নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে শিশু তাসকিয়া আক্তার জান্নাত হত্যায় জড়িত হিসেবে যাদের নাম উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয়দেরও রয়েছে নানা অভিযোগ। বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে মামলাও আছে এসব তরুণের নামে।
গুলি ও আঘাত করে গত বুধবার বিকেলে হত্যা করা হয় বেগমগঞ্জ উপজেলার পূর্ব হাজিপুর গ্রামের চার বছর বয়সী তাসকিয়াকে। হামলায় ডান চোখ হারান শিশুটির বাবা আবু জাহের।
পরদিন তাসকিয়ার খালু হুমায়ুন কবির ১৭ জনের নামে হত্যা মামলা করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামের ২৪ বছর বয়সী মামুন উদ্দিন রিমনকে। এই তরুণের বিরুদ্ধে হত্যা, মাদকসহ নয়টি মামলা রয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রিমনের নেতৃত্বে এই এলাকায় সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে উঠেছে। এই বাহিনীর সদস্যরা মাদক কারবারে জড়িত। একইসঙ্গে প্রত্যেকে মাদকসেবী। কোনো কারণ ছাড়াই লোকজনকে মারধর, চাঁদাবাজি ও নারীদের উত্ত্যক্ত করা থেকে এমন কোনো অপকর্ম নেই যা ওরা করে না। আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মহড়া দিতেও দেখা গেছে তাদের।
রিমনসহ তার সাঙ্গপাঙ্গদের কয়েকজনকে পুলিশ একাধিক বার গ্রেপ্তার করলেও জামিনে বেরিয়ে এসে ওরা আবারও একই ধরনের অপকর্মে লিপ্ত হয়।
বেগমগঞ্জ মডেল থানার তথ্য অনুযায়ী, চাঁদাবাজি, মাদক, হত্যা, মারামারি ও অস্ত্র আইনে রিমনের নামে নয়টি মামলা রয়েছে।
তাসকিয়া হত্যা মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে মহিন উদ্দিনের নামে সাতটি ও মো. রহিমের নামে দুইটি এবং মো. সুজন, মো. শাকিল, হেদায়েত উল্ল্যাহ সাগর ও মো. সম্রাটের নামে একটি করে মামলা আছে। এরা সবাই রিমনের দলের সদস্য।
থানা সূত্র আরও জানায়, ২০১৯ সালে হাজিপুর ইউনিয়নের কালামিয়ার পুলে শাহাদাত ও ২০২০ সালে কুতুবপুর ইউনিয়নে বিয়ের আসরে মাহফুজ নামের আরেক যুবককে হত্যার ঘটনা ঘটে। এ দুটি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ রিমন, মহিন ও রহিমকে গ্রেপ্তার করে।
এর আগে ২০১৮ সালে লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ বাজার থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালককে অপহরণ মামলায় ছয় মাস জেলে ছিল এই তিন তরুণ।
হাজিপুর গ্রামের তাজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এরা সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী। এরা বাজারের বিভিন্ন দোকানের সাটার গুলি করে ও কুপিয়ে নষ্ট করেছে। এরা আমার চাচাতো ভাইয়ের অবুঝ শিশুকে গুলি করে হত্যা করেছে। আমরা সরকার ও প্রশাসনের কাছে বিচার দাবি করছি।’
পল্লি চিকিৎসক মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘এই সন্ত্রাসীরা এসে আমাদের কাছে চাঁদা দাবি করে। না দিলেই হামলা করে। আমরা আতঙ্কের মধ্যে আছি। কোনো রোগী আসতে চায় না, দোকান বন্ধ করে দিতে হয়।’
রিমনের অস্ত্রের উৎস
বেগমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, গত কয়েক বছর এই উপজেলায় সম্রাট বাহিনী ও খালাসি সুমন বাহিনীর আধিপত্য ছিল। সম্রাট ও সুমনকে বিভিন্ন সময় সাবেক পৌর মেয়র আকতার হোসেন ফয়সালের সঙ্গে দেখা যেত। গত পৌরসভা নির্বাচনে ফয়সাল পরাজিত হলে সম্রাট ইতালি চলে যান এবং সুমনকে পুলিশ কারাগারে পাঠায়।
ওই দুই বাহিনীর পর এলাকায় শিহাব বাহিনীর উত্থান ঘটে। শিহাব নোয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদ কিরণ, তার ছেলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য জিহান আল রশিদ ও চৌমুহনী পৌরসভার মেয়র খালেদ সাইফুল্লাহর হয়ে কাজ করে। শিহাবের সেকেন্ড ইন কমান্ড পিয়াসের দুই সহযোগী স্বাধীন ও নাঈম রিমনকে অস্ত্র ও মাদক সরবরাহ করে।
তাদের কাছ থেকে সরবরাহ পাওয়া অস্ত্র দিয়েই তাসকিয়া ও তার বাবার ওপর হামলা চালানো হয়।
কী হয়েছিল সেদিন
আবু জাহের সৌদি আরব প্রবাসী। দুই মাস আগে তিনি দেশে ফেরেন। জন্মের পর প্রথমবারের মতো বাবাকে কাছে পায় শিশু তাসকিয়া।
বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বাড়ির পাশে ডোবায় বাবার সঙ্গে মাছ ধরে তাসকিয়া। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে বাবার কাছে বায়না ধরে চকলেট আর চিপস কিনে দেয়ার।
