প্রাথমিক স্কুলের গণ্ডি পেরুনো হয়নি মো. মামুন মাদবর ওরফে ল্যাংড়া মামুনের। অভাবের তাড়নায় মা-বাবা গ্রাম ছাড়েন। তাদের সঙ্গে পটুয়াখালী শহরে এসে বসবাস শুরু করে মামুন। এক পর্যায়ে সংসারের হাল ধরতে ছোট্ট ছেলেটি বড় ভাইয়ের সঙ্গে ঢাকা-পটুয়াখালী নৌ-রুটের লঞ্চে কেবিন বয়ের কাজ শুরু করে।
বড় ভাই মিজান মাদবর ওরফে রং মিজানের সহায়তায় মামুনের ঢাকায় আসা। এখানে ছোটখাটো বিভিন্ন বাহিনীর সংস্পর্শে আসে সে। শুরু হয় অপরাধ কর্মকাণ্ড। প্রথমেই সে রাজধানীর এক সময়ের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হান্নানের সঙ্গ পায় সে। পরবর্তীতে ভিড়ে যায় লেদার লিটনের দলে। নিজেই হয়ে ওঠে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী।
পটুয়াখালীর হতদরিদ্র পরিবারের ছেলে মামুন এবার জড়িয়ে পড়েন মাদকের কারবার, অপহরণ ও ব্যাংক ডাকাতির মতো ঘটনায়। রাজধানীতে এমনই এক অপকর্ম চালাতে গিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে গোলাগুলিতে আহত হন তিনি। গুলি লাগা তার ডান পা কেটে ফেলতে হয়। পরবর্তীতে সার্জারি করে কৃত্রিম পা লাগানো হয়। একইসঙ্গে পরিচিতি মেলে ল্যাংড়া মামুন নামে।
পটুয়াখালীর বড় ব্যবসায়ী ও ঠিকাদার শিবু লাল দাসকে অপহরণের ঘটনায় নতুন করে আলোচনায় এসেছে এই সন্ত্রাসীর নাম। ওই ঘটনায় ১৯ এপ্রিল ল্যাংড়া মামুন ওরফে মুফতি মামুনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ।
এক পা হারিয়ে শারীরিক সক্ষমতা কমলেও অপরাধ কর্মকাণ্ড থেমে থাকেনি ল্যাংড়া মামুনের। বরং অপরাধ জগতে নতুন করে বিচরণ শুরু হয় তার। পুরোপুরি জড়িয়ে পড়েন মাদক কারবারে। কৃত্রিম পায়ের ভেতরের ফাঁপা অংশে ইয়াবা বহন করে ইয়াবা বেচাকেনা চালাতে থাকেন।
পটুয়াখালী জেলা শহর থেকে ৫৬ কিলোমিটার দক্ষিণে পটুয়াখালী-বরগুনার সীমান্তবর্তী এলাকায় মামুনের গ্রামের বাড়িতে বৃহস্পতিবার দিনভর খোঁজখবর নিয়ে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালি ইউনিয়নের পরই বরগুনার আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়ন। হলদিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ টেপুরা গ্রামের মাদবর বাড়িতে মামুনের জন্ম।
আত্মীয়-স্বজনরা জানান, প্রায় ৩০ বছর আগে মামুনের বয়স আনুমানিক যখন ছয় থেকে সাত বছর তখনই অভাবের তাড়নায় ভাগের সব জমি এমনকি ভিটেবাড়ি পর্যন্ত বিক্রি করে সন্তানদের নিয়ে পটুয়াখালী শহরে চলে যায় ওর মা-বাবা। এরপর ওই বাড়িতে মামুন ছাড়া তার পরিবারের আর কেউ কখনও আসা-যাওয়া করেনি। মামুন টুপি পরে একটি সাদা প্রাইভেট কারে আবার কখনও পাজেরো গাড়িতে করে গ্রামে এসে ঘুরে বেড়াতো। তখন ওই গাড়ির সামনে বড় অক্ষরে পুলিশ লেখা থাকত।
মামুনের বড় ভাই মিজানেরও গত দশ বছর ধরে কোনো খোঁজ নেই। একটি অপহরণ মামলায় জেলে যাওয়ার পর জামিনে বের হওয়ার পর পিস্তল ঠেকিয়ে ছোট ভাই মামুনের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা নেয়ার পর থেকে মিজানের আর দেখা মেলেনি। মামুন ছাড়া আর কেউ মিজানের খবর জানে না- এমনটা দাবি আত্মীয়-স্বজনদের।
মাদবর বাড়ির পূর্ব ভিটায় মামুনের আপন চাচা আলতাফ মাদবর ওরফে কালু মাদবরের ঘরে বসে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।
কালু মাদবর জানান, তারা সাত ভাই। বাবার মৃত্যুর পর তারা একেক ভাই প্রায় দুই কানি জমি ভাগে পান। কিন্তু ভাইদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সহজ সরল ছিলেন আবদুল হাই মাদবর (মামুনের বাবা)। সহজ সরল হওয়ায় অনেক দেনা ছিল তার। এক পর্যায়ে মামুনের মা মমতাজ বেগমের পরামর্শে বাড়ির জায়গাজমি সব বিক্রি করে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে শহরে চলে যান তিনি।
