বিজ্ঞানশিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে ফৌজদারি দণ্ডবিধির দুটি ধারায় মামলা নিয়েছে মুন্সীগঞ্জ সদর থানা। তবে এর মধ্যে প্রথম ধারাটি নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। হৃদয় মণ্ডলের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে সেটি ওই ধারায় পড়ে কি না, তা নিয়েও তৈরি হয়েছে প্রশ্ন। ধর্ম অবমাননার মামলা নেয়ার আগে পুলিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেয়নি বলেও অভিযোগ উঠেছে।
মুন্সীগঞ্জ সদরের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০ মার্চ দশম শ্রেণির ক্লাসে বিজ্ঞানের বিভিন্ন দিক নিয়ে ক্লাসে আলোচনা করেন হৃদয় মণ্ডল। তিনি ধর্মকে একটি ‘বিশ্বাস’ এবং বিজ্ঞানকে ‘প্রমাণভিত্তিক জ্ঞান’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। গোপনে তার অডিও ধারণ করে এক শিক্ষার্থী।
ক্লাস শেষে শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন আহমেদের কাছে ওই শিক্ষকের নামে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ দেয়। প্রধান শিক্ষক কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে তিন দিনের মধ্যে শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে জবাব দিতে বলেন। তবে এর আগেই ২২ মার্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বহিরাগতরা জোটবদ্ধ হয়ে হৃদয় মণ্ডলের শাস্তির দাবিতে স্কুলে মিছিল বের করে।
বিদ্যালয় চত্বরের পাশের রিকাবীবাজার এলাকাতেও মিছিল হয়। প্রধান শিক্ষক পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের খবর দেন। স্কুলে গিয়ে তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেন। তবে ভেস্তে যায় সেই আলোচনা। একপর্যায়ে হৃদয় মণ্ডলকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর রাতেই হৃদয় মণ্ডলের বিরুদ্ধে মামলা করেন স্কুল সহকারী মো. আসাদ।
আসাদের মামলাটি ফৌজদারি দণ্ডবিধির ২৯৫ এবং ২৯৫(ক) ধারায় গ্রহণ করে মুন্সীগঞ্জ সদর থানা পুলিশ।
ফৌজদারি দণ্ডবিধির ২৯৫ ধারায় ‘কোনো শ্রেণিবিশেষের ধর্মের প্রতি অবমাননা প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে উপাসনালয়ের ক্ষতিসাধন করা বা অপবিত্র করার’ সংজ্ঞা ও শাস্তির প্রসঙ্গ রয়েছে।’ এতে বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি এ ধরনের অভিপ্রায়ে বা এ ধরনের অবগতি সহকারে জনগণের যে কোনো শ্রেণির উপাসনালয় বা ওই যে কোনো ব্যক্তিবর্গের পবিত্র বলে বিবেচিত কোনো বস্তু বিনষ্ট করেন, ক্ষতিগ্রস্ত করে অপবিত্র করেন যে, তার দ্বারা তিনি জনগণের যে কোনো শ্রেণির ধর্মের প্রতি অবমাননা করবে বা জনগণের যে কোনো শ্রেণির অনুরূপ বিনষ্টকরণ, ক্ষতিসাধন বা অপবিত্রকরণকে তাদের ধর্মের প্রতি অবমাননা বলে বিবেচনা করার সম্ভাবনা রয়েছে, সে ব্যক্তি যে কোনো বর্ণনার সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে- যার মেয়াদ দুই বছর পর্যন্ত হতে পারে বা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’
অন্যদিকে ২৯৫(ক) ধারায় ‘কোনো শ্রেণিবিশেষের ধর্ম বা ধর্মীয় বিশ্বাসকে আবমাননা করে ওই শ্রেণির ধর্মীয় অনুভূতিতে কঠোর আঘাত হানার উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃত বিদ্বেষাত্মক কাজের’ সংজ্ঞা ও শাস্তির প্রসঙ্গ রয়েছে।
এই ধারায় বলা হয়, ‘যে ব্যক্তি, বাংলাদেশের নাগরিকদের যে কোনো শ্রেণির ধর্মীয় অনুভূতিতে কঠোর অপমানিত করার অভিপ্রায়ে ইচ্ছাকৃত ও বিদ্বেষাত্মকভাবে উচ্চারিত বা লিখিত শব্দাবলির সাহায্যে বা দৃশ্যমান কোনো বস্তুর সাহায্যে ওই শ্রেণির ধর্ম বা ধর্মীয় বিশ্বাসকে অপমানিত করে বা অবমাননা করার চেষ্টা করে, সে ব্যক্তি যে কোনো বর্ণনার সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে যার মেয়াদ দুই বছর পর্যন্ত হতে পারে বা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’
