নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে শিশু তাসকিয়া আক্তার জান্নাত হত্যায় জড়িত হিসেবে যাদের নাম উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয়দেরও রয়েছে নানা অভিযোগ। বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে মামলাও আছে এসব তরুণের নামে।
গুলি ও আঘাত করে গত বুধবার বিকেলে হত্যা করা হয় বেগমগঞ্জ উপজেলার পূর্ব হাজিপুর গ্রামের চার বছর বয়সী তাসকিয়াকে। হামলায় ডান চোখ হারান শিশুটির বাবা আবু জাহের।
পরদিন তাসকিয়ার খালু হুমায়ুন কবির ১৭ জনের নামে হত্যা মামলা করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামের ২৪ বছর বয়সী মামুন উদ্দিন রিমনকে। এই তরুণের বিরুদ্ধে হত্যা, মাদকসহ নয়টি মামলা রয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রিমনের নেতৃত্বে এই এলাকায় সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে উঠেছে। এই বাহিনীর সদস্যরা মাদক কারবারে জড়িত। একইসঙ্গে প্রত্যেকে মাদকসেবী। কোনো কারণ ছাড়াই লোকজনকে মারধর, চাঁদাবাজি ও নারীদের উত্ত্যক্ত করা থেকে এমন কোনো অপকর্ম নেই যা ওরা করে না। আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মহড়া দিতেও দেখা গেছে তাদের।
রিমনসহ তার সাঙ্গপাঙ্গদের কয়েকজনকে পুলিশ একাধিক বার গ্রেপ্তার করলেও জামিনে বেরিয়ে এসে ওরা আবারও একই ধরনের অপকর্মে লিপ্ত হয়।
বেগমগঞ্জ মডেল থানার তথ্য অনুযায়ী, চাঁদাবাজি, মাদক, হত্যা, মারামারি ও অস্ত্র আইনে রিমনের নামে নয়টি মামলা রয়েছে।
তাসকিয়া হত্যা মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে মহিন উদ্দিনের নামে সাতটি ও মো. রহিমের নামে দুইটি এবং মো. সুজন, মো. শাকিল, হেদায়েত উল্ল্যাহ সাগর ও মো. সম্রাটের নামে একটি করে মামলা আছে। এরা সবাই রিমনের দলের সদস্য।
থানা সূত্র আরও জানায়, ২০১৯ সালে হাজিপুর ইউনিয়নের কালামিয়ার পুলে শাহাদাত ও ২০২০ সালে কুতুবপুর ইউনিয়নে বিয়ের আসরে মাহফুজ নামের আরেক যুবককে হত্যার ঘটনা ঘটে। এ দুটি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ রিমন, মহিন ও রহিমকে গ্রেপ্তার করে।
এর আগে ২০১৮ সালে লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ বাজার থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালককে অপহরণ মামলায় ছয় মাস জেলে ছিল এই তিন তরুণ।
হাজিপুর গ্রামের তাজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এরা সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী। এরা বাজারের বিভিন্ন দোকানের সাটার গুলি করে ও কুপিয়ে নষ্ট করেছে। এরা আমার চাচাতো ভাইয়ের অবুঝ শিশুকে গুলি করে হত্যা করেছে। আমরা সরকার ও প্রশাসনের কাছে বিচার দাবি করছি।’
পল্লি চিকিৎসক মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘এই সন্ত্রাসীরা এসে আমাদের কাছে চাঁদা দাবি করে। না দিলেই হামলা করে। আমরা আতঙ্কের মধ্যে আছি। কোনো রোগী আসতে চায় না, দোকান বন্ধ করে দিতে হয়।’
রিমনের অস্ত্রের উৎস
বেগমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, গত কয়েক বছর এই উপজেলায় সম্রাট বাহিনী ও খালাসি সুমন বাহিনীর আধিপত্য ছিল। সম্রাট ও সুমনকে বিভিন্ন সময় সাবেক পৌর মেয়র আকতার হোসেন ফয়সালের সঙ্গে দেখা যেত। গত পৌরসভা নির্বাচনে ফয়সাল পরাজিত হলে সম্রাট ইতালি চলে যান এবং সুমনকে পুলিশ কারাগারে পাঠায়।
ওই দুই বাহিনীর পর এলাকায় শিহাব বাহিনীর উত্থান ঘটে। শিহাব নোয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদ কিরণ, তার ছেলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য জিহান আল রশিদ ও চৌমুহনী পৌরসভার মেয়র খালেদ সাইফুল্লাহর হয়ে কাজ করে। শিহাবের সেকেন্ড ইন কমান্ড পিয়াসের দুই সহযোগী স্বাধীন ও নাঈম রিমনকে অস্ত্র ও মাদক সরবরাহ করে।
