করোনাভাইরাসের টিকা কেনা এবং তা প্রয়োগের ক্ষেত্রে সরকার যে হিসাব দিয়েছে, প্রকৃত খরচ তার চেয়ে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা কম বলে দাবি করেছিল ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সেই দাবি পুরোটা অনুমাননির্ভর বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির গবেষক।
বাংলাদেশ সরকার কার কাছ থেকে কত টাকা মূল্যে টিকা নিয়েছে, এসব বিষয়ে সংস্থাটির তথ্যের উৎস ইউনিসেফ কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন মার্কেট ড্যাশবোর্ড। এতে আন্তর্জাতিকভাবে সব টিকার দাম উল্লেখ করা হলেও বাংলাদেশ সেখানে উল্লিখিত দামেই যে টিকা পেয়েছে, সেই বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য নেই টিআইবির কাছে।
সরকার যে হিসাব দিয়েছে, তাতে ক্রয়, সংরক্ষণ, বিতরণ ও প্রয়োগ মিলিয়ে প্রতি টিকায় খরচ দাঁড়ায় ১ হাজার ৩৩৫ টাকার কিছু বেশি। অন্যদিকে টিআইবি যে দাবি করেছে, তাতে খরচ হয় ৬০০ টাকার কিছু বেশি।
এই খরচের হিসাব বের করতে যে গবেষণা করা হয়েছে, তার গবেষক মোহাম্মদ জুলকারনাইন নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন, তাদের তথ্য ‘অনুমাননির্ভর’। তিনি একাধিকবার এই কথাটি বলেছেন।
তবে গবেষকের এই বক্তব্যের বিপরীতে গিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান দাবি করেছেন, তারা অনুমানভিত্তিক তথ্য দেননি, প্রকাশিত নানা তথ্যের ভিত্তিতেই কথা বলেছেন।
এখন পর্যন্ত দেশে টিকা এসেছে ২৯ কোটি ৬৪ লাখ টিকা, এর মধ্যে প্রয়োগ হয়ে গেছে ২৫ কোটির বেশি। অবশ্য এই টিকার সবগুলো সরকারকে কিনতে হয়নি। উপহার হিসেবেও এসেছে লাখ লাখ ডোজ।
গত ১২ এপ্রিল টিআইবি সংবাদ সম্মেলন করে গবেষণার ভিত্তিতে টিকার খরচের তথ্য পাওয়ার কথা জানালেও কীসের ভিত্তিতে খরচের হিসাব করা হয়েছে, সেই তথ্য জানানো হয়নি।
তবে গণমাধ্যমে এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিরোধী পক্ষ সরকারের বিরুদ্ধে টিকার অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনেছে। আর প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস কড়া সমালোচনা করেছেন। বলেছেন, ‘আমাদের খালি চোর বলবেন, এটা তামাশা পাইছেন নাকি আপনারা? শুধু বাংলাদেশকে চোর বলবেন, এটা কি ফাইজলামি নাকি?’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, যেহেতু কথা উঠেছে, তাই কিছু দিনের মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হবে। এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করবেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
টিআইবির গবেষণায় তথ্য
গত ১২ এপ্রিল ‘করোনাভাইরাস সংকট মোকাবেলায় সুশাসন: অন্তর্ভুক্তি ও স্বচ্ছতার চ্যালেঞ্জ’ শিরোনামে এই গবেষণা প্রকাশ করে টিআইবি। এই গবেষণায় সংস্থাটি দাবি করেছে, দেশে টিকা ক্রয় ও বিতরণে ১১ হাজার থেকে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা হতে পারে।
বিশ্বজুড়ে ন্যায্যতার ভিত্তিতে টিকা বিতরণে কোভ্যাক্স রেডিনেস অ্যান্ড ডেলিভারি ওয়ার্কিং গ্রুপ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর টিকার পরিচালন ব্যয় সম্পর্কে একটি মডেল দাঁড় করিয়েছে। টিকা কার্যক্রমের বিদ্যমান অবকাঠামো, জনবলের ব্যবহার এবং আউটরিচ কেন্দ্রের অনুপাত বিবেচনায় তারা প্রতি ডোজ টিকার একটি খচর নির্ধারণ করা হয়েছে।
