বাংলাদেশ পুলিশের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে শেয়ার করা বিতর্কিত একটি পোস্টের স্ক্রিনশট ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
টিপ নিয়ে এক কলেজশিক্ষককে পুলিশের কনস্টেবলের হেনস্তার অভিযোগে দেশজুড়ে তুমুল সমালোচনার মধ্যে টিপ নিয়ে ফেসবুকে বিতর্কিত পোস্টও দিয়েছেন অনেকে। এ ধরনেরই একটি পোস্ট পুলিশের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে শেয়ার হয়েছে বলে দাবি করছেন অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী।
পোস্টটির শুরুতে লেখা (পোস্টের বানান অপরিবর্তিত) , ‘কপালে টিপ হযরত ইব্রাহিম (আ:) এর যুগে পতিতা সনাক্তের চিহ্ন হিসেবে প্রচলন হয়, এই যুগের চরিত্রহীনারাও সেই চিহ্ন বহন করছে...।’
এ ধরনের লেখার সঙ্গে টিপ পরা এক নারীর ছবিও যুক্ত করা হয়েছে।
মো. শাহিন নামের আইডির এ পোস্টটি আদৌ পুলিশের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় বাহিনীর ফেসবুক পেজে শেয়ার করা হয়েছে কি না তা যাচাই করেছে নিউজবাংলা।
পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন, তাদের ভেরিফায়েড পেজ থেকে শনিবার পোস্টটি শেয়ার হয়। তবে ভুল করে এটা হয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই শেয়ারটি রিমুভ করা হয়।
সিটি সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশনের উপপুলিশ কমিশনার আ ফ ম আল কিবরিয়া শনিবার বিকেলে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওটা ভুলে পোস্ট হয়ে গিয়েছিল। আমরা বিষয়টি মনিটর করছি। ওটা সরিয়ে নেয়া হয়েছে অলরেডি।’
তিনি জানান, পেজটি দেখভালের দায়িত্ব পুলিশ সদর দপ্তরের। পোস্টটি নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরকে জানানো হয়।
উপপুলিশ কমিশনার আ ফ ম আল কিবরিয়া বলেন, ‘পুলিশ হেড কোয়ার্টার আমাদের জানায়, দুষ্ট লোক খুঁজতে গিয়ে ভুলে পোস্টটি শেয়ার হয়ে গিয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের কেউ আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তবে এক কর্মকর্তা জানান, ঘটনাটি কীভাবে ঘটল তা তদন্ত করা হচ্ছে।
এদিকে ফেসবুকে পপুলার সার্চে উঠে এসেছে মো. শাহিন (Md Shahin)। তবে তার প্রোফাইলটি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
আরও পড়ুন:সিলেটের বন্যা নিয়ে ছড়ানো হচ্ছে একের পর এক গুজব। এবার প্রধানমন্ত্রীর সফর নিয়েও গুজব ছড়ানো হচ্ছে।
বন্যার ভয়াবহতা পরিদর্শনে মঙ্গলবার সকালে সিলেট আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হেলিকপ্টারে বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন শেষে তিনি সিলেট সার্কিট হাউসে রাজনীতিবিদ, প্রশাসনের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর দুপুরে তিনি হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় ফিরে যান।
প্রধানমন্ত্রীর এই সফর নিয়েও ফেসবুকে গুজব ছড়াতে দেখা গেছে অনেককে। প্রধানমন্ত্রীর সফরের কারণে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলেও ফেসবুকে প্রচার করছেন অনেকে।
তবে এমন প্রচারণার সত্যতা নেই বলে জানিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। তাদের দাবি, সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে যান চলাচল বন্ধ করা হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার স্বার্থে তার আসা-যাওয়ার সময়ে নগরের কিছু এলাকায় যান চলাচল বন্ধ ছিল।
মাসুম বিল্লাহ ভূইয়া নামে একজন ফেসবুকে লেখেন, ‘আজ পিএম এর আগমন উপলক্ষ্যে সকাল থেকে সিলেটে বা সিলেট হয়ে সুনামগঞ্জে যাওয়ার রোড অফ করে দিয়েছে। কোনো স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ত্রাণ বা খাবার নিয়ে প্রবেশ করতে পারে নাই। একদিকে খাবারগুলো নষ্ট হচ্ছে আরেকদিকে লক্ষ লক্ষ মানুষ অভুক্ত থাকবে। আপনি আজ হেলিকপ্টার করে বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ শেষে বললেন বন্যা নিয়ে দুশ্চিন্তার কোন দরকার নাই। তবে পদ্মা সেতু নিয়ে কত আয়োজন। অথচ কোটি মানুষ পানিবন্দি!!
