× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য ইভেন্ট শিল্প উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ কী-কেন ১৫ আগস্ট আফগানিস্তান বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও ক্রিকেট প্রবাসী দক্ষিণ এশিয়া আমেরিকা ইউরোপ সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ শারীরিক স্বাস্থ্য মানসিক স্বাস্থ্য যৌনতা-প্রজনন অন্যান্য উদ্ভাবন আফ্রিকা ফুটবল ভাষান্তর অন্যান্য ব্লকচেইন অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

বাংলাদেশ
Tourist bus service launched to visit historical places of Naogaon
google_news print-icon

নওগাঁর ঐতিহাসিক স্থান ঘুরতে চালু হচ্ছে ট্যুরিস্ট বাস

নওগাঁর-ঐতিহাসিক-স্থান-ঘুরতে-চালু-হচ্ছে-ট্যুরিস্ট-বাস
নওগাঁর ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার। ছবি: নিউজবাংলা
জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান বলেন, ‘নওগাঁর প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোকে দেশসহ বিশ্বের পর্যটকদের কাছে নতুন করে তুলে ধরতেই এমন উদ্যোগ নেয়া। নওগাঁর ইতিহাসে এই প্রথম আসন্ন ঈদুল ফিতরের দ্বিতীয় দিন আনুষ্ঠানিকভাবে টুরিস্ট বাস উদ্বোধন হতে যাচ্ছে।’

ইতিহাস ও ঐতিহ্যে ভরা উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা নওগাঁ। এই জেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে প্রায় অর্ধশতাধিক ঐতিহাসিক স্থাপনা। পরিবার-পরিজন নিয়ে পর্যটকদের পক্ষে এক দিনে একাধিক ঐতিহাসিক স্থান দর্শন করা সম্ভব নয়। তাই স্বল্প খরচে এক দিনে একাধিক ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো ভ্রমণের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই প্রথম ট্যুরিস্ট বাস সার্ভিস চালু হতে যাচ্ছে।

এমন ঘোষণায় আনন্দিত নওগাঁবাসী। এরইমধ্যে ট্যুরিস্ট বাসের টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে।

স্থানীয়দের প্রত্যাশা, এই ট্যুরিস্ট বাস সার্ভিসে বদলে যাবে প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকার আর্থসামাজিক অবস্থা।

বিষয়টি নিয়ে কথা হলে নওগাঁর জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান বলেন, ‘নওগাঁর প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোকে দেশসহ বিশ্বের পর্যটকদের কাছে নতুন করে তুলে ধরতেই এমন উদ্যোগ নেয়া। নওগাঁর ইতিহাসে এই প্রথম আসন্ন ঈদুল ফিতরের দ্বিতীয় দিন আনুষ্ঠানিকভাবে ট্যুরিস্ট বাস উদ্বোধন হতে যাচ্ছে।’

নওগাঁর ঐতিহাসিক স্থান ঘুরতে চালু হচ্ছে ট্যুরিস্ট বাস
নওগাঁর মান্দা উপজেলায় অবস্থিত প্রাচীন নিদর্শন ঐতিহাসিক কুসুম্বা মসজিদ। ছবি: নিউজবাংলা

তিনি জানান, উদ্বোধনের পর প্রতিদিন ট্যুরিস্ট বাস শহরের মুক্তির মোড় থেকে সকাল ৯টায় যাত্রা শুরু করবে। মুক্তির মোড়ের পদ্মা বাস কাউন্টার থেকে এই প্যাকেজের টিকেট পাওয়া যাবে। প্রাথমিক পর্যায়ে জেলা প্রশাসনের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের পক্ষ থেকে একটি বাস প্রস্তুত করা হচ্ছে। এই প্যাকেজের মূল্য ধরা হয়েছে ৪৫০ টাকাা।

জেলা প্রশাসক জানান, এই প্যাকেজের মাধ্যমে একজন পর্যটক খুব সহজেই প্রথমে ভারত সীমান্তঘেঁষা উপজেলা ধামইরহাট উপজেলার জাতীয় উদ্যান শালবন বিহারের আলতাদীঘি, ঐতিহাসিক জগদ্দল বিহার, বদলগাছী উপজেলার ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার ও হলুদ বিহার ভ্রমণ করতে পারবেন।

এ ছাড়া প্যাকেজের মাধ্যমে পর্যটকরা সকাল ও বিকেলের নাস্তা এবং দুপুরের খাবার পাবেন। বাড়তি আকর্ষণ হিসেবে প্রতিবার ভ্রমণের দিন বিকেলে পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারে স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃ-তাত্তিক শিল্পীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারবেন।

পরে হলুদ বিহার দর্শন শেষে নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড়ে এসে শেষ হবে ওইদিনের ভ্রমণ।

নওগাঁর ঐতিহাসিক স্থান ঘুরতে চালু হচ্ছে ট্যুরিস্ট বাস
ঐতিহাসিক জগদ্দল বিহার। ছবি: নিউজবাংলা

প্রাথমিক পর্যায়ে ৪টি ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণের রুট হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে পর্যটকদের চাহিদার উপর ভিত্তি করে জেলার সকল ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণের জন্যও প্যাকেজ তৈরি করা হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান।

পর্যটকরা এই ভ্রমণের ফলে জেলার বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত হাজার হাজার বছর আগের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো সম্পর্কে নতুন করে জানার সুযোগ পাবেন বলেও প্রত্যাশা তার।

তিনি বলেন, ‘এসব পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে বেশি বেশি পর্যটকদের আগমনের কারণে ওই সব স্থানের আর্থসামাজিক অবস্থা আরও উন্নত হবে। চাঙা হয়ে উঠবে বাণিজ্যিক ব্যবস্থা। নতুন নতুন উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে গড়ে উঠবে নতুন নতুন স্থাপনা আর সৃষ্টি হবে স্থানীয়দের কর্মসংস্থান। আমূল পরিবর্তন আসবে এই পর্যটন কেন্দ্রকে ঘিরে গড়ে ওঠা আর্থসামাজিক ব্যবস্থায়।’

নওগাঁ শহরের জনকল্যাণ মহল্লার বাসিন্দা মৌসুমী সুলতানা শান্ত বলেন, ‘এমন উদ্যোগ নওগাঁবাসীর জন্য সত্যিই খুবই আনন্দের। এমন উদ্যোগ নওগাঁর ইতিহাসে প্রথম। আমি নিজেও দুটি টিকিট কিনেছি আলতাদিঘী শালবনে যাব আমি ও আমার ছেলে।’