২৯৫ ধারায় ‘উপাসনালয়ের ক্ষতিসাধন করা বা অপবিত্র করা’ সংক্রান্ত অপরাধের বিষয়টি থাকলেও শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের বিরুদ্ধে বাদীর অভিযোগে এ-সংক্রান্ত কোনো দাবি নেই। এ ছাড়া ধর্ম অবমাননার অভিযোগে মামলা গ্রহণের আগে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেয়া হয়নি।
মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক দাবি করছেন, ‘পেনাল কোডের ২৯৫ ধরায় কেউ মামলা করতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগে। তবে এর সঙ্গে ২৯৫(ক) ধারা যোগ হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগে না।’
এজাহারে ‘উপাসনালয়ের ক্ষতিসাধন করা বা অপবিত্র করার’ কোনো অভিযোগ না থাকলেও ওসির দাবি বাদীর অভিযোগ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ধারা প্রয়োগ করা হয়েছে।
ধারা প্রয়োগের বিষয়ে ওসির দাবি ঠিক নয় বলে মনে করছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। তিনি বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৬ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে, ব্লাসফেমির ধারায় মামলা করতে হলে সরকার বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে।’
ওসি বিষয়টি না জেনে বলছেন দাবি করে তিনি বলেন, ‘এখন পুলিশ বলছে, যে দুটি ধারায় মামলা হয়েছে, তার একটিতে অনুমোদন লাগে, আরেকটিতে লাগে না। এ ধরনের কথা বলার কোনো সুযোগ নেই।’
হৃদয় মণ্ডলের বক্তব্য নিয়ে ধর্ম অবমাননার মামলাই হতে পারে না বলে মনে করছেন এই আইন বিশেষজ্ঞ। বিষয়টির ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘এফআইআরে যে বক্তব্যগুলো এসেছে, এগুলো আদৌ ২৯৫ বা ২৯৫(ক) ধারায় পড়বে কি না এ নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। প্রিভিলেজ কমিউনিকেশন বলে আইনে একটা টার্ম আছে।
‘প্রিভিলেজ কমিউনিকেশন হচ্ছে যেমন ধরুন আমার কাছে আপনি একটা মামলা নিয়ে এসেছেন, সে মামলা রাষ্ট্রস্বার্থের বিরুদ্ধে হতে পারে, ব্যক্তিস্বার্থের বিরুদ্ধে হতে পারে, কোম্পানিস্বার্থের বিরুদ্ধে হতে পারে। আপনি আমার সঙ্গে যে বক্তব্য শেয়ার করবেন, সেটা হবে আপনার সঙ্গে আমার প্রিভিলেজ কমিনিউকেশন। এখানে আপনার নিরাপত্তার বিষয়ে আছে। এখন আমি চাইলেই আপনার বক্তব্য শুনে মামলা করতে পারব না।’
তিনি বলেন, ‘ঠিক একইভাবে আমরা যখন কোর্টে শুনানি করি, তখন কোনো ভুল কথা বলে ফেললে তার জন্য আমার বিরুদ্ধে কেউ মামলা দিতে পারবে না। তার কারণ আমি কোর্ট প্রসিডিংয়ের মধ্যে থেকেই বলেছি। চাইলে কোর্ট ব্যবস্থা নিতে পারবে, কিন্তু কেউ ক্ষুব্ধ হয়ে আমার বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে না।
‘একইভাবে জাতীয় সংসদেও বিভিন্ন কথাবার্তা হয়। সেখানে অনেক সময় আপত্তিকর কথাও হয়। সেখানে যে আলাপ-আলোচনা হয় তার পরিপ্রেক্ষিতে কিন্তু কারও বিরুদ্ধে ফৌজদারি বা দেওয়ানি মামলা করা যাবে না। তার কারণ তার প্রিভিলেজ আছে।’
ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘এখন কথা হলো একজন শিক্ষক যখন ক্লাস রুমে শিক্ষাদানের অংশ হিসেবে কোনো কথা বলছেন বা আলাপ করছেন, সেটাও তার একটা প্রিভিলেজ কমিনিউকেশন।
‘যদিও এটা কোনো আইনের মধ্যে নেই, কিন্তু সংবিধানের ১৫২ অনুচ্ছেদে আইনের ব্যাখ্যা দেয়া আছে। আইন বলতে দীর্ঘদিনের কাস্টম, ট্র্যাডিশনকেও কিন্তু আইনে স্বীকৃতি দেয়া আছে। কেবল সংসদের প্রণীত আইন, কোনো আদালতের রায় কিংবা অন্য কোনো কাগজ, দলিল, দস্তাবেজ হতে হবে তা নয়। দীর্ঘদিনের কাস্টম, ট্র্যাডিশন এগুলোও কিন্তু আইন হিসেবে গণ্য হবে।’
শিক্ষকরা পাঠদানের অংশ হিসেবে শ্রেণিকক্ষে কী বলবেন বা বলবেন না, সেটি কখনও মামলার বিষয়বস্তু নয় বলে মনে করেন এই আইন বিশেষজ্ঞ।
