দেশে নিত্যপণ্যের বাজার পরিস্থিতি বুঝতে এখন কারও সশরীরে বাজারে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। আশপাশে সরকারি বিপণন প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অফ বাংলাদেশের (টিসিবি) ভর্তুকি দামে খোলা ট্রাকে পণ্য বিক্রির তৎপরতাই বাজারের প্রকৃত চিত্র সবার কাছে স্পষ্ট করে দেয়।
টিসিবির এমন কার্যক্রম সারা বছর চলে না। বাজারে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি হলেই কেবল সক্রিয় হয় এ সংস্থাটি। তখন ছোট্ট পরিসরে তিন-চারটি পণ্য নিয়ে অল্প কয়েক দিনের জন্য মাঠে তাদের তৎপরতা চলে।
তবে বাজারে টিসিবির ভূমিকা সব সময় এত নাজুক ছিল না। একটা সময় বাজার নিয়ন্ত্রণ করত টিসিবিই। ব্যবসাও হতো তাতে। লক্ষ্য ছিল নির্দিষ্ট কিছু নিত্যপণ্যের আপৎকালীন মজুত গড়ে তুলে প্রয়োজনের সময় ভোক্তার কাছে তা সরবরাহ করার মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা। সেই কার্যক্রমের আওতায় ভোক্তার তাৎক্ষণিক চাহিদা মেটাতে প্রচুর পণ্য আমদানি এবং সেগুলো ভোক্তাপর্যায়ে ন্যায্য দামে বিক্রির পাশাপাশি স্থানীয় অনেক ক্ষুদ্র শিল্পের জন্যও সংস্থাটি প্রয়োজনীয় কাঁচামালের জোগান দিত।
তবে সময়ের পালাবদলে টিসিবির আগের জোরদার ভূমিকায় বিরাট ছেদ পড়েছে। বাজারে সক্রিয় অংশগ্রহণ থেকে এটি নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে।
কেন এটা ঘটেছে, জানতে চাইলে দায়িত্বশীল সংশ্লিষ্টরা জানান, নব্বই দশকে দেশ মুক্তবাজার অর্থনীতিতে প্রবেশ করার পর সরকার ব্যবসা করা ছেড়ে দিয়েছে। এতে বাজারে টিসিবির ভূমিকাও ধীরে ধীরে ছোট হয়ে এসেছে। বাজারে সেই জায়গা দখল নিয়েছে ব্যবসায়ীরা।
অভ্যন্তরীণ ভোক্তার চাহিদাযোগ্য বিভিন্ন ভোগ্য ও ব্যবহার্য্য পণ্যের উৎপাদন, আমদানি, মূল্য সংযোজন, পরিশোধন এবং বাজারজাতকরণ– সব কিছুই নিয়ন্ত্রণ করছে তারা।
এর বিপরীতে কম মূলধন ও জনবল, অবকাঠামো দুর্বলতা, তিন-চারটি পণ্য এবং নিয়ন্ত্রিত ক্ষমতা নিয়ে কোনো মতে অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে টিসিবি।
টিসিবির পরিধি ছোট হয়ে আসায় দেশে ভোক্তা স্বার্থ সুরক্ষার বিষয়টি অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছে। এ কারণে মাঝেমধ্যেই বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। পণ্যের মজুত চলে যাচ্ছে বিভিন্ন স্তরে ব্যবসায়ীদের পকেটে। নানা কারসাজিতে সরবরাহ চেইন নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। ফলে বিভিন্ন অজুহাতে বেড়ে যাচ্ছে পণ্যের দাম। এভাবে পণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতি চলতে থাকায় আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের হিসাব মেলানো কঠিন হয়ে পড়ছে স্বল্প ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের।
এ পরিস্থিতিতে টিসিবির খোলা ট্রাকের সামনে দীর্ঘ লাইনে মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যদেরও দাঁড়াতে দেখা যাচ্ছে।
কেন অস্থির হয় বাজার
দেশে সব নিত্যপণ্যের স্থানীয় উৎপাদন হয় না। কিছু পণ্যের উৎপাদন হলেও তা দিয়ে চাহিদা মেটে না। ফলে উৎপাদন হয় না কিংবা কম উৎপাদন হয়- এমন সব পণ্য আমদানির মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ ভোক্তার চাহিদা পূরণ করা হয়। এদিকে আমদানি বাজার সব সময় আবর্তিত হতে থাকে অস্থিরতার মধ্য দিয়ে। কখনও কমে, কখনও বাড়ে। ক্ষেত্রভেদে সকাল-বিকেলেও এই উত্থান-পতন দেখা যায়। এরই প্রভাব পড়ে সংশ্লিষ্ট পণ্যের আমদানিকারক দেশগুলোতে।
দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোজ্য তেল, চিনি, মসুর ডাল, ছোলা, পেঁয়াজ, খেঁজুরসহ বিভিন্ন অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের ৬০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত আমদানি করতে হয়। যার আমদানিকারক আবার গুটিকয়েক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান। কিছু পণ্যের পরিশোধন কোম্পানির সংখ্যাও নগণ্য। এর বিপরীতে এসব নিত্যপণ্যের সরবরাহ ও বাজারজাতকরণে পরিবেশক, পাইকার ও খুচরা বিভিন্ন স্তরে ব্যবসায়ীর সংখ্যা লাখ লাখ। ফলে কোনো পণ্যের সরবরাহে ঘাটতি কিংবা দাম বেড়ে গেলে কোন স্তরে সমস্যাটি তৈরি হয়েছে তা তাৎক্ষণিক জানার উপায় কম।
বাজার অস্থিরতার নেপথ্যে কারা
নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা শুরু হলে কেউ দায় স্বীকার করতে চায় না। তদন্তের আগে সরকারের কাছেও তাৎক্ষণিক কোনো তথ্য থাকে না। এই সুযোগে চলতে থাকে একে অপরের ওপর দোষ চাপানো।
দেশে বছরের পর বছর নিত্যপণ্যের বাজার অস্থিরতার পেছনে কখনও আমদানিকারক, কখনও পরিশোধন ও বাজারজাতকারী কোম্পানিগুলোর সংঘবদ্ধ অপতৎপরতা দায়ী বলে চিহ্নিত হয়েছে। কখনও আবার চিহ্নিত হয়েছে পরিবেশক, পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সরাসরি দায়। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে বাজার সম্পর্কিত সব কটি গোষ্ঠীর সংঘবদ্ধ কারসাজিও চিহ্নিত হয়েছে।
কারা দায়ী, সরকার তা বুঝতে পারা এবং হস্তক্ষেপের আগেই ভোক্তার পকেট থেকে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। উদ্বিগ্ন হওয়ার বিষয় হলো, সরবরাহ চেইনে আরও বড় ধরনের বিপর্যয় তৈরি হওয়ার আশঙ্কায় দায়ীদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারছে না। আবার বিপুল বিনিয়োগের প্রশ্ন জড়িত থাকায় গুটিকয়েক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের একচেটিয়া ব্যবসা বন্ধে বাজারে প্রতিযোগিতার ভারসাম্যও তৈরি করা যাচ্ছে না। এখানে মুক্তবাজার অর্থনীতির কারণেও সরকারকে অনেক ক্ষেত্রে আপোষ করতে হচ্ছে।
দায়ী টিসিবির দুর্বল ভূমিকা
বাজারে কখনও সুনির্দিষ্ট কোনো পণ্যের, আবার কখনও একযোগে বিভিন্ন নিত্যপণ্যের স্বাভাবিক সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হয়। এ ঘাটতির পেছনে বাস্তব পরিস্থিতির চেয়ে কারসাজির ভূমিকাই বেশি থাকে। এতে সংশ্লিষ্ট পণ্যের দামও বেড়ে মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়।
বাজার বিশ্লেষকরা এমন পরিস্থিতিতে টিসিবির প্রয়োজনকে গুরুত্বের সঙ্গেই দেখছেন। ১৭ কোটি ভোক্তার এই দেশে সংস্থাটির বিদ্যমান কার্যক্রম যথেষ্ট বলে মনে করছেন না তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই বিরাট জনগোষ্ঠীর বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে টিসিবির যে সামর্থ্য থাকা প্রয়োজন, সেটি আসলে নেই। সংস্থাটির পণ্য বিক্রি কার্যক্রম চলে শুধু স্বল্প আয়ের মুষ্টিমেয় লোকের জন্য। সেটিও বছরব্যাপী নয়। বিক্রীত পণ্যের সংখ্যাও কম। আবার যা সরবরাহ দেয়া হয়, তাও সীমিত; রাজধানীসহ মাত্র ১২টি অঞ্চলের শুধু শহরকেন্দ্রিক এলাকাগুলোতে।
সারা দেশে বেশির ভাগ এলাকা টিসিবির কাভারেজের বাইরে থেকে যাচ্ছে। আবার টিসিবি থেকে পণ্য কেনার পরও সংশ্লিষ্ট ভোক্তাকে অন্যান্য নিত্যপণ্যের জন্য নিয়মিত বাজারেরই মুখাপেক্ষি হতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসেন বলেন, ‘এবার রমজানে ব্যতিক্রম ছাড়া বছরব্যাপী টিসিবির কাভারেজ এরিয়া বলতে গেলে খুবই কম। তা সত্ত্বেও বাজার দামের এই ঊর্ধ্বগতিতে স্বল্প আয়ের মানুষের কাছে টিসিবিই এখন ভরসা হয়ে উঠেছে। কিন্তু এই পণ্য কেনায় মানুষের চাপ যে হারে বাড়ছে, সে অনুযায়ী টিসিবি তো তা সরবরাহ দিতে পারছে না। ভোক্তারা তো শুধু তিন-চারটি পণ্যই কেনেন না, তারা আরও অনেক পণ্য কেনেন।
