বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ ফেসবুকে ইসলাম ও মহানবীকে (সা.) অবমাননা করে স্ট্যাটাস দেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে হিন্দু পরিবারের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দেয়ার ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। মামলার পর ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আমুর বুনিয়া গ্রামের আ. সত্তার হাওলাদার একই গ্রামের রমনী বিশ্বাসের ছেলে কৌশিক বিশ্বাসের নামে মামলা করেছেন।
অপরদিকে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত রাতে কৌশিকের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও খড়ের গাদায় আগুন দেওয়ার ঘটনায় কৌশিকের বাবা রমনী বিশ্বাস বাদী হয়ে ২০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয়ে আরও ৮০-৯০ জনকে আসামি করে নাশকতার মামলা করেছেন।
তবে হিন্দু পরিবারের হামলায় নেতৃত্ব দেয়া স্থানীয় জামায়াত নেতা নুরজামাল হাওলাদার ও ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা উজ্জল খানকে এখনও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
গ্রেপ্তার আসামিদের মঙ্গলবার বিকেলে বাগেরহাট সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে আদালতের বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
বাগেরহাট জেলা পুলিশের মিডিয়া সেলের প্রধান সমন্বয়কারী পুলিশ পরিদর্শক এসএম আশরাফুল আলম জানান, বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
ফেসবুকে ইসলাম ও মহানবীকে (সা.) অবমাননা করে স্ট্যাটাস দেয়ার অভিযোগে সোমবার নিশানবাড়ীয়া ইউনিয়নের আমরবুনিয়া গ্রামে এক হিন্দু যুবকের বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে। বিতর্কিত পোস্ট দেয়ার অভিযোগে ওই যুবক কৌশিক বিশ্বাস পুলিশ হেফাজতে আছেন।
ক্ষমা চাওয়ার পরেও হামলা
আমরবুনিয়া গ্রামে মোট ১১০ পরিবারের বসবাস। এর মধ্যে হিন্দু পরিবার আছে ৫৪টি। গ্রামের কৃষক রমনী বিশ্বাসের চার ছেলেমেয়ের মধ্যে কৌশিক বিশ্বাস সবার বড়।
বাগেরহাট জেলা পুলিশের মিডিয়া সেলের প্রধান সমন্বয়কারী পুলিশ পরিদর্শক এস এম আশরাফুল আলম মঙ্গলবার দুপুরে নিউজবাংলাকে বলেন, কৌশিক তিন বছর ধরে ভারতে আছেন। তিনি সেখানে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। এক সপ্তাহ আগে ভারত থেকে গ্রামের বাড়িতে আসেন কৌশিক। ভারতে থাকার সময় তিনি তার ফেসবুক আইডিতে বিতর্কিত পোস্টটি দেন।
ওই পোস্ট নিয়ে সোমবার বিকেল ৪টার দিকে স্থানীয় জিউধরা বাজারে একটি সালিশ বৈঠক হয়। বৈঠকে কৌশিক বিশ্বাস ও তার বাবা রমনী বিশ্বাস ক্ষমা চান। এ ধরনের কাজ আর করবেন না এবং তিনি (কৌশিক) কিছুদিন এলাকায় থাকবেন না বলেও অঙ্গীকার করেন।
তবে আমরবুনিয়া মসজিদের সেক্রেটারি জামায়াত সমর্থক নুরজামাল হাওলাদার, যুবলীগ সমর্থক পশ্চিম আমরবুনিয়া গ্রামের উজ্জ্বল খান এর বিরোধিতা করেন।
এলাকাবাসী জানান, সন্ধ্যা ৭টার দিকে কয়েকজন লোক মোটরসাইকেলে করে কৌশিকের বাড়িতে গিয়ে তাকে খোঁজাখুঁজি করেন। তখন স্থানীয় ইউপি সদস্য মালেক ফরাজি তাদের ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দেন। কৌশিক ভয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে ঘেরে আত্মগোপন করেন।
এরপর মোরেলগঞ্জ থানা পুলিশ কৌশিককে হেফাজতে নেয়। তবে রাত ১০টার দিকে নুরজামাল হাওলাদার ও উজ্জ্বল খানের নেতৃত্বে ২৫০ থেকে ৩০০ লোক হঠাৎ মিছিল বের করে। ওই মিছিল থেকে কৌশিক বিশ্বাসের বাড়িঘর ভাঙচুর ও খড়ের গাদায় আগুন দেয়া হয়। এ ছাড়া বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পারিবারিক মন্দিরে হামলা চালানো হয়। তবে ওই মন্দিরে কোনো প্রতিমা ছিল না।