তিনি বলেন, ‘তবে সম্প্রতি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কিংবা তারও আগে ৫৭ ধারা, এ আইনগুলো আসার পর এক ধরনের উৎসাহ, ভিন্নরকমভাবে ব্যবহারের কারণে আইনগুলোর অপব্যবহার হচ্ছে। এটা অগ্রহণযোগ্য।’
২৯৫ ধারায় মামলা নেয়ার ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নেয়ার বাধ্যবাধকতার বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও নিশ্চিত করেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মো. ফারুক হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পেনাল কোডে স্পষ্ট লেখা আছে- ২৯৫ ধারায় যদি মামলা করতে হয়, তাহলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হবে।’
পুলিশ সদর দপ্তরের মাল্টিমিডিয়া অ্যান্ড পাবলিসিটি বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘২৯৫ যে জামিন অযোগ্য ধারা, সেই ধারায় মামলা করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগে।’
২৯৫ ও ২৯৫(ক) ধারা একসঙ্গে প্রয়োগ করা হলে এই অনুমতি নেয়ার বাধ্যবাধকতা শিথিল হয় কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলিন, ‘পারমিশন বলতে হলো অবগতির একটা বিষয় থাকে। কোনো ক্ষেত্রে পারমিশন মৌখিক হতে পারে, কোনো সময় লিখিত হতে পারে।
‘আসলে যেভাবে অনুমতির বিষয়টি সহজ হয়, সেভাবেই নেয়া হয়। অনেক সময় যদি মনে করে যে এটা পারমিশন লাগবে না, ইমিডিয়েট ঘটনাটির জন্য আইনশৃঙ্খলার ব্যত্যয় ঘটতে পারে, সে ক্ষেত্রে আগে মামলা নিয়েও অনুমতি নিতে পারে। বিষয়টা আসলে পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে।’
কোনো ব্যক্তি অপরাধ করেননি সে-সংক্রান্ত দণ্ডবিধির ধারা মামলায় প্রয়োগের সুযোগ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি। মোহাম্মদ কামরুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ল (আইন) এর স্পিরিট কী বলে সে বিষয়ে একজন আইন বিশেষজ্ঞ এবং পুলিশে যারা ল অফিসার আছেন তাদের মতামত না নিয়ে এ বিষয়ে কিছু বলা যাবে না।’
মামলায় অভিযোগ নিয়ে বিস্মিত বিজ্ঞানশিক্ষক হৃদয় মণ্ডল। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি যে স্কুলে শিক্ষকতা করি সেই স্কুলের কম্পাউন্ডের ভেতরে কোনো ধর্মীয় উপাসনালয়ই নেই। সেখানে আমি কী করে উপাসনালয় ভাঙচুর বা ভাঙচুরে উসকানি দেব! এ ছাড়া ধর্ম অবমাননার অন্য অভিযোগেরও কোনো ভিত্তি নেই।’
এই মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার দাবি জানান তিনি।
আরও পড়ুন:মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলায় ৭ (সাত) বছরের একটি শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে সৈয়দ সরাফত আলী নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
পিবিআইয়ের পরিদর্শক রিপন চন্দ্র গোপের নেতৃত্বে একটি অভিযানিক দল বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
৬০ বছর বয়সী সৈয়দ সরাফত আলী রাজনগর থানার করিমপুর চা বাগান এলাকার বাসিন্দা।
পিবিআই জানায়, শিশুটিকে বাঁশের বাঁশি বানিয়ে দেয়ার লোভ দেখিয়ে গত ১৪ এপ্রিল বেলা পৌনে দুইটার দিকে সৈয়দ সরাফত আলী তার বাড়ির পাশের বাঁশ ঝাড়ের নিচে নিয়ে যান। সেখানে তাকে মাটিতে ফেলে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি হলে তিনি আত্নগোপন করেন।
অসুস্থ অবস্থায় শিশুটিকে গত প্রথমে রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ভর্তি করে চিকিৎসা করানো হয়।
এ বিষয়ে শিশুটির বাবা বাদী হয়ে রাজনগর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।
পিবিআই মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক বলেন, ‘শিশু ধর্ষণের ঘটনায় অপরাধীর পার পাওয়ার সুযোগ নেই। আইনের আওতায় এনে তাদের বিচার করা হবে। মামলার খুঁটিনাটি বিষয় বিবেচনায় রেখে নিখুঁত তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে।’
