গৃহকর্মী হিসেবে সৌদি আরবে পাঠানোর কথা বলে এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মিডিয়া সেন্টারে শনিবার দুপুরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাব-৩-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।
র্যাব জানিয়েছে, রাজধানীর রামপুরা ও হাতিরঝিল থেকে গ্রেপ্তার চারজন সংঘবদ্ধ মানবপাচার ও প্রতারক চক্রের সদস্য। তারা হলেন চক্রের হোতা কামরুল আহমেদ, খালেদ মাসুদ হেলাল, তোফায়েল আহমেদ ও মো. জামাল।
গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ২৭টি পাসপোর্ট, একটি মনিটর, একটি সিপিইউ, একটি মাউস, একটি কী-বোর্ড, একটি ইউপিএস, ভুয়া ভিসার ১০০টি কপি, ১২৫টি ভুয়া টিকেট, চারটি মোবাইল, কোভিড-১৯ নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার দুইটি ফরম এবং একটি প্রিন্টার উদ্ধার করে র্যাব।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৩ অধিনায়ক আরিফ মহিউদ্দিন জানান, একজনের অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাব-৩ জানতে পারে, রামপুরা এলাকায় মানবপাচার ও প্রতারক চক্র মধ্যপ্রাচ্যে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ওই চক্রের সদস্যরা ভুয়া ভিসা ও টিকেট দিয়ে বিদেশ যেতে ইচ্ছুক বেকারদের কাছ থেকে অর্থ নিচ্ছে।
তিনি জানান, বিদেশ যাওয়ায় ইচ্ছুক ব্যক্তিরা ভুয়া ভিসা ও টিকিট নিয়ে বিমানবন্দরে যাওয়ার পর বিপাকে পড়েন। ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ ভিসা ও টিকিট জাল হওয়ায় বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দিয়েছে অনেককে।
নারীকে উদ্ধার যেভাবে
র্যাব কর্মকর্তা মহিউদ্দিন জানান, কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাব-৩-এর একটি দল চক্রের সদস্যদের ধরতে গোয়েন্দা নজরদারি ও ছায়া তদন্ত শুরু করে। ১২ এপ্রিল চক্রটি মৌলভীবাজার থেকে একজন নারীকে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে রামপুরা এলাকার কামরুলের বাসায় নিয়ে আসে। ওই বাসায় আটক রেখে তোফায়েল নারীকে ধর্ষণ করেন।
ওই নারী মোবাইলে সাহায্য চাইলে র্যাবের দল ১৩ এপ্রিল রাত আড়াইটার দিকে রামপুরা এলাকায় অভিযান চালায়। সে অভিযানে নারীকে উদ্ধার করা হয়।
কীভাবে দালালের কাছে
জিজ্ঞাসাবাদে ওই নারী র্যাবকে জানান, তিনি সাইফুল ইসলাম শান্ত নামের এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেছিলেন। বিয়ের পর সাইফুল যৌতুক বাবদ ধাপে ধাপে ৫ লাখ টাকা নিয়ে তাকে ছেড়ে চলে যায়।
ওই নারী আরও জানান, মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে তার বাবা যৌতুকের টাকা ধারদেনা করে জোগাড় করেছিলেন। পাওনাদাররা টাকার জন্য চাপ দিতে থাকলে তিনি গ্রামের দালাল তোফায়েলের শরণাপন্ন হন।
ওই নারীকে জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে তোফায়েল তাকে গৃহকর্মী হিসেবে সৌদি আরব পাঠানোর প্রলোভন দেখান। তিনি সৌদিতে যেতে রাজি হন। এরপর সৌদি যেতে হলে আরবি ভাষার ট্রেনিং করতে হবে বলে তাকে ঢাকায় কামরুলের বাসায় এনে আটক রেখে ধর্ষণ করা হয়।
র্যাব জানায়, পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নিতে ওই নারীকে রামপুরা থানায় পাঠানো হয়। নারী বাদী হয়ে রামপুরা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।
আসামিদের দেয়া তথ্য
প্রাথমিক অনুসন্ধান ও আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে র্যাব জানায়, আসামিদের জনশক্তি রপ্তানির লাইসেন্স নেই, কিন্তু তারা দীর্ঘদিন ধরে জনশক্তি রপ্তানির নামে অবৈধভাবে ভ্রমণ ভিসার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে লোক পাঠাত। এ ছাড়াও চক্রটি মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ইউরোপে জনশক্তি পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশ যেতে ইচ্ছুক বেকারদের কাছ থেকে পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিত। বিনিময়ে ভুয়া ভিসা ও ভুয়া টিকিট ধরিয়ে দিত ভুক্তভোগীদের হাতে।
জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, ভুক্তভোগীরা ভুয়া ভিসা ও টিকিট নিয়ে বিমানবন্দর থেকে ফিরে এসে চক্রের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চায়, কিন্তু তারা যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এভাবে গত দুই বছরে চক্রের সদস্যরা আটবার বাসার ঠিকানা পরিবর্তন করে।
