সোমবার রাতে শুরু হওয়া ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ মঙ্গলবার দিনভর রূপ নেয় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে। ব্যবসায়ী-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে চলা সংঘর্ষে শতাধিক আহত হয়েছেন। মঙ্গলবারের সংঘর্ষে একজন নিহতও হয়েছেন।
বুধবার সকাল থেকে শান্ত ছিল পরিস্থিতি। ব্যবসায়ী নেতারা সংবাদ সম্মেলন করে দুপুরের পর থেকে নিউ মার্কেট এলাকার সব মার্কেটের দোকান খোলার ঘোষণা দেন। দোকান খুলতেও শুরু করে। এমন সময় ৪টা ৫০ মিনিটের দিকে ঢাকা কলেজ থেকে বের হয়ে আসেন শিক্ষার্থীরা। আবারও দেখা দেয় উত্তেজনা।
নিউ মার্কেট এলাকার সর্বশেষ পরিস্থিতি জানা যাবে নিউজবাংলা টোয়েন্টিফোর ডটকমের লাইভ থেকে।
নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সংঘর্ষের বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা।
নিউ মার্কেট এলাকার অন্য কোনো মার্কেটের দোকান খোলা নিয়ে শিক্ষার্থীদের আপত্তি নেই বলে জানিয়েছে পুলিশ। যেহেতু নিউ মার্কেট থেকেই সংঘাতের সূত্রপাত। তাই সুষ্ঠু সমাধান না হওয়া পর্যন্ত নিউ মার্কেটের দোকান খোলা নিয়েই তাদের আপত্তি।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার শাহিন শাহ বলেন, শিক্ষার্থীরা অন্য কোনো মার্কেট খুলতে আপত্তি না করলেও নিউ মার্কেট খোলায় আপত্তি জানিয়েছেন।
চাঁদনি চকের বলাকা সিনেমা হলের পাশে মালপত্র গুটিয়ে বসে আছেন ফুটপাতের ব্যবসায়ী আজমল হোসেন।
বলেন, ‘দুই দিন পর সাড়ে ৪টার দিকে ভয়ে ভয়ে মাল নিয়ে বসছি। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই আবার পরিস্থিতি খারাপ হলে সব গুটিয়ে ফেলেছি। গত ২ বছর করোনার কারণে ঈদে বেচাবিক্রি করতে পারিনি। এবার অনেক টাকার মাল তুলছি। এরকম চলতে থাকলে বউ-বাচ্চা নিয়ে পথে বসতে হবে।’
তৃতীয় দিনে দোকান খোলার ঘোষণা দিলেও ফের উত্তেজনা ছড়ালে দোকান খোলেনি নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা।
ইফতারের আগে নিউ মার্কেট এলাকায় যান চলাচল অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার শাহিন শাহ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আপনারা দেখছেন যান চলাচল স্বাভাবিক আছে। আজকে সারা দিন রাস্তা সচল ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিকেল সাড়ে ৫টার একটু আগে, শিক্ষার্থীদের কিছু অংশ বের হয়ে উশৃংঙ্খল জনতাকে ধাওয়া দেয়। পর আমরা অবস্থান নিয়েছি।’
দোকান খোলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ী সমিতি ও শিক্ষকদের মধ্যে ইতিমধ্যে কথা হয়েছে। এটার কিছু অগ্রগতিও আছে। একসঙ্গে বসতে চেয়েছেন। কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইফতারের পরে আলোচনায় বসা হবে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নিউ মার্কেট খোলা নিয়ে ছাত্রদের আপত্তি রয়েছে। অন্য কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে তাদের এমন কোনো কথা নেই।’
ব্যবসায়ীরা সংঘাত বন্ধে তাদের দোকানগুলোতে সাদা পতাকা তুলে দিয়েছেন। তারা চাইছেন বিষয়টির সমাধান হোক, তারা দোকান খুলুক।
চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের সামনে সতর্ক অবস্থায় পুলিশ।
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা কলেজ ক্যাম্পাসের ভেতর ঢুকে গেলে আবারও কিছু কিছু যান চলাচল শুরু করে নিউ মার্কেটের সামনের রাস্তায়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঢাকা কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কুদ্দুস শিকদার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন। সন্ধ্যার পর বিষয়টি নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে কলেজ কর্তৃপক্ষ অবশ্যই সমাধান চায় বলে জানান তিনি।
কুদ্দুস শিকদার বলেন, ‘পরিস্থিতি আমরা অবশ্যই সমাধান চাই। এ জন্য আমরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলা শুরু করেছি। আজকেই এই বিষয়ে বসে আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসা হবে।’
ফুটপাতের ব্যবসায়ীরাও তড়িঘড়ি করে তাদের জিনিসপত্র গোটানো শুরু করে।
বিকেল ৪টার পর নিউ মার্কেট, চন্দ্রিমার কিছু দোকান খুলতে শুরু করেছিল। এরপর শিক্ষার্থীদের ককটেল বিস্ফোরণ ঘটালে দোকান বন্ধ করে দিতে শুরু করে মালিকরা।
বিকলে ৪টা ৫০ মিনিটে দিকে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ ঢাকা কলেজের মূল ফটকের সামনে এগিয়ে চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের সামনের রাস্তায় কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়।