‘জাতির সাথে এই কেমন রসিকতা?' ফেসবুকে এমন তথ্য ছড়িয়েছেন আরও অনেকে।
মঙ্গলবার সিলেট থেকে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে সুনামগঞ্জে যান সিলেট বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক নিরঞ্জন সরকার। সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক আছে জানিয়ে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি আজ দুপুরে গাড়িতে করে ত্রাণ নিয়ে সুনামগঞ্জ এসেছি। এই সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। কোথাও কোনো বাধা পাইনি।’
সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে যান চলাচল বন্ধ করা হয়নি জানিয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) বিএম আশরাফ উল্লাহ তাহের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর আসা ও যাওয়ার সময় তার নিরাপত্তার স্বার্থে ওসমানী বিমানবন্দর থেকে সার্কিট হাউস পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ ছিল। এতে এই সড়কের সঙ্গে লিংক রোডগুলোতেও যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। তবে এটি খুব বেশি সময়ের জন্য নয়, সব মিলিয়ে ঘণ্টা দুয়েক বন্ধ রাখা হয়েছিল।’
সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক বন্ধ রাখার তথ্য গুজব উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। তবে কেউ নগরের ভেতর থেকে সার্কিট হাউস-বিমানবন্দর সড়ক হয়ে সুনামগঞ্জে যেতে চাইলে তাকে কিছু সময়ের জন্য সমস্যায় পড়তে হতে পারে।
এখন সব সড়কেই যান চলাচল স্বাভাবিক আছে বলে বিকেলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
তবে নগরের ভেতরে চলাচলে সমস্যায় পড়তে হয়েছে জানিয়ে ত্রাণ বিতরণে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী আব্দুল কাদির বলেন, ‘সকালে একটি টিম নগরের কালিঘাট থেকে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে সদর উপজেলায় যেতে চেয়েছিলাম। তবে প্রধানমন্ত্রীর সফরের কারণে আমরা গাড়ি নিয়ে ওই দিকে যেতে পারিনি। দুপুরের পর আমাদের গাড়ি নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে যাওয়ায় আমরা আজ আর যাইনি।’
এর আগে বন্যার মধ্যে সিলেটে ডাকাতের আক্রমণের গুজব ছড়ানো হয়। মসজিদে মসজিদে ডাকাতের আক্রমণের তথ্য জানিয়ে মাইকিংও করা হয়। ডাকাত আতঙ্কে শনিবার নির্ঘুম রাত কাটান নগরবাসী। লাঠিসোঁটা নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসেন অনেকে।
ডাকাত আক্রমণের প্রচারণাকে গুজব আখ্যায়িত করে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই গুজব ছড়ানো হয়েছে। যারা গুজব ছড়িয়েছে তাদের তালিকা করা হচ্ছে।’
বন্যায় মৃতের সংখ্যা নিয়েও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছেন অনেকে। অর্ধশতাধিক মৃত্যুর প্রচারও চালানো হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তবে স্বাস্থ্য বিভাগের হিসাবে, সিলেট বিভাগে বন্যায় এ পর্যন্ত মারা গেছেন ২২ জন।
আরও পড়ুন:বিস্তৃত জলরাশির মাঝে ভাসছে একটি নৌকা। নেই কোনো মাঝি। নৌকার আরোহী বলতে দুটো বানরছানা। এদের একটিকে আক্রমণ করছে পানিতে ভেসে আসা দুটি কুকুর। কুকুরের আক্রমণ থেকে ছানাকে রক্ষার জন্য প্রাণান্ত লড়াই করছে সঙ্গী বানর।
সিলেট আর সুনামগঞ্জে ভয়াবহ বন্যার মাঝে এমন একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। এটি দেখে আঁতকে উঠছেন সবাই।
নেটিজেনদের অনেকে আক্ষেপ করে বলছেন, বন্যায় মানুষের জীবনের সঙ্গে সঙ্গে পশুপাখির জীবনেও নেমে এসেছে বিপর্যয়। কেউ কেউ এই ভিডিওটি না করে বরং বানর দুটিকে বাঁচানোর চেষ্টার ওপর জোর দিচ্ছেন।
ভিডিওটির উৎস অনুসন্ধান করেছে নিউজবাংলা। তাতে দেখা গেছে ভিডিওচিত্রটি সিলেট-সুনামগঞ্জের বন্যার সময়কার নয়। এমনকি পুরো দৃশ্যায়নটি অভিনয়ের অংশ। যে দুটি বানর এই অভিনয়ে অংশ নিয়েছে ওদের নাম ‘লোরা’ এবং ‘কাকা’। আর ‘অভিনয়শিল্পী’ হিসেবে ভিডিওতে অংশ নেয়া মোটাতাজা কুকুর দুটির নাম ‘লাকি’ ও ‘লুকাস’।
এক বানরপ্রেমী নারী ‘মাঙ্কি ড্রিম’ নামে চালাচ্ছেন একটি ফেসবুক পেজ। সেখানে ভিডিওটি পোস্ট করা হয় ২০২১ সালের ৩ মে। সোমবার দুপুর পর্যন্ত ভিডিওটি দেখা হয়েছে ২ কোটি ৫০ লাখ বার। ৬ লাখ ১৫ হাজারের বেশি ফেসবুক ব্যবহারকারী এই ভিডিওতে রিঅ্যাক্ট করেছেন। কমেন্টের সংখ্যাও নেহাত কম নয়, দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজারে।