তাদের কাছ থেকে সরবরাহ পাওয়া অস্ত্র দিয়েই তাসকিয়া ও তার বাবার ওপর হামলা চালানো হয়।
কী হয়েছিল সেদিন
আবু জাহের সৌদি আরব প্রবাসী। দুই মাস আগে তিনি দেশে ফেরেন। জন্মের পর প্রথমবারের মতো বাবাকে কাছে পায় শিশু তাসকিয়া।
বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বাড়ির পাশে ডোবায় বাবার সঙ্গে মাছ ধরে তাসকিয়া। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে বাবার কাছে বায়না ধরে চকলেট আর চিপস কিনে দেয়ার।
এরপর বাবার সঙ্গে পাশের দোকানে গেলে সেখানে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয় বাবা ও মেয়ে। সন্ত্রাসীদের গুলিতে শিশুটির মাথা, মুখসহ পুরো শরীর ঝাঁঝরা হয়ে যায়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দোকানি আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘রিমন, মহিন, রহিম, আকবর, সুজনসহ ১৫ থেকে ২০ জন সন্ত্রাসী আমার দোকানে আসে। তারা আবু জাহের ও তার মেয়েকে লক্ষ্য করে প্রথমে একটি গুলি করে।
‘গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে সন্ত্রাসীরা শিশুকন্যাকে ইট দিয়ে আঘাত করে। বাবা-মেয়ে দোকান থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় পেছন থেকে রিমন আরও দুইটি গুলি করে। এতে লুটিয়ে পড়ে বাবা-মেয়ে।’
বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহিদুল হক রনি জানান, আহত বাবা-মেয়েকে উদ্ধার করে প্রথমে ২৫০ শয্যা নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে রাত ৮টার দিকে কুমিল্লায় শিশু তাসকিয়ার মৃত্যু হয়।
কী নিয়ে বিরোধ
জাহেরের আত্মীয় ফিরোজ আলম জানান, তার ভাই খোরশেদ আলম রিমনের চাচা বাদশার কাছে নিজের জমির মাটি বিক্রি করেছিলেন। ওই জমি থেকে বাদশার ছয় ফুট মাটি কাটার কথা ছিল। তবে তারা আরও বেশি মাটি কাটতে শুরু করলে তার জমির মাটি ধসে যেতে শুরু করে। এতে তিনি বাদশাকে বাধা দেন।
বিষয়টি মীমাংসার জন্য ৮ এপ্রিল ফিরোজের বাসায় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে আলোচনায় বসেন বাদশা। সেখানে রিমন, মহিন, সুজন, রহিম, আকবরসহ বেশ কয়েকজন এসে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় ও গুলি ছোড়ে। বাদশা নিজেও এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে শরিক হয়।
ফিরোজ বলেন, ‘তারা আমার অন্তঃসত্ত্বা মেয়ের পেটে লাথি মারে। পরদিন আমি আমার মেয়ে ও মেয়ে জামাইকে নিয়ে থানায় অভিযোগ জানালে পুলিশ আমাদেরই তাদেরকে ধরে দিতে বলে। থানায় জানানোর কারণে সন্ত্রাসীরা পরদিন আবার হামলা করে। আমরা ৯৯৯ কল দিয়ে পুলিশ ডাকায় তারা পালিয়ে যায়। পুলিশ চলে গেলে ওরা আবার আসে।
‘জাহের আমার প্রতিবেশী ও আত্মীয়। সে রিমনদের বাধা দেয়ার চেষ্টা করে। এটা নিয়েই জাহেরের প্রতি রিমনের ক্ষোভ তৈরি হয়।’
মামলার অগ্রগতি
বেগমগঞ্জ থানার ওসি রনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অপরাধীদের গ্রেপ্তারে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত আছে। আসামিদের মধ্যে এনাম হোসেন স্বপন, জসীমউদ্দিন বাবর ও একজন কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুক্রবার তাদের প্রত্যেকের সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে।’
আদালত পুলিশের পরিদর্শক শাহ আলম জানান, আগামী রোববার আসামিদের রিমান্ড শুনানি হতে পারে।
তবে মূল আসামিদের গ্রেপ্তার না করায় ক্ষোভ জানান তাসকিয়ার বাবা জাহের।
তিনি বলেন, ‘পুলিশ এখনও চিহ্নিত আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তারা আশ্বাস দিচ্ছে কিন্তু আমি কোনো অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছি না। আমি প্রশাসন ও পুলিশের কাছে আকুল আবেদন জানাই যেন আগামী এক দিনের মধ্যে এদের আইনের আওতায় আনা হয়।’
