প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে এবং তার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের ফেসবুক স্ট্যাটাসে দেয়া তথ্যগুলোর উৎস জানতে চেয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বুধবার বিগত দিনের আন্দোলনে ‘গুম’, খুন হওয়া দলীয় নেতা-কর্মীদের পরিবারের মধ্যে ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রিজভী বলেন, “আপনারা জানেন যে, পীর সাহেবদের অনেক ভক্তকুল থাকে। সেই ভক্তকুল পীরদের ‘বাবা’ বলে সম্বোধন করেন। আমাদের দেশেও এই ধরনের অনেক বাবার জন্ম হয়েছে। এদের মধ্যে একজন হচ্ছেন ‘উদ্ভট বাবা’।
“তিনি হলেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা। সেই উদ্ভট বাবা মাঝে মাঝেই তার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়; কখনও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে, কখনও দেশনায়ক তারেক রহমানের বিরুদ্ধে।”
গত ১৫ এপ্রিল ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করেন জয়। তিনি লেখেন, ‘বিএনপি প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক গংদের সার সিন্ডিকেটের কারণে সার কিনতে পারত না গ্রামের কৃষকরা। এ কারণে ফসল উৎপাদন কমে যায় দেশে। তিন থেকে চার কোটি প্রান্তিক কৃষক পরিবারের দু-বেলা ভাত জোটানো অসম্ভব হয়ে ওঠে।
‘সেই সুযোগে বিএনপির নেতা-কর্মীরা দাদন ব্যবসা জমিয়ে তুলে সর্বস্বান্ত করে ফেলে কৃষকদের। এমনকি ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানা থেকেও লাখ লাখ বস্তার সার লোপাট করে বিএনপির দৃর্বৃত্তরা।’
সে স্ট্যাটাসের প্রসঙ্গ টেনে রিজভী বলেন, ‘আজকে ফেসবুকে দেখলাম, এই উদ্ভট বাবা সজীব ওয়াজেদ জয় একটা স্ট্যাটাস দিয়েছেন, তারেক রহমানের কারণে নাকি বাংলাদেশে সারের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আমি কী বলব উনাকে?
‘সজীব ওয়াজেদ জয় কোন সংস্থার প্রতিনিধিত্ব করেন, কোথা থেকে তথ্য পান? কিন্তু তিনি (জয়) জনগণের কাছে এটা পরিষ্কার করেন না, তিনি উপদেষ্টা হিসেবে কত টাকা পান। এই প্রশ্ন তো অনেকেই উপস্থাপন করে। তাকে টাকা দিয়ে নয়; ডলারে পেমেন্ট করা হয়, কিন্তু কত ডলার তাকে দেয়া হয়, কেউ জানেন না।’
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টার সঙ্গে আইনমন্ত্রীর একটি ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার বিষয়ে তিনি কিন্তু ফেসবুকে কিছু লিখেন নাই। আসলে ফ্যাসিবাদী কর্মকাণ্ডের মুখপাত্র হচ্ছেন সজীব ওয়াজেদ জয়। অর্থাৎ অসত্য, মিথ্যা, বিভ্রান্তি, কাল্পনিক কথা, ষড়যন্ত্র, চক্রান্তের মধ্য দিয়ে নিজেদের অপকর্মকে আড়াল করার জন্য তিনি প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।’
আরও পড়ুন:আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি যতই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই বলে অভিযোগ করুক, সেই গণমাধ্যমেই তাদের নেতাদের মিথ্যাচারের বিস্তারিত সংবাদ প্রকাশ হচ্ছে।
গণমাধ্যম নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতাবিরোধী নতুন ষড়যন্ত্রের বহিঃপ্রকাশ বলেও মন্তব্য করেন মন্ত্রী।
সোমবার এক বিবৃতিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এ-সংক্রান্ত বক্তব্যের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দলটির সাধারণ সম্পাদক বিএনপি নেতাদের গণমাধ্যমসংক্রান্ত বিভিন্ন বক্তব্যের জবাব দেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে জাতিকে জ্ঞান দিচ্ছেন; অথচ প্রতিদিন গণমাধ্যমে বিএনপি নেতাদের মিথ্যাচারের বিস্তারিত সংবাদ পরিবেশিত হচ্ছে। এমনকি টেলিভিশনে তাদের বিভিন্ন কর্মসূচি সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।