কালু মাদবর জানান, ছোট বেলা থেকেই ছেলেরা কেউ কোনো অপকর্ম করলে ওদের মা মমতাজ বেগম সন্তানের পক্ষ নিতেন। সন্তানদের এমন অধঃপতনের জন্য তিনি মমতাজ বেগমকেই দায়ী করেন তিনি।
কালু মাদবর বলেন, ‘মামুন মাঝেমধ্যেই গাড়ি হাঁকিয়ে এলাকায় আসতো। ড্রাইভারকে জিজ্ঞাসা করলে বলতো যে এটি সার্কেল এসপির গাড়ি। এছাড়া ওই পরিবারের আর কেউ গত ত্রিশ বছরে এই বাড়িতে আসেনি।
‘যতদূর জানি বাড়ি থেকে পটুয়াখালী যাওয়ার পর মিজান আর মামুন লঞ্চে কেবিনে কাজ করত। এরপর মিজান মোটরসাইকেলের ব্যবসা আর মামুন সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ে। কয়েক বছর আগে পত্রিকায় দেখলাম যে, মামুনের পা প্রশাসনের সঙ্গে গোলাগুলিতে কাটা পড়েছে। আর এখন শুনছি পটুয়াখালীর একজনকে অপহরণ করে ধরা খেয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মিজানের অপকর্মের ঘটনাও পত্রিকায় দেখেছি। কয়েক বছর আগে পত্রিকায় খবর বের হয় যে, ঢাকার কোনো এক ব্যবসায়ীর ছেলেকে অপহরণ করে দুই কোটি টাকা মুক্তিপণ আদায়ের সময় গ্রেপ্তারের পর মিজান জেলে যায়। পরে ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে জেল থেকে বের হওয়ার পর আর তার দেখা নেই। কোথায় আছে কেউ বলতে পারে না।’
মামুনের চাচী রাসিদা বেগম বলেন, ‘কয়েক বছর আগেও ঢাকা থেকে পুলিশ আইছিল মিজানের খোঁজে। তহন মামুনেরও খোঁজ করছিল পুলিশ। ওর বোনাইর টাহা দিয়া মাতৃছায়া দোহান ফুডাইছে। হেরপর আজ শরমে মুখ দেহাইতে পারি না। হক্কুরডি খামার দেয় ডাহাইতের বংশ কইয়া। এর চেয়ে ঝোলায় ন্যালেও ভাল অইতো। ওই বেডা (মামুনের বাপ) কী সুন্দর ভাল মানুষ। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। আর হের যন্নাডা কি অইলো। আর হের জন্য অই বেডার পোলা কয়ডা শ্যাষ।’
মামুনের চাচাত ভাই ওয়াসিম মাদবর বলেন, ছোটবেলায় বাড়ি ছাড়ার পর প্রায় দুই বছর আগে কয়েকবার গ্রামে এসেছে মামুন। ওই সময় অফিস বাজার এলাকার মহিউদ্দিন নামের একজনকে গাঁজা দিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছিল সে। তখন আমতলী থানার ওসির সাথে মামুনের ঘনিষ্ঠতা ছিল। ওই সুবাদে ওয়াসিমকেও সেই মামলায়ে জড়িয়ে দেয় মামুন।’
কারণ জানতে চাইলে ওয়াসিম বলেন, ‘মামুন এলাকার কারও ভাল চাইতো না। যেই একটু ভাল অবস্থানে থাকার চেষ্টা করতো তাকেই পুলিশ দিয়ে বিভিন্নভাবে হয়রানি করতো। কারণ পুলিশের সাথে তার ভাল সম্পর্ক ছিল। প্রায়ই পুলিশ লেখা গাড়িতে এলাকায় এসে প্রভাব দেখাত।’
অপরাধ জগতে মামুন কিভাবে এলো- এমন প্রশ্নে ওয়াসিম মাদবর বলেন, ‘মূলত বড় ভাই মিজানই মামুনকে এই জগতে এনেছে। কারণ ওরা দুই ভেইয়ের মধ্যে খুব মিল ছিল। একে অপরকে ছাড়া কোন কাজ করতো না।’
মিজান কোথায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অপহরণ মামলায় জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে শুনেছি। তারপর মিজানের কী হয়েছে জানি না। মামুন ছাড়া এ প্রশ্নের উত্তর কেউ দিতে পারবে না। কিন্তু একটি মানুষ জীবিত থাকলে তার দেখা কেউ না কেউ তো পাবে।’
মামুনের আরেক ভাই নিজাম বর্তমানে সৌদি আরবে আছে বলেও ওয়াসিম জানান।
ওয়াসিম জানান, মামুনের পরিবার গ্রাম থেকে পটুয়াখালী শহরে এসে হেতালিয়া বাঁধঘাট এলাকার পূর্ব পাশে বায়তুল ইমান জামে মসজিদে (উকিল বাড়ির মসজিদ) বেশ কিছুদিন ইমামতি করেছেন মামুনের বাবা আবদুল হাই মাদবর। এরপর তিনি কী করতেন যোগাযোগ না থাকায় তা বলতে পারছেন না।