এরপর বাবার সঙ্গে পাশের দোকানে গেলে সেখানে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয় বাবা ও মেয়ে। সন্ত্রাসীদের গুলিতে শিশুটির মাথা, মুখসহ পুরো শরীর ঝাঁঝরা হয়ে যায়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দোকানি আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘রিমন, মহিন, রহিম, আকবর, সুজনসহ ১৫ থেকে ২০ জন সন্ত্রাসী আমার দোকানে আসে। তারা আবু জাহের ও তার মেয়েকে লক্ষ্য করে প্রথমে একটি গুলি করে।
‘গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে সন্ত্রাসীরা শিশুকন্যাকে ইট দিয়ে আঘাত করে। বাবা-মেয়ে দোকান থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় পেছন থেকে রিমন আরও দুইটি গুলি করে। এতে লুটিয়ে পড়ে বাবা-মেয়ে।’
বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহিদুল হক রনি জানান, আহত বাবা-মেয়েকে উদ্ধার করে প্রথমে ২৫০ শয্যা নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে রাত ৮টার দিকে কুমিল্লায় শিশু তাসকিয়ার মৃত্যু হয়।
কী নিয়ে বিরোধ
জাহেরের আত্মীয় ফিরোজ আলম জানান, তার ভাই খোরশেদ আলম রিমনের চাচা বাদশার কাছে নিজের জমির মাটি বিক্রি করেছিলেন। ওই জমি থেকে বাদশার ছয় ফুট মাটি কাটার কথা ছিল। তবে তারা আরও বেশি মাটি কাটতে শুরু করলে তার জমির মাটি ধসে যেতে শুরু করে। এতে তিনি বাদশাকে বাধা দেন।
বিষয়টি মীমাংসার জন্য ৮ এপ্রিল ফিরোজের বাসায় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে আলোচনায় বসেন বাদশা। সেখানে রিমন, মহিন, সুজন, রহিম, আকবরসহ বেশ কয়েকজন এসে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় ও গুলি ছোড়ে। বাদশা নিজেও এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে শরিক হয়।
ফিরোজ বলেন, ‘তারা আমার অন্তঃসত্ত্বা মেয়ের পেটে লাথি মারে। পরদিন আমি আমার মেয়ে ও মেয়ে জামাইকে নিয়ে থানায় অভিযোগ জানালে পুলিশ আমাদেরই তাদেরকে ধরে দিতে বলে। থানায় জানানোর কারণে সন্ত্রাসীরা পরদিন আবার হামলা করে। আমরা ৯৯৯ কল দিয়ে পুলিশ ডাকায় তারা পালিয়ে যায়। পুলিশ চলে গেলে ওরা আবার আসে।
‘জাহের আমার প্রতিবেশী ও আত্মীয়। সে রিমনদের বাধা দেয়ার চেষ্টা করে। এটা নিয়েই জাহেরের প্রতি রিমনের ক্ষোভ তৈরি হয়।’
মামলার অগ্রগতি
বেগমগঞ্জ থানার ওসি রনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অপরাধীদের গ্রেপ্তারে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত আছে। আসামিদের মধ্যে এনাম হোসেন স্বপন, জসীমউদ্দিন বাবর ও একজন কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুক্রবার তাদের প্রত্যেকের সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে।’
আদালত পুলিশের পরিদর্শক শাহ আলম জানান, আগামী রোববার আসামিদের রিমান্ড শুনানি হতে পারে।
তবে মূল আসামিদের গ্রেপ্তার না করায় ক্ষোভ জানান তাসকিয়ার বাবা জাহের।
তিনি বলেন, ‘পুলিশ এখনও চিহ্নিত আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তারা আশ্বাস দিচ্ছে কিন্তু আমি কোনো অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছি না। আমি প্রশাসন ও পুলিশের কাছে আকুল আবেদন জানাই যেন আগামী এক দিনের মধ্যে এদের আইনের আওতায় আনা হয়।’
তাসকিয়ার মামাতো ভাই ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় ব্যবসায়ী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘পুলিশের অ্যাকশন কিছুই দেখতেছি না। আসামি না ধরা পর্যন্ত প্রশাসনের ওপর কোনো আস্থা পাইতেছি না। মামলায় আমি যেসব আসামির কথা বলছি তা উল্টা হয়ে গেছে। আমি কিছুই বুঝতে পারতেছি না।
‘পুলিশ সকাল-সন্ধ্যা আসে। কিন্তু তারা নাকি কাউকেই খুঁজে পায় না। ওসি সাহেব ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আসামিদের ধরার আশ্বাস দিছিলেন। সেই সময় পার হয়ে গেছে। আমি ভয়ে আছি কখন আবার তারা আমার ওপর হামলা করে। আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতেছি।’
রিমনের বিষয়ে ওসি জানান, পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনীও বিভিন্নভাবে তাকে গ্রেপ্তারে চেষ্টা চালাচ্ছে।