‘বিএনপি নেতাদের মনগড়া ও নির্জলা মিথ্যাচার কোনো রকম সম্পাদনা ছাড়াই গণমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। টকশোসহ বিভিন্ন প্রোগ্রামে বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যাচার ও অপপ্রচার প্রতিদিন সম্প্রচার হচ্ছে। তার পরও তারা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে অবান্তর প্রশ্ন তুলছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই গণমাধ্যমের স্বাধীনতার আকাশ উন্মুক্ত হয়েছে। এখন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে শুধু সরকারি টেলিভিশন চ্যানেল নয়, বেসরকারি টেলিভিশনও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ব্যবহার করে বাণিজ্যিক সম্প্রচারের সুবিধা ভোগ করছে। শেখ হাসিনাই প্রথম বেসরকারি টেলিভিশনের অনুমোদন দিয়েছেন এবং তারই ধারাবাহিকতায় আজ দেশে প্রায় অর্ধশত বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং অনলাইন টিভি, আইপি টিভিসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে গণমাধ্যমের অবারিত দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে।’
দেশে সহস্রাধিক দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক পত্রিকা এবং অসংখ্য অনলাইন নিউজ পোর্টাল রয়েছে। যেখানে সব রাজনৈতিক দলের সংবাদ, কর্মসূচি বিস্তারিতভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। সরকার সাংবাদিকদের মর্যাদা বৃদ্ধি এবং অধিকার সুপ্রতিষ্ঠার জন্য ‘গণমাধ্যম কর্মী আইন’ প্রণয়নের পদক্ষেপ নিয়েছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
বিপরীতে বিএনপির শাসনামলে সাংবাদিকদের মর্যাদা ও অধিকার ছিল শ্রম আইনে উল্লেখ করে মন্ত্রী অভিযোগ করেন, তাদের সময় সাংবাদিকদের ন্যূনতম সামাজিক মর্যাদা রক্ষা করা হয়নি।
২০০১ থেকে ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত অশুভ জোট শাসনামলে বিবিসির সাংবাদিক মানিক চন্দ্র সাহা, খুলনা প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক জন্মভূমি পত্রিকার সম্পাদক হুমায়ুন কবির বালুসহ ১৬ সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছিল বলে বিএনপিকে স্মরণ করিয়ে দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সে সময়ে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে ঘটে যাওয়া নানান ঘটনা তুলে ধরেন তিনি।
কাদের বলেন, সে সময় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ৫০০টিরও বেশি মামলা এবং ৮০০ হামলার ঘটনা ঘটেছিল। এমনকি ব্রিটিশ টেলিভিশন চ্যানেল ফোরের সাংবাদিক লিওপোল্ড ব্রুনো সরেন্তিনো, জেইবা মালিকসহ কয়েকজন বিদেশি সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করে নির্যাতন চালানো হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, ‘‘জঙ্গি হামলার ঘটনায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অনেক সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছিল। যে কারণে ‘রিপোর্টার উইদাউট বর্ডারস’ বিএনপির শাসনামলে বাংলাদেশকে সাংবাদিকদের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেছিল।’’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক দাবি করেন, ‘বন্দুকের নলের মুখে গণমাধ্যমকর্মীদের জিম্মি করে রেডিও-টেলিভিশন ভাষণে নিজেকে অবৈধভাবে রাষ্ট্রপতি ঘোষণার মধ্য দিয়ে অসাংবিধানিক পন্থায় রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকারী স্বৈরাচার জিয়াউর রহমানের হাতে প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি নেতাদের মুখে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা মানায় না।
‘স্বাধীনতা তাদেরই থাকে, যারা দায়িত্বশীল নিয়মসিদ্ধ আচরণ করে ও নিজ কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন থাকে। একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী সংগঠন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও গুজব ছড়ানো এবং জাতীয় ঐক্যের মূল ভিত্তি মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করে বিএনপি সব সময় বাক-স্বাধীনতার অপব্যবহার করে আসছে।’
বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে এ দেশে গণমাধ্যমের বিকাশ, উৎকর্ষ সাধন এবং সাংবাদিকদের কল্যাণ ও স্বার্থ সংরক্ষণে কী করেছে প্রশ্ন রেখে আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা বলেন, ‘তারা গণমাধ্যমের বিকাশ রোধে এবং সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধে শুধু রাষ্ট্রক্ষমতার অপব্যবহারই করেছে।’
আরও পড়ুন:দুর্নীতির মামলায় ১০ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজি মোহম্মদ সেলিমকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কেবিনে ভর্তি করা হয়েছে।
হাসপাতালটির কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. হারিসুল হক নিউজবাংলাকে তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আদালতের নির্দেশেই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বেলা ১১টার সময় হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তিনি ৫১১ নম্বর কেবিনে ভর্তি রয়েছেন। তিনি আমার অধীনেই চিকিৎসাধীন। ভর্তির পর তার কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আগামীকাল মঙ্গলবার পরীক্ষাগুলোর রিপোর্ট পাওয়া যাবে। তখন হয়তো এ বিষয়ে জানতে পারব। ওনার আগে থেকেই তো অনেক সমস্যা রয়েছে। ওনার হার্ট, ব্রেনে সমস্যা রয়েছে। রিপোর্ট আসলে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জানাতে পারব।’
হাজি সেলিমের চিকিৎসায় মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হবে বলেও জানান তিনি।
হাইকোর্টের নির্দেশে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের পর দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত আওয়ামী লীগের এই সংসদ সদস্য রোববার আদালতে হাজির হয়ে আত্মসমর্পণ করেন। বিচারক সে দিনই তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
কারাগারে পাঠানোর আদেশ শোনার পর আদালত চত্ত্বরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন হাজি সেলিম। তাকে চিকিৎসা ও কারাগারে ডিভিশনের জন্যও আবেদন করেন তার আইনজীবী। পরে আদালত এ বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষকে তাদের আইনে ব্যবস্থা নেয়ার আদেশ দেয়।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিচারিক আদালত হাজি সেলিমকে ১৩ বছরের দণ্ড দিয়েছিল। রায়ের বিরুদ্ধে তিনি হাইকোর্টে আপিল করেন।
২০২০ সালের ৯ মার্চ বিচারপতি মো. মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের ভার্চুয়াল বেঞ্চ তার ১০ বছরের সাজা বহাল রাখে।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি এই রায় প্রকাশ হয়। এতে রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্যকে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭-এ আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেয়া হয়।
গত ৯ মার্চ পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করে হাইকোর্ট।
এই হিসেবে ৯ এপ্রিলের মধ্যে কেন হাজি সেলিম আত্মসমর্পণ করেননি, সেটির ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তার আইনজীবী।
তার আইনজীবী জানান, ২০২১ সালের মার্চ মাসে মৌখিকভাবে হাইকোর্ট রায় ঘোষণা করে। এরপর চলতি বছরের ৯ মার্চ অনলাইনে রায়টি প্রকাশ করা হয়। আর রায়টি অফিশিয়ালি বিচারিক আদালতে কমিউনিকেট করা হয় গত ২৫ এপ্রিল। সে হিসেবে তারপর থেকে এক মাস, অর্থাৎ ২৫ মে পর্যন্ত সময় হাতে রয়েছে।
আরও পড়ুন:যান চলাচলে খুলে দেয়ার অপেক্ষায় থাকা পদ্মা সেতুর ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে তিনি বলেছেন, ‘কত টাকা নিজেদের পকেটে ভরেছেন?’
সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে এ কথা কথা বলেন তিনি। ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপি ‘প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক খালেদা জিয়াকে হত্যার হুমকির প্রতিবাদ’ শীর্ষক এই সমাবেশের আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জনগণ জানতে চায়, পদ্মা সেতুর জন্য মানুষের কত টাকা কেটে নিয়েছেন। জাতির কত টাকা আপনারা এই পদ্মা সেতুতে ব্যয় করেছেন। আর কত টাকা নিজেদের পকেটে ভরেছেন?’
