মহাসড়কে যানবাহন থেকে কারা চাঁদা তুলতে পারবে- এ বিষয়ে বক্তব্য দিয়ে তুমুল আলোচিত সেই পুলিশ কর্মকর্তাকে স্ট্যান্ড রিলিজ (তাৎক্ষণিক বদলি) করে মাদারীপুর হাইওয়ে রিজিওনাল অফিসে সংযুক্ত করা হয়েছে।
বদলির আদেশ পাওয়ার পর শুক্রবারই ভাঙ্গা ত্যাগ করে মাদারীপুর চলে গেছেন তিনি। কী কারণে তাকে তাৎক্ষণিক বদলি করা হয়েছে, আদেশে তা উল্লেখ করা হয়নি।
তবে বদলির বিষয়টি নিশ্চিত করে হাইওয়ে পুলিশের মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন, সংবাদ সম্মেলন করে বিতর্কিত বক্তব্য দেয়া এবং সে বক্তব্য ভাইরাল হওয়াতেই এ বদলি।
অনিয়ম ও চাঁদাবাজির অভিযোগে গত বুধবার রাতে ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলমকে প্রত্যাহার করা হয়। সেই সঙ্গে এ এস এম আসাদুজ্জামানকে নতুন ওসি হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়।
যোগদানের পর নবাগত ওসি আসাদুজ্জামান বৃহস্পতিবার সকালে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ওসির কার্যালয়ে সেই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যের শুরুতে তিনি বলেন, ‘এর আগে থানার ওসির দায়িত্বে থেকে যারা বিভিন্ন পরিবহন, ব্যানার, টোকেন বা মান্থলি (মাসিক) বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বা তাদের নামের উৎকোচ আদায় হতো, আজ থেকে বন্ধ বলে ঘোষণা করছি।
‘যদি অত্র থানার কোনো পুলিশ সদস্য এর সঙ্গে জড়িত থাকেন তাহলে তার দায়-দায়িত্ব তাকেই বহন করতে হবে।’
ওসি আরও বলেন, ‘মহাসড়কে কোনো চাঁদাবাজি চলবে না বলে অঙ্গীকার করছি। তবে বেপরোয়া গতি, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যতীত মোটরযান চালানো বা মোটরসাইকেলে হেলমেট ব্যতীত তিনজন আরোহী ও অবৈধ থ্রি-হুইলারের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
বক্তব্যের এই পর্যন্ত ঠিকই ছিল। তবে ওসি বেকায়দায় পড়েছেন শেষ দুই লাইনে। যেখানে বলা হয়েছে, ‘হাইওয়ে থানা পুলিশ ব্যতীত অন্য কোনো সংগঠন বা ব্যক্তি মহাসড়কে চাঁদাবাজি করলে তার দায়-দায়িত্ব হাইওয়ে পুলিশ নেবে না’।
বিষয়টি নিয়ে সংবাদকর্মী ও এলাকাবাসীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। অনেকেই এ বিষয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেন। তারা প্রশ্ন তোলেন- তাহলে হাইওয়ে পুলিশ কি যানবাহন থেকে চাঁদাবাজির অধিকার রাখে?