এক পর্যায়ে পুলিশ মিছিলকারীদের ধাওয়া করলে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। বাগেরহাটের পুলিশ সুপার, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
আমরবুনিয়া গ্রামের রাকিব গাজী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিতর্কিত পোস্ট দেয়ার কারণে সালিশ বৈঠকে কৌশিককে মারধর করেন তারা বাবা রমনী বিশ্বাস। এর পর এ ধরনের কাজ আর না করার কথা জানিয়ে কৌশিক মুচলেকা দেন। তবে একটি পক্ষ এর বিরোধিতা করে বিভিন্ন মসজিদে খবর দেয়।
‘প্রায় ৭০০ মুসল্লি এদিন সন্ধ্যায় জড়ো হন। তখন পুলিশে খবর দেন স্থানীয়রা। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে কৌশিকক নিজেদের হেফাজতে নেয়। এরপর কিছু পুলিশ তাকে নিয়ে থানার দিকে রওনা দেয়। তবে বাকি পুলিশের উপস্থিতিতেই কৌশিকদের বাড়ি ও মন্দিরে হামলা হয়।’
কৌশিকের মা লক্ষ্মী রানি বিশ্বাস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ছেলেকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার পর আমরা কিছুটা নিশ্চিন্তে ছিলাম যে আপাতত আর কিছু হবে না। তবে এর মধ্যে কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে এসে লোকজন হামলা চালায়। ঘরে ঢুকে আমাদের পেটানো হয়। ছেলের বউকে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়। পরে বাড়িঘরে আগুন দিয়ে তারা চলে যায়।’
গ্রামের বাসিন্দা বিপুল মিস্ত্রি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হামলায় নেতৃত্ব দেয়া উজ্জ্বল খানকে আমরা যুবলীগ নেতা হিসেবে চিনি। উনি (উজ্জ্বল) স্থানীয় ৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি হিসেবে নিজের পরিচয় দেন।’
রফিকুল ইসলাম নামে আরেক গ্রামবাসী বলেন, ‘উজ্বল খান ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি। সোমবার মিছিল নিয়ে অন্যদের সঙ্গে তিনি এখানে এসেছিলেন। এ সময় সাবেক মেম্বার মালেক গাজী তাকে বাধা দেন। তবে বাধা উপেক্ষা করেই হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।’
তবে মোরেলগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হকের দাবি উজ্জ্বলের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উজ্জ্বল খান আমাদের সংগঠনের কেউ না। তার পরেও সংগঠনের কেউ এ ঘটনায় জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
নিশানবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম বাচ্চু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই গ্রামের অধিকাংশ মানুষ দিনমজুর। এলাকার মানুষ শান্তিপ্রিয়। এর আগে কখনও এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি।’
হামলায় জড়িতের কঠোর শাস্তি দাবি করে এই জনপ্রতিনিধি বলেন, ‘অভিযুক্তরা পলাতক। ঘটনাস্থলে বিপুলসংখ্যক র্যাব ও পুলিশ সদস্য আছেন। ওই ঘটনায় হিন্দু পরিবারের লোকজন মনে কষ্ট পেয়েছেন।’
কৌশিক সম্পর্কে পুলিশের তথ্য
বাগেরহাট জেলা পুলিশের মিডিয়া সেলের প্রধান সমন্বয়কারী পুলিশ পরিদর্শক এসএম আশরাফুল আলম নিউজবাংলাকে জানান, কৌশিক বিশ্বাস অষ্টম শ্রেণি পাস। গেল ৩ বছর ভারতে ছিলেন। সেখানে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন।
ভারতের ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজিপি) সমর্থক কৌশিক গেল বছর দেশটির পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিতর্কিত পোস্ট দেয়ার অভিযোগে আইসিটি অ্যাক্টে করা মামলায় তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। ২৮ দিন জেলে থাকার পর তিনি ছাড়া পান।
বাড়ি পাচ্ছে কৌশিকের পরিবার
কৌশিকের পরিবারকে নতুন ঘর করে দিচ্ছে উপজেলা প্রশাসন। ক্ষতিপূরণ হিসেবে এরই মধ্যে ২০ হাজার টাকা দেয়ার কথা জানিয়েছেন নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)।
