সন্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে এক বাবা-মাকে পরামর্শ দিয়েছে হাইকোর্ট।
বিচারক বলেন, সন্তান যখন প্রাপ্ত বয়স্ক, তাকে জোর করা যাবে না। তাতে সে আরও বেশি অবাধ্য হয়ে যাবে। তার সঙ্গে জটিল সম্পর্ক না রেখে, বন্ধুর মত সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।
রোববার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এসএম মনিরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ পরামর্শ দেয়।
আদালতে আদেশের বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস।
উত্তর মুগদা এলাকায় ঘরে বন্দি করে রাখার অভিযোগ তুলে দায়ের করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে কানাডার নাগরিকত্ব পাওয়া এক তরুণীকে হাজির করতে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী রোববার দুপুরে মেয়েটিকে আদালতে হাজির করে মুগদা থানার পুলিশ। এ সময় মেয়েটির বাবা-মাও হাজির হন।
পরে আদালত মেয়েটির বক্তব্য শুনে। এ সময় উভয়পক্ষের আইনজীবীসহ উপস্থিত সবাইকে কোর্টের বাইরে থাকতে হয়।
মেয়েটির বক্তব্য শুনে পরে উভয়পক্ষের আইনজীবীসহ সবাইকে কোর্টে ডাকেন বিচারক।
এ সময় মেয়েটির বাবা আদালতের সামনে দাঁড়িয়ে অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলেন, ‘আমিও কানাডার নাগরিক। আমি সব সময় কানাডিয়ান হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। এখন তারা যদি আমার মেয়েকে নিয়ে যায় বা মেয়ে কানাডা চলে যায় এরপর তার যদি কোনো ক্ষতি হয়, তাহলে তার দায়িত্ব তাদের নিতে হবে।’
এসময় আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারক ফারাহ মাহবুব মেয়েটির বাবার কাছে জানতে চান আপনি কথা বলবেন নাকি আপনার আইনজীবী কথা বলবেন। জবাবে মেয়েটির বাবা বলেন, ‘আমার আইনজীবী কথা বলবেন, তবে আমি এইটুকুই বলবো।’
এ সময় রিটকারীদের আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন আদালতকে বলেন, ‘মেয়েটি কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে না। এখন যে পরিস্থিতিতে (বাবা-মার কাছে) আছে, সেখানে মেয়েটি থাকতে চাচ্ছে না। সে তার স্বাধীনতা পাচ্ছে না।’
রিটকারী আইনজীবীর বক্তব্য শুনে বিচারক বলেন, ‘সে (মেয়েটি) যেখানে জন্মগ্রহণ করেছে, যে পরিবেশে লেখাপড়া করেছে সে এখন সেটি চায়। এখানে তার বন্ধু নেই, তেমন পরিবেশ নেই। এখানে সে তার মতো পরিবেশ খুঁজে পায় না। এই পরিবেশে তাকে থাকতে বাধ্য করা হচ্ছে।’
বিচারক বলেন, ‘এখানে বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে তার কোনো অভিযোগ নেই। কিন্তু সে কানাডায় ফিরে যেতে চায়। এখন আমাদের কনসার্ন হলো সে কানাডায় ফিরে যাবে এজন্য যাবতীয় ব্যবস্থা বাবা-মাকে করে দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে তার যে টিউশন ফি জমা হয়েছে তা দিয়ে দিতে হবে। কানাডা যাওয়া পর্যন্ত এই প্রসেসে মেয়েটি তার বাবা-মার কাছে থাকবে। একইসঙ্গে মেয়েটির মোবাইল ফোন দিয়ে দিতে হবে। ল্যাপটপে ইন্টারনেট সংযোগ দিতে হবে।’
এ সময় মেয়েটির বাবা ও মাকে উদ্দেশ্য করে বিচারক বলেন, ‘সন্তান যখন প্রাপ্তবয়স্ক তাকে জোর করা যাবে না তাতে সে আরও বেশি অবাধ্য হয়ে যাবে। বাবা-মাকে সন্তানের সঙ্গে বন্ধুর মতো আচরণ করতে হবে। তার সঙ্গে জটিল সম্পর্ক না রেখে, বন্ধুর মতো সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।
বিচারক আরও বলেন, ‘এখনকার সন্তানদের চিন্তাধারা অন্য রকম। এখন বাচ্চারা আমাদের শেখায়। তারা এখন বাবা-মাকে গাইড করে। এটার মধ্যেও এক ধরনের মজা আছে।’
‘বিদেশে বড় হওয়া ছেলেমেয়েদের মনোভাব আমাদের এখানে বড় হওয়া সন্তানদের মতো না। ওর জন্ম ওখানে। ও এখন ওখানে (কানাডা) ফিরে যেতে চাইলে আটকানো যাবে না। সন্তানদের সঙ্গে বাবা ফ্রি থাকুন। সন্তান যেহেতু বড় তাকে ফ্রিডম (স্বাধীনতা) দিন। তার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ গড়ে তুলুন।’
এক পর্যায়ে মেয়েটির মা আদালতের কাছে কথা বলার অনুমতি চান।
আদালত অনুমতি দিলে সামনে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমিও মেয়েকে নিয়ে কানাডায় ফিরে যেতে চাই। কিন্তু ও আমাদের কথা শুনুক।’
এ সময় তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমি মা হিসেবে চাই না যে, আরেকটি ঐশী তৈরি হোক।’
এ সময় বিচারক মাকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, ‘ওর কোনো নেগেটিভ কথা বলবেন না। এখানে কেউ ওর সম্পর্কে নেগেটিভ শব্দ বলেনি। আশা করি আপনারাও বলবেন না। আমরা বলবো আপনারা ওর ইচ্ছাকে সম্মান দিন। ও ভালো একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, সেখানে ওকে পড়ান। ওর সঙ্গে আপনারা একটা ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলুন। ওকে কানাডায় যেতে বাধা দিবেন না। কোনো কিছু বাধ্য করলে ফল ভালো হয় না।’
