রাত দেড়টা। ফেরিঘাট থেকে মাঝিরঘাট-শরীয়তপুর সড়কে প্রায় দুই কিলোমিটারে যানবাহনের সারি।
ঘাট থেকে ৩০০ মিটার এগোতেই চোখে পড়ে কিছু ব্যক্তির সঙ্গে পণ্যবাহী ট্রাকচালকদের বিতণ্ডা। কাছাকাছি গিয়ে জানা গেল, ফেরিতে ওঠার সিরিয়ালের জন্য ট্রাকচালকদের কাছ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা করে দাবি করছেন ওই লোকজন।
গত রোববার শরীয়তপুরের মাঝিরঘাট ফেরিঘাটে চাঁদা আদায়ের এমন চিত্র দেখা যায়।
এ নিয়ে ট্রাকচালকদের একজন মো. রফিকের সঙ্গে কথা বলে নিউজবাংলা। তিনি বলেন, ‘ট্রাক নিয়ে বিকাল থেকে সিরিয়ালে দাঁড়ায়া ছিলাম। মাঝরাতে সিরিয়াল অনুযায়ী ফেরিতে ওঠার জন্য ট্রাক চালু করার সঙ্গে সঙ্গে ছয়-সাতজনের একটা দল আইসা ১২০০ টাকা চাঁদা দাবি করে।
‘টাকা দিতে না চাইলে তারা আমার গায়ে হাত তোলে। ট্রাকের দরজা খুলে বাইরে এনে মারপিটের চেষ্টা করে। পরবর্তীতে ১ হাজার টাকা দিয়ে ওখান থেকে বাইর হইয়া আসি। আমার মতো আরও বেশ কয়েকজন ড্রাইভারের সঙ্গে ওরা একই আচরণ করছে।’
রফিকের মতো অভিজ্ঞতা আছে অনেক চালকের। তাদের অভিযোগ, স্থানীয় শহীদ চেংগার নেতৃত্বে ঘাটে এমন চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটছে। প্রতিবাদ করলেই নির্যাতন সইতে হয় চালকদের।
দিনের বেলায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও রাত ১০টার পর ঘাটের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় স্থানীয় শহীদ চেংগা ও তার অনুসারীদের দখলে। সম্প্রতি এক ট্রাকচালককে করা নির্যাতনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে স্থানীয়দের মধ্যে।
১৮ সেকেন্ডের ওই ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, এক ট্রাকচালককে মাটিতে ফেলে লাঠিসোঁটা দিয়ে পেটাচ্ছে আট থেকে ১০ জনের দল। ওই ভিডিওর পরিপ্রেক্ষিতে ঘাট পরিস্থিতি জানতে গত রোববার রাতে মাঝিরঘাটে যায় নিউজবাংলা টিম।
সেখানে গিয়ে নিউজবাংলা জানতে পারে, রাত ১০টার পর থেকে ফেরির জন্য অপেক্ষায় থাকা পণ্যবাহী ট্রাক সিরিয়াল পাইয়ে দেয়ার কথা বলে ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ করে টাকার চুক্তি করেন শহীদ চেংগা ও তার সমর্থকরা। চুক্তি অনুযায়ী টাকা ঘাটে থাকা আরিফের ফলের দোকানে জমা দিতে হয়। টাকা তোলার পর চক্রের সদস্যরা নির্ধারিত ট্রাকগুলোকে রং সাইড দিয়ে ঘাটের দিকে নিয়ে আসেন। দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যও রং লাইনে আসা সেসব ট্রাক পারাপারের সুযোগ করে দেন।
নিউজবাংলা টিমের উপস্থিতি টের পেয়ে রাত ২টার দিকে শহীদ চেংগা ছুটে আসেন প্রতিবেদকের কাছে। প্রতিবেদককে সড়কের পাশে একটি দোকানের পেছনে নিয়ে নিয়মিত আর্থিক সুবিধা দেয়ার কথা বলেন শহীদ।
ওই সময় তিনি প্রতিবেদকের কাছে জানতে চান টাকাটা দৈনিক, সাপ্তাহিক নাকি মাসিক হারে দিতে হবে। এমন প্রস্তাবের জবাবে শহীদ চেংগাকে কৌশলে ম্যানেজ করে সড়কে চলে আসে নিউজবাংলা টিমের সদস্যরা। শহীদ চেংগাও পিছু নেন সংবাদকর্মীদের।
কিছুটা জনবহুল ও নিরাপদ এলাকায় আসার পর ঘাটে কেন চাঁদা আদায় করা হচ্ছে, কেনইবা ট্রাকচালকদের মারপিট করা হচ্ছে, তা জানতে চাওয়া হয় শহীদের কাছে। জবাবে নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘কে বা কারা চাঁদা আদায় করছে, আমি সে বিষয়ে কিছু জানি না। আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখেন। আমি বা আমার কোনো লোক এই ধরনের কাজের সঙ্গে জড়িত না।’
কী বলছেন ট্রাকচালকরা
চাঁদা নেন না বলে শহীদ যে দাবি করেছেন, তার বিপরীত বক্তব্য দিয়েছেন ট্রাকচালকরা। বরিশাল থেকে তরমুজবোঝাই ট্রাক নিয়ে ঘাটে আটকা পড়েন আমজাদ হোসেন।
তিনি জানান, দীর্ঘ সময় আটকে থাকার পর শহীদ চেংগার লোকজনকে ৯০০ টাকা দিয়ে ফেরিতে উঠতে পেরেছেন।
সড়কে থাকা অবস্থায় ভয়ে নিউজবাংলার সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি আমজাদ। ফেরিতে ট্রাক ওঠার পর তিনি বলেন, ‘ওদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। সারা রাত আটকা থেকেও অনেকে সিরিয়াল পায় না। আর ওদের টাকা দিলেই দ্রুত সময়ের মধ্যেই ফেরিতে ওঠার ব্যবস্থা হয়ে যায়। প্রকাশ্যে এমন চাঁদাবাজি চললেও দেখার কেউ নেই।’
মাছবোঝাই ট্রাক নিয়ে খুলনা থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে ঘাটে আটকে পড়া ইয়াসিন গাজী বলেন, ‘আমার ট্রাকটি সিরিয়ালে থাকলেও রং সাইড দিয়ে নতুন করে ঘাটে আসা যানবাহন পারাপার করছিল এখানকার একটি সংঘবদ্ধ চক্র। প্রতিবাদ করায় আমাকে চড়-থাপ্পড় মারে ওই চক্রের সদস্যরা। ওদের টাকা না দিলে ফেরিঘাটে সিরিয়াল পাওয়া যায় না।’
বিআইডব্লিউটিসি-পুলিশের ভাষ্য
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) জানায়, ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াতের জন্য মাদারীপুরের বাংলাবাজার ও শরীয়তপুরের মাঝিরঘাট ফেরিঘাট ব্যবহার করে দক্ষিণের ২১ জেলার মানুষ। গত বছর পদ্মা সেতুর সঙ্গে কয়েক দফা ধাক্কা লাগার ঘটনায় শিমুলিয়া-বাংলাবাজার রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়।