মামুনের অন্য চাচারাও বলতে পারেন না তার বাবা-মা বর্তমানে কোথায় আছেন। তবে কয়েক বছর আগে লোকমুখে তারা শুনেছেন যে, পটুয়াখালী শহরের গার্লস স্কুলের পশ্চিম পাশে পুলিশ সদর সাকের্লের বাসার পাশেই নাকি মামুন তার বাবা-মাকে নিয়ে থাকেন।
আত্মীয়-স্বজনরা জানান, চট্টগ্রামের এক ধনাঢ্য ব্যবসায়ী জিয়াউদ্দিন বাবলু মিয়ার সঙ্গে মামুনের ছোট বোন তানিয়া আক্তারের বিয়ে হয়। বাবলুর কাপড়ের ব্যবসা ছিল। সেই সুবাদে তানিয়ার বিয়ের পর মামুন কৌশলে ভগ্নিপতির সঙ্গে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেন। এক পর্যায়ে তার ভগ্নিপতির ঢাকার মাতৃছায়া বুটিকসের শাখা হিসেবে পটুয়াখালী শহরেও একটি দোকান চালু করেন মামুন ও তার বোন জামাই। তখন তারা সবাই পটুয়াখালী শহরে থাকতেন। কয়েক বছর আগে তানিয়ার স্বামী বাবলু স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে মাতৃছায়া বুটিকসের ব্যবসার হাল ধরেন মামুন।
চাচাতো ভাই ওয়াসিম জানান, ভগ্নিপতির ব্যবসা থেকে মামুন মোটা অংকের টাকা আত্মসাৎ করেন বলে শুনেছেন তারা। এরপর মামুন নিজে ব্যবসা শুরু করেন। পরবর্তীতে বরগুনা জেলা ও পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় আরো দুটি বড় শো-রুম খোলেন তিনি। এর মধ্যে কলাপাড়া উপজেলা সদরে মাতৃছায়ার ম্যানেজারের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে র চাচাত ভাই অলিউল্লাহ মাদবরকে।
ওই ব্যবসার আড়ালেই মূলত ইয়াবার কারবার চালাতেন মামুন। ঢাকা ডিবি পুলিশের দেয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও এমনটা উল্লেখ করা হয়েছে।
মামুনদের গ্রামের বাড়ি থেকে কোয়ার্টার কিলোমিটার দক্ষিণে কানাই মৃধা বাজার। ছোট্ট এই বাজার হয়েই নরমহাট থেকে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে আসা-যাওয়া করে এ অঞ্চলের হাজারো মানুষ। কথা হয় ওই বাজারের একাধিক লোকের সঙ্গে। কিন্তু মামুনের প্রসঙ্গে কিছু জিজ্ঞাসা করলেই সবাই চুপ। এই সন্ত্রাসীর বিষয়ে কেউ কথা বলতে চাননি।
এক পর্যায়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন দোকানদার বলেন, ‘হের (মামুন) হাত অনেক লম্বা। প্রায়ই এইহানে আইতো গাড়িতে করে। গাড়ির সামনে লেখা থাকতো পুলিশ। ড্রাইভারকে জিঙ্গাসা করলে বলতো- সার্কেল স্যারের গাড়ি। এত খারাপ কাম কইরাও যদি পুলিশের গাড়িতে ঘোরাফেরা করে তাইলে আমরা হের সম্পর্কে কী কমু।
‘তবে এইহানের কোনো দোকানদারের সাথে হে কখনও খারাপ আচরণ করে নাই। খাইয়া লইয়া টাহা পয়সা ঠিকঠাকভাবেই দিয়া গেছে। তাছাড়া হেরা গ্রাম ছাড়ছে ছোটবেলায়। যে কারণে অনেকের কাছেই হে অপরিচিত ছিল। আমরা লোকমুখে হুনছি- হে অনেক বড় বড় কাম করে। ওই কাম করতে গিয়াই নাকি হের নাকি পা কাটা লাগজে।’
ওই বাজারেই মামুনের এক নিকটাত্মীয় নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘লঞ্চে কেবিন বয়ের চাকরির পর এক সময়ে মিজান ব্যবসা শুরু করে। পটুয়াখালী শহরের চৌরাস্তা এলাকায় রংয়ের দোকান থেকে মোটরসাইকেল বেচাকেনা করতো সে। যশোর থেকে চোরাইপথে মোটরসাইকেল এনে পটুয়াখালীতে বিক্রি করত। মূলত তখনই মিজান অপরাধ জগতে জড়িয়ে পড়ে। ঠিক সেই সময় মিজানের সঙ্গে থাকা ছোট ভাই মামুন ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রুপে প্রবেশ করে। তাদের দুই ভাইয়ের নামে ঢাকায় একাধিক ব্যংক ডাকাতি আর অপহরণের মামলা রয়েছে বলে শুনেছি।