প্রতিবারের মতো এবারও পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে রাজধানী ঢাকা ও গাজীপুর ছাড়বেন অনেকেই। তবে গন্তব্যে পৌঁছাতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে দুর্ভোগে পড়তে পারেন তারা।
সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটি) ধীরগতির নির্মাণকাজ, সড়কে বিভাজন না থাকা, মহাসড়কের দুই পাশ দখল করে অবৈধ বাজার, সড়কে নির্মাণ সামগ্রীর স্তুপসহ বেশ কয়েকটি কারণে এবার দুর্ভোগ আগের চেয়েও বাড়তে পারে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গাজীপুরের টঙ্গী ব্রিজ থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার মহাসড়কে ঈদযাত্রায় দুর্ভোগ বাড়বে। তবে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সমস্যা সমাধানের চেষ্টার আশ্বাস দিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সড়কপথে উত্তবঙ্গের প্রায় ৩২ জেলার মানুষ রাজধানী ঢাকা ছাড়তে ব্যবহার করেন এই পথ। গত কয়েক বছর ধরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিমানবন্দর থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত সরকারের মেগা প্রকল্প বাস র্যাপিড ট্রানজিটের (বিআরটি) নির্মাণকাজ চলছে ধীরগতিতে। এর মধ্যে গাজীপুরের টঙ্গী ব্রিজ থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা খারাপ।
কোথাও উড়াল সেতুর স্ল্যাব বসানো, কোথাও সড়ক মেরামত আবার কোথাও চলছে উড়াল সেতুর পিলার নির্মাণকাজ। সড়কের একদিকে চলছে উন্নয়নকাজ, অন্যদিকে সংকুচিত হয়ে যাওয়া সড়ক দিয়ে চলছে যানবাহন।
এ কারণে সারাবছরই সড়কটিতে দিন-রাতের অধিকাংশ সময় দেখা দিচ্ছে তীব্র যানজট। ঈদের সময় সেই যানজট বেড়ে আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে স্বাভাবিকভাবে। আসন্ন ঈদুল ফিতরেও ঈদযাত্রায় শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সড়কটির ১২ কিলোমিটার অংশ।
তবে বিআরটি প্রকল্পের পরিচালক এ এস এম ইলিয়াস শাহ বলেছেন, ইতিমধ্যে প্রকল্পের ৭৩ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের অধীনে রাস্তার দুই পাশে ড্রেন নির্মাণ সম্পন্ন হলেও উড়াল সড়ক ও ওভারপাস সড়কের লেনগুলোর নির্মাণকাজ চলছে। ঈদযাত্রার কথা মাথায় রেখে প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। ঈদের আগে সড়কটি পুরোপুরি চলাচলের উপযোগী করে তোলা হবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার অংশে প্রতিদিনই সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। এ পথটুকু যেতে কখনো কখনো তিন থেকে চার ঘণ্টা সময়ও লেগে যাচ্ছে। তবে টঙ্গী কলেজগেইট থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত সড়কটির প্রায় তিন কিলোমিটার অংশে খানাখন্দ ও ভাঙাচোরা থাকলেও বাকি অংশে তা নেই।
সড়কের ওপরে উড়াল সেতু এবং নিচে কার্পেটিং এখনো অনেক জায়গায় শেষ হয়নি। কোথায় কোথায় সাময়িক চলাচলের সুবিধার জন্য অস্থায়ী কার্পেটিং করা হচ্ছে। নির্মাণকাজ চলমান থাকায় মহাসড়কের তিন লেন কোথাও কোথাও এক লেনে পরিণত হয়েছে। এতে ওই পথে যানবাহন খুবই ধীর গতিতে চলছে। যার কারণে সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের।
বিআরটির ধীরগতির নির্মাণকাজ
আব্দুল্লাহপুর পার হলেই টঙ্গী। আর দুর্ভোগের শুরুটাও এখান থেকেই। টঙ্গীর শহীদ আহসানউল্লাহ মাষ্টার স্টেডিয়ামের সামনে উড়ালসড়কের কাজ চলছে। এর ফলে ওই জায়গায় সড়ক সংকুচিত হয়ে পড়ায় স্টেশন রোড পর্যন্ত যানজট লেগে থাকে। স্টেশন রোড এলাকায় মহাসড়কের মাঝখানের প্রায় ৩০ থেকে ৪০ফিট জায়গা বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড করা। এ কারণে সড়কটির দুই পাশ সংকুচিত হয়ে পড়েছে।
স্টেশন রোড পেরিয়ে আরেকটু সামনে এগোলেই মিলগেইট এলাকা। এখানে আনুদিপ সিএনজি স্টেশনের সামনে মহাসড়কের পূর্ব পার্শ্বে বিআরটির পিলার নির্মাণের জন্য বড় বড় দুটি গর্ত খোঁড়া হয়েছে। এ কারণে ঢাকামুখি লেনে গাড়ি চলছে সংকুচিত এক লেনে।