প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু করার ‘বড়াই করছেন’ দাবি করে তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু আপনার একার না, আওয়ামী লীগের পৈতৃক সম্পতিও না। জনগণের পকেট থেকে যে ট্যাক্স কেটে নিয়েছেন, সেই টাকা দিয়ে করেছেন। এখানে যে দুর্নীতি করেছেন, তা আপনাদের সমস্ত দুর্নীতির সীমা ছাড়িয়ে গেছেন।’
ফখরুল বলেন, ‘এখন সময় আছে পদত্যাগ করুন। নির্দলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। আমি নিন্দা ও ধিক্কার জানাই প্রধানমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের জন্য, যিনি খালেদা জিয়াকে টুস করে পদ্মা থেকে ফেলে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন।
‘আজ দেশের সব মানুষ শেখ হাসিনাকে ধিক্কার ও নিন্দা জানাচ্ছে। কোনো সভ্য এবং গণতান্ত্রিক সমাজে এই ধরনের ভাষা ব্যবহার করা যায় না।’
গত ১৮ মে রাজধানীতে আওয়ামী লীগের দলীয় এক আলোচনায় খালেদা জিয়ার উক্তি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বলেছে, স্প্যানগুলো যে বসাচ্ছে, সেটা ছিল তার কাছে জোড়াতালি দেয়া। পদ্মা সেতু বানাচ্ছে, তাতে চড়া যাবে না, চড়লে সেটা ভেঙে যাবে। তার সঙ্গে তার কিছু দোসররা। তাদের কী করা উচিত? পদ্মা সেতুতে নিয়ে গিয়ে ওখান থেকে পদ্মা নদীতে টুস করে ফেলে দেয়া উচিত।’
ওই প্রসঙ্গ তুলে পদ্মা সেতু ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে জড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী কেন বক্তব্য দিয়েছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন করেন মির্জা ফখরুল। বলেন, ‘তিনি এখন নার্ভাস হয়ে গেছেন। তিনি দেখতে পাচ্ছেন তার ক্ষমতার দিন শেষ। তিনি দেখতে পাচ্ছেন, সামনে আর ক্ষমতায় আসতে পারবেন না। তার… টলমল হয়ে গেছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘কিসের উন্নয়ন করেছেন, কার উন্নয়ন করেছেন? উন্নয়ন তো করেছেন পি কে হালদারের। উন্নয়ন করেছেন শিক্ষামন্ত্রীর ভাইয়ের, বেয়াই মোশাররফের ভাইয়ের। আর আপনারা যারা ক্ষমতায় আছেন, তাদের প্রত্যেকের। তারা এই দেশকে একটা লুটপাটের রাজত্ব তৈরি করেছেন। জনগণের কোনো উন্নয়ন হয় না।’
প্রধানমন্ত্রী নিজেকে একটা দুর্গের মধ্যে বন্ধি করে রেখেছেন বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। বলেন, ‘আপনি তো স্বেচ্ছায় নিজেকে-নিজে বন্দি করে রেখেছেন। আপনি তো জনগণকে ভয় পান। জনগণের সামনে আসেন না। জনগণের সামনে এলে তাদের ভাষা বুঝতে পারতেন। তারা কী বলতে চায় তা বুঝতে পারতেন।’
আওয়ামী লীগ দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেছে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘প্রত্যেক দিন অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি রসাতলে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেছেন। প্রত্যেক দিন খবরের কাগজ খুললে দেখা যায়, লুটপাট হচ্ছে। আর এর সঙ্গে জড়িত সরকারি দলের লোকেরা।
‘আপনি খালেদা জিয়াকে হত্যার হুমকি দেন। তিনি হচ্ছেন সেই নেত্রী, যিনি সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী। যিনি কোনো দিনও নির্বাচনে পরাজয় বরণ করেননি।’
খালেদা জিয়া অসুস্থ
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ বলে জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘তাকে (খালেদা জিয়া) এখন যদি উন্নত চিকিৎসা দেয়া না হয়, তাহলে তার জীবন হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। আমরা বারবার বলেছি, তাকে মুক্তি দেন।