এমন বক্তব্য দেয়ার ২৪ ঘণ্টার মাথায় তাকে তাৎক্ষণিক বদলি করা হলো। যদিও পরে আত্মপক্ষ সমর্থন করে ওই বক্তব্য তার ‘ভাষাগত ভুল’ ছিল বলে দাবি করেন ওসি।
হাইওয়ে পুলিশ মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিতর্কিত বক্তব্য প্রদান এবং সে বক্তব্য ভাইরাল হওয়ায় আসাদউজ্জামানকে তাৎক্ষণিক বদলি করা হয়েছে। ওই থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শাহ্ আলমকে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার চলতি দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। নতুন ওসির পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত শাহ আলম এ দায়িত্ব পালন করবেন।’
এসআই শাহ আলম বলেন, ‘বদলির আদেশ পেয়ে আসাদউজ্জামান শুক্রবারই ভাঙ্গা ত্যাগ করে মাদারীপুর চলে গেছেন। তবে তাকে কী কারণে তাৎক্ষণিক বদলি করা হয়েছে বদলির আদেশে তা উল্লেখ করা হয়নি।’
আরও পড়ুন:নড়াইলে পুলিশের সামনে শিক্ষকের গলায় জুতার মালা দিয়ে অপদস্ত করার ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এক শিক্ষক ও মুক্তিযোদ্ধা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে সোমবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত অবস্থান নেন ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক জি এইচ হাবীব এবং মুক্তিযোদ্ধা ও বামপন্থী কর্মী আব্দুল হক। এ সময় তাদের হাতের প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল ‘আমিও স্বপন কুমার বিশ্বাস’।
ফেসবুকে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বহিষ্কৃত মুখপাত্র নূপুর শর্মার সমর্থনে কলেজের এক হিন্দু শিক্ষার্থীর পোস্ট দেয়াকে কেন্দ্র করে গত ১৮ জুন দিনভর বিক্ষোভ, সহিংসতা চলে মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজ ক্যাম্পাসে। গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয় ওই শিক্ষার্থীর পক্ষ নিয়েছেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস।
এরপর পুলিশ পাহারায় তাকে ক্যাম্পাসের বাইরে নিয়ে যাওয়ার সময় তাকে দাঁড় করিয়ে গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয় একদল ব্যক্তি। শিক্ষক স্বপন কুমার হাত উঁচিয়ে ক্ষমা চাইতে থাকেন। পরে তাকে তুলে নেয়া হয় পুলিশের গাড়িতে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জি এইচ হাবীব বলেন, ‘সম্প্রতি নড়াইলে যে নেক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে, স্বপন কুমার বিশ্বাসকে যেভাবে হেনস্থা করা হয়েছে তার প্রতিবাদে আমরা দাঁড়িয়েছি। শিক্ষক হিসেবে মনে হয়েছে আমার এটা প্রতিবাদ করা দরকার। একটু দেরিই হয়ে গেল বোধহয়, আরও আগেই দাঁড়ানো দরকার ছিল। আমার পাশে মুক্তিযোদ্ধা ও বামপন্থী কর্মী আব্দুল হক সাহেব দাঁড়িয়েছেন।’
মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হক বলেন, ‘ধর্ম ব্যবহার করে আমাদের দেশের মানুষকে বোকা বানানো সহজ। ধর্মকে কেউ কেউ স্বার্থে ব্যবহার করে। এতে ক্ষমতাসীনদের ইন্ধন থাকে।’
শিক্ষক হেনস্তার এ ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। পুলিশের সামনে শিক্ষকের এমন অপদস্ত হওয়ার ঘটনায় তৈরি হয়েছে তীব্র ক্ষোভ।
ঘটনার পর থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন স্বপন কুমার বিশ্বাস। প্রশাসনের দাবি, তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে নিউজবাংলাকে স্বপন কুমার জানিয়েছেন গত এক সপ্তাহে তিনবার ঠিকানা বদল করেছেন তিনি।
আরও পড়ুন:নারায়ণগঞ্জের সদরে পূর্বশত্রুতার জেরে সাবেক এক ইউপি সদস্যকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ ওঠেছে বর্তমান ইউপি সদস্য ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে।
উপজেলার সৈয়দপুর এলাকায় রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাকে কুপিয়ে জখম করা হয়। গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১২টার পর তার মৃত্যু হয়।