‘কাকা’ ও ‘লোরা’কে নিয়ে এ ধরনের অনেক ভিডিও রয়েছে ফেসবুক পেজে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখানো হয় বিপজ্জনক বা অদ্ভুত পরিস্থিতি কী করে সামাল দিচ্ছে বানর দুটি।
ফেসবুক পেজটিতে কাকা ও লোরার সঙ্গে ওই নারীর ছবি থাকলেও নিজের নাম-পরিচয় উল্লেখ করেননি। তবে যোগাযোগের যে নম্বর তিনি দিয়ে রেখেছেন, সেটা দেখে আন্দাজ করা যায় ওই নারী দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ক্যাম্বোডিয়ার নাগরিক। তার শারীরিক গঠন ও চেহারাও ক্যাম্বোডিয়ানদের মতো।
‘মাঙ্কি ড্রিম’ ফেসবুক পেজে আপলোড করা আলোচিত ভিডিওটির কিছু অংশ কেটে সেটা গত দুই দিনে বাংলাদেশে ভাইরাল করা হয়েছে। পুরো ভিডিওতে দেখা যায়, নৌকাটি মোটেই মাঝিহীন অবস্থায় ভাসছিল না। এটি একটি গাছের লম্বা কাণ্ডের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বাঁধা।
আর ভিডিওতে বিস্তৃত জলরাশি দেখা গেলেও বাস্তবে নৌকার কিছুটা পাশেই ছিল পুরোপুরি শুকনো তীর।
কুকুর দুটির সঙ্গে ‘লড়াইয়ের অভিনয়ের’ একপর্যায়ে বানর দুটি ওই কাণ্ডের মাথায় চড়ে বসে। পরে কুকুর দুটিও নেমে তীরে চলে যায়।
‘মাঙ্কি ড্রিম’ পেজের বর্ণনা থেকে জানা যায়, কাকা ও লোরাকে স্থানীয় একটি বন থেকে গ্রামবাসীরা উদ্ধার করে। বাঘ, শিয়ালের মতো হিংস্র প্রাণীরা শাবক জোড়াকে শিকারের চেষ্টা করছিল। গ্রামবাসী উদ্ধার করার পর শাবক দুটিকে আদর মমতায় বড় করছেন ওই নারী। আর ‘মাঙ্কি ড্রিম’ পেজটি তিনি চালু করেন ২০১৭ সালের ৬ নভেম্বর।
প্রায় ৫ বছর আগে পেজটি খোলা হলেও প্রথম ভিডিও পোস্ট করা হয় ২০১৮ সালের ২৫ মার্চ। অবশ্য সেটি ছিল নম বাকেংয়ের পর্বতে সূর্যোদয়ের দৃশ্য।
বানর শাবক লোরাকে নিয়ে প্রথম ভিডিওটি আসে ২০২০ সালের ১০ জুলাই। আর কাকার ভিডিও আসে ২০২০ সালের ১২ আগস্ট। এরপর থেকে নিয়মিত লরা ও কাকার নতুন নতুন ভিডিও পোস্ট করেছেন পেজের অ্যাডমিন।
পেজটিতে ওই নারী নিজেকে বানর শাবক দুটির ‘মা’ হিসেবে নিজের পরিচয় দিয়েছেন। আর নিজের স্বামীকে নেটিজেনদের সামনে তুলে ধরেছেন বানরছানা দুটির ‘বাবা’ হিসেবে।
কখনও কুকুরের সঙ্গে শাবক দুটির খুনসুটি, কখনও দুধ খাওয়ানো, কখনও সেগুলোকে গোসল করানোর ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে পেজটিতে।
সবশেষ ভিডিও পোস্ট করা হয় গত বছরের ২৮ নভেম্বর। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, মা পরিচয় দেয়া সেই নারীকে ঘিরে খুনসুটিতে মেতেছে বানরছানা দুটি।
‘মাঙ্কি ড্রিম’ পেজ খোলার ব্যাখ্যা দিয়ে লেখা হয়েছে, এই পেজের মাধ্যমে বানরের জীবন, বেড়ে ওঠা, নাওয়া, খাওয়া, ঝগড়া, খুনসুটি, প্রজনন সবকিছু নেটিজেনদের সামনে তুলে ধরতে চায় শাবক দুটির বর্তমান অভিভাবক। এ ছাড়া পোষা পাখি, প্রাণীরও নানা দিক এই পেজের মাধ্যমে তুলে ধরার ইচ্ছা রয়েছে তার।
সবার কাছে নিবেদনও রেখেছেন প্রাণিপ্রেমী। পেজটিতে অন্তত হাজার দশেক মানুষ লাইক করুক এবং হাজার দশেক অনুসারী থাকুক- এটা তার প্রত্যাশা। তবে পেজটিতে লাইকের সংখ্যা এখনও সেই প্রত্যাশা পূরণ করেনি। সংখ্যাটি মাত্র চার হাজার ৩৬৭। তবে অনুসারী আছেন ৪৫ হাজার ২২৭ ফেসবুক ব্যবহারকারী।
আরও পড়ুন:সিলেট, সুনামগঞ্জে ভয়াবহ বন্যার বিভিন্ন ছবি ফেসবুকে শেয়ার করছেন নেটিজেনরা। বানভাসীদের তীব্র দুর্ভোগ ছুঁয়ে যাচ্ছে দেশবাসীকে। তবে যাচাই না করে কিছু ক্ষেত্রে ভুল ছবি শেয়ারের অভিযোগও উঠছে।
অভিনয়শিল্পী জয়া আহসানও এমন ভুল এড়াতে পারেননি। বানভাসীদের অসহায়ত্ব নিয়ে রোববার দুপুর পর্যন্ত ফেসবুকে তিনটি পোস্ট করেছেন তিনি। এর মধ্যে দুটি পোস্টে বেশ কিছু ছবি যুক্ত করেছেন।
নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে রোববার বেলা ১১টা ৩৬ মিনিটে শেয়ার করা একটি পোস্টে সাতটি ছবি দিয়েছেন জয়া। তবে এর মধ্যে একটি ছবি সিলেট, সুনামগঞ্জের সাম্প্রতিক বন্যার নয়। এমনকি সেটি নিকট অতীত বা বাংলাদেশ অঞ্চলেরও নয়।
জয়ার পোস্ট করা একটি ছবিতে দেখা যায় পানিতে প্রায় ডুবে যাওয়া একটি শিশু মাথায় একটি গামলা ধরে কোনোমতে একটি কুকুরছানাকে নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। জয়ার পাশাপাশি আরও অনেকেই শেয়ার করছেন ছবিটি।
গুগল লেন্সের সাহায্যে ছবিটির উৎস অনুসন্ধান করেছে নিউজবাংলা। এতে দেখা যায় ছবিটি বেশ কয়েক বছর আগে গ্লোবালগিভিং নামের একটি উন্নয়ন সংস্থার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়।
