পটুয়াখালীর বড় ব্যবসায়ী ও ঠিকাদার শিবু লাল দাসকে অপহরণ করার মূলহোতা ল্যাংড়া মামুন ওরফে মুফতি মামুনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশ। এক সময় রাজধানীর শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হান্নানের সহযোগী ছিলেন তিনি। বুধবার ইফতারের আগে এক সংবাদ সম্মেলনে মামুনসহ আরও তিনজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে গুলশান ডিবি পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ১৯ এপ্রিল দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মিরপুর, ভাটারা এবং গুলিস্তানে ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে ল্যাংড়া মামুন, পিচ্চি রানা, জসিমউদ্দিন এবং আশিকুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর আগে রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর থেকে বিআরটিসির অপর চালক জসিম মৃধাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
গ্রেপ্তারের সময় আসামিদের কাছ থেকে অপহরণে ব্যবহৃত প্রাইভেটকার, মোবাইল ফোন, গামছাসহ ৪ হাজার পিস ইয়াবাও উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার আসামিদের বরাতে পুলিশ জানায়, ব্যবসায়ী শিবু লাল দাসকে অপহরণের পরিকল্পনা করা হয় গত ফেব্রুয়ারিতে। পটুয়াখালী লঞ্চঘাটের কাছাকাছি ল্যাংড়া মামুনের গার্মেন্টস অফিসে সেই পরিকল্পনায় মামুন ছাড়াও অংশ নেন পিচ্চি রানা, পাভেল ও বিআরটিসির ড্রাইভার জসিম।
এ নিয়ে পরে আরও বেশ কয়েকটি মিটিং হয়। মিটিংয়ে ঢাকা থেকে মাঝে মাঝে ছুটি নিয়ে যোগ দেন জসিম উদ্দিন মৃধা এবং তার ভাই গাড়ির দালাল আশিক মৃধা।
অপহরণের কাজে ব্যবহারের জন্য ১০ হাজার টাকা অ্যাডভান্স করে ঢাকা থেকে এক সপ্তাহের জন্য একটি গাড়িও ভাড়া করা হয়। এ ছাড়া অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায় ও নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য ঢাকার সাভার থেকে কেনা হয় পাঁচটি বাটন ফোন। আর বেশি দাম দিয়ে অন্যজনের নামে নিবন্ধন করা সিম কেনা হয় পটুয়াখালী থেকেই। সংগ্রহ করা হয় একটি খেলনা পিস্তল, দুইটি সুইচ গিয়ার, তিনটি চাপাতি এবং গরু জবাই করার একটি বড় ছুরিও।
টানা কয়েকদিন ব্যবসায়ী শিবুকে অনুসরণ ও তার বিভিন্ন অবস্থান রেকি করে ফিল্মি স্টাইলে তাকে অপহরণ করা হয় ১১ এপ্রিল রাত সাড়ে আটটায়।
সেদিন দুপুরে পটুয়াখালী এয়ারপোর্টের কাছে মিলিত হন অপহরণকারীরা। কার কোথায় কি দায়িত্ব তা নির্ধারণ করে দেন ল্যাংড়া মামুন ও পিচ্চি রানা। পরে শিবুর গতিবিধি মোবাইলে জানানোর জন্য পিচ্চি রানা তার মোটরসাইকেলে ল্যাংড়া মামুনকে নিয়ে চলে যান গলাচিপা ঘাটে।
সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাস্তায় ব্যারিকেড দেয়ার জন্য পটুয়াখালী-গলাচিপা হাইওয়ে রোডের শাঁখারিয়া এলাকার নির্জন স্থানে একটি প্রাইভেটকার এবং একটি ট্রাক্টর নিয়ে অবস্থান নেন ৫ জন।
ল্যাংড়া মামুনের নির্দেশে আগে থেকেই ট্রাক্টর ভাড়া করে রেখেছিলেন ড্রাইভার বিল্লাল। এ ছাড়া ভাড়া করা প্রাইভেটকারটি নিয়ে ড্রাইভার আশিক মৃধা, পাভেল, হাবিব, ও সোহাগ অবস্থান করছিলেন।
ল্যাংড়া মামুনের সংকেত পাওয়ার পরই রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিল্লাল ট্রাক্টরটি নিয়ে সুকৌশলে শিবু দাসের প্রাডো জিপের সামনে আড়াআড়ি করে অবস্থান নেন। আর জিপের পেছনেই ভাড়া করা প্রাইভেটকারটি দাঁড় করিয়ে অবরুদ্ধ করে ফেলেন আশিক।