সেই অনুয়ায়ী বিদ্যমান জনবল দিয়ে যদি কোনো দেশ টিকা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয় তাহলে দশমিক ৮৪ ডলার খরচ হবে প্রতি টিকায়। আর যদি টিকার জন্য আর ১০ শতাংশ জনবল নিয়োগ করতে হয় এবং ভ্রাম্যমাণ ও স্থায়ী টিকাকেন্দ্র যদি ৫০:৫০ হয় তাহলে ২ দশমিক ৬৪ ডলার পরিচালনা ব্যয় হতে পারে। প্রতি ডলার ৮৬ টাকা ধরলে টিকাপ্রতি ব্যয় হয় ২২৭ টাকা।
টিআইবি হিসাব করেছে, এভাবে টিকার ব্যবস্থাপনা খাতে খরচ হতে পারে পাঁচ হাজার কোটি টাকা।
অন্যদিকে যে টিকা আনা হয়েছে, সেটির দাম অনুমান করে ধরেছে ১১ হাজার ২৫৪ কোটি থেকে সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। অর্থাৎ টিআইবি টিকাপ্রতি দাম ধরেছে সাড়ে পাঁচশ টাকার মতো, যা ৭ ডলারেরও কম।
আমরা অনুমান করেছি: টিআইবির গবেষক
টিআইবি কীভাবে সরকারের টিকা ক্রয় ও ব্যবস্থাপনা খাতে খরচের তথ্য পেল জানতে চাইলে গবেষক মোহাম্মদ জুলকারনাইন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা একটি এস্টিমেশন (আনুমানিক হিসাব) করেছি। তাতে দেখা গিয়েছে, ১১ হাজার কোটি থেকে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা খরচ হতে পারে।’
অনুমানের ভিত্তিতে এত বড় অনিয়মের অভিযোগ আনা এই গবেষক বলেন, ‘আমরা সরকারের কাছে সুপারিশ করছি, আসলে কী কী বাবদ কত টাকা খরচ হয়েছে সেটা জনসম্মুখে প্রকাশ করলে সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে। তবে এটা যে অনিয়ম বা দুর্নীতি হয়েছে, বিষয়টা এমন নয়।’
অনুমানের ভিত্তি কী- এই প্রশ্নে টিআইবির গবেষক জুলকারনাইন বলেন, ‘টিকা কেনার সময় বিভিন্ন সোর্স থেকে টিকার যে দাম জানানো হয়েছে, সেটা নেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রাথমিক বা সেকেন্ডারি সোর্সের মাধ্যমে টিকা ক্রয়ে যে তথ্য পেয়েছি সেই তথ্যের ভিত্তিতে আমার এস্টিমেশন তথ্য প্রকাশ করেছি।’
চীনের সিনোফার্ম থেকে দেশে বড় সংখ্যক টিকা আসছে, এই টিকার দাম প্রকাশ করেনি সরকার তাহলে আপনারা যে তথ্য প্রকাশ করেছেন সেই তথ্যের ভিত্তি কী- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ের সরকারের প্রকাশিত তথ্য এবং আমাদের প্রাথমিক ও সেকেন্ডারি সোর্সের মাধ্যমে তথ্যে থেকে নেয়া হয়েছে। তবে এটা আমাদের এস্টিমেশন।’
গবেষক ও ইফতেখারুজ্জামানের বক্তব্য ভিন্ন
টিআইবির গবেষক তিন বার অনুমানের কথা উল্লেখ করলেও টিআইবি নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান দাবি করেছেন উল্টো। তিনি বলেন, ‘আমরা অনুমানের ভিত্তিতে কোনো তথ্য দেইনি। সিনোফার্ম টিকার দাম নির্ভরযোগ্য তথ্য থেকেই দিয়েছি।
‘যেহেতু সরকার টিকা ক্রয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্যে দেয়নি। আমরা যেটা ম্যাক্সিমাম পসিবল আন্তর্জাতিক সোর্সের মাধ্যমে যে তথ্যগুলো সহজলভ্য সেই তথ্যেগুলো থেকে ক্যাটাগরি ভাগ করে তথ্য সংগ্রহ করেছি দামের তথ্য প্রকাশ করেছি।’
সেই তথ্যের উৎস কী?-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ ও কোভ্যাক্স রেডিনেস অ্যান্ড ডেলিভারি ওয়ার্কিং গ্রুপের টিকার বিতরণ ও ব্যবস্থাপনা ব্যয় সম্পর্কে একটি মডেল দাঁড় করিয়েছে, সেখান থেকে টিকা ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের তথ্য নেয়া হয়েছে। টিকা ক্রয়ে তথ্য নেয়া হয়েছে ইউনিসেফ কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন মার্কেট ড্যাশবোর্ড থেকে। সেখানে আন্তর্জাতিকভাবে সব টিকার দাম উল্লেখ করা হয়েছে।
