করোনাভাইরাস মোকাবিলায় টিকা প্রদানে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে থাকলেও টিকা কেনা ও ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতার ঘাটতি রয়েছে বলে জানিয়েছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ কোভিডের টিকা প্রদানের হারে এগিয়ে আছে। তবে সামগ্রিকভাবে টিকা কার্যক্রমের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার ঘাটতি রয়েছে।
মঙ্গলবার টিআইবি আয়োজিত ‘করোনা ভাইরাস সংকট মোকাবিলায় সুশাসন: অন্তর্ভুক্তি ও স্বচ্ছতার চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
টিআইবি নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সরকার সাফল্যের সাথে কোভিড ক্রাইসিস মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে। আমরা আমাদের গবেষণায় দেখতে পেয়েছি, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ কোভিডের টিকা প্রদানের হারে এগিয়ে আছে। এরমধ্যে প্রথম ডোজ ৭৫ শতাংশ এবং ৬৭ শতাংশ দ্বিতীয় ডোজ দেয়া সম্ভব হয়েছে। কাজেই এটি ইতিবাচক। পাশাপাশি আরও বেশ কিছু ইতিবাচক অর্জন আমরা দেখতে পেয়েছি। আজকের প্রতিবেদনে আমরা বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠির বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা দেখতে পেয়েছি জাতীয় টিকা পরিকল্পনায় বলা হয়েছিল দুর্গম এলাকা, বস্তিবাসি, বয়স্ক ব্যক্তি বিশেষ করে সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠির জন্য টিকার ব্যবস্থা করা হবে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিকার রেজিস্ট্রেশন করা, ভ্রাম্যমাণ টিকা প্রদানের অঙ্গিকার করা হয়েছিল। এ পরিকল্পনা কিন্তু বাস্তবে ততটা দেখা যায়নি। যে কারণে প্রান্তিক জনগোষ্ঠির মধ্যে টিকা গ্রহনের যে হার জাতীয় হারের অনেক কম। প্রান্তিক জনগোষ্ঠির টিকা প্রাপ্তির হার মাত্র ৪৪ শতাংশ। এটা উদ্বেগের বিষয়।’
তিনি জানান, দ্বিতীয় বিষয়টি হলো প্রান্তিক জনগোষ্ঠির মানুষ টিকা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে, মূলধারার জনগোষ্ঠির তুলনায় অবহেলার শিকার হয়েছেন। এসব এলাকায় প্রচার প্রচারণার বেশ ঘাটতি ছিল। প্রান্তিক পর্যায়ে ৪৫টি টিকা কেন্দ্রের মধ্যে ৩১টি টিকা কেন্দ্রে প্রতিবন্ধীবন্ধব কোনো পরিবেশ ছিল না।
সামগ্রিকভাবে টিকা কার্যক্রমের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার ঘাটতি ছিল উল্লেখ করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, টিকা কার্যক্রমে যে অর্থ ব্যয় হয়েছে, এই অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে মোটাদাগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী কিছু বলেছেন। কিন্তু তার সেই বক্তব্যে নির্ভরযোগ্য ও বিশ্লেষণমূলক তথ্য প্রকাশ হয়নি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন টিকায় ৪০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। আমরা দেখতে পেয়েছি বাস্তবে তার তুলনায় অর্ধেকের মত ব্যয় হয়েছে। সরকারও নির্ভরযোগ্য তথ্য প্রকাশ করছে না।’
টিআইবির তথ্য বলছে, টিকা কেনা ও ব্যবস্থাপনায় ১৪ থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।
এই তারতম্যের কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তথ্য প্রকাশের ঘাটতি, গোপনীয়তার সংস্কৃতির কারণেই এসব হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এটা যৌক্তিক নয় যে, তথ্য প্রকাশ করা যাবে না; টিকা ক্রয়ের চুক্তিতে এটা বলা হয়নি। এর বাইরে থেকেও যেসব জায়গা থেকে টিকা সংগ্রহ করা হয়েছে তার তথ্যও প্রকাশ করা হয়নি।’
অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন টিআইবির রিসার্চ ফেলো মো. জুলকারনাইন, কাওসার আহমেদ ও রাবেয়া আক্তার কনিকা।