মিলগেইট এলাকা থেকে টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার সড়কে কার্পেটিং হয়নি। মিলগেইট পার হয়ে চেরাগআলী মার্কেটের আগ পর্যন্ত রাস্তায় নির্মাণ করা হচ্ছে উড়াল সেতুর পিলার। কলেজগেইট এলাকায় মহাসড়কের মাঝখানে চলছে উড়ালসেতুর গাড়ি ওঠা-নামার লেন।
কলেজগেইট পেরিয়ে সফিউদ্দিন সরকার একাডেমি কলেজের সামনে বিআরটির স্টেশন নির্মাণের কাজ চলছে। সেখানেও মহাসড়কের দুই পাশের লেন সংকুচিত হওয়ায় যানচলাচলে ধীরগতি রয়েছে। এ পথ ধরে কুনিয়া বড়বাড়ি, বোর্ডবাজার, মালেকের বাড়ি এলাকায় বিআরটি প্রকল্পের স্টেশন তৈরির কাজ চলমান। সেখানে যানবাহন স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারছে না।
১২ কিমি সড়কে নেই রোড ডিভাইডার
টঙ্গী ব্রিজ থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়কে বিআরটির কাজ চলমান। এই সড়কে অধিকাংশ জায়গাতেই নেই সড়ক বিভাজন বা রোড ডিভাইডার। কোথাও কোথাও শুধু বাঁশ দিয়ে ডিভাইডার দেয়া হয়েছে। উল্টোপথে যে যার মতো গাড়ি নিয়ে চলাচল করছেন। ফলে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।
মহাসড়কে অটোরিকশা ও ইজিবাইকের দৌরাত্ম্য
মহাসড়কে দুর্ঘটনা এড়াতে অটোরিকশা ও ইজিবাইক চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও গাজীপুরের কোথাও সেটি মানা হচ্ছেনা।
নগরীর টঙ্গী, গাজীপুরা, বড়বাড়ি, বোর্ডবাজার, মালেকের বাড়ি ও ভোগড়া বাইপাস এলাকায় অটোরিকশা ও ইজিবাইকের দৌরাত্ম ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ১২ কিলোমিটার মহাসড়কের যানজটের অন্যতম কারণ এই ধীরগতির বাহন।
মহাসড়কের দুই পাশে অবৈধ বাজার
বিআরটির নির্মাণকাজের কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গা সংকুচিত হয়ে পড়েছে। তার ওপর মহাসড়কের দুই পাশ দখল করে বসানো অবৈধ বাজার। টঙ্গী বাজার মিতালি ফিলিং স্টেশন থেকে টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত বসেছে শতাধিক দোকান। চেরাগআলী এলাকায় সিটি করপোরেশনের টঙ্গী আঞ্চলিক কার্যালয়ের সামনে মহাসড়কের ওপর ভ্যানগাড়ি বসিয়ে বসানো হয়েছে অবৈধ বাজার।
গাজীপুর মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আয়েশা আক্তার আশা ও তার ছোট ভাই ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন এই ভ্যান বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন বলে অভিযোগ। আরও কয়েকটি এলাকার চিত্রও এমন।
সড়কে নির্মাণ সামগ্রীর স্তুপ
চান্দনা চৌরাস্তা থেকে টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় মহাসড়কের মাঝখানেই স্তুপ করে রাখা হয়েছে বিআরটির নির্মাণ সামগ্রী। মহাসড়কের তিন ভাগের এক ভাগ জায়গা দখল করে রাখা হয়েছে কংক্রিটের তৈরি স্ল্যাব, লোহা, রোলার ও ভেকু।
এ বিষয়ে বিআরটি প্রকল্পের পরিচালক (সেতু বিভাগ) মহিরুল ইসলাম খান জানান, টঙ্গী অংশের নিচের সড়কের প্রায় ৯৪ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। ২০ রমজানের পর থেকে ঈদের সময় মহাসড়কের নিচের সড়কে কোনো নির্মাণকাজ বা খোঁড়াখুঁড়ি হবেনা।
তিনি জানান, তবে উড়াল সড়ক ও পিলারের ওপরে স্ল্যাব বসানেরা অন্যান্য কাজ চলবে। ঈদের আগেই সড়কটি পুরোপুরি চলাচলের উপযোগী করে তোলা সম্ভব হবে।
ঈদযাত্রায় যাত্রীরা যেন দুর্ভোগে না পড়েন সে বিষয়টি মাথায় রেখে প্রকল্পের কাজ চলছে জানিয়ে মহিরুল ইসলাম খান বলেন, আমাদের বিভিন্ন টিম দুইবার মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শন করেছে। ঈদযাত্রায় যাতে কোনভাবেই ভোগান্তি না হয় সেজন্য দিন-রাত কাজ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, তবে ট্রাফিক ম্যানেজন্ট ঠিকভাবে করতে হবে। মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধমে মহাসড়কে অটোরিকশা-ইজিবাইক চলাচল বন্ধ, যত্রতত্র বাস দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলা এসব বন্ধ করতে পারলে মহাসড়কে যানজটের সমস্যা হবে না।
ঈদের সময় যানজট পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন গাজীপুর জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি সুলতান আহমদ সরকার।