গত পাঁচ বছরে চক্রটি অবৈধভাবে শতাধিক লোককে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাঠায়। তারা বিদেশ গিয়ে কাজ না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
যেভাবে গড়ে ওঠে প্রতারক চক্র
র্যাব জানায়, চক্রের হোতা কামরুল নবম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে। তার নির্দিষ্ট পেশা নেই। প্রতারণা ও মানবপাচারই তার কাজ।
২০১৯ সালে কামরুল ভ্রমণ ভিসায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে যান। তারপর সেখানে মানবপাচারের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়ে দুবাইয়ের রেসিডেন্স ভিসা পান তিনি। সেখানে একটি প্রাইভেটকার কিনে নিজে ড্রাইভিং করে অর্থ উপার্জন করেন।
করোনার প্রাদুর্ভাব হলে প্রাইভেটকারটি বিক্রি করে ২০২১ সালের মে মাসে দেশে ফিরে এসে আবার প্রতারণা ও মানবপাচার শুরু করেন কামরুল। তিনি বিভিন্ন ট্যুরস ও ট্রাভেলসের সঙ্গে যোগাযোগ করে অবৈধভাবে ভ্রমণ ভিসায় বিভিন্ন দেশে লোক পাঠাতেন।
র্যাব আরও জানায়, ভুয়া টিকিট সরবরাহ করে পাঁচ শতাধিক মানুষের কাছ থেকে ৩০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রের সদস্যরা। কামরুলের নামে চট্টগ্রাম কোর্টে একটি চেক জালিয়াতির মামলা এবং মৌলভীবাজার কোর্টে ডাচ-বাংলা ব্যাংকে ১৮ লাখ টাকার একটি মামলা রয়েছে। তার বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৩৮ লাখের বেশি টাকা আছে।
আরও পড়ুন:নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে অপহরণ ও নির্যাতনের অভিযোগ ওঠার পর চেয়ারম্যান প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লুৎফুল হাবীব রুবেলকে কারণ দর্শোনোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ।
শুক্রবার দুপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওহিদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মো. জান্নাতুল ফেরদৌস স্বাক্ষরিত চিঠিতে কারণ দর্শানোর নোটিশ ইস্যু করা হয়।
নোটিশে বলা হয়, ‘গত ১৫ এপ্রিল নাটোর জেলা নির্বাচন কমিশন অফিসের সামনে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন পাশার মনোনয়নপত্র জমাদানে বাধা প্রদান, মারপিট ও অপহরণের ঘটনা যা বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচারিত হয় এবং উক্ত ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার আসামি সুমনের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে আপনার সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়, যা দলীয় আচরণবিধি পরিপন্থির সামিল।
‘এমতাবস্থায় কেন আপনার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তার জবাব আগামী ৩ দিনের মধ্যে লিখিতভাবে জানানোর জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।’
ওই সময়ের মধ্যে জবাব না দিলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
শোকজের বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ ঘটনায় দলীয় তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই তাকে শোকজ করা হয়েছে। শোকজের জবাবের প্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন সোমবার বিকেলে সিংড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন পাশা অনলাইনে আবেদনের পর জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে মনোনয়নপত্রের প্রতিলিপি জমা দিতে আসেন। সেখানে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা তাকে মারধর করে কালো মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। পরে তাকে আবারও বেধড়ক মারধর করে বাড়ির সামনে ফেলে যায়। সেখান থেকে পরিবারের সদস্যরা তাকে সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দেন।
এ ঘটনায় দেলোয়ার হোসেনের পরিবার লুৎফুল হাবীব রুবেল ও তার সমর্থকদের দায়ী করে আসছে। ইতোমধ্যে তাদের করা মামলায় গ্রেপ্তারকৃত সুমন নামের এক আসামি আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন যে, লুৎফুল হাবীব রুবেলের পক্ষ নিয়েই সুমনসহ অন্য আসামিরা দেলোয়ার হোসেন পাশাকে অপহরণ ও মারধর করেছেন।
এ ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ মেলায় রুবেলকে শোকজ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