ইউএনও জাহাঙ্গীর আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির ও ঘর মেরামত করে দেয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে ৬ বান্ডেল টিন দেয়া হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব মেরামত কাজ শেষ করা হবে।
জেলা পুলিশ সুপার কে এম আরিফুল হক বলেন, ‘যে ঘটনা ঘটেছে সেটা জঘন্যতম ও দুঃখজনক। এই ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িওয়ালাকে আমরা আশ্বস্ত করছি যে, আপনারা নিশ্চিন্তে থাকেন। এর উপযুক্ত বিচার হবে।
‘যেটা নিয়ে রিউমার ছড়িয়েছে বা যে ঘটনাটি ঘটেছে সেটা আমরা তদন্ত করে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেব।’
আরও পড়ুন:নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে গাড়ির চাপায় দুইজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন একজন।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কেওডালা এলাকায় শনিবার সকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রাণ হারানো দুজন হলেন ঝালকাঠি সদর উপজেলার খেজুরা এলাকার সুরেশ ডাকুয়া (৩৫) ও তার ছেলে লোকেশ ডাকুয়া (৯)। এ ঘটনায় আহত লোকেশ ডাকুয়ার মা নিপু রায় (৩০) বলে জানিয়েছেন কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের পরিদর্শক রেজাউল হক।
তিনি জানান, শুক্রবার রাতে স্বামী-সন্তানসহ নারায়ণগঞ্জে ‘বাবা লোকনাথ ব্রহ্মচারী’ মন্দিরে পূজা করতে যান তারা। সেখান থেকে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে স্বামী স্ত্রী ও সন্তান ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কেওঢালা এলাকা পার হচ্ছিলেন। এ সময় একটি গাড়ি তাদের চাপা দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।
তিনি আরও জানান, আহত অবস্থায় তিনজনকে স্থানীয়রা একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে লোকেশকে চিকিৎসক মৃত বলে জানান। সুরেশ ও নিপু রায়কে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হলে সেখানে সুরেশ ডাকুয়ার মৃত্যু হয়।
কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের পরিদর্শক রেজাউল হক বলেন, ‘নিপু রায় ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি শঙ্কামুক্ত বলে জানা গেছে। নিহত দুইজনের মরদেহ মর্গে পাঠানো হয়েছে।’
এ ঘটনায় মামলাসহ গাড়ি ও চালককে শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে বলে জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন:নওগাঁয় সামাজিক সংগঠন একুশে পরিষদ নওগাঁর উদ্যোগে ১৯৭১ সালের অসহায় শরণার্থীদের দুর্ভোগ স্মরণে ‘রোড টু বালুরঘাট’ প্রতীকী পদযাত্রায় ফুটে উঠেছে নওগাঁয় রোড ধরে ভারতে পাড়ি দেয়া শরণার্থীদের দুর্দশার চিত্র।
ঐতিহাসিক ২০ এপ্রিলের এ দিনে ‘রোড টু বালুরঘাট’ স্মরণ করল নওগাঁবাসী। প্রায় ৬০ মিনিটে ৩ কিলোমিটার পদযাত্রায় যুদ্ধকালীন নওগাঁ রোডের শরণার্থীদের যুদ্ধ বিভীষিকা ও অবর্ণনীয় দুর্দশা তুলে ধরা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের ৫৩ বছর পর শনিবার বেলা ১১টার দিকে পাঁচ শতাধিক মানুষ নওগাঁ রোডে এ প্রতীকী পদযাত্রায় অংশ নেন। শহরের তাজের মোড় শহিদ মিনার পাদদেশ থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিল মুক্ত মঞ্চ চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।
একুশে পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট ডি এম আব্দুল বারীর সভাপতিত্বে শরণার্থীদের প্রতীকী পদযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন উপদেষ্টা মইনুল হক দুলদুল, সাবেক অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম খান, সিদ্দিকুর রহমান, অধ্যক্ষ বিন আলী পিন্টু, অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ, সাইমা ফেরদৌসী, নাইস পারভীন, বিষ্ণু কুমার দেবনাথ, গুলশানারাসহ অনেকে।
