নারায়ণগঞ্জ শহরের অলিগলিতে একটি খালি রিকশা নিয়ে ছুটছেন ইদ্রিস আলী। ৫ থেকে ৯ বছর বয়সী কোনো মেয়ে দেখলেই ছুটে যাচ্ছেন, মুখের দিকে তাকাচ্ছেন। নিজের রিকশায় বসে হাউমাউ করে কাঁদছেনও। রাস্তায় থাকা লোকজন এগিয়ে এলেই হাতে থাকা দুটি ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করছেন, ‘আমার মাইয়া দুইডারে দেখছেননি।’
বুধবার নগরীর কলেজ রোড এলাকায় রিকশায় বসে কাঁদছিলেন ইদ্রিস। জানতে চাইলে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে হাউমাউ করে বলতে থাকেন, ‘আমার কলিজা দুইডা হারায় গেছে ভাই, ওগো খুঁজতে শহরে আইসি, পাইতাছি না।’
কান্না করতে করতে রিকশার সিটের নিচ থেকে দুই মেয়ে ৯ বছরের ইতি ও ৫ বছরের মীমের দুটি ছবি বের করেন। গলায় জড়ানো ঘামে ভেজা গামছা দিয়ে নিজের মুখ চেপে ধরেও কান্না থামছিল না তার। যেন জীবনের সব হারিয়ে নিস্ব এক বাবা নিজেকে আর কোনোভাবেই ধরে রাখতে পারছেন না।
তবুও নিজের সব হারানোর গল্প বললেন দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার কৃষক ইদ্রিস আলী। মেয়েদের খুঁজতে এসে নারায়ণগঞ্জ শহরে যার পরিচয় এখন ‘রিকশাওয়ালা’।
ইদ্রিসের স্ত্রী শাহানাজ আর দুই মেয়েকে নিয়ে সুখের সংসার ছিল ইদ্রিসের। কৃষিকাজ করে সংসার চালাতেন। বছরখানেক আগে গ্রামের এক দালালের খপ্পরে পড়ে বিদেশ যেতে বেকুল হয়ে ওঠেন তার স্ত্রী। তবে তাতে রাজি ছিলেন না ইদ্রিস। এক দিন গ্রামের বাজার থেকে বাড়ি ফিরে দেখেন দুই মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ছেড়েছেন স্ত্রী। তারপর আর খোঁজ মেলেনি তাদের। তাদের খুঁজতেই শহরের পাড়া-মহল্লায় ছুটছেন আর কাঁদছেন। অপেক্ষায় কখন দেখবেন প্রিয় সন্তানদের মুখ।
দুই সপ্তাহ হলো নারায়ণগঞ্জ শহরে এসেছেন ইদ্রিস। ৬৮৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ জেলায় হারানো দুই মেয়েকে কোথায় খুঁজবেন, কীভাবে খুঁজবেন তা ভেবেই বেছে নিয়েছেন রিকশা। খাওয়ার খরচ আর রিকশার জমার টাকা উঠিয়ে বাকি সময় খালি রিকশা নিয়ে ছুটছেন। অর্ধকোটি মানুষের এ শহরে কোন জাদুকর তার মেয়েদের খোঁজ দেবে জানেন না ইদ্রিস।
নিউজবাংলাকে ইদ্রিস আলী বলেন, ‘গেরামে (গ্রামে) আমি চাষাবাদ করতাম। ভালোই ছিলাম। যখন গেরামে কাম থাকত না, তখন শহরের আইসা রাজমিস্ত্রির কাম করতাম। তারপরও বউ বেটিগো কষ্ট করতে দেই নাই। আমার বড় মেয়েডা গ্রামের স্কুলে ক্লাস টুতে (দ্বিতীয় শ্রেণি) পড়ত। ছোট মেয়েডা এই বছর ভর্তি করতাম। আমার কপাল খারাপ, তাই আমার মেয়ে দুইডা আমার কাছে নাই। আমার মেয়ে দুইডারে পাইলে ওগোরে গ্রামে নিয়া স্কুলে ভর্তি করামো। আমার স্বপ্ন সত্যি করমো, ওগো অনেক পড়ালেখা করামো।’
মেয়েদের কীভাবে হারালেন জিজ্ঞেস করতেই বলতে থাকলেন, ‘প্রায় ১ বছর আগে গেরামের এক দালালের সঙ্গে পরিচয় হয় আমার স্ত্রীর। এরপর থেকে সে বিদেশ যাওয়ার জন্য বারবার বলতে থাকে। সেখানে গেলে নাকি অনেক টাকা কামাইব। আমি রাজি ছিলাম না। আমি তারে বলছিলাম, আমরা গ্রামে ভালোই আছি। দরকার হইলে আমি আরও কষ্ট করমো তাও জাবার পারবা না। কিন্তু শুনে নাই, শাহনাজ আমার কথা শুনে নাই।
