ঢাকাসহ কয়েকটি জেলায় কালবৈশাখী ঝড় বয়ে গেছে। ঝড়ের তাণ্ডবে ঘরবাড়ি ও গাছপালার ক্ষয়ক্ষতির সঙ্গে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে একাধিক জেলায়।
প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে একই পরিবারের দুজন, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, রাঙ্গুনিয়া ও ফটিকছড়িতে চার জন এবং মানিকগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লায় তিন জন মারা গেছেন।
সবশেষ পাওয়া গেছে বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের ঝড়ের খবরটি।
উপজেলার আলিমাবাদ ইউনিয়নের গাগুরিয়া গ্রামে বুধবার বিকেলে ঝড়ে বসতঘর ধসে মারা গেছেন এক বৃদ্ধ ও তার পুত্রবধূ।
মেহেন্দিগঞ্জ থানা পুলিশের ওসি শফিকুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মৃতরা হলেন ৭৫ বছরের রুস্তম আলী হাওলাদার ও তার পুত্রবধূ ৩৫ বছরের জয়নব বিবি।
শ্রীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহামদু বেপারী জানান, বিকেল পৌনে ৫টার দিকে হঠাৎ করে ঝড় শুরু হলে গাগুরিয়া গ্রামের ১৫ থেকে ২০টি ঘর বিধ্বস্ত হয়। নিজ ঘরেই চাপা পরেন রুস্তম ও জয়নব। ঝড় থামলে স্থানীয়রা গিয়ে তাদের পল্লী চিকিৎসকের কাছে নেয়। পল্লি চিকিৎসক হুমায়ন কবির তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
কালবৈশাখী ঝড়ে চট্টগ্রামের সন্দীপ চ্যানেলে স্পিডবোট ডুবে ১৪ বছরের কিশোরী নুসরাত জাহানের মৃত্যু হয়েছে।
সীতাকুণ্ডের কুমিরা ঘাট থেকে সন্দীপের মাইটভাঙ্গা ঘাটে যাওয়ার পথে বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার পর এ ঘটনা ঘটে বলে নিউজবাংলাকে জানান নৌপুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. জাফরুল্লাহ।
তিনি বলেন, ‘২০ জন যাত্রী নিয়ে স্পিডবোটটি সন্দীপের মাইটভাঙ্গা ঘাটে যাচ্ছিল। ঘাটে পৌঁছানোর একটু আগে কালবৈশাখী ঝড়ের প্রভাবে দমকা বাতাস ও প্রবল ঢেউয়ে স্পিডবোটটি ডুবে যায়। নৌপুলিশ পরে সন্দীপের মগধরা এলাকার নুসরাত জাহানের মরদেহ উদ্ধার করে। ১৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হলেও নিখোঁজ আছে এক শিশু।’
রাঙ্গুনিয়ায় ঝড়ের কবলে পড়ে পিকআপভ্যান উল্টে নিহত হয়েছেন ২ শ্রমিক।
উপজেলার চন্দ্রঘোনার সেগুনবাগান এলাকায় বুধবার সকালে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন ৭০ বছর বয়সী মো. বশির এবং ৪৫ বছরের মো. আমজাদ হোসেন। এই ঘটনায় আহতদের স্থানীয় খ্রিস্টান মিশনারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব মিল্কি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সকালে চট্টগ্রাম শহর থেকে শ্রমিকদের বহনকারী একটি পিকআপ ভ্যান কাপ্তাইয়ের দিকে যাচ্ছিল। পিকআপটি রাঙ্গুনিয়ার চন্দ্রঘোনায় এলে ঝড়ের কবলে পড়ে উল্টে যায়। এতে চালকসহ ১২ জন আহত হন। তাদের উদ্ধার করে চন্দ্রঘোনার খ্রিস্টান মিশনারি হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে বশির এবং আমজাদকে মৃত ঘোষণা করেন।’
তাদের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
অন্যদিকে ঝড়ে উপড়ে পড়া গাছের চাপায় ফটিকছড়িতে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। উপজেলার কাঞ্চননগর ইউনিয়নের ঝরঝরি এলাকায় বুধবার সকালে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. এনামুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মৃত ৪০ বছর বয়সী রিনা আক্তার ওই এলাকার মো. শাহ আলমের স্ত্রী। বুধবার সকালে বৃষ্টি আসার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির আঙিনা থেকে গরু আনতে বের হন। এ সময় হঠাৎ ঝড়ো বাতাস শুরু হলে একটি শুকনো গাছ তার ওপর উপড়ে পড়লে আহত হন তিনি। গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’
ফটিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মাসুদ হতাহতের কোনো খবর না পেলেও খোঁজ নেবেন বলে জানিয়েছেন।
গাছে চাপা পড়ে প্রাণহানি হয়েছে লক্ষ্মীপুরের রায়পুরেও।
উপজেলার কেরোয়া ইউনিয়নের মধ্য কেরোয়া এলাকায় বুধবার সকাল ৮টার দিকে ঝড়ে নারকেলগাছ উপড়ে মারা যান ৬২ বছর বয়সী রুহুল আমিন।
রুহুল আমিনের ছেলে বিল্লাল হোসেন নিউজবাংলাকে জানান, সকাল পৌনে ৮টার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়ে দোকানে যান তার বাবা। ঝড়ো বাতাস শুরু হলে বাড়ির দিকে ফিরতে থাকেন তিনি। বাড়ির কাছে পাঞ্জেগানা মসজিদের সামনে এলে একটি নারকেলগাছ উপড়ে পড়লে এতে চাপা পড়েন তার বাবা। গুরুতর অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ইসমত জেরিন বলেন, ‘হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বুকের ওপর অতিরিক্ত চাপে তার মৃত্যু হয়েছে।’
রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিপন বড়ুয়া বলেন, ‘ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।’
এদিকে কুমিল্লার মুরাদনগরে ঝড়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশার ওপর গাছ উপড়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছেন আরও চারজন। এর মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
বাঙ্গরাবাজার থানার শ্রীকাইল ইউনিয়নের শলফা গ্রামে বুধবার সকাল ৭টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
মৃত শিশু মিয়ার বাড়ি বাঙ্গরা থানার খোশঘর গ্রামে। আহতরা হলেন অটোরিকশাচালক সবুজ এবং যাত্রী নার্গিস আক্তার, ফাতেমা বেগম ও হাসান। চালকের বাড়ি পাশের রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের সরেরপাড়ে। আহত অন্যদের বাড়ি কোম্পানিগঞ্জ ও নবীনগর এলাকায়।
নিউজবাংলাকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, সকাল ৭টার দিকে অটোরিকশায় করে রামচন্দ্রপুর থেকে শ্রীকাইল যাচ্ছিলেন ওই পাঁচজন। এ সময় শলফা এলাকায় পৌঁছালে ঝড়ের মধ্যে একটি গাছ অটোরিকশার ওপর উপড়ে পড়ে।
পরে স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক শিশু মিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন ও গুরুতর তিনজনকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। আহত অন্যজন সেখানেই ভর্তি আছেন।
বাঙ্গরাবাজার থানার ওসি কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, ‘ঘটনা শুনেছি। আমাদের ফোর্স সেখানে গেছে। হতাহতের সংখ্যা নিশ্চিত হয়ে পরে বিস্তারিত জানানো হবে।’
এ ছাড়া ঝড়ের সময় বজ্রপাতে মানিকগঞ্জের দৌলতপুরে প্রাণ হারিয়েছেন ৫৫ বছরের ফিরোজা বেগম।
উপজেলার খলশী এলাকায় বুধবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাকারিয়া নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সকালে বৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা দেখে ভুট্টা আনতে ক্ষেতে যান ফিরোজা বেগম। এ সময় বৃষ্টি শুরু হয়। এর মধ্যে হঠাৎ বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
ওসি বলেন, ‘পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ ঘটনায় থানায় অপমৃত্যু মামলার প্রস্তুতি চলছে।’
আরও পড়ুন:দাবদাহ আর বৃষ্টিহীনতায় পুড়ছে মাদারীপুরের পাটক্ষেত। বৈশাখের তপ্ত রোদে পাটক্ষেত নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। পাটের জমিতে ঘন ঘন সেচ দেয়ায় যেমন উৎপাদন খরচ বাড়ছে, তেমনি খরায় জমির আগাছা পরিষ্কার করতে পারছেন না কৃষকরা।