আরও পড়ুন:মৌলভীবাজারে বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা নাশকতা মামলায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান ও জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এমএ মুহিতসহ ১৪ নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে তা নামঞ্জুর করে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
উচ্চ আদালতের মঞ্জুরকৃত জামিন শেষ হওয়ায় তারা আদালতে হাজির হন।
মৌলভীবাজার মডেল থানায় ২০২৩ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে করা দুটি রাজনৈতিক মামলার ১৪ জন আসামি হাজির হলে আদালত তাদের সবার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করে।
মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন- জেলা বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক মুহিতুর রহমান হেলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলে সাবেক সভাপতি ও পৌর কাউন্সিলর স্বাগত কিশোর দাস চৌধুরী, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আহমেদ আহাদ, যুবদলের এমএ নিশাদ, যুবদলের সিরাজুল ইসলাম পিরুন, স্বেচ্ছাসেবক দলের নুরুল ইসলাম, যুবদলের ওয়াহিদুর রহমান জুনেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের আব্দুল হান্নান, স্বেচ্ছাসেবক দলের রোহেল আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের মামুনুর রশিদ ও যুবদলের জাহেদ আহমেদ।
মৌলভীবাজার জেলা আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. ইউনুছ মিয়া জানান, ২০২৩ সালে নাশকতার অভিযোগে করা মামলায় মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন আসামিরা। আদালত শুনানি শেষে আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
কক্সবাজারের টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপে ঘরে ঢুকে এক নারী ও তার মেয়েকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
গত সোমবারের ঘটনায় বৃহস্পতিবার টেকনাফ মডেল থানায় অভিযোগটি করেন ছেনুয়ারা বেগম নামের নারী।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, গত সোমবার রাত দুইটার দিকে শাহপরীর দ্বীপের পূর্ব উত্তরপাড়া এলাকার নুর মোহাম্মদের স্ত্রী ছেনুয়ারা বেগমের ঘরের দরজা ভেঙে আয়ুব খানের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন প্রবেশ করেন। তারা ছেনুয়ারা ও তার মেয়ের হাত-পা বেঁধে মুখে কাপড় ঢুকিয়ে এলোপাতাড়ি লাথি ও ঘুষি মারেন। একপর্যায়ে মা ও মেয়ে উভয়কে বিবস্ত্র করেন আইয়ুব ও তার লোকজন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, হামলাকারীরা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে স্বর্ণ ও টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যান। যাওয়ার সময় তাদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের বিষয়ে কাউকে জানানো হলে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে চলে যান৷
এ বিষয়ে ছেনুয়ারা বেগম বলেন, ‘সন্ত্রাসী আয়ুব খানের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন যুবক আমার বাড়িতে ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রবেশ করে। পরে বাড়ি থেকে আমাকে জোরপূর্বক কয়েকজন লোক বের করে রশি দিয়ে বেঁধে রাখে এবং আমার মেয়েকে নির্যাতন করে স্বর্ণ ও টাকা নিয়ে যায়। তাদের বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া বিষয়ে কাউকে বললে মেরে ফেলা হবে বলে চলে যায়।’