‘তাই আজ এখান থেকে দাঁড়িয়ে আহ্বান ও দাবি জানাতে চাই, এখনও সময় আছে তাকে মুক্তি দিন। বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দিন। আমাদের ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর যে মামলা আছে, তা তুলে নিন। যারা কারাগারে আছে তাদের মুক্তি দেন।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর বড় মগবাজারে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের এক নিরাপত্তারক্ষী জানালেন, তিনি নেতাদের মুখ দেখেননি গত সাত বছরেও।
২০১৫ সালে নিয়োগ পাওয়া আবদুল কুদ্দুস অবশ্য কথা বলতে খুব বেশি আগ্রহ দেখাননি। ফলে নেতারা না এলে তিনি বেতন কীভাবে পান, কার সঙ্গে যোগাযোগ করে চাকরি পেয়েছেন, সেসব তথ্য জানা হলো না।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষে অস্ত্র ধরা দলটি স্বাধীনতার পর ছিল নিষিদ্ধ। তখন অন্য দলে ভিড়ে গিয়ে বা গোপন রাজনীতিতে জড়ানো জামায়াত ও তার সে সময়ের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের নেতা-কর্মীদের তৎপরতাও এখন অনেকটাই স্বাধীনতা উত্তর রাজনীতির মতোই।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মানবতাবিরোধী অপরাধে যখন থেকে জামায়াত নেতারা গ্রেপ্তার হতে থাকেন, তখন থেকে তাদের কার্যালয়ে ঝুলে যায় তালা। বছরের পর বছর ধরে সে তালা খুলছে না। অনেকটা গোপনে চলে তাদের তৎপরতা।
রাজধানীর বড় মগবাজারে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়। ছবি: নিউজবাংলা
আবদুল কাদের মোল্লাকে ফাঁসিতে ঝোলানো, ট্রাইব্যুনালে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ফাঁসিতে ঝোলানোর আদেশ দেয়ার পর জামায়াতের প্রতিক্রিয়া ছিল ধ্বংসাত্মক। দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরকারি-বেসরকারি সম্পদে বেপরোয়া হামলা চালানো দলটি ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে বিএনপির শরিক হিসেবে সরকার পতন আন্দোলনে নেমে খালি হাতে ঘরে ফেরার পর একেবারে কার্যালয়বিমুখ হয়ে গেছে।
তবে ইদানীং হঠাৎ করেই অস্তিত্বের জানান দিতে শুরু করেছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। চলতি মাসে ঢাকায় বেশ কয়েকটি ঝটিকা মিছিল করেছেন জামায়াতের মহানগরের নেতারা। গত ফেব্রুয়ারিতেও রাজধানীর মিরপুর ১ নম্বর চত্বরে একটি মিছিল হয়।
মগবাজারের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল, ফটকের বাইরে নীল রঙের একটি নামফলক। বন্ধ ফটকের বাইরের পাশের চিত্রেই বোঝা যায়, যত্নআত্তি খুব একটা হচ্ছে না সেখানে। ফটকে শতচ্ছিন্ন পোস্টারগুলো জানান দিচ্ছে, সেখানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বালাই নেই। বাইরে থেকে ভেতরের চিত্র যতটুকু দেখা যায়, তাতে দোতলা থেকে প্রতিটি তলার বারান্দার বাইরের অংশে শ্যাওলা পড়ে আছে।
ভবনের তৃতীয় তলায় এক পাশ দিয়ে একটি সাইনবোর্ড আছে, তাতে লেখা ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, কেন্দ্রীয় দপ্তর’।
ভবনে কেউ নেই বলে জানালেন কার্যালয়ের নিচতলায় থাকা নিরাপত্তাকর্মী আব্দুল কুদ্দুস। তিনি জানালেন, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে অফিসে কেউ আসে না বলে জেনেছেন, যদিও তার নিয়োগ আরও চার বছর পর।
কুদ্দুস বলেন, ‘আমি সাত বছর ধরে এই ভবনে চাকরি করছি। ২০১৫ সাল থেকে আমি এখানে আছি। কী কারণে এটা বন্ধ আমি কিছু জানি না। আমি জানবই বা কী করে?’