লুৎফুল হাবীব রুবেল উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শেরকোল ইউনিয়ন পরিষদের সদ্য পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে তার। তিনি প্রতিমন্ত্রীর শ্যালক।
আরও পড়ুন:জমিজমা-সংক্রান্ত বিরোধের জেরে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে খাইরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন, যাদের বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
শুক্রবার বিকেলে উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের চরগড়গড়ী আলহাজ মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ৪০ বছর বয়সী খাইরুল ইসলাম চরগড়গড়ী আলহাজ মোড় পশ্চিমপাড়ার মৃত নসিম উদ্দিন প্রামাণিকের ছেলে।
আহতদের মধ্যে কয়েক জনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন, ৫০ বছর বয়সী সাজু হুদী, জামাত ফকির ও নুর বেগম, ৫৫ বছর বয়সী মানু প্রামানিক, ৬০ বছর বয়সী মোসলেম উদ্দিন, ৩৫ বছর বয়সী খোকন প্রামাণিক, জিল্লুর, ওলিউর রহমান, মজিদ, ইছাই প্রামানিক ও মো. মিঠুন এবং ৩০ বছর বয়সী নাসিরউদ্দিন।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, কয়েকদিন আগে জমিজমা-সংক্রান্ত বিরোধের জেরে দুই গ্রুপের লোকজনদের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। এ নিয়ে গত দুই দিনে দুই গ্রুপের মধ্যে ছোটোখাটো মারামারির ঘটনাও ঘটে। এইসব ঘটনার জের ধরে শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে তারা ফের সংঘর্ষে জড়ায়।
সংঘর্ষ চলাকালে ঘটনাস্থলেই খাইরুল নিহত হন। আর আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান স্থানীয়রা। তাদদের মধ্যে অন্তত ১০ জনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ঈশ্বরদী থানার ওসি (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় একজন মারা গেছেন। আমরা ঘটনাস্থলে রয়েছি। এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত বলতে পারব।’
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় টাকা না পেয়ে আব্দুল কাদের নামে এক বৃদ্ধকে ছুরিকাঘাতে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তারই ছেলের বিরুদ্ধে। ঘটনার পর পলাতক রয়েছে আরিফ হোসেন নামের ওই যুবক।
উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের আন্ধারিয়া পাড়া গ্রামে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন ফুলবাড়িয়া থানার ওসি মো. রাশেদুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘টাকার জন্য প্রায়ই বাবাকে চাপ দিত ২০ বছর বয়সী আরিফ। সম্প্রতি বাবার কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা নিয়ে মোবাইল কেনে সে। বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে আবারও ১০ হাজার টাকা চাইলে তা দিতে অস্বীকৃতি জানান আব্দুল কাদের। এতে আরিফ ক্ষিপ্ত হয়ে বাড়িঘর ভাঙচুর করার হুমকি দেয়। এমতাবস্থায় রাত সাড়ে ১০টার দিকে আব্দুল কাদের পাশে বড় ছেলের বাড়িতে যাওয়ার উদ্যোগ নিলে পেছন থেকে বাবার পেটে ও পিঠে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় আরিফ। এ সময় স্থানীয়রা সঙ্গে সঙ্গে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’
ওসি বলেন, ‘এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে আরিফ পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তার করতে চেষ্টা চলছে।’
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারি এলাকায় পৃথক ঘটনায় ট্রেনে কাটা পড়ে দুজন নিহত হয়েছেন।
শুক্রবার ভোর ৫টা ও বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ভাটিয়ারী রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনাগুলো ঘটে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রেলওয়ে পুলিশ জানিয়েছে, মরদেহদুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয়দের বরাতে রেলওয়ে পুলিশ জানায়, এদিন ভোরে ভাটিয়ারি এলাকায় চট্টগ্রাম অভিমুখী তুর্ণা নিশিতা এক্সপ্রেসের নিচে কাটা পড়ে মারা যান ভাটিয়ারী ইউনিয়নের জাহানাবাদ গ্রামের বিপ্লব দাশ নামের ২৩ বছর বয়সী এক যুবক।
পরে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকাগামী কক্সবাজার এক্সপ্রেসের নিচে কাটা পড়েন স্থানীয় ভাটিয়ারী বাংলাদেশ মিলিটারি অ্যাকাডেমির সিভিল স্টাফ ২৪ বছর বয়সী মো. আসিফ উদ্দিন।
