বাংলাদেশকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদন দুই দেশের সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে দেশটির নতুন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মূল্যায়নও একই রকম।
সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনটি সঠিক নয় মন্তব্য করে সালমান এফ রহমান বলেন, ‘এসব রিপোর্ট মানুষের কাছ থেকে শুনে করা হয়েছে।’
অবশ্য সালমানের এ বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে হাস বলেন, ‘সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে আমরা মানবাধিকার প্রতিবেদন তৈরি করি। নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই এটি করা হয়। তবে বাংলাদেশকে নিয়ে এই প্রতিবেদন দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলবে না।‘
গত ১২ এপ্রিল প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমালোচনা করা হয়। এতে বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে ‘বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম ও নির্যাতনের’ মতো অভিযোগ থাকলেও তারা ‘দায়মুক্তি’ পেয়ে আসছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
রিপোর্টে সমকামিতা একটি অপরাধ এবং এ কারণে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে মন্তব্য করা হয়।
অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদন বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাখা চাইবে বলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম গত রোববার সাংবাদিকদের জানান।
সালমান এফ রহমান বলেন, ‘শুধু বাংলাদেশ নয়, বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র যে রিপোর্টগুলো প্রকাশ করে তা স্থানীয়দের কাছ থেকে শুনে করা হয়।
‘তাই সব রিপোর্টে সঠিক তথ্য থাকে না। তাছাড়া রিপোর্টগুলো নিয়ে তদন্তও হয় না। মানবাধিকারের সব রিপোর্ট সঠিক নয়। সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে রিপোর্টগুলো শুনে করা হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্র স্বীকার করে।’
বৈঠকে জ্বালানি ছাড়াও অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান সালমান এফ রহমান।
আগামী মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ২২টি কোম্পানির প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করবে। সে সময় জ্বালানি ছাড়াও অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর ব্যাপারে আলোচনা হবে বলে জানান তিনি।
বৈঠক শেষে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেন, ‘এটি একটি সফল বৈঠক ছিল। দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি।
‘আমি প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাকে বলেছি, আর্থিক খাত হতে পারে আমাদের দুই দেশের যৌথ উন্নয়নের একটি ক্ষেত্র। আগামী মাসের শুরুতে আমাদের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসছে। সে সময় অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে।’
যৌথ অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করতে সালমান এফ রহমান জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর বহিরাগতদের হামলার প্রতিবাদে এবং প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে মুখে লাল কাপড় বেঁধে মৌন মিছিল করেছেন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ‘রেড মার্চ ফর জাস্টিস’ শিরোনামে এই কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জোর দাবি জানানো হয়। গত বৃহস্পতিবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘আমতলা’ থেকে এই মৌন মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় আমতলায় এসে শেষ হয়। সেসময় শিক্ষার্থীদের চোখেমুখে ছিল ক্ষোভ আর বিচারহীনতার বিরুদ্ধে নীরব প্রতিবাদ।