আরও পড়ুন:প্রচ্ছায়া লিমিটেডের আট পরিচালকের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
দেশ ত্যাগে যাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে তারা হচ্ছেন: প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক বুশরা সিদ্দিক, শেহতাজ মুন্নাসী খান, শহিদ উদ্দিন খান, শাহিন সিদ্দিক, শফিক আহমেদ শফিক, পারিজা পাইনাজ খান, নওরিন তাসমিয়া সিদ্দিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারজানা আনজুম।
দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এই আদেশ দেন।
আবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা ও তাঁর ছোট বোনের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকী ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের নামে প্রায় ৫৯ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ সংক্রান্ত অভিযোগ অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সাত সদস্য বিশিষ্ট অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে।
প্রচ্ছায়া লিমিটেড নামীয় প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারহোল্ডারগণ যাতে সপরিবারে গোপনে দেশ ত্যাগ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি দেশত্যাগ করে বিদেশে পালিয়ে গেলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডপত্র প্রাপ্তিতে ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। তাছাড়া সার্বিক অনুসন্ধানকাজে বিঘ্ন সৃষ্টিসহ সমূহ ক্ষতির কারণ রয়েছে। এজন্য অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ যাত্রা রোধে আদালতের আদেশ দেয়া একান্ত প্রয়োজন। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়, খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সালাউদ্দিন, তার ভাই শেখ সোহেল ও শেখ জালাল উদ্দিন রুবেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিন দুদকের পক্ষে সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, বিগত সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অকল্পনীয় অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট এই ব্যক্তিরা তাদের নামে অবৈধভাবে অর্জিত সম্পত্তি হস্তান্তর করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন মর্মে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়।
তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে তদন্ত কার্যক্রম দীর্ঘায়িত বা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অভিযোগটি সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া একান্ত প্রয়োজন।
শুনানি শেষে আদালত তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন।
সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নামে রাজধানীর উত্তরায় থাকা একটি ফ্ল্যাট ও মোট ১৮ কাঠার তিনটি প্লট জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব দুদকের আবেদন মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন।
দুদকের আবেদন সূত্রে জানা যায়, হারুনের নামে থাকা পৃথক তিনটি প্লট রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত। এছাড়াও জব্দের আদেশ দেয়া ১৫৭০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটটিও উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত।
এদিন হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আবেদন করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন।
আবেদনে বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে শত শত কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে।
অনুসন্ধান চলাকালে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, তিনি এসব সম্পদ বিক্রয় বা হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন। এজন্য সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আদেশ দেয়া প্রয়োজন।
এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি হারুন অর রশিদের ১০০ বিঘা জমি, পাঁচটি ভবন ও দুটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে তার নামে বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি হিসাবে থাকা ১ কোটি ২৬ লাখ ৯০ হাজার ৪৬৮ টাকা অবরুদ্ধের আদেশ দেয়া হয়।