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিচুর রহমান নিউজবাংলাকে হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহত ৪৭ বছরের দৌলত হোসেনের বাড়ি চরসৈয়দপুর এলাকায়। গোগনগর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য ও কৃষক লীগের সাবেক সহসভাপতি ছিলেন তিনি। তার বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতিসহ একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, রোববার রাতে অটোরিকশায় করে নারায়ণগঞ্জ শহর থেকে নিজ এলাকা চরসৈয়দপুরে ফিরছিলেন দৌলত। সাড়ে ১০টার দিকে সৈয়দপুর এলাকায় এলে গোগনগর বর্তমান ইউপি সদস্য রুবেল তার লোকজন নিয়ে দৌলতের রিকশা গতিরোধ করেন। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে দৌলতের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তাকে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করে রাস্তায় ফেলে যান তারা।
গুরুতর অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন আশেপাশের লোকজন। সেখান চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১২ টার পর মারা যান তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ইউপি সদস্য রুবেলের মোবাইলে ফোন দেয়া হলে তা বন্ধ পাওয়ায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।
ওসি আনিচুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তার ছেলে কাশেমের সঙ্গে রুবেলের বিরোধ ছিল। রোববার রাতে নিজ এলাকায় যাওয়ার পথে বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে এ ঘটনা ঘটে। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।’
দৌলতের বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতিসহ একাধিক মামলা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ভোরে তিনজনকে আটক করা হয়েছে জানিয়ে ওসি বলেন, ‘হত্যার সঙ্গে জড়িতদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা হবে।’
আরও পড়ুন:আগে যেতে হুড়াহুড়ি, অনিয়মসহ বিভিন্ন কারণে রোববার রাতে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে সরকার।
ওই ঘোষণার পরও সোমবার সকাল ৭টার দিকে পদ্মা সেতু পাড়ি দিতে মাওয়া প্রান্তে ভিড় জমান বেশ কয়েকজন মোটরসাইকেলচালক। তারা সেতু পার হওয়ার জন্য জোর দাবি জানাতে থাকেন, তবে টোল প্লাজায় দায়িত্বরত পুলিশ ও আনসার সদস্যদের বাধায় সেতু পার হতে পারেননি তারা।
টোল প্লাজায় দায়িত্বরতরা শরীয়তপুরের মাঝিরকান্দিগামী বাইকচালকদের মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে যেতে বলেন। তাদের কথামতো শিমুলিয়ায় গিয়ে ‘কুঞ্জলতা’ নামের ফেরিতে করে গন্তব্যে রওনা হন বাইকচালকরা।
মাওয়া ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক জিয়াউদ্দিন জিয়া বলেন, “সকালবেলা অনেকে না বুঝে না শুনে মোটরসাইকেল নিয়ে পদ্মার ওপারের যাওয়ার জন্য টোল প্লাজার সামনে আসে। আমরা তাদের বুঝিয়ে বিকল্প পথে জনস্বার্থে ফেরি ‘কুঞ্জলতা’তে করে মাঝিরকান্দার উদ্দেশে পাঠানো হয়, তবে কতসংখ্যক মোটরসাইকেল ছিল, তা বলা মুশকিল।”
মাওয়া প্রান্তে ফলক উন্মোচনের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার দুপুর ১২টার ঠিক আগে পদ্মা সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। ঘোষণা অনুযায়ী পরের দিন ভোর ৬টা থেকে সব ধরনের যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয় সেতু।
এর আগে শনিবার রাত থেকেই পদ্মা সেতুর মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে টোল প্লাজার সামনে ভিড় করে বিপুলসংখ্যক গাড়ি। এর বেশিরভাগই ছিল মোটরসাইকেল।