এই প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে তাদের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ‘গ্লোবালগিভিং একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান, যেটি অন্যান্য অলাভজনক প্রতিষ্ঠানকে দাতাগোষ্ঠী এবং কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ ঘটিয়ে দেয়। আমরা ২০০২ সাল থেকে আফগানিস্তান থেকে জিম্বাবুয়ে পর্যন্ত (এবং এর মধ্যে শত শত জায়গায়) বিশ্বস্ত, কমিউনিটিভিত্তিক সংস্থাগুলোকে সহায়তা করছি। আমাদের এই পৃথিবীকে আরও উন্নত জায়গা হিসেবে গড়ে তুলতে ওই সংস্থাগুলোকে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, প্রশিক্ষণ এবং সহায়তার অংশীদার করতে সাহায্য করছি।’
গ্লোবালগিভিং তাদের ওয়েবসাইটে ‘রেসকিউ ডগস ইন ফ্লাড এরিয়াস- সেভ চিলড্রেন্স লাইভস’ শিরোনামে কুকুরছানা মাথায় নিয়ে বানের পানির মধ্য দিয়ে চলা শিশুটির ছবি প্রকাশ করে। এই শিরোনামে বিভিন্ন এলাকায় বন্যার পানির মাঝে অসহায় ককুরদের উদ্ধারের মোট ছয়টি ছবি রয়েছে।
কুকরছানা মাথায় নিয়ে পানি ঠেলে চলা শিশুটির ছবিটি কোথায় তোলা- সেটি আরও অনুসন্ধান করতে গিয়ে সার্স ইঞ্জিন ইয়াহুর আলোকচিত্রের ব্লগ ‘ফ্লিকার’-এর একটি ছবি পাওয়া গেছে। ফ্লিকারে এই ছবিটি আপলোড করা হয় ২০০৯ সালের ২৮ নভেম্বর। এর বিবরণে লেখা হয়েছে ভিয়েতনামের বাক লিউ রাজ্যের পরিবেশগত পরিস্থিতি।
ফ্লিকারের ছবির বিবরণ সঠিক হলে এটি তোলা হয়েছিল এক যুগেরও বেশি আগে ভিয়েতনামে। ওই শিশুটির একই ধরনের আরেকটি ছবিরও সন্ধান পেয়েছে নিউজবাংলা।
ভিএন এক্সপ্রেস নামের একটি সংবাদমাধ্যমের ভিয়েতনামি সংস্করণে ২০১৮ সালের ১৩ নভেম্বর একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। কুকুর খাওয়ার বিরুদ্ধে হ্যানয় ডিক্রির প্রতি পশুপ্রেমী সংগঠনগুলো সমর্থন জানানোর খবর দেয়া হয় ওই প্রতিবেদনে।
ভিএন এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনের ফাইল ছবিতে কুকুরছানা মাথায় নিয়ে পানি ঠেলে যাওয়া ওই শিশুটির ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। তবে এই ছবিটি খানিকটা ভিন্ন অ্যাঙ্গেলে তোলা। ছবির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, এটি তোলেন নগুয়েন থান লি নামের একজন এবং এটি ভিএন এক্সপ্রেস আলোকচিত্র প্রতিযোগিতা থেকে বাছাই করা।
নিউজবাংলার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত কয়েক বছরে বিভিন্ন অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যার সময়ে সেই অঞ্চলের পরিস্থিতি দাবি করে শিশুটির ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো হয়েছে। ভারতের হায়দরাবাদে গত বছরের আগস্টে বন্যার সময়ও ছবিটি ছাড়ানো হয়েছিল।
আরও পড়ুন:ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযান শুরুর পর কোকা-কোলা, স্টারবাকসের মতো বিশ্বের অন্যতম বড় ফাস্টফুড চেইন কেএফসির মূল প্রতিষ্ঠান ইয়াম করপোরেশন রাশিয়াতে তাদের ব্যাবসায়িক কার্যক্রম গুটিয়ে ফেলার ঘোষণা দেয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ছবি ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে দেখা যায়, রাশিয়ার কেনটাকি ফ্রাইড চিকেনকে (কেএফসি) রিব্র্যান্ড করে নাম রাখা হয়েছে এসএফসি (সাইবেরিয়ান ফ্রাইড চিকেন)। এমনকি কেএফসির প্রতিষ্ঠাতা কর্নেল সান্ডার্সের ছবির জায়গাতেও স্টালিনের ছবি যুক্ত করে দেয়া হয়।
এসএএফসির ভাইরাল এই ছবি টেলিগ্রাম, টুইটার, ফেসবুক, ওয়েবুসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অনেক নেটিজেনই বিষয়টিকে বিশ্বাস করতে শুরু করেন।
তবে গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চে দেখা যায়, রাশিয়ার রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার ম্যাক্সির এক প্রেস রিলিজে হুবহু একই ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। যেখানে কেএফসির স্বাভাবিক লোগোই শোভা পাচ্ছে এবং এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ১৭ জুলাই ২০১৮-তে প্রকাশিত হয়। অনলাইনে ভাইরাল ছবিটি ম্যাক্সির ছবি থেকেই এডিট করা হয়েছে।