‘যেমন অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড টিকা ৫ ডলার, সিনোফার্মের ১০ ডলার, কোভ্যাক্সের মাধ্যমে যে টিকা এসেছে এটা ৫ দশমিক ৫ ডলার দাম উল্লেখ করে হয়েছে। এসব দাম একসঙ্গে করে ম্যাক্সিমাম দাম ধরে হিসেব করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ টিকা কিনতে টাকা পে করেছে সেটাও করা হয়েছে ইউনিসেফ কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন মার্কেট ড্যাশবোর্ডে।’
সিরামের টিকা ছিল কম মূল্যে, চীনের টিকার দাম অনেক বেশি
করোনার টিকা যখন ভারতীয় কোম্পানি সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে কেনা হয়, তখন সরকার তার ব্যয় প্রকাশ করেছিল। ৪ ডলার ভিত্তিমূল্য ধরে টিকা কেনা হয়। তবে এতে উল্লেখ ছিল, ভারত সরকার যে দরে টিকা কিনবে, সেটি যদি ৪ ডলারের কম হয়, তাহলে বাংলাদেশ সেই দামেই টিকা পাবে। আর যদি ভারত সরকার ৪ ডলারের বেশিতে টিকা কেনে, তাহলে বাংলাদেশ ৪ ডলারই দেবে। পরে এই কোম্পানিটি যখন টিকা সরবরাহে সফল হয়নি, তখন সরকার চুক্তি করে চীনের সঙ্গে।
প্রথমে জানানো হয়, চীনের টিকার দাম পড়ে সিরামের টিকার দ্বিগুণেরও বেশি, ১০ ডলার। তবে বিষয়টি প্রকাশ হয়ে যাওয়ার পর চীন টিকা চুক্তি বাতিলের হুমকি দেয়। কারণ, তারা অন্যান্য দেশে আরও বেশি দামে টিকা বিক্রি করেছে, বাংলাদেশকে তারা বিশেষ ছাড় দেয়। পরে চীনের শর্ত মেনেই টিকা কেনায় কত টাকা ব্যয়- এ বিষয়ে আর কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
অবশ্য চীনের কাছ থেকে টিকা আসার পর বিশ্বজুড়ে ন্যায্যতার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা জোট কোভ্যাক্স থেকে ভর্তুকি মূল্যে সরকার কোটি কোটি টিকা পেয়েছে। তবে টিকাপ্রতি ব্যয় কত, সেটি আর জানানো হয়নি।
চীনের কাছ থেকে টিকা কেনার সময় দাম ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর গোপনীয়তা রক্ষা করতে না পারায় সে সময় সরকারের সমালোচনাও হয়েছে।
সরকার কী বলছে
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম প্রধান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘টিকা ক্রয় এবং সার্বিক কার্যক্রম নিয়ে মন্ত্রী যে হিসাব তুলে ধরেছেন সেটি নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো সুযোগ নেই। কোন টিকা কী পরিমাণ দেশে আসছে এবং তার কত টাকা দান সেটা হিসাব একবারে পরিষ্কার। এখানে আড়াল করার কিছু নেই।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আহমেদুল কবীর বলেন, ‘যেহেতু স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথ্য দিয়েছেন, অবশ্যই সঠিক তথ্যই তিনি দিয়েছেন।’
টিকার ব্যয়ের তথ্য প্রকাশ করবেন কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।’
তবে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম জানান এই হিসাব প্রকাশ করা হবে। তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক দেশের বাইরে অবস্থা করছেন। তিনি দেশে ফিরলে এই বিষয়ে একটি সংবাদ সম্মেলন করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সরকারের অবস্থান তুলে ধরবেন।’
অনুমানের ভিত্তিতে টিআইবির এই হিসাব প্রকাশের বিষয়টি জানালে এ নিয়ে কিছু বলতে রাজি হননি মহাপরিচালক। তিনি বলেন, ‘টিআইবি যেহেতু একটি আন্তর্জাতিক তথ্যের বরাত দিয়ে তথ্য দিয়েছে, এ বিষয়ে আমরা এখনই কোনো বক্তব্য দিতে চাই না। কিছু দিনের মধ্যে সরকারের জায়গা থেকে টিকা দামের সঠিক তথ্য জানানো হবে।’
আরও পড়ুন:
চা পান করতে কমবেশি সবাই পছন্দ করে। তবে সারা দেশে এবার তীব্র দাবদাহ চলায় স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা মাথায় রেখে চাপ্রেমীরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। বিশেষজ্ঞরাও এ সময় ঘনঘন চা পান করা থেকে বিরত থাকতে বলছেন।