এ সময় ট্রাক্টর এবং প্রাইভেটকার থেকে অপহরণকারীরা খুব দ্রুততার সঙ্গে উঠে যান শিবুর প্রাডো জিপে। আশিক শিবুর গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নেন। গাড়িতে উঠেই বিল্লাল, পাভেল, সোহাগ ভিকটিমদের বেঁধে ফেলেন। এ সময় গামছা, টিস্যু পেপার এবং স্কচ টেপ দিয়ে মুখ, হাত-পা বেঁধে চলতে থাকে চড়-থাপ্পড় আর কিল ঘুষি। সঙ্গে থাকা খেলনা পিস্তল ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে শিবুকে ভয়ও দেখানো হয়।
এভাবে বরগুনার আমতলী এলাকার গাজিপুরায় গিয়ে জিপ থেকে শিবু ও তার চালককে নিয়ে তোলা হয় ভাড়া করে ঢাকা থেকে নিয়ে যাওয়া প্রাইভেটকারটিতে। সেখানে ভিকটিম দুইজনকে আরও ভালোভাবে বেঁধে প্লাস্টিকের বস্তায় ঢুকানো হয়। এই সময়ের মধ্যেই শিবুর জিপটি আমতলীর একটি ফিলিং স্টেশনে ফেলে আসেন অপহরণকারীরা।
রাত আনুমানিক সাড়ে এগারোটার দিকে পটুয়াখালীর বাঁধঘাট এলাকায় ভিকটিমদের বহনকারী গাড়ি বুঝে নেন ল্যাংড়া মামুন ও পিচ্চি রানা। এ সময় গাড়ি চালাতে থাকেন ল্যাংড়া মামুন নিজেই। তিনি সোজা চলে যান এইচ ডি রোডে থাকা তার নিজস্ব মেশিনঘর কাম টর্চার সেলে। সেখান থেকে পরে অপহৃতদের নিয়ে যাওয়া হয় এসপি কমপ্লেক্স সুপার মার্কেট আন্ডারগ্রাউন্ডের অস্থায়ী সেলে। সেখানে রাতভর চলে নির্যাতন।
রাত পৌনে ২টার দিকে রানার নির্দেশে ভিকটিম শিবুর সিম থেকে তার স্ত্রীকে ফোন দেন বিল্লাল। ফোনে শিবুর স্ত্রীকে পরদিন দুপুর ২টার দিকে ২০ কোটি টাকা মুক্তিপণ দিতে বলা হয়। টাকা না দিলে কিংবা বিষয়টি পুলিশকে জানালে শিবু লালকে হত্যা করে সাগরে ভাসিয়ে দেয়া হবে বলেও সতর্ক করে দেন অপহরণকারীরা।
এদিকে পরদিন ১২ এপ্রিল রাত ১১টায় অপহরণের ২৬ ঘণ্টা পর হাত-পা ও মুখ বাঁধা এবং বস্তাবন্দি অবস্থায় মুমূর্ষ শিবু ও তার চালককে এসপি কমপ্লেক্স শপিং সেন্টারের আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে উদ্ধার করে পটুয়াখালী জেলা পুলিশ। উদ্ধারের পরই চিকিৎসার জন্য তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পুলিশের বরাতে জানা গেছে, এই অপহরণের নেপথ্যে ছিল গ্রেপ্তার হওয়া ল্যাংড়া মামুনের গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি স্থাপনের স্বপ্ন। মুক্তিপণের টাকায় তিনি দক্ষিণবঙ্গের সবচেয়ে বড় গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি দিতে চেয়েছিলেন।
ল্যাংড়া মামুন ওরফে মুফতি মামুন পঙ্গু। অতীতে অপরাধ করতে গিয়ে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় তার ডান পা উরু পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয়। বাবা মুফতি মাওলানা হওয়ায় মামুনও হাফেজী এবং নূরানী লাইনে দীর্ঘ পড়াশোনা করেন। পরে জড়িয়ে পড়েন অপরাধ জগতে।
এক সময় আপন ভগ্নিপতির বিপুল অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করে পটুয়াখালী জেলা শহরে একাধিক দোকান এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক হন মামুন। এ ছাড়া ব্যবসায়ীসহ ও বিভিন্ন পেশার মানুষদের নিজের দুটি টর্চার সেলে আটকে রেখে আপত্তিকর ছবি তুলে তাদের কাছ থেকে প্রায় সময়ই টাকা হাতিয়ে নিতেন তিনি।
অপর আসামি পিচ্চি রানা বিভিন্ন টোলপ্লাজায় টোল কালেকশনের কাজ করেছেন। ট্রাকের মিডিয়াম্যান হিসেবেও তার কাজের অভিজ্ঞতা আছে। তৃণমূলের বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় তিনিও ভেবেছিলেন অপহরণ করে বড় অঙ্কের টাকা পেলে তা দিয়ে একাধিক ট্রাক কিনে ঢাকা- পটুয়াখালী রুটে পরিবহন ব্যবসা করবেন।