গবেষণা প্রতিবেদনে টিকা প্রদানের ক্ষেত্রে সাফল্যের কথা বলা হলেও করোনায় নমুন পরীক্ষা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় সক্ষমতার বেশ ঘটতি ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের দুই বছর অতিক্রান্ত হলেও প্রয়োজনের চেয়ে পরীক্ষাগার স্বল্পতা, পরীক্ষাগারে সক্ষমতার অধিক সেবাগ্রহীতা ও দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে নমুনা পরীক্ষায় নানাবিধ সমস্যা এখনো বিদ্যমান। সেবাগ্রহীতা জরিপে যারা নমুনা পরীক্ষা করতে গিয়েছিল তাদের ২৬.১ শতাংশ নমুনা দিতে গিয়ে বহুমুখী সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। যার মধ্যে ৬৮.৬ শতাংশ বলেছেন নমুনা প্রদানের সময় পরীক্ষাগারগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা হয়নি।
এ ছাড়া নমুনা পরীক্ষায় বিদ্যমান সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে নমুনা দিতে গিয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর ফিরে আসা (১৭.৩ শতাংশ), পরীক্ষাগারে কর্মীদের দুর্ব্যবহার (১৬.৭ শতাংশ), নিজ বাসা থেকে নমুনা দিতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা (১০.৩ শতাংশ), নমুনা দিতে একাধিকবার কেন্দ্রে যাওয়া (১০.৩ শতাংশ), ভুল প্রতিবেদন দেয়ার কারণে পুনরায় পরীক্ষা করতে বাধ্য হওয়া (৩.২ শতাংশ) উল্লেখযোগ্য।
সব জেলায় আরটি-পিসিআর পরীক্ষাগার না থাকার কারণে সেসব জেলা থেকে নমুনা সংগ্রহ করে অন্য জেলায় পাঠানো হয় বা মানুষ অন্য জেলায় গিয়ে নমুনা পরীক্ষা করে আসায় বেশ ব্যয় ও ভোগান্তি বেড়েছে বলেও দেখিয়েছে টিআইবি।
নমুনা পরীক্ষায় যাতায়াত বাবদ গড়ে ১৪০ টাকা ব্যয় হয়েছে। যারা সরকারি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা করিয়েছে তাদের যাতায়াত, পরীক্ষা ফি ও অন্য খরচ মিলিয়ে গড়ে ৩৯৯ টাকা খরচ করতে হয়েছে। অন্যদিকে যারা বেসরকারি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা করিয়েছে তাদের গড়ে ৩ হাজার ৩৮১ টাকা খরচ হয়েছে।
জরিপে বলা হয়, যারা কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতাল থেকে সেবা গ্রহণ করেছে তাদের ১৮.৯ শতাংশ অন্য জেলা থেকে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হয়েছে। যা তাদের ওপর অতিরিক্ত খরচের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে।
সেবা প্রাপ্তির জন্য জেলার ভেতরে বা বাইরে শুধু যাতায়াত বাবদই গড়ে ৩ হাজার ৫৩৫ টাকা খরচ করতে হয়েছে।
হাসপাতালে ভর্তি হওয়া সেবাগ্রহীতাদের ১৫ শতাংশ প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক ভেন্টিলেশন সুবিধা পাননি, ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ প্রয়োজনে যথাসময়ে আইসিইউ সেবা পাননি এবং ৯ শতাংশ হাসপাতালে চিকিৎসাকালীন সময়ে একবারও আইসিইউ সেবা পাননি বলে টিআইবি দাবি করেছে।
সরকারি হাসপাতালে সেবার অপ্রতুলতার কারণে ও ভালো সেবা পেতে ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ সেবাগ্রহীতা বেসরকারি হাসপাতাল থেকে সেবা নিয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সরকারি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিতে শয্যা, ওষুধ, আইসিইউ, অক্সিজেন ও অন্য খরচসহ গড় চিকিৎসা খরচ যেখানে ৩৫ হাজার ৯৩৮ টাকা, পক্ষান্তরে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা খরচ ৪ লাখ ৫৮ হাজার ৫৩৭ টাকা। জরিপে ৩.৭ শতাংশের আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় বাড়ি থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি আরও যুক্ত ছিলেন টিআইবির উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, রিসার্চ অ্যান্ড পলিসির পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান, সিনিয়র রিসার্চ ফেলো শাহজাদা এম আকরাম।
আরও পড়ুন:কোভিড-১৯ মহামারির প্রথম দুই বছরে বিশ্বব্যাপী মানুষের গড় আয়ু ১ দশমিক ৬ বছর কমেছে।
একটি বড় গবেষণায় মঙ্গলবার এ কথা বলা হয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা বাসস।
যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশনের (আইএইচএমই) তথ্য অনুসন্ধানকারী গবেষকদের মতে, এক দশক ধরে বিশ্বব্যাপী আয়ুষ্কাল বৃদ্ধির পর এটি এখন উল্টো দিকে ঘুরছে।