এমনটা চলতে থাকলে উৎপাদন অনেকটা হুমকির মুখে পড়বে বলেও আশঙ্কা কৃষকদের।
সদর উপজেলার খোয়াজপুর ইউনিয়নের মধ্যচক এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দিনের তীব্র দাবদাহে পাট গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। ক্ষেতেই মরে যাচ্ছে পাট গাছ। কোথাও শুকিয়ে মাঠ ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। ফলে ঘন ঘন সেচ দিয়েও গাছের আশানুরূপ পরিবর্তন আনতে পারছেন না।
অনাবৃষ্টির কারণে পাট গাছের বৃদ্ধি না হওয়ায় জমিতে আগাছার পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে দ্বিগুণ হারে।
কৃষকরা জানান, এবার প্রতি বিঘা পাট চাষ করতে খরচ হয়েছে ১৯ হাজার ৫০০ টাকার মতো। যা গতবারের চেয়ে অন্তত দুই হাজার বেশি। এরপরে গাছ শুকিয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষার জন্য সেচ দিচ্ছেন তারা। ফলে আরও বাড়তে পারে উৎপাদন ব্যয়।
খোয়াজপুরের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘কয়েকদিনের প্রচণ্ড গরমে মাঠ ফেটে চৌচির। পাটগাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। একটুখানি বড় হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন চললে এবার পাট আবাদ ধসে পড়বে। অনেকেই সেচ দিলেও এক দুই দিন পরে আবার শুকিয়ে যায়। এতে মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে উঠছে।’
আর মাদারীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় এবার ৩৭ হাজার ৪০২ হেক্টর জমিতে পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এরই মধ্যে অধিকাংশ জমিতে বপন কাজ শেষ হয়েছে এবং অনেক স্থানে চারা বড় হয়ে গেছে, কিন্তু রোগের কারণে পাটের ক্ষতি হওয়ায় চাষিদের বিকেলে পানি সেচ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক আবদুল মতিন বিশ্বাস বলেন, ‘এই গরমে পাটের কিছুটা ক্ষতি হচ্ছে সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই, তবে কৃষকদের বলছি, যেন বিকেলে সেচের মাধ্যমে পাট গাছ জীবিত রাখে। এতে গাছ মরবে না।’
মাদারীপুর জেলায় অন্যতম অর্থকরী ফসল হিসেবে পাটের অবস্থান শীর্ষে। গত বছর পাটের মূল্য ভাল পাওয়ায় কৃষকরাও এবার বেশি জমিতে পাট চাষ করেছেন।
আরও পড়ুন:তীব্র থেকে অতি তীব্র মাত্রায় পাবনা জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ। অসহনীয় দাবদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গত তিন-চার দিন তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও শুক্রবার চলতি মৌসুমে জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
এদিন পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যা জেলায় চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড। বৃহস্পতিবার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত রবিবার (২১ এপ্রিল) ঈশ্বরদীতে প্রথমবার ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের সহকারী পর্যবেক্ষক নাজমুল হক রঞ্জন জানান, জেলার তাপমাত্রা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
অতি তীব্র তাপদাহে পাবনার মানুষের দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে কৃষক, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, ইটভাটার শ্রমিকসহ দিনমজুরদের জন্য অসহ্য হয়ে পড়েছে। এছাড়াও তীব্র গরমে ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুসহ সব বয়সের মানুষ।