‘ওই দিন রাইত ৮টা বাজে আমি বাজার থ্যাইকা বাড়িতে গিয়া দেখি আমার বউ আর মাইয়া দুইডা ঘরে নাই। সারা গ্রাম তাগো খুঁজছি, তাও পাই নাই। পরে দিনাজপুর শহরে খুঁজছি, সেখানে পাই নাই। গ্রামের এক লোক তখন বলছিল ঢাকা খুঁজতে, পরে ঢাকা আইসা তিন মাস বিল্ডিংয়ের কাম করছি আর খুঁজছি, কিন্তু পাই নাই। এরপর গাজীপুরে গিয়াও খুঁজছি আরও ১ মাস। এমনে কইরা অনেক মাস পার করছি, তাও পাই নাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০ থেকে ২২ দিন আগে আমার শাশুড়ি ফোন করছিল। তখন বলতাছিল আমার মাইয়ারা আমার সঙ্গে কথা কইব। তহন আমার অনেক ভালা লাগতাছিল। এরপর বড়ডারে ফোন দিলে মাইডা কয়, আব্বা আমাগো লইয়া যান, আমরা বাড়িত যামো। তহনি শাশুড়ি ফোন নিয়া নেয়। আমি জিজ্ঞাইলাম ইতির মা কই। কিছুই কইল না। জিজ্ঞাইলাম আমনেরা কই আছেন, কইল পঞ্চবটি। এরপর ফোন রাইখা দিছে। আমি অনেকবার ফোন করছি খালি বন্ধ কয়।’
মেয়েদের কথা মনে করে আবার কাঁদতে শুরু করেন ইদ্রিস। কিছুটা স্থির হয়ে এই শহরে আসার গল্প বলতে থাকলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ শহরে আসমো টেকা আছিল না। মাইনসের খেতে ৩০০ টেকা রোজে কাম কইরা টেকা ম্যানেজ কইরা আইছি। নারায়ণগঞ্জে আইসা পঞ্চবটিতে খুঁজছি, কিন্তু পাই নাই। সেখান থেকে মুসলিম নগর নামে একটা গ্রামের দিকে যাইতাছিলাম তখন রাস্তায় আমাগো গ্রামের আনোয়ারের সঙ্গে দেখা হইছে। সে রিকশা চালায় যাইতাছিল। এরপর ওয় আমারে মাসদাইর গ্যারেজে নিয়া গেছে। সেখানে আরও অনেক রিকশাওয়ালা আছিল। তারা কইল রিকশা নিয়া মাইডারে খুঁজতে থাক, আল্লায় ভাইগ্যে রাখলে পাইয়া যামো। তারপর থ্যাইকা রিকশা চালাই।
‘আমি অনেক সময় যাত্রীগো কাছ থ্যাইকা ভাড়াও নেই না। ছবি দুইটা দেখাইয়া বলি, আমার মাইয়া দুইডারে দেখলে আমার গ্যারেজে খবর দিতে। জানি না, আমার মেয়েগো নিয়া বাড়ি ফিরতে পারমু কি না।’
থানায় অভিযোগ করেছেন কি না জানতে চাইলে বলেন, ‘আমাগো গ্রামের চেয়ারম্যান কইছিল অপেক্ষা করো, আইসা পড়বোনে। আমি থানা পুলিশ বুঝি না, তাই যাই নাই। তবে নারায়ণগঞ্জে একটা জিডি করছি।’
ইদ্রিসের ঘটনার বিষয়ে জানতে দিনাজপুরে তার বড় ভাই হবিবর আলীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ভাইডা সবাইরে নিয়া ভালোই আছিল, কিন্তু ওর বউডা বুঝল না। গ্রামে থাকতে ২০ হাজার টাকা দিয়া টেডিং (ট্রেনিং) দিসে। হঠাৎ এক দিন শুনি মেয়ে দুইডা লইয়া চলে গেছে।’
ইদ্রিসের এলাকার ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সুমন চন্দ দাস নিউজবাংলাকে বলেন, ইদ্রিস ভাইরে আমি চিনি। ওর বউ তো মেয়ে দুইডা নিয়া গ্রাম থ্যাইকা চলে গেছে। গ্রামের লোকেদের কাছে শুনছি, বিদেশ গেছে। শুনছি ইদ্রিস ভাইয়ে ঢাকা গেছে। ইদ্রিসও নাহি তাগো খুঁজতে ঢাকা গেছে।’
কাহালোর উপজেলার ৩ নম্বর মুকুন্দপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এ কে এম ফারুক হোসেনের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
এদিকে মঙ্গলবার রাতে ফতুল্লা মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন ইদ্রিস। সেখানে একই ঘটনা উল্লেখ করেছেন। আবেদন জানিয়েছেন দুই মেয়েকে খুঁজে দিতে।
ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রকিবুজ্জামান নিউবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টি আমলে নিয়ে পুলিশ ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছেন। তার মেয়েদের খুঁজে পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ইদ্রিসকে নারায়ণগঞ্জ পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। তার মেয়েরা যদি নারায়ণগঞ্জে থাকে, তাদের খুঁজে বের করা হবে।’