এ ছাড়া বিআরটিসির চালক জসিম উদ্দিন মৃধা ভেবেছিলেন, অপরের গাড়ি না চালিয়ে মুক্তিপণের টাকা দিয়ে নিজেই বাস কিনে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে পটুয়াখালী রুটে চালাবেন।
গ্রেপ্তার আশিক দীর্ঘদিন ধরে রেন্ট-এ-কারের দালালি করেন। তিনিও ভেবেছিলেন নিজের ভাগের অর্থ দিয়ে একাধিক গাড়ি কিনে বড় পরিসরে রেন্ট-এ-কারের ব্যবসা শুরু করবেন।
আসামিদের বিরুদ্ধে মারামারি, মাদক এবং অপহরণের একাধিক মামলা রয়েছে। মাওলানা হিসেবে পিতার সুখ্যাতি এবং নিজের পঙ্গুত্বের দোহাই দিয়ে অনেক অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার চেষ্টা করলেও ল্যাংড়া মামুন একজন দুর্ধর্ষ ক্যাডার। অপহরণ বাণিজ্য চালানোর জন্য পটুয়াখালীতে গড়ে তুলেছিলেন দুটি টর্চার সেল। মাদকসেবনের পাশাপাশি মাদক ব্যবসার সঙ্গেও তিনি জড়িত। নিজের কৃত্রিম পায়ের ভেতরে করে অনায়াসে হাজার হাজার পিস ইয়াবা বহন করতে পারতেন তিনি।
আসামীদের অপরাধের ইতিহাস সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।
আরও পড়ুন:শেরপুরে নালিতাবাড়ী উপজেলার কাটাবাড়ী সীমান্তের বিদ্যুতায়িত হয়ে আরও একটি একটি বন্যহাতি নিহত হয়েছে। বনবিভাগের মধুটিলা রেঞ্জের আওতাধীন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে শনিবার (৫ জুলাই) সকালে বনবিভাগের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে হাতিটির মরদেহ উদ্ধার করে।
খাদ্যের সন্ধানে পাহাড় থেকে নেমে আসা হাতিটি বৈদ্যুতিক ফাঁদে পড়ে নিহত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে বনবিভাগ।
মধুটিলা রেঞ্জের রেঞ্জার দেওয়ান আলী ঘটনাটি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, হাতিটির শুড়ে পোড়া ক্ষতের দাগ রয়েছে। এটির বয়স ১৫ থেকে ২০ বছর হবে। এটি একটি মাদি হাতি। এ ব্যাপারে পরবর্তী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সাম্প্রতিককালে মধুটিলা রেঞ্জের আওতাধীন এলাকায় খাদ্যের সন্ধানে বন্যহাতি লোকালয়ে নেমে আসার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। খেতে ফসল না থাকায় হাতির দল বাড়িঘরেও হানা দিচ্ছে। এতে স্থানীয়ভাবে অনেক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। যেখানে বন্যহাতির দেহটি পড়ে ছিল, সেখানে কোনো ধরনের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম না থাকলেও হাতিপাগাড় ক্যাম্পের আশপাশে অনেক বসতি ও বাড়িঘর রয়েছে।
এ নিয়ে চার মাসের কম সময়ের ব্যবধানে মধুটিলা রেঞ্জ এলাকায় তিনটি বন্যহাতির মরদেহ উদ্ধার করল বনবিভাগ।
এর আগে গত ২০ মার্চ পূর্ব সমশ্চুড়া গ্রামের লালনেংগড় এলাকায় বিদ্যুতায়িত হয়ে নিহত একটি বন্যহাতির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তারপর গত ২৯ মে দাওধারা পাহাড় থেকে সদ্যোজাত একটি হাতিশাবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ঘন ঘন হাতির মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন পরিবেশ ও প্রকৃতিপ্রেমীরা।
নিধারঞ্জন কোচ নামে এক অধিকারকর্মী নিজের ফেসবুক ওয়ালে শনিবার নিহত হাতির মরদেহের ছবি পোস্ট করে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে লিখেছেন, ‘আবারো বন্যহাতির মৃত্যু। এর শেষ কোথায়? হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব নিসনে সরকারি উদ্যোগ কী? ক্ষতিপূরণ প্রদানই কি যথেষ্ট? হাতি-মানুষের সহাবস্থানের পথ খুঁজতে খুঁজতে এশিয়ান হাতি নাই হয়ে যাবে!’
সিলেটের ওসমানীনগরে এনা ও ইউনিক পরিবহনের দুটি বাসের সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই একজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন।
