প্রতি বছরই নির্মাণ করা হয় হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ। প্রতি বছরই এ কাজে অনিয়ম ও গাফিলতির অভিযোগ ওঠে। উজান থেকে ঢলও নামে প্রতি বছর। বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যায় হাওরের ফসল। যে বছর বৃষ্টিপাত ও ঢল বেশি হয়, সে বছর ফসলের ক্ষতিও হয় বেশি।
হাওরের কৃষক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতা, প্রশাসনের কর্মকর্তা আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাঁধের কাজে অনিয়ম ও গাফিলতি কমলে ফসল কিছুটা রক্ষা পাবে। তবে ঢল বেশি হলে কেবল বাঁধ নিয়ে এখন আর ফসল রক্ষা করা যাবে না।
তাদের মতে, এ অঞ্চলের সবগুলো নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। এতে অল্প ঢলে নদী উপচে পানি হাওরে প্রবেশ করছে। হাওরের ফসল রক্ষায় তাই ব্যাপক আকারে নদী খনন প্রয়োজন।
শুক্রবার সুনামগঞ্জে হাওরের ফসলহানি দেখতে গিয়ে প্রাণিসম্পদ উপমন্ত্রীও ফসল রক্ষায় নদী খননের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।
দেশের সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সিলেট, মৌলভীবাজার ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ১৪ হাজার ৫৩৬ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে হাওরাঞ্চল বিস্তৃত। ৪১৪টি হাওর আছে এই অঞ্চলে। আর এসব হাওরের মধ্য দিয়েই প্রবাহিত হয়েছে মেঘনা, সুরমা, কুশিয়ারা, যাদুকাটা, পিয়াইন, বউলাই, কাতলাই, সোমেশ্বরী, খোয়াইসহ অন্তত ১৪টি নদী। তলদেশ ভরাট হয়ে সবগুলো নদীই এখন নাব্য হারিয়েছে। ফলে অল্প বৃষ্টি বা ঢলেই নদী উপচে আশপাশের এলাকায় পানি ছড়িয়ে পড়ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, এবার হাওরের সাতটি জেলায় মোট ৯ লাখ ৫০ হাজার ৪০৬ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে গত কয়েক দিনের বৃষ্টি ও ঢলে তলিয়ে গেছে অন্তত ১০ হাজার হেক্টর জমির ফসল।
বাঁধ সংস্কার, বাঁধে ভাঙন
বছরের বেশির ভাগ সময়ই পানির নিচে থাকে হাওর। ফলে শুকনো মৌসুমে বছরে একবারই এখানে ফসল হয়। রোপণ করা হয় বোরো ধান। তবে ধান পাকার আগেই মার্চের দিকে শুরু হয় বৃষ্টি।
হাওরাঞ্চলের ওপারেই মেঘালয়ের পাহাড়ি অঞ্চল। এশিয়ার সবচেয়ে বৃষ্টিপ্রবণ এলাকা চেরাপুঞ্জির অবস্থান সেই অঞ্চলেই। মার্চ-এপ্রিলের দিকে ওই এলাকায় প্রচুর বৃষ্টি হয়। ফলে ঢল নামে। এই ঢল গড়িয়ে নামে হাওরের নদীগুলো দিয়ে। এতে দেখা দেয় আগাম বন্যা। হাওরে প্রবেশ করে বন্যার পানি। তলিয়ে যায় ফসল।
আগাম বন্যার হাত থেকে হাওরের বোরো ফসল রক্ষায় ষাটের দশকে নির্মাণ করা হয় ফসলরক্ষা বাঁধ। এই বাঁধগুলো নদীর পানি হাওরে ঢুকতে দেয় না। ফলে রক্ষা পায় বোরো ফসল। প্রতি বছরই এসব বাঁধ সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ করা হয়। তবে প্রায় প্রতি বছরই পাহাড়ি ঢলে হাওরের বাঁধে ভাঙন দেখা দেয়।
হাওর নিয়ে কাজ করা একটি বেসরকারি সংস্থা বলছে, ১৯৯৯ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত অকালবন্যায় বাঁধ ভেঙে হাওরের প্রায় ৫৮৭ কোটি ১২ লাখ ২৮ হাজার টাকার বোরো ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
তবে বাঁধ ভেঙে সবচেয়ে বড় ফসলহানির ঘটনা ঘটে ২০১৭ সালে। সরকারি হিসাবেই ওই বছর বাঁধ ভেঙে সুনামগঞ্জের ১৫৪টি হাওরের ২ লাখ ২৩ হাজার ৮২ হেক্টর জমির বোরো ফসল তলিয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১ লাখ ৬১ হাজার হেক্টর জমির ফসল। তবে কৃষকদের হিসাবে এই ক্ষতির পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ।
এ বছরও ঢলে বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। দেশের মধ্যে সবেচেয় বেশি হাওর রয়েছে সুনামগঞ্জে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও এ জেলায় সবচেয়ে বেশি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, এ বছর সুনামগঞ্জে ১২৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) মাধ্যমে ৫৩২ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১২৪ কোটি টাকা।
