“গাড়ি থেকে নেমে আমরা লাইভের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। আমার ক্যামেরাম্যান আমাকে যখন ফোকাস করছিল, তখন চার-পাঁচজন লোক তাকে ঘিরে ধরল। বলছিল, ‘তু্ই ছবি তুললি কেন? আমদের ছবি তুললি কেন?”
মঙ্গলবার নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের দিনভর সংঘর্ষের মধ্যে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হামলার শিকার দীপ্ত টিভির রিপোর্টার আসিফ সুমিত বলছিলেন নিউজবাংলাকে।
সংঘর্ষ চলাকালে সাংবাদিকদের, বিশেষ করে যাদের হাতে ক্যামেরা ছিল, তাদের উদ্দেশ্যমূলকভাবে পেটানোর বিষয়টি স্পষ্ট। হামলার শিকার বেশির ভাগ গণমাধ্যমকর্মী ছিলেন ব্যবসায়ীদের দিকে। তবে যারা ছাত্রদের দিকে ছিলেন, তারাও হামলার শিকার হয়েছেন।
যেসব গণমাধ্যমকর্মীর ওপর হামলা হয়েছে, তাদের মধ্যে সুমিতের ঘটনাটির ভিডিও ফুটেজ পাওয়া গেছে। এতে দেখা যাচ্ছে, তাকে ও তার ক্যামেরা পারসনকে দল বেঁধে ধাওয়া করছে একদল উত্তেজিত মানুষ, যারা ছিলেন ব্যবসায়ীদের পক্ষে।
রোড ডিভাইডারের লোহার পাত খুলে হাতে নেয় কেউ কেউ। এসব পাত দিয়েও পেটানো হতে থাকে সুমিত ও তার ক্যামেরা পারসনকে।
নিউজবাংলাকে এই গণমাধ্যমকর্মী বলেন, ‘আমি ক্যামেরাম্যানকে বাঁচাতে গেলাম, কিন্তু তাদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগও পাইনি। ওরা লাঠি আর রড লোহার অ্যাঙ্গেল দিয়ে মেরে যাচ্ছিল।’
সুমিত এতটাই আঘাত পেয়েছেন যে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। তিনি রাজধানীর পান্থপথের বিআরবি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
হামলাকারীরা কি কিছু বলছিল? কেন তাদের এই ক্ষোভ- এমন প্রশ্নে দীপ্ত টিভির রিপোর্টার বলেন, ‘কারণ ছাড়াই মারছে। একজন যখন মারছে, তখন আরেকজন এসে যোগ দেয়। একসময় দেখলাম আমার গাল চুয়ে রক্ত পড়ছে; তখন কোনোভাবে পারছি না।’
মার থেকে রক্ষা পেতে মরিয়া সুমিত তখন হামলাকারীদের বলেন, ‘আমি রোজা, আল্লাহর ওয়াস্তে মাফ করেন।’
কিন্তু হামলাকারীরা তাতেও ক্ষান্ত হয়নি। গাউছিয়া থেকে নীলক্ষেত মোড় পর্যন্ত মারতে মারতে নিয়ে যাওয়া হয় দুজনকে।
সুমিত চিনেছেন, হামলাকারীরা ব্যবসায়ীদের পক্ষের। তিনি বলেন, ‘দোকানের কর্মচারী, এই শ্রেণিই বেশি মেরেছে। তবে দু-তিনজন ছিল, আমাদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছে।’
আঘাত কতটা গুরুতর- এ বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নন সুমিত। বলেন, ‘গতকাল অবজারবেশনে ছিলাম। আজ কেবিনে দিয়েছে। ডাক্তার বলেছেন, সিটিস্ক্যানের পুরো রিপোর্ট এখনও আসেনি। পুরো রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছে। আরও এক দিন অবজারবেশনে রাখতে চায়।’
‘সাংবাদিক হইলে তো আরও মারমু’
বাংলা ট্রিবিউনের রিপোর্টার শাহেদ শফিক হামলার শিকার হয়েছেন সুমিতকে বাঁচাতে গিয়ে।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘নিউ মার্কেটের সামনে যে ফুট ওভারব্রিজ আছে, সেখানে দাঁড়িয়েছিলাম। দেখলাম কিছু ব্যবসায়ী সুমিত ও তার ক্যামেরাপারসনকে মারতে মারতে নিয়ে যাচ্ছিল। তখন তাদের থামাতে গেলাম। এরপর এলোপাতাড়িভাবে লাথি, কিল, ঘুষি শুরু হয়ে যায়।
“পরে মাথার ওপর হাত দিয়ে রাখছি। আমি বলছিলাম, এরা সাংবাদিক, এদের মাইরেন না। তখন তারা বলে, ‘সাংবাদিক হইলে তো আরও মারমু।’