আরও পড়ুন:নওগাঁর ধামইরহাটে রেজওয়ানুল আহমেদ পিয়াল নামে সিআইডি কর্মকর্তা পরিচয় দেয়া এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তা পরিচয় দিলেও তিনি আসলে তা নন, প্রতারণার স্বার্থে ভুয়া পরিচয় ধারণ করেছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার রুপনারায়নপুর গ্রাম থেকে তিনি গ্রেপ্তার হন।
২৫ বছর বয়সী রেজওয়ানুল আহমেদ পিয়াল বগুড়ার আদমদিঘী উপজেলার ছাতিয়ান গ্রামের বাসিন্দা।
ভুক্তভোগী ম্যানুয়েল তপন জানান, ভয়ভীতি দেখিয়ে বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে তিনি (পিয়াল) তার কাছ থেকে ২৯ হাজার ৫৩৮ টাকা গ্রহণ করেন এবং আরও টাকা দাবি করলে স্থানীয় জনতা তাকে চ্যালেঞ্জ করে। এরপর সংশ্লিষ্ট থানায় খবর দেয়া হয়। পরে থানা পুলিশ গিয়ে প্রতারক পিয়ালকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসে।
তপন বলেন, ‘বেশকিছু দিন ধরে আমার মতো এলাকার অন্য লোকজনের কাছেও বিভিন্ন ফন্দি এঁটে প্রতারণা করে আসছে এই প্রতারক।’
বিষয়টি নিশ্চিত করে ধামইরহাট থানার ওসি মো. বাহাউদ্দিন ফারুকী বলেন, ‘প্রতারক রেজওয়ানুল আহমেদ পিয়াল বিভিন্ন সময় বিভিন্ন এলাকায় নিজেকে সিআইডি কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করতেন। ইতোমধ্যে একজনের কাছে থেকে ২৯ হাজার টাকা নিয়েছে। এছাড়া ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাও নিতেন তিনি।
‘এদিনও প্রতারণা করতে গেলে জনগণ তাকে আটক করে রাখে। এরপর পুলিশ গিয়ে তাকে থানায় নিয়ে আসে। তার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ মামলা হয়েছে। আইনগত প্রক্রিয়া শেষে তাকে আদালতে পাঠানো হবে।’
আরও পড়ুন:নোয়াখালীর হাতিয়ায় ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মো. সুলতান নামে এক রোহিঙ্গা নাগরিকের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাৎক্ষণিক এই হত্যাকাণ্ডের কারণ জানাতে পারেনি পুলিশ।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ১১৬ নম্বর ক্লাস্টার থেকে পুলিশ সুলতানের মরদেহ উদ্ধার করে। তিনি ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ৭৮ নম্বর ক্লাস্টারের বাসিন্দা ছিলেন।
ভাসানচর থানার ওসি কাওসার আহমেদ এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
স্থানীয়দের বরাতে ওসি বলেন, সুলতান ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ৭৮ নম্বর ক্লাস্টারে বসবাস করতেন। ১১৬ নম্বর ক্লাস্টারের খালি জায়গায় তিনি সবজি চাষ করতেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ছেলে তার জন্য দুপুরের খাবার নিয়ে যান। সেখানে গিয়ে বাবাকে দেখতে না পেয়ে তার ছেলে ওই ক্লাস্টারে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজি শুরু করেন। একপর্যায়ে তার বাবার গলা কাটা মরতেজ পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার দেন। এ সময় অন্য ক্লাস্টারের লোকজন এগিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে।
ওসি কাওসার আহমেদ জানান, পেছনের দিক থেকে গলা কেটে এই রোহিঙ্গা নাগরিককে হত্যা করা হয়। শুক্রবার সকালে মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হবে। পুলিশ হত্যার রহস্য উদঘাটনে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে।