বৈঠক, কথাবার্তা কীভাবে
জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের এক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বাড়াতে রাজি হননি। বলেন, ‘আপনার যদি কোনো তথ্য জানার থাকে আপনি কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদকের সঙ্গে যোগোযোগ করতে পারেন।’
এমনকি তার নামটিও ব্যবহার না করার অনুরোধ জানিয়ে রাখলেন তিনি।
পরে দলের মহানগর উত্তর শাখার এক নেতা বলেন, ‘দলীয় কার্যালয় ছাড়াই কাজ চলছে আমাদের। জামায়াত একটি ক্যাডারভিত্তিক সংগঠন। অফিস ছাড়াই আমরা দলের টপ টু বটম যোগাযোগ করে আসছি। তবে এ জন্য অনেক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। সাংগঠনিকভাবেও কার্যক্রম চালাতে অনেক বেগ পেতে হচ্ছে।’
ঝটিকা মিছিলগুলো কীভাবে করা সম্ভব হচ্ছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বর্তমান যুগে তো যোগাযোগ রাখা কঠিন না। তথ্য পাওয়ার মধ্য দিয়ে সেগুলো হয়ে যাচ্ছে।
‘সুনির্দিষ্ট কোনো স্থানে বর্তমানে জামায়াতের মিটিং হয় না। যখন যেখানে সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে, সেখানেই দলের মিটিং করা হচ্ছে। নেতাদের বাসায়-মসজিদে মিটিংগুলো হয়।’
কার্যালয় বন্ধ থাকাতে তেমন কোনো সমস্যা হিসেবে দেখছেন না জামায়াতের প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘সাংগঠনিক কাজগুলো এখন বিভিন্ন বাড়িতে বাড়িতেই হয়।
‘এ ছাড়া সাংগঠনিক কাজগুলো এখন প্রযুক্তির কল্যাণে সহজ হয়ে গেছে। মোবাইল, হোয়াটসঅ্যাপ আছে, এর মাধ্যমে…। এ ছাড়া ব্যক্তিগত যোগাযোগের জন্য তো অফিস লাগে না।’
এই জামায়াত নেতা জানান, ‘যখনই আমাদের বৈঠক করা দরকার হয় তখন বৈঠক হচ্ছে। সেখানে বড় জমায়েতের সুযোগ এখন নেই, বৈঠকগুলো ছোট পরিসরেই করা হচ্ছে।
কোথায় বৈঠক করেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বৈঠকগুলো বাংলাদেশের ভেতরেই মাটির ওপরেই হয়। বিভিন্ন জয়গায় বসে মিটিংগুলো হয়। মিটিং করার জন্য আমাদের এর চেয়ে বেশি কোনো জায়গার দরকার পড়ে না।’
স্বাধীনতার পর নিষিদ্ধ থাকলেও জিয়াউর রহমানের বদান্যতায় রাজনীতিতে ফেরার অনুমতি পাওয়া জামায়াত এখন দলীয় কার্যক্রম চালাতে পারলেও নির্বাচন কমিশনে তাদের নিবন্ধন বাতিল হয়ে গেছে।
২০১৮ সালের ৮ ডিসেম্বর দলটির নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
এতে বলা হয়, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২–এর আওতায় রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর জামায়াতে ইসলামীকে নিবন্ধন দেয়া হয়। তবে ২০০৯ সালে হাইকোর্টে করা ৬৩০ নম্বর রিট পিটিশনের রায়ে আদালত নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে। এরপর নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন বাতিল করে।
নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় দলীয় প্রতীকে ভোটে লড়ার যোগ্যতাও নেই জামায়াতের। অন্যদিকে তাদের ওপর মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের খড়্গ ঝুলছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের একাধিক রায়ে জামায়াতকে সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা দেয়ার পর নেতাদের মতো দলটিরও বিচারের উদ্যোগ নেয়া হয়।
সেটি আট বছর আগের কথা। কিন্তু এর কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দল হিসেবে জামায়াতের বিচারের জন্য আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও বিভিন্ন সময়ে বলেছিলেন, অপরাধী সংগঠনের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনের সংশোধনীর খসড়া শিগগিরই মন্ত্রিসভায় উঠবে। শেষ পর্যন্ত সেটা আর মন্ত্রিসভায় ওঠেনি। ফলে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য সংগঠনের বিচারকাজও শুরু করা যায়নি।
মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতের ভূমিকা ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগীর। দলটির নেতা-কর্মীরা সে সময় গঠন করে রাজাকার বাহিনী। তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘ গঠন করে খুনে বাহিনী আলবদর। এই বাহিনীর বিরুদ্ধেই আছে বুদ্ধিজীবী হত্যার অভিযোগ। এসব ঘটনায়ই স্বাধীনতা-উত্তর জামায়াত হয় নিষিদ্ধ।
