রাজশাহীতে অভিনব মিষ্টি তৈরি করে আলোড়ন তোলা প্রতিষ্ঠান ‘রসগোল্লা’য় অভিযান চালিয়ে এক ঘণ্টার ব্যবধানে দুটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের জরিমানার ঘটনায় কাঁচা আমের জিলাপি তৈরি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
শুক্রবার বিকেলে প্রথমে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও পরে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালায় প্রতিষ্ঠানটিতে। প্রথম সংস্থা জরিমানা করে ২৫ হাজার টাকা, দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠান জরিমানা করে ৩০ হাজার টাকা।
একই প্রতিষ্ঠানে দুটি সংস্থার অভিযান নজিরবিহীন। পাশাপাশি জরিমানা ঠিক কী কারণে, সে বিষয়টি স্পষ্ট করতে পারছেন না সাজা ঘোষণা করা দুই কর্মকর্তা।
তবে রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দাবি করেছেন, এখানে আইনের ব্যত্যয় হয়নি।
প্রথমে অভিযানে যাওয়া ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠানটির রং ব্যবহারের অনুমোদনপত্র দেখে এসে বলেছে, তারা এটা ব্যবহার করতে পারবে। দ্বিতীয়বার অভিযানে যাওয়া জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত জরিমানা করেছে ভেজালের দায়ে, যদিও মুখে বলছে অবৈধ রং ব্যবহারের কথা। তবে তারা বৈধতার নথিপত্রই দেখতে চায়নি বলে অভিযোগ করছেন আমের জিলাপি নিয়ে আসা রসগোল্লার স্বত্বাধিকারী।
জরিমানার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, জিলাপির খামিরে আমের পরিমাণ কম। তবে কী আম ব্যবহার করা হবে, সে বিষয়ে কোনো ধারণা নেই জরিমানা আদেশ দেয়া দুই পক্ষের কারও মধ্যেই।
পরে জানা গেছে পাঁচ কেজি খামিরে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আম দেয়া ছিল।
রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট এ ক্ষেত্রে বিএসটিআইয়ের কাছ থেকে অনুমোদন নিয়ে আসার কথা বলেছেন। যদিও মান নিয়ন্ত্রণে সরকারি সংস্থাটির কাছে জিলাপির মান নিয়ে কোনো নির্ধারিত শর্তই নেই। যেসব পণ্য বাজারে আনতে বিএসটিআইয়ের অনুমোদন লাগে, তার মধ্যে জিলাপি নেই।
এই পরিস্থিতিতে রসগোল্লার পরিচালক আরাফাত রুবেল জানিয়েছেন, তিনি জিলাপিটি আর বানাচ্ছেনই না। তিনি বলেন, ‘খুলনাসহ দেশের অন্য জায়গাতেও কাঁচা আমের জিলাপি হচ্ছে অথচ আমরা আমের শহরে, আমের জিলাপি বন্ধ।’
গত বছরের শেষ দিকে ‘রসগোল্লা’নানা স্বাদের মিষ্টি নিয়ে এসে তুমুল আলোচিত হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রচার পায় খেজুরের গুড়ের রসগোল্লা। আরও আছে পাকা আমের, কমলার মিষ্টি, কাঁচা মরিচের রসগোল্লা।
এবার রোজায় তারা নিয়ে আসে কাঁচা আমের জিলাপি। আগের সবগুলো পণ্যের মতো এটিও আলোড়ন তোলে। দেশের প্রধান গণমাধ্যমগুলোতেও এটি প্রতিবেদন আকারে উঠে আসে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এটি আলোচিত হয়। কাঁচা আমের জিলাপির পক্ষে-বিপক্ষে দুই ধরনের মতামতই আসতে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
বিএসটিআইয়ের অনুমোদন কোথায় পাবে
দোকানটিতে দ্বিতীয় অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সঞ্জয় দাসের মন্তব্য জানতে পারেনি নিউজবাংলা। পরে কথা হয় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাবিহা সুলতানার সঙ্গে।
তিনি জানান, অভিযানে দেখা গেছে পাঁচ কেজি খামিরে ৫০০ গ্রাম আম দেয়া হয়। এ কারণে তারা একে আমের জিলাপি বলতে রাজি নন।
তিনি নিজেই উদাহরণ টানেন বাজারে চলা লিচি জেলির কথা। বলেন, ‘লিচুর মতো টেস্ট কিন্তু ওইটার মধ্যে তো লিচুর কিছুই নেই।’