গত এক সপ্তাহে ঢল ও বৃষ্টিতে সুনামগঞ্জের অন্তত ১০টি বাঁধে ভাঙন ও ফাটল দেখা দিয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে, এ পর্যন্ত সুনামগঞ্জে তলিয়ে গেছে প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমির ধান। আর হাওরের সাত জেলা মিলে তলিয়েছে ১০ হাজার হেক্টর।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুনামগঞ্জের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, ‘শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অকালবন্যায় সুনামগঞ্জের ৪ হাজার ৯০০ হেক্টর জমির ধান তলিয়ে গেছে। পানি বাড়লে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।’
বাঁধ নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ
প্রতি বছরই বাঁধ নির্মাণ নিয়ে অনিয়ম ও গাফিলতির অভিযোগ ওঠে। ২০১৭ সালে ফসলহানির পর অনিয়মের বিষয়টি সবচেয়ে আলোচনায় আসে। বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতি করা ঠিকাদারদের চিহ্নিত করে মামলাও করে দুদক।
ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে ব্যাপক ক্ষোভ ও অভিযোগের মুখে সেই বছরই বাঁধ নির্মাণে ঠিকাদারি ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয় পাউবো। পরের বছর থেকে স্থানীয় উপকারভোগীদের নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন করে বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। জেলা পর্যায়ে পিআইসির সভাপতি থাকেন জেলা প্রশাসক আর উপজেলা পর্যায়ে ইউএনও। আর সদস্য সচিব হিসেবে থাকেন পাউবোর স্থানীয় কর্মকর্তা।
তবে বাঁধ নির্মাণে এমন মৌলিক পরিবর্তন আনলেও অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এখনও কমেনি। কোনো বছরই বাঁধ নির্মাণকাজ যথাসময়ে শেষ হয়নি।
এ ছাড়া দায়সারা গোছের কাজেরও অভিযোগ আছে। তবে গত কয়েক বছর বৃষ্টিপাত ও ঢল তুলনামূলক কম হওয়ায় বাঁধ নিয়ে তেমন আলোচনা হয়নি। তেমন ফসলহানির ঘটনাও ঘটেনি।
পাঁচ বছরের মাথায় এ বছর আবার হাওরে দেখা দিয়েছে অকালবন্যা। বাঁধ ভেঙে ঢুকছে পানি। তলিয়ে যাচ্ছে ফসল। তাই বাঁধ নির্মাণ নিয়ে দুর্নীতির বিষয়টি নিয়ে আবারও আলোচনা শুরু হয়েছে।
সুনামগঞ্জের শনির হাওরের কৃষক রইসুল ইসলাম বলেন, ‘এবার ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাঁধের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মার্চ শেষেও অনেক বাঁধের কাজ শেষ হয়নি। শেষ সময়ে তাড়াহুড়ো করে দায়সারা কাজ হয়েছে। আর কাজ শেষ হতে না হতেই বৃষ্টি আর ঢল শুরু হয়েছে। এতে নরম মাটির বাঁধগুলো ভেঙে যাচ্ছে।’
বাঁধের কাজ শেষ হতে দেরি হওয়ার বিষয়টি নিয়ে হাওর ও পরিবেশ উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা বলেন, ‘এবার পিআইসি গঠনেই দেরি হয়েছে। ফলে কাজও হয়েছে দেরিতে। যথাসময়ে কাজ শুরু হয়নি, কাজও যথাযথ হয়নি।’
পিআইসি গঠনে দেরি হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘স্থানীয় উপকারভোগীদের দিয়ে পিআইসি গঠনের কথা থাকলেও আদতে স্থানীয় সাংসদরাই নিজেদের লোকদের নিয়ে কমিটি গঠন করে দেন। সাংসদদের সঙ্গে সমন্বয় ও তাদের লোক বাছাইয়েই দেরি হয়।’
তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে উন্নয়ন বোর্ডের সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৗশলী মো. শামসুদ্দোহা বলেন, ‘এবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের কারণে পিআইসি গঠনে কিছুটা দেরি হয়েছে। কারণ স্থানীয় লোকজন ও প্রশাসন নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত ছিল।’
প্রয়োজন নদী খনন
হাওরে বাঁধের কাজ শুরু হওয়ার কথা ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে। কিন্তু সুনামগঞ্জের অনেক হাওরের পানি এই সময়ের মধ্যে নামেইনি। কয়েক বছর ধরেই এমনটি হচ্ছে। হাইল হাওর, শনির হাওরসহ কয়েকটি হাওরের কিছু জায়গায় জানুয়ারি পর্যন্ত পানি ছিল।