তবে চাপ্রেমীদের কাছে তা মানা কিছুটা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। এ জন্য অনেকেই প্রশ্ন করছেন গরমে ঠিক কত কাপ চা পান স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
ভারতের কলকাতার বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ শর্মিষ্ঠা রায় দত্তের কাছে এ বিষয়ে জানতে চায় ইন্ডিয়া টাইমস। তিনি বলেন, ‘চা হলো অত্যন্ত রিফ্রেশিং একটি পানীয়। তাই হাজার চাপের মধ্যে এক কাপ চা খেলে মাথা হালকা হয়, দুশ্চিন্তা কমে। শুধু মানসিক প্রশান্তি আনার কাজেই নয় নিয়মিত চা খেলে হার্ট ভালো থাকে।’
তবে এই তাপপ্রবাহে গরম চা এড়িয়ে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে বলে মত এ পুষ্টিবিদের। তার ভাষ্য, ‘না হলে পেটের সমস্যা বাড়তে পারে। তবে এতসব কথা জানার পরও যারা গরম চা পান করতে আগ্রহী তারা একদম সকাল-সকাল এক কাপ ধূমায়িত চা পান করতে পারেন।’
গরমে শরীরের খেয়াল রাখতে চাইলে গরম চা পান করার পরিবর্তে ঠাণ্ডা চা বা কফি পান কর যেতে পারে। তাতেই শরীর ঠাণ্ডা থাকবে বলে জানিয়েছেন শর্মিষ্ঠা রায় দত্ত।
দুধ-চিনি ছাড়া চা পান করতে পারলে বিষয়টি আরও ভালো। চায়ের সঙ্গে দুধ মিশিয়ে খেলে এই পানীয়টির অ্যান্টি অক্সিডেন্ট নষ্ট হয়ে যায়। ফলে চা পান করে আর তেমন কোনো উপকার আসে না উল্টো গ্যাস-অ্যাসিডিটির সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই গরমকাল অথবা সারা বছর; দুধ চা পান করা এড়িয়ে চলা ভালো। তার বদলে সুস্থ থাকতে বরং রং চা পান করলে মিলবে উপকার।
তবে সারা দিন অথবা তাপপ্রবাহে ঠিক কত কাপ চা পান করা ভালো তা একান্তই নিজের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। শরীরে বেশি কষ্ট অনুভব করলে তখন নিজের থেকেই চায়ের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া ভালো। নিজের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয় এমন কোনো অভ্যাসই ধরে রাখা ভালো নয়।
দেশজুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহ ও উত্তপ্ত তাপমাত্রার কারণে শিশুদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়ে ইউনিসেফ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির বাংলাদেশ প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট।
বুধবার ইয়েট এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আপনার প্রতিবেশিদের দিকে নজর রাখুন- দুর্বল পরিবার, প্রতিবন্ধী শিশু, গর্ভবতী নারী এবং বৃদ্ধরা তাপপ্রবাহের সময় অসুস্থতা বা মৃত্যুর উচ্চ ঝুঁকিতে থাকে। সময় নিয়ে প্রতিবেশীদের খোঁজখবর নিন, বিশেষ করে যারা একা থাকেন।’
ইউনিসেফের ২০২১ সালের শিশুদের জলবায়ু ঝুঁকি সূচক (সিসিআরআই) অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের ‘অত্যন্ত উচ্চ ঝুঁকিতে’ রয়েছে বাংলাদেশের শিশুরা।
ইউনিসেফের মতে, তাপমাত্রার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করে, বিশেষ করে নবজাতক, শিশু এবং ছোট বাচ্চাদের জন্য যারা তাপজনিত অসুস্থতা যেমন হিট স্ট্রোক এবং ডিহাইড্রেশনের কারণে বিশেষভাবে ডায়রিয়া ঝুঁকিপূর্ণ জনসংখ্যা হিসেবে বিবেচিত হয়।
ইয়েট বলেন, ‘যেহেতু শিশুদের ওপর ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার প্রভাবের উদ্বেগের কারণে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আগামী ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে, তাই ইউনিসেফ অভিভাবকদের তাদের সন্তানদের হাইড্রেটেড ও নিরাপদ রাখতে অতিরিক্ত সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।’