এই পণ্য তো বাজারে চলছে... কেউ তো বন্ধের আদেশ দেয়নি- এ বিষয়টি স্মরণ করালে তিনি বলেন, ‘সে কোম্পানিগুলো বিএসটিআইয়ের অনুমতি নিয়ে করছে। তিনিও যদি এমন কোনো অনুমোদন নিয়ে আসেন তখন আমরা কিছু বলব না।’
তবে জিলাপির বিএসটিআইয়ের অনুমোদন আনা সম্ভবই না। এর কারণ মান নিয়ন্ত্রণে সরকারি সংস্থাটির রাজশাহীর সহকারী পরিচালক দেবব্রত বিশ্বাস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জিলাপির অনুমোদন দেয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই।’
দ্বিতীয়বার জরিমানা কোন অপরাধে
জেলা প্রশাসনের যে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালায়, তারা জরিমানা করে বিএসটিআইয়ের অনুমোদনহীন ফুড কালার ব্যবহারের কারণে। কিন্তু ফুড কালার বিএসটিআই দেখে না। এটা দেখে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ সায়েন্স ল্যাবরেটরি।
‘রসগোল্লা’র পরিচালক আরাফাত রুবেল নিউজবাংলাকে জানান, প্রথম যারা এসেছিলেন তারা দেখে বলেছেন, এটা ওকে আছে, এটা (রং) ব্যবহার করতে পারেন, কোনো সমস্যা নেই।
তাহলে জরিমানা কেন করল- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তারা জরিমানা করল আম পরিমাণে কম হয়েছে বলে।’
কতটুকু আম দিতে হবে- সেটা বলেছে কি?- এমন প্রশ্নে বলে, ‘না, তারা সেটা বলেনি। বলে এ বিষয়ে আইন নেই। বলেছে, এটায় যেহেতু পুরোটা আম নেই, তাহলে বলতে হবে ম্যাঙ্গো ফ্লেভারড জিলাপি।’
অথচ দ্বিতীয়বার যখন অভিযান চালানো হয়েছে, তখন জরিমানা করা হয়েছে কোন অপরাধে সেটিই স্পষ্ট নয়।
‘রসগোল্লা’কে যে জরিমানার স্লিপ দেয়া হয়, তাতে আইনের ধারা কাটাকাটি করা হয়েছে। প্রথমে লেখা হয়, ‘ওজন ও পরিমাপ মানদণ্ড আইন, ২০১৮-এর ২৪(১) ধারার কথা। সেটি কেটে পরে লেখা হয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯-এর ৪১ ধারার কথা।
এই ধারায় বলা আছে, ‘কোন ব্যক্তি জ্ঞাতসারে ভেজাল মিশ্রিত পণ্য বা ঔষধ বিক্রয় করিলে বা করিতে প্রস্তাব করিলে তিনি অনূর্ধ্ব তিন বৎসর কারাদণ্ড, বা অনধিক দুই লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।’
রসগোল্লায় কী ভেজাল মেশানো হয়েছে, সেটি বুঝতে পারছেন না এর মালিক আরাফাত রুবেল।
তিনি জানান, দ্বিতীয় আদালত এসে বলেছে, তারা যে রং ব্যবহার করেন, সেটির বিএসটিআই অনুমোদন নেই।
রুবেল জানান, তিনি বারবার বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, রঙের বিষয়টি বিএসটিআই দেখে না, এটা সায়েন্স ল্যাবরেটরির বিষয়। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট সেটা শোনেননি।
তিনি বলেন, ‘তারা তো আমার কথা শোনেনি। কাটাকাটি করেছে স্লিপে। কত ধারায় জরিমানা করবে, সেটাও স্পষ্ট করতে পারেনি।’
রুবেল যে রং ব্যবহার করেন, সেটির অনুমোদনপত্র সায়েন্স ল্যাবরেটরি থেকে নিয়েছেন রুবেল। সেই নথিও নিউজবাংলাকে দিয়েছেন তিনি।
তবে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাবিহা সুলতানা দাবি করেছেন, রং ব্যবহারের কোনো অনুমাদনপত্র দেখাতে পারেনি রসগোল্লা। বলেন, ‘দেখাতে পারলে জরিমানা করা হতো না।’
যে ধারাটি কেটে দেয়া হয়েছে, সেটি মূলত মোড়কজাত পণ্যের বিষয়ে। এই ধারা অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি মোড়কজাত কোনো পণ্য-
ক. তৈরি, উৎপাদন, মোড়কজাত বা বিক্রয় করিবেন না, বা মোড়কজাত বা বিক্রির ব্যবস্থা করবেন না;
(খ) পরিবেশন বা সরবরাহ করবেন না অথবা পরিবেশন বা সরবরাহের ব্যবস্থা করবেন না; বা
(গ) বিক্রির উদ্দেশ্যে প্রদর্শন বা অধিকারে রাখবেন না;
যদি না পণ্যসামগ্রী মোড়কজাতকরণের নিবন্ধন সনদপত্র থাকে।
এসব মোড়কের উপরিভাগে প্যানেলে বাংলা ভাষায় (বাংলা ভাষার অক্ষরের আকৃতিকে অধিক প্রাধান্য দিয়া) বেশ কিছু তথ্য দেয়ার শর্তও দেয়া আছে।
‘এক দিনে দুবার জরিমানা কখনও শুনেছেন?’