আরও পড়ুন:নাটোরের সিংড়া উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে অপহরণ ও মারধরের অভিযোগে অপর প্রার্থী মো. লুৎফুল হাবিবকে তলব করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমান বৃহস্পাতবার অভিযুক্তকে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠিয়েছেন।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপের ৮ মে অনুষ্ঠেয় নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক দেলোয়ার হোসেন ও তার ভাইসহ তিনজনকে অপহরণের সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। এ ঘটনায় আপনি লুৎফুল হাবীবকে দায়ী করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে বর্ণিত বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থা থেকে প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। এছাড়া সব জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সচিত্র বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে।
উল্লেখিত প্রতিবেদন ও পত্রিকান্তে ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা প্রমাণ হয়েছে। এরূপ ঘটনার জন্য কেন আপনার প্রার্থিতা বাতিল অথবা আপনার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না সে বিষয়ে লিখিত জবাবসহ নির্বাচন কমিশনে ২২ এপ্রিল সোমবার বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা দেয়ার নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত দিয়েছে।
উল্লেখ্য, গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সোমবার অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর নাটোর জেলা নির্বাচন অফিসে গেলে দেলোয়ার হোসেনকে গাড়িতে তুলে নিয়ে আহত অবস্থায় তাকে তার বাড়ির পাশে ফেলে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা।
ভুক্তভোগী প্রার্থীর পরিবার এ ঘটনার জন্য আরেক প্রার্থী লুৎফুল হাবীব রুবেল ও তার সমর্থকদের দায়ী করেছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লুৎফুল হাবীব তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক। দেলোয়ার হোসেন মনোনয়নপত্র দাখিলের আগে লুৎফুল হাবীব ছিলেন একক প্রার্থী।
আরও পড়ুন:চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে টিউবওয়েল বসানোর জন্য স্থাপন করা পাইপে পানির পরিবর্তে উঠে আসছে এক ধরনের তরল। অনেকটা ডিজেলের মতো গন্ধযুক্ত এই তরল নিয়ে জনমনে সৃষ্টি হয়েছে কৌতূহল।
উপজেলার ভোলামোড় এলাকায় এক বাড়িতে ঘটেছে এই ঘটনা। বাড়ির মালিক আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘পানীয় জলের জন্য তিন বছর আগে এখানে মোটর বসানো হয়। এটি উপজেলা পরিষদ থেকেই বসানো হয়েছিল। কয়েক মাস থেকে মোটরটি দিয়ে পানি উঠছে না। কারণ জানার জন্য বুধবার সকালে মিস্ত্রি ডেকে আনা হয়।
‘মিস্ত্রি কাজ করার সময় মোটরের সঙ্গে যুক্ত পাইপ দিয়ে মাটির নিচ থেকে পানির পরিবর্তে তেলের মতো এক ধরনের তরল উঠে আসে। তা দেখে মনে হয়েছে ডিজেলের মতো। বিষয়টি আমরা উপজেলা চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি, যাতে তারা এটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা করেন।’
স্থানীয় সংবাদকর্মী মনিরুল ইসলাম জানান, ফেসবুকে ঘটনাটি দেখার পর তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। এ সময় পাইপ দিয়ে উঠে আসা তরলে তিনি কাগজ চুবিয়ে আগুন ধরানোর চেষ্টা করলে তাতে আগুন ধরে যায়। তার প্রশ্ন- পানি হলে তো ভেজা কাগজে আগুন ধরতো না। তাহলে এই তরল কি খনিজ তেল?