শহরের মাস্টার পাড়া মহল্লার বাসিন্দা সাইফুল আলম বলেন, ‘আমি একজন শিক্ষার্থী, ঢাকাতে পড়াশোনা করি। ঈদের ছুটিতে বাড়িতে এসেছি। ইচ্ছে থাকলেও অনেক মানুষের পক্ষে ব্যক্তিগতভাবে এতোগুলো নিদর্শন ভ্রমণ করা সম্ভব নয়। কিন্তু এখন একটি প্যাকেজের মাধ্যমে খুব সহজেই ঐতিহাসিক চারটি পর্যটন কেন্দ্রে ভ্রমণ করতে পারবেন। আমি টিকিট কাটব পাঁচটি। বগুড়া ও রাজশাহী থেকে আমার আরও চার বন্ধুকে নিয়ে ঘুরতে যাব।’

নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার আলাতাদীঘি জাতীয় উদ্যান ও শালবনের বন বিট কর্মকর্তা আনিছুর রহমান বলেন, ‘এটি জেলা প্রশাসনের নিঃসন্দেহে এটি একটি মহৎ উদ্যোগ। নওগাঁর ঐতিহাসিক পর্যটন কেন্দ্রগুলো ভ্রমণ করা উচিত। সকলের জানা উচিত এই জেলার চমৎকার কিছু স্থান রয়েছে। আর পর্যটকরা আলতাদীঘিতে এলে জাতীয় উদ্যানসহ ভারতের সীমান্তও দেখতে পারবেন।’

নওগাঁ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর শরিফুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমাদের নওগাঁ জেলা ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিজড়িত জেলা। এই জেলায় বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য স্থাপনা, যেগুলোতে মিশে আছে হাজার বছর আগের ইতিহাস। তাই একজন ভ্রমণ পিপাসু মানুষের জন্য নওগাঁর এই সব ঐতিহাসিক পর্যটন কেন্দ্রগুলো ভ্রমণ করার কোনো বিকল্প নেই।’

নওগাঁর ঐতিহাসিক স্থান ঘুরতে চালু হচ্ছে ট্যুরিস্ট বাস
জেলার ধামইরহাট উপজেলার ঐতিহাসিক আলতা দিঘি। ছবি: নিউজবাংলা

এ ছাড়া এই উদ্যোগের মাধ্যমে নওগাঁর পর্যটন এলাকাগুলো নতুন করে পর্যটকদের পদচারনায় মুখরিত হবে বলে মনে করেন তিনি।

নওগাঁ জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ রেজাউল মোস্তফা কালিমী বাবু বলেন, ‘অনেক নিম্ন আয়ের মানুষদের ইচ্ছে থাকলেও নিজের এলাকার পর্যটন কেন্দ্রগুলো ভ্রমণ করতে পারেন না। আবার শিক্ষার্থীদের জন্যও এই উদ্যোগ মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। তারা ইচ্ছে করলেই একদিনে স্বল্প খরচে এই ঐতিহাসিক স্থানগুলো ভ্রমণ করতে পারবেন।’

এসব ছাড়াও জেলায় রয়েছে ঐতিহাসিক কুসম্বা মসজিদ, রবি ঠাকুরের কাচারি বাড়ি পতিসর, বলিহার, দুবলহাটি রাজবাড়িসহ অন্যান্য ঐতিহাসিক স্থান।

আরও পড়ুন:
চাল বেচে দিয়েছেন কাভার্ড ভ্যানচালক, ফোনে জানলেন ব্যবসায়ী
শিশু মরিয়ম পেল ডিএমপি কমিশনারের উপহার
প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিজের গায়ে আগুন: গৃহবধূর মৃত্যু
করাতে ধার দেয়ার সময় সান ভেঙে পেটে, যুবকের মৃত্যু
নওগাঁয় শুরু শতবলের ক্রিকেট

মন্তব্য

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ
The most valuable manuscript in the world is the Hebrew Bible

বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান পাণ্ডুলিপি হলো হিব্রু বাইবেল

বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান পাণ্ডুলিপি হলো হিব্রু বাইবেল গ্রন্থটি প্রায় ১ হাজার ১ শ’ বছর আগে রচিত। ছবি: সংগৃহীত
গ্রন্থটি প্রায় ১ হাজার ১ শ’ বছর আগে রচিত। বিরাম চিহ্ন, স্বরবর্ণ ও উচ্চারণসহ হিব্রু বাইবেলের ২৪টির সবগুলো বই ধারণকারী একটি একক পাণ্ডুলিপির প্রাচীনতম উদাহরণ এই গ্রন্থ।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন ও সম্পূর্ণ বাইবেল নিলামে উঠেছে। নিউইয়র্কের সোথবি’স নিলাম প্রতিষ্ঠানে বাইবেলখানা ৩৮.১ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হয়েছে, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৪১০ কোটি টাকা। এতে আর্থিক মূল্যে বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান পাণ্ডুলিপির মর্যাদা পেয়েছে হিব্রু ভাষায় রচিত ওই বাইবেল।

গ্রন্থটি প্রায় ১ হাজার ১ শ’ বছর আগে রচিত বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।

বিরাম চিহ্ন, স্বরবর্ণ ও উচ্চারণসহ হিব্রু বাইবেলের ২৪টির সবগুলো বই ধারণকারী একটি একক পাণ্ডুলিপির প্রাচীনতম উদাহরণ এই গ্রন্থ।

ইসরায়েলের তেল আবিবে অবস্থিত ইহুদির এএনইউ জাদুঘরের জন্য এটি কিনে নেন যুক্তরাষ্ট্রের আইনজীবী ও সাবেক রাষ্ট্রদূত আলফ্রেড মোসেস।

এক বিবৃতিতে মোসেস বলেন, ‘ইতিহাসে সবচেয়ে প্রভাবশালী ও পশ্চিমা সভ্যতার ভিত্তি গঠন করেছে হিব্রু বাইবেল। আমি জেনে খুশি হয়েছি যে এটা ইহুদি জনগণের। কোডেক্স স্যাসুন (২৪টি বাইবেলের সংকলন)-এর ঐতিহাসিক তাৎপর্য অনুধাবন করাই আমার লক্ষ্য ছিল। কারণ আমি মনে করি, এটির অবস্থান এমন এক জায়গায় যেখানে বিশ্বের সব মানুষের প্রবেশাধিকার রয়েছে।’

এর আগে বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান পাণ্ডুলিপি ছিল লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি’র বৈজ্ঞানিক নোটবুক ‘কোডেক্স লিসেস্টার’। ১৯৯৪ সালে মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও বিশ্বের অন্যতম সেরা ধনী বিল গেটস সেটি ৩০.৮ মিলিয়ন ডলার দিয়ে কিনে নেন।

আরও পড়ুন:
রেকর্ড দামে মনরোর প্রতিকৃতি বিক্রি

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Natore kachagolla is added to the list of GI products