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, গত ৩১আগস্ট ক্যাম্পাসে বহিরাগতরা শিক্ষার্থীদের উপর নৃশংস হামলা চালায়, যা তাদের নিরাপত্তাহীনতাকে চরম পর্যায়ে নিয়ে গেছে। তাদের অভিযোগ, এমন একটি ন্যক্কারজনক ঘটনার পরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষকদের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ওই নীরবতা তাদের হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে।
এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ওই হামলা শুধু আমাদের ক্যাম্পাসের ইট-পাথরের উপর নয়- এটি আমাদের অস্তিত্ব, আমাদের স্বপ্ন এবং আমাদের নিরাপত্তার উপর সরাসরি আঘাত। যেখানে আমাদের নিরাপত্তা দেওয়ার কথা, সেখানে প্রশাসন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’
কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা হামলাকারীদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা এবং ক্যাম্পাসে সব শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তারা।
ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার সদর ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাগান ইসলামিয়া আলিম মাদরাসা। ১৯৫৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ১৯৬৫ সালে বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের স্বীকৃতি লাভ করে ১৯৮৫ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক এমপিওভুক্ত হয়। দীর্ঘ ৭০ বছরের পথচলায় প্রতিষ্ঠানটি সরকারি বহুতল ভবনের বরাদ্দ পায়নি।
জানা গেছে, বর্তমানে মাদরাসাটি পাবলিক দাখিল পরীক্ষার কেন্দ্র (কেন্দ্র কোড ৭৮৯, নাম-ত্রিশাল-২ বাগান কেন্দ্র) হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে পর্যাপ্ত ক্লাসরুম না থাকায় নিয়মিত পাঠদান ও পরীক্ষা পরিচালনা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এতে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। তাদের জন্য নেই পর্যাপ্ত আবাসন, ক্লাসরুম, মেয়েদের কমনরুম, পৃথক নামাজ ও অজুখানা। সবচেয়ে নাজুক অবস্থা স্যানিটেশন ব্যবস্থায়। যা পরীক্ষা কেন্দ্র ও শিক্ষার্থীদের মারাত্মকভাবে বিপাকে পড়তে হয়।
শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ বলেন, মাদরাসাটি অনেক আগে প্রতিষ্ঠিত হলেও নেই কোন বহুতল ভবন। টিনসেট আর জরাজীর্ণ হাফ বিল্ডিংয়ে কোন প্রকার চলছে পাঠদান। সরকার যদি দ্রুত বহুতল ভবন দিতো তাহলে এই সমস্যা থাকত না।’
আলিম দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার বলেন, ‘আমরা তো আগামী বছর পরীক্ষা শেষ করে চলে যাবো অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হব। তবু চাই আমাদের পরবর্তী ভাই-বোনেরা যেন কষ্টে না পড়ে।’
মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা ফয়জুর রহমান বলেন, ‘প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ পর্যন্ত শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কোনো বহুতল ভবনের বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। পুরনো ভবনে পাঠদান করতে হচ্ছে।
ত্রিশাল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মফিজুল ইসলাম জানান, আমি আশাকরি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি বহুতল ভবন বরাদ্ধ দিবেন।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল বাকিউল বারী জানান, অবকাঠামো উন্নয়নের বিষয়ে আমরা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুত সময়ের মধ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করবো।