পরে আদালত এ বিষয়ে রিটকারী আইনজীবীকে আবেদন সংশোধন করে পুনরায় দেয়ার নির্দেশ দিয়ে মঙ্গলবার পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন।
পরে মেয়েটির নাম ও ছবি দিয়ে কোনো ধরনের সংবাদ প্রকাশ না করতে গণমাধ্যমকেও বলা হয়।
মানবাধিকার সংগঠন ব্লাস্ট এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) দায়ের করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৬ এপ্রিল রাজধানীর উত্তর মুগদায় ১০ মাস ধরে ঘর বন্দি করে রাখা কানাডিয়ান নাগরিকত্ব পাওয়া এক তরুণীকে হাজির করার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।
রিট আবেদন সূত্রে জানা যায়, ১৯ বছরের ওই তরুণী জন্মসূত্রে কানাডার নাগরিক। কানাডার এক বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। তার বাবা-মাও কানাডায় থাকতেন। ১০ মাস আগে তার বাবা-মা বেড়ানোর কথা বলে তাকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। এরপর ওই তরুণী কানাডায় ফিরে যেতে চাইলেও তাকে যেতে দেয়া হয়নি।
রিট আবেদনে আরও বলা হয়েছে, ওই তরুণীর কাছ থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়া হয়েছে। তাকে তার নানি ও মা সব সময় বাসায় তালাবদ্ধ করে রাখেন। একপর্যায়ে ওই তরুণী ল্যান্ড ফোনে কানাডা সরকার ও ঢাকাস্থ কানাডিয়ান হাইকমিশনকে জানান যে, তাকে ঘরবন্দি করে রাখা হয়েছে। তিনি কানাডায় ফিরে যেতে চান।
এ ঘটনায় হাইকমিশন থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি মুগদা থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়। এরপরও কোনো কাজ না হলে কানাডিয়ান হাইকমিশনের পক্ষে মানবাধিকার সংগঠন ব্লাস্ট এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্র হাইকোর্টে রিট করে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার সারা হোসেন, তার সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস। আর বাবা মার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী অজিউল্লাহ।
আরও পড়ুন:প্রচ্ছায়া লিমিটেডের আট পরিচালকের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
দেশ ত্যাগে যাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে তারা হচ্ছেন: প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক বুশরা সিদ্দিক, শেহতাজ মুন্নাসী খান, শহিদ উদ্দিন খান, শাহিন সিদ্দিক, শফিক আহমেদ শফিক, পারিজা পাইনাজ খান, নওরিন তাসমিয়া সিদ্দিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারজানা আনজুম।
দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এই আদেশ দেন।
আবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা ও তাঁর ছোট বোনের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকী ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের নামে প্রায় ৫৯ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ সংক্রান্ত অভিযোগ অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সাত সদস্য বিশিষ্ট অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে।
প্রচ্ছায়া লিমিটেড নামীয় প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারহোল্ডারগণ যাতে সপরিবারে গোপনে দেশ ত্যাগ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি দেশত্যাগ করে বিদেশে পালিয়ে গেলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডপত্র প্রাপ্তিতে ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। তাছাড়া সার্বিক অনুসন্ধানকাজে বিঘ্ন সৃষ্টিসহ সমূহ ক্ষতির কারণ রয়েছে। এজন্য অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ যাত্রা রোধে আদালতের আদেশ দেয়া একান্ত প্রয়োজন। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়, খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সালাউদ্দিন, তার ভাই শেখ সোহেল ও শেখ জালাল উদ্দিন রুবেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিন দুদকের পক্ষে সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, বিগত সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অকল্পনীয় অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট এই ব্যক্তিরা তাদের নামে অবৈধভাবে অর্জিত সম্পত্তি হস্তান্তর করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন মর্মে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়।
তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে তদন্ত কার্যক্রম দীর্ঘায়িত বা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অভিযোগটি সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া একান্ত প্রয়োজন।
শুনানি শেষে আদালত তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন।
সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নামে রাজধানীর উত্তরায় থাকা একটি ফ্ল্যাট ও মোট ১৮ কাঠার তিনটি প্লট জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব দুদকের আবেদন মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন।
দুদকের আবেদন সূত্রে জানা যায়, হারুনের নামে থাকা পৃথক তিনটি প্লট রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত। এছাড়াও জব্দের আদেশ দেয়া ১৫৭০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটটিও উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত।
এদিন হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আবেদন করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন।
আবেদনে বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে শত শত কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে।
অনুসন্ধান চলাকালে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, তিনি এসব সম্পদ বিক্রয় বা হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন। এজন্য সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আদেশ দেয়া প্রয়োজন।
এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি হারুন অর রশিদের ১০০ বিঘা জমি, পাঁচটি ভবন ও দুটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে তার নামে বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি হিসাবে থাকা ১ কোটি ২৬ লাখ ৯০ হাজার ৪৬৮ টাকা অবরুদ্ধের আদেশ দেয়া হয়।
পাশাপাশি এদিনই তার ভাই এবিএম শাহরিয়ারের ৩০ বিঘা জমি জব্দ, ১১টি ব্যাংক হিসাব এবং তিনটি কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দেন ঢাকার আদালত।
রাজধানীর বনানীতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যা মামলার এজহারনামীয় আরও দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ বুধবার তাদের গাইবান্ধা ও চট্টগ্রাম থেকে পৃথক অভিযানে গ্রেপ্তার করে র্যাব ও পুলিশ।
এর মধ্যে এজাহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মো. মেহেরাজ ইসলামকে (২০) গাইবান্ধা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১৩ এবং ৩ নম্বর আসামি মাহাথির হাসানকে (২০) চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানা পুলিশ।
বিকেলে র্যাব সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মেহরাজ ইসলামকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। এছাড়া বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাসেল সারওয়ার মাহাথির হাসানের গ্রেপ্তারের বিষয়িটি দৈনিক বাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
র্যাব-১৩ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) বিপ্লব কুমার গোস্বামী জানান, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে জনা যায়, পাভেজ হত্যা মামলার এজহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মেহেরাজ ইসলাম গাইবান্ধায় অবস্থান করছে। পরে গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে গাইবান্ধা সদরের ভবানীপুর গ্রামে অভিযান চলানো হয়। অভিযানে এরশাদ হোসেন নামে এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে মেহরাজ ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে বনানী থানার ওসি মো. রাসেল সারওয়ার দৈনিক বাংলাকে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে পারভেজ হত্যা মামলার ৩ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি মাহাথির হাসানের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পরে গতকাল সকালে চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানায় আনা হয়েছে।
এর আগে গত রোববার রাতে পারভেজ হত্যা মামলায় তিন আসামিকে রাজধানীর মহাখালী ও আশপাশের এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা হলেন- আল কামাল শেখ ওরফে কামাল (১৯), আলভী হোসেন জুনায়েদ (১৯) এবং আল আমিন সানি (১৯)। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া গত সোমবার রাতে কুমিল্লার তিতাস উপজেলার মনাইরকান্দি গ্রাম থেকে হৃদয় মিয়াজি (২৩) নামে মামলার এজহারনামীয় আরেক আসামিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব ১ ও র্যাব-১১ ব্যাটালিয়নের যৌথ দল। পরে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তাকে বনানী থানায় হস্তান্তর করা হয়। সব মিলিয়ে পারভেজ হত্যা মামলায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকেল প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে একটি দোকানে ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রী সিঙ্গারা খাচ্ছিলেন। একই সময় পারভেজ তার বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার সময় হাসছিলেন। ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রীর অভিযোগ পারভেজ তাদের দেখে হাসছিলেন। তাদের মধ্যে একজন প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী পিয়াসের বান্ধবী। পরে বান্ধবীরা মুঠোফোনে খবর দিলে পিয়াস ও তার দুই বন্ধু মেহরাজ ও মাহথির এসে পারভেজের সঙ্গে তর্ক-বিতর্কে জড়ান। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।