পাশাপাশি এদিনই তার ভাই এবিএম শাহরিয়ারের ৩০ বিঘা জমি জব্দ, ১১টি ব্যাংক হিসাব এবং তিনটি কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দেন ঢাকার আদালত।
রাজধানীর বনানীতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যা মামলার এজহারনামীয় আরও দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ বুধবার তাদের গাইবান্ধা ও চট্টগ্রাম থেকে পৃথক অভিযানে গ্রেপ্তার করে র্যাব ও পুলিশ।
এর মধ্যে এজাহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মো. মেহেরাজ ইসলামকে (২০) গাইবান্ধা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১৩ এবং ৩ নম্বর আসামি মাহাথির হাসানকে (২০) চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানা পুলিশ।
বিকেলে র্যাব সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মেহরাজ ইসলামকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। এছাড়া বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাসেল সারওয়ার মাহাথির হাসানের গ্রেপ্তারের বিষয়িটি দৈনিক বাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
র্যাব-১৩ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) বিপ্লব কুমার গোস্বামী জানান, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে জনা যায়, পাভেজ হত্যা মামলার এজহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মেহেরাজ ইসলাম গাইবান্ধায় অবস্থান করছে। পরে গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে গাইবান্ধা সদরের ভবানীপুর গ্রামে অভিযান চলানো হয়। অভিযানে এরশাদ হোসেন নামে এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে মেহরাজ ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে বনানী থানার ওসি মো. রাসেল সারওয়ার দৈনিক বাংলাকে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে পারভেজ হত্যা মামলার ৩ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি মাহাথির হাসানের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পরে গতকাল সকালে চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানায় আনা হয়েছে।
এর আগে গত রোববার রাতে পারভেজ হত্যা মামলায় তিন আসামিকে রাজধানীর মহাখালী ও আশপাশের এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা হলেন- আল কামাল শেখ ওরফে কামাল (১৯), আলভী হোসেন জুনায়েদ (১৯) এবং আল আমিন সানি (১৯)। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া গত সোমবার রাতে কুমিল্লার তিতাস উপজেলার মনাইরকান্দি গ্রাম থেকে হৃদয় মিয়াজি (২৩) নামে মামলার এজহারনামীয় আরেক আসামিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব ১ ও র্যাব-১১ ব্যাটালিয়নের যৌথ দল। পরে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তাকে বনানী থানায় হস্তান্তর করা হয়। সব মিলিয়ে পারভেজ হত্যা মামলায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকেল প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে একটি দোকানে ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রী সিঙ্গারা খাচ্ছিলেন। একই সময় পারভেজ তার বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার সময় হাসছিলেন। ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রীর অভিযোগ পারভেজ তাদের দেখে হাসছিলেন। তাদের মধ্যে একজন প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী পিয়াসের বান্ধবী। পরে বান্ধবীরা মুঠোফোনে খবর দিলে পিয়াস ও তার দুই বন্ধু মেহরাজ ও মাহথির এসে পারভেজের সঙ্গে তর্ক-বিতর্কে জড়ান। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।
একপর্যায়ে দুই পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টি মীমাংসার করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার পর পারভেজকে একদল যুবক ছুরিকাঘাত করে। তার বুকে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় পরদিন রোববার তার ভাই হুমায়ুন কবির প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বহিরাগতসহ আট জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত পরিচয় ২৫-৩০ জনের বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা করেন।