তিনি বলেন, প্রতিদিন গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়ক দিয়ে কয়েক হাজার যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাক ও লরি চলাচল করে। রাস্তা ভালো না হলে এবার ঈদযাত্রায় যানজট থেকেই যাবে।
ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হবে বলে জানিয়েছেন গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) উপকমিশনার (ট্রাফিক) আব্দুল্লাহ আল মামুন।
তিনি বলেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক দিয়ে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ৬০ হাজার যানবাহন চলাচল করে। ঈদের আগে এই সংখ্যা বেড়ে যায় কয়েক গুন। আমাদের ট্রাফিকের জনবল ৩০০। ঈদ উপলক্ষে পুলিশ লাইন থেকে অতিরিক্ত আরও ১০০ পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।
তিনি বলেন, বর্তমানে ১২ ঘণ্টা ডিউটি শেষে ১২ ঘণ্টা বিশ্রাম দেয়া হয় ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের। তবে আগামী ২৭ এপ্রিল থেকে ৮ ঘণ্টা ডিউটির পর ৮ ঘণ্টা বিশ্রাম নিয়ে ফের ৮ ঘন্টা ডিউটি করবেন ট্রাফিক সদস্যরা। এ ছাড়া থানা পুলিশের সদস্যরাও ঈদের সময় মহাসড়কে দায়িত্ব পালন করবেন।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, যে কোনো মেগা প্রজেক্টের কাজ চলমান থাকলে প্রতিবন্ধকতা থাকবেই। তবে আমরা বিআরটির কাজে দায়িত্বরতদের বলেছি সড়ক সংষ্কার করে দিতে। তারা আশ্বাস দিয়েছে ঈদের আগেই সেগুলো সমাধান করবে।
আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, করোনায় ঘরমুখো মানুষের চাপ কম ছিল। তবে এবার করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় মহাসড়কে যাত্রী ও গাড়ির চাপ বাড়বে।
পোশাক কারখানার শ্রমিকদের একসঙ্গে ছুটি না দেয়ার পরামর্শ দিয়ে ট্রাফিকের এই কর্মকর্তা বলেন, গাজীপুরে প্রায় ২০ লাখ পোশাক শ্রমিক রয়েছে। আমরা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পোশাক কারখানার মালিকদের অনুরোধ করেছি যেন শ্রমিকদের একসঙ্গে ছুটি না দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন শিফটে ছুটি দেয়। এ ছাড়াও কারখানার ভেতর থেকেই রিজার্ভ গাড়ির ব্যবস্থা করার নির্দেশনা দিয়েছি।
মহাসড়কের জায়গা দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ বাজারের বিষয়ে থানা পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে জানিয়ে মামুন বলেন, থানা পুলিশ অবৈধ বাজারের বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে। অন্যদিকে মহাসড়কে অবৈধ অটোরিকশা ও ইজিবাইকের দৌরাত্ম্য কমাতে মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। প্রতিদিনই ডাম্পিং করা হচ্ছে অটোরিকশা-ইজিবাইক।
মহাসড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ পুলিশকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে বলে মনে করেন ট্রাফিক পুলিশের এই কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন:জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে ২৭,২৪৯ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে। বিগত ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের একই মাসে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ২১,৯১৬ কোটি টাকা। জুলাই-২০২৫ মাসে বিগত জুলাই-২০২৪ মাসের তুলনায় ৫,৩৩৩ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। জুলাই ২০২৫ মাসে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ২৪.৩৩%।
জুলাই’২৫ মাসে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে স্থানীয় পর্যায়ের মূসক থেকে। এ খাত থেকে আদায় হয়েছে ১১,৩৫২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের জুলাই’২৪ মাসে এই খাতে আদায়ের পরিমান ছিল ৮,৫৭১ কোটি টাকা। জুলাই ২০২৫ মাসে স্থানীয় পর্যায়ের মূসক আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ৩২.৪৫%।