থানায় অভিযোগের পর আয়ুব হুমকি দিয়েছে জানিয়ে ছেনুয়ারা বলেন, ‘সেই আয়ুব খান মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বলে, মামলা হলে কী হবে? জামিন নিয়ে বাহির হয়ে আমাকে আর আমার মেয়েকে মেরে ফেলা হবে বলে প্রাণনাশের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। এ বিষয়ে আমি টেকনাফ মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি।’
এ বিষয়ে সাবরাং ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রেজাউল করিম রেজু বলেন, ‘আমি বিষয়টি শুনেছি এবং সঠিক তদন্ত করে পুলিশকে সহযোগিতা করব।’
অভিযোগ তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ সোহেল বলেন, ‘আমি ঘটনার সত্যতা পেয়েছি এবং আমি মামলা করার জন্য ওসি বরাবর সুপারিশ করেছি।’
টেকনাফ মডেল থানার ওসি ওসমান গণি বলেন, ‘আরও গভীরভাবে তদন্ত করে দোষীদের গ্রেপ্তার করা হবে।’
আরও পড়ুন:সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের নতুন তিন বিচারক শপথ গ্রহণ করেছেন।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান তাদের শপথ পাঠ করান। খবর বাসসের
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. গোলাম রব্বানী পরিচালনায় শপথ অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতি, শপথ পাঠকারী তিন বিচারপতির পরিবারের সদস্য, অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, সম্পাদক শাহ মঞ্জুরুল হক এবং সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রিার কার্যালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বুধবার রাষ্ট্রপতি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৫(১)-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট বিভাগের তিন বিচারক ১) বিচারপতি মুহাম্মদ আবদুল হাফিজ ২) বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম ৩) বিচারপতি কাশেফা হোসেনকে আপিল বিভাগের বিচারক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন।
মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে পদ্মা নদীতে বুধবার রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সময় দুটি ড্রেজার জব্দ করেছে নৌ-পুলিশ।
মাওয়া নৌ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের খবর পেয়ে উপজেলার মেদিনীমণ্ডল ইউনিয়নের যশিলদিয়ায় বুধবার রাত দেড়টার দিকে পদ্মা নদীতে অভিযান চালানো হয়। ওই সময় নিয়ম অমান্য করে বালু উত্তোলন করায় ওই দুটি ড্রেজার জব্দ করা হয়।
তিনি আরও জানান, ড্রেজার জব্দ করার সময় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। জব্দকৃত ড্রেজার দুটির বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে সম্পত্তির লোভে মারধর করে আপন ভাতিজিকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের কুমুদপুর গ্রামে বুধবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নারীসহ তিনজনকে আট করেছে পলাশবাড়ী থানা পুলিশ।
প্রাণ হারানো তরুণীর নাম শারমিন আক্তার (২২), যিনি প্রয়াত শুক্কুর উদ্দিনের মেয়ে। বিয়ে বিচ্ছেদের পর শারমিন বাবার বাড়িতেই থাকতেন।
শারমিনের অভিযুক্ত চাচার নাম আবদুল খালেক।
তরুণীর পরিবার, স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ জানায়, প্রায় এক বছর আগে পিতৃহারা শারমিনকে কৌশলে বিয়ে দেন তার চাচারা। বিয়ের পর তালাক হলে সমঝোতায় দেনমোহরের টাকা শারমিনকে না দিয়ে আত্মসাৎ করেন তার বড় চাচা আবদুল খালেক। সেই টাকা ও শারমিনের নামে থাকা জমি নিয়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য চলছিল।
তারা আরও জানান, সম্পত্তি নিয়ে বুধবার বেলা ১১টার দিকে শারমিনের সঙ্গে তার চাচাদের বিরোধ বাধে। ওই সময় অভিযুক্তদের মারধরে গুরুতর আহত হন শারমিন। পরে আহত শারমিনকে অভিযুক্তরাই উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য গাইবান্ধার জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে জানান।
