কয়েকদিন আগেই উজানের ঢলে কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন হাওর এলাকায় পানি বেড়ে তলিয়ে গেছে হাজারও কৃষকের সারা বছরের ফসল। চোখের সামনেই ডুবে গেছে অনেকের জমি। দাঁড়িয়ে চোখের জল ফেলা ছাড়া কিছুই করার ছিল না। সেসময় অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকার এই জমিগুলোর ধান কাঁচা ছিল। তাই কাঁচি হাতে নিয়ে ফসল কাটা শুরু করলেও কোনো লাভ হতো না।
ধীরে ধীরে পানি বেড়ে এখন মূল হাওরের জমিগুলোও হুমকির মুখে পড়েছে। অনেক জমির ধান কাটার মতো উপযোগী হলেও শ্রমিক সংকটে তা কাটতে পারছেন না কৃষকেরা।
কিশোরগঞ্জে পানির এমন চাপ শুরু হয়েছিল ৩ এপ্রিল। সে সময় ইটনা উপজেলার বিভিন্ন নদী তীরবর্তী চর ও খালে বিলে চাষ হওয়া নিচু জমিগুলো ডু্বতে শুরু করে।
এরপর থেকে থেমে থেমে পানি শুধু বেড়েই চলেছে। নিচু জমিগুলো তলিয়ে যাওয়ার পর বেশ কয়েকটি মূল হাওরের জমির ফসলও তলিয়ে গেছে।
কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত কিশোরগঞ্জ জেলায় ৭৫০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে স্থানীয় কৃষক ও জনপ্রতিনিধিরা দাবি করছেন, ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি। আর ক্ষতিগ্রস্তদের বেশিরভাগই ইটনা উপজেলার।
সরেজমিনে দেখা যায়, ইটনা সদর ইউনিয়নের জিওলের বাঁধ আর মৃগা ইউনিয়নের তেরাইল্ল্যের বাঁধ রক্ষায় দিনরাত বাঁধেই সময় কাটাচ্ছেন বিভিন্ন গ্রামের কৃষকেরা। জিওলের বাঁধের পাশেই নির্মাণ করা হয়েছে আরেকটি বিকল্প বাঁধ। কৃষকরা বলছেন, পানি যেভাবে বাড়ছে তা অব্যাহত থাকলে বাঁধ সুরক্ষিত থাকলেও বিভিন্ন দিক দিয়ে পানি প্রবেশ করে হাওর তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
শুক্রবার ইটনা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা উজ্জল সাহা বলেন, ‘গত বুধবার ধনু নদীতে পানি বেড়েছে। এদিন রাতে এবং পরদিন সকালেও বৃষ্টি হয়েছে। আজকেও বৃষ্টি হয়েছে। এতে পানি বেড়েই চলেছে।’
তিনি জানান, বাঁধগুলো এখনও সুরক্ষিত থাকলেও পানির চাপ বাড়তে থাকায় বিভিন্ন দিক দিয়ে অল্প অল্প করে হাওরে পানি প্রবেশ করছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মূল হাওরে এখনও পানি ঢুকেনি। বাঁধগুলোও ঠিক আছে। আমাদের লোকজন সার্বক্ষণিক হাওরে থেকে কাজ করছে। আর কৃষকদেরকে পরামর্শ দিচ্ছি, তারা যেন দ্রুত তাদের জমির ফসল কেটে ঘরে তুলে নেন।’
কৃষি অফিস বলছে, যাদের জমির ধান ৭০-৮০ ভাগ পেকে গেছে তাদের ফসল দ্রুত কেটে নেয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।
কিন্তু কৃষি অফিসের এমন অনুরোধ থাকলেও ইতোমধ্যেই হাওরগুলোতে শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। দুশ্চিন্তাগ্রস্ত কৃষকেরা হন্যে হয়ে ধান কাটার শ্রমিক খুঁজে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু বেশিরভাগ শ্রমিকই এখন নিজের জমির ফসল তোলা নিয়ে ব্যস্ত।
মৃগা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দারুল ইসলাম বলেন, ‘হাওরের বেশিরভাগ জমির ফসল এখনও আধাপাকা। তারপরও ফসলহানির ভয়ে এই অবস্থায়ও ধান কাটছেন অনেকে।’
তিনি জানান, হাওরের ফসলি জমির ধান কাটার শ্রমিক আসে বিভিন্ন জেলা থেকে। অন্যান্য বছর টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ আর সিরাজগঞ্জ থেকে যে পরিমাণ শ্রমিক হাওরে ধান কাটতে আসেন সে তুলনায় এবার কম এসেছেন।
দারুল ইসলাম বলেন, ‘আবহাওয়া ভালো না থাকায় এবং জমিতে পানি ঢুকে যাওয়ার ফলে আধাপাকা ভেজা ধানে একদিনের কাজ তিনদিন সময় লাগছে। ফলে স্থানীয় শ্রমিকরা গত বছর যে মুজুরি নিয়েছেন এবার তার দ্বিগুণ দাবি করছেন।’