শনিবার (৫ জুলাই) সকাল ৬টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কুরুয়া বাজারের পাশে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত রাজু মিয়ার (২৬) বাড়ি ফরিদপুর জেলার তারাকান্দা থানায়। তিনি ইউনিক বাসের হেলপার ছিলেন।
দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে অন্তত দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সিলেট থেকে ছেড়ে আসা ইউনিক পরিবহনের বাসের সঙ্গে ঢাকা থেকে আসা এনা পরিবহনের বাসটির সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই ইউনিকের হেলপার রাজু মিয়ার নিহত হন। বেপরোয়া গতিতে ভুল পাশ থেকে এসে এনা পরিবহনের ওই কোচটি এ দুর্ঘটনা ঘটায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ফায়াস সার্ভিস, ওসমানীনগর থানা পুলিশ ও শেরপুর হাইওয়ে পুলিশ এসে হতাহতদের উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
দুর্ঘটনার পর কুরুয়া বাজারের দুই পাশে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে কয়েক কিলোমিটার যানজট দেখা দেয়। পরে সকাল সোয়া ১০টার দিকে দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি দুটি সরিয়ে যানজট নিরসন করে পুলিশ।
শেরপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু তাহের দেওয়ান জানান, দুই গাড়ির সংঘর্ষ হলে বিকট শব্দে স্থানীয়রা এগিয়ে গিয়ে প্রাথমিক উদ্ধারকাজ শুরু করেন। পরে স্থানীয় থানা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাতে যোগ দেন।
তিনি আরও জানান, হাইওয়ে পুলিশ রাজুর লাশ উদ্ধার করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। বাস দুটিকে রাস্তা থেকে সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়েছে।
কেশবপুরের ঐতিহ্য কালোমুখো হনুমান খাদ্য সংকট ও বন উজাড় হয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় চলে যাচ্ছে। প্রয়োজনীয় খাবার না পেয়ে মারাও যাচ্ছে। কালোমুখো হনুমান রক্ষার দাবি উঠেছে।
জানা গেছে, একসময় কেশবপুরে ছিল কালোমুখো হনুমানের অভয়ারণ্য। বন উজাড় হয়ে যাওয়ায় এবং খাদ্য সংকটে সময়ের গতির সঙ্গে কমে যাচ্ছে হনুমান। বর্তমানে ১৮০ থেকে ২০০টি হনুমান কেশবপুরে রয়েছে বলে স্থানীয় বন বিভাগ জানায়। এখান থেকে ৪/৫ বছর আগে ছিল ২৫০ থেকে ৩০০ টি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেশ বিভক্তির আগে ভারতের মাড়োয়াররা ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য যশোরের কেশবপুরে বসবাসের পাশাপাশি আসা-যাওয়া করত। এ সময় তাদের যানবাহনে করে দুটি কালোমুখো হনুমান ভারত থেকে কেশবপুরে আসে। সেই থেকে হনুমানের এখানে পত্তন শুরু হয়। ওই এক জোড়া হনুমান থেকে এখানে শত শত হনুমানের কালের আবর্তনে ওরা আজ বিলুপ্তির পথে। একসময় কেশবপুর অঞ্চলে ঘন বনজঙ্গল ছিল। এসব বনের ফল ও লতাপাতা খেয়ে ওরা জীবিকা নির্বাহ করত। বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বন উজাড়সহ ঘনবসতি এবং এলাকায় অবৈধ ইটভাটায় গিলে খাচ্ছে এসব বনের কাঠ। এতে উজাড় হচ্ছে বন। এদিকে কেশবপুর উপজেলায় পল্লীবিদ্যুতের তারে কভার সিস্টেম না থাকায় প্রায়ই বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ওরা মারা যাচ্ছে। খাদ্য সংকটের কারণে কেশবপুরের হনুমান দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলে যাচ্ছে।
উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেন বলেন, কেশবপুর এলাকায় বনজঙ্গল কমে যাওয়ার কারণে হনুমানের খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। ওদের রক্ষায় সরকারিভাবে খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে।
কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেকসোনা খাতুন বলেন, হনুমান রক্ষায় সরকারিভাবে খাদ্য সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন এনজিও ব্যক্তি গত ভাবেও অনেকেই খাদ্য দেয়, যার কারণে ওরা গ্রামাঞ্চল ছেড়ে বর্তমানে শহরে বেশি বিচরণ করছে।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনা আক্রান্ত এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত জেবল হক (৮০) কবিরহাট উপজেলার চাপরাশিরহাট ইউনিয়নের লামছি গ্রামের মৃত গনু মিয়ার ছেলে।
বুধবার (২ জুলাই) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. রাজীব আহমেদ চৌধুরী। এর আগে, গতকাল মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাত ১০টার দিকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে তার মৃত্যু হয়।
ডা. রাজীব আহমেদ চৌধুরী বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। গত মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ওই বৃদ্ধ হাসপাতালে ভর্তি হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১০টার দিকে মারা যান তিনি। এদিকে গত ২৪ ঘন্টায় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের এক জনের নমুনা পরীক্ষায় একজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা.মরিয়ম সিমি বলেন, মারা যাওয়া ব্যক্তি সকালে হাসপাতালে ভর্তি হয়। দুপুরে তার করোনা শনাক্ত হওয়ার পর সেখানে রাতে তার মৃত্যু হয়। এখন পর্যন্ত নোয়াখালীতে মোট ৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। কিট সল্পতার কারণে উপজেলা পর্যায়ে করোনা টেস্ট এখনো শুরু করা হয়নি।
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের নেতৃত্ব নিয়ে চলমান বিরোধের জেরে ক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেমসহ সাংবাদিকদের উপর অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৩০ সাংবাদিক আহত হয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে, ক্লাবের কথিত সভাপতি মাদকাসক্ত আওয়ামী দোসর আবু সাঈদ ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারীর নেতৃত্বে আল ইমরান ও অমিত ঘোষ বাপ্পাসহ ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্তরা এই হামলা চালায়।
সোমবার (৩০ জুন) সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে এই হামলায় ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সাংবাদিক ও প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেম, ভোরের আকাশের সাংবাদিক আমিনুর রহমান, ডিবিসি নিউজের সাংবাদিক বেলাল হোসেন, অনির্বানের সোহরাব হোসেনসহ অন্তত ৩০ সাংবাদিক গুরুতর আহত হয়েছেন।
হামলার শিকার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রেসক্লাবে একটি সভা করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ঠিক সেই মুহূর্তে আবু সাঈদ ও আব্দুল বারীর নেতৃত্বে আলিপুর থেকে আনা ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্তরা আমাদের উপর পরিকল্পিতভাবে হামলা করে। তাদের হামলায় আমাদের অন্তত ৩০ জন সাংবাদিক ও সদস্য আহত হয়েছেন।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, আবু সাঈদ ও আব্দুল বারী দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে প্রেসক্লাব দখল করে রেখেছেন এবং তাদের মতের বিরুদ্ধে গেলেই এভাবে হামলা ও নির্যাতন চালানো হয়।