পরপর দুবার জরিমানা, এর পেছনের কারণও অস্পষ্ট। এর পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে আরাফাত রুবেলের মধ্যে।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমার তো মনে হয় এটার পেছনে অন্য কিছু আছে। নইলে কখনও দেখেছেন এক দিনে একই অভিযোগে একটি প্রতিষ্ঠানে দুবার অভিযান চালানো হয়?
তিনি বলেন, ‘এটা মনে হয় খ্যাতির বিড়ম্বনা। আমাদের এই প্রতিষ্ঠান নিয়ে অনেক প্রচার হয়েছে। এটা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনাও হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মনে হয় নেগেটিভ আলোচনাটিকেই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।’
এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করবেন কি না জানতে চাইলে রুবেল বলেন, ‘ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশের বিরুদ্ধে মামলা করা যায় কি না জানি না। তারা কি আমার আবেদন নেবে?’
কেন নেবে না- এমন মন্তব্য করার পর তিনি বলেন, ‘তাহলে আমি বিষয়টি ভেবে দেখব।’
তিনি বলেন, ‘যেহেতু এটা নিয়ে অভিযান চলেছে, কথা উঠেছে, এ কারণে আজ থেকে জিলাপি বানানো বন্ধ রেখেছি।’
একই প্রতিষ্ঠানকে একই অপরাধে একই দিন আবার জরিমানা করা যায় কি না- এমন প্রশ্নে রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাবিহা সুলতানা বলেন, ‘এটা আইনসম্মতই হয়েছে।’
তবে দুই অভিযানের মধ্যে যে সমন্বয়হীনতা ছিল, সেটি স্বীকার করেছেন তিনি। বলেন, ‘ভোক্তা অধিকার আমাদের ইনফর্ম করে যায়নি। তারা যে অভিযান চালিয়েছেন তারা জানাননি। এ ক্ষেত্রে একটু গ্যাপ হয়েছিল।
‘ডিসি স্যারের কাছে কিছু খবর ছিল ওইখানকার বিষয়ে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ম্যাজিস্টেট পাঠিয়েছিলাম। পরে আমরা জানতে পারি যে ভোক্তা অধিকারের অভিযান হয়েছে। এ সময় ম্যাজিস্ট্রেটকে বলেছিলাম, অভিযানের পর তারা যদি সেভাবে জিলাপি তৈরি আর না করে তাহলে দরকার নেই। কিন্তু অভিযানের পরও দেখা গেছে তারা একইভাবে জিলাপি বানাচ্ছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে জরিমানা করা হয়েছে।’
আম আছে স্বীকার করে নিয়েছে দুই পক্ষই
প্রথম জরিমানার আদেশ দেয়া অধিদপ্তরের রাজশাহী শাখার উপপরিচালক হাসান আল মারুফ বলেন, ‘কাঁচা আমের জিলাপি বলে প্রচার করা হচ্ছে, আসলে এটা কাঁচা আমের না, কাঁচা আমের ফ্লেভারযুক্ত জিলাপি; যা এক ধরনের প্রতারণা।’
তিনি বলেন, ‘জিলাপির রং কখনও সবুজ হয় না। ফুড গ্রেড কালার ব্যবহার করে কাঁচা আমের জিলাপি বলা হচ্ছে। এই প্রতারণা বন্ধ করার জন্য ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’
আম কি একেবারেই পাননি?- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আম ছিল, তবে তা ৫ শতাংশেরও কম হবে।’
জিলাপিতে আম কত শতাংশ থাকার কথা- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘না, শতাংশ ওভাবে না। একেবারেই পরিমাণটা খুবই সামান্য। আবার এখন যে আমটা ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটা খুবই ছোট। এখনও কোনো স্বাদ হয়নি। তারা যদি বলত, কাঁচা আমের ফ্লেভারের জিলাপি, তাহলে হতো।’
এক ঘণ্টার মধ্যে সেখানে হাজির হন রাজশাহী জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সঞ্জয় দাস। তিনি জরিমানা করেছেন ৩০ হাজার টাকা।
তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের জানিয়েছেন, তারা পাঁচ কেজি খামিরে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আম পেয়েছেন।
তাহলে জরিমানা কেন?- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কাঁচা আমের যে জিলাপি বিক্রি করছে, তার সঙ্গে কৃত্রিমভাবে সবুজ রং মেশানো হচ্ছে যার কোনো সরকারি অনুমোদন নেই। এ জন্য ৩০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।’
তবে নথিপত্র বলছে, ব্যবহার করা রংটি খাদ্যে দেয়ার সরকারি অনুমোদন ছিল রসগোল্লার।
পাঁচ কেজির মধ্যে আধা কেজি আম দিলে কীভাবে হবে, বলছেন এডিএম
জিলাপিতে আমের পরিমাণ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাবিহা সুলতানা বলেন, ‘পাঁচ কেজি জিলাপির মধ্যে যদি আধা কেজি আমের রস দেয়, তবে কী সেটি আমের জিলাপি হবে? সেটি তো প্রতারণা। সেটায় তো আরও বেশি জরিমানা হবে।’