জিআই পণ্যের তালিকায় যুক্ত হচ্ছে নাটোরের কাঁচাগোল্লা

জিআই পণ্যের তালিকায় যুক্ত হচ্ছে নাটোরের কাঁচাগোল্লা ফাইল ছবি
জেলা প্রশাসক বলেন, নাটোরে সৃষ্টি কাঁচাগোল্লা সারাদেশে প্রসিদ্ধ। ইতিহাস সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে জিআই নিবন্ধনের কাজ শুরু করেছি আমরা। আশা করছি অল্প দিনের মধ্যে জিআই পণ্যের মর্যাদা লাভ করবে নাটোরের কাঁচাগোল্লা।

ঐতিহ্যবাহী নাটোরের কাঁচাগোল্লার ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) নিবন্ধনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে নাটোর জেলা প্রশাসন।

এ উপলক্ষে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে নিবন্ধনের আবেদন পাঠানো হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ। খবর বাসসের

এফিডেভিটের মাধ্যমে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) বরাবর নাটোরের কাঁচাগোল্লার আবেদন প্রক্রিয়া পাঠানো হয়েছে। নাটোরের ই-কমার্স ডেভেলপমেন্ট সেন্টার এই প্রক্রিয়ায় সহায়তা দিচ্ছে।

কথিত আছে, কাঁচাগোল্লা সৃষ্টির পেছনে আছে মজাদার ইতিহাস। অর্ধ বঙ্গেশ্বরী খ্যাত নাটোরের রানি ভবানীর প্রিয় খাদ্যের তালিকায় ছিল মিষ্টি। তার রাজপ্রাসাদে নিয়মিত মিষ্টি সরবরাহ করতেন শহরের লালবাজারের মিষ্টি বিক্রেতা মধুসূদন পাল। একদিন মধুসুদন পালের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সব কর্মচারী অসুস্থ হয়ে গেলেন।

মিষ্টি তৈরির জন্যে দুই মণ ছানা সংগ্রহ করা ছিল। ছানাগুলো নষ্ট হয়ে যাবে ভেবে মধুসূদন ছানার সঙ্গে চিনি মিশিয়ে উনুনে তাপ দেন। কারিগর ছাড়াই এলোমেলো এই আয়োজনে তৈরি হয় নতুন এক মিষ্টি। স্বাদে অতুলনীয় হওয়ায় নতুন এই মিষ্টিই পাঠিয়ে দেন রানি ভবানীর রাজবাড়িতে।

রানি ভবানী এই মিষ্টি খেয়ে প্রশংসা করেন এবং এর নাম জানতে চান। মধুসূদন পাল তখন কাঁচা ছানা থেকে তৈরি বলে এর নাম দেন কাঁচাগোল্লা। এই হচ্ছে কাঁচাগোল্লা সৃষ্টির ইতিহাস। এই গল্প বেঁচে আছে শত-শত বছর ধরে মানুষের মুখে- মুখে।

নাম গোল্লা হলেও এটি দেখতে গোল নয়, মুখ্য উপকরণ ছানা আর চিনির সংমিশ্রণে এক প্রকার সন্দেশ। কাঁচাগোল্লার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে নাটোরবাসীর আবেগ ও ভালোবাসা। তাই ২৫০ বছর আগে কাঁচাগোল্লা আবিষ্কৃত হয়ে আজও সুনাম বজায় রেখেছে। নাটোরের বিয়ে, বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও অতিথি আপ্যায়নে সরবরাহ করা হয় কাঁচাগোল্লা। শুধু দেশে নয়, সারাবিশ্বেই নাটোরের কাঁচাগোল্লা প্রসিদ্ধ।

জেলা প্রশাসক বলেন, নাটোরে সৃষ্টি কাঁচাগোল্লা সারাদেশে প্রসিদ্ধ। ইতিহাস সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে জিআই নিবন্ধনের কাজ শুরু করেছি আমরা। আশা করছি অল্প দিনের মধ্যে জিআই পণ্যের মর্যাদা লাভ করবে নাটোরের কাঁচাগোল্লা।

জিআই তালিকাভুক্তির মধ্য দিয়ে নাটোরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের পাশাপাশি দেশ-বিদেশে কাঁচাগোল্লার ব্র্যান্ডিং ও চাহিদা আরো বৃদ্ধি পাবে বলে উল্লেখ করেন জেলা প্রশাসক।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Cremation Fair Bagar has been taken over by Katal Bighead

পোড়াদহ মেলা: বাগাড়ের দখল নিয়েছে কাতল, বিগহেড

পোড়াদহ মেলা: বাগাড়ের দখল নিয়েছে কাতল, বিগহেড পোড়াদহ মেলায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বড় বড় মাছ আমদানি হয়। ছবি: নিউজবাংলা
চারশ’ বছরের ঐতিহ্য বহন করে চলা এই মেলা প্রতিবছর মাঘ মাসের শেষ বুধবার ইছামতীর তীরে অনুষ্ঠিত হয়। এটি জামাই মেলা হিসেবেও পরিচিত। পোড়াদহ মেলার মূল আকর্ষণ মাছ। মেলাকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নানা প্রজাতির মাছ আমদানি হয়। তবে মাছ ছাড়াও মেলায় মিষ্টি, খেলনা থেকে শুরু করে সাংসারিক প্রায় সব ধরনের জিনিসপত্র বিক্রি হয়ে থাকে।

‘পোড়াদহ মেলাত মানুষ আসেই বাগাড় মাছের জন্য। গত বছর থেকে সে মাছ বিক্রি হচ্ছে না। তাই অন্য মাছের ওপর চাপ পড়ছে। বিগহেড, সিলভারের দাম এবার বেশি। বাগাড় থাকলে এগলা মাছের দাম পেতাম না আমরা।’

কথাগুলো বলছিলেন বগুড়ার গাবতলীর রানীরপাড়া এলাকার মাছ ব্যবসায়ী মো. মুছা। উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নে বুধবার সকালে পোড়াদহ মেলায় গিয়ে এই তরুণ মাছ ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হয়।

চারশ’ বছরের ঐতিহ্য বহন করে চলা এই মেলা প্রতিবছর মাঘ মাসের শেষ বুধবার ইছামতীর তীরে অনুষ্ঠিত হয়। এই মেলা জামাই মেলা হিসেবেও পরিচিত। এলাকার মেয়ে জামাইরা এই মেলা উপলক্ষে শ্বশুরালয়ে আসেন। তারাই এ মেলার মূল ক্রেতা।

পোড়াদহ মেলার মূল আকর্ষণ মাছ। মেলাকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নানা প্রজাতির মাছ আমদানি হয়। তবে মাছ ছাড়াও মেলায় মিষ্টি, খেলনা থেকে শুরু করে সাংসারিক প্রায় সব ধরনের জিনিসপত্র বিক্রি হয়ে থাকে।

পোড়াদহ মেলা: বাগাড়ের দখল নিয়েছে কাতল, বিগহেড
বগুড়ার গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নে প্রতিবছর মাঘ মাসের শেষ বুধবার বসে ঐহিত্যবাহী পোড়াদহ মেলা। ছবি: নিউজবাংলা