দুটি ঘটনার পরই মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে ফৌজদারহাট রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মো. ফারুক হোসেন বলেন, ‘শুক্রবার সকালে ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত হওয়া বিপ্লব মানসিক সমস্যাগ্রস্ত ছিলেন বলে জানিয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা।’
গাইবান্ধা জেলা কারাগারে নারী হাজতিকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগের পর প্রধান অভিযুক্ত কারাগারের প্রধান কারারক্ষী আশরাফুল ইসলামসহ দুই কারারক্ষীকে বদলি করা হয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে তাদের বদলির বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন গাইবান্ধা জেলা কারাগারের জেল সুপার জাভেদ মেহেদী। বৃহস্পতিবার রাতে তাদের বদলি করা হয় বলে জানান তিনি।
বদলি হওয়া অপর কারারক্ষীর নাম সাবানা খাতুন। তাদের মধ্যে প্রধান কারারক্ষী আশরাফুল ইসলামকে দিনাজপুর কারাগার এবং সাবানা খাতুনকে ঠাঁকুরগাও কারাগারে বদলি করা হয়েছে।
এর আগে গাইবান্ধা জেলা কারাগারের ভেতর আশরাফুল ইসলাম ও মহিলা কয়েদি (রাইটার) মেঘলা খাতুনের মধ্যে চলমান অবৈধ কার্যকলাপ দেখে ফেলায় বিষয়টি জানাজানির ভয়ে নারী হাজতি সীমাকে অমানুষিক নির্যাতনের অভিযোগ আনেন ভুক্তভোগীর মা করিমন নেছা।
লোমহর্ষক নির্যাতনের বর্ণনা তুলে ধরে হাজতি সীমার উন্নত চিকিৎসা ও নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগও দেন করিমন নেছা।
ওই অভিযোগপত্রে গাইবান্ধা জেলা কারাগারের প্রধান কারারক্ষী (সুবেদার) আশরাফুল ইসলাম, নারী কারারক্ষী সাবানা খাতুন ও তহমিনা, কয়েদি মেঘলা খাতুন, রেহেনা ও আলেফা, সিআইডি আনিছ ও হাবিলদার মোস্তফাকে অভিযুক্ত করা হয়।
মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) জেলা প্রশাসককে দেয়া অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, হাজতি মোর্শেদা খাতুন সীমা একটি মামলায় (হাজতি নম্বর-৫০৮) প্রায় ৫ বছর ধরে গাইবান্ধা জেলা কারাগারে বন্দি। কিছুদিন আগে কারাগারে কর্মরত সুবেদার আশরাফুল ইসলাম ও মহিলা কয়েদি (রাইটার) মেঘলা খাতুনের মধ্যে চলমান অবৈধ কার্যকলাপ দেখে ফেলেন সীমা।
বিষয়টি জানতে পেরে সুবেদার আশরাফুল ও মহিলা কয়েদি মেঘলা খাতুন সীমার ওপর ক্ষিপ্ত হন। ঘটনা জানাজানির ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে তারা কারাগারের ভেতরে সীমাকে বিভিন্নভাবে মানসিক নির্যাতন করতে থাকেন।
একপর্যায়ে সুবেদার আশরাফুল ও তার সহযোগীরা হাজতি সীমার স্বামী খোকন মিয়াকে গাইবান্ধা কারাগারে ডেকে আনেন। তারা অভিযুক্তরা সীমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা ও আপত্তিকর তথ্য দিয়ে সীমার সংসার ভেঙে দেন।
এতসবের পর হাজতি সীমা এসব ঘটনা জানিয়ে জেল সুপারের কাছে বিচার দেবেন জানালে সুবেদার আশরাফুল তাকে ভয়-ভীতি ও হুমকি দেন। এক পর্যায়ে ২০ মার্চ দুপুরে সুবেদার আশরাফুলের নেতৃত্বে মহিলা কয়েদি মেঘলা খাতুন, রেহেনা ও আলেফা এবং কারারক্ষী তহমিনা ও সাবানা কারাগারের মহিলা ইউনিটের ভেতরের বারান্দায় লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকেন। পরে সেলের ভেতরে নিয়ে সীমাকে হাতকড়া পরিয়ে রশি দিয়ে দুই পা বেঁধে আবারও মারধর করেন। উপরন্তু নির্যাতনের এসব ঘটনা বাইরে প্রকাশ করলে সীমাকে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়া হয়।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, করিমন নেছা একাধিকবার তার মেয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাইলেও সে সুযোগ দেয়া হয়নি। অবশেষে হাজিরার তারিখে আদালতে মেয়ের সাক্ষাৎ পান মা করিমন নেছা। সেদিন সীমা মায়ের কাছে নির্যাতনের ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দেন এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন দেখান।
অভিযোগ পেয়ে গত ১৬ এপ্রিল ঘটনার তদন্তে জেলা কারাগারে যান গাইবান্ধা জেলা প্রশাসাকের কার্যালয়ের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিসি) মো. মশিউর রহমান।