এই তাপপ্রবাহের তীব্রতা জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব থেকে শিশুদের রক্ষা করার জন্য জরুরি পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়।
তাপমাত্রা নজিরহীনভাবে বাড়তে থাকায় অবশ্যই শিশু এবং সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সুস্থতাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে বলে জানান ইয়েট।
এই তাপপ্রবাহ থেকে ইউনিসেফ কর্মী, বাবা-মা, পরিবার, যত্নগ্রহণকারী এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে শিশু ও গর্ভবতী নারীদের রক্ষায় নিচের পদক্ষেপগুলো নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে-
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
প্রাথমিক চিকিৎসা
যদি কোনো শিশু বা গর্ভবতী নারীর হিটস্ট্রেসের লক্ষণগুলো দেখা যায়, যেমন- মাথা ঘোরা, অতিরিক্ত ঘাম, বমি বমি ভাব, হালকা জ্বর, নাক দিয়ে রক্তপাত, পেশি খিঁচুনি, ফুসকুড়ি ইত্যাদি; ওই ব্যক্তিকে ভালো বায়ু চলাচলসহ শীতল, ছায়াযুক্ত জায়গায় রাখুন এবং ভেজা তোয়ালে বা শীতল পানি দিয়ে শরীর মুছে দিন।
পানি বা ওরাল রিহাইড্রেশন লবণ (ওআরএস) গ্রহণ করুন।
হিটস্ট্রেসের গুরুতর লক্ষণগুলোতে (যেমন: বিভ্রান্তি বা প্রতিক্রিয়া জানাতে অক্ষমতা, অজ্ঞান হওয়া, শরীরের উচ্চ তাপমাত্রা, দ্রুত হৃদস্পন্দন, খিঁচুনি এবং চেতনা হ্রাস) হলে জরুরিভিত্তিতে হাসপাতালে নেয়া প্রয়োজন বলে জানিয়েছে ইউনিসেফ।
যশোর-চুয়াডাঙ্গার পাশে হওয়ায় প্রতিদিনই মাগুরায় বাড়ছে তাপদাহ। তাপদাহের ফলে পুড়ছে মাঠ-প্রকৃতিসহ প্রাণীকুল। গরমে কোথাও স্বস্তি নেই। তাপদাহ বৃদ্ধির কারণে বেশি ভুগছে জেলার শিশু ও বৃদ্ধরা।
সরজমিনে মাগুরা সদর হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, শিশু ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। অনেকে সিট না পেয়ে অবস্থান নিয়েছেন মেঝেতে। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয়েছেন অনেক বয়স্ক রোগীও। তাদের কষ্ট আরও বাড়িয়েছে লোডশেডিং।
সোমবার সকাল থেকে মাগুরা ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালে শিশু ও অন্যান্য ওয়ার্ডগুলোতে অতিরিক্ত গরমে আক্রান্ত রোগীর ভিড় বাড়তে শুরু করে। গত এক সপ্তাহের মধ্যে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি এসেছে এ হাসপাতালে।
এরমধ্যেই রোগীর চাপ সামাল দিতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে কর্র্তপক্ষ। ফলে বাধ্য হয়ে ওয়ার্ডের বাইরে মানুষের চলাচলের রাস্তার মেঝেতে থাকছেন অনেক রোগী।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তথ্যানুসারে, মাগুরা ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালে বর্তমানে ৪৩৪ জন ভর্তি রয়েছেন। সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৪১টি শিশুই ভর্তি হয়েছে সেখানে, যাদের অধকিাংশই গরমজনতি বিভিন্ন রোগে (ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট ও জ্বর) ভর্তি হয়েছেন।
শহরের খাঁপাড়া থেকে আসা অনন্যা রহমান তার মেয়েকে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করেছেন। তিনি জানান, গত পাঁচ দিন ধরে তার দুই মাসের শিশুর পাতলা পায়খানা ও জ্বর। পরে হাসপাতালে এসে জানতে পারেন, শিশুটির নিউমোনিয়া হয়েছে।