পরবর্তী সময়ে জরুরি প্রয়োজনীয় যানবাহন পারাপারের জন্য ওই বছরের আগস্টে বিকল্প হিসেবে মঝিরঘাটে ফেরিঘাট নির্মাণ করা হয়। ডিসেম্বর থেকে এ রুটে নিয়মিত যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। বর্তমানে ঘাটে থাকা তিনটি ফেরিতে প্রতিদিন ৪৫০ থেকে ৫৫০টি ছোট-বড় যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে।
মাঝিরঘাট ফেরিঘাটের দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক বিভাগের পরিদর্শক আরিফুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চাঁদাবাজি ও চালকদের নাজেহাল করার কিছু অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে আমরা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি।
‘জাজিরা থানা পুলিশকেও বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। ঘাট নিয়ন্ত্রণে পর্যায়ক্রমে ট্রাফিক পুলিশের ১০ জন সদস্য কাজ করে যাচ্ছে।’
বিআইডব্লিউটিসির ঘাট ব্যবস্থাপক মো. সালাউদ্দিন বলেন, ‘ফেরিঘাটে পন্টুনে যাত্রী বা চালকদের কোনো ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয় না। পন্টুনের বাইরে সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব পুলিশের।’
ঘটনার দিন ঘাটে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মোজাহিদুর রহমান লাবিবের কাছে রং সাইড দিয়ে গাড়ি ফেরিতে ওঠানোর বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়।
তিনি বলেন, ‘আমাদের নির্দেশনা আছে কাঁচা, পচনশীল পণ্যবাহী যানবাহনকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপারের। সেই ক্ষেত্রে রং সাইডে যে গাড়িগুলো আসে, সেগুলোকে ক্রস চেক করি। যেগুলো কাঁচা, পচনশীল সেগুলোকে যেতে দিই।’
ঘাটে চাঁদাবাজির অভিযোগ নিয়ে তিনি বলেন, ‘রাত ১০টার পরে পুরো ঘাটে দায়িত্বে থাকেন একজন এসআই ও একজন কনস্টেবল। মাত্র দুইজন পুলিশ সদস্য দিয়ে এত বড় ঘাট মনিটরিং কষ্টসাধ্য। এ কারণে আমাদের দৃষ্টির বাইরে অনেকে অনেক কিছু করে থাকতে পারে। দৃষ্টিসীমার মধ্যে যেকোনো ঘটনা আমরা প্রতিহত করি।’
এ বিষয়ে শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) এসএম আশ্রাফুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ফেরিঘাটে চাঁদাবাজির কোনো অভিযোগ পাইনি। ঈদে ঘরমুখো মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঘাট এলাকায় সব ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে। চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটে থাকলে তদন্ত করে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
আরও পড়ুন:প্রচ্ছায়া লিমিটেডের আট পরিচালকের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
দেশ ত্যাগে যাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে তারা হচ্ছেন: প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক বুশরা সিদ্দিক, শেহতাজ মুন্নাসী খান, শহিদ উদ্দিন খান, শাহিন সিদ্দিক, শফিক আহমেদ শফিক, পারিজা পাইনাজ খান, নওরিন তাসমিয়া সিদ্দিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারজানা আনজুম।
দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এই আদেশ দেন।
আবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা ও তাঁর ছোট বোনের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকী ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের নামে প্রায় ৫৯ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ সংক্রান্ত অভিযোগ অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সাত সদস্য বিশিষ্ট অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে।
প্রচ্ছায়া লিমিটেড নামীয় প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারহোল্ডারগণ যাতে সপরিবারে গোপনে দেশ ত্যাগ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি দেশত্যাগ করে বিদেশে পালিয়ে গেলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডপত্র প্রাপ্তিতে ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। তাছাড়া সার্বিক অনুসন্ধানকাজে বিঘ্ন সৃষ্টিসহ সমূহ ক্ষতির কারণ রয়েছে। এজন্য অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ যাত্রা রোধে আদালতের আদেশ দেয়া একান্ত প্রয়োজন। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়, খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সালাউদ্দিন, তার ভাই শেখ সোহেল ও শেখ জালাল উদ্দিন রুবেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিন দুদকের পক্ষে সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, বিগত সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অকল্পনীয় অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট এই ব্যক্তিরা তাদের নামে অবৈধভাবে অর্জিত সম্পত্তি হস্তান্তর করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন মর্মে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়।
তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে তদন্ত কার্যক্রম দীর্ঘায়িত বা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অভিযোগটি সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া একান্ত প্রয়োজন।
শুনানি শেষে আদালত তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন।
সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নামে রাজধানীর উত্তরায় থাকা একটি ফ্ল্যাট ও মোট ১৮ কাঠার তিনটি প্লট জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব দুদকের আবেদন মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন।
দুদকের আবেদন সূত্রে জানা যায়, হারুনের নামে থাকা পৃথক তিনটি প্লট রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত। এছাড়াও জব্দের আদেশ দেয়া ১৫৭০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটটিও উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত।
এদিন হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আবেদন করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন।
আবেদনে বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে শত শত কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে।
অনুসন্ধান চলাকালে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, তিনি এসব সম্পদ বিক্রয় বা হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন। এজন্য সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আদেশ দেয়া প্রয়োজন।
এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি হারুন অর রশিদের ১০০ বিঘা জমি, পাঁচটি ভবন ও দুটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে তার নামে বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি হিসাবে থাকা ১ কোটি ২৬ লাখ ৯০ হাজার ৪৬৮ টাকা অবরুদ্ধের আদেশ দেয়া হয়।
পাশাপাশি এদিনই তার ভাই এবিএম শাহরিয়ারের ৩০ বিঘা জমি জব্দ, ১১টি ব্যাংক হিসাব এবং তিনটি কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দেন ঢাকার আদালত।
রাজধানীর বনানীতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যা মামলার এজহারনামীয় আরও দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ বুধবার তাদের গাইবান্ধা ও চট্টগ্রাম থেকে পৃথক অভিযানে গ্রেপ্তার করে র্যাব ও পুলিশ।
এর মধ্যে এজাহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মো. মেহেরাজ ইসলামকে (২০) গাইবান্ধা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১৩ এবং ৩ নম্বর আসামি মাহাথির হাসানকে (২০) চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানা পুলিশ।
বিকেলে র্যাব সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মেহরাজ ইসলামকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। এছাড়া বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাসেল সারওয়ার মাহাথির হাসানের গ্রেপ্তারের বিষয়িটি দৈনিক বাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
র্যাব-১৩ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) বিপ্লব কুমার গোস্বামী জানান, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে জনা যায়, পাভেজ হত্যা মামলার এজহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মেহেরাজ ইসলাম গাইবান্ধায় অবস্থান করছে। পরে গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে গাইবান্ধা সদরের ভবানীপুর গ্রামে অভিযান চলানো হয়। অভিযানে এরশাদ হোসেন নামে এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে মেহরাজ ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে বনানী থানার ওসি মো. রাসেল সারওয়ার দৈনিক বাংলাকে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে পারভেজ হত্যা মামলার ৩ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি মাহাথির হাসানের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পরে গতকাল সকালে চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানায় আনা হয়েছে।
এর আগে গত রোববার রাতে পারভেজ হত্যা মামলায় তিন আসামিকে রাজধানীর মহাখালী ও আশপাশের এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা হলেন- আল কামাল শেখ ওরফে কামাল (১৯), আলভী হোসেন জুনায়েদ (১৯) এবং আল আমিন সানি (১৯)। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া গত সোমবার রাতে কুমিল্লার তিতাস উপজেলার মনাইরকান্দি গ্রাম থেকে হৃদয় মিয়াজি (২৩) নামে মামলার এজহারনামীয় আরেক আসামিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব ১ ও র্যাব-১১ ব্যাটালিয়নের যৌথ দল। পরে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তাকে বনানী থানায় হস্তান্তর করা হয়। সব মিলিয়ে পারভেজ হত্যা মামলায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকেল প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে একটি দোকানে ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রী সিঙ্গারা খাচ্ছিলেন। একই সময় পারভেজ তার বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার সময় হাসছিলেন। ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রীর অভিযোগ পারভেজ তাদের দেখে হাসছিলেন। তাদের মধ্যে একজন প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী পিয়াসের বান্ধবী। পরে বান্ধবীরা মুঠোফোনে খবর দিলে পিয়াস ও তার দুই বন্ধু মেহরাজ ও মাহথির এসে পারভেজের সঙ্গে তর্ক-বিতর্কে জড়ান। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।