ফরিদপুরের সালথায় বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কের জেরে চাচিকে নিয়ে উধাও হওয়ার অভিযোগ সত্যি নয় বলে দাবি করেছেন মাঝারদিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নুরুল আলম মিয়া।
এই নুরুলের বিরুদ্ধেই চাচিকে নিয়ে পালানোর অভিযোগ করেছিলেন মাঝারদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আফসার উদ্দিন আহমেদ। আফসারের বরাতে নিউজবাংলাসহ প্রথম সারির বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রচার হয়।
তবে নুরুলের দাবি, তার দলীয় প্রতিপক্ষ সাবেক মেম্বার আবু বক্করের পরিকল্পনায় রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। বক্কর ভোটে হেরে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এমন মিথ্যা তথ্য চেয়ারম্যান ও সাংবাদিকদের দিয়েছেন।
বক্কর তার চাচাতো ভাই জাহিদুল ইসলাম ও তার স্ত্রী লাবনী আক্তারের মধ্যে কোন্দলের সুযোগে নুরুলকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছেন।
জাহিদুল বুধবার বিকেলে সালথা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এতে বলা হয়, লাবনী মঙ্গলবার রাত ২টার দিকে টয়লেটে যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বের হন। ফিরতে দেরি হলে জাহিদুল বের হয়ে দেখেন লাবনী টয়লেটে নেই। পরিবারের সবাই মিলে বাড়ির আশপাশে অনেক খুঁজেও তাকে পায়নি।
এ ঘটনার পর মাঝারদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আফসার উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, লাবনী সম্পর্কে নুরুল আলমের চাচি হন। লাবনীদের বাড়িতে যাওয়া-আসা রয়েছে নুরুলের। একপর্যায়ে তাদের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে, মঙ্গলবার রাতে তারা পালিয়ে যান।
চেয়ারম্যানের বরাতে সংবাদটি প্রকাশের পর নুরুল পরে নিউজবাংলার কাছে দাবি করেন, তিনি মঙ্গলবার রাতে নিজের বাড়িতেই ছিলেন। বুধবার বিকেলে থানায় জিডির পর স্থানীয়দের কাছ থেকে বিষয়টি জানতে পারেন।
তিনি বলেন, ‘আমি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার। সমাজে আমার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের জন্য পরিকল্পিতভাবে ঘটনাটি প্রকাশ করা হয়।
‘ঘটনার দিন আমি আমার নিজ বাড়িতেই অবস্থান করছিলাম। এরপর বিভিন্ন লোকজন ফোন করে বিষয়টি আমাকে জানান। এ ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততাই নেই।’
নুরুল আরও বলেন, ‘যতদূর জানি, ওই নারী ও তার স্বামীর মধ্যে বিভিন্ন কারণে কলহ চলছিল। তার স্বামী বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িত। এ কারণেই তাদের মধ্যে কলহ হয়। পরে জানতে পারলাম তার স্ত্রী ঝগড়া করে এক আত্মীয়ের বাড়ি গেছেন।
‘স্ত্রী নিখোঁজের বিষয়ে জাহিদুল সালথা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। সেখানে আমার নাম নেই। তবুও আবু বক্কর আমার নামে অপপ্রচার চালিয়েছেন। এমন ঘটনা আমাকে মর্মাহত করেছে। সমাজে আমার মানসম্মান ক্ষুণ্ন হয়েছে। এ বিষয়ে আমি আইনের আশ্রয় নেব।’
স্বামীর সাধারণ ডায়েরির পর বুধবার রাতে লাবনী তার ফেসবুকে একটি ভিডিও আপলোড করেন।
ভিডিওতে তিনি জানান, জাহিদুলের সঙ্গে তার পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর জানতে পারেন তার স্বামীর বিয়েবহির্ভূত একাধিক সম্পর্ক আছে। এর প্রতিবাদ করলে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেন। বাড়ি থেকে বেরও করে দেন।
লাবনী বলেন, ‘আমি একাধিকবার আমার বাবার বাড়ি চলে যাই। সালিশ ডেকে তারা আমাকে ফিরিয়ে আনেন। তারপরও নির্যাতন বন্ধ হয়নি। গত ৭ জুন সন্ধ্যায় আমার স্বামী বাড়ি ফিরে কোনো কারণ ছাড়াই আমাকে গালিগালাজ করেন এবং মিথ্যা প্রেমের অপবাদ রটান।
‘কারও সঙ্গেই আমার প্রেমের সম্পর্ক নেই। তাই আমি প্রতিবাদ করলে আমাকে আরও বকাবকি ও প্রাণনাশের হুমকি দেন। এরপর আমি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিই। আত্মহত্যা করতে না পেরে এক আত্মীয়র বাড়িতে চলে এসেছি।’
লাবনী আরও বলেন, ‘আমি চলে আসার পর আমার স্বামী ও তার পরিচিত লোকজন মিলে মেম্বার নুরুল আলমকে জড়িয়ে মিথ্যা অপবাদ ছড়িয়ে দেন। নুরুল আলমের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নাই। আমি নিজের মতো বাঁচতে পালিয়ে এসেছি।’
নিউজবাংলাকে লাবনী বলেন, ‘ঘটনা যখন এতদূর গড়িয়েছে তাই আমি দুই-এক দিনের মধ্যে নির্যাতনের বিষয়ে জাহিদুলের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নেব।’