রাজধানীসহ সারাদেশে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ৬১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ৯০৬ জন আসামি এবং অন্যান্য ঘটনায় ৭০৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) ইনামুল হক সাগর এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, এসব অভিযানে বিভিন্ন ধরণের অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে- ১টি দেশীয় পাইপগান, ১টি একনালা বন্দুক, ১ রাউন্ড কার্তুজের খোসা ও ২ রাউন্ড অকেজো কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।
এর আগে গত সোমবার ২৪ ঘন্টায় সারাদেশে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ১ হাজার ৬৩১ জনকে। তার মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ১ হাজার ১৩ জন আসামি এবং অন্যান্য ঘটনায় ৬১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার আগে গত রোববার ২৪ ঘণ্টায় বিশেষ অভিযানে ১ হাজার ৫৩৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এ ধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি আগামীকাল।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দেখা যায় মামলাটি বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চে বিষয়টি আগামীকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে মূলতবি/নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে প্রধান বিচারপতি আলোচিত এই মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য এই হাইকোর্ট বেঞ্চে পাঠান।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এই ঘটনায় করা মামলার বিচার শেষে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত দুজনকে মৃত্যুদণ্ড, ছয়জনকে যাবজ্জীবন ও সাতজনকে খালাস দিয়ে রায় দিয়েছিলেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক বরখাস্ত লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত, সাগর দেব, রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানায় পুলিশের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
বিচারিক আদালতের রায়ের পরে নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের দণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। অন্যদিকে, দণ্ডিত আসামিরা আপিল ও জেল আপিল করেন।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলায় পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিবিতে থাকা নথি আগুনে পড়ে গেছে বলে দাবি করা হয়েছে, সঠিক নয়।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগে নতুন উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এমন তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচারিত সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথিপত্র ডিবি হেফাজতে পুড়ে যাবার তথ্যটি সঠিক নয়।’
‘সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তের সময় আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে কেউ কেউ ডিবির নথি পুড়ে যাওয়ার নিউজ করছেন, যা সঠিক না,’ যোগ করেন তিনি।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আদালতে আগুনে এসব নথি পুড়ে যাওয়ার কথা বলা হয়নি। এডিশনাল অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদ রউফ বলেছেন, ডিবির অধিকাংশ অফিসার বদলি হওয়ায় পুরনো নথি খুঁজে পাওয়া সময়সাপেক্ষ।’
‘এ জন্য রাষ্ট্রপক্ষ নয় মাস সময় চাইলে বাদীপক্ষ তিন মাস সময়ের কথা বলেন। পরবর্তীতে আদালত ছয়মাস সময় দেন,’ যোগ করেন তিনি।
এরআগে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ করা হয়েছে, সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার ডিবিতে থাকা নথি আগুনে পুড়ে গেছে বলে হাইকোর্টকে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আরসাদুর রউফ বলেন, ‘আমি এমন কোনো কথা কখনোই বলিনি। সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথি পোড়েনি। আমি বলেছি, এটা পুরনো মামলা।’
মন্তব্য