ইটনা সদর ইউনিয়নের কৃষক আসাদ মিয়া বলেন, ‘পানি যেভাবে বাড়ছে তাতে জমির ফসল যতটুকুই পেঁকেছে কেটে ফেলা দরকার। কিন্তু লোক না থাকায় আমরা বিপদে পড়েছি। স্থানীয় যেসব লোক ধান কাটে তারা মূলত নিজের খোরাকের জন্য চাষ করা জমির ফসল তুলে অতিরিক্ত সময়টিতে অন্যের জমিতে কাজ করে। কিন্তু এবার তো সবাই নিজেরটা নিয়েই ভয়ে আছে।’
জয়সিদ্দি গ্রামের কৃষক মুক্তাদির ইবনে মান্নান। ৩৫ একর জমি চাষ করেছেন তিনি। শ্রমিক সংকটে ভুগছেন তিনিও।
মুক্তাদির বলেন, ‘টাঙ্গাইল থেকে যে পরিমাণ শ্রমিক আসার কথা তার চেয়ে এবার কম এসেছেন। বর্তমানে স্থানীয় যেসব শ্রমিক আছে তাদের দিয়ে কৃষকদের চাহিদা পূরণ হচ্ছে না।’
মুক্তাদির জানান, সরকারি প্রণোদনার মাধ্যমে বেশ কয়েকটি ধান কাটার মেশিন এলাকায় থাকলেও জমিতে পানি ঢুকে গেলে সেগুলোও অচল হয়ে পড়বে।
রায়টুটী ইউনিয়নের কৃষক মাহিন মিল্কী জানান, অন্যান্য বছর বিভিন্ন জেলা থেকে ধান কাটার যে শ্রমিকেরা আসতেন এবার পানির খবর শুনে তারা অনেকেই আসেননি।
তিনি বলেন, ‘শুকনা থাকা অবস্থায় যে জমির ধান কাটতে শ্রমিক লাগে ১০ জন, জমিতে পানি থাকার কারণে সেখানে শ্রমিক প্রয়োজন হচ্ছে ২০-থেকে ৩০ জন। আর শুকনা থাকলে জমির ধান কেটে সরাসরি খলায় নিয়ে যাওয়া যেত। কিন্তু ভেজা থাকায় সে ধান খলায় নিতে একটানার কাজ তিনটানা লাগছে। পানিতে নেমে ধান কাটায় মুজুরিও বেশি লাগছে।’
এলংজুরী ইউনিয়নের ছিলনী গ্রামের কৃষক মামুন মিয়া ২২ একর জমি চাষ করেছেন। শ্রমিক সংকটের জন্য তিনি নিজে টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকার শ্রমিকদের বাড়িতে গেছেন। অন্য বছরের তুলনায় এবার বাড়তি ধানও দেয়ার প্রস্তাব দিলেও শ্রমিকরা আসতে রাজি হননি।
মামুন বলেন, ‘গতকালও তাদের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেছি। বাড়তি টাকার প্রস্তাবে রাজি হয়েও পানির খবর শুনে তারা ঘুরে গেছেন। আর স্থানীয় যেসব শ্রমিক আছেন তাদের নিয়ে এখন সবার টানাটানি।’
একই গ্রামের ধান কাটা শ্রমিক শামীম মিয়া। গ্রামের উঠতি বয়সী কিছু যুবককে নিয়ে একটি জোগাল (শ্রমিকের দল) গঠন করেছেন। তিনি জানান, দলের লোকসংখ্যা কম। বিপরীতে লোকের চাহিদা অনেক বেশি। এ অবস্থায় অনেক আগে থেকে যেসব কৃষক বলে রেখেছেন, তাদের সিরিয়াল দেয়া আছে। তাই বর্তমানে অনেকে ধান কাটার প্রস্তাব নিয়ে আসলেও তাদের ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে।
শামীমের জোগাল ছাড়াও ওই গ্রামে আরও বেশ কয়েকটি জোগাল রয়েছে। তারাও পুরোদমে ব্যস্ত ধান কাটায়।
শামীম বলেন, ‘বাইরের জেলা থেকে শ্রমিক না আসলে স্থানীয় শ্রমিকরা ১০০ ভাগের ১০ ভাগ জমিও কেটে শেষ করতে পারবে না।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১৩ উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৪১৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে শুধু হাওরেই রয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. ছাইফুল আলম জানান, কিশোরগঞ্জ জেলায় এখন পর্যন্ত ৪৩ ভাগ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে।
ধান কাটার জন্য কৃষকদের এ পর্যন্ত ২২৮টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার ও ২২টি রিপার মেশিন দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আশা করি, শ্রমিক সংকট কেটে যাবে। পুরো হাওরের ধান কাটা হতে শেষ হতে আরও ১৫ দিন সময় লাগতে পারে।’