মুছা জানালেন, এবার মেলায় মাছের দাম বেশি। এ জন্য বড় মাছের ক্রেতা কম। তবে বাগাড় মাছ থাকলে কার্প জাতীয় মাছের দাম কম পেতো ক্রেতারা। বড় আকারের বিগহেড, কাতল, রুই- এগুলো এক হাজার টাকা কেজি দামে বিক্রি হচ্ছে।

মেলা ঘুরে এবার ৪০ কেজি ওজনের গ্রাসকার্প মাছ পাওয়া যায়। ব্যবসায়ীদের দাবি, এটিই এবারের মেলার সবচেয়ে বড় মাছ।

মাছটি মেলায় এনেছেন বজলুর রশিদ। তিনি বলেন, ‘নাটোরের বিল থেকে আনা হয়েছে গ্রাসকার্প মাছটি। এর ওজন ৪০ কেজি। দাম চেয়েছি প্রতি কেজি ২ হাজার টাকা।

অন্য মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, মেলায় আইড় মাছ দুই হাজার টাকা, চিতল ও বোয়াল ১৫শ’ টাকা করে দাম চাওয়া হচ্ছে। ছোট সাইজের সিলভার কার্প ৪০০, গ্রাসকার্প ২৫০, বিগহেড ৮৫০ দাম হাঁকাচ্ছেন বিক্রেতারা।

২০২২ সালের ২৪ জানুয়ারি বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের এক বিজ্ঞপ্তিতে বাগাড় মাছকে মহাবিপন্ন ঘোষণা করা হয়। ক্রয়-বিক্রয়ে বিধিনিষেধের কারণে এরপর থেকে পোড়াদহ মেলায় ব্যবসায়ীরা বাগাড় মাছ আনছেন না।

তবে এর মধ্যে এক ব্যবসায়ী কয়েকটি বাগাড় মাছ মেলায় নিয়ে আসেন। পরে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের অভিযানে মাছগুলো জব্দ করা হয়। অভিযানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন গাবতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আফতাবুজ্জামান আল ইমরান।

গাবতলী থানার ওসি সনাতন দাস বলেন, ‘আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ৬০ হাজার টাকা মূল্যের চারটি বাগাড় মাছ জব্দ করেন। এই মাছ বিক্রির চেষ্টার জন্য শুক্রা সাকিদার নামে এক ব্যবসায়ীকে ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। মাছগুলো মহিষাবান ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের হেফাজতে রয়েছে।’

পোড়াদহ মেলা: বাগাড়ের দখল নিয়েছে কাতল, বিগহেড
পোড়াদহ মেলার আরেক বড় আকর্ষণ একেকটি বিশাল আকারের মাছ মিষ্টি। ছবি: নিউজবাংলা

পোড়াদহ এলাকায় সূর্য ওঠার পর থেকেই মানুষের ভিড় জমে ওঠে। বেলা বাড়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভিড় বাড়তে থাকে। পোড়াদহ মেলার আরেক নাম জামাই মেলা। সঙ্গত কারণে মেলার প্রধান ক্রেতা হলেন এলাকার জামাই।

স্থানীয়রা জানান, মেলা উপলক্ষে পোড়াদহের আশপাশের সব গ্রামে উৎসবের ধুম লেগে যায়। প্রত্যেক বাড়ির জামাইদের দাওয়াত করা হয়। এছাড়াও অন্য আত্মীয়-স্বজনদের দাওয়াত করে আপ্যায়ন করেন স্থানীয়রা।

মেলায় ঘুরতে আসা এমন এক ব্যক্তি রেজাউল ইসলাম। তিনি বগুড়া শহরের ফুলবাড়ী এলাকার বাসিন্দা। পোড়াদহের পাশে মহিষাবান গ্রামে তার শ্বশুরবাড়ি।

রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘দশ বছর হয়েছে বিয়ে করেছি। প্রতি বছরই মেলায় দাওয়াত পাই। যত কাজ থাকুক, আমাদের আসতে হয় মেলায়। মেলা উপলক্ষে আমরা মাছ-মাংস ও মিষ্টি কিনি। ছোট বাচ্চাদের নিয়ে ঘুরে বেড়াই।’

এ দাওয়াত ধনী-গরিব সব বাড়ির লোকজনেরাই করে থাকেন বলে জানান রেজাউল।

গাজীপুর থেকে মেলায় বেড়াতে এসেছেন মাসুদ রানা। এর আগে কখনও এত বড় মেলা দেখেননি তিনি।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এই চাকুরে বলেন, ‘আমার শ্বশুরবাড়ি পাশের সারিয়াকান্দি উপজেলায়। এই মেলার কথা অনেক শুনেছি। এবারই প্রথম এলাম। এখনও কিছু কিনিনি। ঘুরে দেখছি।’

পোড়াদহ মেলার মিষ্টিরও সুনাম আছে। এ মেলায় হরেক রকমের মিষ্টি নিয়ে আসেন ব্যবসায়ীরা। এসব মিষ্টির নামও থাকে বাহারি।

মিষ্টির দোকানি আব্দুল হাকিম বলেন, ‘পোড়াদহের মেলায় মাছ মিষ্টির চাহিদা বেশি। একেকটি ১০ কেজি ওজনের এই মিষ্টির দাম ধরা হয়েছে প্রতি কেজি ৫০০ টাকা। এ ছাড়া বালিশ মিষ্টি, চমচম, রসগোল্লাও আছে। এগুলো ১৮০ থেকে ৪০০ টাকা দরের।’

ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, প্রায় ৪০০ বছর আগে মেলার স্থানটিতে একটি বিশাল বটবৃক্ষ ছিল। সেখানে একদিন হঠাৎ এক সন্ন্যাসীর আবির্ভাব ঘটে। পরে সেখানে আশ্রম তৈরি করেন সন্ন্যাসীরা। একপর্যায়ে স্থানটি পুণ্যস্থানে পরিণত হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে।

প্রতি বছর মাঘের শেষ বুধবার ওই স্থানে সন্ন্যাসী পূজার আয়োজন করে হিন্দু সম্প্রদায়। ছুটে আসেন দূর-দূরান্তের ভক্তরা। দিন যত যায়, স্থানটিতে লোকজনের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। এভাবেই গোড়াপত্তন ঘটে পোড়াদহ মেলার।

মেলাটি এক দিনের জন্য হলেও পরদিনই একই স্থানে বউ মেলা বসে। এ সময় সাধারণত নারীরা তাদের নানারকম পণ্য কিনে থাকেন।

পোড়াদহ মেলার সভাপতি ও মহিষাবান ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বলেন, ‘চার শ বছর ধরে মেলাটি অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। মেলায় অন্তত ২ হাজার দোকান বসছে, যার মধ্যে অন্তত ৪০০টি মাছের দোকান। মেলায় আলাদা করে কোনো ডাক হয় না।