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের ইউটাহভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডেসারাট নিউজে নিবন্ধ লিখেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এতে গত বছর বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থান, অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ, সংস্কারসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তারিত বলেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার নিবন্ধটি প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যমটি। এতে প্রফেসর ইউনূস জানিয়েছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। আর নির্বাচন শেষেই তিনি রাষ্ট্রের সব দায়িত্ব ছেড়ে দেবেন। নির্বাচনে যে সরকার গঠিত হবে সেটির কোনো পদেই থাকবেন না বলে স্পষ্ট করেছেন তিনি।
ড. ইউনূস লিখেছেন, ‘আমি স্পষ্ট করেছি : জাতীয় নির্বাচন আগামী ফেব্রুয়ারিতে হবে। এরপর যে সরকার আসবে সেখানে নির্বাচিত বা নিযুক্ত করা কোনো পদে আমি থাকব না।’
তিনি বলেছেন, ‘আমার সরকারের মূল লক্ষ্য হলো একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজন করা। যেখানে রাজনৈতিক দলগুলো ভোটারদের সঙ্গে তাদের পরিকল্পনাগুলো বলতে পারবে। আমাদের মিশন হলো, সব বৈধ ভোটার যেন তাদের ভোট দিতে পারে, যারা প্রবাসে আছেন তারাও। এটি একটি বড় কাজ। কিন্তু আমরা কাজটি সম্পন্ন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
প্রফেসর ইউনূসের নিবন্ধটি হুবহু তুলে ধরা হলো:
এক বছর আগে, এই মাসেই বাংলাদেশের হাজার হাজার সাহসী ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ শিক্ষার্থী, যাদের পেছনে ছিল সমাজের সব স্তরের অগণিত মানুষের সমর্থন, আমাদের জাতির ইতিহাসে একটি অন্ধকার অধ্যায়ের অবসান ঘটিয়েছিল। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ, যা শেষ পর্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে দমন করা হয়েছিল, তার মাধ্যমেই তারা একজন স্বৈরাচারকে ৫ আগস্ট দেশ ছাড়তে বাধ্য করে।
এরপর যে ক্ষমতার শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছিল, তাতে ছাত্রনেতারা আমাকে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্ব দিতে অনুরোধ জানায়। এই সরকারের দায়িত্ব ছিল দেশকে স্থিতিশীল করা এবং গণতন্ত্রের নতুন পথ তৈরি করা। শুরুতে আমি রাজি হইনি। কিন্তু যখন তারা জোর করল, তখন আমি তরুণদের জীবন উৎস্বর্গের কথা ভাবলাম, আমি তাদের ফিরিয়ে দিতে পারলাম না। ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট, সুশীল সমাজের নেতাদের নিয়ে গঠিত একটি উপদেষ্টা পরিষেদের সঙ্গে আমি প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণ করি।
এই গণআন্দোলন শুরু হয়েছিল সরকারি চাকরিতে ন্যায্যতা নিশ্চিত করা থেকে। এর মাধ্যমে বিশ্বের প্রথম ‘জেনারেশন জেড’ বিপ্লবের সূত্রপাত হয়েছিল। এই বিপ্লব তরুণদের জন্য একটি আদর্শ হয়ে উঠেছে, যা দেখায় কীভাবে তারা মানবজাতির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলো—যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন, দারিদ্র্য, বেকারত্ব এবং বৈষম্য—মোকাবিলার জন্য এগিয়ে আসতে পারে।
আমরা ভাগ্যবান যে তারা ‘তাদের পালা আসার জন্য’ অপেক্ষা করেনি। যখন সভ্যতা অনেক দিক থেকে ভুল পথে চালিত হচ্ছে, তখন তারা বুঝতে পেরেছিল যে এখনই পদক্ষেপ নেওয়ার সময়।
স্বৈরাচার থেকে গণতন্ত্রে আমাদের উত্তরণের একটি স্পষ্ট প্রমাণ ছিল যখন দ্য ইকোনমিস্ট সাময়িকী বাংলাদেশকে তাদের ‘২০২৪ সালের সেরা দেশ’ হিসেবে ঘোষণা করে। আমরা তখন অর্থনীতি পুনর্গঠন, নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং চুরি যাওয়া বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের সম্পদ উদ্ধারে এতটাই ব্যস্ত ছিলাম যে, আমরা তখনো বুঝতে পারিনি বিশ্ব আমাদের এই অগ্রগতিকে কতটা গুরুত্বের সঙ্গে লক্ষ্য করছে। ডেসারেট নিউজ আমাদের এই যাত্রার চমৎকার কাভারেজ দিয়েছে, যা আমরা গভীরভাবে উপলব্ধি করি।