তাহলে পাঁচ কেজি ময়দার সঙ্গে কতটা আমের মিশ্রণ থাকলে মানসম্পন্ন হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেটা আমি কী করে বলব? তবে আপনি বলেন, যদি পাঁচ কেজির ভেতর হাফ কেজি আম ব্যবহার করে। বাজারে সেভাবে আমও আসেনি। ওইখানে যদি রং দিয়ে ফ্লেভার দিয়ে চালিয়ে দেয় তাহলে কী করে হবে?’
আরও পড়ুন:
কুমিল্লা নাঙ্গলকোটে ইউপি সদস্য আলাউদ্দিনকে বাড়ির সামনে থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামিকে ঢাকার হাতিরঝিল রেল মগবাজার রেলগেট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। শুক্রবার দিনগত রাতে অভিযানটি শেষ করে র্যাব।
গ্রেফতারকৃত আসামী শেখ ফরিদ (৪৫) নাঙ্গলকোট উপজেলার বক্সগঞ্জ আলীয়ারা গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে।
শনিবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে কুমিল্লা অশোকতলা এলাকায় র্যাব অফিসে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন
র্যাব ১১ এর কুমিল্লার কোম্পানি কমান্ডার মেজর সাদমান ইবনে আলম।
মেজর সাদমান জানান, নাঙ্গলকোটের আলিয়ারা গ্রামে দুই পরিবারের মধ্যে বংশপরম্পরায় একটি বিরোধ চলে আসছিল। গেল গেল ২৫ জুলাই গরুর ঘাস খাওয়া কে কেন্দ্র করে দুই পরিবারের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
সেদিন দফায় দফায় সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১৫ জন গুলিবিদ্ধসহ ২৫ জন আহত হয়।
এ ঘটনার রেশ ধরে গেলো ৩ আগস্ট দুপুরে আলিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন তার চাচাতো ভাইয়ের জানাজার নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা তাকে একটি সিএনজিতে তুলে নিয়ে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে।
পরে এ ঘটনায় ৫ আগস্ট নিহতের ছেলে বাদী হয়ে নাঙ্গলকোট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বিপদসীমা অতিক্রম করায় নির্ধারিত সময়ের আগেই খোলা হয়েছে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সব জলকপাট। সোমবার (৫ আগস্ট) রাত ১২টা ২ মিনিটে হঠাৎ পানি বাড়তে থাকায় জরুরি ভিত্তিতে কেন্দ্রের ১৬টি জলকপাট ৬ ইঞ্চি করে খুলে দেওয়া হয়।
কর্ণফুলি পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান জানান, রাতে লেকের পানির উচ্চতা ১০৮.০৫ ফুট ছুঁয়ে গেলে বিপদসীমা অতিক্রম করে। এতে প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলি নদীতে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, “প্রথমে সোমবার (৪ আগস্ট) বিকেল ৩টায় পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা পরের দিন মঙ্গলবার সকাল ৯টায় জলকপাট খোলার ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ অতিরিক্ত পানি প্রবাহের কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই সোমবার রাতেই জলকপাট খুলে দিতে হয়। তবে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
তিনি আরও জানান, কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিট বর্তমানে সচল রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে আরও ৩২ হাজার কিউসেক পানি লেক থেকে কর্ণফুলিতে গিয়ে পড়ছে। সবমিলিয়ে পানি নিঃসরণের হার এখন প্রতি সেকেন্ডে ৪১ হাজার কিউসেক।
ভাটি এলাকার জনসাধারণের উদ্দেশে তিনি বলেন, “পানি প্রবাহ বাড়লেও আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে, এবং প্রয়োজনে আমরা আগেভাগেই ব্যবস্থা নেব।”
স্থানীয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও এ বিষয়ে আগেই অবহিত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন কর্তৃপক্ষ।
গাজীপুরের কালীগঞ্জে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ’ অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে শপথ গ্রহণ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশব্যাপী আয়োজিত ‘লাখো কণ্ঠে শপথ পাঠ’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
শনিবার (২৬ জুলাই) সকালে উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে এক ভাবগম্ভীর পরিবেশে এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই মাসে নিহত শহীদদের স্মরণে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। মোনাজাতে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং দেশের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করা হয়।
উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই শপথ পাঠ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তনিমা আফ্রাদ। তিনি উপস্থিত সকলকে শপথ বাক্য পাঠ করান। দেশের সংবিধান ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখা, দুর্নীতি ও সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করার অঙ্গীকার করেন অংশগ্রহণকারীরা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইউএনও তনিমা আফ্রাদ বলেন, "জুলাই পুনর্জাগরণ কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি আমাদের চেতনার বাতিঘর। সেই শহীদদের আত্মত্যাগ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। আজকের এই সম্মিলিত শপথ হোক দেশ ও মানুষের কল্যাণে নিজেদের উৎসর্গ করার একটি নতুন অঙ্গীকার। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক পর্যন্ত সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে পারে।"
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসনিম উর্মি, কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলাউদ্দিন, উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা নেতৃবৃন্দ সহ উপজেলায় কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীবৃন্দ।
বক্তারা জুলাইয়ের শহীদদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে বলেন, তাদের দেখানো পথ অনুসরণ করে দেশের উন্নয়নে একযোগে কাজ করতে হবে। উপজেলা প্রশাসনের এই সফল আয়োজনে সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিকে এক নতুন মাত্রা দেয়। এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটি কালীগঞ্জের মানুষের মধ্যে দেশ ও সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ এবং নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করবে বলে আশা প্রকাশ করেন আয়োজকরা।
ফেনীতে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। এর সঙ্গে দেখা দিয়েছে নতুন এক আতঙ্ক। বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেতে মানুষের বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছিল নানা প্রজাতির সাপ। এখন ঘরে ফিরলেও সাপ আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে। এরই মধ্যে পরশুরামে বিষধর সাপের কামড়ে রোকেয়া আক্তার রিনা (৫০) নামে এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকাল ৫টার দিকে ফেনীর পরশুরামের পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত রিনা পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম শহীদের স্ত্রী। তার এক ছেলে দুই মেয়ে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বন্যার পানি শুকিয়ে গেলে রান্না করার জন্য রান্নাঘরে গেলে সেখানে একটি অজ্ঞাত বিষধর সাপ রিনাকে কামড় দেয়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এরপর ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের স্বামী শফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে রিনা রান্না ঘরে যায়। এ সময় রান্নাঘরের একটি গর্ত থেকে বিষধর একটি সাপ বের হয়ে তার পায়ে কামড় দেয়। তার চিৎকার শুনে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্স নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার কোনো চিকিৎসা না হওয়ায় ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার রেদোয়ান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, হাসপাতালে আনার আগেই ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছিল।
টানা ৩ দিনের বৃষ্টিতে বেনাপোল বন্দর এলাকায় জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বন্দর অভ্যন্তরের অনেক স্থানে হাটু পানি জমায় মারাত্বক ভাবে ব্যহত হচ্ছে পণ্য খালাস প্রক্রিয়া। যানবাহন ও নিরাপত্তাকর্মীদের চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ায় বন্দরের ৯.১২.১৫.১৬ ও ১৮ নম্বর সেড থেকে লোড আনলোড বন্ধ হয়ে আছে।
ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই বন্দরে হাটু পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে থাকে। কয়েক বছর ধরে এ দূর্ভোগ হলেও নজর নাই বন্দর কর্তৃপক্ষের। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, রেলকর্তৃপক্ষ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় পানি নিষ্কাসনে বাধা গ্রুস্থ্য হচ্ছে।
তবে এসব শেড ও ওপেন ইয়ার্ড অধিকাংশই দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে তৈরী হয়নি। বন্দর সড়কের উচ্চতার চেয়ে পণ্যগারগুলো নিচু হওয়ায় একটু বৃষ্টিপাত বেশি হলে পানি নিষ্কাষনের অভাবে পণ্যগার ও ইয়াডে জলবদ্ধতা তৈরী হয়। এতে পানিতে ভিজে যেমন পণ্যের গুনগত মান নষ্ট হয় তেমনি চলাচলের বিঘ্ন ঘটছে। তবে আজ সকাল থেকে সেচ যন্ত্র চালিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বেনাপোল বন্দর পরিচালক শামিম হোসেন জানান, বন্দরের জলবদ্ধতা প্রতি বছরে তৈরী হয়। বিশেষ করে রেল বিভাগ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় সমস্যার সন্মুখিন হতে হচ্ছে। বন্দরের পানি নিষ্কাসন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়েছে। তবে দ্রুত এ অবস্থা কাটিয়ে তুলতে পাশ্ববর্তী হাওড়ের সাথে বন্দরের ড্রেন তৈরীর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রেরক: রাশেদুর রহমান রাশু, বেনাপোল যশোর ।
কক্সবাজারের চকরিয়ায় গত রোববার (৬ জুলাই) মালুমঘাট বাজার থেকে পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে এক যুবক পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়া সে যুবক সাজ্জাদ হোসেন (২০) কে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ কলাতলীর একটি আবাসিক হোটেল থেকে আটক করে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দিবাগত রাত তিনটায় কক্সবাজারের একটি আবাসিক হোটেল (ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্ট) অভিযান পরিচালনা করে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ। রাত প্রায় তিনটায় নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ওই হোটেলের একটি কক্ষ থেকে তাকে আটক করা হয়।
চকরিয়া থানা পুলিশের বিশেষ নজরদারি ও কক্সবাজারের গোয়েন্দা পুলিশের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে আসামি সাজ্জাদ হোসেন কে আটক করতে সক্ষম হয় কক্সবাজার ডিবি পুলিশ।
এবিষয়ে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, পলাতক আসামি সাজ্জাদ কে কক্সবাজার ডিবি পুলিশ আটক করেছে। প্রাথমিকভাবে সদর মডেল থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর চকরিয়া থানায় নিয়ে আসা হবে। তার বিরুদ্ধে একটি পুলিশ এসল্ট মামলা করা হয়েছে।
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে করতোয়া নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে যৌথবাহিনীর অভিযানে একজনকে দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাত ৯টার দিকে শালডাঙ্গা ইউনিয়নের ধুলাঝাড়ি বাজারের করতোয়া নদীসংলগ্ন এলাকায় অভিযানটি চালানো হয়।
দেবীগঞ্জ সেনা ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার মেজর জুবায়ের হোসেন সিয়ামের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ও দেবীগঞ্জ থানা পুলিশের সমন্বয়ে এ অভিযান পরিচালিত হয়।
অভিযানে বালু উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত দুইটি ট্রাক্টরসহ চালক রাজু ইসলাম ও শান্ত আহমেদকে আটক করা হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসান ঘটনাস্থলে এসে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।
আদালতের রায়ে রাজু ইসলামকে বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনের ধারা লঙ্ঘন করায় দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়, অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন বিচারক। তবে রাজু ইসলাম অর্থদণ্ডের অর্থ পরিশোধ করায় ট্রাক্টর দুটি ছেড়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় প্রশাসন জানায়, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন রোধে যৌথবাহিনীর অভিযান চলমান থাকবে।
মন্তব্য