তাসকিয়ার মামাতো ভাই ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় ব্যবসায়ী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘পুলিশের অ্যাকশন কিছুই দেখতেছি না। আসামি না ধরা পর্যন্ত প্রশাসনের ওপর কোনো আস্থা পাইতেছি না। মামলায় আমি যেসব আসামির কথা বলছি তা উল্টা হয়ে গেছে। আমি কিছুই বুঝতে পারতেছি না।
‘পুলিশ সকাল-সন্ধ্যা আসে। কিন্তু তারা নাকি কাউকেই খুঁজে পায় না। ওসি সাহেব ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আসামিদের ধরার আশ্বাস দিছিলেন। সেই সময় পার হয়ে গেছে। আমি ভয়ে আছি কখন আবার তারা আমার ওপর হামলা করে। আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতেছি।’
রিমনের বিষয়ে ওসি জানান, পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনীও বিভিন্নভাবে তাকে গ্রেপ্তারে চেষ্টা চালাচ্ছে।
আরও পড়ুন:নাটোরের নলডাঙ্গায় এক স্কুলছাত্রকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
উপজেলার পিপরুল ইউনিয়ন পরিষদের পরিত্যক্ত ভবনে বৃহস্পতিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে।
প্রাণ হারানো হিমেল হোসেন (১৫) উপজেলার পিপরুল গ্রামের ফারুক সরদারের ছেলে। সে পাটুল-হাপানিয়া স্কুল ও কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র ছিল।
নলডাঙ্গা থানার ওসি মো. মনোয়ারুজ্জামান জানান, বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে হিমেলকে তার সহপাঠী ফোন করে বাড়ি থেকে ডেকে নেয়। এরপর থেকে হিমেলের মোবাইল ফোনটি বন্ধ পান তার স্বজনরা। পরে রাত হলেও বাড়িতে না ফিরলে পরিবারের লোকজন তাকে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন এবং বিষয়টি পুলিশকে জানান।
ওসি বলেন, পুলিশ হিমেলকে উদ্ধারে অভিযানে নামে। অভিযানে হিমেলের বন্ধু পার্থকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। পার্থের দেয়া তথ্য অনুযায়ী বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে পিপরুল ইউনিয়ন পরিষদের পরিত্যক্ত ভবনে রক্তাক্ত ও ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় হিমেলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। হিমেলের মাথায় আঘাত, গলা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় মেহেদি, শিমুল ও সুজন নামে আরও তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। কী কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে তা অনুসন্ধান করা হচ্ছে। এ বিষয়ে একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে বলে জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন:কুমিল্লার বরুড়ায় ভাইকে হত্যার দায়ে ছোট ভাই, বোন ও ভগ্নিপতিসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
উপজেলার শালুকিয়া গ্রাম থেকে বৃহস্পতিবার তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে বুধবার সকালে নিজ বসতঘর থেকে শরিফ হোসেন (৩৫) নামে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তার তিনজন হলেন শরিফের ছোট ভাই আরিফ হোসেন, বড় বোন খুকি আক্তার ও ভগ্নিপতি নাছির উদ্দিন।
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান এসব তথ্য নিশ্চিত করে জানান, মরদেহ উদ্ধারের পর বুধবার নিহত শরীফের মা বরুড়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