সেদিন নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘খুব দ্রুত জেলা প্রশাসকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেব। এরপরই জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে জেলা প্রশাসন।’
শুক্রবার অভিযুক্তদের বদলির বিষয়ে জানতে চাইলে নিউজবাংলাকে তা নিশ্চিত করেন গাইবান্ধা জেলা কারাগারের জেল সুপার জাভেদ মেহেদী।
এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়টি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তীতে ব্যবস্থা হবে।’
আরও পড়ুন:শেরপুরের নকলায় বসতবাড়ির সীমানা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এক নারীর লাঠির আঘাতে প্রতিবেশি মোরাদ হোসেন নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার পর ওই নারী ও তার মেয়েকে আটক করেছে পুলিশ।
শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে উপজেলার টালকী ইউনিয়নের পূর্বটালকী গ্রামে ঘটনাটি ঘটে।
নিহত ৫৫ বছর বয়সী মোরাদ হোসেন নকলার পূর্বটালকী গ্রামের মৃত রহিম মাস্টারের ছেলে। চাকরির সুবাদে রাজধানী ঢাকায় বসবাস করতেন তিনি।
নকলা থানার ওসি মো. আব্দুল কাদের মিয়া ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয়দের বরাতে পুলিশ জানায়, নকলার মোরাদ হোসেন দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর কল্যাণপুরে নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে চাকরি করতেন। অনেকদিন থেকে তার প্রতিবেশি চাচাতো ভাই জালাল উদ্দিনের সঙ্গে বসতবাড়ির সীমানা নির্ধার্ণ নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল। শুক্রবার সকালে ছুটিতে ঢাকা থেকে বাড়িতে আসেন মোরাদ। বাড়িতে প্রবেশ করার পর তার প্রতিবেশি চাচাত ভাইয়ের বউয়ের সঙ্গে ঝগড়া শুরু হয়। এক পর্যায়ে উত্তেজিত ওই নারী লাঠি দিয়ে মোরাদের মাথার পেছনে আঘাত করেন। এতে আহত হয়ে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে স্থানীয়রা মোরাদকে নকলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষনা করেন।
ঘটনার পর জালাল উদ্দিনের স্ত্রী ও মেয়েকে আটক করে পুলিশ।
নকলা থানার ওসি মো. আব্দুল কাদের মিয়া বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই নারীকে আটক করা হয়েছে। মরদেহের ময়নাতদন্তের জন্য শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী আইনি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।’
নাটোরের বাগাতিপাড়ায় হত্যা মামলার আসামি মোহন আলীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
বৃহস্পতিবার রাত ১০ টার দিকে উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী চকমহাপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত মোহন ওই গ্রামের মোজাম্মেল হকের ছেলে।
বাগাতিপাড়া মডেল থানার ওসি নান্নু খান জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মোহন তার ব্যাটারিচালিত ভ্যানটি মেরামতের জন্য পার্শ্ববর্তী বাঘা উপজেলার খাগড়বাড়িয়া বাজারে যান। ফেরার পথে রাত ১০টার দিকে বাগাতিপাড়ার চকমহাপুর এলাকায় পৌঁছালে তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর আহত করে দুর্বৃত্তরা। পরে স্থানীয়রা তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় ওই রাতেই তাকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হলে ঢাকা নেয়ার পথে ভোর ৫টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
ওসি আরও জানান, ২০২১ সালে ১১ জুলাই বাগাতিপাড়ার সীমান্তবর্তী রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের হরিপুরে অনার্সপড়ুয়া ছাত্র জাকির হোসেন ছুরিকাঘাতে হত্যার শিকার হন। মোহন আলী ওই হত্যা মামলার আসামি ছিলেন।
নিহতের মা হনুফা বেগম জানান, হত্যা মামলায় আসামি হওয়ায় তার ছেলে মোহন কারাগারে ছিল। প্রায় চার মাস আগে জামিনে মুক্ত হয়ে সে বাড়ি ফেরে। বাড়িতে আসার পর থেকেই মোহনকে হুমকি-ধামকি দিচ্ছিলেন জাকিরের স্বজনরা।
পূর্বপরিকল্পিতভাবে জাকিরের স্বজনরা মোহনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে বলে দাবি করেন হনুফা বেগম। তিনি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে এ ঘটনায় নিহত মোহনের মামা আয়নাল আলী বাদী হয়ে বাগাতিপাড়া মডেল থানায় শুক্রবার সকালে একটি হত্যা মামলা করেছেন। ওই মামলায় চারজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মন্তব্য