আমাদের অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার ছিল গণঅভ্যুত্থানে যারা নির্মমভাবে নিহত হয়েছিল এবং যারা গুরুতর আহত হয়েছিল—সেই হাজার হাজার পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা। এরসঙ্গে আমরা বিগত সরকার ও তার সহযোগীদের লুট করা অর্থ উদ্ধারেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছি।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে সাবেক স্বৈরাচারী সরকার বছরে ১০ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার আত্মসাৎ করেছে। এই অর্থ পুনরুদ্ধার করার জন্য যুদ্ধ করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
যখন আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করি, তখন অব্যবস্থার মাত্রা দেখে আমি হতবাক হয়ে যাই। পুলিশ তাদের দায়িত্ব পালন করছিল না। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাচ্ছিল। অর্থনীতি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। গণতন্ত্র ভেঙে পড়েছিল।
সরকারি কর্মচারীরা, যারা ক্ষমতাসীন দলের প্রতি যথেষ্ট আনুগত্য না দেখানোর কারণে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন, তারা ন্যায়বিচার চেয়েছিলেন।
ধীরে ধীরে আমরা পুনর্গঠন শুরু করেছি। যেসব রাজনৈতিক দল স্বৈরাচারের প্রতিরোধ করেছিল, তাদের পাশাপাশি নতুন গঠিত দলগুলোও নতুন ধারণা, শক্তি এবং কর্মপ্রচেষ্টা নিয়ে এগিয়ে এসেছে। সশস্ত্র বাহিনী, যারা ৫ আগস্ট বিক্ষোভকারীদের ওপর গণহত্যা চালাতে দেয়নি, তারা তাদের পেশাদারিত্ব বজায় রেখেছে এবং আইন-শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারে সহায়তা করেছে।
আমি এটি স্পষ্ট করে দিয়েছি: আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমি এরপরের সরকারের কোনো নির্বাচিত বা নিযুক্ত পদে থাকব না।
আমাদের প্রশাসনের মূল লক্ষ্য হলো একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্পন্ন করা, যেখানে রাজনৈতিক দলগুলো ভোটারদের কাছে তাদের বক্তব্য তুলে ধরতে পারবে। বিদেশে বসবাসকারী নাগরিকসহ সব যোগ্য নাগরিককে ভোট দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া একটি বিশাল কাজ। কিন্তু আমরা এটি সম্পন্ন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আমরা আমাদের পররাষ্ট্রনীতিতেও পরিবর্তন এনেছি। যেন আমাদের প্রতিবেশী এবং বৈশ্বিক অংশীদারদের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক জোরদার করা যায়।
বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ হিসেবে, বাংলাদেশ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির একটি মূল কেন্দ্র হতে পারে এবং হওয়া উচিতও। আমরা বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞ।
রুবিওরে সঙ্গে সম্প্রতি আমার একটি ফলপ্রসূ এবং বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে, যা আমাদের উভয় দেশের বাণিজ্যের জন্য ইতিবাচক ছিল।
যুক্তরাজ্য, জাপান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বিশ্বব্যাংক গোষ্ঠী এবং জাতিসংঘও আমাদের সহায়তা করার জন্য এগিয়ে এসেছে। আমরা এই পথে একা নই।
নির্বাচনের প্রস্তুতির পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ, রাজনৈতিক দল এবং নাগরিকদের নিয়ে একটি ব্যাপক সংস্কার প্রস্তাব তৈরি করেছি। সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো একটি সাংবিধানিক সংশোধনী আনা। যা এমন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করবে যাতে বাংলাদেশ আর কখনো স্বৈরাচারী শাসনে ফিরে না যায়।