কুমিল্লা অঞ্চলের মানুষ আর চট্টগ্রাম-গাজীপুর গিয়ে কাগজপত্র আনতে হবে না। পরীক্ষার খাতা জমা দিতে হবে না। এডমিশন টেস্টের খাতা দেওয়ার জন্য আর দৌড়াতে হবে না। আপনারা কুমিল্লায় বসে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ করতে পারবেন। এই আঞ্চলিক অফিস কুমিল্লাতে আমাদের আরো আগেই করা দরকার ছিল। শুক্রবার বেলা ১১টায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কুমিল্লা আঞ্চলিক কেন্দ্র উদ্বোধনী সভায় এসব কথা বলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এ এস এম আমানুল্লাহ। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের অডিটোরিয়াম এ উদ্বোধনী সভা হয়।
উদ্বোধনী সভার পর কুমিল্লা হাউজিং এস্টেট এলাকায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কুমিল্লা আঞ্চলিক কেন্দ্র উদ্বোধন করা হয়। সেসময় কুমিল্লা অঞ্চলের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।
কুমিল্লা অঞ্চলের মানুষকে নিয়ে গবেষণা হতে পারে মন্তব্য করে ড. এ এস এম আমানুল্লাহ বলেন, হাজার বছরের সংস্কৃতির শহর কুমিল্লা, বাংলাদেশের অস্তিত্বের সাথে জড়িত। কুমিল্লার সাংস্কৃতিক ইতিহাস, খাবার, মিষ্টান্ন ও কুমিল্লার মানুষদের নিয়ে শত শত পৃষ্ঠা লিখা যাবে। আমি কুমিল্লা নিয়ে গর্ববোধ করি। কুমিল্লার ছেলে মেয়েরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছে। তারা চমৎকার পারফর্ম করছে। শুধু বললে হবে না। আমি নিজের চোখে দেখেছি, তারা কতটা পরিশ্রমী। যারা পরিশ্রম করে তারা তো সফল হবেই।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল বাসার ভূঁঞার সভাপতিত্বে উদ্বোধনী সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. এ টি এম জাফরুল আযম, কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজিব আল মিঠু।
ড. এ এস এম আমানুল্লাহ আরো বলেন, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ ল্যাংগুয়েজ ক্লাব স্থাপন হবে। যেখানে জাপানি, কুরিয়ান, ইংরেজি আরবি ভাষা শিক্ষা দেওয়া হবে। যার ফলে এই কলেজে শিক্ষার্থীদের ভাষাগত দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে। ভিক্টোরিয়া কলেজের জিয়া অডিটোরিয়াম সংস্কার করা দরকার। এ বিষয় নিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বসবে।
সনাতন ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে বিয়ের লগ্ন ঠিক রাখতে হাসপাতালের বেডে শুয়েই বিয়ে সম্পন্ন করলেন সড়ক দুর্ঘটনায় আহত শয্যাশায়ী অভিজিৎ সাহা। গত বৃহস্পতিবার রাতে মানিকগঞ্জ শহরের আফরোজা বেগম জেনারেল হাসপাতালে মানিকগঞ্জ শহরের চাঁন মিয়া লেন এলাকার অভিজিৎ সাহার সঙ্গে পারিবারিকভাবে ঘিওরের বানিয়াজুরী এলাকার অর্পিতা সাহার বিয়ে সর্ম্পন্ন হয়। বিয়ে সম্পন্ন হওয়ায় বর-কনেসহ উভয়ের পরিবারের সদস্যরা আনন্দিত।
জানা যায়, কয়েকমাস পূর্বে পারিবারিকভাবে মানিকগঞ্জ শহরের চাঁন মিয়া লেন এলাকার অরবিন্দ সাহার বড় ছেলে অভিজিৎ সাহার সঙ্গে ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরী এলাকার সুবোধ সাহার মেয়ের অর্পিতা সাহার বিয়ে ঠিক করা হয়। কিন্তু প্রায় দুমাস আগে ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার পথে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ঢাকার ধামরাইয় এলাকায় ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হন অভিজিৎ সাহা। খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করে ঢাকায় চিকিৎসা করানো হয়। এরপর তার শারীরিক অবস্থা একটু উন্নতি হলে ঢাকায় থেকে গত দুই সপ্তাহ আগে তাকে মানিকগঞ্জ আফরোজা