এ সময় বক্তারা জানান, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের বর্বরোচিত অত্যাচার-নিপীড়ন ও গণহত্যা থেকে বাঁচতে যুদ্ধের শুরু থেকে বিশেষ করে ২০ এপ্রিল এই দিনে পায়ে হেঁটে নওগাঁর সড়ক পথে হাজার হাজার মানুষ শরণার্থী হিসেবে ভারতের বালুরঘাটে আশ্রয় নেন। চলার পথে সেই সময় পাকহানাদার ও দোসরদের আক্রমণে অনেকের মৃত্যু হয়। সে সব শরণার্থীদের ক্লান্তি ও দুর্ভোগ স্মরণে একুশে পরিষদ নওগাঁ ‘রোড টু বালুরঘাট’ প্রতীকী পদযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে।
একুশে পরিষদ নওগাঁর সভাপতি অ্যাডভোকেট ডি এম আব্দুল বারী বলেন, ‘আমরা অনেকেই একাত্তরের ইতিহাস ভুলে গেছি। ৫৩ বছরের আগে কী ঘটেছিল। লাখ লাখ মানুষ নওগাঁ শহরের ওপর দিয়ে দেশ ছেড়েছিল দেশকে মুক্ত করার জন্য। চলার পথে সে সময় পাকহানাদার ও দোসরদের আক্রমণে অনেকেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। নওগাঁর মূল ইতিহাস ও ঐতিহ্যবাহী এ জেলার সব তরুণ প্রজন্ম ও শিক্ষার্থীদের জানানোর লক্ষ্যেই আয়োজনটি করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন:টাঙ্গাইলের গোপালপুরে ৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে জোর করে ধান কাটা বন্ধে উদ্যোগ নেয়ায় সন্ত্রাসীদের হামলায় পুলিশের এক উপপরিদর্শক তথা এসআইসহ চারজন আহত হয়েছেন।
উপজেলার হাদিরা ইউনিয়নের পলশিয়া গ্রামে শুক্রবার এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করে শনিবার আদালতে পাঠায় পুলিশ।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘পলশিয়া পূর্বপাড়া গ্রামের কাজিম মন্ডল একদল সন্ত্রাসী নিয়ে একই গ্রামের সানু মিয়ার ডুব বিলের দুই বিঘা পাকা বোরো ধান কাটা শুরু করেন। সানু মিয়া ৯৯৯ নম্বরে কল দিলে গোপালপুর থানার এসআই সাইফুল ইসলাম একজন কনস্টেবল নিয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন। পুলিশ দেখে সস্ত্রাসীরা ক্ষিপ্ত হয়।
‘তারা রামদা, লাঠি ও লোহার রড নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এতে সাব-ইন্সপেক্টর সাইফুল ইসলামের মাথা ফেটে যায়। কনস্টেবল শফিকুল ইসলামসহ সানু মিয়ার দুই আত্মীয় আহত হয়। আহতরা সবাই গোপালপুর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।’
গোপালপুর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘সাব-ইন্সপেক্টর সাইফুল ইসলামের মাথায় বেশ কয়েকটি সেলাই দেয়া হয়েছে।’
গোপালপুর থানার ওসি ইমদাদুল হক তৈয়ব বলেন, ‘এ ঘটনায় থানায় একাধিক মামলা হয়েছে। হামলার অভিযোগে ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’
আরও পড়ুন:চট্টগ্রামের পটিয়ার সড়কে শুক্রবার বিকেল ও রাতে দুটি দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত ও চারজন আহত হয়েছেন।
বাস উল্টে হেলপার নিহত
পটিয়ার মনসা বাদামতলা থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামমুখী একটি মিনিবাস বিপরীত দিক থেকে আসা আরেকটি বাসকে সাইড দিতে গিয়ে শুক্রবার বেলা সাড়ে পাঁচটার দিকে মহাসড়কের পাশে উল্টে যায়। ওই সময় বাসটির হেলপার রফিক (২৩) লাফ দিলে বাসের নিচে চাপা পড়ে প্রাণ হারান তিনি।
পটিয়া ক্রসিং হাইওয়ে থানার ওসি তৌফিকুল ইসলাম দুর্ঘটনার বিষয়টি জানিয়েছেন।
অটোরিকশায় বাসের ধাক্কায় দুজন নিহত
উপজেলার খরনা চেয়ারম্যান ঘাট এলাকায় শুক্রবার রাত ১০টার দিকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় বাসের ধাক্কায় দুজন নিহত ও চারজন আহত হয়েছেন।