তবে জাহিদুলের দাবি, তার স্ত্রীর সঙ্গে নুরুল আলমের প্রেমের সম্পর্ক আছে।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার স্ত্রী লাবনীর সঙ্গে মেম্বার নুরুল আলমের সম্পর্ক আছে। এ বিষয়টা আমি হাতেনাতে ধরে ফেলি। দুই সন্তানের কথা চিন্তা করে লাবনীকে একাধিকবার বুঝিয়েছি।
‘আর আমার স্ত্রী মিথ্যা কথা বলছে। কারও সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক নেই। পারিবারিক বিষয় নিয়ে সব পরিবারেই টুকটাক অশান্তি থাকে। আমি তাকে কখনও নির্যাতন করিনি। আমাদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়েছে।’
নুরুলের তোলা পাল্টা অভিযোগের বিষয়ে সাবেক ইউপি সদস্য আবু বক্কর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নুরুল আলম সম্পর্কে আমার ভাতিজা, সে আমার কাছের লোক ছিল। গত নির্বাচনে সে আমার প্রতিপক্ষ হলেও তার বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করা হয়নি।
‘স্থানীয়দের কাছ থেকে আমি তাদের প্রেমের কথা শুনেছিলাম। তাই সাংবাদিকরা জিজ্ঞেস করলে সেটাই বলেছি।’
অন্যদিকে বক্করের কাছ থেকেই বিষয়টি শুনে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন বলে দাবি করছেন ইউপি চেয়ারম্যান আফসার উদ্দিন আহমেদ।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নুরুল আলম ও লাবনী আক্তারের ঘটনার সত্যতা জানতে আমি নুরুল আলমকে কল দিয়েছিলাম। সে কল রিসিভ না করলে বক্করের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তার কাছ থেকেই জানি, নুর আলম ও লাবনী ভেগে গেছে।
‘পরে নুরুল আলম আমাকে ফোন করে বলে সে এ রকম কিছু করেনি। কিছু লোক জাহিদের স্ত্রীর নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি এভাবে প্রচার করেছে। এর পেছনে তার স্বামীর হাতও থাকতে পারে। আমি বিষয়টি খোঁজ নেব। তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক ভালো ছিল না। লাবনী কয়েকবার বাবার বাড়ি চলে যাওয়ায় সালিশে মিটমাটও করা হয়েছে।’
সালথা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আওলাদ হোসেন বলেন, ‘আমরা এখনও ওই নারীর নিখোঁজ হওয়ার সঙ্গে মেম্বারের কোনো সম্পৃক্ততা পাইনি। ওই নারী তার এক আত্মীয়র বাড়িতে থাকার কথা জানিয়েছেন। ঘটনা সত্যি কি না তা খোঁজ নিচ্ছি।’
[মাঝারদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আফসার উদ্দিন আহমেদের বরাতে ‘চাচির সঙ্গে উধাও ইউপি মেম্বার’ শিরোনামে ৮ জুন একটি প্রতিবেদন নিউজবাংলায় প্রকাশিত হয়। আরও বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমেও খবরটি প্রকাশিত হয়েছে। তবে বিস্তারিত অনুসন্ধানে এর সত্যতা না পাওয়ায় নিউজবাংলা দুঃখপ্রকাশ এবং আগের প্রতিবেদনটি প্রত্যাহার করছে।]
আরও পড়ুন:দাবি করা হয়ে থাকে ওজন কমাতে সহায়তা করে অ্যাপল সাইডার ভিনেগার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের পাশাপাশি অনেক পুষ্টিবিদও এ দাবির পক্ষে। তবে গবেষণা বলছে, এটি ভ্রান্ত ধারণা। শুধু তা-ই নয়, অ্যাপল সাইডার ভিনেগারের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে।
গত ২৩ এপ্রিল ফেসবুকে ছড়ানো একটি পোস্ট বেশ আলোচিত হয়। দুই দিনে পোস্টটি শেয়ার হয় ৬০০ বারের বেশি। যেখানে বলা হয়, বেকিং সোডা, অ্যাপল সাইডার ভিনেগার এবং লেবুর রস ওজন কমাতে কার্যকর।
এ ছাড়া গত বছর ফেসবুকে ছড়ানো একটি ভিডিও ২৫ লাখবার দেখা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, ওজন কমানোর জন্য অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার ড্রিংক রেসিপি দারুণ কাজের।
ওই ভিডিওর সঙ্গে একটি বার্তাও প্রচার হয় তখন। সেখানে বলা হয়, “অ্যাপল সাইডার ভিনেগার প্রায়ই অমোঘ ওষুধ হিসেবে কাজ করে। এটি ওজন কমানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে সহায়তা করে।”
এটি শেয়ার হয়েছিল ৪০ হাজারের বেশিবার।
তবে ওজন কমাতে অ্যাপল সাইডার ভিনেগারের ভূমিকার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি বেশ দুর্বল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের ওজন কমানোর জন্য অ্যাপল সাইডার ভিনেগার যে কার্যকর, তার যথেষ্ট প্রমাণ নেই।
ওজন কমানোর প্রমাণ খুবই কম
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অ্যাপল সাইডার ভিনেগারকে ওজন কমানোর হাতিয়ার ঘোষণা করার পক্ষে যথেষ্ট গবেষণা নেই।
অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ক্যারল এস জনস্টন বলেন, ‘প্রমাণটি স্পষ্ট নয়। মানুষের ওজন কমানোর সঙ্গে অ্যাপল সাইডার ভিনেগারের ভূমিকায় খুব একটা উপকারিতা নেই।
‘অ্যাপেল সাইডার ভিনেগারের প্রধান সক্রিয় উপাদান অ্যাসিটিক অ্যাসিড। গবেষণায় দেখা গেছে, এটি স্থূল ইঁদুর ফ্যাট অক্সিডেশন এবং মেটাবলিক অ্যাবনরমালিটিসে (বিপাকীয় অস্বাভাবিকতা) পরিবর্তন আনতে পারে।
‘আপনি যদি ফ্যাট অক্সিডেশন বাড়াতে পারেন, তবে এটি চর্বি হ্রাসে সহায়তা করবে। সম্ভবত সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ওজন বাড়াতে বা কমাতে অবদান রাখতে পারে ভিনেগার।’
অক্সফোর্ডের বায়োসায়েন্সের গবেষকরা ইঁদুরের ওপর চালানো এক পরীক্ষায় দেখতে পেয়েছেন, অ্যাপল সাইডার ভিনেগার শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পানীয় হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি এথেরোজেনিকের ঝুঁকিতে থাকা স্থূলতায় ভোগাদের ক্ষেত্রেও কার্যকর। ২০১৯ সালে এটি প্রকাশ হয়।
তবে মানুষের ক্ষেত্রে এমনটা ঘটে, তার সুস্পষ্ট প্রমাণ নেই। এ নিয়ে গবেষণাও হয়েছে হাতে গোনা। কিছু গবেষণা তো রয়ে গেছে অমীমাংসিত।
মানুষের ওজন কমাতে অ্যাপল সাইডার ভিনেগারের ভূমিকা নিয়ে আলোচিত গবেষণাটি হয়েছিল ২০০৯ সালে। এতে অংশ নেন ১৭৫ জন অতিরিক্ত ওজনের জাপানিজ নাগরিক। তাদের একটি অংশকে প্রতিদিন এক বা দুই টেবিল চামচ ভিনেগার দেয়া হয়েছিল। বাকিদের দেয়া হতো না। ১২ সপ্তাহ পর দেখা যায়, যারা ভিনেগার নিয়েছিলেন তাদের ওজন ২-৪ পাউন্ড কমেছিল।
জনস্টন বলেন, ‘গবেষণায় যথেষ্ট ওজন কমতে দেখা যায়নি। কারণ মানুষের ওজন স্বাভাবিকভাবেই ওঠানামা করে।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাদ্যাভ্যাস এবং শারীরিক কসরত হচ্ছে ওজন বৃদ্ধির প্রাথমিক চালক। ২০১৮ সালে ছোট পরিসরে চালানো একটি পরীক্ষায় দেখা গেছে, যারা ১২ সপ্তাহ ধরে অ্যাপল সাইডার ভিনেগারের সঙ্গে কম ক্যালরিযুক্ত খাবার গ্রহণ করছিলেন, তাদের ওজন ৩-৪ পাউন্ড পর্যন্ত কমেছিল।
ভিনেগারের ঝুঁকিও আছে
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়মিত ভিনেগার সেবনে কিছু ঝুঁকি থেকে যায়। ফুড সায়েন্স জার্নালে ভিনেগার নিয়ে ২০১৬ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যাপল সাইডার ভিনেগারের উচ্চ অম্লতা দাঁতের ক্ষয় এবং গলায় প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।
হিউস্টনের ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস হেলথ সায়েন্স সেন্টারের ডেল সেন্টার ফর হেলদি লিভিংয়ের পুষ্টি প্রকল্পের পরিচালক ওয়েসলি ম্যাকওয়ার্টার বলেন, ‘অ্যাপল সাইডার ভিনেগার ব্যবহার আপনার খাবারে বাড়তি স্বাদ যোগ করতে পারে। তবে এটি থেকে ওজন কমানোর আশা করবেন না।’
আর্জেন্টিনার জয়ের আনন্দ উদযাপনে বাসার বাইরে খাবার খেতে বেরিয়ে দিনাজপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই ভাইয়ের মৃত্যুর খবর প্রচার করেছে শীর্ষস্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যম। এই খবর ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
আর সেই খবরের প্রতিক্রিয়ায় বিদ্রূপাত্মক মন্তব্য করেছেন অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী। এতে নিহতদের পরিবারের মানসিক যন্ত্রণা আরও বেড়েছে। তারা বলছেন, সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন তথ্যের প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে মূল ধারার সংবাদপত্রটি। দুই ভাই সড়ক দুর্ঘটনায় যখন মারা যান, তখন আর্জেন্টিনা-ইতালির ম্যাচটির মধ্যবিরতি চলছিল। ফলে ম্যাচে জয় উদযাপনের কোনো সুযোগ তখন ছিল না।
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার পৌর শহরের নিমতলা মন্ত্রী মার্কেটে রহমানিয়া হোটেল সামনে গত বুধবার গভীর রাতে একটি ট্রাক দুই ভাইয়ের মোটরসাইকেলকে চাপা দেয়। এতে ২৬ বছরের নাহিদ হাসান সবুজ ও ১৭ বছরের তাজিন আহম্মেদ মারা যায়। সম্পর্কে তারা খালাতো ভাই।
এরপর প্রথম সারির একটি দৈনিকে ‘আর্জেন্টিনার ম্যাচ জয়ের আনন্দে বেরিয়েছিলেন দুই ভাই, প্রাণ গেল সড়কে’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে ফুলবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফুল ইসলামের বরাতে বলা হয়, রাত আড়াইটায় পৌর শহরের নিমতলা মোড়ে চালবোঝাই একটি ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