বেগম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তিনি আফরোজা বেগম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এদিকে ধর্মীয় রীতিনীতি অনুযায়ী গত বৃহস্পতিবার সন্ধা ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ছিল বিয়ের লগ্ন। অপরদিকে দুর্ঘটনায় আহত হাত-পায়ে ব্যান্ডেজ নিয়ে যন্ত্রনায় বেডে কাতরাচ্ছেন শয্যাশায়ী অভিজিৎ সাহা। এরপর বর-কনের পরিবারের সিন্ধান্তে সনাতন ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে বিয়ের লগ্ন ঠিক রাখতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুমতিতে হাসপাতালের ৩ তলার কিছু অংশ ফাঁকা করে সনাতন ধর্মীয় রীতিনীতি অনুযায়ী তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়।
দেখা যায়, হাসপাতালের ৩তলার ৪নম্বর বেডে হাত-পায়ে ব্যান্ডেজ পড়ে শুয়ে আছে বর অভিজিৎ সাহা আর বেডের পাশেই বসে আছে কনে। বেডের পাশেই বসে ও দাড়িয়ে বর-কনের পরিবারের সদস্যরা। সাধারণ বিয়ের মতো বরের বেডকে ফুল দিয়ে সাজানো হয়।
বরের বাবা অরবিন্দ সাহা জানান, ধর্মীয় রীতিনীতি ও বিয়ের লগ্ন অনুযায়ী বর ও কনেকে সাজানো হয়। এরপর পুরোহিত উভয় পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে বিয়ে পরানো হয়। যদিও দুর্ঘটনায় আহত ছেলের জন্য মন খারাপ। তারপরও বিয়েতে অনেক আনন্দ হয়েছে। নববধু অর্পিতা সাহা জানান, মানুষের জীবনে ভালমন্দ যাই হবে, সেটা ভগবানের পক্ষ থেকেই হবে। সেটা মেনে নিয়েছি। সবাই আমাদের নতুন সংসার ও আমার স্বামীর সুস্থতার জন্য আশির্বাদ করবেন।
হাসপাতালের মেডিকেল অ্যান্ড ইউনিট ডে ডা. সিরাজুল ইসলাম জানান, আমাদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর আমরা সঠিকভাবে চিকিৎসা দিয়ে আসছি। এরপর রোগীর পরিবার বিয়ের কথা বলায় উর্দ্বোতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বিয়ের জন্য রোগীর বেডের পাশে কিছু জায়গা খালি করে দেই এবং আমাদের সাধ্যমত তাদের বিয়ের জন্য ব্যবস্থা করে দেই। এমন ঘটনায় আমরাও অনেক আনন্দিত।
তবে সাধারণত! বাঙালী সনাতন ধর্মীয়দের বিয়ের অনুষ্ঠানে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আচার হল সাত পাকে বাঁধা। বিয়ের দিন ছাদনাতলায় বর এলে কনেকে পিঁড়িতে বসিয়ে নিয়ে আসা হয়। কনের মুখ পান পাতা দিয়ে ঢাকা থাকে। বরের চারপাশে কনেকে ঘোরানো হয় সাতবার। এক্ষেত্রে অভিজিৎ সাহা পিঁড়িতে নয়, হাসপাতাল বেডে শুয়েই সাতপাঁক উপভোগ করলেন।
দেশের কয়েকটি অঞ্চলে মিষ্টি পান চাষাবাদ করা হয়। তার মধ্যে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায়ও এই মিষ্টি পান চাষাবাদ করছেন কৃষকরা। এখানকার মিষ্টি পান শুধু ভোলাতেই খ্যাতি তা নয়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেও এর খ্যাতি রয়েছে। বিগত সময়ে দেশের বাহিরেও এই পান রপ্তানি করা হয়েছে। বিশেষ করে বিয়ে ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানের অতিথি আপ্যায়নে এই মিষ্টি পান বিবেচিত হয়ে থাকে। এছাড়া অনেকেই বেড়াতে গেলে কয়েক বিড়া পান সঙ্গে নিয়ে যান প্রিয়জনদের বাড়িতে।
চরফ্যাশন উপজেলায় পান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন কৃষকরা। চলতি মৌসুমে পান চাষে ভালো ফলন হলেও বাজারে ন্যায্য দাম না পাওয়ায় কৃষকদের মাথায় হাত পড়েছে। উৎপাদন খরচের তুলনায় পান বিক্রি করে তারা যে দাম পাচ্ছেন, তা চরমভাবে হতাশাজনক বলে তারা মনে করেন। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কৃষকরা সাধারণত আবাদি-অনাবাদি ও বাড়ির পাশে পান চাষাবাদ করেন। পান চাষ করেই অনেক অসহায় ও হতদরিদ্র কৃষকরা স্বাবলম্বী হয়েছেন।