পুলিশ কর্মকর্তা নাজমুল বলেন, ‘শরীফ মাদকাসক্ত ছিল। কিছুদিন আগে শরীফ মাদকের টাকা যোগাড়ের জন্য ভাই আরিফের অটোরিকশা বিক্রি করে দেয়। মাদকের টাকার জন্য মাকেও মারধর করত সে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এমন পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে শরিফের ছোট ভাই আরিফ ও তার বোন খুকি মিলে পরিকল্পনা করে শরীফকে পঙ্গু করে ঘরে রেখে দেবে। বাকি জীবন তাকে ঘরে বসিয়ে খাওয়াবে। পরিকল্পনা মোতাবেক ২৬ মার্চ রাত ১ টার দিকে পুকুরপাড়ে শরীফকে হাত পা বেঁধে পেটানো হয়। বাড়িতে এনে আরেক দফা পেটানো শেষে হাত পা বেঁধে ঘরের ভেতর ফেলে রাখা হয়। এ অবস্থায় শরীফ মারা যায়।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল জানান, তথ্য প্রযুক্তিসহ নিজস্ব গোয়েন্দা ব্যবহার করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাদের আদালতে প্রেরণ করলে সেখানে তারা ১৬৪ ধারায় খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়।
আরও পড়ুন:মৌলভীবাজার শহরে বুধবার ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ভেতরে গ্রাহককে অজ্ঞান করে ৮১ হাজার টাকা লুটের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তানভীর হাবিব চৌধুরী রুমেল নামের ওই গ্রাহক মৌলভীবাজার মডেল থানায় অভিযোগটি করেন।
ব্যাংকের ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, বুধবার বেলা ১১টা সাত মিনিটে ঘটনাটি ঘটে।
অভিযোগের বিষয়ে মৌলভীবাজার মডেল থানার ওসি কে এম নজরুল বলেন, ‘মৌলভীবাজারের শহরের সেন্ট্রাল রোডে অবস্থিত ডাচ-বাংলা ব্যাংক পিএলসিতে বুধবার সকালে ১১টার দিকে প্রবাস থেকে আসা টাকা তুলতে যান ব্যবসায়ী তানভীর। দুই লাখ টাকা তুলে তানভীর এক হাজার টাকার নোট দেয়ার জন্য ব্যাংক কর্মকর্তাকে বলেন। এ সময় ব্যাংক কর্মকর্তা এক হাজার টাকার বান্ডিল দিতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে তাকে ৫০০ টাকা নোটের বান্ডেল প্রদান করেন।
‘তখন কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একজন রুমেলকে বলেন, তিনি এক হাজার টাকার বান্ডেল এক্সচেঞ্জ করবেন। তখন রুমেলের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তিনি গুনতে থাকেন। টাকা হাতে নেয়ার পর রুমেল কিছু সময়ের জন্য অজ্ঞান অনুভব করেন। তখন ওই চক্র ৮১ হাজার টাকা নিয়ে চলে যায়।’
অভিযোগকারী রুমেল বলেন, ‘ওই ব্যক্তির হাতে থাকা টাকার বান্ডেল আমাকে গুনতে দিয়ে আমাকে একটি চেয়ারে নিয়ে বসান। আমি টাকা হাতে নেয়ার পর নিস্তেজ অনুভব করি। সবকিছু আমার কাছে কিছু সময়ের মধ্যে এলোমেলো মনে হয়। প্রায় পাঁচ মিনিট পরে একটু স্বাভাবিক হলে গুনে দেখি, তারা আমার কাছ থেকে ৮১ হাজার টাকা নিয়ে চলে যায়।
‘পরবর্তী সময়ে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, তারা ১১টা সাত মিনিটে আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে যায়। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে ওই চক্রের ছবি শনাক্ত করা হয়।’
ডাচ-বাংলা ব্যাংক পিএলসির মৌলভীবাজার শাখা ব্যবস্থাপক আবদুল কাদের বলেন, ‘সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখলাম, ব্যাংকের একজন গ্ৰাহকের সঙ্গে কয়েকজন লোক গল্পগুজব করে উনার সঙ্গে বিদায় নিয়ে চলে গেছে। এরপর তিনি বুঝতে পারেন, উনার টাকা নিয়ে চলে গেছে। তিনি পুলিশে অভিযোগ করেন।’
মৌলভীবাজার মডেল থানার ওসি কে এম নজরুল বলেন, ‘একজন ব্যাংক গ্ৰাহক অভিযোগ করেন। বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ায় সংঘবদ্ধ পিটুনিতে দুজন নিহত হয়েছেন।
উপজেলার সিংহশ্রী ইউনিয়নে বৃহস্পতিবার রাত দুইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
পিটুনির শিকার দুজনের মধ্যে একজন নিহত হন সিংহশ্রী ইউনিয়নের নামিলা গ্রামের চান মিয়ার বাড়িতে। অন্যজন একই ইউনিয়নের বড়িবাড়ি গ্রামের ধানক্ষেতে প্রাণ হারান।
তাৎক্ষণিকভাবে নিহত দুজনের নাম ও পরিচয় জানা যায়নি।