আইএইচএমই গবেষক এবং দ্য ল্যানসেট জার্নালে প্রকাশিত গবেষণার প্রধান লেখক অস্টিন শুমাখার বলেছেন, ‘বিশ্বব্যাপী প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য, কোভিড-১৯ মহামারিটি অর্ধ শতাব্দীতে সংঘাত এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ দেখা যেকোনো ঘটনার চেয়ে আরও গভীর প্রভাব ফেলেছে।’
তিনি একটি বিবৃতিতে বলেছেন, ২০২০ থেকে ২০২১ সময়কালে ২০৪টি দেশ ও অঞ্চলের বিশ্লেষণে ৮৪ শতাংশে আয়ু হ্রাস পেয়েছে, যা নতুন ভাইরাসগুলোর ‘বিধ্বংসী সম্ভাব্য প্রভাব প্রদর্শন করে।’
এই সময়ে ১৫ বছরের বেশি মানুষের মৃত্যুর হার পুরুষদের জন্য ২২ শতাংশ এবং মহিলাদের জন্য ১৭ শতাংশ বেড়েছে।
গবেষকরা অনুমান করেছেন, মেক্সিকো সিটি, পেরু এবং বলিভিয়ায় আয়ু সবচেয়ে বেশি কমেছে।
কিন্তু আইএইচএমইয়ের ল্যান্ডমার্ক গ্লোবাল বার্ডেন অফ ডিজিজ স্টাডির আপডেট করা হিসাবে কিছু ভালো খবর পাওয়া যায়।
২০১৯ সালের তুলনায় ২০২১ সালে পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রায় অর্ধ মিলিয়ন কম শিশু মারা গেছে, যা শিশু মৃত্যুহারের দীর্ঘমেয়াদি পতন অব্যাহত রেখেছে।
আইএইচএমই গবেষক এই ‘অবিশ্বাস্য অগ্রগতি’কে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, বিশ্বকে এখন পরবর্তী মহামারি এবং বিভিন্ন দেশে স্বাস্থ্যের বিশাল বৈষম্য মোকাবেলার দিকে মনোনিবেশ করা উচিত। গবেষকরা বলেছেন, ১৯৫০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে গড় আয়ু ২৩ বছর বেড়ে ৪৯ থেকে ৭২ বছর হয়েছে।
কোভিড ২০২০ থেকে ২০২১ সময়কালে সরাসরি ভাইরাস থেকে বা পরোক্ষভাবে মহামারী-সম্পর্কিত কারণে অতিরিক্ত ১৫.৯ মিলিয়ন লোকের মৃত্যু হয়েছে।
আরও পড়ুন:বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৯ লাখ ২২ হাজার ৩৭২।
এদিকে সর্বশেষ বৈশ্বিক পরিসংখ্যান অনুসারে, মঙ্গলবার সকাল ১০টা পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৯ কোটি ৬০ লাখ ৫০ হাজার ৪৬ জন। খবর ইউএনবির
বিশ্বব্যাপী করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ৬৬ কোটি ৮০ লাখ ৬৬ হাজার ৫১৪ জন।
করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্রে শনাক্তের সংখ্যা ১০ কোটি ৮৭ লাখ ৫৮ হাজার ৬০৫। এখন পর্যন্ত দেশটিতে মারা গেছে মোট ১১ লাখ ৭৭ হাজার ৭৯৩ জন। মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যায় শীর্ষে রয়েছে দেশটি।
ভারতে এখন পর্যন্ত মোট শনাক্ত হয়েছে ৪ কোটি ৪৯ লাখ ৯৮ হাজার ৮৭৪। মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩১ হাজার ৯৩০ জনে।
বাংলাদেশ পরিস্থিতি
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী, দেশে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কারও মৃত্যু হয়নি। ওই সময় নতুন করে সাত জনের শরীরে এ ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে।
এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় ২৯ হাজার ৪৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে ও শনাক্তের সংখ্যা ২০ লাখ ৪৫ হাজার ৭৪১ জনে পৌঁছেছে।
আরও পড়ুন:দেশে করোনাভাইরাসে সংক্রমণের নিম্নগতি ছিল, দৈনিক শনাক্তের হার ছিল এক শতাংশেরও নিচে। কিন্তু ফের ভাইরাসটি মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষায় ৬১ জনের দেহে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়। সংক্রমণের হার ৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২৬ মে সকাল ৮টা থেকে ২৭ মে সকাল ৮টা পর্যন্ত ৯২৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এ সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি।
এর আগে সর্বশেষ গত ২৮ মার্চ একজনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছিল অধিদপ্তর। সে হিসেবে দেশে এখন পর্যন্ত করোনায় মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৪৪৬ জনের এবং ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৩৮ হাজার ৮৯৮ জনের দেহে।
গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তদের মধ্যে ৫৭ জনই ঢাকার বাসিন্দা, চারজন সিলেটের।
এদিকে শুক্রবার শনাক্তের হার ছিল ৪ দশমিক ৩১ শতাংশ। বৃহস্পতিবার ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ আর তার আগের দিন ছিল ৪ দশমিক ১৪ শতাংশ।