বাংলাদেশ যদি শেষ পর্যন্ত এমন একটি দেশে পরিণত হয় যেখানে দেশের সব মানুষ নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করতে পারবে। তবে তা হবে লাখ লাখ বাংলাদেশির দৃঢ়তা, কল্পনা এবং সাহসের ফল।
এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে আমাদের সঙ্গে যারা আছেন তাদের সকলের দায়িত্ব রয়েছে। তারাই আমাদের সর্বোত্তম আশা—এবং সম্ভবত আমাদের শেষ আশা।
সরকারি এবং কূটনীতিক পাসপোর্টে পারস্পারিক ভিসা অব্যাহতি সুবিধা পেতে পাকিস্তানের সঙ্গে চুক্তির অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ তথ্য জানান।
প্রেস সচিব বলেন, ‘পাকিস্তানের মতো এ রকম চুক্তি আমরা আরও ৩১টি দেশের সঙ্গে করেছি। এই চুক্তি পাঁচ বছরের জন্য করা হবে । এর ফলে যারা অফিসিয়াল পাসপোর্ট এবং কূটনীতিক পাসপোর্ট ব্যবহার করছেন, তারা এখন বিনা ভিসায় পাকিস্তান সফর করতে পারবেন। একইভাবে পাকিস্তানের যারা অফিসিয়াল এবং কূটনীতিক পাসপোর্ট ব্যবহার করছেন— তারাও বাংলাদেশে সফর করতে পারবেন কোন ভিসা ছাড়াই। এটা একটা স্ট্যান্ডার্ড প্র্যাকটিস।’
উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানান, এ বিষয়ে পাকিস্তান সরকারের সম্মতি পাওয়া গেছে।
উপদেষ্টা পরিষদের ৩৯তম বৈঠকে আজ ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন হয়েছে।
ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠকে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীগণের পারস্পরিক ভিসা অব্যাহতি চুক্তির খসড়া অনুমোদন করা হয়।
এছাড়া, উপদেষ্টা পরিষদকে সংস্কার কমিশনসমূহের সুপারিশ বাস্তবায়ন অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করা হয়।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নতুন সচিব ড. মোহাম্মদ আবু ইউছুফ উপস্থিত সকলের প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় যে গতিতে এগোচ্ছে আরও গতি বাড়াতে সমন্বয় টিমের মাধ্যমে কাজ করতে চাই। আমি সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যাবতীয় সেবা দরিদ্র, দুঃস্থ, অসহায়, অসচ্ছল মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে সকলের সহযোগিতা চাই। এজন্য আমরা সবাই একসাথে কাজ করবো।
তিনি আজ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের সাথে পরিচিতি ও মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
নতুন সচিব বলেন,
আমি এই মন্ত্রণালয়ের সুনাম কাজের মাধ্যমে, আইন কানুন মেনে মানুষের সেবা দ্রুত নিশ্চিত করতে আপনাদের সহযোগিতা চাই। তিনি বলেন, সচিবের রুম আপনাদের জন্য সার্বক্ষণিক খোলা থাকবে এবং ফাইল দ্রুত নিষ্পত্তি করে কাজের যথার্থতা নিশ্চিত করবেন। আপনারা নির্ভয়ে কাজ করবেন, আমার সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি আমিও আপনাদের থেকে শিখতে চাই এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশের নয়টি সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে আয়োজন করা হচ্ছে জাতীয় নীতি প্রতিযোগিতা ২০২৫। জাতীয় নীতি প্রতিযোগিতা ২০২৫ এর প্রতিপাদ্য "বাংলাদেশ ২.০: তারুণ্যের নেতৃত্বে আগামীর পথে " নির্ধারণ করা হয়েছে। এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীরা ধারণাপত্র জমা দিয়ে শুরু করবে এবং নির্বাচিত দলসমূহ পূর্ণাঙ্গ নীতিপত্র প্রস্তুত ও উপস্থাপনা করবে। বিজয়ীরা পুরস্কৃত হওয়ার পাশাপাশি তাদের নীতি প্রস্তাবগুলো সরকারিভাবে পলিসি প্রণয়নের ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেওয়া সুযোগ সৃষ্টি করা হবে।