“আমার গলায় তখন আমার প্রতিষ্ঠানের কার্ড ছিল। আরেকজন বলল, ‘এটাও সাংবাদিক। এটাকেও মার’।”
পিটিয়েছে ছাত্ররাও
আজকের পত্রিকার রিপোর্টার আল- আমিন রাজু জানিয়েছেন, তাকে পিটিয়েছে ছাত্ররা।
তিনি বলেন, ‘হঠাৎ দেখলাম রাস্তার পাশে একটা বাচ্চা ছেলেকে মারতেছে ওরা। আমি মোবাইল দিয়ে ভিডিও নিতেছি; ভিডিও শেষ করে চলে যাচ্ছিলাম। পেছন থেকে ধরেছে।
‘বললাম আমি সাংবাদিক। তারা বলল, ভিডিও করা যাবে না। এটা বলতে বলতে একটা ছেলে এসে মারধর শুরু করল।… থাপ্পড় দিছে, আমার চশমা পড়ে গেছে, মোবাইল হাতে থেকে পড়ে গেছে। তখন পেছন থেকে আমাকে আরও জোরে আঘাত করছে।’
কী দিয়ে মেরেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রামদার পেছনের অংশ দিয়ে বাড়ি দিয়েছে একজন।’
পিটুনির পর রাজুকে নেয়া হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
রাজু বলেন, ‘শুধু আমার না, কাল ওরা প্রচণ্ড আক্রমণাত্মক ছিল। ওরা কাউকে ছবি তুলতে দিচ্ছিল না, ভিডিও করতে দিচ্ছিল না। চেষ্টা করলেই চড়-থাপ্পড় দিত, গালাগাল করত। অনেকের মোবাইল ফেলে দিছে।’
দুই পক্ষের ইটপাটকেলে আহতদের মধ্যে আছেন ইউএনবির ফটো জার্নালিস্ট রাকিবুল হাসান। ঢাকা কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে যখন তিনি ছবি তুলছিলেন, তখন কলেজের ওপর থেকে ঢিল এসে লাগে তার ডান পায়ে।
সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল
এনটিভি অনলাইনের সাংবাদিক মাসুদ রায়হান পলাশ জানান, দুই পক্ষই গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশ্য করে ঢিল ছুড়েছে।
তিনি বলেন, ‘ওরা লক্ষ্য করে ইট মারছিল। যখনই ছবি তুলতে গেছি; তখনই কথা বলছি, তখনই ঠেলে বের করে দিত।’
পলাশ আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
হামলার দায় নেবেন না ব্যবসায়ী নেতা
সাংবাদিকদের ওপর হামলার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি কী বলব বলেন তো। কাল মার্কেট বন্ধ। এখানে কর্মচারীরা কোথা থেকে আসে?’
সুনির্দিষ্ট কিছু ঘটনা তুলে ধরলে তিনি বলেন, ‘ফুটেজ দেখে সে যেই হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
তবে এসব ঘটনার দায় নিতে চান না এই ব্যবসায়ী নেতা। বলেন, ‘আমি এর দায় নেব কেন? যে করছে সে নেবে। যে করেছে সে অন্যায় করেছে।’
আরও পড়ুন:‘ফেস দ্য পিপল’ নামের ইউটিউব চ্যানেলের এক টকশোতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জঙ্গির সঙ্গে তুলনা করায় ধর্মীয় বক্তা এনায়েত উল্লাহ আব্বাসীর নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার আবেদন করা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন মঙ্গলবার রাতে শাহবাগ থানায় এ আবেদন করেন।
মামলায় অনুষ্ঠানের সঞ্চালক সাইফুর সাগরকেও আসামি করা হয়েছে।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি অপারেশন) কামরুজ্জামান বলেন, ‘আল মামুন নামের একজন এনায়েত উল্লাহ আব্বাসীর নামে মামলার আবেদন করেছেন। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।’
কী আছে আবেদনে
আবেদনে আল মামুন উল্লেখ করেন, গত ১৪ মে রাতে ইউটিউবে আমি ফেস দ্য পিপল নামের একটি টকশো অনুষ্ঠান শুনছিলাম। যার শিরোনাম ছিল ‘১১৬ জন আলেম নিয়ে অভিযোগ বিশ্লেষণ। ডিবেট, দুইপক্ষ মুখোমুখি!’