পৌরসভার কাদিরাবাদ গ্রামের আবু মিয়ার নাতনির তিন দিন ধরে পাতলা পায়খানা ও বমি এবং জ্বর, কিন্তু শয্যা না থাকায় হাসপাতালের বারান্দার মেঝেতে নানতির চিকিৎসা করাচ্ছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘একদিকে বিদ্যুৎ নেই, অন্যদিকে বাতাস চলাচলের জন্য ওয়ার্ডের কোনো একটা জানালা যে খুলব, সে উপায়ও নেই। ফলে প্রচণ্ড গরমে শিশুটি ছটফট করছে। আমাদের অবস্থাও তাই। হাতপাখা চালিয়ে গরম নিবারণ করা যাচ্ছে না।’
হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সাজিয়া আক্তার বলেন, ‘ডায়রিয়া পানিবাহিত রোগ। দূষিত পানি পান করার মাধ্যমে এ রোগ হয়। সাধারণত দিনে ৩ বা এর চেয়ে বেশিবার পাতলা পায়খানা হতে শুরু করলে তার ডায়রিয়া হয়েছে বলে ধরে নেয়া যায়।
‘গরম এলেই ডায়রিয়ার সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করে। বিশেষ করে শিশু-কিশোররা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়।’
এ বিষয়ে ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. মোহসিন উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অতি গরমে হাসপাতালে দিন দিন শিশুসহ অন্যান্য রোগী বাড়ছে।’
এক্ষেত্রে পানি ও তরল জাতীয় খাবার খাওয়ার পরার্মশ দেন এই চিকিৎসক। বলেন, ‘হাসপাতালে গরমে শিশু রোগীর সংখ্যা বেশি বেড়ে যাওয়ায় আমরা খুবই চিন্তিত। এ কারণে শিশু রোগীদের প্রতি বিশেষ নজর দেয়া হচ্ছে।’
আরও পড়ুন:চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে দেশের স্কুল-কলেজগুলোতে এক সপ্তাহের ছুটি দেয়া হয়েছে। স্কুলে আরও এক সপ্তাহ ছুটির নির্দেশ আসছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।
তিনি বলেছেন, ‘আমি শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি, আমরা আরও এক সপ্তাহ স্কুলগুলোকে বন্ধ করার নির্দেশ দিচ্ছি। আমাদের কিছু নির্দেশনা আছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সেগুলো সব জায়গায় দেয়া হবে।
শনিবার দুপুরে সাভারের সিআরপি নার্সিং কলেজের ভবন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তিনি। অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বয়স্ক ও শিশুরা যেন প্রয়োজন না থাকলে ঘরের বাইরে না যায়। আর বাকি যে নির্দেশনাগুলো সেগুলো আজকেই চলে যাবে। স্কুল বন্ধ হয়ে যাবে।’
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ঢাকা শিশু হাসপাতালের কার্ডিয়াক ইউনিটের ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তিনি বলেন, ‘এ বিষয়টি আমরা তদন্ত করতে বলেছি। আজকেই তদন্ত হবে।’
স্বাস্থ্যখাতে কী কী চ্যালেঞ্জ রয়েছে, জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রথম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, আমি সাধারণ মানুষের কাছে চিকিৎসা ব্যবস্থা পৌছে দেব। প্রত্যেকটা হেলথ কমপ্লেক্সকে, কমিউনিটি ক্লিনিককে উন্নত করতে হবে যেন সাধারণ মানুষ গ্রামেই চিকিৎসা পায়।’
সাভার ও ধামরাই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বেড সঙ্কট নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে এটাকে করা যায় কি না, তা নিয়ে কাজ করব।’
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন সিআরপি প্রতিষ্ঠাতা ড. ভ্যালেরি টেইলর, সিআরপির নির্বাহী পরিচালক ড. মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
এর আগে, শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ২১ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সাত দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