স্থানীয়দের ভাষ্য, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে নামিলা গ্রামে চান মিয়ার বাড়িতে অজ্ঞাত পরিচয়ের কিছু ব্যক্তি গরু চুরির উদ্দেশ্যে ঢোকেন। বিষয়টি টের পেয়ে চান মিয়া ডাকাডাকি করলে স্থানীয়রা জড়ো হন। ওই সময় একজনকে ধরে সংঘবদ্ধ পিটুনি দিলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
স্থানীয়রা আরও জানান, স্থানীয়দের ধাওয়া খাওয়া অপরজন পার্শ্ববর্তী বড়িবাড়ি গ্রামে ধানক্ষেতের আড়ালে লুকিয়ে পড়েন। ওই সময় উত্তেজিত লোকজন ক্ষেতের আড়াল থেকে খুঁজে বের করে পিটুনি দিলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
সিংহশ্রী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার পারভেজ জানান, গরু চুরি রোধে এলাকায় গ্রামবাসী পাহারা বসিয়েছিল। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে গাড়িতে করে এক কৃষকের গরু চুরি করতে যান কয়েকজন। বিষয়টি টের পেয়ে একজোট হয়ে দুজনকে পিটুনি দেয় গ্রামবাসী। এতে নামিলা গ্রামে একজন ও বড়িবাড়ি গ্রামের ধানক্ষেতে আরেকজন নিহত হন।
চেয়ারম্যান আরও জানান, গ্রামে গরু চুরি করতে আসা আরও চার থেকে পাঁচজন আছেন, যাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।
এ বিষয়ে কাপাসিয়া থানার ওসি আবু বকর মিয়ার সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
কাপাসিয়া থানার ডিউটি অফিসার এসআই আরিফ হোসেন জানান, গরু চোর সন্দেহে গ্রামবাসীর সংঘবদ্ধ পিটুনিতে দুজন নিহত হন, যাদের মরদেহ গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
আরও পড়ুন:স্বাধীনতা দিবসের এক অনুষ্ঠানে নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ প্রকাশ্যে দুর্নীতি করার ঘোষণা দিয়েছেন।
মঙ্গলবার সকালে লালপুর উপজেলা পরিষদের অডিটোরিয়ামে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজিত মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যের এক পর্যায়ে দুর্নীতি করার ঘোষণা দেন এ সংসদ সদস্য।
তার বক্তব্যের অংশবিশেষের একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তেই তা ভাইরাল হয়ে যায়।
প্রকাশিত ওই ভিডিওতে আবুল কালাম আজাদকে বলতে শোনা যায়, ‘পাঁচটা বছর (২০১৪-২০১৮) বেতন ভাতার টাকা ছাড়া আমার কোনো সম্পদ ছিল না; আগামীতেও থাকবে না। এবার (দ্বাদশ জাতীয় সংসদ) নির্বাচনে ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। সেই টাকা আমি তুলব। যেভাবেই হোক তুলবই। এতটুক অনিয়ম আমি করবই। এটুকু অন্যায় করব, আর করব না।’
প্রকাশ্যে সংসদ সদস্যের এমন বক্তব্য বুধবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে জেলাজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন লালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শারমিন আখতার। নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। উনার বক্তব্য উনি বলেছেন, এখানে আমার কোনো কথা নেই।’
বক্তব্যর বিষয়ে সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমার বক্তব্যে এটা বোঝাতে চেয়েছি যে, অনেকেই এরকম করে। আমার বক্তব্য বিকৃত করে প্রচার করা হচ্ছে।’
এ বিষয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি জেলা শাখার সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সরকারি অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে একজন সংসদ সদস্যের এমন বক্তব্য খুব দুর্ভাগ্যজনক। সংসদ সদস্যের এমন বক্তব্যে তার সহকারী এবং দলীয় নেতা-কর্মীরা দুর্নীতিতে উৎসাহিত হবেন। এটা একদিকে যেমন পরিষ্কারভাবে শপথের লংঘন, অন্যদিকে নির্বাচনি বিধিরও লংঘন।
‘নির্বাচনি আচরণবিধি অনুযায়ী, নির্বাচনি প্রচারকাজে একজন সংসদ সদস্য ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারেন না।’
সংসদ সদস্যের কাছে গঠনমূলক বক্তব্যেরও প্রত্যাশার কথা জানান তিনি।