টকশোতে ড. মুহাম্মাদ এনায়েত উল্লাহ আব্বাসী নামের একজন বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জঙ্গির সঙ্গে তুলনা করে বলেন, জঙ্গিবাদ কি খারাপ জিনিস! কে বলেছে, জঙ্গিবাদ খারাপ জিনিস! জঙ্গি বিমান! এটা কি সন্ত্রাসী বিমান! জঙ্গি শব্দটা এসেছে ‘জাং’ থেকে। ফার্সিতে জাং বলে যুদ্ধকে, ফাইট। অতএব ফ্রিডম ফাইটাররাও এক অর্থে জঙ্গি।
ডিজিটাল প্ল্যাটফরমে এ ধরনের মন্তব্যের মাধ্যমে এনায়েত উল্লাহ বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে স্পষ্টত প্রপাগাণ্ডা ও প্রচার চালিয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধে অংশগ্রহণকে জঙ্গিবাদের সঙ্গে তুলনা করে একদিকে জঙ্গিদের মদদ দিয়েছেন, অন্যদিকে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ও তাদের অবদানকে অপমান, অপদস্ত করেছেন।
আবেদনে বলা হয়, অনুষ্ঠানের সঞ্চালক জামায়াত ঘেঁষা ও মৌলবাদী শক্তির দোসর সাইফুর সাগর। তিনি অনুষ্ঠানের মধ্যে এই বক্তব্য এক্সপাঞ্জ না করে তা চলমান রেখে এনায়েত উল্লাহকে এই অপরাধ সংগঠনে সহায়তা করেছে এবং কোনো ধরনের কাটছাঁট না করে ইউটিউবে কন্টেন্ট আকারে তা পোস্ট ও প্রচার করে তিনিও একই অপরাধ করেছেন।
এই কন্টেন্ট ইউটিউবে প্রকাশ ও প্রচার করে ফেসবুকসহ বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফরমে ছড়িয়ে দিয়েছে, এ কারণে এই দুজনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা আবশ্যক।
আমরা মনে করি, বাংলার সাধারণ মুসলমানদের মধ্যে জঙ্গিবাদ ছড়িয়ে দিতে এবং জঙ্গিবাদের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে আসামিরা যোগসাজশে অনলাইন প্ল্যাটফরম ব্যবহার করে পাকিস্তানি প্রেসক্রিপশনে বাংলাদেশকে নয়া-আফগানিস্তান বানানোর হীন প্রচেষ্টায় রত রয়েছে।
আরও পড়ুন:কুমিল্লা মুরাদনগরে চুরির অভিযোগ তুলে যুবককে পিটিয়ে হত্যার দায়ে স্বামী-স্ত্রীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
জেলার অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতে মঙ্গলবার দুপুরে এই রায় দেন বিচারক রোজিনা খান।
দণ্ড পাওয়া আসামিরা হলেন, মুরাদনগর উপজেলার কাজিয়াতল গ্রামের ময়নাল হোসেন ও তার স্ত্রী নাছিমা আক্তার।
বাদীর আইনজীবী রফিকুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন।
২০১৫ সালের ১৪ জুলাই কাজিয়াতল এলাকার শামছুল আলম মনিরকে চুরি অভিযোগে পিটিয়ে হত্যা করে আসামিরা। এ ঘটনায় নিহতের বাবা মোসলেহ উদ্দীন সরকার ৭ জনের নামে মুরাদনগর থানায় মামলা করেন।
বিচারক দুই আসামিকে যাবজ্জীবন দেয়ার পাশাপাশি এক লাখ টাকা করে জরিমানা করেছেন। তা অনাদায়ে আরও এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
অন্য আসামিদের খালাস দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:তিন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম, ঘুষ বাণিজ্য, টেন্ডারে অনিয়ম খতিয়ে দেখতে আলাদা তিন তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
এ তিন বিশ্ববিদ্যালয় হলো- খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।
মঙ্গলবার ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমগীর এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘তিন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ওঠা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। খুলনা ও রুয়েটের অনিয়ম তদন্ত করে দুদকে প্রতিবেদন পাঠানোর কথা রয়েছে। দুদকও এ বিষয়ে তদন্ত করছে। বাকি একটির তদন্ত কাজ ইউজিসি নিজ উদ্যোগে শুরু করেছে।’
অধ্যাপক আলমগীর বলেন, ‘তদন্ত কাজ দ্রুত শেষ করতে অন্য বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কমিটিতে রাখা হয়েছে। কমিটি প্রতিবেদন পাঠালে তা মূল্যায়ন করে পরে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় আইন ডিসিপ্লিন বিভাগের প্রধান নিয়োগে অনিয়ম করা হয়েছে। নিয়োগের সময় অধ্যাপক ওয়ালিউর হাসনাতের প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ছিল না বলে অভিযোগ ওঠে। সেটি নিয়ে বিতর্ক উঠলে শিক্ষকদের একটি অংশ দুদকে লিখিতভাবে অভিযোগ দেয়। এরপর দুদক থেকে তদন্ত করতে নির্দেশ দেয়া হলে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ইউজিসি।