নীতি প্রতিযোগিতার বিষয়গুলো হল-
১. রাজনীতিতে তরুণদের অংশগ্রহণ ও গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ
২. জুলাই পরবর্তীতে সময়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি: জাতীয় স্বার্থ ও বৈদেশিক সম্পর্কের পুনঃসংজ্ঞায়ন
৩. নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ: শিক্ষা ও দক্ষতার রূপান্তর
৪.দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠা ও সাংস্কৃতিক সংযোগ: জুলাই অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশী তরুণদের ভূমিকা
৫. গুজব প্রতিরোধে বাংলাদেশের করণীয় ও বাংলাদেশের বৈশ্বিক ভাবমূর্তি
৬. জুলাই গণভুত্থান ও সাংবিধানিক পুনর্গঠন: তরুণদের আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ
৭.বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উত্তরণ: সম্ভাবনার ব্যবহার ও নতুন চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা প্রস্তুতি
৮. সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা অর্জনের পথে: ব্যবস্থা পুনর্গঠন ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ
৯. চতুর্থ শিল্প বিপ্লব: বাংলাদেশের উদ্বোধনী সম্ভাবনা ও প্রয়োগের ক্ষেত্র
রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণী বিষয়সহ রাষ্ট্র পরিচালনার সকল ক্ষেত্রে তারুণ্যের অন্তর্ভুক্তি ও অংশগ্রহণ অপরিহার্য। আমাদের কাঙ্ক্ষিত দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন নীতিগতভাবে অগ্রসর হওয়া। তরুণদের চিন্তাপ্রক্রিয়া, মননশীলতা এবং গবেষণাধর্মী সক্ষমতাকে সামনে রেখে এক নতুন পরিবর্তনের সূচনা করা সম্ভব আর সেটি হতে হবে রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণী প্রক্রিয়ায় তারুণ্যের অন্তর্ভুক্তির মধ্য দিয়ে।
এ সময় যুব ও ক্রীড়া সচিব বলেন, এই প্রতিযোগিতা কেবল একটি প্রতিযোগিতা নয় এটি আগামী প্রজন্মের নেতৃত্বে বিনিয়োগ। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, তরুণদের বুদ্ধিবৃত্তিক অংশগ্রহণই আমাদের রাষ্ট্রকে দীর্ঘমেয়াদি টেকসই উন্নয়নের পথে এগিয়ে নেবে এবং বাংলাদেশ ২.০-কে বাস্তবায়নের ভিত্তি গড়ে তুলবে।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর খসড়া ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
আজ বুধবার ইসির উপ-সচিব মো. মাহবুব আলম শাহ স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে, যা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০২৫’ কমিশনে অনুমোদিত হয়েছে এবং তা ২৬ জুন ২০২৫ তারিখে বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর অনুচ্ছেদ ৮ (১) ও (২) অনুযায়ী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্রের তালিকা সংরক্ষণ ও চূড়ান্তকরণের জন্য গেজেটে কমপক্ষে ২৫ দিন পূর্বে তা প্রকাশ করার বিধান রয়েছে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে এলাকা ভিত্তিক ভোটকেন্দ্রের খসড়া তালিকা প্রকাশ, এই তালিকার ওপর দাবি/আপত্তি গ্রহণ এবং তা নিষ্পত্তির মাধ্যমে নীতিমালা অনুযায়ী চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুতের নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কমিশন নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী : খসড়া ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, দাবি/আপত্তি গ্রহণের শেষ তারিখ: ২৫ সেপ্টেম্বর, দাবি/আপত্তি নিষ্পত্তির শেষ তারিখ: ১২ অক্টোবর, সম্ভাব্য চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রস্তুত ও প্রকাশ: ২০ অক্টোবর।