‘মেলার স্থানের অন্তত ৫০ জন জমির মালিক বা জোতদার আছেন। তারাই মেলার দোকানগুলো বসাতে দেন ব্যবসায়ীদের। মেলাটি মূলত মাছের জন্য এবং প্রচুর মাছও বিক্রি হয় এখানে। ধারণা করা হচ্ছে, এবারও কোটি টাকার মাছ বিক্রি হবে।’

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Bangabhaban is opening for visitors on a limited basis

দর্শনার্থীদের জন্য সীমিত পরিসরে উন্মুক্ত হচ্ছে বঙ্গভবন

দর্শনার্থীদের জন্য সীমিত পরিসরে উন্মুক্ত হচ্ছে বঙ্গভবন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ মঙ্গলবার বঙ্গভবনে সংস্কারকৃত এয়ার রেইড শেল্টার ও তোশাখানা জাদুঘরের উদ্বোধন করেন। ছবি: বাসস
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘বঙ্গভবনের ভেতরে সাধারণ মানুষ আসতে পারে না। এটার ভেতরে কী আছে না আছে তারা জানতে পারে না। এর সমৃদ্ধ ইতিহাস সংরক্ষণ এবং তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে বঙ্গভবন তোশাখানা জাদুঘর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’

দর্শনার্থীদের জন্য সীমিত পরিসরে উন্মুক্ত হচ্ছে বঙ্গভবন। এ লক্ষ্যে নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন হচ্ছে।

বার্তা সংস্থা বাসস জানায়, রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ মঙ্গলবার বিকেলে বঙ্গভবনে সংস্কারকৃত এয়ার রেইড শেল্টার ও তোষাখানা জাদুঘরের উদ্বোধনকালে এ কথা জানান।

এ সময় তিনি বলেন, ‘বঙ্গভবনের ভেতরে সাধারণ মানুষ আসতে পারে না। এটার ভেতরে কী আছে না আছে তারা জানতে পারে না।

‘বঙ্গভবনের তোশাখানা জাদুঘর শতাব্দীকালের বর্ণাঢ্য ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অন্যতম নিদর্শন। বঙ্গভবনের সমৃদ্ধ ইতিহাস সংরক্ষণ এবং তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে বঙ্গভবন তোশাখানা জাদুঘর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’

আবদুল হামিদ বলেন, ‘বিদেশি রাষ্ট্রদূতসহ আগন্তুকরা পরিদর্শনকালে আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হতে সক্ষম হবেন। বঙ্গভবনের অনেক স্থাপনা দেখে মোটামুটিভাবে তারাও আকৃষ্ট হবেন এবং আমাদের বাংলাদেশ সম্পর্কে তাদের মনোভাব অনেক উঁচু হবে বলে আমার বিশ্বাস।’

বিকেলে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ নবনির্মিত তোশাখানা জাদুঘরের উদ্বোধন শেষে বিভিন্ন কক্ষ ঘুরে দেখেন।

বঙ্গভবনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে থাকা এ তোশাখানাকে একটি আধুনিক মানসম্পন্ন জাদুঘরে পরিণত করা হয়েছে।

তোশাখানায় বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের কাছ থেকে পাওয়া উপহার সামগ্রী এবং ঐতিহাসিক ছবি সংরক্ষিত রয়েছে।

দেশি-বিদেশি দর্শনার্থীদের জন্য এটি সীমিত পরিসরে উন্মুক্ত থাকবে। আবার বিশ্বের যে কোন প্রান্ত থেকে অনলাইনেও যে কেউ তোশাখানাটি যাতে পরিদর্শন করতে পারেন এবং বঙ্গভবন সম্পর্কে জানতে পারেন সে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

এর আগে রাষ্ট্রপ্রধান সংস্কারকৃত এয়ার রেইড শেল্টার হাউজের উদ্বোধন করেন এবং বিভিন্ন কক্ষ পরিদর্শন করেন।

রাষ্ট্রপতির স্ত্রী রাশিদা খানম, সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মাদ তৌফিকসহ সংশ্লিষ্ট সচিবরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

যেভাবে বঙ্গভবন

মুক্ত আকাশ, জলাধার আর অবারিত সবুজের সমাহারে গড়ে ওঠা এই স্থাপত্যের গোড়াপত্তন ঘটে ১৯০৫ সালে। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের ফলে সৃষ্ট পূর্ববঙ্গ ও আসাম নামে একটি নতুন প্রদেশ প্রতিষ্ঠা করা হয়। তৎকালীন ঢাকার নবাব পরিবারের দিলকুশা বাগানবাড়ির দক্ষিণাংশে লেফটেন্যান্ট-গভর্নরের বাসস্থান হিসেবে অস্থায়ী লাটভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়।

গভর্নরের অফিস ও বসবাসের জন্য নির্মিত হয় একটি কাঠের প্রাসাদ। স্যার ব্যামফিল্ড ফুলার পূর্ববাংলা ও আসাম প্রদেশের প্রধান শাসনকর্তা হিসেবে ১৯০৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি নবনির্মিত অস্থায়ী গভর্নমেন্ট হাউজে প্রবেশ করেন। মূলত এ দিন থেকেই বঙ্গভবনের যাত্রা শুরু। অচিরেই ভবনটি ‘দিলকুশা গভর্নমেন্ট হাউজ’ নামে পরিচিতি লাভ করে।

১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর এটি পূর্ব বাংলা বা পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। প্রথম গভর্নর ছিলেন স্যার ফ্রেডারিক বোর্ন। এ সময় ‘গভর্নমেন্ট হাউজ’-এর নাম পরিবর্তন করে নতুন নামকরণ করা হয় ‘গভর্নর হাউজ’।

১৯৬১ সালের ৯ মে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে ভবনটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ছাদের কিছু অংশ ভেঙে পড়ে। ফলে তৎকালীন গভর্নর লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোহাম্মদ আযম খান ক্ষতিগ্রস্ত ভবন সংস্কারের পরিবর্তে একটি নতুন ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। ওই বছরের জুন মাসে তৎকালীন গণপূর্ত বিভাগ (সিএন্ডবি) ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত কাজ শুরু করে এবং গভর্নর আযম খান ১৯৬৪ সালের জানুয়ারি মাসে এটি উদ্বোধন করেন।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের পর দেশে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদের অন্যান্য সদস্য ২৩ ডিসেম্বর গভর্নর হাউজে মন্ত্রিপরিষদের প্রথম সভা করেন। সেই সভায় গভর্নর হাউজকে নতুনভাবে ‘বঙ্গভবন’ নামে নামকরণ করা হয়।

বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের বন্দি অবস্থা থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি সদ্য-স্বাধীন বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। দেশে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারের পরিবর্তে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার প্রবর্তিত হলে তিনি ১২ জানুয়ারি বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি পদে ইস্তফা দেন এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।