এদিকে রুয়েটের উপাচার্য তার নিকট আত্মীয়কে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়ায় বিষয়টি নিয়ে বির্তক তৈরি হয়েছে। আবেদন করে বাদ পড়া প্রার্থীরা এ বিষয়ে দুদকে অভিযোগ দিলে সেখান থেকে ইউজিসিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন পাঠাতে বলা হয়। তার ভিত্তিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
অন্যদিকে ময়মনসিংহের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মচারী নিয়োগে আইন অমান্য করা, টেন্ডার বাণিজ্যসহ নানা ধরনের অনিয়ম উঠেছে উপাচার্যের বিরুদ্ধে এসব বিষয় খতিয়ে দেখতে ইউজিসি থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:মূল অপরাধ যেহেতু বাংলাদেশে সংঘটিত হয়েছে, সেহেতু ভারতে বিচারের আগে প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদারকে ঢাকা ফেরত চাইবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মঙ্গলবার ফরেন এসডিজি বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা বিষয়ক দ্বিতীয় জাতীয় সম্মেলনের প্যারালাল সেশন-১ এ যোগদান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আনিসুল হক।
বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিট (জিআইইউ) যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে।
সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইনমন্ত্রী বলেন, জনগণের ন্যায়বিচারে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। এ লক্ষ্যে একটি গণমুখী বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ই-জুডিশিয়ারি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার।
‘জনগণের ন্যায়বিচারে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে করোনা মহামারির সময়কালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় আইন ও বিচার বিভাগ ভার্চুয়াল আদালত ব্যবস্থা চালু করে। এই পদক্ষেপ করোনাকালে জরুরি সমস্যা মোকাবেলা এবং কারাগারে বন্দিদের বাড়তি চাপ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এসডিজি বাস্তবায়নের যাত্রায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার সপ্তম ও অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে একটি সমন্বিত কর্মপদ্ধতি নিয়েছে এবং মন্ত্রণালয়গুলোর ম্যাপিং, আর্থিক কৌশল, পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন, ডেটা গ্যাপ বিশ্লেষণ, জাতীয় কর্মপরিকল্পনা, এপিএ-তে এসডিজি অর্ন্তভুক্তিসহ অনেক কাজ সম্পন্ন করেছে।’
আনিসুল হক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার একটি জনকেন্দ্রিক আধুনিক গণতন্ত্র গ্রহণ করেছে। ফলে দেশে সর্বোচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা শক্তিশালীসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হয়েছে, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিসহ দারিদ্র্য হ্রাস পেয়েছে। আর এসব উন্নয়ন বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হওয়ার ক্ষেত্রে অবদান রেখেছে।’
সম্মেলনে বক্তব্য শেষে আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনা খুব কঠিন। তবে মানি লন্ডারিং আইন যেহেতু বিশ্বের সব জায়গায় কঠোরভাবে মানা হচ্ছে, তাই টাকা ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আমরা আশাবাদী।
‘আমাদের প্রথম পদক্ষেপ হবে তাকে ফিরিয়ে আনা। এবং যে মুহূর্তে তাকে ফিরিয়ে আনা হবে, তখন থেকে তার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে। পিকে হালদারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ রয়েছে সেই অভিযোগের বিচার করে তার পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনা রয়েছে।’
আনিসুল হক বলেন, ‘আরাফাত রহমান কোকোর সময় যে ব্যাপারটা ছিল, তখন আমরা যাদের সঙ্গে কোলাবরেট করেছিলাম তাদের জন্য টাকা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