আরও পড়ুন:চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমের শুরু থেকেই উচ্চ তাপমাত্রায় আলোচনায় রয়েছে চুয়াডাঙ্গা জেলা। মৃদু, মাঝারি, তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপমাত্রা দেখছে জেলাবাসী। মাঝে তাপমাত্রা সামান্য কমলেও ফের অতি তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে দেশের পশ্চিমের এই জেলা।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানায়, বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তার মানে জেলায় আবারও অতি তীব্র তাপপ্রবাহের কবলে পড়েছে এই জেলা।
আগের দিন বুধবারও এখানে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। ওইদিন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তার আগের দিন তাপমাত্রা নেমেছিল ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। সেই তীব্র তাপপ্রবাহ বৃহস্পতিবার এসে অতি তীব্র তাপপ্রবাহে রূপ নিয়েছে।
জেলা জুড়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহে জনজীবনে অস্বস্তি আরও বেড়েছে। স্বস্তি মিলছে না কোথাও। তীব্র গরমে একটু স্বস্তি পেতে দিনের অধিকাংশ সময় মানুষ গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিচ্ছে।
গরমের প্রভাবে বাড়ছে রোগবালাই। গরমজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে হাসপাতালে। তীব্র তাপদাহে ব্যাহত হচ্ছে কৃষিকাজ। শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষ কাজে যেতে পারছে না। নষ্ট হচ্ছে ধান, কলা, আম, লিচুসহ মৌসুমী ফসল।
গোপালপুর গ্রামের কৃষক হান্নান আলী বলেন, ‘এই তাপে মাটে উঠতি ফসল নষ্ট হয়ি যাচ্চি। আর রোদির তাতে মাটে দাঁড়ানু যাচ্চি না। ধানের ক্ষেতে বেশি সেচ লাগচি। তাও আবার দিনের বেলায় পাম্পে পানি উটচি না। রাতি দিতি হচ্চি।’
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, ‘আজ (বৃহস্পতিবার) তাপমাত্রা কয়েক ডিগ্রি বেড়েছে। জেলায় তীব্র তাপপ্রবাহ রূপ নিয়েছে অতি তীব্র তাপপ্রবাহে। সহসা বৃষ্টি হওয়ার কোনো পূর্বাভাস নেই। চলতি এপ্রিল মাসের শেষ দিন পর্যন্ত আবহাওয়ার এমন পরিস্থিতি থাকতে পারে।
আরও পড়ুন:কক্সবাজারের টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপে ঘরে ঢুকে এক নারী ও তার মেয়েকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
গত সোমবারের ঘটনায় বৃহস্পতিবার টেকনাফ মডেল থানায় অভিযোগটি করেন ছেনুয়ারা বেগম নামের নারী।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, গত সোমবার রাত দুইটার দিকে শাহপরীর দ্বীপের পূর্ব উত্তরপাড়া এলাকার নুর মোহাম্মদের স্ত্রী ছেনুয়ারা বেগমের ঘরের দরজা ভেঙে আয়ুব খানের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন প্রবেশ করেন। তারা ছেনুয়ারা ও তার মেয়ের হাত-পা বেঁধে মুখে কাপড় ঢুকিয়ে এলোপাতাড়ি লাথি ও ঘুষি মারেন। একপর্যায়ে মা ও মেয়ে উভয়কে বিবস্ত্র করেন আইয়ুব ও তার লোকজন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, হামলাকারীরা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে স্বর্ণ ও টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যান। যাওয়ার সময় তাদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের বিষয়ে কাউকে জানানো হলে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে চলে যান৷
এ বিষয়ে ছেনুয়ারা বেগম বলেন, ‘সন্ত্রাসী আয়ুব খানের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন যুবক আমার বাড়িতে ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রবেশ করে। পরে বাড়ি থেকে আমাকে জোরপূর্বক কয়েকজন লোক বের করে রশি দিয়ে বেঁধে রাখে এবং আমার মেয়েকে নির্যাতন করে স্বর্ণ ও টাকা নিয়ে যায়। তাদের বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া বিষয়ে কাউকে বললে মেরে ফেলা হবে বলে চলে যায়।’