উল্লেখিত সময়সূচি অনুযায়ী এবং ভোটকেন্দ্র স্থাপন নীতিমালা অনুসারে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে জেলা পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে নির্ধারিত ছকের আলোকে খসড়া ও সম্ভাব্য চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্রের সংখ্যাগত তথ্য (সফটকপিসহ) আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচন সহায়তা-১ শাখায় পাঠাতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, সারাদেশ জলাশয়গুলো চিহ্নিত করে দেশি মাছের প্রজাতি রক্ষা করতে হবে। তিনি বলেন, বিভিন্ন জলাশয়ে মাছের নানান প্রজাতি রয়েছে। এসব জলাশয় চিহ্নিত করে দেশীয় প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ ও বৃদ্ধি করতে হবে।
উপদেষ্টা বুধবার (২০ আগষ্ট) রাজধানীর ফার্মগেটে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলে 'টেকসই মৎস্যসম্পদ ব্যবস্থাপনায় অভয়াশ্রমের গুরুত্ব ও ভবিষ্যত করণীয়' -শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন। সেমিনারটির আয়োজন করে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই)।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, অভয়াশ্রম গড়ে তোলা ও রক্ষা করা মৎস্যসম্পদ উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা মুক্ত জলাশয়ের পরিমাণ দিন দিন আশঙ্কাজনক হারে কমছে।
এর পেছনের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এখানে আগে নীতি-নির্ধারণীতে হয়তোবা মনোযোগ কমছিল। তাই আমরা এখাতে গুরুত্ব দিচ্ছি। আমাদের মুক্ত জলাশয় গড়ে তুলতে যা করণীয় তা করতেই হবে।
জিনগত বিলুপ্তি রোধ করা দরকার উল্লেখ করে মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, মাছের প্রজাতিগুলো রক্ষা করা এটি শুধু বাংলাদেশের জন্য নয় বরং আন্তর্জাতিক মৎস্যসম্পদের প্রয়োজনে করতে হবে। কারণ আমরা প্রাকৃতিকভাবে এমন স্থানে রয়েছি যেখানে মাছ না খেয়ে বাঁচার উপায় নেই।
৪১ প্রজাতির মাছ ফিরিয়ে আনা হয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, দেশে ৬৪ প্রজাতির মাছ বিলুপ্তপ্রায় হয়ে গিয়েছিল। সেখানে বিএফআরআইর গবেষণার ফলে ৪১ প্রজাতির মাছ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
মাছ শিকারে বিষ ও বিদ্যুতের ব্যবহারকে উদ্বেগের কারণ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানুষ কত নিষ্ঠুর তারা মাছ শিকারে বিষ ও বিদ্যুতের ব্যবহার করছে। এটি হচ্ছে মানুষের লোভ ও তাৎক্ষণিক লাভের কারণে।
প্লাস্টিকদূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মৎস্যসম্পদ ধ্বংসের পেছনে পানি ও প্লাস্টিকদূষণ অন্যতম ক্ষতির কারণ। সম্প্রতি প্লাস্টিক বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে কোন সমঝোতায় আসতে পারেনি। প্লাস্টিক চুক্তি মানুষের পক্ষে ও প্রকৃতির জন্য ক্ষতিকর হওয়ায় বাংলাদেশও স্বাক্ষর না করে চলে এসেছে।
বিএফআরআইর মহাপরিচালক ড. অনুরাধা ভদ্রের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) মো. তোফাজ্জেল হোসেন, সম্মানিত অতিথি ছিলেন মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের চেয়ারম্যান ফারাহ শাম্মী ও মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুর রউফ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএফআরআইর ঊধ্বর্তন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মশিউর রহমান। এসময় বিএফআরআই এর বিজ্ঞানীবৃন্দ, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, মৎস্যজীবী ও সুধীজন উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য