গাইবান্ধায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে খুন হয়েছেন আশরাফ আলী নামের এক রিকশাচালক। এ ঘটনায় অভিযুক্ত সাদেকুল ইসলামকে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সদর উপজেলার সুন্দরগঞ্জ-কুপতলা সড়কের ৭৫ নম্বর রেলগেট নামক এলাকায় এ ছিনতাই ও হত্যাকাণ্ড ঘটে। পরে শুক্রবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে সাদেকুলকে কারাগারে পাঠানো হয়।
৫০ বছর বয়সী রিকশাচালক আশরাফ আলী সদর উপজেলার খোলাহাটী ইউনিয়নের সাহার ভিটার গ্রামের মৃত ফয়জার রহমানের ছেলে। অন্যদিকে ছিনতাই ও হত্যায় অভিযুক্ত সাদেকুল ইসলাম কুপতলা ইউনিয়নের রামপ্রসাদ গ্রামের বাসিন্দা।
নিউজবাংলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন গাইবান্ধা সদর থানার ওসি মাসুদ রানা।
ওসি জানান, প্রতিদিনের মতোই বৃহস্পতিবার রাতে রিকশা নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন আশরাফ আলী। তিনি কুপতলা এলাকার ৭৫ নম্বর রেলগেটে পৌঁছালে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা সাদেকুল ইসলাম তার পথ রোধ করে ছুরি ধরে রিকশা এবং চাবি কেড়ে নিয়ে তাকে চলে যেতে বলেন। আশরাফ আলী এতে রাজি না হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে প্রথমে উভয়ের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত সাদেকুল আশরাফ আলীর পেটে ছুরিকাঘাত করেন। পরে স্থানীয়রা তাকে চিকিৎসার জন্য গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ওসি বলেন, ‘এ ঘটনার পর অভিযান চালিয়ে ওই রাতেই অভিযুক্ত সাদেকুল ইসলামকে আটক করা হয়। একই সঙ্গে ঘটনাস্থল থেকে রিকশাটিও উদ্ধার করা হয়। পরে আজ (শুক্রবার) দুপুরে সাদেকুলকে একমাত্র আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা করেন নিহতের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম। মামলায় আসামিকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে দুপুরেই আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।’
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার অগ্রণী ব্যাংকের কাশিনাথপুর শাখায় প্রায় সাড়ে ১০ কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগে শাখা ম্যানেজারসহ ৩ কর্মকর্তাকে আটকের পর কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আনোয়ার হোসেন সাগর। এদিন দুপুরে তাদের আদালতে প্রেরণ করে সাঁথিয়া থানা পুলিশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে আদালতের জিআরও এএসআই মাহবুবুর রহমান জানান, বিকেলে সাঁথিয়া থানা থেকে এনে তাদের আদালতে তোলা হয়। এ সময় কেউ তাদের জন্য জামিন আবেদন করেননি। ফলে আদালত তাদের জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আটককৃতরা হলেন- অগ্রণী ব্যাংক কাশিনাথপুর শাখার ব্যবস্থাপক (সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার) সুজানগর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা হারুন বিন সালাম, সিনিয়র অফিসার সাঁথিয়া উপজেলার কাশিনাথপুর এলাকার বাসিন্দা আবু জাফর এবং ক্যাশিয়ার বেড়া উপজেলার নতুন ভারেঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা সুব্রত চক্রবর্তী।
ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার সকালে অগ্রণী ব্যাংকের রাজশাহী বিভাগীয় অফিস থেকে ৫ সদস্যবিশিষ্ট অডিট টিম কাশিনাথপুর শাখায় অডিটে আসে। দিনভর অডিট করে তারা ১০ কোটি ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৩৭৮ টাকা আর্থিক অনিয়ম পান। এ বিষয়ে সাঁথিয়া থানায় ওই শাখার ম্যানেজার (সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার) হারুন বিন সালাম, ক্যাশ অফিসার সুব্রত চক্রবর্তী ও সিনিয়র অফিসার আবু জাফরকে অভিযুক্ত করে অভিযোগ দিলে পুলিশ বৃহস্পতিবার রাতে তাদের তিনজনকে আটক করে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সাঁথিয়া থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘অডিটে অনিয়ম ধরা পড়লে তাদের আটক করে সাঁথিয়া থানা পুলিশকে খবর দেয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। পুলিশ গিয়ে তাদের আটক করে থানায় নিয়ে আসে। আজ (শুক্রবার) দুপুরে জিডির ভিত্তিতে আটককৃতদের আদালতে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে দুদক আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’
আরও পড়ুন:দীর্ঘ এক যুগ বন্ধ থাকার পর পুনরায় শ্রীমঙ্গল-পাত্রখোলা সড়কে বাস পরিষেবা চালু করেছে শ্রীমঙ্গল-শমশেরনগর-কুলাউড়া বাস মালিক সমিতি।
বৃহস্পতিবার সকালে কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আসিদ আলী ও ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোলেমান মিয়াকে সঙ্গে নিয়ে বাস সার্ভিস উদ্বোধন করেন শ্রীমঙ্গল বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা।
প্রাথমিক পর্যায়ে এই রুটে ৫০ মিনিট পরপর ২৪টি বাস চলাচল করবে বলে সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত শ্রীমঙ্গল থেকে ভানুগাছ মাধবপুর সড়ক দিয়ে ইসলামপুর ইউনিয়নের কুরমা চা বাগান পর্যন্ত এ বাস চলাচল করবে।
কুরমা থেকে শ্রীমঙ্গল পর্যন্ত বাসভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০ টাকা। এছাড়া পাত্রখোলা থেকে শ্রীমঙ্গল পর্যন্ত ৫০ টাকা, মাধবপুর থেকে শ্রীমঙ্গল পর্যন্ত ৪০ টাকা, কুরমা থেকে ভানুগাছ পর্যন্ত ৪০ টাকা, পাত্রখোলা থেকে ভানুগাছ পর্যন্ত ২৫ টাকা, মাধবপুর থেকে ভানুগাছ পর্যন্ত ১৫ টাকা এবং ভানুগাছ থেকে শ্রীমঙ্গল ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫ টাকা।
বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় কুরমা নতুন বাস স্ট্যান্ডে বাস চলাচলের উদ্বোধন শেষে মতবিনিময় সভায় শ্রীমঙ্গল-শমসেরনগর-কুলাউড়া বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি মো. তসলিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও প্রকৌশলী যোগেশ্বর চন্দ্র সিংহের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন ইউপি চেয়ারম্যান সোলেমান মিয়া, সাংবাদিক আসাদুজ্জামান শাওন, ইউপি সদস্য আব্দুল্লাহ, নুরুল হক, বাস মালিক সমিতির সহ-সভাপতি দেলোয়ার হোসেন দুলাল, সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক, গ্রুপ সভাপতি কাসেম মিয়া ও আব্দুস সালাম প্রমুখ।
এর আগে মাধবপুর বাজারে বাস প্রবেশ করলে এলাকাবাসী বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এ সময় যাত্রীদের মানসম্পন্ন সেবা দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে বলে আশ্বস্ত করেন বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা।
এদিকে সিএনজি থেকে ভাড়া কম করে বাস সার্ভিস চালু হওয়ায় যাত্রীসহ স্কুল কলেজ শিক্ষার্থীরা বেজায় খুশি।
পঞ্চগড় সদর উপজেলায় চাওয়াই নদীতে গোসল করতে নেমে পানিতে ডুবে আলমি আক্তার ও ইসরাত জাহান সিফাত নামে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে জেলার সদর উপজেলার অমরখানা ইউনিয়নের চাওয়াই নদীর চৈতন্যপাড়া এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