‘আবার যে পরিমাণ পণ্য দেয়া হয়, তা দিয়ে বেশির ভাগ পরিবারের চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। সব মিলিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে টিসিবির ভূমিকা খুবই দুর্বল। সব দিক থেকে টিসিবির সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি।’
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য ও আমদানি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান অবশ্য টিসিবির কার্যক্রমের প্রভাব কমে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করতে রাজি নন। তিনি বলেন, ‘অংশগ্রহণ কম হলেও বাজার নিয়ন্ত্রণে এখনও টিসিবি কার্যকর ভূমিকা রেখে চলেছে। বছরে বিভিন্ন সময় পরিচালিত টিসিবির স্বল্প পরিসরের এই অংশগ্রহণও যদি না থাকত, তাহলে নানামুখী ছাড় দিয়েও বাজার নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়ত। টিসিবি কাজ করছে বলেই ঊর্ধ্বগতির বাজার পুনরায় স্থিতিশীলতায় ফিরে আসছে। কারসাজি বা সিন্ডিকেট কোনোটাই সুবিধা করতে পারছে না।’
বাজার চাহিদার কতটুকু টিসিবি সরবরাহ করে
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাজার চাহিদা সব সময় এক রকম থাকে না। সারা বছর যে চাহিদা থাকে, রমজানে পণ্যভেদে তার দ্বিগুণ-তিনগুণ হয়। এবার রমজানে টিসিবি সরবরাহকৃত প্রতিটি পণ্য বাজার চাহিদার ৩০ শতাংশ পর্যন্ত পূরণ করতে সক্ষম হচ্ছে।’
টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ূন কবির ভূইয়া জানান, একটা সময় পণ্যভেদে বাজারে টিসিবির অংশগ্রহণ মাত্র ১ থেকে ৩ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। বর্তমানে টিসিবি বছরজুড়ে পরিচালিত কার্যক্রমে প্রতিটি পণ্যের বাজার চাহিদার ১০-১২ শতাংশ পর্যন্ত সরবরাহ দিতে সক্ষম হচ্ছে।’
সরকারের উপলব্ধি
দেরিতে হলেও টিসিবির কর্মকাণ্ডের গুরুত্ব উপলব্ধি করেছে সরকার। তাই শুধু এক মাসের (রমজান) জন্য হলেও টিসিবির পণ্য বিক্রির পরিধি সারা দেশে বিস্তৃত করা হয়েছে। একই সঙ্গে ১ কোটি পরিবারকে এর উপকারভোগীর আওতায় আনা হয়েছে।
বাজারে পণ্যের দামের ধারাবাহিক উত্তাপ থেকে স্বল্প আয়ের মানুষ, দরিদ্র্য ও অতিদরিদ্র্য জনগোষ্ঠীকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দিতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি নিউজবাংলাকে জানান, ‘ভবিষ্যতে টিসিবিকে আমরা ভেরি স্ট্রং পজিশনে রাখতে চাই। আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করছি। প্রধানমন্ত্রী চান টিসিবিকে এমন অবস্থায় নিয়ে যেতে, যাতে যখনই প্রয়োজন পড়বে, টিসিবি যেন মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই রমজানে টিসিবির শক্তির পরীক্ষা হয়েছে। ১ কোটি পরিবারের কাছে মাত্র এক-দেড় মাসের মধ্যে পণ্য পৌঁছে দেয়ার কাজটি সহজ ছিল না। কিন্তু সীমিত সামর্থ্যের মধ্যেও টিসিবি সেটি করে দেখিয়েছে। এর মাধ্যমে টিসিবি যে শক্তি সঞ্চয় করেছে, ভবিষ্যতে প্রতিটি পদক্ষেপে তার সক্ষমতার প্রমাণ পাওয়া যাবে। টিসিবি সক্রিয় থাকলে বাজারে অনেক অঘটনও প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।’
বর্তমানে বছরব্যাপী বিভিন্ন সময় দেশের ১২টি অঞ্চলে টিসিবির পণ্য বিক্রি হয়ে থাকে, যা নিয়ন্ত্রণ করা হয় ঢাকার কাওয়ানবাজারের প্রধান কার্যালয় থেকে। এর বাইরে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল, রংপুর, ময়নসিংহ এবং মৌলভীবাজার আঞ্চলিক কার্যালয় রয়েছে। এ ছাড়া ক্যাম্প অফিস রয়েছে কুমিল্লা, মাদারীপুর, ঝিনাইদহ ও বগুড়ায় রয়েছে।
টিসিবির সীমাবদ্ধতাকে স্বীকার করে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এটির কার্যক্রমকে ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী করে ইউনিয়ন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন।