তারও আগে দেশজুড়ে চলমান দাবদাহের কারণে সরকারি প্রাথমিক স্কুলে অ্যাসেম্বলি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
পরবর্তীতে শনিবার বিকেলে মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজও সাত দিন বন্ধ থাকার সিদ্ধান্তের কথা জানান মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) উপ-পরিচালক (কলেজ-১) মো. ওয়াহিদুজ্জামান।
পরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোর ক্লাস বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল-হোসেন বলেছেন, ‘পরবর্তী তারিখ ঘোষিত না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোর ক্লাস বন্ধ থাকবে।’
তবে ক্লাস বন্ধ থাকলেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সব পরীক্ষা বিদ্যমান সময়সূচি অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান তিনি।
গত কয়েক দিন ধরে তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে দেশ। এর মধ্যে যশোর ও চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ।
শনিবার যশোরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এদিন চুয়াডাঙ্গার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রাজধানী ঢাকাও চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা অনুভব করেছে আজ। এদিন ঢাকায় মৌসুমের সর্বোচ্চ ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
দেশের বিভিন্ন স্থানে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। শনিবার হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে চুয়াডাঙ্গা ও পাবনায় দুজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন:রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের কার্ডিওলজি বিভাগে শুক্রবার আগুন ধরেছে।
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণকক্ষের ডিউটি অফিসার লিমা খানম দুপুরে নিউজবাংলাকে জানান, বেলা একটা ৪৭ মিনিটে আগুন ধরার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাহিনীর পাঁচটি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজ করছে।
আগুনে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন এ কর্মকর্তা।
তিনি আরও জানান, আগুন ধরার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয় তদন্তের পর বলা যাবে।
বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রোববার ও সোমবার দুই ঘণ্টা কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) চট্টগ্রাম শাখা। বলা হয়েছে, এই দুদিন চিকিৎসকরা প্রাইভেট প্র্যাকটিসও করবেন না।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের সামনে চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠনের অংশগ্রহণে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়। সূত্র: ইউএনবি
বিএমএ চট্টগ্রাম জেলা সভাপতি অধ্যাপক ডা. মুজিবুল হক খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন, স্বাধীনতা প্রকাশ পরিষদ, চট্টগ্রাম প্রকাশ সমিতিসহ ৯টি সংগঠন অংশ নেয়।
বিএমএ নেতারা বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে চিকিৎসকরা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। বিচার না হওয়ায় চিকিৎসকদের ওপর হামলার ঘটনা বাড়ছে। চিকিৎসকরা তাদের কর্মস্থলে খুবই অনিরাপদ।
চিকিৎসকদের ওপর হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনারও দাবি জানান তারা।