সেতুতে যান চলাচল শুরু হলে মোটরসাইকেলচালকরা নানা বিশৃঙ্খলা ও অনিয়মে জড়ান। তাদের কেউ কেউ রেলিংয়ে বসে ছবি তোলেন। বাইজীদ নামের এক বাইকার রেলিংয়ের নাট-বল্টু খুলে ফেলেন। এ সংক্রান্ত টিকটক ভিডিও ভাইরাল হলে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এমন বাস্তবতায় রোববার রাতে সেতুতে অনির্দিষ্টকালের জন্য মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। ওই নিষেধাজ্ঞা সোমবার ভোর ছয়টা থেকে কার্যকর হয়।
নিষেধাজ্ঞার পরও রাতে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুজনের প্রাণহানি হয়েছে।
আরও পড়ুন:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার উদ্বোধনের পর রোববার ভোরে যানবাহন চলাচল শুরু হয় পদ্মা সেতুতে।
উদ্বোধনী দিনে সেতুর দুই প্রান্ত দিয়ে পারাপার হয়েছে ৫১ হাজার ৩১৬টি গাড়ি। এসব গাড়ি থেকে টোল আদায় করা হয়েছে ২ কোটি ৯ লাখ ৪০ হাজার ৩০০ টাকার।
রোববার মাওয়া টোল প্লাজা দিয়ে মোটরসাইকেলসহ ২৬ হাজার ৫৮৯টি যানবাহন পারাপার হয়। এ প্রান্তে সংগ্রহ করা হয় এক কোটি ৮ লাখ ৯৫ হাজার ৯০০ টাকা।
জাজিরা প্রান্তে ২৪ হাজার ৭২৭ যানবাহন পার হয়েছে। এ প্রান্তে সংগ্রহ করা হয় ১ কোটি ৪৪ হাজার ৪ টাকা।
পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ এসব বিষয় নিশ্চিত করেছে।
বাইক চলাচলে নিষেধাজ্ঞার প্রভাব টোল প্লাজায়
দিনভর বিশৃঙ্খলার মধ্যে রোববার রাতে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচলে অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
ঘোষণা অনুযায়ী, সোমবার সকাল ৬টা থেকে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে; চলছে না বাইক। ফলে সেতুর মাওয়া প্রান্তে টোল প্লাজায় যানবাহন কম দেখা গেছে।
এদিকে রোববারের দুর্ঘটনার পর থেকে সেতু কর্তৃপক্ষ, পুলিশ, সেনাবাহিনী এবং জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যক্রম আরও জোরদার হয়েছে। টোল প্লাজা এলাকায় টহলও বেড়েছে।
বাংলাদেশ সেতু বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তোফাজ্জল হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সকাল থেকেই সেতুতে বাইক চলতে দেয়া হচ্ছে না। সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। পুলিশ, সেনাবাহিনী টহল জোরদার করেছে। এ জন্য যানবাহন গতকালের চেয়ে কিছুটা কম পার হচ্ছে।’
আরও পড়ুন:এবার পাবনায় জন্ম নেয়া তিন নবজাতকের নাম দেয়া হয়েছে পদ্মা, সেতু ও উদ্বোধন।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সুমী খাতুন নামে এক নারী সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে শনিবার দুপুরে তিন ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। প্রাথমিকভাবে তাদের ডাক নাম রাখা হয়েছে পদ্মা, সেতু ও উদ্বোধন।
একই সময় শনিবার দুপুরে মাওয়া প্রান্তে নামফলক উম্মোচনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সুমী খাতুন পাবনার বেড়া পৌর এলাকার আমাইকোলা মহল্লার বাসিন্দা। তার স্বামী মিজানুর রহমান পেশায় রাজমিস্ত্রি।
নবজাতকদের বাবা মিজানুর রহমান বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বিকেলে পাবনার পিডিসি হাসপাতালে চিকিৎসককে দেখানোর পর তিনি আল্ট্রাসনোগ্রাম করে জানান পেটের ভেতরে বাচ্চার অবস্থা একটু বেকায়দায় রয়েছে। রাজশাহী নিয়ে যেতে পরামর্শ দিয়েছিলেন ওই চিকিৎসক। এরপর সেখান থেকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পর শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে তিন পুত্রসন্তানের জন্ম হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘তিন সন্তানের ডাক নাম হিসেবে পদ্মা, সেতু ও উদ্বোধন রাখা হয়েছে। পরে তাদের ভালো নাম রাখা হবে।’
এমন নাম রাখার কারণ কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু আমাদের গর্বের, স্বপ্নের। সেই স্মৃতি ধরে রাখতে মূলত এই নাম রাখা হয়েছে। কোনও পুরস্কার পাওয়ার লোভে আমার সন্তানদের নাম পদ্মা, সেতু, উদ্বোধন রাখিনি।’