শারমিনের দুলাভাই রুহুল আমিন বলেন, ‘শারমিন ও শাম্মী আপন দুই বোন। আমার শ্বশুর (শারমিনের বাবা) মারা গেছেন। বাবা মারা যাওয়ার পর শারমিন আমার বাড়িতেই থাকত। পরে শারমিনের বাবলু নামের এক ফুফা ও তার জ্যাঠারা মিলে কৌশলে শারমিনকে আমার বাড়ি থেকে নিয়ে এসে বিয়ে দেন।
‘বিয়ের তিন-চার মাস পরই তালাক হয় শারমিনের। তখন থেকেই শারমিন আমার শাশুড়ির সাথে তার বাবার বাড়িতেই থাকত।’
শারমিনের মা এবং এ তরুণীর দুলাভাই রুহুল আমিনের অভিযোগ, শাম্মী ও শারমিনের নামে ৩২ শতাংশ জমি আছে। সেই জমি নেয়ার লোভে ক্ষিপ্ত হয়ে বিভিন্ন সময়ে ঝগড়া-বিবাদ, গালিগালাজসহ শারমিনকে মারধর করতেন তার চাচা আবদুল খালেক। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার শারমিনের কাছে জমি চেয়ে মারধর শুরু করেন তিনি। পরে আবদুল খালেকের ভাই আবদুল বারী, ভাতিজা রহমান ও ছকু নামের একজন মারধর করতে থাকেন। ওই সময় তাদের মারধরে শারমিন ঘটনাস্থলেই মারা যান।
মোবাইল ফোনে নিউজবাংলাকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে পলাশবাড়ী থানার ওসি কেএম আজমিরুজ্জামান বলেন, ‘মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় নারীসহ তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।
‘নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। মামলা হলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ওই সময় এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ‘প্রাথমিক সুরতহালে নিহতের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া গলাতে কোনো দাগ চোখে পড়েনি, তবে শ্বাসরোধের বিষয়টি ক্লিনিক্যালি পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না।’
আরও পড়ুন:নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার উত্তর পাকুরীয়া গ্রামের এক নাবালিকা ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা মামলায় এক মাদ্রাসা শিক্ষককে দশ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও এক মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড হয়েছে।
নওগাঁর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো. মেহেদী হাসান তালুকদার বুধবার এ রায় দেন। জরিমানার অর্থ ভুক্তভোগী ছাত্রীকে প্রদানের নির্দেশ দেন বিচারক।
দণ্ডাদেশ পাওয়া ওই শিক্ষকের নাম আবুল হাসান। ২৫ বছর বয়সী আবুল হাসান বদলগাছী উপজেলার উত্তর পাকুরীয়া গ্রামের বাসিন্দা ও একটি মাদ্রাসার আরবি বিষয়ের শিক্ষক।
আদালত সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ২৯ মে সকাল ছয়টার সময় নয় বছর বয়সী ওই মেয়েটি একই গ্রামের আরবি শিক্ষক আবুল হাসানের বাড়িতে আরবি পড়তে যায়। সে সময় অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীরা না আসায় তাকে একা পেয়ে ভয় দেখিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করেন তিনি। পরবর্তীতে ভুক্তভোগীর মা বদলগাছী থানায় অভিযোগ করলে তদন্ত শেষে ঘটনার সত্যতা মেলায় আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। আদালত আট জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বুধবার রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন।
এদিন আসামির উপস্থিতিতে তাকে দেয়া সাজার রায় পড়ে শোনানো হয় এবং শেষে তাকে জেলা কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন বিচারক।
রাষ্ট্রপক্ষে বিশেষ কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট আজিজুল হক ও আসামিপক্ষে অ্যাডভোকেট মামুনুর রশিদ মামলা পরিচালনা করেন। রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করে এবং আসামিপক্ষ উচ্চ আদালতে আপিল করার কথা জানায়।
মন্তব্য