দেশে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে মোট রোগী শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ২২ শতাংশ, শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৮ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং মৃত্যুহার ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
দেশে ২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তিন রোগী শনাক্ত হবার কথা জানায় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান ( আইইডিসিআর)। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চে করোনাতে আক্রান্ত হয়ে প্রথম রোগীর মৃত্যু হয়।
করোনার বিভিন্ন ধরণের মধ্যে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে দেশে একদিনে ২০২২ সালের ২৮ জুলাই সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ২৩০ জন রোগী শনাক্ত হয়।
২০২১ সালের ৫ ও ১০ আগস্ট একদিনে সর্বোচ্চ ২৬৪ জনের মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন:করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারি শুরুর প্রায় তিন বছর পর চীনে প্রবেশের পর কোয়ারেন্টিনের বিধিনিষেধ তুলে নিল দেশটির সরকার।
স্থানীয় সময় রোববার থেকে দেশটিতে ঢোকার পর আর কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে না বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
বিক্ষোভের মুখে গত মাসে কঠোর করোনা বিধি থেকে সরে আসে চীন। এর পর থেকেই দেশটিতে ভাইরাসটির সংক্রমণ বড় পরিসরে বাড়তে থাকে।
রয়টার্স জানায়, ২০২০ সালের মার্চ থেকে চীনে পৌঁছানোর পর দেশটির সরকারের অধীনে কোয়ারেন্টিনে থাকতে হতো বিদেশিদের। প্রথম দিকে এ কোয়ারেন্টিনের মেয়াদ ছিল তিন সপ্তাহ। গত গ্রীষ্মে সে সময় কমিয়ে এক সপ্তাহে আনা হয়। পরে নভেম্বরে তা আরও কমিয়ে পাঁচ দিন করা হয়।
করোনার কঠোর বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার পরই চীনের জনগণ জনপ্রিয় ভ্রমণ ওয়েবসাইটগুলোতে বিদেশে ভ্রমণ নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেন, তবে এক ডজনেরও বেশি দেশ চীন থেকে আসা যাত্রীদের ওপর বাধ্যতামূলক কোভিড পরীক্ষাসহ নানা বিধিনিষেধ আরোপ করে। এ পদক্ষেপকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে আখ্যা দিয়েছে বেইজিং।
চান্দ্র নববর্ষের ছুটিতে চীনে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।
চীন থেকে বাংলাদেশে আসা দেশটির এক নাগরিকের শরীরে করোনাভাইরাসের নতুন উপধরন বিএফ ডটসেভেন শনাক্ত হয়েছে।
রোববার দুপুরে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) জানিয়েছে, ওই চারজনের করোনা পরীক্ষার পর একজনের শরীরে উপধরনটি শনাক্ত হয়েছে।
বিএফ ডটসেভেন করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ধরনের নতুন উপধরন।
আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘একজন চীনা নাগরিকের শরীরে ওমিক্রনের নতুন উপধরন বিএফ ডটসেভেন শনাক্ত হয়েছে। তবে তিনি ভালো আছেন।’
এর আগে গত ২৬ ডিসেম্বর চীন থেকে আসা দেশটির চার নাগরিকের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। চীন থেকে তারা কোভিড নেগেটিভ সনদ সঙ্গে এনেছিলেন। তবে বাংলাদেশে র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় তাদের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়।
সম্প্রতি চীনে আবার করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগের মধ্যে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আবার চীনসহ কয়েকটি দেশ থেকে আসা যাত্রীদের করোনা পরীক্ষা শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন:বিক্ষোভের মুখে বিধিনিষেধ শিথিলের পর চীনে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হু হু করে বাড়ছে বলে খবর প্রকাশ করছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। এর মধ্যেই দেশটিতে দৈনিক করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা প্রকাশ বন্ধ করা হলো।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনের ন্যাশনাল হেলথ কমিশন (এনএইচএস) গত তিন বছর ধরেই প্রতিদিন করোনা আক্রান্তের হিসাব প্রকাশ করে আসছিল, তবে রোববার থেকে এ তথ্য আর প্রকাশ হবে না বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