এ বিষয়ে নাচোল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিলুফা সরকার জানান, তিনিও বিষয়টি ফেসবুকে দেখেছেন। এ বিষয়ে খোঁজ-খবর করবেন বলে জানান তিনি।
গাইবান্ধায় ভাঙারির দোকানে চুরি করা রেলপাত (রেললাইন) বিক্রির সময় এক অটোচালকসহ তিনজনকে আটক করা হয়েছে। এসময় দোকান মালিক পালিয়ে যাওয়ায় তাকে আটক করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের ব্রিজ রোড এলাকার আশা ভাঙারি দোকানে সরকারি এসব রেলপাত বিক্রির সময় তাদের হাতেনাতে আটক করে গাইবান্ধার রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি)।
এ সময় চুরি করে বিক্রি করতে নিয়ে আসা রেলপাত এবং সেসব পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত একটি অটোরিকশাও জব্দ করা হয়।
আটককৃতরা হলেন- সদর উপজেলার পশ্চিম দুর্গাপুর এলাকার ৩০ বছর বয়সী সাগর মিয়া, ফুলছড়ি উপজেলার উত্তর কঞ্চিপাড়া এলাকার ৪০ বছর বয়সী ওয়াহেদ মিয়া ও আশা ভাঙারি দোকানের শ্রমিক সদর উপজেলার বালুয়া বাজারের পাকারখুটি এলাকার ৩৩ বছর বয়সী মোকলেছুর রহমান। এদের মধ্যে ওয়াহেদ মিয়ার অটোরিকশায় এসব মালামাল পরিবহন করা হয়েছিল।
নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন বোনারপাড়া রেলওয়ে পুলিশের ওসি খাইরুল ইসলাম তালুকদার।
তিনি বলেন, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শহরের ব্রিজ রোডের একটি ভাঙারির দোকানে সরকারি রেলপাত অবৈধভাবে ক্রয়-বিক্রয়কালে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। এ সময় দোকান মালিক পালিয়ে যাওয়ায় তাকে আটক করা সম্ভব হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘এ সময় তাদের কাছ থেকে খণ্ড খণ্ড তিন ফুট দৈর্ঘ্যের ৯ টুকরা রেললাইনের পাত উদ্ধার করা হয়, যা সংশ্লিষ্ট বিভাগে জমা দেয়া হবে।’
রেলপাতগুলো বালাসিঘাটের পরিত্যক্ত রেলপথ থেকে খুলে আনা হয়েছে বলে জানান রেলওয়ে পুলিশের এ কর্মকর্তা।
এ সময় এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আটককৃতদের বিরুদ্ধে সরকারি সম্পদ অবৈধভাবে ক্রয়-বিক্রয় ও পরিবহন আইনে মামলার প্রস্তুতি চলছে। এছাড়া এদের সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে কি না তাও খতিয়ে দেখবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।’
অপহরণের ৬ ঘণ্টার মধ্যে সিরাজগঞ্জ থেকে তামিম হোসেন নামের ৭ বছরের এক শিশুকে উদ্ধার করেছে র্যাব। এ সময় এ মামলার আসামি আল-আমিন গ্রেপ্তার হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার ভোরে বেলকুচি উপজেলার চন্দনগাতী গ্রাম থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে র্যাব ১২-এর একটি দল। বুধবার দুপুর তিনটার দিকে চুয়াডাঙ্গা জেলার হানুরবাড়াদি গ্রাম থেকে তাকে অপহরণ করা হয়।
অপহৃত তামিম হোসেন চুয়াডাঙ্গার হানুরবাড়াদি গ্রামের মো. সুন্নত আলীর ছেলে। অপরদিকে গ্রেপ্তার হওয়া ২৯ বছর বয়সী আল-আমিন কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম থানায় মেষতলী বাজারের বাসিন্দা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে র্যাব ১২-এর অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ মারুফ হোসেন এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, অপহরণের পর শিশুটির বাবা সুন্নত আলী চুয়াডাঙ্গা থানায় মামলা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বিষয়টি র্যাবকে জানালে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে আসামির অবস্থান নির্ণয় করা হয়। পরে অভিযান চালিয়ে আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার সঙ্গে থাকা শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।
তিনি জানান, তামিমের বাবার সঙ্গে আল আমিনের দুই মাস আগে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। বন্ধুত্বের সুযোগ নিয়েই সুকৌশলে তামিমকে অপহরণ করা হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, মুক্তিপণের জন্যই শিশুটিকে অপহরণ করা হয়েছিল।
গ্রেপ্তারকৃত আসামিকে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় হস্তান্তর করার আইনি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান র্যাবের এ কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
বিজিবি মহাপরিচালক বৃহস্পতিবার সকালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ১১ বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরের কোয়ার্টার গার্ড পরিদর্শন শেষে বিজিবি কার্যালয় পরিদর্শন করেন। দুপুরে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা বর্ডার গার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়া প্রতিবেশী দেশটির জান্তা বাহিনীর সদস্যদের খোঁজখবর নেন তিনি।
পরে তিনি ১১ বিজিবির অধীন চাকঢালা বিওপি (বর্ডার অবজারবেশন পোস্ট) পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি মিয়ানমার থেকে জান্তা বাহিনীর সদস্যদের পালিয়ে আসার স্পটগুলো সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। সীমান্তে বিজিবিকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেন।
পরিদর্শনকালে বিজিবি মহাপরিচালকের সঙ্গে ছিলেন কক্সবাজার রিজিয়ন কমন্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মোরশেদ আলমসহ বিজিবি রামুর সেক্টর ও অধীনস্ত বিজিবি ব্যাটালিয়নে নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ বিজিবি’র জোন কমন্ডার ও অধিনায়ক লে. কর্নেল সাহল আহমদ এসিসহ বিজিবির কর্মকর্তারা।
মন্তব্য