সম্প্রতি সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি জানান, মাঠ পর্যায়ে টিসিবির পণ্য বিক্রি সবসময় প্রয়োজন হয় না, প্রয়োজনগুলো সারা বছর থাকেও না। মাঝে মাঝে টিসিবির প্রয়োজনীয়তা দেখা যায়। তখন সেটার ব্যবস্থা টিসিবিকে করতে হয়। তাই এখন থেকে পণ্য কেনার ক্ষেত্রে টিসিবিকে পূর্ণ মাত্রায় সহযোগিতা করবে সরকার। এর জন্য যখন যা করার প্রয়োজন পড়বে, তখনই টিসিবির জন্য তা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘টিসিবি বাজারে প্রভাব বিস্তারের সক্ষমতা অর্জন করলে সিন্ডিকেটের অস্তিত্ব থাকবে না। এর ফলে বাজারে মালামাল থাকার পরেও যারা অধিক মুনাফার আশায় সিন্ডিকেট করে, তাদের সেই সুযোগ বন্ধ হবে।’
টিসিবির যতো প্রতিবন্ধকতা
প্রতিবেশী ভারতে দ্য স্টেট ট্রেডিং করপোরেশন অব ইন্ডিয়া লিমিটেড (এসটিসি) ও ট্রেডিং করপোরেশন অব পাকিস্তান (টিসিপি) তাদের অভ্যন্তরীণ বাজার নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি বছরে হাজার কোটি টাকা মুনাফা করে। বিপরীতে টিসিবি ধুঁকছে অস্তিত্ব সংকটে।
বিভিন্ন সময় পরিচালিত টিসিবির পণ্য বিক্রি কার্যক্রমে বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে সাতটি সমস্যায় ভুগছে টিসিবি। এগুলো হলো: প্রয়োজনীয় পণ্য কেনায় মূলধনের সংকট, ভোক্তাপর্যায়ে পৌঁছাতে পর্যাপ্ত জনবল ও দাপ্তরিক কার্যালয়ের অভাব, কেনা পণ্য মজুতে অবকাঠামো দুর্বলতা, স্বতন্ত্র বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হয়েও পরিস্থিতি বুঝে তাৎক্ষণিক পণ্য ক্রয়-বিপণনের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা না থাকা, টিসিবির কেনাকাটা অগ্রিম আয়কর ও ভ্যাটমুক্ত না হওয়া, ভর্তুকি বরাদ্দ কম হওয়া, কার্যক্রম পরিচালনায় দুর্নীতি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এসব সমস্যা সমাধানে বারবার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু এর কোনোটিই আশানুরূপ বাস্তবায়ন হয়নি। যে কারণে বাজার নিয়ন্ত্রণে টিসিবি ক্রমেই গুরুত্ব হারাতে বসেছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে টিসিবির সচিব (যুগ্ম সচিব) মো. মনজুর আলম প্রধান নিউজবাংলাকে জানান, ‘টিসিবিকে শক্তিশালী করতে জনবল, মাঠপর্যায়ের দাপ্তরিক কার্যক্রম, আধুনিক গুদাম নির্মাণ এবং প্রয়োজনীয় অর্থ ও কেনাকাটায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বাড়ানোর প্রক্রিয়াগুলো সব সময় চলমান। তবে একদিনে তো হওয়ার কথা নয়, সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।
‘তবে এটা বলতে পারি, সরকারের ইতিবাচক মনোভাবের কারণে ধীরে ধীরে টিসিবি আরও শক্তিশালী হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সংস্থার কার্যক্রমেরও সম্প্রসারণ ঘটছে। চলতি বছর সারা দেশে রাজধানী থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায়েও পৌঁছে গেছে টিসিবির কার্যক্রম। ভবিষ্যতে বাজার নিয়ন্ত্রণে ইউনিয়ন পর্যায়েও টিসিবি সক্রিয় ভূমিকা অব্যাহত থাকবে। সরকার সে লক্ষ্যেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
আরও পড়ুন:শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে গত ০২ জুন, সোমবার আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে জনতা ব্যাংক জাতীয়তাবাদী অফিসার কল্যাণ সমিতি।
জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মুহঃ ফজলুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মজিবর রহমান, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ গোলাম মরতুজা, মোঃ ফয়েজ আলম ও মোঃ আশরাফুল আলম বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। সংগঠনের সভাপতি সাইফুল আবেদিন তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সভা সঞ্চালনায় ছিলেন কার্যকরী সভাপতি শাহ জাহান ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইকবাল হোসেন। অনুষ্ঠানে সংগঠনের সিনিয়র সহসভাপতি এস. এফ. এম. মুনির হোসেন, সহসভাপতি মজিবুর রাহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ ছানোয়ার হোসেনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ও প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
১০ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র কেনায় আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখাতে হবে না। আবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার সময় রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র লাগবে না। ট্রেড লাইসেন্স নিতেও রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র লাগবে না। বাজেটে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দাখিলের বাধ্যবাধকতায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে।
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্রের বাধ্যবাধকতায় এসব পরিবর্তন আনা হয়েছে। এত দিন ৪৬টি সেবায় রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখানোর বাধ্যবাধকতা ছিল।
এখন ১১ ধরনের সেবা নিতে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র দেখাতে হবে না। শুধু কর শনাক্তকরণ নম্বরধারীদের (টিআইএন) সিস্টেম জেনারেটেড প্রত্যয়নপত্র দাখিল করলেই হবে। ওই ১১টি সেবা হলো সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা এলাকায় নতুন ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণে; সমবায় সমিতির নিবন্ধন প্রাপ্তিতে; সাধারণ বিমার তালিকাভুক্ত সার্ভেয়ারের নতুন লাইসেন্স গ্রহণে; ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ ও নবায়নে; চিকিৎসক, দন্ত চিকিৎসক, আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট, চার্টার্ড সেক্রেটারি, আইনজীবী ও কর আইনজীবী, অ্যাকচুয়ারি, প্রকৌশলী, স্থপতি, সার্ভেয়ার হিসেবে কোনো স্বীকৃত পেশাজীবী সংস্থার সদস্যপদ গ্রহণে; পাঁচ লাখ টাকার অধিক পোস্ট অফিস সঞ্চয়ী হিসাব খোলায়; এমপিওভুক্তির মাধ্যমে সরকারের কাছ থেকে দশম গ্রেড বা তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার কর্মচারীর কোনো অর্থ প্রাপ্তিতে; স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতাদের ক্ষেত্রে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস বা মোবাইল ব্যাংকিং বা ইলেকট্রনিক উপায়ে টাকা স্থানান্তরের মাধ্যমে এবং মোবাইল ফোনের হিসাব রিচার্জের মাধ্যমে কমিশন, ফি বা অন্য কোনো অর্থ প্রাপ্তিতে; স্ট্যাম্প, কোর্ট ও কার্টিজ পেপারের ভেন্ডর বা দলিল লেখক হিসেবে লাইসেন্স নিবন্ধন ও তালিকাভুক্তিতে; ত্রি-চক্র মোটরযানের নিবন্ধন, মালিকানা পরিবর্তন বা ফিটনেস নবায়নে; ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ই-কমার্স ব্যবসার ক্ষেত্রে লাইসেন্সিং অথরিটির কাছ থেকে লাইসেন্স গ্রহণে।
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
আজ সোমবার (২ জুন) বাংলাদেশ টেলিভিশনে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ এ কথা বলেন। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ও দেশের ইতিহাসে ৫৪তম বাজেট।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণার সময় অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য মোট ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করছি, যা জিডিপির ১২.৭ শতাংশ। এর মধ্যে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি।