মিজানুর জানান, ২০১০ সালে সুমী খাতুনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। এর আগে তাদের সংসার জীবনে তিনটি কন্যা সন্তান রয়েছে। তাদের নাম মীম, জীম ও সীম।
মিজানুর বলেন, ‘আগের তিনটি সন্তানই মেয়ে হওয়ায় আল্লাহর কাছে ছেলে সন্তান চেয়েছিলাম। আল্লাহ আমাদের মন ভরে দিয়েছে। আমরা একসঙ্গে তিন ছেলে সন্তান পেয়ে খুব খুশি। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি।’
আরও পড়ুন:দিনভর বিশৃঙ্খলার মধ্যে রোববার রাতে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচলে অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
ঘোষণা অনুযায়ী, সোমবার সকাল ৬টা থেকে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে; চলছে না বাইক। ফলে সেতুর মাওয়া প্রান্তে টোল প্লাজায় যানবাহন কম দেখা গেছে।
শনিবার পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সর্বসাধারণের চলাচলের জন্য সেতু উন্মুক্ত করে দেয়া হয় রোববার সকাল ৬টা থেকে।
সবার আগে সেতু পার হওয়ার প্রবণতায় আগের রাত থেকেই হাজার হাজার যানবাহন জড়ো হতে থাকে মাওয়া প্রান্তে। এসব গাড়ির বড় অংশ ছিল মোটরসাইকেল।
মোটরসাইকেলের চাপে সেতুর টোল প্লাজার সামনে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়। সবার আগে সেতু পার হওয়ার প্রবণতায় বাইকচালকরা বিশৃৃঙ্খলা শুরু করেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা তাদের সামাল দিতে হিমশিম খান।
টোল দিয়ে সেতুতে উঠে বাইকাররা যেন পাগলা ঘোড়া হয়ে যান। রোববার রাতে দুর্ঘটনাও ঘটে, যাতে প্রাণ যায় দুই বাইক আরোহীর।
এমন পরিস্থিতিতে সকালে উন্মুক্ত করে দেয়ার পর রাতে সেতুতে বাইক চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আসে সরকারের তরফ থেকে।
এ সিদ্ধান্তের ফলে রোববারের তুলনায় সোমবার সকালে যানবাহন কম দেখা গেছে। বাসের সংখ্যাও ছিল বেশ কম।
এদিকে রোববারের দুর্ঘটনার পর থেকে সেতু কর্তৃপক্ষ, পুলিশ, সেনাবাহিনী এবং জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যক্রম আরও জোরদার হয়েছে। টোল প্লাজা এলাকায় টহলও বেড়েছে।
বাংলাদেশ সেতু বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তোফাজ্জল হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সকাল থেকেই সেতুতে বাইক চলতে দেয়া হচ্ছে না। সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। পুলিশ, সেনাবাহিনী টহল জোরদার করেছে। এ জন্য যানবাহন গতকালের চেয়ে কিছুটা কম পার হচ্ছে।’
সেতুর মাওয়া প্রান্তের টোল প্লাজার ব্যবস্থাপক হাসিবুল হামিদুল হক বলেন, ‘রোববার যে ব্যারিয়ারটি ভেঙে গিয়েছিল, সেটা ঠিক হয়ে গেছে। গতকালের চাইতে আজকে গাড়ির চাপ কম।
‘মোটরসাইকেল যেহেতু বন্ধ রয়েছে, তার জন্য চাপ অনেকটা কমে গেছে। আসলে আমাদের একটা আবেগের ব্যাপার, যার জন্য গতকাল এই চাপ দিচ্ছিল। আর দুর্ঘটনা ব্যাপারটা আমরা আপনাদের থেকে শুনেছি।’
আরও পড়ুন:মাগুরা সদরের আঠারখাদা ইউনিয়নের আলীধানী গ্রামের নবগঙ্গা মধ্যপাড়ার পান্নু মোল্লা মিয়ার বাড়ির সামনের রাস্তা কাঁচা। কিন্তু তাতে তার যতটা না ভোগান্তি ছিল, সেটা আরও বেড়ে গেছে রাস্তার উন্নয়নকাজের পর।
পান্নু মোল্লা বললেন, ‘বাড়ির সামনে রাস্তাডা ভালোই ছিল। বৃষ্টিতে পানি হোক, তাও একটা কায়দা করে চলতাম। মাটির রাস্তা হলিও শক্ত আছে। কাদা হতো না।
‘আর মাটি ফেলিছে দেহেন কিরাম। উঁচু ঢিবি হয়ে গেছে। কাদা যাতে না হয় সে জন্য মাটি ফেলিছে। কিন্তু মাটি সমান করে যায় নাই। ইউনিয়ন পরিষদে বললাম যে এই মাটির ঢিবিতে বাড়ির যাতায়াতের রাস্তা বন্ধ করে দিছে। সমান করেন। তারা বলে, আর কাজ হবে না। টাকা নেই বলে কাজ হবি না। এহন কাদা তো হইছেই, সঙ্গে বাড়ি থেকে বের হতি লাগে কষ্ট। এরাম কাজ করার মানে কী বুঝলাম না।’