পানি না নামায় যথাসময়ে বাঁধ নির্মাণকাজ শুরু করা যায়নি বলে দাবি করেছেন পাউবোর নির্বাহী প্রকৗশলী মো. শামসুদ্দোহা।
যথাসময়ে পানি না নামার কারণ সম্পর্কে হাওর ও পরিবেশ উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা বলেন, ‘ঢলে পানির সঙ্গে বালিও নামে। এই বালি জমে নদীর নাব্যতা কমে গেছে। ফলে নদী হাওরের পানি টানতে পারছে না। এতে শুষ্ক মৌসুমেও হাওরে পানি জমে থাকছে।
হাওরে এটি নতুন সংকট জানিয়ে কাসমির বলেন, সাত-আট বছর ধরে এমনটি হচ্ছে। দিন দিন এ সমস্যা তীব্র হচ্ছে।
একদিকে শুষ্ক মৌসুমেও হাওরে পানি আটকে থাকছে, অন্যদিকে মার্চের দিকে এক-দুদিনের ঢলেই বাঁধ উপচে হাওরে পানি প্রবেশ করছে বলে জানান তাহিরপুরের উপজেলা চেয়ারম্যান করুণাসিন্ধু পাল।
তিনি বলেন, ‘বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম তো আছেই। বাঁধ ভাঙার পাশাপাশি অনেক জায়গায় বাঁধ উপচেও হাওরে পানি ঢুকছে।’
নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় এমনটি হচ্ছে জানিয়ে পুরো হাওর এলাকার নদীগুলো একসঙ্গে খননের দাবি করেছেন করুণাসিন্ধু পাল ও কাসমির রেজা।
কাসমির রেজা বলেন, ‘এখন আর কেবল বাঁধ দিয়ে ফসল রক্ষা সম্ভব নয়। উজান থেকে ভাটি পর্যন্ত নদী খনন করতে হবে। ভৈরবে মেঘনা নদীতে বড় বড় চর পড়েছে। সেগুলোও খনন করতে হবে। কারণ সুনামগঞ্জ থেকে সুরমার পানি মেঘনায় গিয়ে মেশে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুনামগঞ্জের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোমও মনে করেন, নদী খনন করা না হলে হাওরের ফসল বাঁচানো সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, ‘নদীগুলো দ্রুত খনন করা প্রয়োজন। একটু করলে হবে না, পুরো নদী একসঙ্গে খনন করতে হবে।’
বাঁধ একটি সাময়িক ব্যবস্থা উল্লেখ করে হাওর গবেষক ড. হালিমদাদ খান বলেন, ‘বাঁধ দিয়ে ফসল পুরোপুরি রক্ষা সম্ভব নয়। আগে এই ঢলের পানি নদী দিয়ে মেঘনা হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশে যেত। এখন নদী ভরাট হয়ে গেছে। ফলে পানি নদী উপচে হাওরে ঢুকে পড়ছে। প্রতি বছরই হাওরে পানি ঢুকছে। যে বছর ঢল বেশি নামে, সে বছর পানি বেশি ঢোকে। কেবল বাঁধ দিয়ে এই পানি আটকানো যাবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের নিজেদের যেসব ধানের জাত ছিল, সেগুলো বৃষ্টি শুরুর আগেই তোলা যেত। কিন্তু এতে ফলন কম হয়। এখন হাইব্রিড জাতের ধানে ফলন বেশি হয়। তবে সময়ও বেশি লাগে। তাই হাওরের উপযোগী নতুন জাত উদ্ভাবন করতে হবে কৃষি বিজ্ঞানীদের।
ফসল রক্ষায় নদী খননের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেট বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এস এম শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সুরমাসহ এই এলাকার বেশির ভাগ নদীই নাব্য হারিয়েছে। এগুলো খনন করা প্রয়োজন। নদী খননের জন্য গত বছর আমরা ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। সম্ভাব্যতা যাছাই শেষে এটি এখন মন্ত্রণালয়ের বিবেচনাধীন।’
নদী খননের পাশাপাশি কীভাবে আরও টেকসই বাঁধ নির্মাণ করা যায় সে বিষয়ে আরও ভাবতে হবে বলে মনে করেন শহিদুল ইসলাম।
এদিকে সুনামগঞ্জের হাওরের পরিস্থিতি পরিদর্শনে এসে শুক্রবার পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম বলেছেন, ‘হাওরের নদীগুলো খননে উদ্যোগ নেয়া হবে এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে বাঁধের স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করা হবে।’
আরও পড়ুন:কুমিল্লা নাঙ্গলকোটে ইউপি সদস্য আলাউদ্দিনকে বাড়ির সামনে থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামিকে ঢাকার হাতিরঝিল রেল মগবাজার রেলগেট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। শুক্রবার দিনগত রাতে অভিযানটি শেষ করে র্যাব।
গ্রেফতারকৃত আসামী শেখ ফরিদ (৪৫) নাঙ্গলকোট উপজেলার বক্সগঞ্জ আলীয়ারা গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে।
শনিবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে কুমিল্লা অশোকতলা এলাকায় র্যাব অফিসে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন
র্যাব ১১ এর কুমিল্লার কোম্পানি কমান্ডার মেজর সাদমান ইবনে আলম।
মেজর সাদমান জানান, নাঙ্গলকোটের আলিয়ারা গ্রামে দুই পরিবারের মধ্যে বংশপরম্পরায় একটি বিরোধ চলে আসছিল। গেল গেল ২৫ জুলাই গরুর ঘাস খাওয়া কে কেন্দ্র করে দুই পরিবারের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
সেদিন দফায় দফায় সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১৫ জন গুলিবিদ্ধসহ ২৫ জন আহত হয়।
এ ঘটনার রেশ ধরে গেলো ৩ আগস্ট দুপুরে আলিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন তার চাচাতো ভাইয়ের জানাজার নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা তাকে একটি সিএনজিতে তুলে নিয়ে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে।
পরে এ ঘটনায় ৫ আগস্ট নিহতের ছেলে বাদী হয়ে নাঙ্গলকোট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বিপদসীমা অতিক্রম করায় নির্ধারিত সময়ের আগেই খোলা হয়েছে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সব জলকপাট। সোমবার (৫ আগস্ট) রাত ১২টা ২ মিনিটে হঠাৎ পানি বাড়তে থাকায় জরুরি ভিত্তিতে কেন্দ্রের ১৬টি জলকপাট ৬ ইঞ্চি করে খুলে দেওয়া হয়।
কর্ণফুলি পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান জানান, রাতে লেকের পানির উচ্চতা ১০৮.০৫ ফুট ছুঁয়ে গেলে বিপদসীমা অতিক্রম করে। এতে প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলি নদীতে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, “প্রথমে সোমবার (৪ আগস্ট) বিকেল ৩টায় পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা পরের দিন মঙ্গলবার সকাল ৯টায় জলকপাট খোলার ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ অতিরিক্ত পানি প্রবাহের কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই সোমবার রাতেই জলকপাট খুলে দিতে হয়। তবে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
তিনি আরও জানান, কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিট বর্তমানে সচল রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে আরও ৩২ হাজার কিউসেক পানি লেক থেকে কর্ণফুলিতে গিয়ে পড়ছে। সবমিলিয়ে পানি নিঃসরণের হার এখন প্রতি সেকেন্ডে ৪১ হাজার কিউসেক।
ভাটি এলাকার জনসাধারণের উদ্দেশে তিনি বলেন, “পানি প্রবাহ বাড়লেও আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে, এবং প্রয়োজনে আমরা আগেভাগেই ব্যবস্থা নেব।”
স্থানীয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও এ বিষয়ে আগেই অবহিত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন কর্তৃপক্ষ।
গাজীপুরের কালীগঞ্জে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ’ অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে শপথ গ্রহণ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশব্যাপী আয়োজিত ‘লাখো কণ্ঠে শপথ পাঠ’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
শনিবার (২৬ জুলাই) সকালে উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে এক ভাবগম্ভীর পরিবেশে এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই মাসে নিহত শহীদদের স্মরণে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। মোনাজাতে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং দেশের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করা হয়।
উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই শপথ পাঠ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তনিমা আফ্রাদ। তিনি উপস্থিত সকলকে শপথ বাক্য পাঠ করান। দেশের সংবিধান ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখা, দুর্নীতি ও সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করার অঙ্গীকার করেন অংশগ্রহণকারীরা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইউএনও তনিমা আফ্রাদ বলেন, "জুলাই পুনর্জাগরণ কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি আমাদের চেতনার বাতিঘর। সেই শহীদদের আত্মত্যাগ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। আজকের এই সম্মিলিত শপথ হোক দেশ ও মানুষের কল্যাণে নিজেদের উৎসর্গ করার একটি নতুন অঙ্গীকার। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক পর্যন্ত সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে পারে।"
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসনিম উর্মি, কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলাউদ্দিন, উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা নেতৃবৃন্দ সহ উপজেলায় কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীবৃন্দ।
বক্তারা জুলাইয়ের শহীদদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে বলেন, তাদের দেখানো পথ অনুসরণ করে দেশের উন্নয়নে একযোগে কাজ করতে হবে। উপজেলা প্রশাসনের এই সফল আয়োজনে সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিকে এক নতুন মাত্রা দেয়। এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটি কালীগঞ্জের মানুষের মধ্যে দেশ ও সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ এবং নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করবে বলে আশা প্রকাশ করেন আয়োজকরা।
ফেনীতে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। এর সঙ্গে দেখা দিয়েছে নতুন এক আতঙ্ক। বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেতে মানুষের বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছিল নানা প্রজাতির সাপ। এখন ঘরে ফিরলেও সাপ আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে। এরই মধ্যে পরশুরামে বিষধর সাপের কামড়ে রোকেয়া আক্তার রিনা (৫০) নামে এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকাল ৫টার দিকে ফেনীর পরশুরামের পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত রিনা পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম শহীদের স্ত্রী। তার এক ছেলে দুই মেয়ে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বন্যার পানি শুকিয়ে গেলে রান্না করার জন্য রান্নাঘরে গেলে সেখানে একটি অজ্ঞাত বিষধর সাপ রিনাকে কামড় দেয়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এরপর ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের স্বামী শফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে রিনা রান্না ঘরে যায়। এ সময় রান্নাঘরের একটি গর্ত থেকে বিষধর একটি সাপ বের হয়ে তার পায়ে কামড় দেয়। তার চিৎকার শুনে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্স নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার কোনো চিকিৎসা না হওয়ায় ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার রেদোয়ান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, হাসপাতালে আনার আগেই ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছিল।
টানা ৩ দিনের বৃষ্টিতে বেনাপোল বন্দর এলাকায় জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বন্দর অভ্যন্তরের অনেক স্থানে হাটু পানি জমায় মারাত্বক ভাবে ব্যহত হচ্ছে পণ্য খালাস প্রক্রিয়া। যানবাহন ও নিরাপত্তাকর্মীদের চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ায় বন্দরের ৯.১২.১৫.১৬ ও ১৮ নম্বর সেড থেকে লোড আনলোড বন্ধ হয়ে আছে।
ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই বন্দরে হাটু পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে থাকে। কয়েক বছর ধরে এ দূর্ভোগ হলেও নজর নাই বন্দর কর্তৃপক্ষের। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, রেলকর্তৃপক্ষ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় পানি নিষ্কাসনে বাধা গ্রুস্থ্য হচ্ছে।