চরফ্যাশন সদরে পানের পাইকারি হাটে গিয়ে দেখা যায়, চাষিরা পানের পাই সাজিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পাইকারদের অপেক্ষায়। চাষিরা বিভিন্ন বাহনে করে এই হাটে পান নিয়ে আসেন। সপ্তাহ শনিবার ও বৃহস্পতিবার চরফ্যাশন সদরে পানের হাট বসে। এখান থেকেই পাইকাররা পান কিনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পান সরবরাহ করেন।
কৃষকরা জানান, ৭২টি পানে এক বিড়া। ১২ বিড়া পানে এক পাই। তাদের কাছ থেকে পাইকাররা পাই হিসেবেই পান কিনছেন। এক সময়ে তাদের উৎপাদিত এই পান দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা হত। তবে ৫ আগস্ট ২০২৪ এর পর এই পান আর বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে না। এছাড়া পানের দাম কম থাকায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, বৈশাখ থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত এই ৬ মাস পান উৎপাদন বেশি হয়। চলতি মৌসুমে ১০৫ হেক্টর জমিতে পান চাষাবাদ হচ্ছে। উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে প্রায় ১ হাজার ৫০০ জন কৃষক পান চাষাবাদ করছেন। এর মধ্যে নীলকমল, নুরাবাদ, আহাম্মদপুর, এওয়াজপুর ও ওসমানগঞ্জ ইউনিয়ন পান চাষ বেশি হয়। কৃষি অফিস বলছে, বর্ষার মৌসুমে পানের দাম কিছুটা কম থাকে। তবে শীত মৌসুমে পানের দাম বেড়ে যাওয়ার ফলে কৃষকরা তখন তাদের লোকসান পুষিয়ে নিতে পারেন। পান চাষিদের দাবি, তারা বিগত বছরগুলোতে বর্ষার মৌসুমে পান বিক্রি করে লোকসানে পড়েনি। অন্তত তাদের খরচ পুষিয়ে কিছুটা লাভবান হয়েছেন। তবে এই বছর একেবারেই লোকসানে রয়েছে তারা।
উপজেলার নীলকমল ইউনিয়নের পানচাষি লিটন বিশ্বাস বলেন, ‘আমি চলতি মৌসুমে এক একর জমিতে পান চাষ করছি। এতে আমার প্রায় ৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ধার-দেনা করে প্রতি বছরেই পান চাষ করি। তবে বিগত বছরগুলোতে খরচ পুষিয়ে লাভবান হয়েছি। অন্য কোনো আয়ের উৎস নেই, পান বিক্রি করে যে আয় হয় তা দিয়েই চলে সংসার। তবে এই বছরে এখনো পর্যন্ত ২ লাখ টাকার পান বিক্রি করে লোকসানে রয়েছি। এদিকে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’ নুরাবাদ ইউনিয়নের চাষি নিমাই বৈরাগী বলেন, ‘দীর্ঘ কয়েক বছর ধরেই পান চাষাবাদ করে আসছি। চলতি মৌসুমে বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ২ একর জমিতে ৯৫০টি বড় পান চাষ করছি। এক পাই পান যেখানে ১ হাজার ৫০০ টাকা বিক্রি হয়েছে, সেই পান এখন ৬০০ টাকা বিক্রি হয়। সার-ওষুধের দাম অনেক, খরচের সঙ্গে আয়-ব্যয়ের হিসেব মিলছে না। সরকার অন্যান্য কৃষিতে কৃষকদের সার-বীজসহ বিভিন্ন প্রণোদনা দিয়ে থাকেন। এই পান নিত্য প্রয়োজনীয়, তবে আমরা পান চাষিরা সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা পাচ্ছি না।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নাজমুল হুদা জানান, ‘বিভিন্ন কারণে পানচাষিরা বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছরে দাম কিছুটা কম পাচ্ছে। তবে আমরা কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, কৃষকদের কাছ থেকে কথা বলে জেনেছি যদি পান বিদেশেও রপ্তানি বাড়ানো যায় তাহলে কৃষকরা আশানুরূপ দাম পাবে। এছাড়া সরকার মাঠ ফসলের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা দিয়ে থাকে। তবে পানচাষিদের জন্য প্রণোদনার সুযোগ নেই। ভবিষ্যতে যদি সরকার পানচাষিদের জন্য কোনো বরাদ্দ দেয় তাহলে আমরা তাদের সহায়তা করতে পারব।