আরও পড়ুন:ইউপি নির্বাচনি দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হওয়ায় মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও দায়িত্বে অবহেলার কারণে কালকিনি থানার ওসিকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
ইসির যুগ্ম সচিব (জনসংযোগ) এস. এম আসাদুজ্জামানের স্বাক্ষর করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
তাতে বলা হয়েছে, উপজেলার পূর্ব এনায়েতনগর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের জন্য গত ১৭ মে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষদিন দুর্বৃত্তরা স্বতন্ত্র প্রার্থী নেয়ামুল আকনকে বাধা দেয়। তারা রিটার্নিং কর্মকর্তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। এ ঘটনার পর সেখানে নির্বাচন স্থগিত করা হয়। সেইসঙ্গে ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তাকে ইসি নির্দেশ দেয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হওয়ায় ইউএনও জাকির হোসেনকে প্রত্যাহার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষায় ব্যর্থ ও সরকারি দায়িত্বে অবহেলার দায়ে কালকিনি থানার ওসি ইশতিয়াক আশফাক রাসেলকেও প্রত্যাহার করার নির্দেশ দিয়েছে ইসি।
পূর্ব এনায়েতনগর ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ নির্বাচনের ভোট আগামী ১৫ জুন নির্ধারণ করা হয়েছে বলেও বিজ্ঞপ্তি জানানো হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের আলোচিত-সমালোচিত নেতা অর্জুন সিং সঙ্গ ছেড়েছেন বিজেপির। ফিরেছেন তার পুরনো দল তৃণমূল কংগ্রেসে।
ক্যামাক স্ট্রিটের তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অফিসে গিয়ে রোববার বিকেলে ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং তুলে নেন তৃণমূলের পতাকা।
এক প্রতিক্রিয়ায় অর্জুন সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভুল বোঝাবুঝির জন্য মাঝে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলাম। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে এখন বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফিরলাম। যে ঘরের ছেলে ছিলাম, সেই ঘরে ফিরে এসেছি।’
২০১৯ সালের নির্বাচনে ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের মনোনয়ন না পেয়ে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন অর্জুন। এরপর বিজেপির টিকিটে ব্যারাকপুরের সাংসদ নির্বাচিত হন।
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সরকার গঠনের স্বপ্ন ব্যর্থ হয়। তখন দলীয় কোন্দলে কোনঠাসা হয়ে পড়েন অর্জুন। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা যখন আস্থা হারাচ্ছিলেন, ঠিক তখনই সরকার বিরোধী নানা বক্তব্য দিয়ে দূরত্ব আরও বাড়িয়ে নেন অর্জুন।
সম্প্রতি পাটজাত দ্রব্যের দাম বাড়া নিয়ে বিজেপি সরকারের সমালোচনা করেন তিনি। তাতেই ইঙ্গিত মিলেছিল অর্জুনের পক্ষ বদলের।
জল্পনাকে সত্য করে রোববার বিজেপি ত্যাগের পরপরই তৃণমূলে যোগ দেন অর্জুন সিং। সকাল থেকেই ব্যারাকপুরে দেখা যায় ‘ওয়েলকাম টু অর্জুন সিং’ ফেস্টুন।
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় টুইট করে লেখেন, ‘অর্জুন সিংকে স্বাগত জানাচ্ছি । তিনি বিজেপির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন এবং আজ তিনি তৃণমূল পরিবারে যোগদান করলেন। গোটা দেশজুড়ে মানুষ ভুগছে। তাদের আমাদের প্রয়োজন। লড়াই জারি থাকুক।’
রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘প্রথম দিন থেকেই তৃণমূলে ছিলেন অর্জুন সিং।’
অর্জুন সিংয়ের তৃণমূলের ফেরার এ অনুষ্ঠানে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, রাজ চক্রবর্তী, কাঞ্চন মল্লিকসহ তৃণমূল কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতারা।