নিহত দুজন হলেন চন্দনাইশ উপজেলার বৈলতলী এলাকার আবু বক্কর তাসিফ (১৮) ও কক্সবাজারের ঈদগাহ মধ্যম মাইজপাড়া এলাকার নুরুল আমিন (২৭)।
আহত চারজন হলেন বৈলতলীর রাকিব হোসেন (২০), মোহাম্মদ জাবেদ (১৯), মোহাম্মদ সিহাব (২২) ও চকরিয়ার অটোরিকশার চালক লিটন (৩৫)।
পটিয়া ক্রসিং হাইওয়ে থানার ওসি তৌফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার রাত ১০টার দিকে চট্টগ্রাম অভিমুখী দ্রুতগামী মারসা পরিবহনের একটি বাস নম্বরবিহীন সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে ধাক্কা দেয়। এতে অটোরিকশাটি দুমড়েমুচড়ে যায়।
তিনি আরও জানান, স্থানীয়রা অটোরিকশার যাত্রীদের উদ্ধার করে চন্দনাইশের বিজিসি ট্রাস্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত চারজনকে হাসপাতালেই চিকিৎসা দেয়া হয়।
আরও পড়ুন:সুনামগঞ্জের ছাতকের ঐতিহ্যবাহী জাউয়া বাজার ইজারাকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের সংঘর্ষের আশঙ্কায় ১৪৪ ধারা জারি ধারা জারি করা হয়েছে।
সংঘর্ষ এড়াতে শনিবার ভোর ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ফৌজদারি কার্যধারার এক আদেশে ১৪৪ ধারা জারি করেন ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম মুস্তাফা মুন্না।
আদেশে বলা হয়েছে, “যেহেতু ছাতক উপজেলাধীন ‘জাউয়া বাজার’ ইজারাকে কেন্দ্র করে বিবাদমান পক্ষসমূহের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং এর ফলে আইন শৃঙ্খলার মারাত্মক অবনতিসহ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা বিদ্যমান রয়েছে মর্মে অফিসার ইন- চার্জ, ছাতক থানা, সুনামগঞ্জ থেকে প্রতিবেদন পাওয়া গিয়েছে।
“সেহেতু সার্বিক আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে আমি গোলাম মুস্তাফা মুন্না, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ছাতক, সুনামগঞ্জ আমার উপর অর্পিত ক্ষমতাবলে আগামী ২০ এপ্রিল সকাল ৬ ঘটিকা হতে রাত ১২ ঘটিকা পর্যন্ত জাউয়া বাজার এলাকা এবং তার আশেপাশের এলাকায় ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ১৪৪ ধারা জারি করলাম।”
আদেশ অনুযায়ী, এ সময় উক্ত এলাকায় সব ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র বহন ও প্রদর্শন, লাঠি বা দেশীয় কোনো অস্ত্র বহন বা প্রদর্শন, যে কোনো ধরনের মাইকিং বা শব্দযন্ত্র ব্যবহার, পাঁচ বা তার অধিক সংখ্যক ব্যক্তির একসঙ্গে চলাফেরা, সভা সমাবেশ, মিছিল ইত্যাদি নিষিদ্ধ থাকবে।
ঢাকার সাভারে দৈনিক যুগান্তরের এক সাংবাদিকের ওপর ঝাঁঝালো রাসায়নিক নিক্ষেপ করেছে দুর্বৃত্তরা।
অফিস শেষে বাসায় ফেরার পথে কলমা এলাকায় শুক্রবার রাত আনুমানিক পৌনে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী ইকবাল হাসান ফরিদ দৈনিক যুগান্তরের অপরাধবিষয়ক প্রতিবেদক।
ঘটনার পর গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ফরিদকে চিকিৎসার জন্য প্রথমে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সাংবাদিক ইকবাল হাসান ফরিদ বলেন, ‘রাতে অফিস শেষে ঢাকা থেকে সাভারের বাসায় ফিরছিলাম। আনুমানিক পৌনে ১২টার দিকে বাসার অদূরে অন্ধকার গলিতে পৌঁছালে পেছন থেকে একজন মুখোশধারী যুবক আমাকে নাম ধরে ডাক দেয়। ডাক শুনে দাঁড়ানোর পর মুখোশধারী দুই যুবক স্থানীয় দুই জনপ্রতিনিধির নাম উল্লেখ করে আমাকে আগামী এক মাসের মধ্যে সাভার এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। এলাকা ছেড়ে না গেলে সপরিবারে আমাকে হত্যা করবে বলে হুমকি দেয় তারা।