১৯৮৫ সালে বেশ বড় পরিসরে বঙ্গভবন উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এর অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা ও অলংকরণের কাজে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হয়। অভ্যন্তরীণ নান্দনিক সৌন্দর্য্য বৃদ্ধিতে সংযোজন করা হয় দুর্লভ চিত্রকর্ম।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সময়ে ২০১৬ সালে নির্মাণ করা হয় অত্যাধুনিক সুইমিংপুল কমপ্লেক্স। আবদুল হামিদের অভিপ্রায় অনুযায়ী ২০২১-২২ সালে বঙ্গভবনে ব্যাপক সংস্কার কাজ সম্পন্ন করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- রাষ্ট্রপতির অফিস কক্ষ, হরিণ পুকুর, গ্যালারি হল, দরবার হল, ভিআইপি অপেক্ষাগার-১, এয়ার রেইড শেল্টার, কেবিনেট হল, বঙ্গভবন তোষাখানা যাদুঘর।

১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় গভর্নরের নিরাপত্তার জন্য একটি এয়ার রেইড শেল্টার নির্মাণ করা হয়। স্বাধীনতার পর এয়ার রেইড শেল্টারের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যাওয়ায় এটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। পরবর্তীতে ২০২২ সালে এটি সংস্কার করে পুনরায় ১৯৬৫ সালের আদলে নিয়ে যাওয়া হয়।

বঙ্গভবনের প্রাচীন মানুক হাউসকে সংস্কারের মাধ্যমে ‘বঙ্গভবন তোশাখানা জাদুঘর’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, যেখানে বঙ্গভবনের বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো প্রদর্শন করা হচ্ছে। ১৫০ বছরেরও অধিক পুরনো মানুক হাউস এর আগে রাষ্ট্রীয় তোশাখানা হিসেবে ব্যবহৃত হত। উনিশ শতকে মানুক নামের এক আর্মেনিয় ব্যবসায়ী এখানে বসবাস করতেন।

বর্তমানে তোশাখানার বেশ কিছু উপহার সামগ্রী সংরক্ষণ ও সর্বসাধারণের দেখার জন্যবঙ্গবন্ধু সামরিক যাদুঘরের পাশে রাষ্ট্রীয় তোশাখানা জাদুঘরে স্থানান্তর করা হয়েছে। মানুক হাউসকে তোশাখানা জাদুঘর হিসেবে প্রতিষ্ঠার সময় এর দেয়ালে ছোটো ছোটো ইট অত্যন্ত ভঙ্গুর অবস্থায় পাওয়া যায়, যার কিছু অংশ কোনো পরিবর্তন ছাড়াই সংরক্ষণ করা হয়েছে।

তোশাখানার পাশেই প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়েছে প্রেসিডেন্সিয়াল স্টেট কার। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিরা গাড়িটি ব্যবহার করতেন। জার্মানির ট্রাস্কো ব্রেমেন কোম্পানি নির্মিত প্রেসিডেন্সিয়াল স্টেট কারটি একটি অভিজাত এবং অতি-বিরল প্রসারিত লিমুজিন যা মূলত ডব্লিউ ১২৬ মার্সিডিজ-বেঞ্জ ৫০০ এসইএল মডেলের উপর ভিত্তি করে নির্মিত।

বঙ্গভবনের অন্যান্য ঐতিহাসিক নিদর্শনসমূহের মধ্যে বিভিন্ন ধর্মীয় সাধকের মাজার, দানা দীঘি, মাজার পুকুর, সিংহ পুকুর উল্লেখযোগ্য। সুদীর্ঘ ইতিহাস আর ইসলামি, ব্রিটিশ ও মোঘল স্থাপত্যরীতিতে গড়ে উঠা এই ভবন তার স্থাপত্যশৈলীকে ছাপিয়ে হয়ে উঠেছে স্বাধীন সর্বভৌম বাংলাদেশের এক অনন্য প্রতীক। দেশের সর্বোচ্চ সুরক্ষিত এই ভবন সম্পর্কে মানুষের কৌতুহলের শেষ নেই।

বঙ্গভবনকে দেশি-বিদেশি দর্শনার্থীদের জন্য সীমিত পরিসরে উন্মুক্ত করার লক্ষ্যেই তোশাখানা ও এয়ার রেইড শেল্টার হাউজের আধুনিকায়ন এবং ওয়াকওয়ে নির্মানসহ নানা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
The Mughal architectural Dewans pool was closed

পরিবেশকর্মীদের বাধায় বন্ধ হলো মোগল স্থাপত্য ‘দেওয়ানের পুল’ ভাঙা

পরিবেশকর্মীদের বাধায় বন্ধ হলো মোগল স্থাপত্য ‘দেওয়ানের পুল’ ভাঙা নতুন সেতু নির্মাণের লক্ষ্যে ২০০ বছরের পুরোনো ‘দেওয়ানের পুল’ ভেঙে ফেলা শুরু করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর
প্রায় ২০০ বছর আগে সিলেটের তৎকালীন দেওয়ান (রাজস্ব কর্মকর্তা) গোলাম রায়ের নির্দেশে গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকা দক্ষিণ এলাকার শ্রীচৈতন্য দেবের বাড়ির পথে একটি সড়ক নির্মাণ করা হয়। ওই সময় বাউশা এলাকার দেওরভাগা খালে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। যা ‘দেওয়ানের পুল’ নামে পরিচিতি পায়।

সিলেটের গোলাপগঞ্জে প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো মোগল স্থাপত্যের নিদর্শন ‘দেওয়ানের পুল’ ভেঙে ফেলার কাজ বন্ধ হয়েছে। সড়ক প্রশস্তকরণের জন্য সেতুটি ভেঙে ফেলার কাজ শুরু করেছিল স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।

বুধবার পরিবেশকর্মীরা সরেজমিনে এলাকা পরিদর্শন করে সেতুটি রক্ষার দাবি জানান। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ভাঙার কাজ আপাতত বন্ধ রাখার কথা জানিয়েছে এলজিইডি।

স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ২০০ বছর আগে সিলেটের তৎকালীন দেওয়ান (রাজস্ব কর্মকর্তা) গোলাম রায়ের নির্দেশে গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকা দক্ষিণ এলাকার শ্রীচৈতন্য দেবের বাড়ির পথে একটি সড়ক নির্মাণ করা হয়।

ওই সময় বাউশা এলাকার দেওরভাগা খালে এই সেতু নির্মাণ করা হয়। যা ‘দেওয়ানের পুল’ নামে পরিচিতি পায়।

পরিবেশকর্মীদের বাধায় বন্ধ হলো মোগল স্থাপত্য ‘দেওয়ানের পুল’ ভাঙা
২০০ বছরের পুরনো ‘দেওয়ানের পুল’

উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চুন-সুরকি দিয়ে তৈরি পুরোনো এই সেতুটির দৈর্ঘ্য ২০ ফুট এবং প্রস্থ ১৬ ফুট। সম্প্রতি সড়ক সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়। এ কারণে ৩ কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে একই জায়গায় এখন ৯৯ ফুট দীর্ঘ ও ৩২ ফুট প্রস্থ সেতু নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত হয়।