থানায় অভিযোগের পর আয়ুব হুমকি দিয়েছে জানিয়ে ছেনুয়ারা বলেন, ‘সেই আয়ুব খান মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বলে, মামলা হলে কী হবে? জামিন নিয়ে বাহির হয়ে আমাকে আর আমার মেয়েকে মেরে ফেলা হবে বলে প্রাণনাশের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। এ বিষয়ে আমি টেকনাফ মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি।’
এ বিষয়ে সাবরাং ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রেজাউল করিম রেজু বলেন, ‘আমি বিষয়টি শুনেছি এবং সঠিক তদন্ত করে পুলিশকে সহযোগিতা করব।’
অভিযোগ তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ সোহেল বলেন, ‘আমি ঘটনার সত্যতা পেয়েছি এবং আমি মামলা করার জন্য ওসি বরাবর সুপারিশ করেছি।’
টেকনাফ মডেল থানার ওসি ওসমান গণি বলেন, ‘আরও গভীরভাবে তদন্ত করে দোষীদের গ্রেপ্তার করা হবে।’
আরও পড়ুন:চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে সোনামসজিদ স্থলবন্দরে দ্বায়িত্ব পালনকালে এক ট্রাফিক পুলিশ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মারা যাওয়া ওই ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের নাম রুহুল আমিন। যশোরের বেলাপোল পৌরসভার শর্শার কোরবান আলীর ছেলে তিনি।
শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) সাজ্জাদ হোসেন জানান, সোনামসজিদ স্থলবন্দরের পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের মধ্যে ট্রাক পরিদর্শন শেষে দুপুর পৌনে ১টার দিকে নিজ অফিস কক্ষে ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়েন রুহুল আমিন। এ সময় তাকে তার সহকর্মীরা দ্রুত শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে, চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষনা করেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন এসএম মাহমুদুর রশিদ জানান, ট্রাফিক ইন্সপেক্টর রুহুল আমিনকে উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে যখন নিয়ে আসা হয়, তার আগেই তার মৃত্য হয়েছে।
তিনি বলেন, হাসপাতালে যারা নিয়ে এসেছিলেন তারা বলেছেন তিনি তৃষ্ণার্ত ছিলেন, পানি খেতে চেয়ে ছিলেন। তবে তার মৃত্যু যে হিট স্ট্রোকে হয়েছে এটা নিশ্চিত করে এখনই বলা যাবে না।
মাহমুদুর রশিদ বলেন, এখন যেহেতু প্রচণ্ড গরম চলছে তাই এটার প্রভাব থাকতেও পারে। সেই সাথে তার আগের অন্য কোনো রোগের ইতিহাসও আমাদের জানা নাই। তাই হিট স্ট্রোকে মৃত্যু হয়েছে, এ সিদ্ধান্ত এখনই নেয়া যাবে না।
রাজশাহীর বাগমারায় ভাড়া বাসায় আটকে রেখে এক মাস ধরে এক তরুণীকে ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।
বুধবার রাতে উপজেলার তাহেরপুর পৌর এলাকার হরিফলার মোড়ের একটি বাসা থেকে ওই তরুণীকে উদ্ধার ও এ ঘটনায় অভিযুক্ত একজনকে আটক করেছে পুলিশ।
আটক রাজু হোসেন (২৫) পেশায় চা দোকানি। তিনি তাহেরপুর পৌরসভার হরিফলা মহল্লার আবদুর রাজ্জাক শাহের ছেলে।
পুলিশ জানায়, অসুস্থ অবস্থায় তরুণীকে বাগমারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়ার পর রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) স্থানান্তর করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ওই তরুণীর বাড়ি ফরিদপুর জেলায়। ফোনে রাজুর সঙ্গে তার পরিচয় ও প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত ২৪ মার্চ বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফোনে ভুক্তভোগী তরুণীকে তাহেরপুরে নিয়ে আসেন রাজু। পরে তাকে নিয়ে ভাড়া বাসায় ওঠেন রাজু। সেখানে আটকে রেখে এক মাস ধরে রাজু ওই তরুণীকে ভয় দেখিয়ে ও মারধর করে ধর্ষণ করেন।