একপর্যায়ে দুই পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টি মীমাংসার করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার পর পারভেজকে একদল যুবক ছুরিকাঘাত করে। তার বুকে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় পরদিন রোববার তার ভাই হুমায়ুন কবির প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বহিরাগতসহ আট জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত পরিচয় ২৫-৩০ জনের বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা করেন।
রাজধানীসহ সারাদেশে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ৬১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ৯০৬ জন আসামি এবং অন্যান্য ঘটনায় ৭০৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) ইনামুল হক সাগর এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, এসব অভিযানে বিভিন্ন ধরণের অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে- ১টি দেশীয় পাইপগান, ১টি একনালা বন্দুক, ১ রাউন্ড কার্তুজের খোসা ও ২ রাউন্ড অকেজো কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।
এর আগে গত সোমবার ২৪ ঘন্টায় সারাদেশে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ১ হাজার ৬৩১ জনকে। তার মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ১ হাজার ১৩ জন আসামি এবং অন্যান্য ঘটনায় ৬১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার আগে গত রোববার ২৪ ঘণ্টায় বিশেষ অভিযানে ১ হাজার ৫৩৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এ ধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি আগামীকাল।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দেখা যায় মামলাটি বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চে বিষয়টি আগামীকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে মূলতবি/নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে প্রধান বিচারপতি আলোচিত এই মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য এই হাইকোর্ট বেঞ্চে পাঠান।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এই ঘটনায় করা মামলার বিচার শেষে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত দুজনকে মৃত্যুদণ্ড, ছয়জনকে যাবজ্জীবন ও সাতজনকে খালাস দিয়ে রায় দিয়েছিলেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক বরখাস্ত লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত, সাগর দেব, রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানায় পুলিশের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
বিচারিক আদালতের রায়ের পরে নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের দণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। অন্যদিকে, দণ্ডিত আসামিরা আপিল ও জেল আপিল করেন।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলায় পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিবিতে থাকা নথি আগুনে পড়ে গেছে বলে দাবি করা হয়েছে, সঠিক নয়।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগে নতুন উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এমন তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচারিত সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথিপত্র ডিবি হেফাজতে পুড়ে যাবার তথ্যটি সঠিক নয়।’
‘সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তের সময় আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে কেউ কেউ ডিবির নথি পুড়ে যাওয়ার নিউজ করছেন, যা সঠিক না,’ যোগ করেন তিনি।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আদালতে আগুনে এসব নথি পুড়ে যাওয়ার কথা বলা হয়নি। এডিশনাল অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদ রউফ বলেছেন, ডিবির অধিকাংশ অফিসার বদলি হওয়ায় পুরনো নথি খুঁজে পাওয়া সময়সাপেক্ষ।’
‘এ জন্য রাষ্ট্রপক্ষ নয় মাস সময় চাইলে বাদীপক্ষ তিন মাস সময়ের কথা বলেন। পরবর্তীতে আদালত ছয়মাস সময় দেন,’ যোগ করেন তিনি।
এরআগে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ করা হয়েছে, সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার ডিবিতে থাকা নথি আগুনে পুড়ে গেছে বলে হাইকোর্টকে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আরসাদুর রউফ বলেন, ‘আমি এমন কোনো কথা কখনোই বলিনি। সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথি পোড়েনি। আমি বলেছি, এটা পুরনো মামলা।’
মন্তব্য