এক মাস ধরে এমন ভোগান্তি পান্নু মোল্লার। মাঠে কাজে যেতে কষ্ট হয়। কেউ দেখার নেই।
ইউনিয়ন পরিষদে কর্মসংস্থান কর্মসূচির ৪০ দিনের কাজের টাকা অর্ধেক সময়ে এসে ফেরত চলে যাওয়ায় মাগুরা জেলা সদরের কয়েকটি ইউনিয়নে গ্রামীণ উন্নয়নের অসমাপ্ত কাজ ভোগান্তি সৃষ্টি করেছে।
ত্রাণ ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় থেকে জানা গেছে, ২০২২ অর্থবছরের প্রকল্পের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে দেরিতে ছাড় হওয়ায় সময়মতো কাজ শেষ হয়নি। দেশের অধিকাংশ ইউনিয়নে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সাধারণ মানুষ এই অর্ধেক কাজকে ভোগান্তি হিসেবে দেখছেন। মাগুরা সদরের আঠারখাদার মধ্যপাড়ায় একই এলাকার কৃষক নসিম জানান, ‘সামনে পাটের সময়। তাহলে এ রকম উল্টাপাল্টা কাজ করার দরকার কী? অর্ধেক মাটি ফেলে আমার বাড়ির সামনে উঁচু ঢিবি বানাই রাখছে। বৃষ্টির পানি গড়ায় বাড়ির ভেতরে যায়। আগে তো এটা হতো না। মাটি কোনো রকম ফেলে তারা চলে গেছে।’
একই ইউনিয়নের আনসার ভিডিপি ক্লাবসংলগ্ন মাটির রাস্তাটিও এক পাশে উঁচু তো অন্য পাশে নিচু। কয়েক দিনের বৃষ্টিতে হাঁটু পর্যন্ত কাদা।
স্থানীয়রা জানান, রাস্তাটি ছিল বেলে মাটির। সেটাই ভালো ছিল। কিন্তু এখন মাটি ফেলেছে এক পাশে, সমান করেনি। তাই অর্ধশতাধিক পরিবার এই পথ দিয়ে যেতে পারে না। হাঁটু কাদা পেরিয়ে শিশুরা স্কুলে যায়। তাদের ইউনিফর্ম নষ্ট হয়ে যায়। এমন কাজ তাদের দরকার নেই বলে জানান গ্রামবাসী।
সদরের ১৩টি ইউনিয়নেই এমন কমবেশি খারাপ পরিস্থিতি। আগের বছরগুলোতে নারী কর্মী দিয়ে কাজ করা গেলেও এবার অর্ধেক কাজ হয়েছে দায়সারাভাবে। এই কর্মসূচির নিয়মিত এক নারী শ্রমিক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, তাড়াহুড়ো করে কাজ করানো হয়েছে এ বছর। কোথাও দুই দিন, কোথাওবা এক দিন মাটি ভরাট করার কাজ তারা করতে পেরেছেন। তবে ঠিকমতো টাকা পেয়েছেন বলে জানান তিনি। আর বছর শেষে কাজ শুরু হলে আবার কিছু উপার্জন করতে পারবেন।
এ বিষয়ে মাগুরা সদরের হাজরাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কবির হোসেন বলেন, ‘এলাকার রাস্তার পাশে মাটি ভরাট কাজ পুরো সম্পন্ন হয়নি। কোথাও কোথাও থেমে আছে। বলা যায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কাজ সমাপ্ত হলেও পুরো কাজ শেষ হওয়া দরকার। গত অর্থবছরের ২০ দিনের কাজ শেষে হয়েছে। এরপর আর বরাদ্দ আমরা পাইনি। বর্ষা মৌসুমে এই কাজগুলো শেষ হলে ভালো হয়। না হলে রাস্তার দুই পাশে মাটি ভরাট পানিতে ধুয়ে যাচ্ছে।’
জগদল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘৪০ দিনের কাজ আসে বছরে দুইবার। এবার শুনেছি অর্থ বরাদ্দ ২০ দিনের হয়ে আর আসেনি। এ জন্য ২০ দিনের কাজ করা হয়েছে। তবে যেসব জায়গায় কাজ হয়েছে, সেসব স্থানে কাজ সমাপ্ত হলে মানুষের দুর্ভোগ কমবে। আশা করছি জটিলতা অচিরেই ঠিক হয়ে যাবে।’
সদর উপজেলার চাউলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাফিজার রহমান জানান, তার এলাকায় ২০ দিনের কাজ শেষ হয়েছে। কাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিকরা টাকা পেয়ে গেছেন। এ নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। যতটুকু বরাদ্দ, ততটুকু উন্নয়ন হয়েছে। ৪০ দিনের কাজ ২০ দিনে হলে তো কিছু অপ্রাপ্তি থাকে এলাকাবাসীর। বিশেষ করে বর্ষায় কাঁচা রাস্তা মেরামতের কাজ খুব প্রয়োজনীয়।
মাগুরা সদর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তা আম্বিয়া বেগম শিল্পী জানান, মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ ছাড় পাওয়া গেছে অর্ধেক কাজের। ফলে বাকি ২০ দিনের কাজের অর্থ না আসায় পরিষদের এই কাজগুলো আর এগোয়নি। তবে এই অর্থবছরে আর টাকা বরাদ্দ হবে না। ২০২৩ অর্থবছরে কাজ শুরু হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য