্যমে দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া, কমলাপুরে স্থাপিত হাই প্রেসার ভার্টিক্যাল পাম্পের মাধ্যমে দ্রুত পানি নামানোর কাজ চলমান রয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ০১৭০৯৯০০৮৮৮ (01709900888) মাধ্যমে সার্বিক পরিস্থিতি তদারকি অব্যাহত রয়েছে।
রাজধানীতে গতকাল রাত থেকে শুরু হয়েছে ভারী বৃষ্টি। মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া অবিরাম বৃষ্টি আজ সোমবার সকালেও থামেনি। বৃষ্টির সঙ্গে ছিলো বজ্রপাতও। মুষলধারে হওয়া এই বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে পানি জমেছে। ফলে সড়কে আটকে আছে গণপরিবহন। এতে সাতসকালেও ঘর থেকে কাজে বের হওয়া লোকজন পরেছেন ভোগান্তিতে।
এদিন সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ধানমন্ডি, আসাদগেট, কলাবাগান, মোহাম্মদপুর, মিরপুর ১০, মিরপুর শেওড়াপাড়া, নিউমার্কেট, মগবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় রাস্তায় পানি জমতে দেখা যায়। এসব এলাকায় কোথাও হাঁটুপানি পরিমাণ জমলেও আসাদগেট, মগবাজার, মিরপুরের শেওড়াপাড়ায় ছিল কোমরসমান পানি।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, রোববার দিবাগত রাত ১২টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে রাজধানীতে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মৌসুমি বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারী অবস্থায় রয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একটি লঘূচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। পূর্ব মধ্যে বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর আরেকটি লঘূচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে এবং এটি ঘণীভূত হতে পারে।
এদিকে রাজধানীতে সকালে হঠাৎ বৃষ্টি হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কর্মজীবী মানুষ। শ্যামলী থেকে তেজগাঁও সাতরাস্তায় আসতে গিয়ে আসাদগেট কোমরসমান পানিতে আটকা পড়েন ওবায়দুর রহমান। তিনি বলেন, সকালে বাসা থেকে অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে বের হলেও বৃষ্টির কারণে সময়মত অফিসের জন্য বের হতে পারিনি। কোনোভাবে যাও বের হয়েছিলাম, তা পথের বিভিন্ন জায়গায় হাঁটুসমান থেকে কোমরসমান পানির জন্য আটকে থাকতে হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, রাস্তায় পানি জমে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ হয়ে পরেছে। অফিসগামী লোকজনদের পরতে হয়েছে দুর্ভোগে।
এছাড়া শেওড়াপাড়া থেকে ফাহিম নামের এক তরুণ বলেন, বৃষ্টির কারণে গাড়ি পাচ্ছি না। রাস্তায় এত পরিমাণ পানি জমেছে যে, হেঁটে যাওয়ারও কোনো উপায় নেই। রিকশায়ও ভাড়া অনেক বেশি চাচ্ছে।
রোববার সন্ধ্যা ৬টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
প্রসঙ্গত, গতকয়েক দিন ধরেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রচণ্ড ভ্যাপসা গরম ছিল। এ অবস্থায় গত শনিবার ও রোববার রাজধানীর আকাশ খানিকটা ঘোলাটে ছিল। তবে আজ সোমবার থেকে বৃষ্টি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল।
রাজধানীর বনানীতে যাত্রা শুরু করলো ভ্রমণ ও পর্যটনভিত্তিক নতুন প্রতিষ্ঠান ট্রিপোলজি। শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জুই গার্ডেনে অবস্থিত ট্রিপোলজির অফিসে জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে এর উদ্বোধন করা হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ট্রাভেল ব্লগার শিশির দেব। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আরও যোগ দেন ইউনিভার্সেল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা: আশীষ কুমার চক্রবর্ত্তী এবং কোরিওগ্রাফার গৌতম সাহা।
উদ্বোধনী আয়োজনে ছিল রিবন কাটিং, অফিসিয়াল ফটো সেশন এবং দর্শকদের জন্য বিশেষ মিট অ্যান্ড গ্রিট সেশন। অনুষ্ঠান ঘিরে ভ্রমণপ্রেমীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করা যায় এবং তারা বাংলাদেশের ভ্রমণ শিল্পে ট্রিপোলজির সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ট্রিপোলজির কো-ফাউন্ডার তাজরিন আখতার, আবু বক্কর সিদ্দিক ও তৌহিদুল ইসলাম জানান, তাদের লক্ষ্য হলো আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে বাংলাদেশে ট্রাভেল ইন্ডাস্ট্রিকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেওয়া। কোম্পানির সিইও ইমতিয়াজ কাইসুল বলেন, “ট্রিপোলজি শুধুমাত্র একটি ট্রাভেল এজেন্সি নয়; আমরা চাই মানুষ যেন ভ্রমণের প্রতিটি ধাপে নিশ্চিন্ত সেবা পায়। ভিসা প্রসেসিং থেকে শুরু করে এয়ার টিকিট, হোটেল বুকিং ও হলিডে প্যাকেজ সবকিছুতেই আমরা সর্বোচ্চ পেশাদার মান নিশ্চিত করতে চাই।”
ট্রিপোলজি বর্তমানে প্রথম বিশ্বের দেশগুলোর ভিসা প্রসেসিংয়ে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেছে। পাশাপাশি সব ধরনের দেশি-বিদেশি হলিডে প্যাকেজ, এয়ার টিকিট, হোটেল বুকিং, থার্ড ওয়ার্ল্ড ভিসা প্রসেসিং ও স্টুডেন্ট ভিসা সংক্রান্ত সেবা দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা আশা প্রকাশ করেন, ট্রিপোলজির উদ্যোগ বাংলাদেশের ভ্রমণশিল্পকে আরও গতিশীল করবে।
ঠিকানা: জুই গার্ডেন, হাউস ২/এ, লেভেল-৭, ব্লক এল, রোড ২/১, বনানী-১২১৩, ঢাকা।
মন্তব্য