‘এরপর কিছু বুঝে ওঠার আগে পেছন থেকে তাদের একজন মরিচের গুঁড়াসদৃশ এক প্রকার ঝাঁঝালো কেমিক্যাল আমার মাথায় ও চোখে-মুখে ছিটিয়ে দেয় এবং আমাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিয়ে চলে যায়। ঝাঁঝালো কেমিক্যাল ছিটিয়ে দেয়ার পর চোখে-মুখে ও শরীরে প্রচণ্ড জ্বালাপোড়া শুরু হলে তাৎক্ষণিকভাবে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। পরে আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুর্বৃত্তরা সাভারের যে দুইজন জনপ্রতিনিধির নাম উল্লেখ করে আমাকে হুমকি দিয়েছে, তাদের কারও সঙ্গে আমার পরিচয়, যোগাযোগ কিংবা কোনো ধরনের বিরোধ নেই। তৃতীয় কোনো পক্ষ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের লক্ষ্যে তাদের নাম ব্যবহার করে থাকতে পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঠিক তদন্তে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে।’
এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পাশাপাশি হাসপাতালে অসুস্থ সাংবাদিক ফরিদকে দেখতে যায় সাভার মডেল থানা পুলিশ।
সাভার মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ শাহজামান বলেন, ‘তদন্ত করে দুর্বৃত্তদের খুঁজে বের করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
আরও পড়ুন:কাঠফাটা রোদ আর ভ্যাপসা গরমে প্রকৃতি যেন পুড়ে যাচ্ছে। এমন বৈরী আবহাওয়াতে কুমিল্লার কৃষকরা মেতে উঠেছেন রোরো ধান ঘরে তোলার উৎসবে। পাকা ধানের ঘ্রাণে মোহিত হচ্ছে চারপাশ।
কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর কুমিল্লায় এক লাখ ৬১ হাজার ৭৯০ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। এ মৌসুমে ব্রি ধান ৯৬, ব্রি ধান ৮৯, ব্রি ধান ৯২ ও বঙ্গবন্ধু ধান ১০০ আবাদে কৃষকের আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে।
গত ১৩ এপ্রিল দেবিদ্বার উপজেলার ইউসুফপুর ইউনিয়নের ইউসুফপুর গ্রামে বোরো ধান কাটার উদ্বোধন করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপপরিচালক আইউব মাহমুদ। তিনি জানান, বোরো ধান তোলার উৎসবে শুরু হয়েছে। ভালো ফলনে খুশি কৃষকরা।
তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মিধিলি ও মিগজাউমের আঘাতে রবি ফসলের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকদের মৌসুমের শুরু থেকেই আধুনিক উফশী জাত ও হাইব্রিড জাতের বোরো ধান আবাদে উদ্বুদ্ধ করা হয়। বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে সেচ নিশ্চিতকরণ, কালবৈশাখি ঝড়, অতিবৃষ্টি, তাপদাহ, রোগ-বালাইয়ের প্রাদুর্ভাবসহ নানা প্রতিকূলতা ছিল।
‘নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন ও সঠিক পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত মাঠের সার্বিক পরিস্থিতি ভালো লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ বছর বোরো মৌসুমে ভালো ফলন আশা করা হচ্ছে।’
জেলার দেবিদ্বার এলাকা ঘুরে শুক্রবার দেখা যায়, ফসলের মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। জমিতে ব্রি ধান ৯৬ জাতের একটি জমিতে প্রতি হেক্টরে ফলন পাওয়া গেছে ৪ দশমিক ১৮ টন।
কৃষি বিভাগের পরামর্শে প্রথমবারের মতো ব্রি ধান ৯৬ জাতটি চাষ করেছেন কৃষক আবুল কালাম আজাদ। মাত্র ১৩০ দিনের জীবনকালে বাম্পার ফলন পেয়ে বেজায় খুশি তিনি।
দেবিদ্বার উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ বানিন রায় জানান, এ বছর দেবিদ্বার উপজেলায় ১২ হাজার ৬৯০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। যা গত বছর ছিল ১২ হাজার ৬৩০ হেক্টর। বোরো ধানে ব্রি ধান ২৮ এর পরিবর্তে একই জীবনকালের, তবে অধিক ফলনের ব্রি ধান ৯৬ চাষের পরামর্শ প্রদান ও উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম চলমান ছিল।
তিনি জানান, স্বর্ণা ধানের মতো রঙের এ ধানটিতে প্রোটিনের পরিমাণ ১০ দশমিক ৮ শতাংশ ও এমাইলোজের পরিমাণ ২৮ শতাংশ হওয়ায় ভাত খেতে সুস্বাদু ও ঝরঝরে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য