এক পর্যায়ে নির্যাতনের শিকার তরুণী অসুস্থ হয়ে পড়লে পাশের বাড়ির লোকজন টের পেয়ে স্থানীয় কাউন্সিলরকে জানান। তিনি থানায় খবর দিলে বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ ওই বাসা থেকে তরুণীকে উদ্ধার করে। পরে ওই এলাকা থেকে রাজুকে আটক করে পুলিশ। রাতেই তরুণী বাদী হয়ে অপহরণ, ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা করেন।
রাজশাহী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও মুখপাত্র রফিকুল আলম জানান, মেয়েটার ওপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। আটক তরুণের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ তদন্ত করছে। তদন্ত শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে পদ্মা নদীতে বুধবার রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সময় দুটি ড্রেজার জব্দ করেছে নৌ-পুলিশ।
মাওয়া নৌ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের খবর পেয়ে উপজেলার মেদিনীমণ্ডল ইউনিয়নের যশিলদিয়ায় বুধবার রাত দেড়টার দিকে পদ্মা নদীতে অভিযান চালানো হয়। ওই সময় নিয়ম অমান্য করে বালু উত্তোলন করায় ওই দুটি ড্রেজার জব্দ করা হয়।
তিনি আরও জানান, ড্রেজার জব্দ করার সময় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। জব্দকৃত ড্রেজার দুটির বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মেহেরপুরের গাংনীতে সেচ পাম্পের সুইচ দিতে গিয়ে বিদুৎস্পৃষ্ট হয়ে আবদুল হান্নান (৭৫) নামের কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।
উপজেলার বামন্দী ইউনিয়নের দেবীপুর দক্ষিণপাড়ায় বৃহস্পতিবার সকাল নয়টার দিকে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে।
প্রাণ হারানো আবদুল হান্নান দেবীপুর দক্ষিণপাড়ার খোদা বক্সের ছেলে।
এসব তথ্য নিশ্চিত করে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য হিরোক আহমেদ বলেন, ‘আজ সকালে আবদুল হান্নান নিজ গ্রামের মাঠে অবস্থিত সেচ পাম্পের সুইচ দিতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টের শিকার হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন। পরে স্থানীয়রা মরদেহটি ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে নিজ বাড়ি দেবীপুরে নিয়ে আসে।’
বামন্দী পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) শরীফুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘বিদুৎস্পৃষ্টে মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে এসে প্রাথমিক তদন্ত শেষ করেছি। বতর্মানে মরদেহটি পরিবারের কাছে রয়েছে।’
নাটোরের বড়াইগ্রামে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে এক ভ্যানচালক নিহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার আগ্রান ঈদগাহ মাঠ এলাকায় বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের এই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ওই ভ্যানের এক যাত্রী।
নিহত মোজাহার আলী একই উপজেলার পারকোল গ্রামের মৃত শাহাদত আলীর ছেলে।
বনপাড়া হাইওয়ে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আলীমুল ইসলাম জানান, মহাসড়ক পার হওয়ার সময় দ্রুতগতির একটি ট্রাক ভ্যানটিকে চাপা দিয়ে চলে যায়। এতে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই ভ্যানচালক মোজাহার মারা যান। সেই সাথে ভানযাত্রী মিজান শেখ আহত হন।
তিনি বলেন, পরে স্থানীয়রা আহত মিজানকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
মন্তব্য