১২ বছরের আলমি ওই এলাকার আব্দুল আজিজের মেয়ে এবং ৯ বছরের সিফাত সাইফুল ইসলামের মেয়ে। তারা দুজনে সম্পর্কে ফুফু-ভাতিজি।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, শুক্রবার দুপুরে আলমি ও সিফাত বাড়ির পাশে চাওয়াই নদীতে গোসল করতে যায়৷ গোসল করতে গিয়ে সিফাত পানিতে ডুবে যেতে থাকলে তাকে বাঁচাতে এগিয়ে যায় আলমি৷ পরে দুজনেই পানিতে ডুবে যায়। এ সময় নদীর পাড়ে থাকা অন্য আরেক শিশু ঘটনাটি দেখে দৌড়ে তাদের পরিবারের লোকজনকে খবর দিলে তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে মৃত অবস্থায় নদী থেকে দুজনের মরদেহ উদ্ধার করে।
খবর পেয়ে পুলিশ দুই শিশুর মরদেহের সুরতহাল করে।
পঞ্চগড় সদর থানার উপ-পরিদর্শক পলাশ চন্দ্র রায় বলেন, ‘দুই শিশুর মধ্যে একজন সাঁতার জানত, আরেকজন জানত না। একজন আরেকজনকে বাঁচাতে গিয়ে দুজনেই একসঙ্গে ডুবে মারা গেছে বলে জানিয়েছে স্থনীয়রা।’
মরদেহের সুরতহাল শেষে ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন:আনসার সদস্য তরিকুল ইসলাম। বাড়ি তার বাগেরহাট সদর উপজেলার খানপুর গ্রামে। বর্তমানে ঢাকার সুত্রাপুর থানায় কর্মরত।
৩৮ বছর বয়সী এ যুবকের নেশা বিয়ে করা। যেখানেই যান সেখানেই তিনি বিয়ে করেন। এ পর্যন্ত ৭টি বিয়ে করেছেন।
সর্বশেষ তিনি বিয়ে করেন ঝিনাইদহ শহরের পবহাটি এলাকার। ঢাকায় থাকাকালে সেঁজুতি নামের পবহাটির একটি মেয়ের সঙ্গে সপ্তমবারের মতো সংসার শুরু করেন তিনি।
তবে এর মানে এই নয় যে, তার আগের সব স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে। বর্তমানে তৃতীয় স্ত্রী পারভীন তার গ্রামের বাড়িতে এবং ষষ্ঠ স্ত্রী রয়েছেন যশোরের বেনাপোলে। ২ স্ত্রীর ঘরে ২টি সন্তানও রয়েছে তরিকুলের।
সম্প্রতি সংসার জীবন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এই যুবক। স্বামীকে ফিরে পেতে আড়াই বছরের মেয়েকে নিয়ে ঝিনাইদহের পবহাটিতে আসেন ষষ্ঠ স্ত্রী হোসনে আরা আক্তার সাথী। তরিকুলকে স্বামী দাবি করলে সেখানে বেঁধে যায় রণক্ষেত্র। স্বামীকে নিয়ে সেঁজুতির সঙ্গে শুরু হয় তার কাড়াকাড়ি। কোনো উপায় না পেয়ে পালিয়ে যান আনসার সদস্য তরিকুল ইসলাম।
নিউজবাংলাকে সাথী জানান, বেনাপোল বন্দরে কর্মরত থাকা অবস্থায় নিজেকে এতিম পরিচয় দিয়ে তাকে বিয়ে করেন তরিকুল। ২০১৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর তাদের বিয়ের পর থেকে একসঙ্গেই ছিলেন দুজন। তবে ২০২২ সালে বদলি হয়ে ঢাকায় চলে যান তরিকুল। তার কিছুদিন পর থেকে সাথীর সঙ্গে তার সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ।
তিনি জানান, ঢাকায় বদলি হওয়ার পর থেকে তার ও তাদের সন্তানের কোনো খরচ পাঠাতেন না তরিকুল। এরই মধ্যে সেঁজুতির সঙ্গে তার ইমোতে পরিচয় হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ডিসেম্বর মাসে সেঁজুতিকে বিয়ে করেন তিনি।
সাথী বলেন, ‘গত ঈদে আমার কাছে গিয়ে ৬ দিন ছিল। সেখানে আমাকে ভুলিয়ে আমার কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা নিয়ে চলে আসে। তারপর আবার সকল যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। আমার আড়াই বছরের মেয়েটি বাবার জন্য সব সময় কান্নাকাটি করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্বামী ঝিনাইদহ আছে- এমন খবর পেয়ে আমরা ওই বাড়িতে গিয়েছিলাম। সেখানে আমাদের মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। আর এর মধ্যে আবার পালিয়েছে সে (তরিকুল)। আমি তরিকুল ও সেঁজুতির বিচার চাই।’
এ ব্যাপারে জানতে আনসার সদস্য তরিকুলের মোবাইল নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য