তবে এ-সংক্রান্ত মামলার এজাহারে দুর্ঘটনাটি রাত ১টা ৪০ মিনিটে ঘটে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এজাহারের একটি অনুলিপি পেয়েছে নিউজবাংলা। এ ছাড়া ওই রাতে আর্জেন্টিনা-ইতালির ম্যাচটি শেষ হয় রাত পৌনে ৩টার দিকে। ফলে রাত আড়াইটার দিকে দুর্ঘটনা ঘটে থাকলেও সেটি আর্জেন্টিনার বিজয় উদযাপনের সময়ের বলে প্রচার করার সুযোগ নেই বলে দাবি করছে পরিবার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফুলবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, তার বক্তব্য বিকৃতভাবে উপস্থাপন করেছে প্রথম সারির জাতীয় দৈনিকটি।
তিনি সোমবার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঘটনাটি ঘটেছে রাত ১টা ৪০ মিনিটে। পুলিশ ঘটনা ঘটার ১০ মিনিট পর ১টা ৫০ মিনিট নাগাদ সেখানে পৌঁছায়। পত্রিকায় রাত আড়াইটার যে কথা বলা হয়েছে সেটা ভুল।’
নিহত দুজনের স্বজনরা বলছেন, দুই ভাই আর্জেন্টিনার সমর্থক ছিলেন। সে রাতে তারা বাসায় খেলাও দেখেছেন। তবে বিজয় উদযাপনে বের হয়ে মৃত্যুর তথ্য সঠিক নয়। খেলার মধ্যভাগে খাবার কিনতে হোটেলে যাওয়ার সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে। জাতীয় দৈনিকটিতে নিহতের ফুফাতো ভাই হিসেবে ‘কামরুজ্জামান’ নামে একজনের বক্তব্য প্রকাশ করা হলেও পরিবারের দাবি এ নামে তাদের কোনো আত্মীয় নেই।
নাহিদ হাসান সবুজের বড় বোন ইশরাত জাহান ইতি নিউজবাংলার কাছে ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, এই প্রতিবেদন তাদের ও নিহত দুজনকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিদ্রূপের মুখে ফেলেছে।
তিনি বলেন, ‘পুলিশের দেয়া তথ্য অনুযায়ী আমার দুই ভাইয়ের মৃ্ত্যুর সময় রাত ১টা ৪০ মিনিট। সে সময়ে তো খেলার জয় নির্ধারণই হয়নি, তাহলে কীভাবে একটি প্রথম সারির দৈনিক এমন মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করে!
‘এ রিপোর্ট করার সময় আমাদের পরিবারের কারও সঙ্গে তারা কথা বলেনি। নিহতের ফুফাতো ভাই পরিচয়ে যার সঙ্গে তারা কথা বলছে তাকে আমরা চিনি না।’
ভ্রান্ত তথ্যের ভিত্তিতে করা প্রতিবেদনের কারণে পুরো পরিবার আরও বেশি মানসিক যন্ত্রণার মুখোমুখি হয়েছে বলেও জানান ইতি। তিনি বলেন, ‘এই সংবাদ পরিবেশনের কারণে ফেসবুকে আমার ভাইদের মৃত্যু নিয়ে কোনো কোনো মানুষ উল্লাস করছে। কেউ আবার বিরূপ মন্তব্য করছে। কেউ এমনও বলছে, এ ধরনের মানুষের মৃত্যু হওয়া ভালো।
‘অনেক মানুষ কমেন্ট করছে- এ ধরনের ছেলেকে মোটরসাইকেল কিনে দিলে এ রকমই হবে।‘
ইতি জানান, ফেসবুকে প্রথম সারির জাতীয় দৈনিকটির শেয়ার করা প্রতিবেদনে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৬৭ হাজার মানুষ রিঅ্যাক্ট দিয়েছেন। এর মধ্যে ছয় হাজারের বেশি ‘হা হা’ রিঅ্যাক্ট। মন্তব্য করেছেন সাত হাজারের বেশি মানুষ। এসব মন্তব্যের বেশির ভাগই বিদ্রূপাত্মক বলে জানান ইতি।
সবুজের আরেক বোন রোবাইয়া খানম সাথী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওরা বলছে রাত আড়াইটার সময় মারা গেছে। সেদিন খেলা শুরু হইছে ১২টা ৪৫ মিনিটে। ওরা বাসা থেকে বের হইছে ১টা ৩০ মিনিটে। তাহলে ওরা কীভাবে বিজয়োল্লাস করতে বের হলো! মানুষ এই নিউজ পড়ে আমার বাবাকে, পরিবারকে অকথ্য ভাষায় গালি দিচ্ছে। এর বিচার কে করবে?’
নাহিদ হাসানের মা নুরন নাহার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সেদিন বাসায় আমার ভাইয়ের ছেলে ছিল। বোনের ছেলে ছিল। তাজিনের বন্ধু সুজন আসছিল। যার ফলে রাতে ভাত ছিল না। তরকারি বেশি ভালো না হইলে ওরা বাইরে খেতে যায়। সে রাতে খেলার মাঝখানেও খাবার খেতে গিয়েছিল।’
ফেসবুকে বাজে মন্তব্যে ভেঙে পড়েছেন নুরন নাহার। ছেলে হারানোর তীব্র শোকের পাশাপাশি এমন অবস্থাও সামলাতে হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার বুক শূন্য করে সে (নাহিদ) চলে গেল। আমাদের কী ব্যথা, যন্ত্রণা নিয়ে যে চলতে হচ্ছে। তার মধ্যে কেন এত ধরনের মানুষ এমন কমেন্ট করছে!’
নিহত দুই ভাইয়ের একজনের নামের ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানীয় পত্রিকাটি ভুল করেছে জানিয়ে পরিবার বলছে, তারা ‘তাজিন’-এর পরিবর্তে লিখেছে ‘তাজিম’।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য