এই ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় সাতক্ষীরার সাংবাদিক মহলে তীব্র ক্ষোভ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। সাংবাদিকরা অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছেন।
ঘটনার পর থেকে প্রেসক্লাব এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
কুমিল্লার দাউদকান্দি পৌরসভার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। বাজেট ঘোষণা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও দাউদকান্দি পৌর প্রশাসক রেদওয়ান ইসলাম।
সোমবার (৩০ জুন) দুপুরে পৌরসভা হলরুমে এ বাজেট ঘোষণা করা হয়। বাজেটে সর্বমোট আয় ৪২ কোটি ৯১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা ও মোট ব্যয় ৩৬ কোটি ৭৪ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়। পৌর প্রশাসক রেদওয়ান ইসলাম তার প্রস্তাবিত বাজেটে ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে রাজস্ব খাত থেকে ১৩ কোটি ২৩ লাখ ৪১ হাজার ৩ শত ৩১ টাকা ও উন্নয়ন খাত থেকে ২৯ কোটি ৬৮ লাখ ১৮ হাজার ৪৫ টাকা আহরনের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। বাজেটে উদ্ধৃত্ত ধরা হয়েছে ৬ কোটি ১৭ লাখ ২ হাজার ৩ শত ৭৮ টাকা।
এছাড়াও বাজেটে খাতওয়ারী ব্যয়ের হিসেবে দেখা যায় রাজস্ব খাতে ব্যয় ৯ কোটি ৫৯ লাখ ৫৭ হাজার টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় দুই কোটি ১৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.হাবিবুর রহমান,পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম, হিসাবরক্ষক শাহাদাত হোসেনসহ পৌরসভার অন্যান্য কর্মকর্তারা।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে মাদকাসক্ত হয়ে মাতলামি করার প্রতিবাদ করায় ইয়াছিন (৩৮) ও সিপন( ৩২) নামে দুই যুবক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহতদের মধ্যে একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং অপরজনকে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
শুক্রবার দিবাগত রাতে উপজেলার মুড়াপাড়া টঙ্গীরঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
গুলিবিদ্ধ ইয়াছিন মুড়াপাড়ার হাউলিপাড়া এলাকার ইদু মিয়ার ছেলে এবং সিপন টঙ্গীরঘাট এলাকার আলাউদ্দিনের ছেলে।
রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তরিকুল ইসলাম জানান, রাত ১১টার দিকে ইয়াছিন তার স্ত্রীকে নিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে খালাতো বোনের বাড়ি যাচ্ছিলেন। পথে স্থানীয় সোহরাব নামের এক যুবক মাদকাসক্ত অবস্থায় তাদের উদ্দেশে গালিগালাজ করলে ইয়াছিন প্রতিবাদ করেন। পরে তিনি খালাতো ভাই সিপনকে নিয়ে স্থানীয় অহিদুল্লার বাড়িতে গিয়ে ঘটনার কথা জানান। সেখানেই সোহরাব ক্ষিপ্ত হয়ে পিস্তল দিয়ে তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে ইয়াছিনের মাথায় ও সিপনের পায়ে গুলি লাগে।
তাদের প্রথমে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সিপনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং ইয়াছিনকে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
ঘটনার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে গুলির খোসা উদ্ধার করেছে এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করেছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
মন্তব্য