আফগানিস্তানে সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের পর খাদ্য, পানি, বাসস্থান এবং জরুরি চিকিৎসার অভাবে মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বন্ধুপ্রতিম দেশটির এই মানবিক বিপর্যয়ে বাংলাদেশ অত্যন্ত মর্মাহত।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে ভূমিকম্পে সৃষ্ট আকস্মিক দুর্যোগ মোকাবেলায় আফগান জনগণের জন্য বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে জরুরি মানবিক সহায়তা প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সকাল ৮টায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি পরিবহন বিমান জরুরি ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে কাবুলের উদ্দেশে রওনা হয়েছে।
শুক্রবার ১১.২২৭ টন ত্রাণ সহায়তার মধ্যে রয়েছে তাঁবু, কম্বল, শীতবস্ত্র, খাবার পানি, শুকনো খাবার, কাপড়, বিস্কুট, মিল্ক পাউডার, নুডলস ও ওষুধ। এসব ত্রাণ সামগ্রী হস্তান্তর শেষে বিমান বাহিনীর পরিবহন বিমানটি আজই দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের অপারেশন ও পরিকল্পনা পরিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আলীমুল আমীন বিমানটি বাংলাদেশ ত্যাগের পূর্বে এ উপলক্ষ্যে প্রেস ব্রিফিং করেন। সেসময় সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ও বিমান বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
আইএসপিআর জানিয়েছে, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী বিশ্বাস করে, সরকারের পাঠানো এই মানবিক সহায়তা আফগানিস্তানের ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের দুর্ভোগ কমাতে সহায়ক হবে। আগামী দিনগুলোতে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বৈশ্বিক যেকোনো প্রয়োজনে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী আত্মনিয়োগের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ।
উল্লেখ্য, গত ৩১ আগস্ট স্থানীয় সময় রাত ১১টা ৪৭মিনিটে আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে ৬.০ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ২ হাজার ২০৫ জন নিহত এবং ৩ হাজার ৬৪০ জন আহত হন। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৮ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি।
অনলাইনে চাকরির প্রলোভন ও টেলিগ্রাম অ্যাপের মাধ্যমে প্রতারণা চালানো সংঘবদ্ধ চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- চক্রের মূলহোতা আকাশ (২২), রাশাদ (২৮) এবং তাদের সহযোগী আসাদ (৩০)।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সিআইডি সাইবার ক্রাইম অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন অপারেশনের একটি টিম তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ ও অনলাইন গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে রাজধানীর ধানমন্ডি, ঠাকুরগাঁওয়ের সীমান্তবর্তী এলাকা এবং দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে।
সিআইডির তদন্তে জানা যায়, গ্রেপ্তারকৃতরা ভুয়া খণ্ডকালীন চাকরি ও বিনিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিলো। টেলিগ্রাম অ্যাপের মাধ্যমে কয়েক লাখ টাকা বিনিয়োগ করলে স্বল্প সময়ে কয়েকগুণ মুনাফার প্রলোভন দেখাতো। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা প্রতারণার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। এ চক্রের সঙ্গে দেশি বিদেশি আরও অনেক ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গ্রেপ্তারকৃতদের থেকে প্রতারণায় ব্যবহৃত অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন এবং ছদ্মনামে ব্যবহৃত বিভিন্ন সিমকার্ড জব্দ করা হয়েছে। মামলার তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
সিআইডি জানিয়েছে, তদন্তের মাধ্যমে এ প্রতারণা চক্রের মূল রহস্য উন্মোচন করা হবে। জড়িত অন্যদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।
মন্তব্য