আয়কর ও ভ্রমন কর খাতে জুলাই’২৫ মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬,২৯৫ কোটি টাকা যা জুলাই’২০২৪ মাসের একই খাতে আদায়কৃত ৫,১৭৫ কোটি টাকার চাইতে ১,১২০ কোটি টাকা বেশি। আয়কর ও ভ্রমন করের ক্ষেত্রে জুলাই ২০২৫ মাসের আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ২১.৬৫%।
২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে আমদানি ও রপ্তানি খাতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৯,৬০২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের জুলাই’২৪ মাসে এই খাতে আদায় ছিল ৮,১৭০ কোটি টাকা, প্রবৃদ্ধির হার ১৭.৫২%।
রাজস্ব আদায়ের এ ধারা ভবিষ্যতে অব্যাহত রাখার জন্য আয়কর, মূল্য সংযোজন কর এবং কাস্টমস শুল্ক-কর আদায়ে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারিদের প্রচেষ্টা আরো জোরদার করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নানাবিধ কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
সম্মানিত করদাতাগণ আইনের যথাযথ পরিপালন নিশ্চিত করে যথাযথ পরিমান কর পরিশোধের মাধ্যমে দেশ গড়ার কাজের অন্যতম অংশীদার হবেন মর্মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আশাবাদী।
কুমিল্লা নাঙ্গলকোটে ইউপি সদস্য আলাউদ্দিনকে বাড়ির সামনে থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামিকে ঢাকার হাতিরঝিল রেল মগবাজার রেলগেট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। শুক্রবার দিনগত রাতে অভিযানটি শেষ করে র্যাব।
গ্রেফতারকৃত আসামী শেখ ফরিদ (৪৫) নাঙ্গলকোট উপজেলার বক্সগঞ্জ আলীয়ারা গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে।
শনিবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে কুমিল্লা অশোকতলা এলাকায় র্যাব অফিসে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন
র্যাব ১১ এর কুমিল্লার কোম্পানি কমান্ডার মেজর সাদমান ইবনে আলম।
মেজর সাদমান জানান, নাঙ্গলকোটের আলিয়ারা গ্রামে দুই পরিবারের মধ্যে বংশপরম্পরায় একটি বিরোধ চলে আসছিল। গেল গেল ২৫ জুলাই গরুর ঘাস খাওয়া কে কেন্দ্র করে দুই পরিবারের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
সেদিন দফায় দফায় সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১৫ জন গুলিবিদ্ধসহ ২৫ জন আহত হয়।
এ ঘটনার রেশ ধরে গেলো ৩ আগস্ট দুপুরে আলিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন তার চাচাতো ভাইয়ের জানাজার নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা তাকে একটি সিএনজিতে তুলে নিয়ে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে।
পরে এ ঘটনায় ৫ আগস্ট নিহতের ছেলে বাদী হয়ে নাঙ্গলকোট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বিপদসীমা অতিক্রম করায় নির্ধারিত সময়ের আগেই খোলা হয়েছে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সব জলকপাট। সোমবার (৫ আগস্ট) রাত ১২টা ২ মিনিটে হঠাৎ পানি বাড়তে থাকায় জরুরি ভিত্তিতে কেন্দ্রের ১৬টি জলকপাট ৬ ইঞ্চি করে খুলে দেওয়া হয়।
কর্ণফুলি পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান জানান, রাতে লেকের পানির উচ্চতা ১০৮.০৫ ফুট ছুঁয়ে গেলে বিপদসীমা অতিক্রম করে। এতে প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলি নদীতে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, “প্রথমে সোমবার (৪ আগস্ট) বিকেল ৩টায় পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা পরের দিন মঙ্গলবার সকাল ৯টায় জলকপাট খোলার ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ অতিরিক্ত পানি প্রবাহের কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই সোমবার রাতেই জলকপাট খুলে দিতে হয়। তবে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
তিনি আরও জানান, কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিট বর্তমানে সচল রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে আরও ৩২ হাজার কিউসেক পানি লেক থেকে কর্ণফুলিতে গিয়ে পড়ছে। সবমিলিয়ে পানি নিঃসরণের হার এখন প্রতি সেকেন্ডে ৪১ হাজার কিউসেক।