‘এখন পি কে হালদারের পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনাটা আরও সহজ হবে বলে আমার বিশ্বাস। কারণ সারাবিশ্বে মানি লন্ডারিংয়ের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর আইন করা হয়েছে। তা আমাদের দেশেও রয়েছে। সে ক্ষেত্রে আমার মনে হয় সঠিকভাবে পদক্ষেপ নিলে অর্থ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।’
‘আমি এ ব্যাপারে অ্যাডভান্স কিছু বলতে চাই না। নিশ্চয়ই আমরা তাদের সঙ্গে আলাপে বসব। আমাদের এখানে যেহেতু মূল অপরাধটা করা হয়েছে, আমরা তাকে আগে চাইবো সেটাই স্বাভাবিক।’
এসডিজি বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা বিষয়ক তিনদিনব্যাপী সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে মঙ্গলবার প্যারালাল সেশন-১ এ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, জননিরাপত্তা বিভাগ, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, আইন ও বিচার বিভাগ এবং লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিবগণ তাদের স্ব-স্ব মন্ত্রণালয়/বিভাগের এসডিজি বাস্তবায়ন বিষয়ক অগ্রগতি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
এই সেশনে বিশেষ অতিথি ছিলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। সঞ্চালনা করেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোসাররফ হোসেন ভূঁইয়া। আলোচক ছিলেন প্রতিরক্ষা সচিব গোলাম মো. হাসিবুল আলম ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক।
আরও পড়ুন:বিষাক্ত ইনজেকশন পুশ করে স্বামীকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে যশোরের এক নারীর বিরুদ্ধে। বলা হচ্ছে, যশোর জেনারেল হাসপাতালে অসুস্থ স্বামীর শরীরে বিষাক্ত ইনজেকশন পুশ করার সময় হাতেনাতে ধরা পড়েছেন ওই নারী।
হত্যাচেষ্টার শিকার ৪৫ বছর বয়সী ব্যক্তির নাম নূর ইসলাম। তার বাড়ি যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার টাওরা গ্রামে।
হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে ঘটনাটি ঘটে। পুলিশ ও হাসপাতালের দায়িত্বরত সেবিকারা জানান, নূর ইসলাম অসুস্থ হয়ে যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
ঘটনার সময় তার প্রথম স্ত্রী জয়গুন নেসা একটি ওষুধের শিশি থেকে সিরিঞ্জ দিয়ে বিষাক্ত ওষুধ নিয়ে হাতের ক্যানোলার মধ্যে পুশ করার চেষ্টা চালান।
এ সময় পাশের বেডের রোগীর স্বজনদের বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হয়। পরে সেবিকাদের খবর দিলে তারা হাতেনাতে জয়গুন নেসাকে ধরে ফেলেন।
পরে হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের খবর দিলে তাকে আটক করা হয়।
পুলিশ ও সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসাবাদে ওই নারী দোষ স্বীকার করেন। তিনি জানান, ঝিকরগাছার একটি দোকান থেকে বিষাক্ত ওই ওষুধ গোপনে কিনে হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলেন। পরে সেটি স্বামীর শরীরে কৌশলে পুশ করে হত্যার চেষ্টা চালান।
স্বামী নূর ইসলাম দ্বিতীয় বিয়ে করায় সংসারে কলহ লেগে থাকতো। এজন্য জয়গুন তার স্বামী নূর ইসলামকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ওসি তাজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জয়গুন নামে এক নারীকে স্বামীকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে থানায় আনা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।’
এবি ব্যাংক থেকে ভুয়া ওয়ার্ক অর্ডারের মাধ্যমে ১৭৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের মামলায় জামিন নিতে যান এরশাদ আলী।
হাইকোর্ট তাকে জামিন না দিয়ে পুলিশকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছে। পরে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়।
মঙ্গলবার বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইজহারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
আদালতের আদেশের বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।
দুদকের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। আর আসামির পক্ষে ছিলেন শেখ মো. জাকির হোসেন।