এ কারণে পুরোনো সেতুটি ভাঙার কাজ শুরু করে এলজিইডি। তিন দিন ধরে বুলডোজার দিয়ে সেতুটি ভাঙার কাজ চলে।

সেতু ভাঙার খবর পেয়ে বুধবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের নেতারা। এ সময় তারা স্থাপনাটি যথাযথভাবে সংরক্ষণ করে ভেঙে ফেলা অংশ দ্রুত সংস্কারের দাবি জানান।

এ বিষয়ে বাপা সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম বলেন, ‘উন্নয়নের নামে সবখানে ঐতিহ্য ধ্বংসের কার্যক্রম চলছে। সরকারি উদ্যোগে এমন কাজ করা হচ্ছে। যা খুবই দুঃখজনক।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, চুন-সুরকি দিয়ে নির্মিত সেতুর ভেঙে ফেলা অংশ সংস্কার করে পুনরায় আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব। তাই স্থানীয় প্রশাসনের কাছে আমরা সেতুটি রক্ষার দাবি জানিয়েছি।’

এদিকে বাপা নেতাদের আহ্বান বুধবার দুপুর থেকে সেতু ভাঙার কাজ আপাতত স্থগিত রেখেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।

পরিবেশকর্মীদের বাধায় বন্ধ হলো মোগল স্থাপত্য ‘দেওয়ানের পুল’ ভাঙা
মোগল স্থাপত্য ভেঙে নতুন সেতু বানানোর কথা চলছে

এমন তথ্য জানিয়ে উপজেলা প্রকৌশলী মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘ইতোমধ্যে সেতুর বেশ খানিকটা অংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে। তবে যেহেতু সবাই সেতু রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন, তাই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে আপাতত ভাঙার কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’ পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

সেতুটি চুন-সুরকি দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটি ভারী যানবাহন চলাচলের জন্য উপযোগী না। তাই নতুন সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’

এই প্রকৌশলী আরও জানান, সেতুর অবস্থান শতভাগ সোজা রাস্তায়। তাই বাঁকা করে বিকল্প সেতু নির্মাণের সুযোগ নেই। এমনকি সেতুর তিনটি স্প্যান (পিলার) এমনভাবে আছে, যা দিয়ে সহজে বড় নৌকাও চলাচল করতে পারে না।

আরও পড়ুন:
পিথাগোরাসের জন্মের হাজার বছর আগেই উপপাদ্যের ব্যবহার
ধারণার চেয়েও পুরোনো মাচু পিচু
বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় ২৩০০ বছরের সোলার অবজারভেটরি
২০০ কোটি বছরের পুরোনো পানি কানাডায়
৭৮ হাজার বছরের প্রাচীন কবর আফ্রিকায়

মন্তব্য

বাংলাদেশ
The artistes want support for Jari song

হারাতে বসেছে জারি গান, সহায়তা চান শিল্পীরা

হারাতে বসেছে জারি গান, সহায়তা চান শিল্পীরা শেরপুরে জারি গানের আসর। ছবি: নিউজবাংলা
ভেলুয়া থেকে আসা জারি শিল্পী শামীম মিয়া বলেন, ‘আমরা আগে শীতের সময় সিরিয়াল দিবার পাইতাম না। প্রতিদিন কাজ থাকত। কিন্তু এখন আর আগের মতো কাজ নাই। আমরা এখন অবসর সময় কাটাই। আমাদের একটা জারি গানের আসরে অনেক খরচ হয়। সরকার একটু সাহায্য করলে আমরা এই জারিকে বাঁচিয়ে রাখতে পারতাম।’

মাঝখানে দোহারি, বাদক দল, তারপর গোলাকার ফাঁকা জায়গা। এর চারপাশে দাঁড়িয়ে ও বসা হাজারও দর্শক। ফাঁকা জায়গায় নেচে নেচে গান বয়াতি। গানের ফাঁকে ফাঁকে চলে অভিনয়ও।

আমন ধান ঘরে তোলার পর একসময় সীমান্তবর্তী শেরপুর জেলার পাড়া-মহল্লায় প্রতিনিয়তই বসতো জারি গানের আসর। যেখানে কখনও ঐতিহাসিক কল্পকাহিনি আবার কখনও সমাজে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা অভিনয়ের মাধ্যমে তুলে ধরা হতো। খোলামঞ্চে সেই সঙ্গে চলত নাটক ও গান। এসব গান-বাজনা শুনে আনন্দ পেত গ্রাম বাংলার মানুষ। কিন্তু ইউটিউব ও আধুনিক যুগের বিভিন্ন মিডিয়ার কারণে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী জারি গান প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে।

শেরপুর পৌরসভার মোবারকপুর মহল্লায় শুক্রবার রাতে বসে এমনই এক জারি গানের আসর। উপস্থিত দর্শকরা জানান, তাদের ভালো লাগার কথা। আর এই আসরকে কেন্দ্র করে উপস্থিত হয় হাজারও নারী-পুরুষ ও শিশু।

শেরপুর পৌর শহরের আখের বাজার মহল্লার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আগে রাত জেগে জারি গান আমরা খুব দেখতাম। এখন এইগুলা খুব একটা দেখা যায় না। শীত এলে বিভিন্ন জায়গায় জারি গানের আসর হইত। এইগুলা দিন দিন হারাই যাইতাছে। আমাদের উচিত জারি গানকে বাঁচায় রাখা। ইউটিউব ও ফেসবুকের কারণে গ্রাম বাংলার এই গান হারাই যাচ্ছে।’

মোবারকপুরের যুবক রাসেল মিয়া বলেন, ‘মনের খোরাক প্রাচীন এই জারির আসর। এখন জারির আসর হারিয়ে যেতে বসেছে। আমরা বাপ-দাদাদের কাছে শুধু শুনি। কিন্তু এখন দেখতে পাই না।’

এই সংস্কৃতি চালু রাখতে সরকারিভাবে উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানান তিনি।

হারাতে বসেছে জারি গান, সহায়তা চান শিল্পীরা
শেরপুরে জারি গানের আসর। ছবি: নিউজবাংলা

চরশেরপুর ইউনিয়নের মো. মালেক মিয়া বলেন, ‘আমরা আগে বাপ-পোলা মিইল্লা মেলা দূরে যাইয়া জারি দেখতাম। এহন আর হয় না সবখানো। অনেক মজা কইরা দেখতাম। মোবাইল আইয়া সব ওইঠা পড়তাছে।’

শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার পশ্চিম টাঙ্গারপাড়া এলাকার বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে ‘দুই বিয়ে করার কুফল’ সম্পর্কে শেরপুরের পৌর এলাকায় এই জারির আসর বসে। শ্রীবরদীর ভেলুয়ার জিরাতন সুন্দরী নামক জারি গানের দলের অভিনেতা ও কর্মকর্তারা গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী জারি গান ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে জারি গান গেয়ে বেড়াচ্ছেন তারা। দর্শকরাও সাড়া দিচ্ছে বেশ ভালো। জারি গানের শিল্পীরা চান তাদের দল ধরে রাখতে সরকারি সহায়তা।