বিবৃতিতে এনএইচএসের পক্ষ থেকে বলা হয়, রেফারেন্স ও গবেষণার জন্য করোনাসংশ্লিষ্ট তথ্য চীনের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন সেন্টার প্রকাশ করবে।
কী কারণে করোনার দৈনিক হিসাব প্রকাশ বন্ধ করা হলো, তা নিয়ে এনএইচএসের পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি।
ব্লুমবার্গ ও ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের বরাত দিয়ে সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি মাসের প্রথম ২০ দিনে চীনে ২৫ কোটি মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন দেশটির শীর্ষ স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
ওই প্রতিবেদন সঠিক হলে চীনের ১৪০ কোটি জনগণের প্রায় ১৮ শতাংশই চলতি মাসে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে, তবে সিএনএন এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।
আরও পড়ুন:চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় চংকিংয়ের পিপল হাসপাতাল। চীনে করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণের খবরের মধ্যে শুক্রবার স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানটিতে যান এএফপির এক প্রতিবেদক। সেখানে রোগীর চাপে বারান্দাকে বানানো হয়েছে অস্থায়ী করোনা ওয়ার্ড।
হাসপাতালটিতে প্রতিরক্ষামূলক গিয়ারে থাকা এক কর্মী ‘মৃত, মৃত’ বলে চিল্লাতে চিল্লাতে এক নার্সের হাতে ডেথ সার্টিফিকেট বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন।
একটি কক্ষে প্রায় ৪০ জন বৃদ্ধ ও মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি হাতে স্যালাইন লাগানো অবস্থায় ছিলেন, যাদের মধ্যে কেউ কেউ দিচ্ছিলেন কাশি।
হাসপাতালের এক নার্স এএফপিকে জানান, ওয়ার্ডের সবাই করোনা রোগী।
ওই কক্ষটির পাশেই নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটের (আইসিইউ) বিছানায় শুয়ে ছিলেন তিন রোগী।
হাসপাতালটির জরুরি বিভাগেও ৫০ জনের সারি দেখা যায়, যাদের মধ্যে অনেকে করোনা রোগী। সেখানে থাকা একজন জানান, তারা এক ঘণ্টার বেশি ধরে অপেক্ষা করছেন।
চংকিংয়ের আরেকটি হাসপাতালের জরুরি বিভাগেও একই চিত্র দেখা যায়। সেখানে ৩০ জন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিকে হাতে স্যালাইন লাগানো অবস্থায় দেখা গেছে। তাদের মধ্যে অনেকেই কৃত্রিম উপায়ে শ্বাস নিচ্ছিলেন, অনেকের হাতে পালস অক্সিমিটার লাগানো ছিল।
হাসপাতালটির এক পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও এক নার্স এএফপিকে জানান, সরকার করোনার বিধিনিষেধ শিথিলের পর প্রতিদিন বেশ কয়েকজন মারা যাচ্ছেন।
মৃত ব্যক্তিরা সবাই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কি না, তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি হাসপাতালটির কর্মীরা।
এএফপির প্রতিবেদকের চোখে করোনাভাইরাসের যে চিত্র ধরা পড়েছে, তার সঙ্গে মিলছে না দেশটির সরকারের দেয়া মৃত্যুর হিসাব।
করোনাভাইরাসে মৃত্যুকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করেছে চীন। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, করোনায় মৃত্যুর তালিকায় তাদেরই অন্তর্ভুক্ত করা হবে, যারা কোভিড পজিটিভ ছিলেন এবং শ্বাসকষ্টে মারা গেছেন।
‘বেশির ভাগের মৃত্যু করোনায়’
এএফপির টিম বৃহস্পতিবার একটি সমাধি পরিদর্শন করে, যেখানে দুই ঘণ্টায় ৪০টি মরদেহ নামানো হয়। মৃত ব্যক্তিদের স্বজনরা জানান, তাদের বেশির ভাগের মৃত্যু হয় করোনায়।
এক নারী জানান, তার বৃদ্ধ আত্মীয় ঠান্ডাজনিত উপসর্গে ভুগছিলেন। তার করোনা পরীক্ষার ফল নেগেটিভ আসে, কিন্তু অবস্থা খারাপ হওয়ার পর সময়মতো অ্যাম্বুলেন্স না পাওয়ায় মৃত্যু হয়।
২০ বছর বয়সী আরেক নারীর শঙ্কা, তার বাবাও করোনায় মারা গেছেন, যদিও পরীক্ষা করানো হয়নি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য