তিনি বলেন, এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে চাই যে, ২০১৫ সালের পর এখন পর্যন্ত বেতন কাঠামো প্রণীত না হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এবারের বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করছি।
ঘরে বসে যেসব ক্রেতারা কেনাকাটা করতে চান, তাদের জন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে কেনাকাটা আগামী অর্থবছর থেকে খানিকটা ব্যয়বহুল হতে পারে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ই-প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয় থেকে কমিশনের ওপর ভ্যাট বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করতে চাইছে। সেক্ষেত্রে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পণ্যের দাম বেশি হতে পারে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই ভ্যাটের হার ছিল ৫ শতাংশ।
জুলাই অভ্যুত্থানে বদলে যাওয়া বাংলাদেশে ভিন্ন বাস্তবতায় এবার সংসদের বাইরে ভিন্ন আঙ্গিকে পেশ হলো বাজেট। এবার সংসদ না থাকায় সংসদের আলোচনা বা বিতর্কের কোনো সুযোগ থাকছে না। উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বাজেট উপস্থাপন করার পর ৩০ জুন তা রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে কার্যকর করা হবে।
তবে অতীতের রেওয়াজ মেনে বাজেট ঘোষণার পরদিন সংবাদ সম্মেলনে এসে বাজেট নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। এছাড়া পুরো জুন মাসজুড়ে অংশীজনদের মতামত নেওয়ার কথাও তিনি বলেছেন।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিগত মাসগুলোতে সরকারের ধারাবাহিক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অবলম্বন করায় এবং সরকারি ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পাওয়ায় মূল্যস্ফীতি হ্রাস পেয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি জুন মাসেই পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নেমে আসবে।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ আজ সোমবার ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় এ কথা বলেন। তার এ বক্তৃতা বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, গত বছরের আগস্ট মাসে আমাদের সরকার যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে তখন আমাদের সামনে সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরে মানুষকে স্বস্তি দেয়া।
তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিগত মাসগুলোতে আমরা ধারাবাহিকভাবে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অবলম্বন করেছি। এর ফলে নীতি সুদের হার ১৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়ে এখন ১০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মুদ্রানীতির আওতায় গৃহীত কার্যক্রমকে সহায়তা করতে সংকোচনমূলক রাজস্বনীতি অনুসরণ করা হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমিয়ে আনায় সার্বিকভাবে সরকারি ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। এর ইতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়ে উঠতে শুরু করেছে। পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসের ১০.৮৯ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে ৯ দশমিক ১৭ শতাংশে নেমে এসেছে। আশার কথা হলো এবারের রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্মরণকালের মধ্যে সবচাইতে স্থিতিশীল ছিল। এ ধারা অব্যাহত থাকলে এই জুন মাসেই পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের কোঠায় নেমে আসবে। মূল্যস্ফীতির সাথে এ লড়াইয়ের ফলে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা কম হতে পারে।’