শিল্পীদের অভিযোগ, আর্থিক সহযোগিতা না পাওয়ায় শীতের সময়েও আগের মতো হচ্ছে না জারির আসর। জারি গানের মাধ্যমে সামাজিক নানা বিষয়ে তারা জনগণকে সচেতন করেন। এখন জারি গানের আসর কমে যাওয়ায় সমাজে ঘটছে নানা অপ্রীতিকর ঘটনা।

ভেলুয়া থেকে আসা জারি শিল্পী শামীম মিয়া বলেন, ‘আমরা আগে শীতের সময় সিরিয়াল দিবার পাইতাম না। প্রতিদিন কাজ থাকত। কিন্তু এখন আর আগের মতো কাজ নাই। আমরা এখন অবসর সময় কাটাই। আমাদের একটা জারি গানের আসরে অনেক খরচ হয়। সরকার একটু সাহায্য করলে আমরা এই জারিকে বাঁচিয়ে রাখতে পারতাম।’

৩০ বছর থেকে ভেলুয়ার ইয়াদ আলী জারি গান করেন। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি বিভিন্ন জায়গায় ৩০ বছরে অনেক জারির আসর করেছি। কিন্তু এখন আস্তে আস্তে আসর কমে গেছে। মানুষ এখন ফেসবুক ও ইউটিউবের ফলে এইগুলার আয়োজন কম করে। এখনকার ছেলেপেলেরা জারি গানের আসর সম্পর্কে জানেই না। আমরা সরকারিভাবেও কোনো সহযোগিতা পাই না। সরকারিভাবে যদি এই জারির আসর করা হতো, তাহলে আমাদের কদর থাকত।’

শেরপুর পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও জারি গানের আসরের আয়োজক মো. বাবুল মিয়া বলেন, ঐতিহ্যবাহী এই জারির আসর নতুন প্রজন্মের কাছে এখন দুর্লভ। আগে আয়োজন হতো বেশি, এখন কম হয়। তাই এলাকার সচেতন যুবসমাজ ও স্থানীয়দের নিয়ে হারিয়ে যাওয়া জারির আসর পুনরায় ফিরিয়ে আনতে প্রতি বছর এ আয়োজন করা হবে।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Kings triumphant

যুবরাজকে হারিয়ে বাদশার জয়জয়কার

যুবরাজকে হারিয়ে বাদশার জয়জয়কার
লড়াইয়ে নিজের মোরগ নিয়ে অংশগ্রহণকারী আলমগীর মিয়া জানান, ব্যাডমিন্টন খেলার কোর্টের মতো মোরগ লড়াইয়ের জন্য একটি কোর্ট বানানো হয় মাটিতে দাগ টেনে। এর দুপাশে নিজ নিজ মোরগ নিয়ে অবস্থান নেয় দুজন।

উঠানে দাগ দেয়া বৃত্তের মাঝে মুখোমুখি দুটি বিশাল আকৃতির মোরগ। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একজনের ইশারা পেতেই ঝাঁপিয়ে পড়ে শুরু করে লড়াই। একটি অন্যটিকে পরাস্ত করার আপ্রাণ চেষ্টা চালায়। বিরতির পর একটি মোরগের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত দেখা গেছে। এটির মালিক পানি ছিটিয়ে বিশ্রাম দিয়ে আবার এটিকে লড়াইয়ের ময়দানে পাঠায়।

কিছুক্ষণ যুদ্ধ শেষে ক্লান্ত হয়ে একটি বসে পড়ে। অন্যটি হয়ে যায় চ্যাম্পিয়ন; নাম বাদশা।

যুবরাজকে হারিয়ে বাদশার জয়জয়কার

মোরগের এই লড়াই দেখা গেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নিয়াজ মুহাম্মদ স্টেডিয়ামে। সেখানে বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজের পর অনুষ্ঠিত হয় গ্রামের ঐতিহ্যবাহী এই খেলা।

জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলমে এই মোরগ লড়াইয়ের আয়োজক।

লড়াইয়ে আরও ৩টি দল অংশ নেয়। প্রতিটি থেকেই একটি করে মোরগ জয় পায়।

লড়াইয়ে নিজের মোরগ নিয়ে অংশগ্রহণকারী আলমগীর মিয়া জানান, ব্যাডমিন্টন খেলার কোর্টের মতো মোরগ লড়াইয়ের জন্য একটি কোর্ট বানানো হয় মাটিতে দাগ টেনে। এর দুপাশে নিজ নিজ মোরগ নিয়ে অবস্থান নেয় দুজন।

যুবরাজকে হারিয়ে বাদশার জয়জয়কার

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ৭টি লড়াই অনুষ্ঠিত হয়। উভয় দল কমপক্ষে ৯টি যোদ্ধা মোরগকে প্রস্তুত রাখে। ৭টি ম্যাচের জন্য ৭টি এবং আহত মোরগের বদলী যোদ্ধা হিসাবে আরও দুটি মোরগ রাখা হয়।

বিজয় দিবসের এই লড়াইয়ে ভাদুঘর গ্রামের আব্দুল লতিফের মোরগ ‘যুবরাজের’ সঙ্গে ফাইনালে লড়ে জয়ী হয় আলমগীরের মোরগ ‘বাদশা’।

ভাদুঘরের আব্দুল লতিফ বলেন, ‘আমার মোরগটি যথেষ্ট সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করেছে। তবে শেষ দিকে এসে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। তবে খেলাটা শখের হওয়াতে আমরাও বেশ উপভোগ করি।’

যুবরাজকে হারিয়ে বাদশার জয়জয়কার

মোড়গ লড়াই দেখতে আসা মুসলিমা বেগম বলেন, ‘গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলা এই মোরগ লড়াই। দীর্ঘদিন পর মোরগ লড়াই উপভোগ করতে পেরে খুবই ভালো লেগেছে। আমার ছোট্ট মেয়ে নাভাও লড়াই দেখে খুব খুশি হয়েছে।’

মোরগ লড়াইয়ের আয়োজক জেলা প্রশাসক শাহগীর বলেন, ‘ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে ও দর্শনার্থীদের আনন্দ দিতে আমাদের এই প্রচেষ্টা। প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীদের ক্রেস্ট ও ১ হাজার টাকা করে সম্মানী দেয়া হয়েছে।’

আরও পড়ুন:
ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’
‘লাল মোরগের ঝুঁটি’ সিনেমার ট্রেইলার প্রকাশ
‘লাল মোরগের ঝুঁটি’র অ্যানিমেশন টিজার
সেন্সর পেল ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’
সেরা মোরগ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার

মন্তব্য

p
উপরে