আরও পড়ুন:বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে পদ্মা সেতু থেকে ‘টুস’ করে ফেলে দেয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য ‘হত্যার হুমকিস্বরূপ’ এবং ‘কুরুচিপূর্ণ’ দাবি করে বক্তব্যের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করে ছাত্রদল। বিক্ষোভ মিছিল থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রধানমন্ত্রীকে ভাষা শালীন করার আহ্বানসহ ছাত্রলীগ, যুবলীগ আওয়ামী লীগকে চ্যালেঞ্জ করে দেয়া বক্তব্যের প্রতিক্রয়া দেখিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
রোববার সন্ধ্যায় ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যের প্রতিবাদে টিএসসিতে জড়ো হন একদল ছাত্রলীগ কর্মী।
সেখানে তারা আগে থেকেই অবস্থান করা ছাত্রদল কর্মী আতিক মোর্শেদকে মারধর করেন বলে অভিযোগ উঠে। পরে ছাত্রলীগের বিভিন্ন হল ইউনিটের নেতাকর্মীরা হল থেকে ক্রিকেট স্ট্যাম্পসহ লাঠি নিয়ে ক্যাম্পাসে শোডাউন দেয়।
এ সময় তারা ‘ছাত্রদলের গুণ্ডারা, হুশিয়ার,সাবধান, একটা একটা ছাত্রদল ধর, ধরে ধরে জবাই কর, হই হই রই রই, ছাত্রদল গেলি কই’সহ নানা ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন।
সকালের সমাবেশে শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক জুয়েল বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্যই আপনি ওয়ান ইলেভেনে বাংলার মাটিতে ফিরে এসে রাজনীতি করতে পেরেছেন। সেই দেশনেত্রীকে নিয়ে কটূক্তি করতে আপনার বিবেকে নিশ্চয়ই লাগবে না। কারণ আপনি বিবেক বিবর্জিত একজন মানুষ। কত রক্ত চাই আপনার? ছাত্রদল রক্ত দিতে প্রস্তুত রয়েছে। কিন্তু আমাদের আবেগ, আমাদের আদর্শিক মা বেগম জিয়াকে নিয়ে কটূক্তি করার চেষ্টা করবেন না।’
আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ এবং যুবলীগ নেতাকর্মীদের চ্যালেঞ্জ করে ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আপনাদের যদি রাজনৈতিক সক্ষমতা থাকে তাহলে প্রশাসন ভাইদের নিরপেক্ষ রেখে একবার যুদ্ধের মাঠে আসুন। সেই যুদ্ধের প্রস্তুতি ছাত্রদলের রয়েছে। সেই যুদ্ধ হবে গণমানুষের পক্ষের যুদ্ধ।’
সন্ধ্যার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মানছুরা আলম বলেন, ‘সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটের দিকে আমরা কয়েকজন টিএসসিতে আড্ডা দিচ্ছিলাম। বাকি লোকজনও আশেপাশে ছিলে। এ সময় ছাত্রদল কর্মী আতিক মোর্শেদকে একা পেয়ে জসিম উদ্দিন ও মুহসিন হলের কর্মীরা তার উপর অতর্কিত হামলা করে।
‘পরে আমি তাকে বাঁচাতে যাই। এ সময় আতিককে তারা কিল, ঘুষি এবং হেলমেট দিয়ে মাথায় আঘাত করে। পরে আমরা সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে পালিয়ে আসি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এখন আতিক মোর্শেদকে নিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সিটি স্ক্যান করার জন্য জরুরি বিভাগে আসছি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক আক্তার হোসেন বলেন, ‘প্রতিদিনের মতো আমাদের ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা টিএসসিতে আড্ডা দিচ্ছিল। এ সময় বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আল আমিন রহমানের নেতৃত্বে জসিম উদ্দীন হল এবং মুহসিন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা স্ট্যাম্প, রড এবং হেলমেট দিয়ে আমাদের কয়েকজনের উপর আঘাত করে। এদের মধ্যে আতিক মোর্শেদের আঘাত গুরুতর।’
আর কারা আহত হয়েছে জানতে চাইলে তিনি পরে জানানো হবে বলে জানান।
ছাত্রলীগ কর্মীদের হামলার অভিযোগের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি সরাসরি কোনো উত্তর দেননি।
তিনি বলেন, ‘ছাত্রদলের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যলয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরণের অনিরাপত্তা বোধ রয়েছে যে, তাদের স্বাভাবিক শিক্ষার পরিবেশ অব্যাহত থাকবে কি না।’
তিনি বলেন, ‘যে ভাষায় ছাত্রদল রাজনীতি করে আমরা মনে করি এটি তাদের এইট পাশ প্রধানমন্ত্রী এবং ইন্টারমিডিয়েট পাশ না করা বর্তমান কো-ভাইস চেয়ারম্যানের উপযুক্ত বক্তব্যই তাদের অশ্লীল অশ্রাব্য বক্তব্যের মাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে সাধারণ শিক্ষার্থীরা যদি সংঘবদ্ধ প্রতিবাদ করে সেটিকে আমরা স্বাগত জানাই।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য