মুজিবুল হক বলেন, ‘হামলার বিচার পাওয়ার জন্য আমরা পাঁচদিন অপেক্ষা করেছি। কিন্তু কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় আমরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছি।’
প্রসঙ্গত, ১০ এপ্রিল হৃদরোগে আক্রান্ত এক রোগীর চিকিৎসা দিতে দেরি হওয়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের হামলায় গুরুতর আহত হন চট্টগ্রামের পটিয়া জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক রক্তিম দাস।
পরে ১৪ এপ্রিল ভুল চিকিৎসায় এক বছরের শিশুর মৃত্যুর অভিযোগে রোগীর স্বজনদের হামলায় রিয়াজ উদ্দিন শিবলু নামে আরেক চিকিৎসক আহত হন।
আরও পড়ুন:স্বাস্থ্যসেবায় চিকিৎসকদের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিদের আরও বেশি সচেতন হতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি বলেছেন, ‘কোনো চিকিৎসকের ওপর হামলা যেমন মেনে নেব না, তেমনই চিকিৎসায় কোন ধরনের অবহেলা হলে সেটাও মেনে নিতে পারব না।’
বুধবার বিকেলে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শন শেষে চিকিৎসদের নিয়ে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) চট্টগ্রামের পটিয়ায় চিকিৎসদের ওপর হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে চিকিৎসা কাজে চিকিৎসকদের আরও বেশি মনোযোগী ও আন্তরিক হওয়ার পরামর্শ দেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসকদের যেমন সুরক্ষা দেয়ার দায়িত্ব আমার, রোগীদের সুরক্ষা দেয়ার দায়িত্বও আমার। কোনো চিকিৎসকের বিরুদ্ধে পেশাগত দায়িত্ব পালনে অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘বাংলাদেশের চিকিৎসা সেবা বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের তুলনায় এগিয়ে আছে। বাংলাদেশের চিকিৎসা সেবা নিয়ে সম্প্রতি ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক ভূয়সী প্রশংসা করেন। ভুটান রাজার আমন্ত্রণে বাংলাদেশ সরকার ভুটানে বার্ন হাসপাতাল করার চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত করোনার টিকা নেয়ার পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে চর্ম রোগ দেখা দেয়া নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যে কোনো ড্রাগেই এলার্জি প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। তবে এ বিষয়টি আমি এখনও শুনিনি।’
এ সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত এমপি বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার করোনার প্রধান মুখপাত্র প্রফেসর ফলস-এর গবেষণায় এখনও এমন কোনো তথ্য উঠে আসেনি। তবে এমনও হতে পারে যে করোনার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো এখন দেখা দিচ্ছে।’
এর আগে চান্দিনার মাধাইয়া ইউনিয়নের সোনাপুর কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর একান্ত সচিব কমল কুমার ঘোষ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সারওয়ার হোসেন, কুমিল্লার জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান, জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান, জেলা সিভিল সার্জন ডা. নাছিমা আক্তার, চান্দিনা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা তপন বক্সী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাবের মো. সোয়াইব, পৌর মেয়র শওকত হোসেন ভূইয়া, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আরিফুর রহমান প্রমুখ।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য