তবে এসব শেড ও ওপেন ইয়ার্ড অধিকাংশই দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে তৈরী হয়নি। বন্দর সড়কের উচ্চতার চেয়ে পণ্যগারগুলো নিচু হওয়ায় একটু বৃষ্টিপাত বেশি হলে পানি নিষ্কাষনের অভাবে পণ্যগার ও ইয়াডে জলবদ্ধতা তৈরী হয়। এতে পানিতে ভিজে যেমন পণ্যের গুনগত মান নষ্ট হয় তেমনি চলাচলের বিঘ্ন ঘটছে। তবে আজ সকাল থেকে সেচ যন্ত্র চালিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বেনাপোল বন্দর পরিচালক শামিম হোসেন জানান, বন্দরের জলবদ্ধতা প্রতি বছরে তৈরী হয়। বিশেষ করে রেল বিভাগ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় সমস্যার সন্মুখিন হতে হচ্ছে। বন্দরের পানি নিষ্কাসন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়েছে। তবে দ্রুত এ অবস্থা কাটিয়ে তুলতে পাশ্ববর্তী হাওড়ের সাথে বন্দরের ড্রেন তৈরীর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রেরক: রাশেদুর রহমান রাশু, বেনাপোল যশোর ।
কক্সবাজারের চকরিয়ায় গত রোববার (৬ জুলাই) মালুমঘাট বাজার থেকে পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে এক যুবক পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়া সে যুবক সাজ্জাদ হোসেন (২০) কে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ কলাতলীর একটি আবাসিক হোটেল থেকে আটক করে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দিবাগত রাত তিনটায় কক্সবাজারের একটি আবাসিক হোটেল (ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্ট) অভিযান পরিচালনা করে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ। রাত প্রায় তিনটায় নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ওই হোটেলের একটি কক্ষ থেকে তাকে আটক করা হয়।
চকরিয়া থানা পুলিশের বিশেষ নজরদারি ও কক্সবাজারের গোয়েন্দা পুলিশের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে আসামি সাজ্জাদ হোসেন কে আটক করতে সক্ষম হয় কক্সবাজার ডিবি পুলিশ।
এবিষয়ে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, পলাতক আসামি সাজ্জাদ কে কক্সবাজার ডিবি পুলিশ আটক করেছে। প্রাথমিকভাবে সদর মডেল থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর চকরিয়া থানায় নিয়ে আসা হবে। তার বিরুদ্ধে একটি পুলিশ এসল্ট মামলা করা হয়েছে।
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে করতোয়া নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে যৌথবাহিনীর অভিযানে একজনকে দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাত ৯টার দিকে শালডাঙ্গা ইউনিয়নের ধুলাঝাড়ি বাজারের করতোয়া নদীসংলগ্ন এলাকায় অভিযানটি চালানো হয়।
দেবীগঞ্জ সেনা ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার মেজর জুবায়ের হোসেন সিয়ামের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ও দেবীগঞ্জ থানা পুলিশের সমন্বয়ে এ অভিযান পরিচালিত হয়।
অভিযানে বালু উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত দুইটি ট্রাক্টরসহ চালক রাজু ইসলাম ও শান্ত আহমেদকে আটক করা হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসান ঘটনাস্থলে এসে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।
আদালতের রায়ে রাজু ইসলামকে বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনের ধারা লঙ্ঘন করায় দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়, অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন বিচারক। তবে রাজু ইসলাম অর্থদণ্ডের অর্থ পরিশোধ করায় ট্রাক্টর দুটি ছেড়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় প্রশাসন জানায়, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন রোধে যৌথবাহিনীর অভিযান চলমান থাকবে।
মন্তব্য