মূল্যস্ফীতির নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকা জরুরি উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল থাকা অত্যাবশ্যক। প্রবাস আয়ের প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক হওয়ায় এবং রপ্তানি স্থিতিশীল থাকায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এপ্রিল মাসে বৃদ্ধি পেয়ে ২৭.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সে কারণে আমরা বিগত ১৪ মে তারিখে বাজারভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় হার চালু করেছি।
১৯৪৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী আর্থিক অস্থিরতা সামাল দিতে গঠিত হয় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ। এর মূল লক্ষ্য ছিল বৈশ্বিক মুদ্রানীতি সমন্বয় সাধন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে উৎসাহ দেওয়া এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করা। বহু দেশ সংকটে পড়ে এই সংস্থার দ্বারস্থ হয়েছে- কেউ সাময়িকভাবে রক্ষা পেয়েছে, কেউ আবার দীর্ঘমেয়াদি ঋণনির্ভরতার ফাঁদে পড়ে গেছে।
আজ, যখন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য ক্রমশ পশ্চিমকেন্দ্রীকতা থেকে সরে পূর্ব ও দক্ষিণে ছড়িয়ে পড়ছে, তখন আইএমএফ তার প্রাসঙ্গিকতা ও নৈতিক অবস্থান নিয়ে এক নতুন প্রশ্নের সম্মুখীন।
ঋণ সহায়তা, নাকি ঋণের ফাঁদ?
আইএমএফ সাধারণত এমন শর্তে ঋণ দেয়, যার মধ্যে থাকে কঠোর ব্যয়সংযম, ভর্তুকি হ্রাস, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং বাজারমুখী সংস্কার; কিন্তু এই শর্তগুলো অনেক সময় জনজীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। স্থানীয় শিল্প ধসে পড়ে, বৈষম্য বেড়ে যায় এবং সাধারণ মানুষের জীবন আরও কঠিন হয়ে ওঠে। আর্জেন্টিনার অভিজ্ঞতা এর এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। ২০১৮ সালে আইএমএফ ইতিহাসের বৃহত্তম ঋণ প্যাকেজ ৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুমোদন করে। ফল ছিল বিপরীত- মুদ্রাস্ফীতি ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়, দারিদ্র্য আরও বেড়ে যায় এবং দেশটি আবার মন্দার মুখে পড়ে।
এই অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে শুধু অর্থনৈতিক সমীকরণ দিয়ে কোনো দেশের সামাজিক বাস্তবতা নির্ধারণ চলে না।
আইএমএফের নীতিনির্ধারণ কাঠামো এখনো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী শক্তির ভারসাম্যের প্রতিচ্ছবি। উন্নত দেশগুলো (বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন) সংগঠনের ভোটের অধিকাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর অংশগ্রহণ প্রায় অনুপস্থিত। এই গণতান্ত্রিক ঘাটতি আজ দক্ষিণের রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে গভীর অসন্তোষ ও অবিশ্বাসের জন্ম দিচ্ছে।
বিকল্প প্রতিষ্ঠানের উত্থান
এই প্রেক্ষাপটে বিকল্প আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন- নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (NDB), এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (AIIB) এবং ল্যাটিন আমেরিকান রিজার্ভ ফান্ড (FLAR) নতুন করে আশার আলো দেখাচ্ছে। (NDB) এর সহায়তা তুলনামূলকভাবে শর্তমুক্ত এবং অংশগ্রহণমূলক। এখানে প্রতিটি দেশের ভোটের ও প্রতিনিধিত্বের সমান সুযোগ আছে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলো আরও আগ্রহী করে তুলেছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো এখন শুধু আর্থিক বিকল্প নয়- এরা এক নতুন উন্নয়ন দর্শনের বাহক। সেই দর্শনে উন্নয়ন নির্ধারিত হয় স্থানীয় বাস্তবতা ও প্রয়োজনকে কেন্দ্র করে, বাইরের চাপ বা রূঢ় শর্ত নয়।