ভাটি এলাকার জনসাধারণের উদ্দেশে তিনি বলেন, “পানি প্রবাহ বাড়লেও আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে, এবং প্রয়োজনে আমরা আগেভাগেই ব্যবস্থা নেব।”
স্থানীয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও এ বিষয়ে আগেই অবহিত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন কর্তৃপক্ষ।
গাজীপুরের কালীগঞ্জে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ’ অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে শপথ গ্রহণ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশব্যাপী আয়োজিত ‘লাখো কণ্ঠে শপথ পাঠ’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
শনিবার (২৬ জুলাই) সকালে উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে এক ভাবগম্ভীর পরিবেশে এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই মাসে নিহত শহীদদের স্মরণে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। মোনাজাতে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং দেশের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করা হয়।
উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই শপথ পাঠ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তনিমা আফ্রাদ। তিনি উপস্থিত সকলকে শপথ বাক্য পাঠ করান। দেশের সংবিধান ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখা, দুর্নীতি ও সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করার অঙ্গীকার করেন অংশগ্রহণকারীরা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইউএনও তনিমা আফ্রাদ বলেন, "জুলাই পুনর্জাগরণ কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি আমাদের চেতনার বাতিঘর। সেই শহীদদের আত্মত্যাগ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। আজকের এই সম্মিলিত শপথ হোক দেশ ও মানুষের কল্যাণে নিজেদের উৎসর্গ করার একটি নতুন অঙ্গীকার। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক পর্যন্ত সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে পারে।"
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসনিম উর্মি, কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলাউদ্দিন, উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা নেতৃবৃন্দ সহ উপজেলায় কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীবৃন্দ।
বক্তারা জুলাইয়ের শহীদদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে বলেন, তাদের দেখানো পথ অনুসরণ করে দেশের উন্নয়নে একযোগে কাজ করতে হবে। উপজেলা প্রশাসনের এই সফল আয়োজনে সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিকে এক নতুন মাত্রা দেয়। এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটি কালীগঞ্জের মানুষের মধ্যে দেশ ও সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ এবং নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করবে বলে আশা প্রকাশ করেন আয়োজকরা।
ফেনীতে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। এর সঙ্গে দেখা দিয়েছে নতুন এক আতঙ্ক। বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেতে মানুষের বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছিল নানা প্রজাতির সাপ। এখন ঘরে ফিরলেও সাপ আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে। এরই মধ্যে পরশুরামে বিষধর সাপের কামড়ে রোকেয়া আক্তার রিনা (৫০) নামে এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকাল ৫টার দিকে ফেনীর পরশুরামের পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত রিনা পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম শহীদের স্ত্রী। তার এক ছেলে দুই মেয়ে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বন্যার পানি শুকিয়ে গেলে রান্না করার জন্য