করোনা মহামারির মধ্যে গত বছরের আগস্টে মর্জিনা বেগম জানতে পারেন তিনি সন্তানসম্ভবা। অভাবের সংসারে নতুন অতিথি আসার খবরটা মোটেই সুখবর হয়ে আসেনি। দুই সন্তানের মা মর্জিনা ও তার স্বামী ভ্রুণ নষ্ট করার সিদ্ধান্ত নেন।
গর্ভধারণের তিন মাসের মাথায় স্থানীয় এক ডাক্তারের সহকারীর পরামর্শে ‘সন্তান নষ্ট’ করার ওষুধ খান তিনি। এতে ভ্রূণ নষ্ট হলেও মর্জিনার জরায়ু মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
করোনাকালে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন অনেক নারী। তাদের একটি অংশ গর্ভপাত করাতে গিয়ে জীবন শঙ্কায়ও পড়েন। অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের জন্য জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী না পাওয়াকে দায়ী করেছেন স্বাস্থ্য খাতসংশ্লিষ্টরা।
২০২০ সালের মার্চ থেকে পুরো লকডাউনের সময় পরিবার পরিকল্পনা সেবা ব্যাহত হয়। এ সময় পরিবার পরিকল্পনা সেন্টারগুলো বন্ধ ছিল। জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর কোনো ঘাটতি না থাকলেও বিতরণব্যবস্থা ভেঙে পড়ে।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্য অনুযায়ী, করোনাকালে ২০২১ সালের জুন থেকে আগস্টের মধ্যে সেখানে অর্ধশতাধিক নারীর গর্ভপাত হয়েছে। এটা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ১৫ গুণ বেশি। তাদের মধ্যে কেউ কেউ অতিরিক্ত রক্তপাত, সংক্রমণ, অসম্পূর্ণ গর্ভপাত এবং গর্ভপাত-পরবর্তী জটিলতার মতো গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার মুখোমুখি হন।
শঙ্করকাটি গ্রামের বাসিন্দা ২০ বছর বয়সী নাজমা বেগম বলেন, করোনার মধ্যে সরকারি বড়ি (জন্মবিরতিকরণ পিল) পাননি। কিনে ইনজেকশন দেয়ার চেষ্টা করেও সফল হননি।
উপজেলার কৈখালী ইউনিয়নের পরিবার পরিকল্পনা সহকারী মনিরা জামিলা বলেন, ‘সত্যি বলতে কি, করোনাকালেও আমরা চেষ্টা করেছি সবার কাছে পৌঁছানোর। কিন্তু সব সময় বাড়ি বাড়ি যাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠেনি। রাস্তাঘাটও অত্যন্ত খারাপ হওয়ায় সবখানে পৌঁছানো কঠিন ছিল।’
অন্য অভিজ্ঞতার কথাও বললেন আটুলিয়া ইউনিয়নের পরিবার পরিকল্পনা সহকারী নমিতা রানী। তিনি বলেন, কোভিডকালে বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যেও মানুষের কাছে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করেছেন। তবে অনেক বাড়িতে তারা ঢুকতেই পারেননি।
সাধারণত জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় পিল। এ ছাড়া রয়েছে ইনজেকশন, কনডম, ইমপ্ল্যান্ট, নারী বন্ধ্যাকরণ, পুরুষ বন্ধ্যাকরণ ও আইইউডি।
শুধু গ্রামেই নয়, শহরেও গর্ভপাতের ঊর্ধ্বগতির কথা জানান সংশ্লিষ্টরা। কুমুদিনী উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. বিলকিস বেগম চৌধুরী বলেন, করোনাকালে তারা প্রায় প্রতিদিনই অসংখ্য রোগীর ফোন পেয়েছেন। তারা অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের কথা বলে গর্ভপাতের উপায় জানতে চেয়েছেন।’
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) এক জরিপ অনুযায়ী, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে বাংলাদেশে গর্ভনিরোধক পিলের ব্যবহার ২০ শতাংশ, কনডমের ব্যবহার ৩৪ শতাংশ এবং ইনজেকশনের ব্যবহার ২৩ শতাংশ কমে যায়। এ ছাড়া জন্মনিয়ন্ত্রণের দীর্ঘমেয়াদি পদ্ধতি আইইউডিসহ (জরায়ুতে স্থাপন উপযোগী অস্থায়ী দীর্ঘমেয়াদি গর্ভনিরোধক) ইমপ্লান্ট, এনএসভি (স্ক্যাল্পেল ভ্যাসেকটমি) এবং টিউবেকটমি কমে যায় ২৫-৬৪ শতাংশ।
খুলনার দাকোপ আচাভোয়া বাজার এলাকার বাসিন্দা এক নারী জানান, করোনাকালে তার মুদি দোকানদার স্বামীর ব্যবসা বেশ কিছু দিন বন্ধ ছিল। তখন স্বাস্থ্যকর্মীর দেখা মেলেনি। আবার আর্থিক সংকটের কারণে জন্মনিয়ন্ত্রণ সরঞ্জাম কেনার পরিস্থিতিও ছিল না। তাই গর্ভধারণের পর একটি ক্লিনিকে গিয়ে এমআর (মেন্সট্রুয়াল রেগুলেশন) করিয়ে আসেন তিনি।
ইউনিসেফের কনসালটেন্ট পুলক রাহা বলেন, কোভিডকালে মাঠপর্যায়ে পরিবার পরিকল্পনা সেবা ও বিভিন্ন সামগ্রী ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়া সম্ভব হয়নি। আবার দোকানপাট বন্ধ থাকায় মানুষ প্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহ করতে পারছিলেন না। অনেকের সামর্থ্যও ছিল না। ফলে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ এবং গর্ভপাত দুটোই বেড়েছে।
বেড়েছে এমএম কিটের ব্যবহার
শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারী সার্জন রীতা রানী পাল বলেন, করোনাকালে অস্বাভাবিকভাবে গর্ভপাত বেড়েছিল, বিশেষ করে লকডাউনের সময়টাতে। তিনি বলেন, ওই সময়ে তিনি এমএম কিটের ব্যবহার ব্যাপক বাড়তে দেখেছেন। গর্ভের বাচ্চার বয়স একটা নির্দিষ্ট সময় (৯ সপ্তাহ) পর্যন্ত এই ওষুধ খেলে স্বাভাবিকভাবে গর্ভপাত হয়ে যায়। কিন্তু এর বেশি সময় পার হওয়ার পর এই ওষুধ খেলে গর্ভের সন্তান মারা গেলেও পুরোপুরি গর্ভপাত হয় না।
চিকিৎসকেরা বলছেন, গর্ভধারণের তিন মাস পার হওয়ার পরও গর্ভপাতের জন্য রোগীরা এমএম কিট খেয়ে থাকেন। এর পরিণতি ভয়ংকর।
শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা লতিফা হেলেন বলেন, ‘গর্ভপাতের ক্ষেত্রে সাধারণত প্রতি ১০ জন রোগীর মধ্যে ৮ জনই এমএম কিট খেয়ে বাচ্চা নষ্ট করে আসেন।’
এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন কর্মী জানান, তিনি করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির মধ্যে অন্তত ৪৮ জন নারীর গর্ভপাত করিয়েছেন।
উপজেলার বংশীপুর ক্লিনিকে ২০২০ সালের জুন থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত ৩২ জন নারীকে ডিএন্ডসি করানো হয় বলে নিশ্চিত করেছে হাসপাতাল সূত্র। একই সময়ে নগর প্রাইভেট হাসপাতালে অন্তত ৬৫ জনের গর্ভপাত করানো হয়। প্রতিষ্ঠানটির একজন কর্মকর্তা জানান, তাদের ৮০ শতাংশ রোগীই নিজেরা ওষুধ কিনে খেয়ে তারপর হাসপাতালের শরণাপন্ন হন।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক (উপকরণ ও সরবরাহ) এবং লাইন ডাইরেক্টর (পিএসএসএম) হুমায়ুন কবীর তালুকদার বলেন, ‘এটা সত্য যে কোভিডকালে পরিবার পরিকল্পনা সরঞ্জাম বিতরণ বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। তবে পর্যাপ্ত সামগ্রী মজুত ছিল। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে আমাদের কর্মীদেরও কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। পাশাপাশি অনেক ক্ষেত্রে আমাদের কর্মীরা মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারেননি। এ কারণে জন্মনিরোধক বিতরণ কিছুটা ব্যাহত হয়।’
আরও পড়ুন:দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১২টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে কেউ মারা যায়নি। আজ মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ দিন প্রতি ১০০ নমুনায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ‘২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যু ২৯ হাজার ৫২১ জন। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। এছাড়া ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে মোট শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৫২ হাজার ১২৭ জন। এর মধ্যে গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৫৮২ জন।
এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সারা দেশে মশা নিধন কার্যক্রমের দুর্বলতার কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক মোড় নিয়েছে। চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরের শুরুর দিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। জানুয়ারিতে ১,১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬ এবং এপ্রিলে ৭০১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে মে মাস থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে এবং জুনে এসে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। আশঙ্কার বিষয় হলো, ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে, বিশেষ করে বরগুনায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি।
এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ২৯৬ জনে পৌঁছেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৪২৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন শনাক্ত ৪২৯ জন ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে— বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪৯ জন; চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৭ জন; ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬১ জন; ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৪২ জন; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪৫ জন; খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২১ জন ও রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৫৮ জন রোগী। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৫৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং নারী ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪২ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে একজন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এডিস মশার বিস্তার এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। বিশেষ করে রাজধানীর বাইরের এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, 'মে মাসের তুলনায় জুনে আক্রান্তের সংখ্যা তিনগুণ হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে জুলাইয়ে এ সংখ্যা চার থেকে পাঁচগুণ এবং আগস্টে দশগুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে।'
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৯৬ জনে। এর আগে ২০২৩ সালের পুরো বছরে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন। ২০২৪ সালের পুরো বছরের (১ জানুয়ারি–৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) সর্বমোট হিসাব অনুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ৫৭৫ জন।
করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের মধ্যে দেশে আরও ২১ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।
রবিবার (২৯ জুন) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এসব শনাক্ত হয়েছে। তবে, নতুন করে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি এই সময়ের মধ্যে।
সোমবার (৩০ জুন) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ২০ লাখ ৫২ হাজার ১১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২২ জন। আর দেশে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫২১ জনের।
গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত (একদিনে) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৮৩ জন রোগী। এসব রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩৬ জন আক্রান্ত বরিশাল বিভাগে। একইসঙ্গে এই সময়ে ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৩৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৫ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৮, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২৮, খুলনা বিভাগে ৪১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জন এবং রাজশাহী বিভাগে ৩৩ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে গত এক দিনে সারাদেশে ৩৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮ হাজার ৭২৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৯ হাজার ৮৬৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের।
সারাদেশে করোনা ভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পর সিলেট এ ভাইরাসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার দুপরে এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন করে করোনার আক্রমন শুরুর পর সিলেটে প্রথম এই কোন রোগী মারা গেলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনায় আক্রান্ত ৬৯ বছর বয়েসি পুরুষ ১৯ জুন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান তিনি। এছাড়া সিলেটে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ জন বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো. মিজানুর রহমান জানান, নিহত ব্যক্তির বাড়ি সিলেট সদর উপজেলায়। তিনি করোনা ছাড়াও আরও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে; গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ছয়জন। এ নিয়ে চলতি জুন মাসেই জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা সাতজনে দাঁড়াল।
২৮ জুন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলার মিরসরাই উপজেলার বাসিন্দা সালেহা বেগম (৪০) নামে এক নারী শুক্রবার নগরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই তিনি হৃদরোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
এদিকে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৯১টি নমুনা পরীক্ষা করে ছয়জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন নগরের এবং দুজন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে নগরের শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চারজন এবং এভারকেয়ার হাসপাতালে দুজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে চলতি জুন মাসে মোট ১৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৬ জন পুরুষ, ৬৩ জন নারী ও একজন শিশু রয়েছে।
মশাবাহীত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালের দুই জেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় গোটা বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন আরও ১০৫ জন আক্রান্ত রোগী। এ নিয়ে বর্তমানে বিভাগের ছয় জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন। মৃত্যুবরণ করা দুজন হলেন- বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আ. করিম (৫০) ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের রাজপাড়া এলাকার মো. ইউসুফ খন্দকার (৭২)। এর মধ্যে আ. করিম বরিশাল শেরইবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ও বৃদ্ধ মো. ইউসুফ খন্দকার কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উদ্বেগ ও আশঙ্কাজনক। এ পরিস্থিতি থেকে বেরোতে হবে। চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ জরুরি। তাই মশার বিস্তার রোধ করতে বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৩০৫ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন।
বরগুনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মৃত ১১ জনের মধ্যে ছয়জনেরই বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। শুধু মৃত্যুই নয় এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি, বরগুনা জেলায় এ পর্যন্ত ২ হাজার ৬৩২ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
মন্তব্য