ফরিদপুর সদরে যৌনপল্লি থেকে দুই তরুণীকে উদ্ধার করেছে কোতোয়ালি থানা পুলিশ।
এ ঘটনায় ওই পল্লির এক নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ওসি মো. হাসানুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার রাতে এসব তথ্য জানানো হয়।
গ্রেপ্তারকৃত পারুল বেগম ওরফে পারু (৪৮) জেলার রথখোলা যৌনপল্লির বাসিন্দা।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন আপন (৩০), জহির (৩০) ও ববি (৩৮)।
গ্রেপ্তার না হওয়া এ তিনজনের মধ্যে ববি যৌনপল্লির সর্দারনি হিসেবে পরিচিত। আপন ও জহিরের পূর্ণাঙ্গ পরিচয় পাওয়া যায়নি।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পার্লারে ভালো বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে চাঁদপুরের কচুয়া থানা এলাকা থেকে এক তরুণীকে গত ১০ মার্চ ঢাকায় নিয়ে আসেন আপন। দুই দিন সেখানে রেখে তাকে (তরুণী) তিন ব্যক্তির হাতে তুলে দেন তিনি। ওই তিন ব্যক্তি ১৩ মার্চ সন্ধ্যায় তরুণীকে রথখোলা যৌনপল্লিতে এনে পারুর কাছে দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করে দেন। পরের দিন একটি সাদা কাগজে তরুণীর স্বাক্ষর নিয়ে জানানো হয়, এখন থেকে তিনি যৌনপল্লির লাইসেন্সধারী সদস্য।
এতে আরও বলা হয়, মেয়েটিকে পারুর বাসায় রেখে ববি ও অন্যদের মাধ্যমে জোর করে দেহ ব্যবসায় বাধ্য করা হয়। এর মাঝে মেয়েটি বাড়িতে যোগাযোগের জন্য একজন খদ্দেরকে তার ছোট বোনের মোবাইল নম্বর দেন। পরে ওই খদ্দেরের মোবাইল কলের মাধ্যমে মেয়েটির সন্ধান পায় তার পরিবার। এরপর তার মা ও ফুফা রথখোলায় এসে তাকে দেখতে পেয়ে স্থানীয় থানা পুলিশকে জানায়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, পুলিশ যৌনপল্লিতে অভিযান চালানোর পর ফেনীর পূর্ব ছাগলনাইয়ার আরেক তরুণীও তাকে উদ্ধারে পুলিশের সাহায্য চান। ওই তরুণী জানান, তাকেও চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে প্রথমে ঢাকার মিরপুরের একটি বাসায় এক রাত রেখে রথখোলা যৌনপল্লিতে এনে পারুর কাছে বিক্রি করা হয়।
কোতোয়ালি থানার ওসি হাসানুজ্জামান জানান, যৌনপল্লিতে তরুণীকে নেয়ার ঘটনায় তার মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে কোতোয়ালি থানায় মামলা করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফাহিম ফয়সাল মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে অভিযান চালিয়ে পারুল বেগম ওরফে পারুকে গ্রেপ্তার করে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের জোর চেষ্টা চলছে।
কুমিল্লার বরুড়ায় ঘর থেকে এক যুবকের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
পৌরসভার শালুকিয়া গ্রাম থেকে বুধবার উদ্ধার হওয়া ওই যুবকের নাম মোহাম্মদ শরীফ, যার বয়স ৩০ বছর।
স্থানীয় একজনের বরাতে পুলিশ জানায়, শরীফের ঘরের দরজা খোলা ছিল। তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয়া হয়। পরে পুলিশের একটি টিম মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
বাহিনীটি আরও জানায়, কারা শরীফকে হত্যা করেছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির ভাষ্য, শরীফ দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্ত। তিনি মাদক কারবারে জড়িত ছিলেন। তার নামে বরুড়া থানায় মাদকের একাধিক মামলা রয়েছে।
বরুড়া থানার ওসি রিয়াজ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা শরীফের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালের মর্গে পাঠাই। শরীরের বিভিন্ন ক্ষতের চিহ্ন দেখে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে তাকে হত্যা করা হয়েছে।’
পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত।’
মন্তব্য