রান্নাঘরে গেলে সেখানে একটি অজ্ঞাত বিষধর সাপ রিনাকে কামড় দেয়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এরপর ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের স্বামী শফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে রিনা রান্না ঘরে যায়। এ সময় রান্নাঘরের একটি গর্ত থেকে বিষধর একটি সাপ বের হয়ে তার পায়ে কামড় দেয়। তার চিৎকার শুনে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্স নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার কোনো চিকিৎসা না হওয়ায় ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার রেদোয়ান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, হাসপাতালে আনার আগেই ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছিল।
টানা ৩ দিনের বৃষ্টিতে বেনাপোল বন্দর এলাকায় জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বন্দর অভ্যন্তরের অনেক স্থানে হাটু পানি জমায় মারাত্বক ভাবে ব্যহত হচ্ছে পণ্য খালাস প্রক্রিয়া। যানবাহন ও নিরাপত্তাকর্মীদের চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ায় বন্দরের ৯.১২.১৫.১৬ ও ১৮ নম্বর সেড থেকে লোড আনলোড বন্ধ হয়ে আছে।
ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই বন্দরে হাটু পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে থাকে। কয়েক বছর ধরে এ দূর্ভোগ হলেও নজর নাই বন্দর কর্তৃপক্ষের। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, রেলকর্তৃপক্ষ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় পানি নিষ্কাসনে বাধা গ্রুস্থ্য হচ্ছে।
তবে এসব শেড ও ওপেন ইয়ার্ড অধিকাংশই দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে তৈরী হয়নি। বন্দর সড়কের উচ্চতার চেয়ে পণ্যগারগুলো নিচু হওয়ায় একটু বৃষ্টিপাত বেশি হলে পানি নিষ্কাষনের অভাবে পণ্যগার ও ইয়াডে জলবদ্ধতা তৈরী হয়। এতে পানিতে ভিজে যেমন পণ্যের গুনগত মান নষ্ট হয় তেমনি চলাচলের বিঘ্ন ঘটছে। তবে আজ সকাল থেকে সেচ যন্ত্র চালিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বেনাপোল বন্দর পরিচালক শামিম হোসেন জানান, বন্দরের জলবদ্ধতা প্রতি বছরে তৈরী হয়। বিশেষ করে রেল বিভাগ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় সমস্যার সন্মুখিন হতে হচ্ছে। বন্দরের পানি নিষ্কাসন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়েছে। তবে দ্রুত এ অবস্থা কাটিয়ে তুলতে পাশ্ববর্তী হাওড়ের সাথে বন্দরের ড্রেন তৈরীর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রেরক: রাশেদুর রহমান রাশু, বেনাপোল যশোর ।
কক্সবাজারের চকরিয়ায় গত রোববার (৬ জুলাই) মালুমঘাট বাজার থেকে পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে এক যুবক পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়া সে যুবক সাজ্জাদ হোসেন (২০) কে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ কলাতলীর একটি আবাসিক হোটেল থেকে আটক করে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দিবাগত রাত তিনটায় কক্সবাজারের একটি আবাসিক হোটেল (ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্ট) অভিযান পরিচালনা করে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ। রাত প্রায় তিনটায় নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ওই হোটেলের একটি কক্ষ থেকে তাকে আটক করা হয়।
চকরিয়া থানা পুলিশের বিশেষ নজরদারি ও কক্সবাজারের গোয়েন্দা পুলিশের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে আসামি সাজ্জাদ হোসেন কে আটক করতে সক্ষম হয় কক্সবাজার ডিবি পুলিশ।
এবিষয়ে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, পলাতক আসামি সাজ্জাদ কে কক্সবাজার ডিবি পুলিশ আটক করেছে। প্রাথমিকভাবে সদর মডেল থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর চকরিয়া থানায় নিয়ে আসা হবে। তার বিরুদ্ধে একটি পুলিশ এসল্ট মামলা করা হয়েছে।
মন্তব্য