মামলার বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়, ২০২০ সালের ৮ জুন এরশাদ ব্রাদার্স করপোরেশনের মালিক রিকশাচালক থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া এরশাদ আলীর বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তার মালিকানাধীন এরশাদ গ্রুপ ভুয়া ব্যাংক গ্যারান্টিতে এবি ব্যাংকের ১৭৬ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে মামলা করা হয়েছে।
মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে এরশাদ ব্রাদার্স করপোরেশনের মালিক এরশাদ আলীকে।
এ ছাড়া এবি ব্যাংকের সাবেক এমডি মসিউর রহমান চৌধুরী ও শামীম আহমেদ চৌধুরী, সাবেক ইভিপি ও শাখা ম্যানেজার এ বি এম আবদুস সাত্তার, এভিপি ও রিলেশনশিপ ম্যানেজার আবদুর রহিম, এসভিপি ও সাবেক রিলেশনশিপ ম্যানেজার আনিসুর রহমান, ভিপি শহিদুল ইসলাম, এভিপি মো. রুহুল আমিন, ইভিপি এবং হেড অব সিআরএম ওয়াসিকা আফরোজী, ভিপি, সিএমআরের সদস্য মুফতি মুস্তাফিজুর রহমান, সাবেক এসইভিপি ও হেড অব সিআরএম সালমা আক্তার, এভিপি ও সিআরএম সদস্য এমারত হোসেন ফকির, সাবেক প্রিন্সিপাল অফিসার তৌহিদুল ইসলাম, এসভিপি ও সিআরএমের সদস্য শামীম এ মোরশেদ, ভিপি ও সিআরএমের সদস্য খন্দকার রাশেদ আনোয়ার, এভিপি ও সিআরএমের সদস্য সিরাজুল ইসলাম, সাবেক ভিপি ও ক্রেডিট কমিটির সদস্য মাহফুজ-উল ইসলামকে আসামি করা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সময়ে একে অন্যের সহায়তায় জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে জাল কার্যাদেশ প্রস্তুত করে ছয়টি জাল কার্যাদেশের বিপরীতে ১৬৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন।
মামলায় উল্লিখিত এবি ব্যাংক কাকরাইল শাখার কর্মকর্তারা প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন ছাড়া সাতটি অবৈধ ব্যাংক গ্যারান্টির মাধ্যমে আরও ১০ কোটি টাকা ঋণ দেন, তা তুলে আত্মসাৎ করেন। সব মিলিয়ে আত্মসাৎ করা টাকার পরিমাণ ১৭৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা।
আরও পড়ুন:নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থে কেনা বিলাসবহুল ১০টি গাড়ি বিক্রি করে সেই টাকা প্রতিষ্ঠানটির সাধারণ তহবিলে জমা করার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
মঙ্গলবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপসচিব ড. মো. ফরহাদ হোসেনের সই করা এক অফিস আদেশে এ নির্দেশনা দেয়া হয়।
আদেশে বলা হয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ এর ধারা ৪৪ (১) অনুযায়ী প্রত্যক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সাধারণ তহবিল থাকবে এবং ৪৪ (৭) ধারা অনুযায়ী সাধারণ তহবিলের অর্থ ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় ব্যয় ব্যতীত অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যয় করা যাবে না।
নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণা উন্নয়ন খাতে প্রয়োজনীয় ব্যয় না করে ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ১২টি গাড়ি কেনে। এর মধ্যে ১০টি বিলাসবহুল গাড়ি রয়েছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা উন্নয়নের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।
অফিস আদেশে আরও বলা হয়, উল্লিখিত ১০টি বিলাসবহুল গাড়ি খোলা দরপত্রের মাধ্যমে বিক্রি করে বিক্রয়লব্ধ টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা উন্নয়নে ব্যয়ের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানের সাধারণ তহবিলে জমা করে সংশ্লিষ্ট বিভাগ এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে জরুরি ভিত্তিতে জানানোর অনুরোধ করা হলো।
যে ১০টি গাড়ি বিক্রি করতে হবে
যানবাহনের ধরন ও মডেল হলো- হার্ড জিপ (টয়োটা প্রাডো টি এক্স), মডেল-২০১৫; হার্ড জিপ (রেঞ্জ রোভার ভোগ পি ৪০০ ), মডেল-২০১৯; হার্ড জিপ (রেঞ্জ রোভার ভোগ পি ৪০০ ই), মডেল-২০১৯; হার্ড জিপ (রেঞ্জ রোভার অটোবায়োগ্রাফি), মডেল-২০১৯; হার্ড জিপ (রেঞ্জ রোভার ভোগ পি ৪০০), মডেল-২০১৯; হার্ড জিপ (রেঞ্জ রোভার অটোবায়োগ্রাফি), মডেল-২০১৯, হার্ড জিপ (রেঞ্জ রোভার অটোবায়োগ্রাফি), মডেল-২০১৯; হার্ড জিপ (রেঞ্জ রোভার ভোগ পি ৪০০ ই), মডেল-২০১৯; কার (স্যালুন) মার্সিডিজ বেঞ্জ, মডেল-২০১৯ এবং হার্ড জিপ (রেঞ্জ রোভার ভোগ পি ৪০০ ই), মডেল-২০১৯।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য