বিশ্ব আজ বহুমেরু। অর্থনৈতিক শক্তি ছড়িয়ে পড়ছে নানা অঞ্চলে। এই বাস্তবতায় টিকে থাকতে হলে আইএমএফকে নিজস্ব কাঠামো ও দর্শনে রূপান্তর আনতে হবে। প্রয়োজন গভর্ন্যান্সের সংস্কার, নীতিনির্ধারণে সমান অংশগ্রহণ, এবং সর্বোপরি সহানুভূতিশীল ঋণ নীতিমালা।
আইএমএফ যদি সত্যিই বৈশ্বিক আর্থিক স্থিতিশীলতার অভিভাবক হতে চায়, তাহলে তাকে হতে হবে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়ভিত্তিক, এবং আঞ্চলিক বাস্তবতাসম্মত এটি শুধু আইএমএফের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার প্রশ্ন নয়; এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার ও সার্বিক উন্নয়নের প্রশ্ন।
জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি, ব্যাংক জালিয়াতি, করখেলাপি ও পাচার হওয়া অর্থ জব্দ কর তা বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার পরমর্শ দিয়েছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এ সময়ে এবারের বাজেট গতানুগতিক হতে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শনিবার (৩১ মে) রাজধানীর এফডিসিতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে দুর্নীতি, ব্যাংক জালিয়াতি, করখেলাপি ও পাচারকৃত অর্থ জব্দের মাধ্যমে বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করলে তা হতে পারে এবারের বাজেটের একটি অভিনব উৎস।’
‘গত সরকারের রেখে যাওয়া বিদেশি ঋণের চাপ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। এই সরকারের এই সময়ে অন্যতম সাফল্য ৫০০ কোটি (৫ বিলিয়ন) ডলার পরিশোধ করে বিদেশি ঋণের চাপ কমিয়ে আনা,’ যোগ করেন তিনি।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘এই ঋণ বিলিয়ন ডলার করে বছর বছর বাড়ছিল। সামগ্রিকভাবে এই সরকারের সাফল্যের জায়গাটা হলো বহির্খাত, রেমিট্যান্স, রপ্তানি, দায়-দেনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা, মজুদ বাড়ানো ও টাকার মূল্যমান স্থিতিশীল রাখা।’
তবে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট গতানুগতিক হতে যাচ্ছে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, ‘খেলাপি ঋণ আদায়, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত এবং করের আওতা বাড়ানোর মতো নতুন কোনো কিছু না থাকায় এবারের বাজেটে কোনো চমক থাকছে না।’
‘যে প্রকল্পগুলো সরকারের কাছে আছে, তা অতিমূল্যায়িত ও তার ৪০ শতাংশ ব্যয়ই ভুয়া। আগের যে প্রকল্পগুলো থেকে রক্তক্ষরণ হতো, সেগুলো অব্যাহত আছে,’ বলেন তিনি।
সিপিডির এই সম্মানীয় ফেলো বলেন, ‘রাজস্ব ব্যয় সঠিকভাবে না করলে করদাতাদের উৎসাহ থাকে না। আমাদের কর কাঠামো বৈষম্যনির্ভর। আমাদের বৈদেশিক খাতে কিছুটা স্থিতিশীলতা অর্জিত হলেও ব্যক্তি খাতে স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগ এখনো আশানুরূপ অর্জিত হয়নি।’
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি নামের একটি বিতর্ক সংগঠন এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
‘রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি করা আসন্ন বাজেটের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত’ শীর্ষক ছায়া সংসদে ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজকে পরাজিত করে ঢাকার বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজির বিতার্কিকরা বিজয়ী হন।
মন্তব্য