একপর্যায়ে দুই পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টি মীমাংসার করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার পর পারভেজকে একদল যুবক ছুরিকাঘাত করে। তার বুকে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় পরদিন রোববার তার ভাই হুমায়ুন কবির প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বহিরাগতসহ আট জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত পরিচয় ২৫-৩০ জনের বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা করেন।
রাজধানীসহ সারাদেশে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ৬১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ৯০৬ জন আসামি এবং অন্যান্য ঘটনায় ৭০৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) ইনামুল হক সাগর এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, এসব অভিযানে বিভিন্ন ধরণের অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে- ১টি দেশীয় পাইপগান, ১টি একনালা বন্দুক, ১ রাউন্ড কার্তুজের খোসা ও ২ রাউন্ড অকেজো কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।
এর আগে গত সোমবার ২৪ ঘন্টায় সারাদেশে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ১ হাজার ৬৩১ জনকে। তার মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ১ হাজার ১৩ জন আসামি এবং অন্যান্য ঘটনায় ৬১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার আগে গত রোববার ২৪ ঘণ্টায় বিশেষ অভিযানে ১ হাজার ৫৩৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এ ধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি আগামীকাল।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দেখা যায় মামলাটি বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চে বিষয়টি আগামীকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে মূলতবি/নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে প্রধান বিচারপতি আলোচিত এই মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য এই হাইকোর্ট বেঞ্চে পাঠান।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এই ঘটনায় করা মামলার বিচার শেষে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত দুজনকে মৃত্যুদণ্ড, ছয়জনকে যাবজ্জীবন ও সাতজনকে খালাস দিয়ে রায় দিয়েছিলেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক বরখাস্ত লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত, সাগর দেব, রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানায় পুলিশের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
বিচারিক আদালতের রায়ের পরে নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের দণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। অন্যদিকে, দণ্ডিত আসামিরা আপিল ও জেল আপিল করেন।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলায় পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিবিতে থাকা নথি আগুনে পড়ে গেছে বলে দাবি করা হয়েছে, সঠিক নয়।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগে নতুন উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এমন তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচারিত সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথিপত্র ডিবি হেফাজতে পুড়ে যাবার তথ্যটি সঠিক নয়।’
‘সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তের সময় আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে কেউ কেউ ডিবির নথি পুড়ে যাওয়ার নিউজ করছেন, যা সঠিক না,’ যোগ করেন তিনি।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আদালতে আগুনে এসব নথি পুড়ে যাওয়ার কথা বলা হয়নি। এডিশনাল অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদ রউফ বলেছেন, ডিবির অধিকাংশ অফিসার বদলি হওয়ায় পুরনো নথি খুঁজে পাওয়া সময়সাপেক্ষ।’
‘এ জন্য রাষ্ট্রপক্ষ নয় মাস সময় চাইলে বাদীপক্ষ তিন মাস সময়ের কথা বলেন। পরবর্তীতে আদালত ছয়মাস সময় দেন,’ যোগ করেন তিনি।
এরআগে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ করা হয়েছে, সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার ডিবিতে থাকা নথি আগুনে পুড়ে গেছে বলে হাইকোর্টকে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আরসাদুর রউফ বলেন, ‘আমি এমন কোনো কথা কখনোই বলিনি। সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথি পোড়েনি। আমি বলেছি, এটা পুরনো মামলা।’
মন্তব্য